Riya Roy

Drama Others

4  

Riya Roy

Drama Others

ওই ছেলে গুলো

ওই ছেলে গুলো

7 mins
436


 

পাড়ার বোস বাবু, দাশ বাবু র বাড়ির সামনে গিয়ে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলেন, "


দাশ বাবু বাড়িতে আছেন ? দুবার চিৎকারের আওয়াজ শুনে 

দাশবাবুর স্ত্রী বলে উঠলেন, "বোস দা কিছু দরকার নাকি? তা ভিতরে আসুন না!", 


বোস বাবু বললেন , "না না আর ভিতরে যাব না ।

দাশ বাড়িতে নেই ?"


 দাশ বাবু র স্ত্রী বললেন , "হ্যাঁ হ্যাঁ উনি আসছেন ।"


 কিছুক্ষণ পরেই দাশবাবু বেরিয়ে এলেন বললেন, " কি হয়েছে বলুন তো?"


 বোস বাবু বললেন, "এই যে দাশ আমাদের বাড়ির পিছনে আপনাদের যে বাড়িটা , যেটা একগাদা ছেলে ভাড়া দিয়েছেন । ওরা সব অত্যন্ত অভদ্র এবং বাজে । "


দাশ বাবু বললেন, "কিন্তু আমি তো ভালো ভাবে দেখা ই ওদের ..... আচ্ছা কি হয়েছে একটু যদি খুলে বলেন । "


বোস বাবু বললেন," মাঝরাতে সে কি হৈ হল্লার আওয়াজ , তার পর গান বাজনা র শব্দ, ছি ছিঃছিঃ পাড়ার মধ্যে রাতবিরেতে এসব কি । সারা রাত কাল ঘুমতে ই পারলাম না । "


দাশ বাবু বলে উঠলেন, "ওরা সব কলেজ স্টুডেন্ট, আর ভদ্র ঘরের সব ছেলে বলেই তো মনে হয় তাই দেখেইতো ভাড়া দিলাম । আসলে কি জানেন তো সব আজকালকার ইয়াং ছেলে পুলে তাই হয়তো একটু ...."


.কথাটা শেষ হবার আগেই বোস বাবু বললেন, "দেখুন আমাদের বাড়িতে ও তো ছেলে মেয়ে আছে কই তারা তো এরকম রাতবিরেতে হৈচৈ করে না ।"


 দাশ বাবু নিজের ছেলের বউ কে ডেকে বললেন বউমা অনিন্দ্য বাড়ি আছে, ভিতর থেকে উওর এলো হ্যাঁ বাবা আছে।


 দাশ বাবু বললেন," অনিন্দ্য কে বলোতো একটু গিয়ে ওই ছেলে গুলো কে ডেকে আনতে, আপনি বোসদা একটু অপেক্ষা করুন ওরা আসুক তারপর দেখছি ।"


 

কিছু ক্ষনে র মধ্যে ওই ছেলে গুলো র মধ্যে একজন এলো।


দাশ বাবু বললেন, "এই যে দীপেশ কাল তোমরা নাকি খুব হৈচৈ করেছো, এই যে তোমাদের পাশের বাড়ি বোস বাবু রা থাকেন ওনাদের কাল খুব অসুবিধা হয়েছে।"


 দীপেশ তখন বললো," আসলে কাকু আমাদের বন্ধু সমরের কাল বার্থডে ছিল তাই একটু সেলিব্রেশন করছিলাম তবে বেশি়ক্ষন তো হয়নি।"


 তখন বোসবাবু বললেন," সেলিব্রেশন করছিলে তা ওতো নাচ গান বিকট আওয়াজ হচ্ছিলো, রীতিমত মাতলামো করছিলে বলে মনে হলো"


। দাশ বাবু বলে উঠলেন, "তোমরা আবার মদ খেয়ে ...."

কথাটা শেষ করার আগেই 

দীপেশ বললো," না না কাকু আসলে আর্য গীটার বাজাচ্ছিল তো তাই একটু আওয়াজ হয়েছিল ।"

 দীপেশ একটু ধোক গিলে আবার বললো, "রোজ রোজ তো জন্মদিন হয় না তাই আর এরকম হবে না কাকু, আপনারা চিন্তা করবেন না। তখন দাশ বাবু বললেন ",শুনলেন তো বোস দা বন্ধু র জন্মদিনে একটু আনন্দ , মজা করছিল ,সব বাচ্চা ছেলে র দল কি আর এদের বলবো ।"


 এরপর বোস বাবু বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন ।


দীপেশ ঘরে ফিরে জানলা দিয়ে বোস বাড়ি দেখছিল তখন আর্য এসে বললো," কি রে বাড়ি কাকু কেন ডেকে ছিল ?কি বললো?"


 দীপেশ বললো , "আমাদের নামে কমপ্লেন হয়েছে। 

সমর ঘরে ঢুকলো , বললো ,"কে আবার কমপ্লেন করলো ?"


দীপেশ বলে উঠলো, "ওই যে বাড়িটা দেখছিস এটা বোস বাবু র বাড়ি উনি বলেছেন আমাদের হৈচৈ এর ঠেলায় কাল ঘুমতে পারেননি। আরও বলেছে কাল নাকি আমরা মাতলামো করছিলাম।"


সমর বললো ,"সে কি রে এত পুরো জন্ডিস কেস,তারপর তুই কি বললি?


 দীপেশ বললো," আর ও কেস খেতে হতো , ম্যানেজ করলাম। আচ্ছা কি দরকার ছিল তোদের কাল সোহেল কে ডাকার একটু টেনেই আল ফাল বকতে শুরু করলো ।ওর জন্যেই এসব হলো কিন্তু। "


আর্য তখন বললো," আচ্ছা!!!, বাড়ি কাকু কি বললো?"


দীপেশ বললো," উনি খুব কুল তাই তো বেশি বাড়ল না কেসটা।"


 সমর বললো ,"ছাড়তো ।নে নে এবার চল বেরুতে হবে নইলে ক্লাস মিস করতে হবে কিন্তু ...।"


বাকি দুজন ও বললো হ্যাঁ হ্যাঁ চল।


সেদিন ভীষন গরম তাই বোস বাবু অফিস থেকে ফিরে ছাদে ঘুরছেন হঠৎ ওদের ছাদে চোখ গেল । সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী কে ডাকলেন বললেন, "দেখো ওটা একটা মেয়ে না ওদের ছাদে ঘুরছে। "


ওনার স্ত্রী বললেন, "কই না না। 


বোস বাবু বললেন ,"ধূর তুমি কিছুই বোঝেনা।"


 বোস বাবুর স্ত্রী বলে উঠলেন, "ঘুরছে তো ঘুরছে তোমার তাতে কি ! সর্বক্ষণ খালি ওই ছেলে গুলোর পিছনে পড়ে আছো ।"


বোস বাবু বলে উঠলেন ,"দাশ বললো 

নাকি এরা ভদ্র বাড়ির ছেলে তা এদের বাড়ির লোক জানে এরা পড়তে এসে লীলা কীর্তন করছে। আমি ঠিক এদের বেয়াদবি একদিন দাশকে দেখাবো।"


 বোস বাবু র স্ত্রী বললেন, "তবে আর কি গোয়েন্দা গিরি করো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে , অসহ্য ।আমি নীচে যাচ্ছি অনেক কাজ আছে।"


রবিবার সকালে বাজার থেকে ফিরছিল বোস বাবু ,সমর কে দেখতে পেয়ে ডাক দিল এই যে শোনো এদিকে।


সমর ইতস্তত হয়ে আমি , কি হয়েছে কাকু ?


বোস বাবু বলে উঠলো, "সেদিন ছাদে একটি মেয়ে কে দেখলাম । "


সমর বললো, "মেয়ে... কৈ জানি নাতো আমরা তো ছেলে সবাই ।"


 বোস বাবু বলে উঠলেন , "আমি দেখলাম সেদিন সন্ধ্যে বেলা।"


সমর বললো," ওহ্ অন্ধকারে কি দেখতে কি দেখেছেন । আমি আসছি পড়তে হবে কাল পরীক্ষা আছে কলেজে বলেই তড়িঘড়ি সমর চলে গেল। 


আর বোস বাবু গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেলেন। 


সমর ফিরে এসে দীপেশের মাথায় টোকা দিয়ে তোর জন্যে আজ জেরার মুখে পড়তে হলো ।


দীপেশ বললো," কেন কি হলো?"


সমর বললো ,"বোস বাবু আবার আজ ধরেছিল, কোন রকমে ম্যানেজ করে এলাম। সেদিন ছাদে সুরমা কে দেখেছে । তোর কি দরকার ছিল ওকে এখানে আনার। "


দীপেশ বললো ," বাহ্ রে ওতো দেখতে চাইছিল আমরা কোথায় থাকি।"


সমর বললো, তা গার্লফ্রেন্ড যা বলবে শুনতে হবে ।"


দীপেশ বলে উঠলো ,"তা উনি যদি সবসময় আমাদের দিকে চোখ দিয়ে থাকেন ,যত আজব পাবলিক। "


আর্য ঢুকে এলো ঘরে ,বললো," বুড়ো বয়সে কি চোখ রে বা...বা অন্ধকারে ঠিক দেখতে পেয়ে গেলো। "


দীপেশ বললো , "তাহলেই ভাব ,কি ডেঞ্জারাস লোক ।"

 

দাশ বাবু র ওই বাড়ির সামনে টায় একটা বাগান আছে আর ওখানে বেশ আম পেয়ারা র গাছ আছে।একদিন কলেজ থেকে ফিরে ছেলে গুলো পেয়ারা পাড়ছিল আর ইয়ার্কি করছিল ওদের ইয়ার্কি শুনতে পেয়ে বোস বাবু র মেয়ে গীতালি হেসে ফেললো । যেচে জানলা দিয়ে কথা বললো আর ওদের সাথে আলাপ হয়ে গেল।


 ওরা যাবার সময় কয়েকটা পেয়ারা ও দিয়ে গেল। 


পুরোটা বোস বাবু জানতে পেরে তুমুল অশান্তি করলো। আর চেঁচামেচি র আওয়াজ ছেলে গুলো ও শুনতে পেলো ।


কেটে গেল বেশ কিছু মাস ........


গীতালি র বিয়ে স্থির হল আর ঠিক দেড় মাস বাকি। 


বোস বাবু একা মানুষ । খুব চিন্তিত , কোথায় কি ভাবে সামলাবেন দিশেহারা। কোনো আত্মীয় কে পাশে পেলেন না সাহায্যে র জন্য তাই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি চলছে আজ। 


বোস বাবু র স্ত্রী বললেন," তোমার খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্যে কেউ নেই পাশে। অন্যদের কাজে ভুল ধরা ,পরের পিছনে টিকটিকি করা তাই কাউকে পাবে না তুমি।"


 বোস বাবু চিৎকার করে বলে উঠলেন, "থামবে তুমি !!!নাকি!! খালি বাজে কথা বলে যাবে। "


হঠাৎ কলিং বেল বাজলো । 


বোস বাবু দরজা খুললেন , দাশ বাবুর ছেলে অনিন্দ্য এসে বললো তার বাবা একবার বোস বাবু কে তাদের বাড়িতে যাবার জন্যে একটু ডেকেছে । জরুরী কথা আছে। অনিন্দ্য চলে গেলো।


তখন সন্ধ্যে বেলা বোস বাবু গেলেন , গিয়ে দেখলেন দীপেশ বসে আছে সোফায়। 


বোস বাবু কে দেখে দীপেশ টেনসড্ হলো , একটু হাসি হাসি ভাব দেখালো আর দাশ বাবু কে বললো কাকু আমি আসি তাহলে ।


দাশ বাবু বললেন, "আরে বোসো না চা খেয়ে যাবে। "


বোস বাবু বললেন ,"আমাকে হঠাৎ আসতে বললেন ।কি ব্যাপার বলুনতো?"


দাশ বাবু বললেন," হ্যাঁ পাড়ার এই ড্রেনের ব্যাপারে আলোচনা ছিল বুঝলেন। ড্রেনের জল ঠিকমতো যাচ্ছে না । "


তখন বোস বাবু বললেন ,"আসলে আমি একটু চিন্তার মধ্যে আছি এই ব্যাপারে পরে আলোচনা করলে ভালো হয়। "


দাশ বাবু বললেন , "কি হয়েছে ??

যদি খুলে বলেন। "


বোস বাবু বললেন তার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে আর পাশে সাহায্য করার মতো কোনো আত্মীয় নেই । যাদের জন্য উনি এতদিন এগিয়ে গেছেন তারাই আজ ওনাকে সাহায্য করতে চাইছে না। উনি একা মানুষ তাই খুব সমস্যায় আছেন। 


এই সময় হঠাৎ,সমর এসেছিল দীপেশকে ডাকতে। ও সব শুনলো।


 হঠাৎ দীপেশ বলে উঠলো, "আমরা তো আছি আমরাই তো সাহায্য করতে পারি।"


 শুনে দাশ বাবু বললেন," ঠিকইতো আত্মীয়রা না থাকুক আমরা প্রতিবেশীরা তো আছি। আর এরা সব আপনাকে সাহায্য করতে চাইছে যখন তখন আর চিন্তা করবেন না।

কি তোমরা ওনাকে সত্যি হেল্প করবে তো কি সমর ?"


সমর তখন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো না মানে উনি কি আমাদের হেল্প নেবেন,উনিতো আমাদের র ঠিক......তখন দাশ বাবু হেসে ফেললেন ।


সমর ,দীপেশ বাড়ি ফিরে আর্য কে জানালো সবটা। আর্য বললো ," কি রে তোরা, যে লোকটা আমাদের নিয়ে কি সব যাতা করলো তার জন্যে তোদের এত দরদ বা....বা...। "


সমর বললো," দীপেশ টাই তো আগ বাড়িয়ে ...। "


দীপেশ বললো ,"নারে লোকটা খুব টেনসড্ ছিল আর সেই দাপট ও নেই। "


আর্য তখন বলে উঠলো, "আর তুই

সেন্টু খেয়ে গেলি তো ।


দীপেশ বললো, ঠিক এরকম অবস্থা আমার দাদুর হয়েছিল মাসির বিয়ের সময় তখন ছোট ছিলাম দেখেছিলাম দাদুকে কতটা সমস্যায় ছিল ।আজ তাই এনা কে হেল্প টা করতে চাই ।দীপেশ আরো বললো গীতালি কে তো তারা চেনে, খুবই ভালো, সে তার বাবার মতো নয় তাই হেল্প করতে অসুবিধা কি...।


বোস বাড়ি তে ওই ছেলে গুলোর যাতায়াত শুরু হল । প্রত্যেকে কাজের দায়িত্ব নিল । ক্যাটারিং,ডেকরেটারস্, খাবার মেনু, আরো এটা সেটা.....। 


কাজ একে একে শেষ হলো, বোস বাবুর সাথে ওদের সম্পর্ক টা ভালো হয়ে গেলো।


 বিয়ের দিনটাও এসে গেল। বাড়িতে লোকজন, সানাই এর সুর ওদিকে বিয়ে তে বসেছে গীতালি। 


বিয়েবাড়িতে দাশ বাবু এলেন বললেন , "বোস দা এবার আপনি চিন্তা মুক্ত তো ,ওই ছেলে গুলো কিন্তু সত্যি ভাল, কি বলেন?"


 বোস বাবু বললেন, "হ্যাঁ আমি ওদের ব্যপারে সত্যি ভুলিই ভেবেছিলাম।"


দাশ বাবু বললেন, "আসলে এই ইয়ং ছেলে মেয়েদের মানে এই জেনারেশন টাকে আমরা ভাবি যে এরা একদম সিরিয়াস নয় , খালি ইয়ার্কি করে , হৈচৈ করে কিন্তু এরা সবাই তা নয় আর মজা ইয়ার্কির পরে ও এরা মানুষের কথা ভাবে, মানুষের জন্যে কাজ করে, কি বলেন? "


বোস বাবু বললেন," ঠিকই বলেছেন আপনি।"


ওদিকে তখন সমর বলছে দীপেশকে ,"দেখ আর্য টাকে দেখ খেয়ে ই চলেছে। কতগুলো পকোড়া খেলো চিন্তা কর। কোনো মানে হয় ।"


 আর্য বলে উঠলো, "শোন্ তোদের সাথে সেন্টু খেয়ে আমি এই এতগুলো দিন অনেক খেটে ফেলেছি আজ কব্জি ডুবিয়ে খাবো। তাছাড়া না খেয়ে আমি কাজ করতে পারবো না। "


আর্য র কথা শুনে তখন দীপেশ আর সমর হো হো .. ‌...করে হেসে উঠলো।









Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama