STORYMIRROR

Riya Roy

Drama Romance Classics

3  

Riya Roy

Drama Romance Classics

মাঝখানে জটিলতা

মাঝখানে জটিলতা

12 mins
12

পার্কের চেয়ারে বসে তিয়াসা বিতনু কে বললো," এই সাধারণ কমিটমেন্ট টা করতে তোমার এত অসুবিধা।।"
বিতনু --" কিন্তু এই কমিটমেন্ট এর কি প্রয়োজন সারা জীবন পাশে থাকা ইত্যাদি কথা উঠছে কেন ।"
তিয়াসা --" তার মানে তুমি আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে এখন ও তোমার একটা দ্বিধা রয়েছে তাই তোমার এত আপত্তি।"
বিতনু -- "তোমার কয়েকটা দিন ধরে এগুলো আমি নিতে পারছিনা, আমরা কি কলেজের সেই ফার্স্ট ইয়ারে পড়া ছেলে মেয়ে এখন ও আছি,  যে এগুলো করে যাচ্ছোও
কলেজ পেরিয়ে এখন অনেক দিন হয়ে গেল আমি তুমি দুজনেই চাকরি করছি, সম্পর্ক টা তো অনেক দিন হলো,
কি হয়েছে, তোমার ? তুমি কি আপসেট।"

তিয়াসা -"- রিমিতা দির সাথে তোমার এই যে গোপন একটা সম্পর্ক সেটা দেখার পর আমার কি বলা উচিৎ তোমাকে বলে মনে করো।"
বিতনু -- "কি আবোল তাবোল বলছো, রিমিতা আমার ক্লাস মেট ছিলো, আর তুমি ও সেই কলেজেই পড়তে আমরা একবছরের জুনিয়র হিসেবে এমন ভাবে বলছো যেন রিমিতা কে চেনোই না। আর রিমিতা এখন বিবাহিত।।"

তিয়াসা -- "একসপ্তাহ আগে রিমিতা দির বাড়িতে যে পার্টিটা হলো তাতে তুমি আর রিমিতা দি যে ভাবে নাচ করলে , এত ক্লোজ ভাবে। তার আগে শঙ্খ দার বাড়িতে তোমরা দুজন এ পাশাপাশি বসে যেভাবে ছিলে। শুধু তাই নয় গতবছর ও তো লোলিত দার বাড়িতে একই ভাবে। আর ফোনে এর মধ্যে তো সবসময় চ্যাট চলছে ই।"

বিতনু -- "এগুলো কি বলে যাচ্ছেও !!তোমার কোনো সেন্স আছে?।ওই মিউজিক টা তে তো শঙ্খের ওয়াইফ তনিমা ও নাচ করলো অয়নের সঙ্গে। কই শঙ্খ এর তো কোনো সমস্যা হয়নি।। রিমিতা র হাজবেন্ড বিপুল দা  নিজে বললো মিউজিক চালালাম তোমরা প্লিজ খুশি মতো নাচ করো।। তোমরা অনেকেই প্লেট হাতে খাচ্ছিলেন বাকিরা যে যার মতো আমরা ডান্স করছিলাম আর ওখানে তো সবাই সবাই কে আমরা চিনি, আর বাকিদের সাথেও পরিচয় হয়েছে। যেমন বিপুল দা তনিমা এরা কলেজে পড়তো না আমাদের সাথে কিন্তু আমাদের ফ্রেন্ড দের বিয়ে করার সূত্র এ আলাপ।
ওই সাধারণ ব্যপারটা নিয়ে এত টা ভুল ভেবেছো।"

তিয়াসা --" তনিমা যখন ডান্স করছিল সেটা আর রিমিতা দি র সাথে তোমার টা অনেক তফাৎ  বিপুল দা নিশ্চিত খেয়াল করেছে।।"
বিতনু -- "বিপুল দা অনেক ভালো লোক, তোমার মতো নীচ মানসিকতা র নয়।"

তিয়াসা --" হ্যাঁ সেই তো আমি নীচ মানসিকতা র আর রিমিতা দি ওই ভালো মানুষীর সুযোগ নিচ্ছে।।
কলেজে তো আমি তোমার জুনিয়র ছিলাম রিমিতা দি যদি মনে ছিল তাহলে আমাকে প্রোপোজ করেছিলে কেন? তাহলে আজকের এই দিন টা দেখতে হতো না।
আর অয়ন এরকম ছেলে নয় , তনিমা ও শঙ্খ দাকে যথেষ্ট ভালোবাসে, ওই  ওদের ডান্স টা হাসির ছলে ছিল অনেক টাই। তাছাড়া ডান্স ছাড়াও তোমাদের ইনটিমিসি আমি অনেক বার দেখেছি। "

দুজন এর কথা কাটাকাটি তারপর তিয়াসা উঠে পার্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়া।।

বিতনু বাড়ি ফিরে হোটাস অ্যাপে অনেক বার সরি বলা, অনেক বোঝানোর পর বিতনু র সাথে ঝগড়া র প্রায় পাঁচ দিন পরে শহর থেকে দূরে ঘুরতে যাওয়া দুজনের তারপর কিছু টা ভালো সময় কাটানো।। আবার সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো।।

এরপর কয়েকদিন তিয়াসা বেশ ব্যস্ত ছিল।। তাই বিতনুর সঙ্গে দেখা করতে পারে নি।। আজ এসেছে রেস্টুরেন্ট বিতনু আর তিয়াসা মুখোমুখি বিতনু একটা প্রেসক্রিপশন বের করলো বললো ওষুধ গুলো কিনতে হবে ।
তিয়াসা অবাক হয়ে কার কি হয়েছে আঙ্কেল আন্টির, কি হলো বলো নি ।।"
বিতনু --"না প্রেসক্রিপশন টা দেখো!!"
তিয়াসা নামটা পড়লো, বললো-" এতো রিমিতা দি..
তিয়াসা --"কি হয়েছে, বিপুল দা কোথায় তুমি প্রেসক্রিপশন নিয়ে.."
বিতনু --"বিপুল দা বাড়ি ছিল না।"
রিমিতা  র খুব শরীর খারাপ ছিল ডক্টর দেখাতে নিয়ে গেলাম তার টেস্ট, ওষুধ ।
তিয়াসা --"কই আমাকে তো কিছু বলো নি। ওর বাড়িতে আজ কে কেন যাবে ওষুধ তো দিয়েছিলে এখন ও বিপুল দা নেই?
বিতনু -- "না বিপুল দা এসেছে, ওর তো টাইফয়েড বলছে ডক্টর।"
রিমিতা -- "তাহলে বিপুল দা ওষুধ কিনতে পারতো? তুমি কেন কিনছো?"
বিতনু -- "ওহ বিপুল দা তো সবটা জানে না এখন আমি তো‌ ওষুধ গুলো কিনে ছিলাম এই ওষুধ টা বাকি আছে সেদিন দোকানে ছিল না আজ গেলে পাবো তাই।
চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে যাবো ওখানে।"
তিয়াসা-- "আমি ও যাবো, "
বিতনু -- "মানে তুমি গিয়ে কি করবে শুধু শুধু.."
তিয়াসা -- "কেন আমিও তো রিমিতা দির বন্ধু তাহলে ওর টাইফয়েড হয়েছে এটা শোনার পর একবার দেখতে যাবো না।"

বিতনু -- "তুমি সত্যি যেতে চাও।"
তিয়াসা -- "কেন তোমার এ কথা বলার মানে?"
বিতনু -- "না তুমি তো রিমিতা কে খুব একটা পছন্দ করো না।"
তিয়াসা -- "আমার মনে হয় তুমি ভুল বুঝেছো আমাকে।
রিমিতা দি কে অপছন্দ এর কোনো কারণ নেই কিন্তু তুমি যেভাবে রিমিতা দি র সাথে.. যাইহোক আমি আর বলতে চাইনা।"

বিতনু -- "রিমিতা আমার খুব ভালো বন্ধু একিই ব্যাচমেট তাই কথা টা বেশি হয় সেটা তুমি ভুল বুঝেছো।"

তিয়াসা -- "তাই বলে রিমিতা দি নিজের অসুখের কথা হাসবেন্ড কে না জানিয়ে বন্ধু কে জানবে, বিষয়টা একটু বাড়াবাড়ি নয়।"

বিতনু -- "বিপুল দা বাড়ি ছিল না।"
তিয়াসা -- "ওর আর কেউ নেই বাবা মা আত্মীয় কেউ না।"

বিতনু -- "আছে হয়তো!! আমাকে তাও ভরসা করে তাই বলেছে। একটা অসুস্থ মানুষ কে নিয়ে ও তুমি এত কিছু বলবে।"
তিয়াসা -- "আচ্ছা চলো ওষুধ কিনবে তো চলো।"

এর পর ওরা ওষুধ কিনে রিমিতা র বাড়ি।। বেল‌ বাজলো তখন সন্ধ্যা সাতটা। বিপুল দরজা খুললো।।
এরপর তিয়াসা রিমিতা র ঘরে।।
রিমিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে।

রিমিতা -- "বিতনু কোথায় তুই এসেছিস?"

তিয়াসা -- "এসেছে বিপুল দা কে ওষুধ বোঝাচ্ছে।"

রিমিতা -- "অফিস থেকে আসছিস ?"

তিয়াসা -- "কেমন আছো রিমিতাদি? আর ওষুধ ঠিকঠাক খাচ্ছো।"

রিমিতা --" হ্যাঁ এখন কিছু টা ভালো, তুই কিছু খাবি অফিস থেকে এলি নিশ্চই খুব ক্লান্ত।"
তিয়াসা ---" বিপুল দা কবে ফিরছে
তুমি বিপুল দা কে বলো নি কেন ওষুধ কিনে আনতে বিপুল দা তো দেখলাম বিতনু কে বলছিল।"

রিমিতা ---"তাতে কি হয়েছে বিতনু আমার বন্ধু ও যদি আনে অসুবিধা কি?"

তিয়াসা --"আমিও তো তোমার বন্ধু ই আমাকে বললোনি তো , ।"

রিমিতা --"তোর কি তাই রাগ হয়েছে
তিয়াসা -- "হতেই পারে , বিতনু কে কেন বারবার তুমি।"
রিমিতা ---"তুই কি আমায় ভুল বুঝছিস।"
তিয়াসা -- "না রাগ নয় তোমাকে আমার অন্তত এই অসুস্থ টা নিয়ে অদ্ভুত লেগেছে,
বিপুল দা কে না জানিয়ে যাইহোক, ।"

এরপর বিতনু ঘরে ঢুকতেই রিমিতা বলল দ্যাখ-" তিয়াসা কি সব বলছে তোর আমার এতদিন এর বন্ধুত্ব একটু ওষুধ আনতে বলেছি বলে কি ভুল করেছি , আসলে ও তো জানেই না তোর আমার বন্ধুত্ব টা।।"

বিতনু -- "তিয়াসা তুমি কি বলছো এসব আমি যদি ওষুধ এনেও থাকি তাতে কি হয়েছে।। আমদের বন্ধুত্ব টা সেই কত দিনের তুমি তো জানো ই না।"
তিয়াসা-- "হ্যাঁ তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো তোমাদের বন্ধুত্ব এর সময় থেকেই আমি তোমাকে চিনি।।"

বিপুল চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো-- "আরে কি হলো সবাই চা খাও ।। তোমরা তো অসোই না।।"
তিয়াসা-- "কেন বিতনু
তো আসে আপনি জানেন না বিপুল দা।"

।এই ভাবে সেদিন একটু তর্ক বিতর্কে কেটে গেলো।
কয়েকটা মাস পরে....

তিয়াসার সঙ্গে বিতনুর বিয়ের কথা এগিয়ে গেছে   । বিতনুর নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে সেটা ধীরে ধীরে সাজানো চলছে, সেখানে এখন বেশিরভাগ জিনিস তিয়াসার পছন্দ করা।। তিয়াসা মাঝেমধ্যে যায় ওখানে।।

কিন্তু ইদানিং হঠাৎ তিয়াসা লক্ষ্য করছে বেশ চেঞ্জ তার পছন্দ করা জানলার পর্দা গুলো র বদলে অন্য। বইগুলো সাজানো তে চেঞ্জ। বিতনুকে জিগ্যেস করলে একটা করে উওর দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু তিয়াসার সন্দেহ বাড়ছে।।
এদিকে রিমিতাও আসছে ওই ফ্ল্যাটে আর ওর পছন্দ গুলো চাপিয়ে দিচ্ছে বিতনুর উপর । বিতনু ও কি করবে এখন কিছুই জানে।।
রিমিতা তার বন্ধু কলেজের কিন্তু মনের ভিতর রিমিতার জন্য একটা জায়গা রয়েছে বিতনুর। সেটা প্রেম হয়তো নয় , তবে বিতনু একটু দ্বিধায়।
এদিকে মাঝখানে তিয়াসা তার সঙ্গে কি বিতনু অন্যায় করছে। এই প্রশ্নের উত্তর ও বিতনু জানে না।।
  
তিয়াসার সাথে বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে সব কেনাকাটা প্রায় শেষ এক পর্যায়ে।‌ দুই বাড়ির লোকজন, বন্ধু বান্ধব ও তাই জানে বিতনু ও বিয়ে করবে তিয়াসাকে ।।

মন থেকে প্রস্তুত তবুও পিছুটান এ রিমিতা।।

রিমিতা বিপুল এর সঙ্গে সুখী নয়। সে বিপুল কে বাড়ির মতে বিয়ে করেছিল ঠিকিই কিন্তু তার বিতনুকে পছন্দ ছিল এদিকে বিতনু  বলতৈ পারেনি আর বিতনু যখন জানতে পারলো রিমিতার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ।। তখন বিতনু  কিছু ই তেমন ভাবেনি আর তিয়াসাকে প্রোপোজ করেছিল।। তিয়াসাও হ্যাঁ বলে আর তারপর থেকে আজ এই চলছে।।
বিপুল প্রায়ই অফিসে র কাছে বাইরে থাকে রিমিতার সেটা পছন্দ নয় ও র সঙ্গে বিপুল এর দূরত্ব বেড়েই চলছে।
সেদিন দুপুরে রিমিতা খাবার কিনে বিতনুর বাড়িতে আর দুপুরের লাঞ্চ করবে বলে।।
দুপুর এর লাঞ্চ পুরোনো স্মৃতি বিজড়িত কলেজ এর সব কথা কত কি!!!
এর মাঝে হঠাৎ বেল বাজল ।।
দরজা খুলতেই তিয়াসা এসেছে বিতনু দেখলো।।
আর তিয়াসা দেখলো ফ্ল্যাট এ টেবিলে সাজানো খাবার রিমিতা বসে আছে।। তিয়াসা ভীষন বিরক্ত হলো। রিমিতা বললো, "তুই আসবি কিন্তু জানাস নি তো।।",
তিয়াসা বিতনুর দিকে তাকিয়ে আমাকে কি পারমিশন নিয়ে আসতে হবে।।"
তিয়াসা --" এই ফ্ল্যাট টা তো আমার আর তোমার জন্য কেনা তাহলে রিমিতা দি এ কথা বলছে কি করে।।
বিতনু-- "না না তাই নয় রিমিতা তা হয়তো বলেনি।।"
রিমিতা-- "হ্যাঁ একসাথে আমরা তিনজন লাঞ্চ টা করতে পারতাম।।"
তিয়াসা -- "আমি তো ভাবতেই পারিনি আবাক লাগছে বিতনু ,  তুমি তো বলোনি রিমিতা দি আসবে।।"
বিতনু - "আমি তো জানতাম না ও না বলেই এসেছে আর তুমি যে আসবে আজ সেটা তো বলোনি।"
রিমিতা-- "আমিতো প্রায়ই আসি এখানে বরং তোকেই আজ প্রথম দেখছি আসতে। তুই তো বলিসনি আসবি।।"

বিতনু--" রিমিতা প্লিজ তুই এবার থাম আমাকে তিয়াসা র সাথে কথা বলতে দে, দ্যাখ ভুল ধারণা করছে আর এই ফ্ল্যাট টা আমরা একসাথে থাকবো বলেই কেনা।।"

তিয়াসা --
"এর পর তো আমার মনে হয় না এই সম্পর্ক টার দরকার আছে, এই ফ্ল্যাট টা তো তুমি আমি একসাথে কিনেছিলাম এখন এখানে আসতে গেলে তোমার বন্ধু কে বলে আসতে হবে। তুমি এখন অন্য কারোর হয়ে গেছো।।"
বিতনু--"তুমি আবার ভুল বুঝছো রিমিতা বাড়িতে একা ছিল, বিপুল দা ট্যুরে,  তাই এখানে চলে এলো।।
তিয়াসা -- "হ্যাঁ সেই তো,আমি তো এসে তোমাদের অসুবিধা করছি চলে যাচ্ছি আমি , আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যে তুমি আমার সঙ্গে  আসলে কখনো ভালোবাসতেই পারোনি।। এই প্যাকেটটা তোমার বাড়ির থেকেই আমি আসছিলাম বিয়ের জামাকাপড়, যাক , বিয়ে যখন হবে না তখন তো এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।"

বিতনু -- "এসব কি বলছো বিয়ে হবে না কিন্তু কেন? আমি কোনো বন্ধু র সাথে বসে এক টেবিলে খেলে সেটা তে তুমি সন্দেহ করছো, এত এমন কি একটা ব্যপার।"

তিয়াসা -- "বন্ধুর একাকিত্ব এর সঙ্গী তুমি হবে আবার আমার সঙ্গে প্রেম প্রেম খেলা করবে।। এত কিছু র কষ্ট কেন নেবে তার চেয়ে আমি সরে যাচ্ছি তুমি যত ইচ্ছা তোমার বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারো।"

তিয়াসা বেরিয়ে যাচ্ছে তখন রিমিতা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে তিয়াসা  বলে এতই যখন বিতনুকে পছন্দ ছিল তাহলে বিপুল দা কে বিয়ে করেছিলে কেন? আর বিতনু বলতে পারতে যে তুমি ওকে ভালোবাসো তাহলে এই এত কিছু র মধ্যে আমি আসতাম না আর আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না।।

বিতনু তিয়াসাকে আটকাতে গেলে ও তিয়াসা চলে গেলো।।

কয়েকটা দিন পরে রিমিতা
র কাছে ফোন এলো বিপুল যেখানে আছে সেখান থেকে, বিপুল ওখানে অসুস্থ হয়ে গেছিল আর রিমিতা যেন এখুনি আসে।।
রিমিতা কি করবে কিছুই জানে না অসহায় লাগছিল তারপর বিতনুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলো কিন্তু বিতনু তিয়াসার সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় আপসেট ছিল। তিয়াসা সে বোঝাতে পারে নি,। রিমিতা সাহায্য চাইলে বিতনু সাহায্য করতে পারবে জানিয়ে দেয় ।
এদিকে রিমিতা অসহায় হয়ে তিয়াসার বাড়ি যায়। তিয়াসা রিমিতাকে দেখে অনেক অপমান করে।। তারপর রিমিতা তাকে বলে বিপুল এর কথা আর বলে বিতনু আপসেট তাকে নিয়ে তাই সে কোন সাহায্য করছে না।। আর রিমিতা একা কিভাবে কি করবে জানে না তাই তিয়াসা যদি বিতনু কে বলে। তিয়াসা শেষ পর্যন্ত বিতনু র কাছে গিয়ে সব সমস্যা মিটিয়ে নেয় আর রিমিতাকে  সাহায্য করতে বলে। বিনতু নিজের অপরাধ বোধ থেকে বেরোতে পারে আর রিনিতাকে সাহায্য করতে ওকে সাথে নিয়ে বিপুল এর কাছে।।
বিপুল ভীষন অসুস্থ, দীর্ঘদিন রিমিতা তার কোন যত্ন নেয় নি।। বিপুল বাইরে এসেও অবসাদে থাকতে থাকতে অসুস্থ।।  বিপুল কে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো ওরা।। অসুস্থ বিপুল বিছানায়।। ওদিকে বিতনু রিমিতার দরকার অদরকারের সঙ্গী। বিতনু র সঙ্গে রিমিতা জড়িয়ে যাচ্ছে, বিপুল এর চিকিৎসা চলছে কিন্তু রিমিতা বিতনুর সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠছে কোথায় যেন, যে ভালোবাসা রিমিতা সেদিন তৈরি করতে পারেনি আজ সেটাই ধীরে ধীরে তৈরি হতে চলে ছে যেন।।

বিপুল বুঝতে পারছিল আগেই তবু এখন আরো বেশি করে চোখের সামনে বিপুল এর দিন দিন তার বাঁচার ইচ্ছে কমছে। বিপুল  কিন্তু প্রথম দিকে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও এখন দিন দিন সে আর সাড়া দিচ্ছে না।।

তিয়াসা এখন অনেক তফাৎ।। বিতনু ও রিমিতার সংসার ঠিক করতে তিয়াসা র থেকে কখন আলাদা হয়ে গেছে নিজেই জানে না।।
হঠাৎ তিয়াসা শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো অফিস চেঞ্জ করে এখানে সব ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে ভাবলো।। বিতনু র ভালোবাসা হারিয়ে তিয়াসা হতাশায় ছিল।।বিতনুকে কোনো দিন আর ফিরে পাবে না। সে কথা ভেবে ভীষন ভেঙে পড়লো।।
তিয়াসা শেষ পর্যন্ত চলে গেলো শহর থেকে অনেক দূরে।।

কেটে গেল প্রায় একটা বছর।।
বিতনুতো এতদিন রিমিতার বাড়িতে ছিলো। কিন্তু রিমিতার সাথে সে ইদানিং বিপুল দা র মিটমাট করানোর চেষ্টা করছিল।। বিপুল ও আসতে আসতে সুস্থ হচ্ছে।। বিতনু রিমিতাকে কে বিপুল এর সাথে মন দিয়ে সংসার টা করতে বলে।। রিমিতা ও সেই চেষ্টা শুরু করে।।

একদিন হঠাৎ বিতনু  নিজের ফ্ল্যাট এ গেলো। তিয়াসার কথা মনে পড়লো। তিয়াসার সাথে তার আর সংসার করা তো হলো না। তিয়াসা কেমন আছে, কি করছে , অনেক দিন তো যোগাযোগ করে নি সে আজ একবার ফোন করি এই ভেবে ফোন করলো। ফোনটা তিয়াসা র মা ধরলো। বিতনু জানতে পারলো তিয়াসা সব কিছু ছেড়ে শুধুমাত্র বিতনুর জন্য আজ শহর থেকে দূরে সরে গেছে।। ।।

বিতনু জানতে পারলো । তিয়াসা অন্য জায়গায় তিয়াসা সব ছেড়ে এখান থেকে চলে গেছে আর এর জন্য তিয়াসার মা বিতনুকেই দায়ী করে বলে. "তুমি ওকে ঠকিয়েছো আর তাই তো হতাশা নিয়ে এখান থেকে চলে গেছে।। বিতনু কি করবে জানে না। বিনতু শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো সে তিয়াসার কাছে যাবে।।

রিমিতার ফোন, "তুই কোথায়? বাড়ি ফিরবি না।। "

বিতনু বলে, "আমি আজ থেকে আমার ফ্ল্যাট এ থাকবো, তোর যা দরকার বলবি আমি যাবো,

রিমিতা --"তা কি করে হয় অসুস্থ একটা  মানুষ কে নিয়ে আমি একা কি করবো।। "
বিতনু -- "তোকে একাই সামলাতে হবে কারন আমি তিয়াসার কাছে যেতে চাই, তাছাড়া বিপুল দা তোর ভালো বাসার অপেক্ষা করছে তুই একটু বিপুল দার যত্ন নিলেই সব ঠিকঠাক হবে, এবার তুই বিপুল থাকে সময় দে, ।"

এরপর বিতনু তিয়াসার ঠিকানায় পৌঁছালো ।।
তিয়াসা বিতনু মুখোমুখি
বিতনু --" তুমি এভাবে আমাকে না বলে  বলে চলে এলে কেন?"
তিয়াসা --" তুমি তো এখন অন্য কারোর আমার নয় তাই  এদিকে রিমিতা দি যেভাবে তোমাকে চাইছিল তাইতো ।। "
তিয়াসার চোখ এ জল এলো।।

বিতনু তিয়াসার কাছাকাছি বললো, আরো একবার তুমি যদি আমাকে একটু বিশ্বাস করো তাহলে আমরা কি নতুন করে শুরু করতে পারতাম না।। "
তিয়াসা--"কিন্তু রিমিতা দি তো তোমাকেই..
বিতনু থামিয়ে বললো, "আমি সব টা ছেড়ে তোমার কাছে এসেছি তাছাড়া রিমিতা নয় আমার ভুল আমি যদি সেদিন রিমিতাকে প্রশয় না দিতাম তাহলে এত সমস্যা তৈরি হতো, আমি শুধু তোমার হতে চেয়েছি কিন্তু শুধু মাঝখানে এই জটিলতা আমি নিজেই নিজেকে ঠিক পথে নিয়ে যেতে পারিনি।।"

তিয়াসা-- আচ্ছা বিপুল দা কেমন আছেন?
বিতনু -- "এখন অনেক টা ভালো আর রিমিতা র জন্য ই বিপুল দা অসুস্থ হয়েছে আমি রিমিতাকে বলেছি।।"

বিতনু আবার বললো আর ও একবার তুমি যদি আমাকে সুযোগ দাও আমি আজ শুধু তোমার কাছেই এসেছি সব জটিলতা কে দূর এ রেখে।। তুমি কি আমাকে পারো না আর একবার...

তিয়াসা থামিয়ে বিতনুর হাতে হাত রাখল আর নতুন করে শুরু করার জন্য ভাবলো।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama