STORYMIRROR

Riya Roy

Drama Romance Fantasy

4  

Riya Roy

Drama Romance Fantasy

জোড়া কবুতর

জোড়া কবুতর

13 mins
297

চন্দ্র স্যারের কোচিং এ ওরা পড়ে বাংলা, এবার মাধ্যমিক দেবে। সৃজনী, লিজা, মানালী, নন্দনা, এবং ছেলে দের মধ্যে অমিয়, রিপন, সমীক, সাগর, দীপ। ক্লাস চলাকালীন একদিন চন্দ্র স্যারের একটা প্রশ্ন এর উওর নন্দনার দেওয়ার পর স্যার বললেন, "এই রকম যদি উত্তর দাও তবেই বাংলায় লেটার পাবে, নন্দনার বাংলার উওর গুলো খুব চমৎকার হয়।" 
সৃজনী -- "জানেন স্যার ও না দারুন কবিতা ও আবৃত্তি করে আমার ওর তো একি স্কুল, প্রত্যেক স্কুলে র অনুষ্ঠানে ওর আবৃত্তি, কি দারুন।। "

স্যার---" তাই নাকি!! একদিন তাহলে আমাদের এখানে শুনিও।"

দীপের বরাবর নন্দনা কে পছন্দ নন্দনার সব কিছুই ওর খেয়াল রাখা চাই শুধু নিজেকে কখনো নন্দনা র কাছে প্রকাশ করতে পারে নি তবে সৃজনী এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারতো আর নন্দনা বলতো, কিন্তু নন্দনা সে কিছু বুঝতে পারতো না তবে দীপকে তার বেশ ভালো লাগতো।

ওই দিন তারপর দীপ বলে উঠলো, -- "কি একটা কবিতা এখন শোনা দেখি,  স্যার ও তো শুনতে চাইছেন।"

দীপ  নন্দনাকে  পছন্দ করার পর ও সে মাঝেমধ্যে উল্টো ভাবতে থাকে দীপের হঠাৎ মনে হতে থাকে নন্দনা অমিয়কে ভালোবাসে, তাই অমিয় কে বলে নন্দনা ভালো মেয়ে মানালীর থেকে ও।। আবার নন্দনা কে বলে অমিয় হয়তো তোকেই পছন্দ করে ।।


 কবিতা আবৃত্তি র কথা শুনে মানালী একটু বাঁকা ভাবে বললো--" এখন কি পারবি মনে আছে? মানালী একটু হিংসে করে নন্দনাকে কারন অমিয় র প্রতি মানালী র ইন্টারেস্ট আর অমিয় র ও তাই কিন্তু মাঝেমধ্যে নন্দনা র দিকে অমিয় র ঝুঁকে থাকা টা মানালী সহ্য করতে পারে না।।

নন্দনা কোচিং এ সেদিন আবৃত্তি করলো রবীন্দ্রনাথ থেকে" আমরি চেতনায়..

চন্দ্র স্যার ভীষণ খুশি হয়ে বললেন, " তুমি তো সত্যিই সুন্দর আবৃত্তি করো" , বাকি রা ও করলো নন্দনা র প্রশংসা।।


ক্লাস শেষে সবাই বাড়িতে ফিরবে ব্যাগ গোছানো চলেছে, 
 মানালী বললো--" আমি বাংলা নিয়ে পড়বো না সাইন্স নেবার ইচ্ছে তাই এসব বাংলায় লেটার পেয়ে কি করবো।

 অমিয় --" আমার ও সাইন্স নেবার ইচ্ছে আছে।।"

অমিয়-- " নন্দনা তুই আবৃত্তি টা দারুন করিস। "

দীপ-- "যাক স্বীকার করছিস তাহলে।।"
মানালি বাঁকা ভাবে বললো-- "ভালো কে তো ভালো বলতে হবে তাই না।"

এরপর মাধ্যমিক শেষ হলো একদিন ....

তারপর ...
ওরা একদশ শ্রেনীতে উঠলো সবাই।।

 বাংলা কম্পালসারি তাই সবাই আবার চন্দ্র স্যারের কোচিং এ। ।

এদিকে সৃজনী সমীক এর মধ্যে একটা রিলেশন তৈরি হয়েছে সবাই ওদের দেখলেই জোড়া কবুতর বলে ডাকে।। ওদের ও কোন অসুবিধা নেই বেশ এনজয় করে ব্যাপারটা।। অন্যদিকে নন্দনা আর অমিয় র বন্ধুত্ব গড়ে ওঠলেও তার মাঝে মানালির প্রবেশ ।তারপর মানালির প্রতি অমিয়র দূর্বলতা এবং এখন মাঝেমধ্যে মানালি সঙ্গে মতের মিল না হলে নন্দনার সঙ্গে দেখিয়ে দেখিয়ে এমন করে কথা বলে অমিয় যাতে মানালি র জেলাস হয় আর তেমনই হয়ে যায় মানালি নন্দনা সঙ্গে ঝগড়া করে।।

 ওদিকে আবার দীপ নন্দনা ভালোবাসে কিন্তু বলে উঠতে পারেনা উল্টে অমিয় সুখ্যাতি করে নন্দনা র কাছে আবার নন্দনা সম্পর্কে ভালো ভালো কথা অমিয় কে বলে ওদের সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া র চেষ্টা করে।।  
আর অমিয় কে বলে যে মানালি ঠিক সুবিধার মেয়ে নয় নন্দনা কিন্তু খুব ভদ্র মেয়ে।। নন্দনার অমিয় র ব্যাপারে তেমন কোনো ইন্টারেস্ট নেই।। বরং দীপ র কথার পাগলামি বেশ পছন্দ।। 

সেদিন ক্লাসে লিজা বললো-- "দ্যাখ মানালি , নন্দনা ও কিন্তু সাইন্স নিলো আর মাধ্যমিক এ বাংলা তেও ভালো পেয়েছিল।।

মানালি -- "এখন তো উচ্চমাধ্যমিক এখন কি হয় সেটাই দেখার অঙ্ক, ফিজিক্স কেমিস্ট্রি। নন্দনার কোনটা ভালো লাগে কে জানে ??"

নন্দনা-- "বায়োলজি টা তো বাদ দিলি। তোর আর অমিয় র তো প্রিয় সাবজেক্ট ফিজিক্স আমার নয়।"

দীপ-- "ঠিকই তো সবার কি সব বিষয় পছন্দ হয়।
নন্দনা তো বায়োলজি কেমিস্ট্রি বেশি ভালো।"

সৃজনী --" বাব্বা নন্দনা কিসে ভালো তুই এত ডিটেল  জানিস। কি ব্যাপার বলতো।
আমরা অবশ্য আর্টস এর মানুষ, এসব জানি না বাবা।। "

মানালি--" তোরা কি নিয়ে এরপর এগোবি ভেবেছিস?"

রিপন, লিজা একসাথে বলে উঠল--- "আমরা তো ল' পড়বো ভেবে নিয়েছি।"

সমীক -- "দুজন এ একসাথে যুক্তি করে ল' কি ব্যাপার তোদের, কিছু একটা ... যাইহোক!! " 

সাগর-- "ভিতরে ভিতরে অন্য খেলা চলছে এই আর কি। সামনে বোঝা যাচ্ছে না!"

অমিয় -- "তাই সবাই তো আর জোড়া কবুতর নয় যে সবাই কে দেখিয়ে দেখিয়ে করবে।।"

সাগর --- জোড়া কবুতর হতে কতক্ষন আমার তো মনে হয় রিপন লিজা কিরে...!!"

লিজা-- " যা খুশি ভাবতে পারিস কিছু মনে করবো না।"

দীপ -- "দিন দিন এই বাংলা কোচিং টা সিনেমা র মতো হয়ে যাচ্ছে।।"

রিপন --" হ্যাঁ মাঝেমধ্যে লাইভ প্রেম লাইভ ঝগড়া ও দেখা যায়।"

সৃজনী -- "দেখিয়ে দেখিয়ে না করলেও ঝগড়া র আড়ালে অনুরাগ তো সবাই আমরা জানি, কি রে মানালি ঠিক বললাাম তো ।"

প্রতিদিন ক্লাস গুলো এই ভাবে ই এগিয়ে যেতো।।

একে অপরকে নিয়ে খুনসুটি করে আর কারোর মধ্যে রিলেশন তৈরি হলেই আজ থেকে ওরা জোড়া কবুতর এই নাম দিয়ে সবাই হাসাহাসি করতো।।

দেখতে দেখতে উচ্চমাধ্যমিক ওদের শেষ হয়ে গেল।। যে যার পছন্দ এর কলেজ
আর কলেজ চলাকালীন একে অপরের সঙ্গে নতুন করে আবার আলাপ হলো যেন, 
বছর গুলো একে একে পেরোলো। 

এরপর সমীক আর সাগর প্ল্যান করলো ওরা যদি সবাই কে ডাকে একটা কোথাও দেখা করা বা কয়েকটা দিন একসাথে কাটানো, 
ব্যাস সাগর একটা সমুদ্র এর ধরে রিসট বুক করলো আর সবাই কে ডাকলো।। 
যথা দিনে যথা স্থানে সবাই এসেছে।। সবাই চায় কোচিং এর সেই বন্ধুত্ব এর দিন গুলো একসাথে কাটাতে।। 

এখন সবাই প্রায় চাকরি করছে,  কেউ কেউ বিজনেস, নিজেদের কাজে ব্যস্ত তবু ওরা সেই কোচিং এর দিন গুলো কে ফিরে পেতে চলে এলো। 

সৃজনী সমীক খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছা। সাগর বাড়ির পছন্দ করা পাত্রীকেই বিয়ে করবে সেই টাই ফাইনাল।। লিজা রিপন এর বিয়েটা নিয়ে প্রচন্ড ঝামেলা চলছে লিজা খ্রিস্টান তাই রিপন এর বাড়িতে আপত্তি তবে ওরা জানালো বাড়ির অমতেই বিয়েটা করবে। আর পাশে বন্ধুদের চায়। 
এদিকে মানালী অমিয় এখন ও প্রেম কম ঝগড়া বেশি করে । আর দীপ নন্দনা কে আজ ও বলতে পারেনি। নন্দনা এখন আন্দাজ করলেও দীপের জন্য কি বলবে জানে না। 

সবাই একসাথে রীতি মতো খুব খুশি এতদিনে র বন্ধুত্ব আবার করে জেগে উঠেছে। পুরানো স্যারর কোচিং এর গল্প শুরু হয়ে গেলো। হাসির শব্দ, একে অপরকে দোষারোপ আবার ওদের ক জন এখন এখানে পারফেক্ট জোড়া কবুতর হয়েছে সেই নিয়ে খুব কৌতুহল হয়ে একে অপরকে প্রশ্ন।।

সেদিন একটু রাত থেকেই ছেলেরা এক্সাইডেড হয়ে সবাই এর হাতে নেশার গ্লাস, 
সৃজনী নন্দনা দুজনেই জানালো ওরা ড্রিঙ্ক করতে ইচ্ছুক নয় ।
ওদিকে লিজা মানালী রীতিমতো মতো ড্রিঙ্ক করে আবোল তাবোল বলতে শুরু করলো।।
অমিয় র সঙ্গে একটা ঝগড়া হলো মানালি, রিপন লিজার প্রায় হাতাহাতি লেগে যাচ্ছিল।

সাগর বলে উঠলো--" এমন হলে কিন্তু তোরা পারফেক্ট জোড়া কবুতর হতে পারবি না।।
ঝগড়া কম প্রেম বেশি তবেই জোড়া কবুতর হবি।"

এই শুনে সবাই হেসে উঠলো।

দীপ নেশার ঘোরে হাসতে হাসতে বললো," পারফেক্ট জোড়া কবুতর হতে এদের তাহলে কতদিন লাগবে বলে তুই মনে করছিস?"


সমীক-- "আমি আর সৃজনী কত তাড়াতাড়ি জোড়া কবুতর .... বলে সৃজনী কে সমীক জড়িয়ে ধরতে গেলে সৃজনী বলে -- উহঃ মাতলামি বন্ধ করবি তোরা।।"
 
সৃজনী, নন্দনা দুজনেই থামানোর চেষ্টা করলো সবাই কে
 তারপর, 
শেষ পর্যন্ত সবাই যার যার রুমে গেলো ।।

নন্দনা, যে রুমে ছিল ওটার সামনে বারান্দা আর ওই বারান্দার সোজা রুমটা য় ছিল আমিয় দীপ আর সাগর একসাথে ছিল। বাকিরা সবাই কেউ সিঙ্গেল তো কেউ একসাথে দুজন করে রুমে ছিল। নন্দনা রুমে একা ছিল।


ওই দিন তখন রাত প্রায় '১টা' বাজে, সবাই নেশা করেছিল তাই যার যার রুমে। নন্দনা একা দাঁড়িয়ে বারান্দায় ।।
ওদিকে একটা ফাঁকা গ্লাস হাতে দীপ রুম থেকে বেরোলো তারপর নন্দনা কে দেখে চলে এলো।
নেশার ঘোরে দীপ কথা বলে চললো, "একি ই নন্দনা দাঁড়িয়ে কেন ?ঘুম নেই তোর?.."
নন্দনা --
"তুই ফাঁকা গ্লাস হাতে কেন? 

দীপ নেশার ঘোরে বললো--"জল তেষ্টা কোথায় জল পাবো তাই আর অমিয় সাগর সব তো ঘুমচ্ছে ।"
নন্দনা --"দে গ্লাসটা.."
নন্দনা রুমে গিয়ে জল ভরতে শুরু করলো।
দীপ নন্দনা র রুমে ঢুকলো। 
নন্দনা গ্লাস এর জল এগিয়ে দিয়ে বললো এই নে...
দীপ নেশার ঘোরে নন্দনা র হাত টা জোরে চেপে ধরলো আর তার পর বিছানায় বসে পড়লো নন্দনা ও হেঁচকা টানে বিছানায় বসলো আর হাত থেকে গ্লাস টা পড়ে ভেঙে গেল।।

নন্দনা ভীষণ ভয় পেলো।।
এরপর দীপ নেশার ঘোরে এমন অনেক কথা বলতে শুরু করল যা নন্দনা অবাক হয়ে শুনলো।। 
 ধীরে ধীরে দীপ কথা বলতে বলতে নন্দনা র বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো।।
নন্দনা ভাঙা কাচ এর টুকরো টুকরো গুলো তুলতে গিয়ে হাত কাটলো রক্ত পড়তে শুরু করলো সবটা পরিষ্কার করে।
 তাড়াতাড়ি নন্দনা হাতে রুমাল দিয়ে চাপলো কি করবে দিশা হারা রাতটা ঠিক করলো ঘরের পাশে রাখা চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে কাটাবে, এদিকে দীপ সম্পূর্ণ বেহুঁশ।।

পরের দিন ভোরবেলায়।।

লিজা দেখতে পেলো নন্দনা রুমের বিছানায় দীপ ঘুমচ্ছে, নন্দনা টেবিলে।। লিজা সৃজনী কে ডেকে বললো সমীক ও জানলো এরপর ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলো।। সমীক -- "দীপ কি কখনো মনে র কথা বলবে নন্দনা কে সেই কোচিং থেকে তো এভাবেই দেখছি।"
লিজা-- "আমি ভালো জানতাম না সৃজনী ঠিকঠাক আন্দাজ করেছিল।। কিন্তু নন্দনা ও কি জানে।।"
সৃজনী -- "কিন্তু কাল কি হয়েছিল ওদের মধ্যে যে রুমে এভাবে।। "
সমীক -- "আচ্ছা শোন আমরা যে এটা দেখেছি এটা কিন্তু ওদের কে কেউ বলবি না তাহলেই সব গন্ডগোল হয়ে যাবে।"
সৃজনী -- "হ্যাঁ ঠিকই, ওরা যদি নিজেদের না বোঝে তাহলে আমাদের ই একটা প্ল্যান করে ওদের মধ্যে ঠিকঠাক করে দিতে হবে।"
লিজা --"এই ব্যাপারটা কিন্তু আর বেশি কাউকে বলার দরকার নেই কি হচ্ছে আগে জানা দরকার।"
সমীক-- "হ্যাঁ .. মানালি তো নন্দনা তেমন পছন্দ করে না তেমন একটা।।
সৃজনী -- "আর অমিয় টার  মাথায় কিছু ই নেই নন্দনা দিকে মাঝেমধ্যে ছুঁটে যায় এদিকে প্রেম করছে মানালি র সাথে।"

সমীক -- কিছু ই না ওর একটু মাথায় সাইকো, আর দীপ ও তেমন এতদিনে বলতে পারেনি নন্দনা কে।। উল্টে অমিয় কে নন্দনা ভালোবাসে কিনা সেই পরীক্ষা চালিয়েছে। তোদের কি মনে হয় নন্দনা সেটা বোঝে নি। তাই হয়তো অভিমান করে দীপকে কিছু বলে নি।। "

লিজা-- "সব তো বুঝলাম কিন্তু কাল কি এমন হলো যে নন্দনা রুমে দীপ ঘুমলো।। "

সৃজনী --" সেটাই তো।। "

সমীক -- "আর নন্দনা ঘরের দরজা টা খোলা ঘরটাও তো এলোমেলো।। চল ব্রেকফাস্ট করতে হবে।।আজ তো একটা কোথায় ঘোরার প্ল্যান ছিল।"


সৃজনী -- হ্যাঁ চল.."



 এদিকে 
দীপ ঘুম ভেঙে উঠে দেখে অবাক নন্দনা র ঘরে।
এদিকে নন্দনা টেবিলে মাথা হাতে বাঁধা রুমাল টা রক্তে লাল।।
দীপের আবছা আবছা মনে পড়ছে কিন্তু নন্দনা র হাতে রক্ত দেখে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে গেলো নিজের ব্যাগে রাখা ওষুধ নিয়ে আসলো।। তখন ও সব ঘরে সবাই ঘুমচ্ছে।। নন্দনা র হাতে ওষুধ লাগাতে গেলে নন্দনা জেগে গেলো।।


দীপ বললো, " কিকরে এটা হলো?"

 নন্দনা বললো, " তোর মনে নেই কালকে র কথা .."

দীপ-- "না মানে কালকে নেশাটা বেশী ছিল তাই , কেন আমি কি কি করেছি ?"

নন্দনা --"তুই রুমে যা, পরে এসব নিয়ে কথা বলবো আমার খুব মাথাব্যথা করছে, শরীর টা ভালো লাগছেনা, রক্ত টা বন্ধ হয়ে গেছিল রাতেই চেপে ছিলাম তাই রুমাল টা, খুব একটা কাটেনি"

দীপ আর কিছু বললো না কিন্তু ও কি কি বলছে কি করছে সেগুলো নিয়ে চিন্তায় চলে গেল রুমে গেলো।।

কিছু ক্ষণ পর বাকিরাও একে একে ঘুম থেকে উঠলো ব্রেকফাস্ট করছিল কিন্তু নন্দনা নেই দেখে
অমিয় প্রশ্ন করলো-- সৃজনী কে " এই নন্দনা কোথায় ওকে একবার ও সকাল থেকে দেখেছি না।।"
 
লিজা --"আমি ব্রেকফাস্ট এর কথা জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম ওকে ও বললো ওর জ্বর এসেছে ওর মাথা ব্যাথা করছে। তাই কিছু খাবে না।"

মানালি ---"সেকি ওষুধ আছে ওকে তো দেওয়া দরকার, জ্বর টা কত?"
লিজা -- "সেটা জানি না!"
অমিয় -- "চল একবার দেখে আসি ওকে।
রিপন -- "এখন ওর হঠাত জ্বর এলো। আজ তো আমাদের রিসর্ট থেকে ঘুরতে যাওয়া কথা ছিল।"
সাগর--" সেরকম হলে ওটা আজ বন্ধ থাকবে।
সমীক --" নন্দনা শরীর টা কি খুব খারাপ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার কি জানতে হবে।"
সাগর --" সেরকম হলে কাছাকাছি ডাক্তারের খোঁজ করতে হবে।"
সৃজনী -- "কিন্তু ওর জ্বর এলো কেন কালতো ও আর আমি একমাত্র নেশা করিনি তো দিব্যি ভালো ছিল।"
সৃজনী -- দীপ কোথায়? সাগর কাল দীপ রাতে কোথায় ছিল।
আমিয়-- কোথায় থাকবে আমি সাগর আর দীপ তো একসাথে, আমাদের সাথে ছিল, 
সাগর-- "কাল নেশার ঘোরে মনে নেই কি করছি তবে দীপ আমাদের সাথেই ছিল,ভোরে অবশ্য ওকে দেখি নি।। হয়তো রুম থেকে বেরিয়ে ছিল।।"

রিপন -- "কেন কি হয়েছে? দীপ তো ব্রেকফাস্ট ও করেনি তাই না।"

লিজা-- "আমি তো দেখছি না ওকে কি হলো কোথায় ও
সাগর--- "দাঁড়া ওর ফোনে একটা কল করি দেখি কি হয়।
ফোন বেজে কেটে গেলো।।


এরপর সবাই গেলো নন্দনা র রুমে।।

অমিয় নন্দনা কে গিয়ে বলল, " কিরে জ্বর হল কিরে?"
নন্দনা --- "কালকে ঘুম আসছিল না তাই বারান্দায় ছিলাম বোধহয় ঠান্ডা লেগে।"
অমিয় নন্দনা র কপালে হাত দিয়ে বেশ জ্বর তো কি হবে ওষুধ আছে তোদের কাছে ?"
অমিয় র সেবা দেখে মানালী র হিংসা হলো।।
মানালি বললো, " তোর কাছে থাকলে দিয়ে দে।।"

অমিয় বিরক্ত  হয়ে বলে উঠলো, "আশ্চর্য লাগছে ওর কিন্তু জ্বরটা সিরিয়াস আর তুই এখন ও...বাজেকথা বলছিস।"
মানালী--"হ্যাঁ হ্যাঁ সেই তো আমি বাজে বলছি।"
সমীক --"উহ তোরা থামবি কাছাকাছি ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ তো আনাই যায় তাতে হয়ে যাবে ।বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের কথা ভাবতে হবে।।"
 সৃজনী বললো ," একদম তাই।।"
অমিয়---" যা তাহলে ওষুধ টা আন।।"
মানালি -- "তুই ও যা সমীকের সাথে।। "
অমিয় --"নন্দনা র সঙ্গে তো থাকতে হবে।। জল পট্টি দিতে হবে।।"
মানালি -- "আমরা তো আছি এত জন তোকেই সব করতে হবে।।"
 লিজা -- "আচ্ছা জল পট্টি আমি দিচ্ছি।"

 সৃজনী দেখলো দীপ ঢুকছে ঘরে হাতে ওষুধ এর স্ট্রিপ।। সৃজনী কিরে তোর কাছে ওষুধ ছিল। 
দীপ লিজাকে বললো জল পট্টি দিস না ওকে
অমিয় -- কেন দেবে না জ্বর ওর...
দীপ বসলো নন্দনা র কাছে রিপন দীপকে বললো জলের বোতল ওই দিকে।।
দীপ বললো, " নন্দনা... ওষুধ খেয়ে নে।।
নন্দনা অসুস্থ অবস্থায় দীপের দিকে তাকলো দিশেহারা হয়ে ওষুধ টা নিলো।।
সৃজনী কে বললো আমার ঘরের টেবিলে একটা মাথা ব্যাথা র বাম আছে নিয়ে আয় তো।।
সৃজনী গেল।।
স‌জনী এনে দিলো।।
সাগর বাকিরাও কৌতুহল এ জিজ্ঞেস করলো ওর মাথা ব্যাথা এটা তুই জানলি কি করে।।


দীপ না মানে মনে হলো জ্বর হয়তো মাথা ব্যাথা হতে পারে।।

নন্দনা ---"তোরা কোথায় একটা আজ যাবি বলেছিলিস তোরা প্লিজ যা আমার শরীর টা ভালো নয় আমি রুমেই থাকবো।।
লিজা-- "কিন্তু তোকে একা ফেলে আমরা।"

নন্দনা -- "কিছু হবে না।। তোরা যা
সৃজনী সমীক একসাথে বললো, "আচ্ছা দুপুর এর মধ্যে ফিরে এসে লাঞ্চ টা করবো তোর সাথে তাহলে চল।।"

সবাই গেলেও দীপ গেলো না কিছু তেই।। দীপ থেকে গেলো।
অমিয় প্রশ্ন করলেও, লিজা সৃজনী অমিয়কে সরিয়ে নিয়ে গেলো। 

বাকিরা বেরিয়ে পড়লো...

বেশ কিছু সময় পরে.....

দীপ এলো নন্দনা র ঘরে তখন জিগ্গেস করলো

 নন্দনা-দীপ দেখে বলে উঠল-- "কিরে তুই যাস নি।।
দীপ না আসলে আচ্ছা ...
তোর মাথা ব্যাথা টা কমেছে।।"

নন্দনা --" আমার যা কিছু হোক তোর কি।।"


দীপ--" তুই কি রাগ করেছিস
দ্যাখ আমি তোকে নেশার ঘোরে কি বলতে কি বলছি। প্লিজ কিছু মনে করিস না আমার জন্য ই তোর আজ শরীর টা খারাপ হলো। "

নন্দনা -- " আমি এটা ভাবিনি যে তুই আমাকে ঠকাছিস। আমাকে এভাবে..."

দীপ বলে উঠলো---"আমি কি ঠকিয়েছে তোকে.. তুই ভুল বুঝছিস।

নন্দনা -- "দিনের পর দিন এই কথা বলা অমিয় তোর জন্য পারফেক্ট আর একদিন ঠিক তোর কাছে আসবে মানালি ঠিক ওর টাইপ নয় তোর সাথে ওকে মানাবে।"

দীপ ---"আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো ওকে পছন্দ করিস আর মানালি অমিয় ঝামেলা হতো দিন রাত তখন অমিয় যেতো তোর সাথে কথা বলতো সেটাতে মনে হতো ওর হয়তো তোকে কোথায় ও পছন্দ কিন্তু বোঝাপড়ার গন্ডগোল এ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না।। কিন্তু..."


নন্দনা বললো, "তাই বলে তুই এভাবে... তোর এত ইগো যে কথা টা সোজাসুজি বলতে পারিসতিস।

দীপ--"তুই যে আমাকে একসেপ্ট করবিই সেটা কি করে বুঝতাম। তুই তো কখনো আমাকে।"

নন্দনা--  আমি কি আমি কি বল...কেন কোচিং এ কত সময় কথা হয়েছে, কোচিং থেকে ফেরার সময় কত কথা হয়েছে। "

দীপ --"তারপর এত গুলো দিন সেভাবে..."


নন্দনা-বলে উঠো--"ফোনে কথা হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় তোর পোস্ট এ নিয়মিত আমি এসেছি। সেটা কি একটা সম্পর্ক এর সেতু ছিল না? ফোন ও তো তুই সেই অমিয় কে নিয়ে ই আমার পরীক্ষা করে গেছিস কিন্তু  সত্যি টা বলতে এত দ্বিধা।

দীপ ---"আসলে আমি.. না না পরীক্ষা নয় তুই ভুল বুঝছিস আমাকে ।"

 নন্দনা -"আসলে তুই তোর ইগো আর ভুল বিষয় চিন্তা এটাই তো ছিল বলে নন্দনা বারান্দায় এলো রুম থেকে।।

এই ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কথা কাটাকাটি চলছিল এদিকে বাকিরা সবাই ফিরে এসেছে। সবাই নন্দনা র রুমের দিকেই আসে অনেক টা কৌতুহল নিয়ে।। সবাই চায় দীপ আর নন্দনা সম্পর্ক টা ঠিকঠাক হোক।



দীপ এবার নন্দনার হাত ধরে প্লিজ, "আমি আমার সমস্ত কিছু র জন্য ক্ষমা চাইছি। তুই কি পারবি সব ভুলে গিয়ে.."


ইতিমধ্যে  সবাই  এই রকম দেখে একে অপরের দিকে তাকলো হেসে উঠলো আর হেসে উঠলো।।

দীপ নন্দনা দুজনেই চমকে গেলো, দীপ হাত ছেড়ে দাঁড়ালো।।

 রিপন ---"ও তোরাও তাহলে জোড়া কবুতর হয়ে গেলি।"

 অমিয় ---"আচ্ছা এই ব্যপারটা তাহলে গোপনে গোপনে,কিরে দীপ ভালোই অভিনয় করছিলিস এতদিন।"

 মানালি --"কি কি অভিনয়, তাছাড়া  দীপ  নন্দনা একে অপরকে  পছন্দ করে কই আমি তো জানতেই পারিনি। আমি তো বরাবর নন্দনাকে ভুল ই বুঝতাম। "

সমীক--"তোর ভুল বোঝার জন্য এই অমিয়ই দায়ি।"

অমিয় মানালির কাছে ঘেঁষে বললো আমি কিন্তু তোকে তোকেই ভালোবাসি এটাই সত্যি শুধু দীপটাই মাঝেমধ্যে খালি উল্টো পাল্টা বোঝাতো।"

দীপ -- "মোটেই না তোর ও অনেক দোষ ছিল।"

সৃজনী-- "আচ্ছা  ঐসব ছাড়  এখন সব কিছু মিটে গেছে।"

লিজা --" কি যে ভালো লাগছে ভাগ্যিস এখানে ঘুরতে এসেছিলাম।"

সাগর--" প্ল্যান টা কিন্তু আমার ছিল তাই তো আরও জোড়া কবুতর তৈরি হয়ে গেল।"

সবাই হেসে উঠলো..

সমীক --" এই দীপ মুখ টা এরকম পাঁচে মতোন কেন রে এখন ও।"

সৃজনী-- " নন্দনা কিরে তোর কি দীপের উপর অভিমান।


দীপ  --" তাই হবে ও তো কিছু বলছি নি, 

নন্দনা--" কি বলবো ..কথা বলতে বলতে নন্দনার মাথা ঘুরছিল দীপ তাকে ধরলো।

নন্দনা দীপের দিকে তাকিয়ে হাসলো বললো " আমি কিন্তু অনেক আগেই আশা করেছিলাম তুই আমায় বলবি কিন্তু কত দেরি করলি।"

লিজা সৃজনী সমীক সবাই--" এবার দীপ নন্দনা র বললো তো তোর লজ্জা পাওয়া উচিত এতগুলো দিন..."
 অমিয় --" সত্যি দীপ... 

মানালি --" সব যখন ঠিকঠাক হয়েই গেল  সকাল থেকে সে ভাবে কিছু নন্দনা কিছু খাসনি বলেই মাথা টা তো ঘুরলো হলো।"

রিপন -- "লাঞ্চ টা তাহলে দিতে বলি এবার।"


সবাই ওরা লাঞ্চ খেতে গেলো। লাঞ্চ টেবিলে ঠিক পায়রা র মতো ওরা বকবকম করেই গেলো। নিজেদের খুনসুটি চলছিল।। এরমধ্যেই 
দীপ নন্দনা অসুস্থ বলে খাইয়ে দিতে গেলে তখন  সাগর বললো সবাই একবার তাকিয়ে দেখো --" এই কবুতর তো ভীষণ কেয়ারিং,এত প্রেম কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলিস।। 

 বাকিরা সবাই জোরে হেসে উঠলো।। 







 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama