ঝিলের ধারে আর কিছু রহস্য
ঝিলের ধারে আর কিছু রহস্য
সকাল বেলা বিছানায় হঠাৎ ধড়পড় করে উঠে শ্যামশ্রী বসলো ।তারপর চারিদিকে তাকালো ,দেখলো বইটা খোলা টেবিলে গতরাতে পড়েছিল। তারপর সব কিছু ঘরে অগোছালো।। জানলাটা খুললো তাকালো এদিকে ওদিকে ।। শ্যামশ্রী ঘর থেকে এবার বেরিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে বললো, মা ও মা.. "তুমি লোলো কে দেখছো? "
শ্যামশ্রীর মা নীলা বলে উঠলো, "রাতেই তো ছিলো এদিকে ওদিকে আছে দুপুরের দিকে ও আসবে খাবার সময় কিন্তু তোর কি হলো হঠাৎ সকাল থেকেই লোলোর খোঁজ নিচ্ছিস।। "
শ্যামশ্রী রান্না ঘর থেকে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যাবে তখন নীলা বলল, "শোন শ্যামু আজ কি স্কুলে যাবি ? আজ আবার তোর পিসিরা আসবে মনে আছে তো।। বিদিশা কিন্তু তোর সাথে তোর ঘরে থাকবে ঘরটা গুছিয়ে রাখিস।।"
বিদিশা শ্যামশ্রীর পিসির মেয়ে।। দুজনে সমবয়সী এবছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে দুজনেই।।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সুবীর অর্থাৎ শ্যামশ্রী র বাবা স্নান করে নীচে নামলেন অফিস যাবেন তার আগে খেয়ে বেরোন।।
নীলা ভাতের থালা সাজিয়ে দিলো তারপর বললো, "শোনা অফিস থেকে ফেরার পথে মিষ্টি সিঙ্গারা, নিয়ে আসবে, ঠাকুরঝি তো একা নয় তার আবার পিসি শাশুড়ি ও আসবে তিনি কি খাবেন কি খাবেন না কিছু ই বুঝতে পারছি না।।"
সুবীর খেতে খেতে বললো , "পরি র পিসি শাশুড়ি তো বরাবরই শান্ত স্বভাবের শুনেছি ও তুমি মায়ে র কাছে থেকে সব কিছু জেনে নেবে তাহলে আর ও অসুবিধা হবে ।। ওরা তো দুপুরের দিকে আসবে আজ শ্যামু , অতীশ সবাই কি বেরিয়ে যাচ্ছে।।"
নীলা -- "শ্যামু স্কুলে যাবে বলেছে।। তবে অতীশ বললো আজ আর কলেজ যাবে না আর ও সকাল থেকেই মায়ের ঘর টা একটু গোছাতে সাহায্য করছিল মাকে ।ওখানেই ঠাকুরঝি র পিসি শাশুড়ি থাকবেন মায়ের ঘরে, আর বিদিশা টা শ্যামুর ঘরে থাকবে তারপর ওই দক্ষিণ দিকের ঘরটাতে ঠাকুরঝি থাকবে।।
সুবীর -- "হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে , তারপর ওরা আসুক, কয়েকটা দিন থাকবে যখন ওদের নিয়ে একটা কাছে পিঠে কোথাও একটা ঘুরে এলেই হয় সবাই মিলে কি বলো ।"
নীলা -- "সেই ভালো শ্যামুর তো কবে থেকে ই ঘুরতে যাবে বলে বায়না করেছিল ।"
হঠাৎ অতীশ মা মা বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে বলল, মা ঠাকুমা বলছে, "আরো ও একটা বালিশ লাগবে বিদিশা র ঠাকুমা র নাকি বেশি বালিশ লাগে কি সব বলছিল আরও..."
সুবীর -- "আচ্ছা তোমরা কিন্তু ওনাকে মিষ্টি ঠাকুমা বলে ডাকবে।।"
অতীশ --" আচ্ছা ঠাকুমা তার ঘর থেকে সব ছবি কেন সরিয়ে ফেললো ওনারা আসবে তো কি হয়েছে।।"
নীলা সুবীর এর দিকে তাকিয়ে অতীশ কে বললো "কিসের ছবি রে??"
অতীশ --" ঠাকুমার ঘরের দেওয়ালে যে ঠাকুরদা তারপর সেই ঠাকুরদা আর তার ভাই মানে তোমরা বলতে আমাদের কাকু দাদু হয় সেই ছবিটা সেই যে ঘরটা বন্ধ থাকে ওখানে ঠাকুমা গিয়ে ফোটো টা রেখে এলো।। কেন বলোতো?"
সুবীর -- "আহ্ এসব বড়ো দের ব্যপারে থাকতে হবে না।। যাও এখন .."
সুবীর নীলা কে বললো," তাহলে আমি অফিসে বেরোচ্ছি, তুমি সব দিকটা দেখো।।"
কিছু ক্ষন পর শ্যামু স্কুলে যাবে বলে বেরচ্ছে। অতীশ এর সাইকেল করে রাস্তায় এগিয়ে দেবে বলে শ্যামু ব্যাগ নিয়ে বেরোলো।।
তারপর সাইকেলে যেতে যেতে , "এই দাদা তুই আজ লোলো কে দেখেছিস।। "
অতীশ -- "আছে কোথাও ওর গার্লফ্রেন্ড দের সঙ্গে হয়তো ঘুরছে।।"
শ্যামশ্রী-- "দাদা তুই না শুধু বাজে কথা, ও তো কুকুর নাকি।।"
অতীশ -- "তো কুকুরদের কি গার্লফ্রেন্ড থাকে না আজব তো!! কেন তুই ওর কথা এত জিগ্গেস করছিস কেন?"
শ্যামশ্রী-- "আমার খুব টেনশান হচ্ছে।।"
অতীশ সাইকেল চালানো থামিয়ে নেমে বললো, " তুই কি আবার স্বপ্ন দেখেছিস।
শ্যামু তোর কি মনে হচ্ছে তোর এবারের স্বপ্নটা ঘটবে।।
কি দেখছিস ??
গতবারের টা তো মিলে ছিল তাইনা।"
শ্যামু -- "ছোট বেলায় আমি কিছু খেয়াল করতাম না কিন্তু ইদানিং দেখছি সব তাই তো ঘটছে তুইতো সব জানিস, স্বপ্নে দেখেছি লোলো আর আমাদের মাঝে থাকবে না দাদা খুব ভয় করছে আমার।। এই প্রথম কোন মৃত্যু র স্বপ্ন।।"
অতীশ -- "আচ্ছা তুই শান্ত হও , চল ,,স্কুল দেরি হচ্ছে।।"
অতীশ সাইকেল চালানো শুরু করলো আবার।।
দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো।।
নীলার ননদ পরি, বিদিশা, আর পিসি শাশুড়ি মানে মিষ্টি ঠাকুমা এসে পৌঁছালো।। বেশ সময় ধরে কথোপকথন চলার পর খাবার টেবিলে এসে বসলো সবাই।।
মিষ্টি ঠাকুমা নীলকে উদ্দেশ্য করে:" নীলার রান্নার হাত খুব সুন্দর।। "
বিদিশা বলে উঠলো , "হ্যাঁ মামীর হাতের রান্না গুলো খুব টেষ্টি হয়েছে।।"
ঠাকুমা বলে উঠলো:" বিদিশা দিদিভাই খাওয়া আর শ্যামুর খাওয়া একি দেখো বউমা।।"
নীলা--" হ্যাঁ মা ঠিক বলেছেন।। মুখরোচক না হলে খাবেই না।।"
পরি-- "বউদি শ্যামুটা ফিরবে কখন।।"
ঠাকুমা:- "এই তো বিকেল হলেই স্কুল থেকে ফিরে যাবে।। "
মিষ্টি ঠাকুমা: "বিদিশা আর শ্যামুর মধ্যে কে বড়ো বলোতো।।"
নীলা : "শ্যামুই বড়ো কয়েক মাসের ।।"
দুপুরে খাওয়া শেষে অতীশ আর বিদিশা ঘরে বসে গল্প করছিল। বিদিশা শহরে থাকে সেখানে র আর এখানে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করছিল ওরা।
নীলা আর পরি ছাদের চিলেকোঠায় আচার খেতে খেতে কত পাঁচমিশালি গল্প।।
বন্ধ ঘরের রহস্য আজো ও অজানা সবার আর কত কি আওয়াজ হয় ওই ঘর থেকে ওখান দিয়ে যেতে ভীষন ভয় করে, নীলা বলে উঠলো।। পরি -- আগে এমন হতো জানোতো ,কি আছে ওখানে কে জানে সবাই বলে নাকি এই বাড়িতে ভুত আছে। আগে তো এখানে কোনো কাজের লোক কাজ করতে আসতো না, ।"
এরপর মিষ্টি ঠাকুমা এলো ঠাকুমা র ঘরে বসলো
তারপর
মিষ্টি ঠাকুমা -- "এখনো দেখছি ওই ঘর টা বন্ধ রেখেছো আর তোমার ঘরের ছবি গুলো কোথায়,? তোমার কি আজোও মনে হয় সে আছে? সব টা মিথ্যেও তো হতে পারে"
ঠাকুমা --" দ্যাখো মিষ্টি তুমি সব কিছু অস্বীকার করতে পারো কিন্তু আমি পারি না এখন ও সে এখানে রয়ে গেছে মিথ্যা কাকে বলছো? আমাদের দক্ষিণ এর ঝিলটা ওখানে কেউ যেতে অবধি পারে না এখন ও সে ..।"
মিষ্টি ঠাকুমা -- "কেন ওখানে কি হয়েছিল ওই ঝিলে।।"
ঠাকুমা -- তুমি আর সে ওখানে বসে আগের দিন গুলো ভুলে গেছো তাই ওখানে এখনো কেউ গেলে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে।।
সুবীর কত বার চেষ্টা করছে ঝিলটা য় মাছ চাষ করার জন্য দিতে কেউ করতে পারে নি কিছু কিছু এমন ঘটনা ঘটেছে । ওই ঝিলটা প্রায় অকেজো এখন।"
মিষ্টি ঠাকুমা -- "সব দোষ কি শুধু ই আমার, আমার জন্য ই কি সে।।"
কথা চলতে চলতেই নীলা আর পরি ঘরে ঢুকলো
ঠাকুমা --" কি রে পরি তোরা দুপুরে শুতে পারতিস তো একটু কোথায় ছিলিস?"
পরি -- না না মা , এই তো ছাদে ছিলাম বউদির সাথে গল্প করেই বিকেল হয়ে আসছে।। আচ্ছা মা আমাদের দক্ষিণ এর ওই ঝিলটা কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ওখানের পরিবেশ টা এত সুন্দর ছাদ থেকে দেখতে পাওয়া যায় ওখানে তো ফুলের বাগান করতে পারতে বউদির এত ফুলের শখ ঝিলের পাশে কত সুন্দর দেখাতো।।
ঠাকুমা গম্ভীর হয়ে, - "বউমা পরি কে নিয়ে নিচে যাও, অতীশ, বিদিশা দের দেখছি না কোথায় সব শ্যামুর তো আসার সময় হলো বিকেলে জন্য কিছু করো ওরা এসেছে।।"
নীলা -- "মা আপনি চিন্তা করবেন না।। আমি এখুনি ব্যবস্থা করছি ।"
পরি-- "আরে বউদি এই খেয়ে উঠলাম দাঁড়া ও তো পরে হবে চলো নিচে।"
ওরা নিচে যাওয়ার পর...
মিষ্টি ঠাকুমা -- "সুবীর নীলা কে কখনো বলেছো?"
ঠাকুমা --" এসব না ...ওরা তেমন জানে না, বউমা কিছু জানে না আর সুবীর একটু হয়তো আন্দাজ করতে পারে এই যা.. ওর কাকা র কথা ও ছোটো থেকে অনেক বার জিগ্যেস করেছে আমি বা ওর বাবা এড়িয়ে যেতাম আর বড়ো হবার পর ও জিগ্গেস করতো না আমায় ।হয়তো কিছু আন্দাজ করতো জানিনা তবে কৌতুহল তো সবারই এই যে নাতি নাতনী রা বড়ো হচ্ছে ওদের ওতো মনে কত প্রশ্ন ওই ঘরটা বন্ধ কেন?"
কিছু ক্ষন পর শ্যামশ্রী স্কুল থেকে চলে এলো কিছু ক্ষনের মধ্যে পিসি ভাইঝি গলা জড়িয়ে তারপর শ্যামু
বলে উঠলো , "কতদিন বাদে এলে তুমি বিদিশা র সাথে সেই কবে দেখা হয়েছিল।।"
পরী--
"তোরা ও তো আর যাসনা.."
নীলা -- "আর যাওয়া মায়ের শরীর মাঝখানে খারাপ হয়েছিল তোমাকে তো বলিনি তারপর অতীশ টাও কলেজ উঠলো সব মিলিয়ে আর যাওয়া হলো না।।"
পরি --"মায়ের কি হয়েছিল গো..?"
নীলা -- "তোমায় তখন ছাদে বললাম না ওই ঝিলটা র কথা তোমার দাদা মাছ চাষ করতে দিল তারপর ওখানে সমস্যা সেই নিয়ে মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।"
পরি--" আমিতো এখন বলছিলাম ঝিল টার কথা মা তো এড়িয়ে গেলো তবে আমিও একদিন আমার পিসিশাশুড়ি কে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি ওই বন্ধ ঘরটা নিয়ে।।"
এদিকে শ্যামু বিদিশা র এতদিন বাদে দেখা শুধু গল্প আর গল্প ।।
সন্ধ্যায় সুবীর এলো পরিবারে মাঝখানে সবার সাথে কথা বার্তা চললো, বহুদিন পর পরি সঙ্গে দেখা সুবীর এর ভাইবোনের পুরনো স্মৃতি রোমন্থন।।
আর ঠাকুমার ঘরের পাশে র ঘর থেকে হঠাৎ অনেক আওয়াজ সবাই ওপরে ছুটে গেল অতীশ বারবার বললেও ঠাকুমা ওই ঘরের চাবি কাউকে দিলো না।। ওই ঘরের ব্যপারেএ কেউ জানেনা তেমন কিছু।। এমনকি ঝিলটার কথাও এড়িয়ে যায়।।
দুদিন পর অতীশ শ্যমশ্রী বিদিশা তিনজন মিলে বাড়ির আশেপাশে ঘুরছে ঘুরতে ঘুরতে তিনজনের হাসি মজা চলছে , হাঁটতে হাঁটতে ওরা অনেক টা এসেছে কিছুক্ষণ পরে ওই ঝিলটা দেখতে পেলো ,
বিদিশা--" চলনা রে কি আছে দেখি কি সুন্দর দেখতে ঝিলটা।"
দুপুর শেষে বিকেলের আভা সূর্যের অপরূপ শোভা।। বিদিশার কথা শুনতে রাজি নয় অতীশ ।
অতীশ বললো --"দেখ চারিদিকে ঠাকুমা লোক দিয়ে এটাতে বেড়া দিয়ে দিয়েছে, সবার যাওয়া বারন,যদি শোনে আমরা গেছি বাড়িতে দারুন ঝামেলা হবে।।"
শ্যামশ্রী --"আমি তো কবে থেকে ভেবেছিলাম এখানে একটু ঘুরবো, ঠাকুমার কড়া বারন তাই কোনো দিন যাওয়াই হলো না আর, এই তো কত বড় হয়ে গেলাম একটা রহস্য আছে কি জানি, ।"
অতীশ---" তাছাড়া ঠাকুমার পাশের দিকের ওইঘরটাতে তো কিছু আছে সব সময় বন্ধ, সেটাও তো রহস্য।।"
বিদিশা--" আমরা তো তিনজন কি আর হবে চল না যদি কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারি।।
আমি আমার পিসি ঠাকুমা কে দিদার সাথে কথা বলতে শুনেছি ফিসফিস করে কিন্তু কি যে বলে কিছু বুঝতে পারিনি, ।"
শ্যামশ্রী --" মিষ্টি ঠাকুমা আবার এই নিয়ে কি বলতে পারে ।"
অতীশ --" বিদিশা ঠিকই বলেছে আমিও একদিন দেখেছি ঠাকুমা মিষ্টি ঠাকুমা র সাথে এই নিয়ে কথা বলেছে ফোনে।।"
শ্যামশ্রী--" চল তাহলে যাওয়াই যাক ঝিলে..
ওরা তিনজন সঙ্গে লোলো কুকুর টা এসে জুটেছে ।।
ওরা সামনে একটা জমি পেরোলো তারপর ঝিলের কাছে পৌঁছে গেলো বেশ নিরিবিলি কাছাকাছি আর কিছু নেই চারিদিকে ধূধূ মাঠ তারপর বেড়া সরিয়ে
একে একে সবাই ঢুকে গেলো ঝিলের ধারে কি অদ্ভুত সুন্দর জায়গাটা কিছু বড় গাছ আছে আর কিছু জংলী ফুল গাছ ও হয়েছে। সূর্য এর আভা ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার নামছে, ঝিলের জলে সুন্দর শাপলা ফুটেছে , শাপলা দেখেই বিদিশা ঝিলে একটু পা বাড়িয়ে নিতে গেলো কাছে তাই সহজেই হাত বাড়ালেই হবে এই ভেবে কিন্তু যতই চেষ্টা করলো কিছুই তে ই হলো না শেষে হঠাৎ বিদিশা চিৎকার করলো বললো , "শ্যামু অতীশ দা আমাকে ধরো
ওরাও সঙ্গে সঙ্গে ছুটলো , লোলো চিৎকার করতে করতে গেলো।।
অতীশ বিদিশার হাতধরে টানলো, কিন্তু কে যেনো বিদিশা কে আটকে রেখেছে টানাটানি শেষে বিদিশা কে জলে থেকে তুললো বিদিশা প্রায় অজ্ঞান।
অতীশ বারবার বললো চোখ খোল
বিদিশা দেখ আমরা, তুই ঠিক আছিস ।"
তারপর
বিদিশা চোখ খুললো।
কিন্তু অন্য দিকে ঝিলের উওর দিকে একটা কি যেন ভীষন চকচক করছিল লোলো চিৎকার করতে করতে গেলো। আর শ্যামুও গেলো।।
অনেক টাই কাদা ছিল জায়গাটায় লোলো ছুটতে ছুটতেই যত গেলো শ্যামুও গেলো ধীরে ধীরে শ্যামু বুঝতে পারলো সে যেনো কোথাও একটা ঢুকে যাচ্ছে আর লোলো ও ঠিক তাই, অথচ চকচকে জিনিসটা যেন সরছে নাগালের বাইরে।।
শ্যামু এবার চিৎকার করলো,
অতীশ ছুটলো শ্যামু র দিকে আর বিদিশা ও এগিয়ে গেলো।।
অতীশ শ্যামুকে হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে আসলেও ওদিকে লোলো ধীরে ধীরে কাদাতেই মিলিয়ে গেল আর অদ্ভুত বিকট একটা আওয়াজ হলো চারিদিকে।। কেমন থম থম করছে চারিদিকে।। একটা ভয়ের পরিবেশ।।
অতীশ কোনো রকমে দুই বোনকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়িতে ঢুকলো আর জ্ঞান হারালো।।
শ্যামু তখন কাঁদছে কাদা মাখা জামা কাপড়।।
বিদিশা ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লো।।
নীলা পরি, ঠাকুমা, মিষ্টি ঠাকুমা সব ছুটে এলো বারবার সবাই ওদের জিগ্গেস করলেও কোনো উওর নেই।।
শেষে অতীশ কে ওর ঘরে শুইয়ে দিলো। এদিকে বিদিশা আর শ্যামুর জ্বর ওদের ঘরে নিয়ে গেল।।
সুবীর ডাক্তার নিয়ে এলো, অতীশ এর জ্ঞান ফিরলো।
বিদিশা শ্যামুও জ্বর কমছে না।।
দু দিন পর.....
ওদের তিনজনকে ঠাকুমা ভীষন বকাবকি করছিল ঝিলে যাওয়ার জন্য শেষে শ্যামু বলে উঠলো, কি সেই রহস্য যা তুমি বলছো না ঠাকুমা বলো , আর কতদিন এটাকে আটকে রাখবে।। বিদিশা -- দিদা এবার তো বলো তুমি , কেউ জানে না , না মামা জানে না মামী জানে, তো কি আছে কেন এমন হয় ওখানে?
পরি--- "আহ্ দিদার সাথে তোমরা এভাবে কথা বলছো কেন?"
অতীশ --" আমাদের তো সত্যি জানতে ইচ্ছে হয় তোমার করে না পিসি ওই ঘরে কি আছে কেন বন্ধ।"
সুবীর -- "আচ্ছা মা তুমি এবার বলো এই ছেলে মেয়ে গুলো র সাথে যা ঘটলো তারপর সত্যিটা জানা দরকার।।"
মিষ্টি ঠাকুমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর তারপর বললো, আমি শুরু করছি।।
সবাই খুব অবাক হলো,
পরি বলে উঠলো, "পিসিমা আপনি কিভাবে আমাদের বাড়ির ঘটনা জানবেন ।"
নীলা --" সেইতো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না সুবীরের দিকে তাকিয়ে তুমিকি কিছু ই জানতে না।।
পরি -- "না বউদি ছোট থেকে দাদা আমি কেউ কিছু জানতাম না সব সময় আমাদের এই বিষয়টা সবাই আড়াল করতো ।।"
মিষ্টি ঠাকুমা বলতে শুরু করলো, "অনেক দিন আগে আমি এই গ্রামে আসি বাবা মা ছোট বেলায় চলে যায় তখন মাসি মানুষ করে কিন্তু মেসো চলে যাওয়ার পর আমাদের সংসার চলছিল না মাসির বাড়ি ছেড়ে এখানে
তখন এই বাড়িতে কাজ করতো।। রান্নার কাজ , আরোও অন্যান্য কাজ এখানেই আমরা থাকতে শুরু করি।।
তারপর ঠাকুমা বলতে শুরু করলো, "মিষ্টি র সঙ্গে আমার দেওরের মানে তোদের কাকা সমীর এর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।। ওরা প্রায়ই তখন ওই ঝিলের ধারে বসে গল্প করতো, কিন্তু আমার শশুর এবং শাশুড়ি তোদের বাবা কেউই এই সম্পর্ক মেনে নেন নি, প্রতিদিন ই বাড়িতে একটা অশান্তি লেগেই থাকতো।। তারপর মিষ্টির সাথে মন্দিরে সমীর এর বিয়ে হলো কিন্তু কেউ মানলো না।।
এদিকে তোদের কাকার অন্যস্থানে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হলো এই বাড়ি থেকে ।।
আমার শ্বশুর মিষ্টি আর তার মাসিকে এখান থেকে চিরতরে চলে যেতে বললো।।
সমীর বিয়ের দিন ওই ঝিলে ডুবে আত্মহত্যা করলো।। বিয়ের দিন কোথাও খুঁজে না পেয়ে শেষে ঝিলে ওর দেহটা পাওয়া গেলো।
সেদিন বাড়ি ভর্তি লোকজন সানাইয়ের আওয়াজ তারমধ্যে এই ঘটনা ।। সমীরের ঘরে একটা চিঠি ছিল সেই চিঠি পড়ে সবাই তো আমরা অবাক।
চিঠিতে লেখা ছিল এই বাড়িতে সবাইকে মরতে হবে কেউ সুখে থাকতে পারবে না আর ওর অন্তিম কাজ যেন ওর সন্তান বড়ো হলে করে।।
এটা পড়ে আমরা বুঝতে পারলাম মিষ্টি র গর্ভে এই বাড়ির সন্তান।।
তখন সুবীর পরি দুজনেই খুব ই ছোট আমি দিনরাত ভয়ে ভয়ে থাকতাম।। এই বাড়িটা কেমন ভুতুড়ে বাড়ি হয়ে যাচ্ছিল।।
সমীর এর ঘর থেকে একটি রক্ত গড়িয়ে এলো ভয়ে বাড়ির কাজের মেয়ে টা জ্ঞান হারালো।। , সমীরের ঘরের পাশ দিয়ে এলেই নানা ধরনের আওয়াজ ভয়ে আমরা সবাই জুজু হয়ে থাকতাম।।
আমার শাশুড়ি একদিন ঠাকুর ঘরে ছিলেন ওখানে প্রদীপের আলোয় আগুন লাগে শাড়িতে উনি অসুস্থ হলেন তারপর চলে গেলেন, যাবার সময় আমায় বলে গেলেন সবাইকে দেখো বউমা, তুমি সাবধানে থেকো এই বাড়িতে সে আছে।। পারলে মিষ্টিকে খোঁজো ও
ওই ঝিলের ধারে তো নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে কখনো একটা ছাগল মরেছে তো কার গরু অসুস্থ হয়েছে এসব লেগেই ছিল।।
এরপর একদিন ঝিলের ধারে একটা মুরগি মারা গেছে এই খবর পেয়ে আমার শ্বশুর দেখতে গেলেন ওখানের একটা পাথরের হোঁচট খেয়ে তিনি সেই যে অসুস্থ হলেন উনি ও বাঁচলেন না উনিও আমাদের বলে গেলেন যাবার আগে
মিষ্টি দের যেন খোঁজ নিই আর ও কি কি বলতে চেষ্টা করছিলেন বলতে পারলেন না , আমরা হয়তো কেউই বাঁচাতে পারবোনা এরকম কিছু হয়তো বলতে চেষ্টা করছিলেন।।
এরপর তোদের বাবা(অধীর )আমি আর তোরা এইভাবে চলছে।। পরিবারের পুরনো ব্যবসা সব কিছু তোদের বাবা একা সামলাচ্ছে।। একদিন হঠাৎ উনিও অসুস্থ হয়ে ফিরলেন। পুরনো লোকজন রা ব্যবসা সামলাতে শুরু করলো।। তোদের বাবা ও আর রইলো না সুবীর তখন স্কুলে পড়ে আর পরিও ।। আমি প্রায় দিশেহারা।।
তোর বাবা চলে গেলো আর বলে গেলো আমি যেন মিস্টি কে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি আর ওদের সন্তান যেন এই বাড়ির ভাগ এবং ব্যবসার ভাগ পায়, তাহলে সমীর এর আত্মা শান্তি পাবে।।
নীলা--" আপনি তাহলে কিভাবে খুঁজলেন মিষ্টি পিসিকে আর পরি র সাথে ওদের পরিবারের বিয়েটা তখন কি আপনি সব জানতেন।।
ঠাকুমা বললেন, "না না বউমা ...
আমি অনেক পরে বুঝেছি।।
মিষ্টি ঠাকুমা বলতে ,শুরু করলো,
"এই বাড়ি থেকে চলে আসার পর মাসি আর আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তারপর মাসি আর আমি কলকাতায় চলে আসি, আরেক টা বাড়িতে কাজ পায় সেখানে বাড়ির মালিক অশোক বাবু তার স্ত্রী জয়া তাদের এক ছেলে ও বৃদ্ধ শাশুড়ি, সেই বৃদ্ধার দেখা শোনা করা , রান্না ইত্যাদি কাজ থাকতে দিয়েছিলো ওরা আমাদের। অশোক বাবু রএর স্ত্রী জয়া পরে আমি জয়া দিদি বলে ডাকতাম সে সমস্ত ঘটনা শুনে তার আমার উপর খুব দয়া হয় ।
এই ভাবে চলছিল কিন্তু বাচ্চা টা জন্ম দেওয়ার পর পর মাসি খবর পায় তোমাদের কাকা মানে সমীর আর বেঁচে নেই এই কথা শোনার পর আমি শোকে চলে যাই আমার সন্তান এর প্রতি কোনো রকম কোনো হুঁস ছিলো না, একবার জয়া দিদি , একবার মাসি তাকে দেখছিলো।। সেই সময় জয়া দিদির নিজের ননদ উষা যে থাকতো মাদ্রাজে সে এলো সে এসে সব কিছু দেখে সে বললো সে এই সন্তান কে মানুষ করতে চায়।। তার কাছেই বড়ো হয়েছে।। উষা আর এখানে আসেনি কখনো, আমি ও তাই কোনো দিন তাকে দেখিনি।।
সুবীর বলে উঠলো,
"এখন সত্যি সময় এসেছে তাকে ডাকার আর আজ থেকে মিষ্টি পিসি এখানে থাকবে কারন হিসেবে মতো তুমি আমাদের কাকিমা আমি ওই বাড়ি ফোন করে আছিই বলছি উষা পিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে।"
ঠাকুমা ---"হ্যাঁ সমীর এর এর শেষ ইচ্ছা ছিল ওর সন্তান ওর কাজ করুক তবেই ওর আত্মার শান্তি হবে নয়তো এই বাড়ি ভুতের বাড়ি হয়ে আর কতদিন থাকবে।।
কয়েকটা দিন পরে,
সেই ছেলে কে নিয়ে উষা এলো উষা মিষ্টি র হাতে হাত রেখে বললো তোমার ছেলে এসেছে ওর নাম তিমির।।
ঠাকুমা বলল, " চলো তিমির তোমার বাবার ঘরে..
সমীরের ঘরে নিয়ে গেল সেখানে ঢুকতে ই কেমন যেন ঘরে কারোর হাঁটার আওয়াজ হচ্ছে।।
সবাই তো খুব ভয় পেলো।।
সমীর এর ছবির সামনে ঠাকুমা বললো, " দ্যাখো , সমীর তোমার মিষ্টি আর তোমার ছেলে এসেছে তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে এবার তো শান্ত হও।।
অবশেষে তিমির তার বাবার ইচ্ছে পূরণ করলো তার শেষ কাজ করতে গেলো। আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা, কেমন এক উওল অবস্থা
তারপর শেষে ভীষন বৃষ্টি।। সব কিছু বাড়ির পুরনো পুরোহিত সাহায্য নিয়ে মিটলো।।
পরেরদিন সকালে শ্যামশ্রীর চিৎকার এর শব্দ পাশে শুয়ে বিদিশা ও ভয় পেয়ে গেলো তারপর পরিবারের সকলে প্রায় ছুটে এলো।। অতীশ কিহলো তুই কি স্বপ্ন দেখছিস, পরি -" বউদি ওকে জল দাও কেমন হাঁপাচ্ছে কি হলো রে তোর, বিদিশা কি দেখেছিস।। সেইদিন বিকেলে র ঘটনাটা ।।
ঠাকুমা -- কি দেখেছো শ্যামু ? এত ভয় পাচ্ছেও কেন ?বল আমরা তো আছি।।
অতীশ বলে উঠলো, --"আসলে জানতো ওর স্বপ্ন সত্যি হয় তাই তো ভয় পাচ্ছে ?"
সুবীর--" কবে থেকে কি ব্যাপার কোনো দিন বলিসনি তো?"
নীলা-- জল নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কি সত্যি হয়েছে বল?
অতীশ বললো, --" ওই যে লোলো ও মৃত্যু টা ওটা ও স্বপ্ন দেখেছিলো।।
এর আগেও দু একটা ও আমায় বলেছিল।।
পরি --"আজ কি দেখেছিস ?"
বিদিশা --" সেকি রে তোর স্বপ্ন সত্যি হয়?"
মিষ্টি ঠাকুমা এলো তারপর বললো," জানো তো এই রকম আর কার হতো এই বাড়িতে?"
ঠাকুমা বললো," সমীরের হতো একবার শুনে ছিলাম।"
মিষ্টি ঠাকুমা,--হ্যাঁ ঠিক বলছো আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার আগে স্বপ্ন এ ও দেখেছিলো ও সেটা আমায় বলেও ছিলো।। আমি তো বলেছিলাম এটা তো স্বপ্ন ও।"
শ্যামশ্রী বললো, আমি দেখলো ওই কাকা দাদু এই বিছানার পাশে বসে বললো ঝিলের ধারের সব ঘটনা ভুলে যেও এখন ওখানে তোমরা ঘুরতে যেতে পারো আর কিছু হবে না। তোমরা একেবারে ভালো থাকবে ।।
সুবীর --" হয়তো কাকা বাবু আত্মা শান্তি পেয়েছে এতদিনে।।
নীলা --" হ্যাঁ ঠিক বলছো আজকে থেকে মেয়ে গুলোর জ্বরটা কমেছে।।
পরি--" সবই যখন এখন ঠিকঠাক তবে দাদা চলো কাছে থেকে একদিন আমরা পিকনিক করি।।"
অতীশ --" দূরে যাওয়ার আর কি আছে ওই ঝিলের ধারে চলো পিকনিক করি, ওখানে রান্না করে আর সবাই ঝিলের ধারে বসে কলাপাতায় খাওয়া দাওয়া করবো।।
পরি -- "হ্যাঁ এটা অবশ্য ভালো ই বলেছে।।"
ঠাকুমা বললো, " ঠিক আছে তাছাড়া তিমির তো কোনোদিন যায়নি ওর ও দেখা দরকার।।"
মিষ্টি ঠাকুমা --" তবে যদি কোনো সমস্যা হয় তখন মানে ওই ঝিলে তো কত ঘটানাই ঘটেছে।। তাছাড়া এই তো দিদিভাই রা সব অসুস্থ ছিলো।।"
বিদিশা --" না না এরকম কিছু হবে না তার কারন শ্যামু তো স্বপ্ন এ দেখেছে কাকা দাদুকে
আর ওর স্বপ্ন তো সত্যি হয় , শ্যামু কে জড়িয়ে ধরে বিদিশা বললো, বাব্বা আমি তো ভাবতেই পারছি না তোর স্বপ্ন সত্যি হয়।।"
বলেই দুজনে একসাথে হেসে উঠলো।।
সুবীর আর বাকিরা হাসছিল ।।
নীলা বললো, " তবে আমার ও ওই ঝিলের কথা শুনলে কেমন গা ছম ছম করে।।"
পরি, -- "না বউদি আর কোনো ভয় নেই।।"
এই কথাটা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ উপর থেকে একটা জোরে আওয়াজ হলো।।
ঠাকুমা বললো, "কেমন যেন একটা আওয়াজ কি হলো আবার?"
মিষ্টি ঠাকুমা -- "তিমির কি ওপরে আছে ?"
নীলা -- "না না নীচে বসার ঘরে টিভি দেখছে আমি জলখাবার দিয়ে এলাম।"
পরি--" তাহলে কি এখন ও কিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেলো, মা তুমি কি কিছু কাজ এর সময়.. ।"
সুবীর--" মা তো পুরোহিত মশাই এর সঙ্গে সব কথা আলোচনা করে করলো তাছাড়া ওই পুরোহিত তো আমাদের বাড়ির সব কথাই জানেন।"
শ্যামশ্রী বিদিশা বললো, "চলো না ওপরে দেখে আসি।।"
সবাই মিলে দল বেঁধে গেলো প্রচন্ড ভয় আর কৌতূহল নিয়ে ওই ঘরে ঢুকতেই দেখে কাঁচে র ফুলদানি পড়ে ভেঙে রয়েছে আর একটা বিড়াল জানালায়।। সবাই এর মুখে হাসি
বলে উঠলো ও বিড়াল টা...
এরপরের দিন সবাই মিলে ওরা ঝিলে ধারে পিকনিক এ গেলো আর সবাই আনন্দে মেতে উঠলো।।