একদিন হঠাৎ
একদিন হঠাৎ
ঝাড়গ্রামের কোনো এক গ্রামের দিকে একটা স্টেশন এ হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।। কি যেন একটা গন্ডগোল হয়েছে চারিদিকে সবাই বলা বলি করছে।। লোকজনের ভীড় চিৎকার চেঁচামেচি , খুব অস্বস্তিকর পরিবেশ।।
যূথিকা ছোট একটা লাগেজ হাতে আর কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে নামলো, চোখে মুখে বিরক্তি স্টেশানের বসার জায়গাটায় এসে বসলো।। আসে পাশে থেকে বলাবলি শোনা যাচ্ছে আজ আর চলবে না ট্রেন,"
কেউ বলছে চলো কি করবে , কেউ বলছে কাছেই গেস্ট হাউসে ওখানে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিলেই হয়।।
ঘড়িতে বাজে তখন বেলা বারোটা ।। যূথিকা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না মনে মনে বলছে "এই একটা ভাঙাচোরা স্টেশনে কতক্ষন কাটাবে একা একা।। চারিদিকে রাশি রাশি লোকের হৈচৈ ভালো লাগছে না কিছুই।। নানান চিন্তা করতে করতে যূথিকা ব্যস্ত, বাড়িতে ফোন করছে , নেটওয়ার্ক সমস্যা আরো টেনশান হচ্ছে।।
হঠাৎ যূথিকার সামনে এসে দাড়ালো একজন বলে উঠল, "একি তুমি এখানে , তুমি এখানে কি করছো??
যূথিকা ইতস্ততঃ হয়ে তারপর বলে উঠল, "আপনি ? "....
নিলয় সেন
এসে দাড়ালো যূথিকা র সামনে ,
পেশায় একজন অ্যাডভোকেট ।। যূথিকা র সঙ্গে বেশ কয়েক বছর হলো আলাপ হয়েছে।। যূথিকা র বাড়ির
জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একবার খুব সমস্যা চলছিল , কোর্টে কেশ চলছিল তখন এই নিলয় সেন , ওদের সাহায্য করে এই মামলা চলাকালীন সেইসময় প্রায়ই যূথিকা আর যূথিকার
বাবা মা নিলয় সেন এর সঙ্গে পরামর্শ করতে বহু বার তার কাছে গিয়েছে।।
এই সূত্র ধরে দীর্ঘ যাতায়াত থেকে নিলয় সেন এর সঙ্গে যূথিকা,
দুজনে মধ্যে একটা গভীর অনুভূতি তৈরি হয়ে যায়।। যা বন্ধুত্ব এর থেকেও হয়তো বেশি কিছু কিন্তু তবু দুজনে র মাঝে নিজেরাই একটা দেয়াল দিয়ে রেখেছে।।
নিলয় সেন একজন নামী অ্যাডভোকেট এবং বিবাহিত।।
নিলয় সেন কে বহুদিন পরে দেখে যূথিকার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল পুরোনো সব দিনের কথা গুলো।। টুকরো স্মৃতি যূথিকা খানিকটা সময় পিছন এ ফিরে যায়।।
তারপর যূথিকা স্টেশনের সিটে বসে
অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর বললো, "আপনি ও এই ট্রেনে ছিলেন??, কি মুস্কিল বলুন তো !!এখানে এভাবে কি হবে কিছু বুঝতে পারছিনা।।"
নিলয় যূথিকার পাশে বসলো অনেক ক্ষন তাকিয়ে বললো, "তুমি কি কোনো নাচের অনুষ্ঠান এ এসে ছিলে,। নাকি তোমার অফিসের কাজ??"
যূথিকা --" না না এই গ্রামে আবার আমার কি অফিসে র কাজ !!
এক বান্ধবীর বিয়ে ছিল সেখানে এসেছিলাম কাল , আজ ফিরছিলাম হঠাৎ এই অবস্থা আর আপনি??"
নিলয়--" আমি এই একজনের একটা কেসের
ব্যপারেই।। আমার গাড়িটা সমস্যা করলো তাই আমি ট্রেনে করে ফিরছিলাম, আর ড্রাইভার গাড়িটা সারিয়ে পরে ফিরবে।।"
নিলয় মৃদু হেসে আবার বললো, " তুমি তো আমায় প্রায় ভুলেই গেছো এখন আর যোগাযোগ করই না তোমার বাবার সঙ্গে মাঝে একবার যোগাযোগ হয়েছিল অবশ্য উনি আমার খোঁজ নিয়েছেন , একটা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা হচ্ছিল আর তুমি ভুলেই গেলে।।
যূথিকা--
"কখনও না, আসলে সেভাবে, আর
যোগাযোগ হয়নি বলে, কিন্তু মোটেও ভুলে যাইনি।। যোগাযোগ না থাকলে কি একজন মানুষ আরেকজন মানুষের মন থেকে মুছে যেতে পারে।।"
তারপর নিলয় যূথিকা বেশ কিছু ক্ষন চোখ এ চোখ রেখে ।।
যূথিকা মুখ নীচু করে নিলো।।
নিলয় -- "তোমার একটা নাচের ভিডিও দেখছিলাম সেদিন সোস্যাল মিডিয়ায়।। তুমি তোমার নাচের অনুষ্ঠান এ আমাকে তো ইনভাইটই করো না।।"
যূথিকা-- "সেভাবে আর প্রোগ্রাম এ আমার আর থাকাই হয় না । অফিসে র কাজের চাপে।। তবে আপনাকে ইনভাইট করলে মোটেই আপনি আসতেন না ,আপনি কত ব্যস্ত থাকেন শুধু শুধু মন রাখা কথা বলছেন।।"
নিলয় --" ওহ্ তারমানে এখনো তুমি আমার উপর রাগ করে আছো, একবার একটা ইনভাইট করেছিলে সেই বার আমি যেতে পারিনি বলে তুমি.. , তারপর আর আমাকে ডাকলেই না কোনোদিন, রাগ করে।। "
যূথিকা--"একদমই না , রাগ করবো কেন !!আমি জানি আপনি
ভীষন ব্যস্ত থাকেন। তবে সোস্যাল মিডিয়া তে আমার নাচটা আপনি দেখছেন শুনে খুব ভালো লাগলো।। ওইটা বিজয়া সম্মেলনী ছিলো ।। গ্রুপের সঙ্গে আর তেমন আমি যেতে পারি না মাঝে মাঝে ওই যা দু একটা।"
চারদিকে ভীষন আওয়াজ ,স্টেশান গম গম করছে।।
নিলয় বলে উঠল -- " তুমি কিছু খেয়েছো??"
যূথিকা---- "না আসলে সেভাবে ...
নিলয়-- "তুমি সেই একি রকম যতটা সৃজনশীল ততটাই উদাসীন।।"
যূথিকা-- "আসলে ওত সকালে ওদের বাড়ি থেকে সেভাবে কিছু ..
নিলয় মৃদু হেসে--" দেখো এখানে এভাবে কতক্ষন আর বসে থাকা যায় তার চেয়ে কাছে কোনো গেস্ট হাউস বা হোটেল যদি থাকে তাহলে.. ।। "
যূথিকা -- "আজ কে ট্রেন চলবে বলে তো মনে হয় না।। ভীষন অস্বস্তি লাগছে ।।"
নিলয়-- "তুমি বসো আমি দেখছি , তাছাড়া তুমি কিছু খাও তো নি দেখি যদি কোনো খাবার পাওয়া যায় ।।"
যূথিকা-- "আপনি আবার আমার জন্য.. এই নিয়ে .. এই ভীড় মধ্যে, না না ,, আচ্ছা !!আমি যাব আপনার সঙ্গে .. ।"
নিলয় -- "তুমি চুপ টি করে বসো এখানে। সেই একি টেনশান করা র অভ্যাস রয়ে গেছে তোমার।।"
যূথিকা -- "আমি টেনশান করতাম বলে আপনি তো মাঝেমধ্যে বলেই উঠতেন রেগে --আর আমার কাছে আসবে না তুমি।। আপনিও তো খুব রেগে যেতেন।।"
নিলয় হেসে বললো তুমি তো আমার চেয়ে ও বেশি রাগ দেখাতে তখন দেখেছি ।"
যূথিকা হেসে ফেললো।।
নিলয় উঠে যাচ্ছে তখন আবার
যূথিকা--" শুনুন বেশি দূরে যাবেন না, এখানে তেমন ভালো কিছু পাওয়া ও যাবে না।"
নিলয় সব শুনে যাচ্ছে এগিয়ে আবার যূথিকা আর শুনুন--" খুব ভালো খাবারের আশা করবেন না, এই স্টেশান টা তে তেমন কিছু নেই, আর চারিদিকে খুব গন্ডোগোল চলছে সাবধানে যাবেন। "
নিলয় বলে উঠল --" আর কিছু .. হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সব বুঝে নেব, তুমি শান্ত হয়ে বসো তো।।"
নিলয় গেলো।।
কিছুক্ষন পর নিলয় ফিরে এলো।।
যূথিকা র দিকে তাকিয়ে তোমাকে একটু টেনশড লাগছে আবার?কি ভাবছো আমি যদি না ফিরতাম?"
যূথিকা--
--"অহ্ কেবল বাজে কথা।।" বলেই রাগ দেখালো. যূথিকা।
নিলয় -- "আচ্ছা শোনো ..এখানে কাছেই রিক্সো স্ট্যান্ডে চলো ওরা গেস্ট হাউস নিয়ে যেতে পারবে ।আমি খবর নিলাম এখানে একটু দূরে থাকার একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে।।
যূথিকা র দিকে নিলয় একটু ঝুঁকে বললো আমার সঙ্গে তোমার যেতে কোনো আপত্তি মানে আমাকে নিয়ে কোনো অস্বস্তি...."
যূথিকা তাকিয়ে নিলয়ের দিকে--- " কেন!! কিসের জন্য!!এত দিনে এই বুঝলেন আপনি আমাকে .!!.চলুন..।"
নিলয় ---"তার আগে তুমি খাও তারপর পর আমরা যাবো।।
যূথিকা--" আপনি তো পুরো দোকানটা ই তুলে এনেছেন এত খাবার, আমাকে তো খুব বলছেন নিজে খেয়েছেন!!
নিলয় হেসে উঠলো।।
যূথিকা-- "আপনাকে ও খেতে হবে।।
দুজনের খাওয়া র পর্ব চললো সঙ্গে কথোপকথন , হাসি মজা , এক ব্যস্ত হৈচৈ স্টেশনের মাঝে মুক্তি পেলো দুজনের কিছু অনুভূতি।।
নিলয়ের কেয়ারিং মনোভাব
যূথিকা বহুবার লক্ষ্য করেছে আজ আবার যূথিকা দেখলো ভিতরের আনন্দ টা ভিতরে লুকিয়ে রাখলো সে।।
নিলয় আবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কথা বলে চলেছে যূথিকা র সাথে।।
এরপর রিক্সা স্ট্যান্ডে যাবার জন্য এগোচ্ছে ওরা।।
হঠাৎ নিলয় --"তুমি একটু দাঁড়াও, আমি বরং একটা জলের বোতল কিনে আনি।।
যূথিকা দাঁড়িয়ে আছে ।
কিছু ক্ষন এর মধ্যে একটা পাগল লোক যূথিকার দিকে আসছে , যূথিকা ভীষন ভয়ে মনে মনে অস্থির, চোখ দিয়ে এদিকে ওদিকে নিলয়ের অপেক্ষায় ।।
পাগলটা কেমন যেন এগিয়ে আসছে।।
নিলয় এসে উপস্থিত হলো যূথিকা শক্ত করে নিলয়ের হাত ধরলো ,
নিলয় তাকিয়ে দেখলো বলে উঠল, "ওহ্ একে দেখে ই এত ভয় তোমার ।। ও তো পাগল একটা লোক!!
আমি না থাকলে কি করতে?"
যূথিকা হাতটা ছেড়ে দিলো নিলয়ের তারপর বললো, " কি ভাবে তাকিয়ে ছিলো এমন ভাবে তাকাচ্ছিল তা ভয় হবে না।।"
নিলয় --"ঠিক আছে চলো...।।"
রিক্সায় উঠলো ওরা
রিক্সা করে সমস্ত জায়গা ঘুরে ঘুরে কোথাও ঘর পাওয়া গেলো না প্রায় বেলা গড়িয়ে গেছে।।
যূথিকা বলে উঠল, " স্টেশানেই রাতটা কাটাতে হবে মনে হচ্ছে!!
এখনতো স্টেশনে গেলে ওই জায়গা ও পাবো না ।
এমন টা হবে আগেই ভাবা উচিত ছিল।।"
নিলয় বলে উঠল, "ওখানে জাস্ট থাকা যায় না তুমি পারতে না অতক্ষন। বসে বসে দেখতে হাত পা ব্যাথা শুরু হয়ে যেতো ।।"
যূথিকা-- " যেতো তো যেতো এখন ঘুরে ঘুরে.. ওহ্... "
রিক্সা চালক বললো, "আচ্ছা আমি একটা কথা বলবো আপনাদের।। এই দিকে একটু ভিতরে একটা রিটায়ার্ড পুলিশের বাড়ি আছে বিশাল বাড়ি , বাগান , অনেক জায়গা, কেউ নেই।। ওখানে অনেকেই মাঝেমধ্যে থাকে ,দেখছি ।।যাবেন যদি থাকার একটা ব্যবস্থা হয় , আমি চেষ্টা করতে পারি।।"
নিলয় যূথিকা র দিকে তাকিয়ে --"কি করবে যা বলছে তাই করবে যাবে একবার।।"
যূথিকা---" আচ্ছা রিক্সো দাদা ওই লোকটা র বাড়িতে কেউ থাকে না মানে !! কি? ওনারা ..?
রিক্সো দাদা ---"বাড়ির লোকজন
সবাই নাকি বিদেশে থাকে।। উনি চাকরি শেষ করে এখানে আছেন, বিশাল বড় বাড়ি।।
যূথিকা--"চলো.."
কিছু ক্ষন পরে পুলিশ এর বাড়িতে পৌঁছে গেলো।।
রিক্সো দাদা গিয়ে পুলিশ বাবু বলে ডাকলো।।
বিশাল বাড়ি
বাড়ির সামনে এসে
নিলয় যূথিকা কে বললো, "বাড়িটা পুরো ভুতুড়ে টাইপ ।"
যূথিকা--- "তবে বেশ বড়ো বাগানটা খুব সুন্দর তাই না..
কিন্তু একটা গা ছমছম ব্যপার আছে।।"
নিলয়-- "কি আছে কপালে এখন.."
বাড়ির কাজের লোক ঘোতন এলো বললো কি চাই।"
, ঘোতনের চুল গুলো উস্কখুস্ক কেমন যেন , দাঁত টা বেশ বড়ো, জামাকাপড় একটু রং চটা
ঘোতনকে দেখেই যূথিকা ভয় পেয়ে নিলয় এর হাতটা ধরে, "ও কি পুরো ভুতুড়ে...?"
নিলয়--"কি জানি কি হচ্ছে, না না ধ্যাত ও মানুষ।।"
রিক্স দাদা বললো, "পুলিশ বাবু আছেন ওনাকে ডাকবে।।"
পুলিশ বাবু বেরিয়ে এসে, " কে রে ঘোতন তুই কার সাথে কথা বলছিস?"
পুলিশ বাবু বেশ রাশভারী চেহারা এসে দাঁড়ালো রিক্সো দাদা সবটা বললো, তারপর পুলিশ বাবু নিলয়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল, "তা তোমরা কোথায় থেকে আসছিলে?"
নিলয় এবং যূথিকা দুজনে মিলে উওরটা দিয়ে ফেললো আর উওর টা দু রকম হয়ে গেলো।।
পুলিশবাবু -- "তুমি বললে একরকম আর ও তো আরেক রকম বলছে কি হলো ব্যপারটা তোমরা , দুজনে কিছু গোলমাল মনে হচ্ছে !!"
নিলয় যূথিকা ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,
যূথিকা --"উনি আমাদের স্বামী স্ত্রী ভাবছেন , ।।"
নিলয় -- " আর এখন সব সত্যি বললে বিশ্বাস করবে না হয়তো পুলিশি জেরা শুরু করবে তার চেয়ে উনি যা ভাবছেন তাই ভাবুক।।"
নিলয় এবার বলতে শুরু করল পুলিশ বাবু র দিকে তাকিয়ে--" হ্যাঁ আসলে আমি একজন অ্যাডভোকেট একটা কাজে এসেছিলাম তারপর ওর একটা পুরনো বান্ধবীর বাড়ি ও ছিল এখানে সব মিলিয়ে তারপর ফিরতে গিয়ে এই বিপদ, ট্রেন চলাচল বন্ধ।।
পুলিশ বাবু আরো কয়েকটা প্রশ্ন করলো তারপর নিলয় একটু তর্কে জড়িয়ে পড়লো, ঘর পাওয়ার আশা প্রায় নেই।।
যূথিকা এবার বলে উঠল--" দেখুন পুলিশ কাকু আপনি প্লিজ আজকের জন্য থাকার জন্য ঘরটা দিয়ে দিন , এই একটু পর সন্ধ্যে হবে কোথায় যাব বলুন তো আমরা সেই স্টেশন থেকে ঘুরছি এতটা দূরে ।আমি তো আপনার মেয়েরই মতো, তাই না... আসলে সকাল থেকে ঘুরছি তো তাই কত কি ভুল ভাল বলে ফেলছি প্লিজ কাকু দিন না... ।।"
পুলিশ কাকু যূথিকা র মুখে মেয়ে শব্দ টা শুনে একটু শান্ত হয়ে গেলো। কতদিন হয়েছে নিজের মেয়েকে দেখেনি আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা, শেষে ঘর দিলো।। বললো, ঘোতন এর হাত দিয়ে কিছু জিনিষ পাঠিয়ে দিচ্ছি গ্যাস ওভেন , বাসন আছে নিজেদের রান্না করতে হবে ।।
যূথিকা--" ধন্যবাদ কাকু বাকি টা আমরা ম্যানেজ করে নেব!"
নিলয় এবং যূথিকা দুজনে রিস্কো দাদাকেও ধন্যবাদ দিলো।।
যে ঘরটার চাবি ওদের দিলো ওটা পুলিশ কাকুর বাড়ির পাশে আরও একটা একতলা চিলেকোঠার ঘর সমেত ঘর।। পুলিশ কাকু বললো, "ধরো গেস্ট হাউস এর চাবিটা। ওখানে বাইরে থেকে যারা আসে তাদের জন্য আগে আমার আত্মীয় স্বজনেরা আসলে ওটা তেই, এখন বহুদিন ফাঁকা পড়ে আছে।"
এরপর....
ঘরটার সামনে এসে দাড়ালো দুজনে।।
নিলয়-- ""অসহ্য একেবারে জেরার পর জেরা।"
যূথিকা--" আপনার ওই রেগে রেগে কথা বলার জন্য ঘর পুরো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল।।"
নিলয় ঘরের চাবিটা খোলার চেষ্টা করতে করতে বললো, চারিদিকে শুকনো পাতা , ধুলো, পুরো ভুতুড়ে টাইপ ।।
যূথিকা--" অন্তত একটা থাকবার জায়গা তো হলো, আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন ।।"
চাবি খুলে দুজনে ঢুকলো।।
যূথিকা জানলা খুলতে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
নিলয় আসতেই তাকে শক্ত করে ধরলো।।
নিলয় হেসে উঠলো, যূথিকা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো,
নিলয়--" এখন কে ভয় পাচ্ছে? একটা ইঁদুর দেখেই এই অবস্থা , প্রথমে পাগল দেখে তারপর ওই ঘোতনকে ভুত মনে করে, তারপর ইঁদুর এরপর যখন ভুত আসবে তখন কি করবে?"
যূথিকা ঠোক গিলে বললো, --"আপনি কি নিশ্চিত সত্যি এই বাড়িতে ভুত আছে!!"
নিলয়-- "ভীষন ধুলো কতদিন বন্ধ ছিল কে জানে !! তাই তো এইসব ইঁদুর।। শোনো তুমি এখানে বসো।। আমি বরং ওনার কাছ থেকে জল , কিছু রান্নার জিনিস জোগাড় করার ব্যবস্থা করি, উনি তো হেল্প করবেন বললেন।। রাতে একটা খাওয়ার ব্যবস্থা তো করতেই হবে।। "
যূথিকা-" আমি একা একা... এখানে। কিছুতেই না, চারিদিকে কেমন একটা ছমছম করছে।।"
নিলয় --"কিছু হবে না আমি তো এই পাশেই যাচ্ছি ।তোমার মোবাইল টা কোথায়,
নিলয় টেবিল থেকে নিয়ে যূথিকা কে দিয়ে বললো, কিছু সমস্যা মনে হলে তুমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবে।।"
যূথিকা--"ঠিক আছে ।" কিন্তু রান্না করতে তো বাজার লাগবে।।
নিলয়--- "উনি কতটা হেল্প করেন দেখি গিয়ে।।"
নিলয় পুলিশ কাকু র ওখানে যাবার পর ঘোতনকে পুলিশ কাকু বাজারে পাঠালেন বললেন, " তুমি ওকে বলে দাও কি কি লাগবে ও সব এনে দেবে।। "
নিলয় সেই মতো ঘোতন কে বোঝাতে লাগলো।।
কিছু টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নিলয় ফিরলো। ঘোতনের কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে ফিরলো।।
যুথিকা ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে
নিলয় ঘরে ঢুকে বললো ,কি হয়েছে এত ভয় পাচ্ছো কেন,?
যূথিকা বলল, "একটা আওয়াজ হচ্ছে কেমন যেন কে যেন ছটফট করছে।।
নিলয় --"কি বলছো! "
যূথিকা " শুনে দেখুন ভালো করে ওই উপর থেকে।""
তারপর নিলয় শুনতে পেলো।।
যূথিকা--"আচ্ছা এই সিঁড়িটা তে কোথায় যাওয়া যায় বলুন তো ওপরে কি ঘর আছে?
নিলয় -- "হ্যাঁ আছে তো বাইরে দেখলে না গেস্ট হাউস টা ওপরে ঘর আছে তবে পুরো দোতলা টা কম্পিল্ট নয়।।
যূথিকা--"ওখান থেকে ই শব্দটা হচ্ছে।।"
যুথিকা নিলয় দুজনেই ওপরে উঠলো তারপর ওরা একটা বন্ধ ঘর দেখতে পেলো।।
নিলয়-- "ছাদটা তো খুব ধুলো এখানে এই আওয়াজ টা ও বেশ ভুতুড়ে।।"
যুথিকা --"এই একরাশ ধুলোতে ভুত থাকতেই পারবেনা দম আটকে যাবে বলেই দরজা টা জোরে ঠেলা দিলে খুলে যেতেই একটা কি জোরে উড়ে গেলো আর যূথিকা ভয় পেয়ে আবার নিলয় কে আঁকড়ে ধরলো।। "
নিলয় -- "এটা তো পাখি একটা, ওই তো ঘরে ভাঙা জানলা দিয়ে যায় আসে দেখো।।"
যূথিকা দেখলো, নিলয় -- "তুমি সত্যি এই সাহস নিয়ে একা একা বেরিয়েছো? আমার সঙ্গে যদি আজ দেখা না হতো তুমি তো ভয়েই... কি যে করতে তাই ভাবছি।।
যূথিকা-- "কি আবার করতাম । আর আমি মোটেও এত ভিতু নই বলেই রাগ দেখিয়ে যূথিকা ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো।।"
নিলয় নিজে নিজে হাসতে হাসতে তারপর বললো,
-- "তুমি সেই একি রকম তাড়াতাড়ি রেগে যাও।।
আচ্ছা তোমার সঙ্গে আজ যদি দেখা না হতো তোমার তো আমার কথা কখনো মনেই পড়ে না অথচ আজ আমিই তোমাকে বিভিন্ন ভয় থেকে বাঁচাচ্ছি।।"
ছাদটা অন্ধকার সন্ধ্যে হয়েছে, গাছের পাতা গুলো শিরশির করে নড়ছে।
যূথিকা বলে উঠল-- "কেন মনে পড়বে না !!"
নিলয় যূথিকা র দিকে তাকিয়ে--" কখন মনে পড়তো তোমার?"
যূথিকা-- "সব মনে পড়াই কি সব সময় প্রকাশ করা যায়? নাকি সম্ভব ..!!
আপনার আর আমার মাঝে এক সমুদ্র এর ব্যবধান এই পার আর ওই পার যা হয়তো গভীর ভাবে অনুভব করা যায় কিন্তু দূরত্ব টাও তো সত্যি।।"
নিলয় বহুক্ষণ যূথিকার দিকে তাকিয়ে সমস্ত কথা হারিয়ে ফেললো, অবাক হলো, যূথিকা এমন ভাবে সবটা বলে ফেলতে পারে সেটাই নিলয় ভেবে চলেছে।।
তারপর যূথিকা আবার বললো -- "খুব তো মনে রাখার কথা বলছেন বলুন তো প্রথম কোন বারে আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল??"
নিলয় ইতস্ততঃ হয়ে গেল --বার বার চেষ্টা করেও ভুল বলেছিল আর যূথিকা হেসে উঠলো।।
কিছু ক্ষন পেরিয়ে গেছে ।।
যূথিকা নিলয় ছাদ থেকে নেমে এসে বাড়ির বাইরে এসে দাড়ালো ।।যূথিকা বললো, এই দেখুন বাইরে থেকে ঘোরানো সিঁড়ি ছাদে ওঠার যায়, আর এখানে কি সুন্দর বাগান টা নিলয় এগিয়ে এলো বললো, "লোকটা বেশ শৌখিন সব কিছু সাজানো গোছানো।।"
যূথিকা--" হ্যাঁ ঠিকই ..."
নিলয়ের ফোন এলো , নিলয়ের স্ত্রী শোভনা র সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।।
যূথিকা বলল " আপনি কথা বলুন তাহলে।"
সে রান্না ঘরে যচ্ছে কফি বানাতে।।
নিলয় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।।
কিছু ক্ষন পরে লোর্ডসেডিং হলো।।
হঠাৎ যূথিকার চিৎকার শুনে। নিলয় ছুটে গেলো মনে মনে ভাবলো যূথিকার তো অন্ধকার এ ফোবিয়া ছিলো।। লোর্ডসেডিং তাই হয়তো চিৎকার করেছে তাড়াতাড়ি মোবাইল এর ফ্ল্যাস জ্বেলে রান্না ঘরে যেতেই যূথিকা নিলয়ের হাত ধরলো শক্ত করে চোখ বন্ধ ।।
নিলয় --"আমি তো আছি।
তোমার অন্ধকারে ফোবিয়া ছিলো তাই না এখন তাকিয়ে দেখো আলো এসে গেছে কোনো ভয় নেই শুধু শুধু প্যানিক করছো।"
যূথিকা চোখ খুললো তারপর দেখলো , কারেন্ট টা ও চলে এলো।।
নিলয় --" উহঃ সকাল থেকে শুধু ভয় পেয়ে যাচ্ছো ।"
যূথিকা -- "আমি অন্ধকারে ভয় পাই আপনি কি করে জানলেন?
নিলয়--" কেন আমি কি তোমার ব্যাপারে কিছুই জানি না , নাকি কোনো কথা হয়নি তোমার আমার মধ্যে।।
একদিন আমার অফিস এ তুমি ভয় পেয়ে ছিলে সেদিন কেউ ছিল না।।
কেয়ার টেকার টাও বেরিয়ে ছিলো আর অফিসে তুমি একা ছিলে, লোর্ডসেডিং বাইরে এ তুমুল বৃষ্টি বাজ পড়ছে তুমি ভয় পেয়েছিলে।। এসে দেখলাম টেনশানে বসে কাঁপছিলে ।। তুমি সব ভুলে গেছো ।।
কিন্তু আজ ভয় পেলে কেন? আমি তো কাছেই ছিলাম সেদিন না হয় একা বসে ছিলে তাই।"
যূথিকা বললো-- "আমার অন্ধকারে ফোবিয়া আছে ঠিকই বিশেষ পরিস্থিতিতে দেখা দেয় কিন্তু আজ আমি অন্ধকারে ভয় পাইনি।।"
নিলয় --
"তাহলে চিৎকার করলে কেন??"
যূথিকা--"ইঁদুর ..ওই তো ওই তো যাচ্ছে।।"
নিলয় -- "ওহ্ বলে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।।
যূথিকা কফির কাপ এগিয়ে দিলো নিলয়কে
নিলয় বললো, "তোমার নতুন বয়ফ্রেন্ড কে দেখলাম
যূথিকা--সে আবার কে??"
নিলয় --"কেন সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট টা কবে যেন একটা দেখলাম।।"
যূথিকা--" সেই শোকে কি আপনি ঘুমতে পারছিলেন না সারারাত , আর ও যে আমার বয়ফ্রেন্ড নয় তা আপনি ও জানেন শুধু বাজে কথা।।
জন্মদিন ছিল ওই ছেলেটার তাই ছবি গুলো তুলেছিল অফিসের চেতনদা।। তাই তো পোস্ট করলাম , সঙ্গে তো আরো ও সবাই ছিলো, যাই হোক।
যূথিকা আবার বললো,
"আমি ও দেখেছি আপনাকে সুন্দরী সহকারী কে কোথায় যেন একটা কেস এর ব্যপারে গিয়ে ছিলেন ওখানের ফোটো, অনেক গুলো ছবি ছিলো।।
সব সময় আমায় প্রশ্ন করে যাচ্ছেন আমি আপনাকে মনে করি কি না অথচ আপনি ও আমায় ভুলেই গেছেন। আজ নেহাত হঠাৎ আচমকা ই দেখা হলো তাই...!!"
নিলয় মৃদু হেসে---"এটা কি আমার করা প্রশ্নটার প্রতিশোধ ছিলো।। নাকি অভিমান ....!!"
যূথিকা বললো,"আমার অভিমান নিয়ে আপনি কেন ভাববেন?? আপনার বউ শোভনার টা বেশি ভাবুন।।"
নিলয় বলে উঠল,
"শোভনা জানে ওই মেয়েটি আমার কাছে কাজ শিখছে, হাঁটুর বয়সী মেয়ে , তুমি চিরকাল অবুঝ এর মতো , তাই সাধারন বিষয় নিয়ে অভিমান করো।।"
যূথিকা--"আচ্ছা আপনার আর আপনার হাঁটুর বয়স কি আলাদা ??"
নিলয় হেসে --"তোমার সঙ্গে কথায় অসম্ভব।"
রান্না ঘরে চলে গেলো
যূথিকা তারপর নিলয়কে ডাকলো , তার বললো,
" আসুন এদিকে ...। ঘোতনকে দিয়ে তো ভালোই বাজার করেছেন রান্নাটা করে নেওয়া যাক।।
নিলয় এর দিকে ছুরি এগিয়ে বললো---
নিন পেঁয়াজ টা কুচি করে কেটে দিন আমি এদিকে অন্য গুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।"
নিলয়--"আমি এখন পেঁয়াজ এই সমস্ত কাটবো ।।শোভনা হলে কখনোই বলতো না ও সবটা সামলে নিতো একাই।"
যুথিকা--" কি আর করা যাবে আমি তো শোভনা নই, আমার সাহায্য লাগবে আমি একা একা পারবো না, আপনি পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবেন আর আমি একা একা রান্না করবো কিছুতেই না।। তাছাড়া এখানে এই ইঁদুর এর মাঝে আমাকে আপনি একলা ফেলে চলে যাবেন। কি হলো.. শোভনা হলে ছেড়ে যেতেন না আমি বলেই তাই!!
নিলয় --"উঃ আচ্ছা আচ্ছা আমি কাটছি..।"
নিলয় কাটতে শুরু করলো।।
কিছু ক্ষন পরে যূথিকা বললো,
"সাবধানে কাটুন এখানে আপনার হাত কেটে গেল এ কিন্তু ওষুধ পাওয়া যাবেনা। "
নিলয় এর চোখে জল দেখে ছুরিটা যুথিকা নিয়ে বললো--" আমি কাটছি থাক আপনাকে আর কাটতে হবে না।"
নিলয় --"কেন আমি কি খারাপ কাটছি?"
যূথিকা--"আমি কি তাই বললাম ।
বলেই ভেতর থেকে রুমাল এনে দিয়ে বললো এই নিন চোখটা মুছুন ।"
নিলয় ঝাপসা চোখে--" যুথিকা র হাত ধরলো ।"
যুথিকা--" আমার হাত নয় রুমাল টা ধরুন।।"
কিছু ক্ষন একে অপরকে দেখলো তারপর রুমালটা নিলয় নিয়ে চোখ মুছে ফেললো।"
কিছু্ সময় পরে
যুথিকা রান্না করা শুরু করলো।।
রান্না করতে হঠাৎ চোখ এ কি একটা অসুবিধা হলো যুথিকা র ।
নিলয় বললো--" কই দেখি চোখ টা খোলো।"
যূথিকা --"কিছু পড়ে নি আসলে লঙ্কা কেটেছিলাম তাই তো হাতটা চোখে ভুল করে উহঃ এখন জ্বলছে।
খুলতেই পারছি না।"
নিলয় হাত ধরে জলের বেসিনের কাজে নিয়ে এলো জলের ঝাপটা দিয়ে দিলো।।
যুথিকা চোখ খুললো।।
নিলয় রুমাল টা দিয়ে--" নাও এখন এটা তোমার লাগবে।।"
যুথিকা--" থ্যাঙ্ক ইউ..."
নিলয়--" রুমাল দিলাম বলে বলে নাকি..."
কিছু ক্ষন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার তারপর হেসে যুথিকা রান্না করতে গেলো।।
রান্না শেষ হলো.... ।। রাত বাড়ছে
ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিলো।।
এরপর...
নিলয় মোবাইল এ গান শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।।
যূথিকা আসতেই তাকে নাচতে অনুরোধ করলে যূথিকা নাচতে শুরু করল।।
নাচ শেষ হলো।। নিলয় যূথিকা র খুব কাছাকাছি নিলয় বলতে শুরু করল যূথিকা র নাচের প্রসংশা
সঙ্গে সঙ্গে দূর থেকে একটা ঘুঙুর এর শব্দ ভেসে আসছে।।
সেটা শুনে দুজনেই খুব বিচলিত হয়ে উঠলো কোথা থেকে আসছে জানতে জানলা দিয়ে দেখে বুঝতে পারলো পুলিশ কাকু র বাড়ি থেকে আসছে।।
কিন্তু পুলিশ কাকু র বাড়ি পুরো অন্ধকার কোনো আলো জ্বলছে না।। তাহলে এই শব্দ ওখান থেকে এলেও কে এভাবে নাচ করছে।।
"এভাবে সম্ভব নয়।। দূহ...র বলে , উঠল নিলয় তারপর বললো, " শোনো তুমি শুয়ে পড়ো রাত বাড়ছে।। আর তারপর সকাল হলেই চলে যাবো আমরা , কি দরকার কে ঘুঙুর বাজাচ্ছে কে নাচছে জানার দরকার নেই।। আমি রাতটা এই য সোফাতেই কাটিয়ে দেবো।।"
যূথিকা বললো, "সেটা তো আমি ও করতে পারি সোফাতেই আমি থাকবো আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।।"
নিলয় বললো, "তোমার অভ্যাস নেই তুমি পারবে না ।।"
যূথিকা, "আর আপনার খুব অভ্যেস আছে।।"
নিলয়--" বাজে তর্ক করো না তো যা বলছি তাই করো।"
যূথিকা -- "বিছানাটা অনেক বড়ো বলেই ", মাঝখানে সব বালিশ দিয়ে একটা পার্টিশান করে বললো, "আপনি ওদিকে আর আমি এদিকে শুয়ে পড়ছি দেখুন রাত বাড়ছে , কি হলো... ।।
নিলয় বিছানা র ওই দিকে বসলো, যূথিকা এ দিকে।।
নিলয় বললো, " তোমার এত কিছু তে ভয় লাগে আর এই যে রাতে এক ঘরে এক বিছানায় আমার সঙ্গে তোমার ভয় হচ্ছে না।।"
যূথিকা নীরব.... ,
নিলয় আবার বললো, "তোমার নিন্দে হওয়ার ভয় করবে না লোকে বদনাম করতে পারে।।"
যূথিকা--"আমায় নিয়ে কেউ কিছু বললে আপনি প্রতিবাদ করবেন না? তাছাড়া আপনি তো উকিল কত গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। লোকেদের বোঝাবেন।।"
নিলয়--" আর যদি তা না হয়, আমি তো অতটা ভালো নাও হতে পারি মানে ধরো তোমার বিপদে তোমায় থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই পারি , তুমি একটু বেশিই আমাকে বিশ্বাস করো কিন্তু।"
যূথিকা--" বেশ তো আমি না হয় বেশি বিশ্বাস করি। আপনি মুখ ঘুরিয়ে নিলে আমি ঠকে যাবো। তারপর আপনি পারবেন নিশ্চিন্তে থাকতে আপনি পারবেন আমাকে ....
নিলয় দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
কথা বলতে যাবে হঠাৎ একটা শব্দ শোনা গেল।।
নিলয় একটু বিচলিত হয়ে--" আচ্ছা আওয়াজ আসছে শুনতে পাচ্ছ?"
যূথিকা--" ছাদ থেকে মনে হচ্ছে!!
তাহলে কি সত্যি ভুত আছে এই বাড়িতে প্রথমে পুলিশ কাকু র অন্ধকার বাড়ি থেকে ঘুঙুর এর শব্দ তারপর এখানে কিসব হাঁটা চলার শব্দ ...
নিলয়--" এত রাতে ভুত. ....
যূথিকা--" তা কি ভুত দিনের বেলায় বাগানে বসবে।।
নিলয় --" আরে নাহ আমি কি তাই বলছি, ছাদের দরজা তো বন্ধ আছে তাহলে কি কোন?
যূথিকা--" আপনি দেখেন নি টিভিতে ভুত বন্ধ জায়গা দিয়ে এদিকে ওদিকে যেতে পারে।"।
নিলয় --" আচ্ছা ছাদের সিঁড়ি তে উঠে যদি কিছু বোঝা যায় চলো একবার দেখে আসি।।
যূথিকা তো ভয়ে...।
যূথিকা-- "তারপর যদি সামানে ভুত চলে আসে।"
নিলয়-- "সে তো ভুত হলে এখানে ও এসে পড়তে পারে।"
যূথিকা--" আপনি কি বলছেন ..
তারপরে ওরা শেষ পর্যন্ত উঠলো ছাদের দিকে।
ছাদের যত কাছে তত ফিসফিস শব্দ হচ্ছে।।
এরপরে ওরা ছাদের বন্ধ দরজায় কান পেতে শুনতে শুরু করলো।।
ওপাশ থেকে কারা কথা বলছে ভালো করে শুনতে শুনতে ওরা বুঝতে পারলো এটা ঘোতনের গলা সঙ্গে একটা মহিলা ও আছে
ঘোতন বলছে ---" শোন ঝুমা এভাবে আমাদের বেশ কিছু দিন চালিয়ে যেতে হবে।।
ঝুমা--" আচ্ছা পুলিশ বাবুকে এতদিন হলো ওষুধ টা তো দিচ্ছি কোনো কাজ হচ্ছে না কেন?
ঘোতন--" ওটা ধীরে ধীরে কাজ করবে তারপর পুলিশ বাবু ফট্ দেখবি মারা যাবে।।
তাছাড়া এখন ওই ঘুঙুর এর শব্দ টা রোজ রাতে চালিয়ে যেতে হবে যাতে উনি মনের দিক থেকে দূর্বল হয়ে পড়ে।। তুই রোজ সকালে চায়ে ওষুধ মিশিয়ে যাবি আর চা খাবে তখন ওনার সঙ্গে পুলিশ বাবু স্ত্রীর কথা বলে যাবি।। উনি এখন মনে করছেন ওনার স্ত্রীর অতৃপ্ত আত্মা এ বাড়িতে আছে আর তাই উনি ভীষন দূর্বল এখন এই সময় ওনার কাছ থেকে সমস্ত চাবি সিন্দুকের তোকে আদায় করতে হবে।।
ঝুমা--" আমি তো রোজ তাই করছি একটা হিরের গয়না ওটা তো এখন আমাদের।।
শুধু এই পুলিশ বাবু মরলে পুরো বাড়িটাই।।
ঘোতন--" ওঁর ছেলে মেয়ে বিদেশ থেকে আসবে না আর আসলে ও নকল দলিল তৈরি আছে।"।
নিলয় যূথিকা ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো আর একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকিলো।।
ঘোতনের মতো দেখতে বোকা একটা ছেলে আসলে এত খারাপ হতে পারে।।
ওই ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উঠে এই সব করছে।।
এরপর নিলয় যূথিকা দুজনে মিলে প্ল্যান করলো ঘোতন কে ধরবে।। এবং পুলিশের হাতে তুলে পুলিশ বাবু কে বাঁচাবে।।
এবং সেটাই ওরা করলো খুব সকালে ওরা লোকাল থানার সাহায্য নিলো।। পুলিশ বাবু তো খুবই পরিচিত একজন মানুষ কিন্তু তার বাড়িতে বাড়ির কাজের লোক এভাবে চালিয়ে যাচ্ছে সেটা কেউই ভাবে নি
পুলিশ বাবু তো অবাক বললো," ঘোতন তো আমার এখানে বহু দিন কাজ করছে এরকম কেন করলো।।থানা থেকে পুলিশরা এলো আর পুলিশ বাবু র ঘর তল্লাশি করে ঘুঙুর এর আওয়াজ করা রেকর্ড পেলো, ঘোতনকে ধরে পুলিশ জোর করতেই সত্যি কথা বেরিয়ে এলো।। ঝুমা বাড়িতে রান্নার কাজ করে।। আর দীর্ঘ দিন ধরে খাবারে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছে।।ঝুমা ঘোতনের কথা মতো চলছে, দুজন কেই পুলিশ ধরলো।।
পুলিশ বাবু নিলয় যূথিকা কে ধন্যবাদ জানতে গেলে , যূথিকা জিগ্গেস করলো, তার বাড়িতে। তার ছেলে মেয়ে র আসছে না কেন??
পুলিশ বাবু জানায় একবার একটা ডিউটিতে গেছিলাম ওদের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আমিও একটা জরুরী মিশনে ছিলাম সঠিক সময় আসতে না পারায় উনি মারা যান তারপর থেকে আমার ছেলে মেয়েরা আমাকে ভুল বোঝে আর ওরা আমাকে দায়ী করে ওদের মায়ের মৃত্যু র জন্য এরপর ওরা বিদেশ এ চলে যায় ছেলে নিউইয়র্ক থেকে আর ফেরেনি।। মেয়ে ও এ বাড়িতে আর আসে না ও যদিও পাঞ্জাবে থাকে , আমাকে না জানিয়ে এ একটি পঞ্জাবী ছেলে কে বিয়ে করে ওখানেই চলে যায়। আমার স্ত্রী একজন ডান্সার ছিলেন।। আমার মেয়ে তার মায়ের কাছেই নাচ শিখেছিলো । মেয়ে একটা বার ও আসেনি বিয়ের পর।।
ঝুমা প্রায়ই আমাকে পুরোনো দিনের কথা জিজ্ঞেস করতো , ওর ভালো ব্যবহার দেখে আমিও ওকে সব কথা বলতাম কিন্তু ও যে ধীরে ধীরে আমাকে ই মারতে চাইছিল তা বুঝতে পারে নি।। দিনের পর দিন ঘুঙুর আওয়াজ দিয়ে আমাকে এভাবে আমিও শেষ এ বিশ্বাস করতে শুরু করি সত্যি হয়তো উষা আর আত্মা এসেছে ।। একসময় ওর নাচের শব্দ গোটা বাড়িটা গমগম করতো তবে আমি বেশি একটা পরিবার কে সময় দিতে পারতাম না এটা নিয়ে আমার ছেলে এবং মেয়ে কেউই বুঝতে চাইতো না পরবর্তী সময়ে ওদের মায়ের মৃত্যু র পর ওরা সম্পূর্ণ আমকে ভুল বুঝে সরে গেলো।। তারপর আমার বয়স বাড়ছে, তখন ওই ঘোতন আর ঝুমাকেই ভরসা করতে হলো আমায়।। কিন্তু ওরা যে এত খারাপ হতে পারে আমি ভাবিনি।। এত বছর অপরাধী ধরে এসেছি কিন্তু এদের তো বুঝতেই পারলাম না।
নিলয়-- "দেখুন আমরা থানায় অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি উনি তো আপনার ভীষন পরিচিত উনি বলেছেন উনি আপনার ছেলে মেয়ে এর সঙ্গে আজই কথা বলবেন।। উনি বললেন আপনার একটা কাজের লোকের ব্যবস্থা উনি করে দেবেন।।
আমরা কিন্তু আজ বিকেলে র ট্রেনেই বেরিয়ে যাব, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।।"
পুলিশ কাকু-- "তোমরা দুজনে মিলে যেভাবে আমাকে সাহায্য করলে ।। তোমাদের সঙ্গে আরোও সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তোমরা তো আজই চলে যাবে।। আবার কিন্তু সময় করে এখানে এসো একদিন তোমরা ।আমার ভালো লাগবে।।"
নিলয় যূথিকা বেরিয়ে পড়লো
তারপর স্টেশনে এলো...
আর কিছু সময় অতিক্রম করে ওরা পৌঁছে গেলো।।
এবার নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে ওরা রওনা দেবে ।।
নিলয় বললো, ---"পুলিশ কাকু কিন্তু বলেছে ওনার ওখানে আবার যেতে।।
যূথিকা--" তাহলে আপনি আবার কখনো সময় করে চলে যাবেন।।"
নিলয়-- "উনি কিন্তু আমাদের দুজনকে একসাথে যেতে বলেছে।। "
যূথিকা হেসে বললো, __"একটা দিনের মধ্যে কত কি হয়ে গেলো ভাবলে পুরো সিনেমার গল্পের মতো মনে হচ্ছে, সারাজীবন মনে থাকবে।।"
নিলয় -- "সিনেমার গল্পের মতো যখন বলছো তখন গল্পটার নায়ক নায়িকা ও ছিল নিশ্চিয়ই।। "
যূথিকা মৃদু হেসে মুখ নীচু করে -- "হুমম.. কিন্তু এখন গল্পটা শেষ হয়ে গেছে।।"
নিলয় যূথিকা র দিকে তাকিয়ে বললো--"তা এই গল্পটা র নায়িকা কি এটা বোঝে না সব গল্পই শেষ হয়ে আবার কোথাও একটা থেকে শুরু হয়।। নায়িকা কি এটা জানে না যে গল্পের নায়ক সবসময় অপেক্ষা করছে কখন নায়িকা এসে তার মনের কথা বলবে।।
যূথিকা বললো,--"এই গল্পটা র নায়িকা ভেবেছিল, না বললেও নায়ক সব এমনই মনের কথা পড়ে ফেলতে পারে।। কিছু কথা না বলে ও বলা হয়ে যায়.... তাই না।।"
নিলয় যূথিকা র হাতে হাত রাখল।।
ধীরে ধীরে হাসি মুখে একে অপরকে বিদায় জানালো ওরা।। আর থেকে গেলো ওদের মনে একটা ভালোলাগার অনুভূতি যা ওদের বিশ্বাস করালো আবার একদিন হঠাৎ হয়তো দেখা হয়ে যাবে।।
চারিদিকে কোলাহল ভীড়ে দুজনে দুদিকে এগিয়ে গেল।।