কাঁচা মিঠে
কাঁচা মিঠে
ঘরের চাবিটা দেখি দাও, বলেই অতসী মনীশের হাত থেকে এমন জোরে নিলো।
মনীষ বলে উঠলো" উহঃ আমার হাতটাই পুরো ভেঙে গেলো। এত রাগ করার কি দরকার বুঝি না!!"
, ঘরে দরজা খুলে অতশী বাথরুমে পা ধুতে শুরু করলো।
মনীশ সোফায় আরাম করে বসলো ফ্যানটা চালিয়ে।
অতশী বাথরুম থেকে বেরিয়ে বললো, " আমি কি জানি না তোমার সোহিনীর প্রতি একটা সফট কর্নার আছে!!"
মনীশ বললো, "গোটা রাস্তা দিয়ে তো এই একি কথা বলে চলেছো । আচ্ছা!! তুমি কি ভুলে যাও সোহিনী আমাদের সাথেই, একি কলেজে আমরা সবাই পড়তাম।
ওর আজ অ্যানির্ভাসরি তাই বললাম ওকে... গ্রেসফুল লাগছে। এই সামান্য একটা কথা, এতেই তুমি এত রিয়েক্ট কেন করছো? কোনো মানে হয় না..!! এই সমস্ত ভুলভাল রাগ করার।"
অতশী ঘরের ভিতরে পোশাক বদল করে এসে, " হ্যাঁ সেই তো তুমি তো তোমার সোহিনীর জন্য কম্পপ্লিমেন্টের ঝুড়ি নিয়ে যাবে আর আমি বললেই দোষ। যাবার আগে কত করে বললাম যে অফ্ হোয়াইট পাঞ্জাবি টা পরে চলো কিন্তু তুমি সেই সবুজটাই পরলে, কেন বলোতো!!"
মনীশ বলে উঠলো, " অফ হোয়াইট এর একটা বোটাম ছেড়া ছিলো তাই জন্যই তো এতে এত রহস্য খোঁজা র কি আছে?"
অতসী--- "না মোটেই না, সোহিনীর তো সবুজ পছন্দ করে , আমি তো জানি;! । আর আজ ও .. তো ও সবুজ জারদৌসি পরে ছিলো। কারণ আমি জানি।"
মনীশ--" তুমি যদি আমাকে এখন এটা নিয়ে ভুল বুঝতে থাকো তাহলে সত্যি কিচ্ছু বলার নেই।"
মনীশ বিরক্তি নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো কিছু ক্ষন পরে বেরোলো ।
অতসী বলে উঠলো, "তুমি কফি খাবে?"
মনীশ--"এত রাতে কফি!! এখন এই এতসব খাওয়ার পর খেলে...
অতসী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "তুমি স্নান করলে ?"
মনীশ বলে উঠলো, "অস্বস্তি হচ্ছিল, এত গরম একদম ভালো লাগছে না তাই .. করলাম
অতসী --"এত রাতে স্নান করলে কেন ? তোমার তো ঠান্ডার ধাত কোনো কথা ও শুনবে না তারপর সমস্যা হবে।
মনীশ বলে উঠলো, "কিছু হবনা .. ছাড়ো তো!!
অতসী ---"না হলে ই ভালো.. তোমার আর কি আমাকে টেনশানে ফেলা কাজ.."
মনীশ-- "তুমি তাহলে আমার উপর রাগ করা ছাড়া টেনশান ও করো। বলতে বলতে হেসে ঘরে ঢুকে গেলো।
পরের দিন সকালে দুজন এর খুব তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে গেল। অফিস যাবার ভীষণ তাড়া ।
অতসী দেরিতে ওঠার জন্য লাঞ্চে র জন্য কিছু বানাতে পারেনি।
অতসী বলে উঠলো, "শোনো... আজ লাঞ্চ এ কিছু একটা খেয়ে নিও।"
মনীশ---" হুঁ তা আমাকে ডাকলে পারতে। আজ হেল্প করে দিতাম। তাহলে আর..
অতসী সঙ্গে সঙ্গে বললো, "কিরকম বোকা বোকা কথা আমি তো দেরি উঠলাম তুমি তো তাড়াতাড়ি উঠতে পারতে?"
মনীশ-- "ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেছে অফিস এ গিয়ে যদি চার্জটা দেওয়া যায় দেখি!!
অতশী---"ঠিক আছে চলো।"
দুজনে বেরিয়ে পড়ল।
দুপুর বেলা মনীশের ফোন অতসী কে--" এই লাঞ্চ করলে?"
অতশী--" না এখনো ও করিনি।"
মনীশ--"সেকি.. কত দেরি করবে যাও.. শরীরের কোনো খেয়াল নেই ওই একটা রাগ করা ছাড়া.. ।"
অতসী--"তোমার হয়ে গেছে?
মনীশ ওপাশ থেকে হ্যাঁ বললো।
অতশী বললো, " এই শোনো জরুরি কথাটা হলো আজ আসার সময় বাজার করবে। বুঝলে।
মনীশ--"অসম্ভব আজ দেরি হবে আজ হবে না।
কিছু নেই ফ্রিজে সবজী, মাছ কিছু নেই।
অতশী-- " না গো কিছু নেই।"
মনীশ -- "ডিম .. ডিম নেই... ওটা তো থাকার কথা।"
অতশী-- "হ্যাঁ ওটা আছে।"
মনীশ--"ওই দিয়ে ম্যানেজ করো আজ। আর শোনো তুমি তাহলে খেয়ে নিও আমি রাখছি এখন।
ফোন ছেড়ে দেবার পর অতসীর কলিগ বিপাশা পাশ থেকে বলে উঠলো, " বাব্বা কি প্রেম!! তুমি দুপুর বেলা খেয়েছে ও কিনা খোঁজ নিচ্ছে। কি ভালো গো। অতশী দি।"
অতশী বলে উঠলো ,
"এই ছাড়তো বেশি বেশি অদিখ্যাতা ওর। ও সবসময় দেখায় । তারপর ঝগড়া করবে। তারপর আবার মনরাখা কথা বলবে।"
বিপাশা বললো, "তাও তো তোমার কেয়ার করে , ঝগড়া করে, আর আমার হাজব্যান্ড সারাদিন কাজ করছে। বিরক্তিকর বোরিং একটা মানুষ। "
অতসী হেসে বলল, --"এই তোদের লাভ ম্যারেজ ছিলো না ??"
বিপাশা বললো, "হ্যাঁ কিন্তু তোমাদের মতো হলো কই।?? সারক্ষন কাজ দেখায় বিরক্তি কর। "
অতশী ---" শোন ও নদীর এপার ওপার এর মতো দূর থেকে অন্য দের টা ভালো মনে হয়।।"
বিপাশা -- "অতশীদি তুমি না সত্যি... বলে হেসে উঠলো।
কয়েকটা দিন পর....
ছুটির দিনে সকাল ....
অতশী রান্নাঘরে।
বাইরের টেবিলে মনীশ বসে চা খাচ্ছে।
হঠাৎ অতশীর ফোনটা বেজে উঠলো।
মনীশ বললো, "এই তোমার ফোনটা বাজছে ।"
অতশী--"দ্যাখো না কে , ধরো না!!"
মনীশ বললো, "রনিত ফোন করছে ।"
অতশী --"তাহলে ধরো দ্যাখো কি বলছে , বলো আমি রান্না করছি। "
মনীশ --"না না ও তো আর আমার ফোনে করে নি, তোমাকে করেছে। তার মানে তোমাকে চাই।"
অতশী মুখ বাঁকিয়ে তাড়াতাড়ি এসে ধরলো চেয়ারে বসলো। তারপর কথা চলছে , অতশী এদিক থেকে শুধু হু ...আর হুঁ... করে চলেছে...।
মনীশ আস্তে করে বলে উঠলো, "শুধু হু... আর হু.. কি ধরনের কথা হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। "
অতশী ফোন ছাড়া র পর বললো, " উফ তোমার জন্য না কথা বলা যায় শুধু ফোড়ন, তাই না!!"
মনীশ --"তা কি বললো তোমার বিশেষ বন্ধু।"
অতশী-- , "ওর ছেলের জন্ম দিন ।ইনভাইট করছিল। আর শোনো শুধু আমার বিশেষ নয়, বন্ধু টা তোমার ও।"
মনীশ -- " হ্যাঁ সেই তো ।আমার ফোনে কিন্তু করে নি তোমার ফোনে করলো।
রনিত এর তোমার ব্যপারে বরাবর একটা ইন্টারেস্ট সেই কলেজ থেকে দেখে আসছি।"
অতশী বলে উঠলো, " ঠিক তোমার যেমন সোহিনী র প্রতি...।"
মনীশ---"ওমনি সুযোগ বুঝে... পারো ও তুমি. ।
সেবার কলেজ এ সেকেন্ড ইয়ারে পরীক্ষা র পর আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি ওর সাথে ঘুরতে গেলে বলো। সেটা তো ভুলবো না,..., কোনদিন, মানে ভোলা যায় না।।"
অতশী--
"মোটেই না সঙ্গে আরোও অনেকে ছিল। শেখর, নেহা চয়নিকা আর দু একজন। আর তাছাড়া সেই কবে থেকে টিকিট কাটা। কত প্ল্যান করা , পাহাড়ে ট্র্যাকিং করার। আর তুমি অসুস্থ বলে সবাই বন্ধ করে দিতাম, অদ্ভুত কথা..।"
মনীশ --
"তার মানে আমার গুরুত্ব ছিলো না । কিন্তু সোহিনী যায়নি ও যাবে না বলেছিল , প্রকৃত বন্ধু মতো কাজ করে ছিলো।"
অতশী ---" তুমি না তখনোও আমাকে প্রোপোজ করোনি তার তাছাড়া ওই দিন গুলো তুমি, সোহিনী কি করেছিলে কে জানে!! আমি তো জানতে যায় নি।"
মনীশ বলে উঠলো,
"প্রোপোজ করিনি তো কি হয়েছে.. , কোনো ফিলিং থাকবে না তোমার। আর তুমি ও তো ঘুরতে গিয়ে রনিতের সাথে টাইম স্পেন্ড করেছিলে। আমি কি জিজ্ঞেস করতে গেছি। সোহিনী আমার ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর হয়েছে শুনে কত কেয়ার করলো তারপর আমার বাড়িতে এসে খোঁজ নিতো রোজ।"
অতশী বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
"যত অদিখ্যাতা!! এমন করে বলছো যেনো তুমি অনাথ , বাবা মা সবাই ছিল তোমার। তখন তো দিদির বিয়ে হয়নি , দিদিও তোমাকে দেখেছিল অথচ সোহিনী সোহিনী করে নাটক করছো। ফিরে এসে আমি ও তো কত ফল নিয়ে গেলাম তোমার জন্য সে সব কিছুই মনে নেই তোমার শুধু সোহিনী আর সোহিনী।"
মনীশ এবার নরম সুরে বললো,
"আচ্ছা এত রাগ করছো কেন? এই শোন তুমি বলেছিলে ওই খানে পাহাড় এ চয়নিকা আর শেখরের একটা কি হয়েছিল । কি হয়েছিলো!!!"
অতশী ---"ওই তো ওদের মধ্যে একটা রিলেশন হয়েছিল। কিন্তু চয়নিকা র বাবা মা পরে রাজি হননি তাই সেই কথাটা চয়নিকা শেখরকে বলেছিল যে ওর বাবা মা মত দিলো না তাই ও বিয়ে করতে পারবে না। শেখর তাই তো আপসেট থাকত।"
মনীশ --"আচ্ছা শেখরের বউটা ঠিক ভালো হয়নি বলো ??কেমন যেন...।"
অতশী--"হ্যাঁ ভীষণ নাক উঁচু স্বভাব । যতবার দেখছি একি রকম। চয়নিকা র বরটা কেমন কে জানে!!
মনে তো হয় না চয়নিকা হ্যাপি , কোনো অনুষ্ঠানে দেখি না। সেভাবে আলাপ টাও নেই।"
মনীশ --- "শেখরের সাথে বিয়েটা হলে কিন্তু ভালো হতো, চয়নিকা খুব ই শান্ত স্বভাবের মেয়ে।"
অতশী--" আর ভালো!! সোহিনীর অ্যানিভার্সরিতে আমি দেখলাম ।ওরা খুব ই ইতস্ততঃ একে ওপরের সামনে। জানো আমার মনে হয় এখন ও দুজনে দুজনকে ভালোবাসে।
মনীশ--"সেটাই কি স্বাভাবিক নয়..."!
অতশী---"হুঁ ....কিছু করার ও নেই এখন।"
মনীশ চেয়ার থেকে উঠে আচ্ছা ...তাহলে আমি স্নানটা করে আসি বুঝলে। তোমার রান্না র কত বাকি।"
অতশী--" এই তো হয়ে গেছে প্রায় শেষ হয়ে যেত। তুমি তো পুরোনো কাসুন্দি শুরু করলে।
এই শোন না একটু ওই বেড সিট কেচে দেবে আমি সাবান মাখিয়ে সব করে দিয়েছি তুমি শুধু ধুয়ে মেলে দেবে। করবে প্লিজ....। "
মনীশ ---"এমন করে বলছো যেন আমি কোনো হেল্প করিনা। তুমি তো খালি ঝগড়া করো ।"
অতশী---"সরি সরি আর ঝাগড়া করবো না ।"
..." দেখা যাবে বলে-- মনীশ গেল বাথরুমে আর হাসতে হাসতে রান্না ঘরে ঢুকে গেল, অতশী।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলে কয়েকটা দিন রনিতের ছেলে র জন্মদিন এসেই গেলো।
কি উপহার দেবে দুজনে মিলে ভাবতে বসলো। অফিসে র পর কফির কাপ হাতে টিভির রিমোট টা ঘুরিয়ে যাচ্ছে মনীশ।
অতশী কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে বললো, " বলো কি দেবো...
মনীশ--"হুঁ ....রনিতের মাথা খারাপ নইলে কেউ দু'বছর এর বাচ্চা র জন্মদিন সেলিব্রেট করে।"
অতশী---" কেন কি হয়েছে ?করছে তো!! একটু বাচ্চা টার ভালো লাগবে হইহই হবে...
আর ওদের ও রিফ্রেশ লাগবে।"
মনীশ---"যত বোকা বোকা কথা। একগাদা লোকজন , ঘর ডেকরেশন করা, খাবার মেন্যু ঠিক করা এতে রিফ্রেশ লাগবে ?? যত ঝক্কি তাও মানুষ পাঁচ দশ বছরের বাচ্চা র জন্মদিন পালন করে । রনিতের যত বাড়াবাড়ি।"
অতশী ---"শোন ও এবার কিন্তু আমরাও তিতলি র বার্থ ডে টা সেলিব্রেট করবো, মেয়েটার ভালো লাগবে।"
মনীশ--"আচ্ছা ঠিক আছে সে ও ছুটিতে হোস্টেল থেকে এলে একটা প্ল্যানিং করা যাবে।
তুমি রনিতের ছেলে কে দেবার জন্য একটা খেলনা কিনে নাও ।"
অতশী---"শুধু খেলনা কেমন একটা লাগবে..."
মনীশ--"বাচ্চা ছেলে তাকে খেলনা ছাড়া আবার কি
রনিতের ছেলে বলে তুমি আবার বেশি বেশি ভাবছো!!"
অতশী বলে উঠলো,"ও আর তুমি সোহিনী র অ্যানিভার্সরির সময় .. । মনে নেই কত করে বললাম বই আর ফুলের বোকে দাও তুমি শুনে ছিলে..!! সেইতো কত অদিখ্যাতা করলে...."
মনীশ বলে উঠলো, "বই তো সোহিনী ভালোবাসে না তাই দিতে চাইনি।"
অতশী--"কিন্তু অতনু দা ও তো ভালোবাসে তাহলে না দেওয়ায় কি ছিলো। "
মনীশ--"অতনু সোহিনী র হাজব্যান্ড আর সোহিনী আমাদের বন্ধু তা ওর পছন্দের একটা গিফট দেওয়া উচিত তাই জন্য অন্য কিছু ভাবতে হলো আর এখানে একটা বাচ্চা র জন্মদিন এর সাথে তুলনা করো না তো। তাছাড়া আগের বছর তোমার কাজিনের বিয়ে তেই তো একটা দামী গিফ্ট দিলে আমি কি আপত্তি করেছি বলো !! তোমার যেমন খুশি কেনো শুধু শুধু একটা সামান্য ব্যপার নিয়ে আবার রাগারাগি করছো। তোমার যেটা দিতে ইচ্ছে কেনো।"
এভাবে পেরিয়ে গেলো সময় টা ...
দেখতে দেখতে রনিতের ছেলে র জন্মদিন এলো হৈচৈ করতে করতে পেরোলো।
পরেরদিন রবিবার লাঞ্চ টেবিল এ বসে অতসী বলে উঠলো , "বেশ এলাহি আয়োজন করেছিলো রনিতরা। আমি ভেবেছিলাম ঘরোয়া ব্যপার হবে।"
মনীশ--"হ্যাঁ খাবার মেনু টাও বেশ দামী ছিলো।"
অতশী---"হ্যাঁ তুমি তো সোহিনী র খাবার ও তুলে দিচ্ছিলে দেখলাম।"
মনীশ-- "কি বাজে অবজারভেশন, মোটেই না ওর শাড়িটা কি আটকে যাচ্ছিল তখন আমি ওর প্লেট টা ধরেছিলাম। "
অতশী---"তোমার সামনে এলেই ওগুলো হয় ওর অদ্ভুত ব্যাপার। "
মনীশ--"আর তুমি ও তো রনিতের সঙ্গে কত গুলো ছবি তুললে। আমি কিছু বলেছি। "
অতশী বলে উঠলো, "তোমার ও অবজারভেশন এমন কিছু ভালো নয়,
শুধু রনিত নয় আমাদের কলেজ বন্ধুরা অনেকেই ছিলো তুমিই তো শুধু ছিলেনা ওই সোহিনী র সঙ্গে হা.. হা.. করে গল্প করছিলে তখন, সব দেখেছি আমি।" "
মনীশ--"উহঃ তুমি না সত্যি সব সময় শুধু ঝগড়া করতে পছন্দ করো। এত ই যদি তোমার মনে হয়েছিল সোহিনী কে নিয়ে তাহলে আমি সেই যেদিন প্রোপোজ করেছিলাম তোমায় , তুমি হ্যাঁ বলেছিলে কেন??"
অতশী বলে উঠলো,
"আমার তোমাকে ভালোলাগতো তাই জন্য..."
মনীশ---"পুরো বাজে কথা। রনিতের সঙ্গে কতবার প্রথম দিকে তুমি তুলনা করেছো আমার , আমি কিন্তু কোনদিনই এরকম তুলনা তোমার সঙ্গে কাউকে নিয়ে করিনি।"
অতশী--"তাহলে তুমি আমাকে প্রোপোজ করেছিলে কেন?? এত যখন সন্দেহ..!!!'
মনীশ---"আমি সত্যি কারের ভালোবেসেছিলাম তোমাকে। তাই, !!! বুঝলে !!...তোমার মতো মনে এক মুখে আরেক নয়। "
এই ভাবে লাঞ্চ টেবিল এ কথা হতে হতে দুজনের খাওয়া শেষ হল।
গরমের দুপুরবেলা রোদটা খুব বেশি।
অতসী জানালার পাল্লাটা হালকা বন্ধ করে দিতে দিতে বলল, "এত গরম আর নেওয়া যাচ্ছে না। "
মনীশ--"সত্যি বাইরে পুরো আগুনে র হলকা
আরো তো গরম বাড়বে বলছে।"
বিছানার একপাশে পা ছাড়িয়ে বসে পিঠে বালিশ দিয়ে মনীশ।
অতসী মোবাইল টা নিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ বললো ," এই দ্যাখো রনিত ওরা ফেসবুক এ ছবি আপলোড করেছে দেখো।"
মনীশ দেখলো তারপর বললো, " তুমি বললে তোমার আমাকে ভালোলেগে ছিলো , তারমানে ভালোবাসোনি তাই তো।"
অতশী ফোন বন্ধ করে রেখে বলে উঠলো, " দুটোর মধ্যে তফাৎ টা কি?? দুটো না একি...!!!" ।
মনীশ---"আমি ভালোবাসি.. মানে একটা সত্যি সত্যিকারের ...একটা ব্যাপার...."
অতশী --"আর ভালোলাগা... মানে , হলো একটা গভীর অনুভূতি... । "
মনীশ অতশীর খুব কাছে গিয়ে বললো, "তাই!! তা.. এই গভীর অনুভূতিটা কোথায় শুনি..."
অতশী লাজুক হেসে---"পরে বলছি ....আর তোমার সত্যিকারের ব্যপারটা কোথায়... আগে বলো...।"
মনীশ অতশীর চোখ থেকে চশমাটা খুলে রেখে বলে উঠলো, "তোমার চোখে... বলেই মনীশ ভীষণ রোমান্টিক ভাবে অতশীর দিকে , অতশীর আবার লাজুক হাসি। দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত....।
জানলা র পাল্লাটা মৃদু হাওয়ার সাথে খুলে যাচ্ছে। ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু সুর...।
কয়েকটা দিন পর ....
অতশী ফেসবুকের একটা ছবি নিয়ে মনীশ কে দেখালো, এটা কি ..!
সোহিনী কে নিয়ে তুমি তুলেছো ফোটো টা।"
মনীশ---"আমি কোথায় তুলেছি ওই তো তুললো।"
অতশী--"তুমি না ও করোনি। "
মনীশ---"তোমাকে বললে তুমি কি করতে..."
অতশী--" রাজি হতাম না..!!"
মনীশ--" হ্যাঁ তাই তো, রনিতের সাথে কত কত ফোটো আমিও তোমার ফেসবুক এ রোজ দেখছি। কিছু বলেছি তোমায়। তুমি না একি ব্যপার নিয়ে পড়ে থাকো ।কেমন একটা খিটখিটে বাতিক টাইপস হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।
অতশী-- "কি বলতে চাইছো আমি বাতিকগ্রস্ত আর তুমি কি...।"
মনীশ--" এসব বাদ দাও না অতশী, ওদের কথা রাখো তো। মন দিয়ে আমার কথা শোনো আমি তোমার জন্য কাল একটা জিনিশ এনেছিলাম ।
কথাটা বলে দুটো আম নিয়ে টেবিল এ রাখলো মনীশ।
অতশী বলে উঠলো, "এটা তো আম .."
মনীশ---"হ্যাঁ কিন্তু তোমার ফেভারিট কাঁচা মিঠে আম।"
অতশী একটু অবাক হয়ে , -----"তুমি কি করে জানলে? আমার এই পছন্দ টা কই কখনোও তো বলিনি। "
মনীশ----"তবু ও দ্যাখো আমি কিন্তু তোমার পছন্দ টা জানি। "
অতশী কিছু বলার আগেই আম টা কেটে ছাড়িয়ে প্লেটে অতশীর সামনে নিয়ে এসে নাও খেয়ে বলো কেমন লাগছে।
অতশী ---"তুমি কি এটা কলেজে, না আমি তো সোহিনী, রনিত, শেখর কাউকে ... বলেছি বলে মনে পড়ছে না। দিদি বা মাকে কখনো... কি জানি এটা কখনো এদের কে বলেছিলাম কিনা। রিসেন্ট কেউ বলেছে তোমায় তাই না!!"
অতশী আমটা খাচ্ছে আর চিন্তা করছে।
মনীশ ---" সত্যি কারের ভালোবেসেছি বলেই তোমার মনের মধ্যে ঢুকতে পারি।"
অতশী-- "সেই তো কি জানি কোথায় থেকে জেনেছো তুমি। এখন বলছো না।"
মনীশ-- "জানতো তোমার আমার এই সম্পর্ক টা না পুরো কাঁচা মিঠে আমের মতো তুমি যতই ঝগড়া করো রাগ করো আমার উপর, আমি ঠিক মিষ্টি করে তোমার সাথে কথা বলবো।"
অতশী-- "কি !!তারমানে আমের এই টক দিকটা আমি আর তুমি মিষ্টি, বাহ্ বাহ্ নিজেকে খালি ভালো ভালো প্রমানের চেষ্টা।""
মনীশ-- "দ্যাখো এত ভালো, এই গরমে তোমার পছন্দ এর একটা উপহার দিলাম তুমি সেই দ্যাখো তাহলে টকটা কে... বলো?"
মনীশ বলতে বলতে অতশীর দিকে তাকালো
অতশী ও হাসতে হাসতে বলে উঠলো, "ঠিক আছে থ্যাঙ্ক ইউ।"
মনীশ অতশীর হাতে হাত রাখলো, অতশীর লাজুক হাসি।

