রুমমেট
রুমমেট
বর্তমানে বিশ্বায়নের ফলে সারা পৃথিবীটাই এখন হয়ে গেছে একটি দেশ। এখনকার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের কাছে একটা বৃহৎ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে আমাদের মত উন্নতিশীল দেশের কাছে। এখন আর আগের মত বিদেশ যাত্রা একটা বিশাল বড় ব্যাপার নয়। একটু স্বচ্ছল পরিবারের পক্ষে এটা আর কোন বড় কাজ নয়। আশে পাশে খোঁজা নিলে দেখা যায় এখন বহু ছেলে মেয়েই বিদেশে পড়াশোনা করছে।
আমাদের পাড়ার ছেলে সরল । ছেলেটি তার নামের সাথে সংগতি রাখা স্বভাবের। খুবই সোজা সিধা সাদামাটা একটি ছেলে - যতদূর আমি দেখেছি। এমনি আজকালকার সমাজের ছেলে মেয়েদের মত অত চালাক চতুর নয়। ও নিজের লেখা পড়ার মধ্যেই থাকে - ফলে পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করে আমাদের অঞ্চলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আর ওর উন্নত মেধার জন্য আমেরিকার এক ইউনিভার্সিটিতে সে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তবুও আমেরিকার লেখাপড়ার খরচ অনেক হলেও মেধাবী ছাত্ররা বৃত্তি পায় বলে অসুবিধা হয় না।
সে এবার পড়াশোনার জন্য আমেরিকা যাচ্ছে। সে আমেরিকা তো গেল, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল, থাকার জায়গা। কারণ হোস্টেলে বোর্ডার সংখ্যা খুব সীমিত। তাই বহু ছাত্র ছাত্রীকে সেখানে থাকতে হয় ঘর ভাড়া করে । ঘর ভাড়া সেখানে প্রচণ্ড বেশি। তবে শেয়ার করে ভাড়া নিলে অনেকটাই সস্তা পড়ে।তাই খোঁজা করতে করতে ভাগ্যক্রমে সে একজন রুমমেট পেয়ে গেল। এত দূর পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু যখনই সরলের মা শুনল, যে রুমমেটটি একজন মেয়ে, তখনই তার মনে খটকা লাগতে শুরু করল। তিনি ঠিক করলেন, আমেরিকা গিয়ে সে ছেলের ভাড়া নেওয়া ঘরটি একবার দেখে আসবেন।
উনি আমেরিকা গেলেন , সারাদিন বেশ ভালোভাবেই কাটল। সরলের মা দেখলেন , যে মেয়েটা বেশ ভালো আচরণই করছে। উনি দেখলেন মেয়েটা বেশ সুন্দর, এমন একটা মেয়ের সাথে রুমমেট হিসেবে থাকে , তার ছেলের প্রতি তার সন্দেহ হল। মা যে কয়েকদিন সেখানে ছিল, প্রতিক্ষণ সে সেই মেয়েটার প্রতি নজর রাখত যে মেয়েটা তার ছেলের প্রতি কেমন আচরণ করছে, তার ছেলেই বা মেয়েটার প্রতি কেমন আচরণ করছে।
একদিন মা সরলকে ডেকে বলল- “হ্যাঁরে, এটা তোর রুমমেটই তো, তার বাইরে অন্য কিছু নয় তো? দেখ বাবা পড়াশোনা করতে এসেছিস পড়াশোনা করবি, এমন সুন্দরী মেয়ের পাল্লায় পড়ে, অন্য কিছু করিস না কিন্তু। তোরা আবার একই বিছানায় ঘুমাস না তো?“
সরল মায়ের মুখে এমন কথা শুনে বলল- “মা তুমি বেকার বেকার এত চিন্তা করছ, আমরা দুইজন রুমমেট, মেয়েটা আমার ক্লাসেই আমারই কলেজেই পড়ে, তাই আমরা একসাথেই পড়ি, আই মিন বই পড়ি, আর খাওয়া-দাওয়া করি, তার বাইরে অন্য কিচ্ছু করি না। ও ঘুমোয় ওর রুমে, আর আমি ঘুমোই আমার রুমে।“
“হুম, বুঝলাম”।
এরপর তার মা আমেরিকা থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। একদিন সরল আর তার রুমমেট, এক জায়গায় ঘুরতে যাবে, কিন্তু তার রুমমেট মেয়েটি জানায়, সে নাকি তার ডায়মন্ড প্লেটেড নাকছাবিটা খুঁজে পাচ্ছে না। সে নাকি সেটি টেবিলের উপর রেখেছিল, কিন্তু যেদিন থেকে সরলের মা এল, সেদিন থেকে আর সেটিকে সেখানে দেখছে না, অত দিন খেয়াল না করলেও, আজ সে এটি খেয়াল করছে।
সরল মাকে WhatsApp –এ মেসেজ করল -
“মা যেদিন থেকে তুমি গেছ, সেদিন থেকে আমার রুমমেটের ডায়মন্ড প্লেটেড নাকছাবি টা সে খুঁজে পাচ্ছে না। আমি এটা বলছি না যে, তুমি এটা নিয়ে গেছ, বা আমি বোঝাতে চাইছি না যে, তোমার কাছেই এটি আছে। আমি শুধু তোমাকে বলতে চাইছি যে, নাকছাবিটাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।“
কিন্তু তার মা মেসেজ দেখলেও কোনো রিপ্লাই করে নি, তাই সরল ভাবল তার মা- ই হয়ত নাকছাবিটা নিয়ে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে সরলের কাছে তার মায়ের মেসেজ আসে। আর সেখানে লেখা আছে-
“আমার প্রিয় সরল -
আমি এটা বলছি না যে, তুই আর সেই মেয়েটা একই বিছানায় ঘুমাস, বা আমি বোঝাতে চাইছি না যে, তোরা একই সঙ্গে কিছু করিস। আমি শুধু তোকে বলতে চাইছি যে, তোরা যদি একই বিছানায় না ঘুমাস, তাহলে মেয়েটা নাকছাবিটা পেল না কেন, যা গিয়ে দেখ, মেয়েটার বিছানার বালিশের নিচেই তার নাকছাবি আছে। আর তুই আমাকে বলছিস, তোরা এক সাথে পড়াশোনা, আর খাওয়া ছাড়া অন্য কিছুই করিস না, দাঁড়া, আমি কাল আবার যাচ্ছি আমেরিকা।“
মায়ের মেসেজ পড়ার পর সরলের ক্যাবলার মত মুখ, টিভির কেবল লাইনে দেখানো কার্টুনের সঙ্গে মিলে গেছে।