আগমনী
আগমনী
দৃশ্য ১
সকালবেলা একটা আবাদন প্রকল্পের মধ্যে শুধুই লেখক
লেখক।। একটা আবাসন প্রকল্প মানে এখানে ফ্ল্যাটের বদলে আছে একতলা কিংবা দোতালা বাংলো, পুকুর, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, কমিউনিটি হল ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানেই একটা বাংলোতে থাকে পেশাতে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার নন্দন… হ্যাঁ একাই থাকে… অকারণ ভুরু কুঁচকে কি লাভ বলুন… বাদ দিন ফালতু কথা… আজ শুক্রবার হলেও ছুটি, কারণ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন, কাল শনিবার আর পরশু মানে রবিবার মহালয়া… অনেক সরকারী কর্মচারি রেগে আছে কারণ একটা ছুটি মারা গেল ইত্যাদি ইত্যাদি… এখন আপনারা মাথা চুলকাচ্ছেন এই ভেবে, যে একটা ওয়েব সিরিজের গল্পের শুরুতেই এই বিশ্রি দেখতে পাবলিক কে? শুনুন না এখন সকাল ৭টা, আবাসনের ইয়াং জেনারেশান জগিং আর ওল্ড ইস গোল্ড মানুষেরা একটু হাঁটাচলা, পেনশানের হিসেব করছে আবার অন্যদিকে জাতীয় সঙ্গীত… আপাতত কিছুটা সময় দিন না দেশের জন্য…
জাতীয় সঙ্গীতের শেষ
লেখক।। হ্যাঁ, গল্পটা এই আপাত শান্ত আবাসনের বাসিন্দাদের। এটা তাদের ভালোথাকা-খারাপলাগার গল্প... আসলে এখানে সব ধরণের মানুষ আছেন... মানে স্বামী-স্ত্রী যেমন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার মৃণ্ময় এবং তার স্ত্রী কথাকলি, আছেন চক্রবর্তী দপ্ততি, কাকু অবসর নেওয়া আর্মি ডাক্তার এবং কাকিমা অধ্যাপিকা... আবার এখানেই আছে এই নন্দন... এখানেই সাজানো গোছানো সংসার সঞ্জীব এবং মানবের, একজন ইঞ্জিনিয়ার আর একজনের ফ্যাশান ডিজাইনের কোম্পানি আছে... গুড মর্নিং নন্দন, কেমন আছো?’
নন্দন।। হাই হ্যান্ডু (বলে চোখ টেপে)। আমি আমার মতন আছি, আপনি?
লেখক।। সকাল সকালে ছোট্ট করে দিলে তো... আজ কি ছুটি?
নন্দন।। ইয়েস, সেটাই পরপর ৩ দিন... এনজয়, শপিং ইত্যাদি ইত্যাদি...
লেখক।। আগাম শুভকামনা...
নন্দন হাত নেড়ে চলে যায়, লেখক ঘুরতেই সামনাসামনি হয় একজন চিন্তিত ছেলের সাথে...
লেখক।। আরে সকাল সকাল মুঠোফোন নিয়ে চিন্তিত কেন পরিচালক?
আকাশ।। জীবনে সব করুন কিন্তু লাড্ডুর দিকে নজর দেবে না...
লেখক।। হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছো?
আকাশ।। সুদে-আসলে... কেউ চায়না সে বাদ দিয়ে বাকি অন্য কেউ ভালো থাকুক...
আকাশ বিরক্ত হয়ে হাঁটা দেয়...
লেখক।। আসুন, এনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই, ইনি একজন শর্ট ফিল্ম পরিচালক, একটু নামডাক আছে... আপাতত ইনিও এক অজানা যাঁতাকলে পিষ্ট...
“প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও
ভুলিব ভাবনা
পিছনে চাব না
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও”
(গানের সাথে কথাকলি ও মৃন্ময়)
লেখক।। আমি আসলে এই গল্পের কাহিনীকার কিংবা বিবেক... না মানে যাত্রার বিবেক নয়, হয়তবা মানুষের কিংবা সমাজের বিবেকও না কিন্তু অবশ্যই মানবতার বিবেক... আসলে একটা গল্প শুরু হবে এবং আপনারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একটা হ্যাপি গল্প মানে শুধুই নায়ক-নায়িকার প্রেমের গল্প এবং সেখানে ভিলেন মানেই ভুরু কুঁচকে যাবে... আসলে কি বলুন তো রাজার গল্প মানেই হবুচন্দ্র রাজা এবং গবুচন্দ্র মন্ত্রী... একই থোর বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর... কি হলো এখনও সঞ্জীব আর মানবের সংসার নিয়ে ভেবে চলেছেন? আরে দাদারা, ৩৭৭ সংবিধান স্বীকৃত।
মৃণ্ময়।। হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি... ড্রাইভার ফোন তুলছে না...
ডাঃ মৃণ্ময় উত্তেজিত হয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছেন
লেখক।। কি ব্যাপার ডাক্তারবাবু? সকাল সকাল এতো উত্তেজিত কেন?
মৃণ্ময়।। আরে ধ্যুর একটু বেরোনোর আছে, গাড়ি বুক করলাম...
লেখক।। এখনও ড্রাইভারের দেখা নেই... কলকাতার রাস্তাঘাট দেখুন... তা চললেন কোথায়?
মৃণ্ময়।। কাজে...
লেখক ঘুরতেই বাজারের ব্যাগ হাতে আসতে দেখা যায় সঞ্জীবকে...
লেখক।। কি ব্যাপার কম্পিউটার সাহেব? সকাল সকাল ধনেপাতার দরদস্তুর?
সঞ্জীব।। আর বলবেন না দাদা, ছুটির আমেজ মানেই রাজ্যের বাজার... উফফফ
লেখক।। সংসারের মায়া...
সঞ্জীব।। আচ্ছা চলি দাদা...
লেখক।। আজ ছুটি তো?
সঞ্জীব।। না না ওয়ার্ক ফ্রম হোম
সঞ্জীব চলে যায়...
লেখক।। এই হলো একটা নতুন ট্রেন্ড, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এখন তো আবার ওয়ার্ক ফ্রম এনিওয়ার... হ্যাঁ, তা এইসব নানান ধরণের মানুষদের নিয়ে এই আবাসন আর এটা তাদের জীবনের গল্প...
“প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল
হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল,
প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল
হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল,
পাগল হে নাবিক,
ভুলাও দিগবিদিক,
পাগল হে নাবিক,
ভুলাও দিগবিদিক,
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও
ভুলিব ভাবনা
পিছনে চাব না
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও”
(গানের সাথে টাইটেল কার্ড শেষ)
লেখক।। অনেক খেজুরে গল্প হলো এবার আসুন বরং পপকর্ন খেতে খেতে সিনেমা মানে ওয়েব সিরিজ দেখি... ভালো-মন্দ শেষে বিচার করব... হ্যাপি নাকি স্যাড সেটা এখনই বলব না... হতেও পারে বাঁধা ছকের বাইরের কিছু...
কাট
আগমনী
রাজা অঙ্কুর
দৃশ্য ২
দিনের বেলাতে রাস্তায় গাড়ির মধ্যে ডাঃ মৃণ্ময় আপনমনে কিছু ভাবতে ভাবতে যাচ্ছে...
মৃণ্ময়।। আবহমান কাল ধরে সবাই জানি বিয়ে মানে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক, একটা বন্ধন... এখানে কোন লুকোচুরি নেই কিন্তু আছে পরস্পরকে খুঁজে বেড়ানোর তাগিদ... কথা তোমার মনে পড়ে বিয়ে পড়ে এই ‘আগমনী’ আবাসনে এসে কি বলেছিলে।।
কাট টু
ফ্ল্যাশব্যাক
মৃণ্ময় ও কথাকলির ফ্ল্যাটের মধ্যে দিনের কোন একটা সময়ে
কথাকলি। জানো মৃণ্ময়, ভালোবেসে বিয়ে করতে নেই
মৃণ্ময়।। আচমকা এই প্রসঙ্গ?
কথাকলি।। ভালবাসলে কোথাও আমদের চেতনা-ভাবনার সাথে মিশতে চায় বলেই ভাঙা কঠিন কিন্তু সেই মানুষটাকে বিয়ে করলে আসে সম্পর্কের সাথে নানান চাহিদা, ইচ্ছে আর সেই কারণে বিভেদ হলে মেটানো দুষ্কর।
মৃণ্ময়।। কথা, আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, সেটা হলো আমাদের দুই থেকে তিন বছরের সম্পর্ক আর সেখানে আমার ক্ষমতা, আমার পরিবার ইত্যাদি সব তোমার জানা ছিলো তাহলে বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যে এইসব কেন?
কথাকলি।। হয়ত আমার ভুল...
মৃণ্ময়।। কি বলছো কি তুমি?
কাট টু
গাড়িতে যেতে যেতে আপনমনে বলে মৃণ্ময়
মৃন্ময়।। (আপনমনে হাসে) অথচ আমি জানতাম, যে বিবাহবন্ধন কোন খাঁচা বা আগল নয় বরং একটা উন্মুক্ত খোলা আকাশ আর সীমাহীন স্বাধীনতা... মিষ্টতা এক মুহুর্তের নয় বরং আজীবনের... আবার কেউ কেউ বলে প্রেম করে বিয়ে করলে বিয়ের পরে প্রেমের স্বাদ তেতো হয়ে যায়... আমি বুঝতে পারিনি যে ভালোবাসা শব্দের মানে তোমার-আমার কাছে আলাদা...
মৃন্ময়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোন একদিনের ঘটনা সে হেসে ওঠে
কথাকলি।। আমি এটা মানতে পারছি না, যে ভালবাসলে প্রত্যাশা থাকবে না...
মৃন্ময়।। হ্যাঁ কারণ ভালোবাসা মানে কাউকে জেতা না বরং নিজে হেরে যাওয়া...
কথাকলি।। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মিষ্টি হেসে পাগল করে আমাকে নিয়ে হারিয়ে যাবে আকাশের নীলে... আচ্ছা মৃন্ময় আমাকে তোমার সারাদিনে কতবার মনে পড়ে?
মৃন্ময়।। সারাদিনে আমার চোখের পাতা যতবার পড়ে...
কথাকলি।। আমাকে তুমি কতোটা ভালোবাসো?
মৃন্ময়।। কলি চাইলেও তুমি আকাশের তারার সংখ্যা গুনতে পারবে না...
কথাকলি।। চলো সুখের কথা বলি আর দুঃখগুলো লকারে থাক আজ
মৃন্ময়।। আজকে তাহলে অন্যদিকে হাঁটি সেখানে তুমি রাণী আর আমি মহারাজ
কথাকলি।। না চাইলেও আনন্দ আর সুখের সামনে এসে দাঁড়ায় দুঃখ
মৃন্ময়।। ভালোবাসোতে না চাইলেও কেমন করে জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়
দৃশ্যের শেষে লেখক ঢোকে...
লেখক।। অর্থাৎ বিষয়টা একটু জটিল... কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার মৃণ্ময়বাবুর সাথে কথাকলির বিয়ের বছর ২-৩ পেড়িয়ে এখন একটা নতুন বাঁকের সামনে, একটা টানাপড়েন, একটা বিভেদ মানে ঘেঁটে ঘ আর কি... যাক কোথাও একটা যাচ্ছেন ডাক্তারবাবু... আমরা আবাসনে ফেরত যাই কারণ সুখী দম্পতির সংসার মানে সঞ্জীব আর মানবীর সংসার কেমন চলছে... এই সাইলেন্স... এখানে শট চলছে আর গজল্লা... চল অন্য লোকেশান...
কাট
আগমনী
রাজা অঙ্কুর
দৃশ্য ৩
সঞ্জীব ও মানবের ফ্ল্যাটে সেইদিন সকালবেলা
সঞ্জীব।। বকছো কেন?
মানব।। ধুপধুনা দিয়ে পুজো করব তোমাকে? একটা সবজী ঠিক আনো নি...
সঞ্জীব।। সব লিস্ট মিলিয়ে এনেছি আমি
মানব।। হ্যাঁ এই পোকাধরা বেগুন, বুড়ো লাউ আর এটা কি অপুষ্টিতে আক্রান্ত পটল আর ঝিঙে... চিকেন সেটাও বাসি
সঞ্জীব।। চিচিঙে একদম ফ্রেশ আর দর করেই এনেছি
মানব।। আমি ধন্য...
সঞ্জীব।। তাহলে...
মানব।। আমি এইসব পচা বাজার রান্না করব না... লাঞ্চ আর ডিনার সুইগি বা জ্যোমাট
সঞ্জীব।। অগত্য...
দুইজনের কথার মাঝে লেখকের প্রবেশ
লেখক।। গুড মর্নিং চার্মিং লেডি... এই না মানে মানব বাবু (চোখ টেপে)
মানবী।। আরে এসো না ভেতরে... গ্রিন টি খেয়ে যাও...
লেখক।। রক্ষে করো রঘুপির... এইসব রঙবেরঙের চা আমার রোচে না... পুজোর সার্কুলার রেখে গেলাম, চোখ বুলিয়ে নিও... পরেরবার ইউ টিউব দেখে বাজার করো সঞ্জীব সান্যাল...
লেখক রাগী চোখে তাকানো সঞ্জীবের দিকে টাটা ছুঁড়ে বেড়িয়ে যায়...
লেখক।। একদম হ্যাপি সমকামী পরিবার... দুইজনের ওয়ার্কিং, পরিশ্রমী, শৌখিন, বাড়িতে সপ্তাহান্তে পার্টি ইত্যাদি ইত্যাদি আর সবের মাঝে কোথাও লুকিয়ে আছে এই রোজকার করচা মানে মাছের পিসের সাইজ কিংবা বাসী সবজির কলরকলর... এরা আবার এদের বাংলোর নাম দিয়েছে ‘কলকাকলি’... এই সুযোগে বলে দিই এখানে সবাই নিজের সুখী গৃহকোণের নাকরন করেছেন আর ডাক্তারবাবুর বাংলোর নাম ‘নীপবীথি’... আসুন আসুন আমার সাথে ছুটির দিনে নন্দন কি করছে... ঘাবড়াবেন না, কারণ রক্তকরবীর শুধুই তাদের বাংলোর নাম...
কাট
দৃশ্য ৪
একইদিনের একই সময়ে
নন্দিনীর বাড়ির ভেতর
নন্দন।। এই নাও আকাশ কফি
আকাশ।। থ্যাঙ্ক ইউ
নন্দন।। দেখো আকাশ প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনে সুখ-দুঃখ। কষ্ট-খুশী সবাইকে ভাড়া দেয়
আকাশ।। সেটাই... কিন্তু অনেক সময়ে অনেক আচরণ মানা যায় না নন্দিনী
নন্দন।। কারণ আমরা সবাই এই দুনিয়াতে কোথাও না কোথাও একা...
আকাশ।। খুবই কঠিন বাস্তব
নন্দন।। আজকে আসবে?
আকাশ।। নাহ কালকে সকালে হয়ত
নন্দন।। মাথা ঠাণ্ডা রেখো আকাশ
আকাশ।। একদম... আবার থ্যাঙ্কস ফর ডাঃ কফি...
নন্দন।। এনি টাইম ডিয়ার...
আকাশ বেড়িয়ে লেখকের মুখোমুখি হয়
আকাশ।। আরে আপনি এইদিকে...
লেখক।। নন্দিনীকে পুজোর সার্কুলার দিতে, তা মাঝেমাঝেই কফি উইথ চলছে...(চোখ তেপে)ন
আকাশ।। আরে ধ্যুর আপনার আর কোন টপিক নেই নাকি!!!
লেখক।। দেখো বাছাধন গসিপ মানে কেচ্ছা, পরনিন্দা-পরচর্চা বাঙালির কপিরাইট নেওয়া... তাছাড়া কমিউনিটির হলে তো সোনায় সোহাগা
আকাশ।। ফালতু সময়ে কাটানো
আকাশ চলে যায় আর লেখক বাড়িতে ঢোকে...
লেখক।। ম্যাডাম, পুজোর সার্কুলার রইল... একটু কৃপা করবেন
নন্দিনী।। গান, কবিতা ইত্যাদি ইত্যাদিতে আমি বরাবরের মতন আছি... আসলে কি বলো তো দাদা, ওই কয়েকটা দিন সব ভুলে মেতে ওঠা..কিন্তু এই বুড়ো ভাম আমাকে রোজ ম্যাডাম কেন বলো বলো তো?
লেখক।। ক্রমশ প্রকাশ্য... চলো ছুটি এনজয় করো আমি যাই...
লেখক বেড়িয়ে আসে...
লেখক।। কি হলো কি ওরকম মুখ হাঁ করে কি দেখছেন? কমিউনিটি সংক্রান্ত অন্য প্রেমের রসালো গন্ধেগন্ধে হাজির হয়েছেন না? শুনুন এইসব পেঁয়াজি ছাড়ুন কারণ কি হবে এখনই বলতে পারছি না... আসুন আমার সাথে এককাপ চা খাই আর সাথে খেজুরে আলাপ... আরে আপনারা জান আর দেখুন ওইদিকে গল্প কতদূর এগোল... আরে বাবা ডাক্তারবাবুর ব্যাপারটা
কাট
দৃশ্য ৫
রাস্তাতে মৃণ্ময় কোথাও একটা হাঁটছে আর ব্যাগ্রাউন্ডে তার গলা... আপনমনে কোন একদিনের ঘটনা মনে পড়ে
মৃন্ময়।। “তবু পৃথিবীতে রাত নামে নিবিড়
তুষারের মতো,
তুমি শুধু উড়ে চলো ক্লান্তিহীন,
তন্দ্রাহীন
অন্ত এক সকালের দিকে...”
কাট টু
ফ্ল্যাশব্যাক
দৃশ্য (১)
বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান থেকে ফিরে পোশাক বদলাচ্ছে মৃণ্ময় আর কথাকলি, সময় রাত
কথাকলি।। ইশ একটা পাতি গিফট... লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো...
মৃণ্ময়।। ,অ্যামাজন থেকে তুমি নিজেই পছন্দ করেছিলে কলি।
কথাকলি।। তুমি দেখোনি সবাই নেড়েছেরে দেখছিলো... ইশ...
মৃণ্ময়।। হ্যাঁ সেটাই... টাকার হিসেবে আজকাল উপহারের মূল্যায়ন হয় আর তাই কেউ সাহিত্যের ভালো বই কিংবা দারুণ কোন আঁকা দেয় না...
কথাকলি।। বাজে কথা বলো না... বাগচিদের গিফট দেখেছিলে?
মৃণ্ময়।। আমার প্রিয় মানুষ ভালোবেসে যাই উপহার দিক না কেন সেটার কোন তুলনা হয় না
কথাকলি।। অসহ্য, বস্তাপচা মধ্যবিত্ত মেন্টালিটি...
মৃণ্ময়।। কলি তোমার বাবা একজন সৎ শিক্ষক ছিলেন...
কথাকলি।। বিয়ের আগে ভুগেছি আর এখন বিয়ের পড়ে... এতো নার্সিংহোম আছে, কতো কতো রোজগার আর তুমি...
মৃণ্ময়।। ,কলি মানুষের সেবা করাটাই ডাক্তারদের একমাত্র কাজ, প্যসা রোজগার নয়... এটা চিরাচরিত সত্য...
কাট
দৃশ্য ৬
আবাসনের সামনের চায়ের দোকানে লেখক
লেখক।। কি বলতে চাইছিস তুই রক্তিম?
রক্তিম।। সহজ কথা আর সেটা হলো পাবলিক কিছুই বুঝতে পারছে না...
লেখক।। তারমানে দশটা-পাঁচটার হিসেবের মতন লিখতে হবে নাকি? সমস্যা কোথায়?
রক্তিম।। মৃন্ময়বাবুর ব্যাপারটা প্রথমেই ঘেঁটে দিলে অন্যদিকে নন্দন কোথাও একাকীত্বে ভুগছে আর আকাশ উদভ্রান্তের মতন কিছু একটা কিংবা কাউকে খুঁজছে...
লেখক।। মানে বুঝেছিস? তাহলে ভ্যানতারা কেন ভাই? ওইদিকে দেখ, আকাশবাবু বলতে বলতে হাজির, তুই মৃন্ময়বাবুকে সামলা আমি দেখি কি কিনলেন দোকান থেকে...
রক্তিম বিরক্ত হয়ে চলে যায় আর লেখক আকাশকে ডাকে...
আকাশ।। হ্যাঁ বলুন...
লেখক।। সকালে ফোন কিছু একটা, তারপরে কফি ব্রেকের শেষে এখন সকাল সকাল সোমরসের স্বাদ...
আকাশ।। এই এই কিসব ভুলভাল কথা বলছেন বলুন তো...
লেখক।। বাদাম সাথে কাজুর প্যাকেট, এইদিকে সোডা, চিপস মানে গুছিয়ে গুবরে পোকা...
আকাশ।। দুই-এক পাত্তর গলায় ঢালতে চাইলে আসুন আমার সাথে...
লেখক।। আপত্তি নেই কারণ শুরুতেই বলে দেওয়া হয়েছে ধূমপান এবং মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক...
লেখক আকাশের সাথে চলে যায়... আর নন্দনকে দেখা যায় বারান্দাতে কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে...
কাট টু
দৃশ্য ৬(১)
দিনের বেলাতে নন্দিনীর বারান্দা
নন্দন।। কিরে মিটিং শুরু হয়নি...
সোম (ফোনের অন্য প্রান্তে)।। আরে হ্যাঁ, ওইদিকে বস তোর সাথে একবার ফাইনাল আলোচনা করতে বললো...
নন্দন।। প্রজেক্ট জমা পড়ে গিয়েছে, সবকিছু পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশানে আছে...
সোম (ফোনের অন্য প্রান্তে)।। জানি জানি, তা আজ কি ছুটি উপভোগ?
নন্দন।। হ্যাঁ...
সোম (ফোনের অন্য প্রান্তে)।। চল সব শেষ হলে তোকে ফোন করব... বিকেলে আবার রিটার্ন ফ্লাইট...
নন্দন।। বেস্ট অফ লাক
কাট
দৃশ্য ৭
আকাশের বাড়িতে দিনের বেলা
আকাশ।। (মদ খেতে খেতে আপনমনে বলে)
জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত খুব ইচ্ছে করে
পাগল হবো।
তোমাকে নিয়ে উত্তর কলকাতার কানাগলিতে,
পথ হারাব।
কিংবা
বেহালার হাঁটু জলে
কাগজের নৌকা ভাসাব।
অনেকদিন হয়নি
আজ নিয়ম ভাঙার দিন।
মদ না খেয়ে মাতাল হবো
সারারাত ছাদের আলসে ধরে হাঁটব
আর
চিৎকার করব।
আকাশের চোখের সামনে আবার গানের ছবি ভেসে আসে এবং সেই সময়ে মোবাইলের রিং টোনে ঘোর কাটে... আকাশ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আর মনে মনে হাসে... চোখের সামনে ভেসে ওঠে একদিনের ঘটনা...
কাট টু
ফ্ল্যাশব্যাক
দৃশ্য ৭(১)
আকাশের বাড়িতে আকাশ আর নীল
আকাশ।। তারমানে আমাদের মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ...
নীল।। আমার এই শরীর নাকি তোমার আর পছন্দ হচ্ছে না.... তুমিই বলেছিলে আকাশ?
আকাশ।। নীল সেটা একদিন রাগের মাথায় বলেছিলাম আর সেটাকে তুমি...
নীল।। তাহলে তুমি এই সম্পর্ক রাখতে চাও? আমাকে সারাজীবন সহ্য করবে?
আকাশ।। এখন আর আমার চাওয়াপাওয়াতে কি কিছুই বদলাবে নীলা?
নীল।। সামাজিকতা, পরিবার মাই ফুট...
আকাশ।। আজকের এই নীলের কাছে আমাদের সম্পর্ক বাদে সবটা বাস্তব...
নীল।। আমাকে তুমি ভুল ভাবছো আকাশ...
আকাশ।। এই ধারনাটা আসা স্বাভাবিক নয় কি নীল?
নীল।। আমাদের চারপাশ খুব নির্মম তাই... তারপরে সমকামী সম্পর্ক...
আকাশ।। সেটা কি বাহানা?
নীল।। তুমি কি চাও আকাশ?
আকাশ।। তিন বছরের মাথায় এসে তুমি এটাও জানো না আমার চাহিদা ঠিক কি?
নীল।। খোলসা করে বলো আকাশ...
আকাশ।। বাদ দাও, ভালো থেকো...
কাট টু
আকাশ বসে মদ খাচ্ছে আর চোখ কচলাচ্ছে কিছু ঘটনা মনে করে...
দৃশ্য১ দুইজনে ঘরে গল্প করছে
দৃশ্য২ দুইজনে রাস্তায় হাঁটছে
দৃশ্য৩ দুইজনে কিছু কিনছে ইত্যাদি
লেখক।। এই কাট কাট কাট...
রক্তিম।। আবার কি হলো?
লেখক।। বাকিটা পরের এপিসোডে...
এপিসোড ১ সমাপ্ত