সমরেশ বেঁচে আছেন
সমরেশ বেঁচে আছেন
"সাতকাহন" করে বলার দরকার নেই, শোকসংবাদটা পেয়ে কাল সত্যিই মনে হয়েছিল যে "দিনদুপুরেই রাতদুপুর" হলো বোধহয়। বন্ধুবান্ধব, "আত্মীয়স্বজন" সবার স্ট্যাটাস দেওয়া দেখে আর কোনো সন্দেহই রইলো না যে আমাদের "জনযাজক" আজ "কালাপাহাড়" পেরিয়ে, "বরফে পায়ের ছাপ" রেখে চিরতরে চলে গেছেন। মেনে নিতে কষ্ট হয় খুব, বুকে "কাঠকয়লার আগুন" জ্বলতে থাকে অবিরত - "দাউ দাউ আগুন"। তারপর যথারীতি "দিন যায়, রাত যায়"। আবার সকাল হয়। তখন প্রিয় লেখকের জন্য "শ্রদ্ধাঞ্জলি" লিখতে বসেই বুঝতে পারি, না - কাল "হিসেবে ভুল ছিল"...
এই তো দু'দিন আগেই "অনিমেষ" এসেছিল হঠাৎ। "দেড় দিন" নাকি ঘুমায়নি, কোথায় "খুনখারাপি" করে এসেছে এবং তার জন্য সে কুন্ঠিতও নয়। আমি বসতে বললাম তাকে। অনিমেষ বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়েই বললো, "বড়ো পাপ হে", বড়ো পাপ। তারপর জানালো যে দেদার "টাকাপয়সার" বিনিময়ে শিক্ষকদের চাকরি বিক্রি হচ্ছে দেখে "মুশকিল আসান" করে এসেছে সে। শুনে চমকে উঠলাম আমি। স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার "জুতোয় রক্তের দাগ"। কিন্তু তবুও একটা "কষ্ট-কষ্ট সুখ" যেন অনুভব করলাম মনে মনে। যাক, কেউ তো পেরেছে "হারামির হাতবাক্স" ভাঙ্গতে।
আরও অদ্ভুত, মাঝে মাঝেই বেসিনে মুখ ধুতে গিয়ে আয়নায় "আনন্দকে" দেখতে পাই, আমার দিকেই তাকিয়ে আছে "বুনো হাঁস" এর মতো। বাসের জানলায় কখনো হয়তো এক ঝলক চোখে পড়ে কোনো এক "জয়ীর" মুখ, লাস্ট ট্রেন "ইস্টিশন" ছেড়ে যাবার পর কোনো এক "মাধবীলতার" আবছা অবয়ব। "কেউ বোঝে না" কেন এমন হয়। অথবা এই যে ধরুন আজও আমাদের "বুকের ভেতর বাংলাদেশ", এই "উত্তরাধিকার" আমরা তাঁর কাছ থেকেই তো পেয়েছি। সেই "কালপুরুষ" আমাদের ছেড়ে "ফেরারী" হতেই পারেন না। "অর্জুন" এর মতোই সর্বদা আমাদের সঙ্গে আছেন তিনি। লেখকের মৃত্যু নেই। জীবনে যখনই কিছু "উনিশ-বিশ" ঘটে, যখন "কালবেলা" নেমে আসে, মন "উজানগঙ্গা" বেয়ে তাঁর কাছেই "শরণাগত" হয়। তখনই "অনুপ্রবেশ" ঘটে সমরেশ মজুমদারের। জানি, "ফুলে বিষের গন্ধ" পেলে তিনিই এনে দেবেন "বিশল্যকরণী"।
তাই সমরেশ মুজমদার বেঁচে আছেন। একটা গোটা প্রজন্মের যিনি "গর্ভধারিনী", যিনি মুক্তি দিয়েছেন আমাদের "বন্দীনিবাস" থেকে, যাঁর হাত ধরেই জীবনের প্রথম "দৌড়", তাঁকে এইভাবে আমরা "জয়ন্তীর জঙ্গলে" হারিয়ে যেতে দেব না। তিনি আছেন, তিনি নিশ্চয়ই থাকবেন এই "মৌষলকালে" আমাদের মাঝে আমাদেরই একজন "তীর্থযাত্রী" হয়ে।
"নিকটকথা": লেখা হয়তো নিষ্প্রয়োজন, কিন্তু তবু বলি, আমাদের প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারের বিভিন্ন লেখা ও চরিত্রের নাম সাজিয়ে তৈরী করলাম এই বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্যটি। ইতি, "ফিল্মস্টার নবকুমার"।
~