Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

4  

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

নিশিগন্ধা

নিশিগন্ধা

6 mins
723


সেই সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েই চলেছে, ভেজা ঠান্ডা বাতাসে নিশিগন্ধার সুবাস, কিন্তু এই ঠান্ডায় নমিতার বাবার হাঁপটান আর কাশিটা খুব বেড়ে যায়। কবিতা সবিতা আজ ইস্কুলে যায় নি বৃষ্টির জন্য, নমিতা ছোট দুই বোনকে বললো, "বাড়ীতে বসে পড় একটু, সামনেই পরীক্ষা, তা না সকাল থেকে টিভি দেখতে বসে গেলি?" ইস্কুলে যাওয়া তো বন্ধু বান্ধবের জন্য, নয়তো দুজনেরই লেখাপড়ায় কোনো মতি নেই।


ঘরের কাজকর্মেও কবিতা সবিতার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। মাও ওদের কিছু বলে না, নমিতা কিছু বলতে গেলে মা বরং ওকেই দু-চারকথা শুনিয়ে দেয়।


নমিতার বড়দাদা বিয়ের মাস দুয়েকের মধ্যেই বাপ-মা ভাইবোনদের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে বৌ নিয়ে ও নিজের শ্বশুরবাড়ির আশপাশেই কোথাও বাসাভাড়া করে আছে, এবং এতবড় সংসার টানার মতো রোজগার নেই এই অজুহাতে দিব্যি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। নমিতার পরে একটা ভাই আছে, পাক্কা নেশাড়ু সে, পাত্তা টানার নেশার টাকার জোগাড় করতে গিয়ে অ্যাটেম্প্ট টু মার্ডার কেসে জেলের ঘানি টানছে সে।


কাজেই বাড়ীর বড় মেয়ে হিসেবে তার ওপরেই অশক্ত অসুস্থ বাবা, অসহায় মা আর নাবালিকা দুই বোনের দায়িত্ব এসে পড়ে অযাচিতই। নমিতা মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে নি, তুলে নিয়েছে পুরোটা দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে, কলেজের পড়া মাঝপথে থামিয়ে।


এতকিছুর পরেও কিন্তু তার মা বোনেরা সন্তুষ্ট নয় তার ওপর, বাবা নীরব দর্শক মাত্র, এতে আজকাল আর কোনো মনখারাপ হয় না নমিতার, গা সওয়া হয়ে গেছে আরও অনেক কিছুর মতই। তাই নমিতা গামছাটা মাথায় চাপিয়ে ভিজে ভিজেই সকালবেলার সাংসারিক কাজ সারছে, টিপটিপে বৃষ্টিতে কাঁচা উঠোনে চিটচিটে পিছল, পা টিপে টিপে সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে। গলা বাড়িয়ে দাওয়ার পলেস্তারা খসা দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটাতে দেখলো ঘন্টার কাঁটাটা নটার ঘর ছুঁইছুঁই। অথচ দশটা পঞ্চাশের ট্রেনটা না পেলে নমিতা মধ্যমগ্রাম থেকে সময়ের মধ্যে কিছুতেই শিয়ালদায় কাজের জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না, তার মধ্যে এই বৃষ্টি।

কোনো রকমে কটা পটল, একটু কুমড়ো আর দুটো ডিম কিনে এনে মায়ের হাতে ধরিয়ে নমিতা কুয়োপাড়ের দিকে এগোতে এগোতে শুনলো মা বলছে, "একটু মাছ আনতে পারলি না? উঠতি বয়সের মেয়ে দুটোকে রোজ রোজ এই খাবার দিলে চলে? তোর আর কোনো দিনই টাকায় কুলোয় না!"


নমিতা কোনো উত্তর দিলো না, বাবার সিরাপটা আজই আনতে হবে, কাশিতে কষ্ট পাচ্ছে খুব মানুষটা, সামনে এখনো গোটাটা বর্ষা পড়ে, বাবা কখনো কিছু বলে না, শুধু মাঝে মাঝে নমিতা বাবার চোখে যেন একটা অপরাধ বোধের ছায়া খেলে যাচ্ছে দেখতে পায়।


খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিলো নমিতা, বাটিতে দুমুঠো মুড়ি একটুখানি আখের গুড় নিয়ে জল দিয়ে ভিজিয়ে গপগপিয়ে খেয়ে নিলো, এতে খুব ঠাণ্ডা থাকে পেটটা, এরপর তো সারাদিন ধরেই যাতা খাবে যখন যেমন পাবে। নাঃ আর দেরি করা চলে না নমিতার, তাদের বাড়ী থেকে স্টেশন অনেকটা পথ, বৃষ্টি ভেজা পথে হাঁটতে তো আরও বেশিই সময় লাগবে, টোটোয় গেলে বেকার পনেরো টাকা খরচ হয়ে যাবে। চটিটা পায়ে গলিয়ে, শাড়ীর কুঁচিটা একটু উঁচু করে গুঁজে রঙ জ্বলা শিক দোমড়ানো ছাতাটা মাথায় দিয়ে নমিতা বাড়ী থেকে বেরোলো মনে মনে হিসেবটা কষতে কষতে আজ কিকি খরচ আছে।


হাঁটতে হাঁটতে নমিতা আনমনে নানান কিছু ভাবছে এলোমেলো, একটু ভালো কোনো কাজের সন্ধান পেলেই নমিতা এই কাজটা ছেড়ে দেবে। এতো খারাপ কাজটা.... নমিতার আর মন চায় না এই কাজটা করতে, এমনকি কমিশন কেটে রেখে তারপর রোজ মেলে, পরিশ্রমের তুলনায় আর রোজের পয়সায় নমিতার পুরো পোষায় না, কিন্তু দুম করে ছাড়তেও পারবে না, এতগুলো মুখ তার একার রোজগারের ওপর। শুধু নমিতা একা নয়, তার মতোই আরও কাতারে কাতারে মেয়ে প্রতিদিন শুধু দুমুঠো পেটের ভাতের টানে ছুটে আসে শহর কোলকাতায়, ট্রেনে বাদুরঝোলা হয়ে, শহর ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তের শান্ত শহরতলি থেকে, এইরকম কাজে। অত বাছাবাছি করার অবকাশই নেই, আছে শুধু খিদের জ্বালা। কী যে করবে ও মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতেও পারে না, তাছাড়া শিউলিদির মুখে শুনেছে কাজ ছাড়তে চাইলে অনেক ঝামেলাও হয়। ইস্, আজ ট্রেনটাও লেট, স্টেশনে এসে নমিতা দেখলো থিকথিকে ভিড়, অন্যান্য দিনের থেকে অনেক বেশি।


ঠাসা ভিড় ট্রেনটাতে উঠে অবশেষে নমিতা শিয়ালদায় এসে স্টেশনের ঘড়িতে দেখলো বারোটা দশ, তারপর হাঁটতে হবে আরও মিনিট কুড়ি, তার মধ্যে সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় প্যাচপ্যাচে কাদা আর ভাঙা জায়গাগুলো কাদাগোলা জমা জল। আজ নমিতার কপালে রামশরণের ঝাঁঝালো গালাগালি অবশ্যম্ভাবী।

বারোটার মধ্যে হাজিরা দেবার কথা নমিতার, থাকতে হবে যতক্ষণ কাজ শেষ না হবে, বাঁধাধরা কোনো সময় নেই, কাজের চাপের ওপর বাড়ী ফেরার সময় নির্ভর করে, তেমন চাপ থাকলে রাতে থেকেও যেতে হতে পারে এই কথাটায় ও রাজী হতে পারে নি, মাধবী ম্যাডামের হাতে পায়ে ধরে কোনোরকমে রাজী করিয়েছে, লাস্ট ট্রেনে হলেও নমিতা ভেন্ডার কামরায় উঠে কোনো রকমে মধ্যমগ্রাম পৌঁছাতে পারলেই হোলো।

রাস্তা পার হয়ে বাঁহাতি সরু গলিটার তিন নম্বর বাড়ীটার অপরিসর প্রায়ান্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নমিতা দোতলায় উঠে গেলো এবং যথারীতি প্রত্যাশা মতোই বাছাই গালাগালিভরা মুখঝামটা খেলো প্রথমে রামশরণ তারপরে মাধবী ম্যাডামের কাছে। মনে মনে নমিতা দুজনের উদ্দেশ্যেই অশ্রাব্য বাছাই খিস্তি উচ্চারণ করে, ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ঢুকে গেলো নিজের খোপটাতে।


আজ যেকোনো কারণেই হোক বাজার মন্দা, কাজ নেই তেমন, শিউলিদি, পদ্মা, জুঁই, বেলী, রেখা সবারই মুখ ব্যাজার আর মাথা গরম, নিজেদের মধ্যে রঙ্গ রসিকতা আর অভাব অনটনের গল্প দুইই চলছে, এমন সময় মাধবী ম্যাডাম নমিতাকে ডেকে পাঠালো। নমিতাকে একটা ফোন নম্বর দিয়ে বুঝিয়ে বলে দিলো কাজের বিবরণ। নিজের খোপে গিয়ে নমিতা চুল টুল ঠিক করে বেরোতে যাবে, বেলী ঠোঁট বেঁকিয়ে টিপ্পনী কাটলো আর রামশরণ পান গুঠকায় লালচে ক্ষয়াটে দাঁত বের করে চোখ টিপে নমিতার পিঠে থাবড়া মেরে আবার একটা গালি দিলো। নমিতার কোনো তাপ উত্তাপ নেই, বেরিয়ে গেলো পা চালিয়ে।


আজকের পার্টিটা মন্দ নয়, আনকোরা একদম, মুখ দেখেই বুঝেছে নমিতা, খাওয়া দাওয়া ভালোই হয়েছে, ছাড়াও পেয়েছে বেশ খানিকটা আগেই। রেটের বাড়তি বকশিশটা নমিতা ব্লাউজের ভেতর চালান করে দিলো, উবের থেকে নেমে নমিতা পেছন ফিরে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে হাত নাড়লো। হাতে তিন ঘণ্টা মতো সময় আছে, আজ অনায়াসে একটা ছোট খেপ খেটে নিতে পারবে, বাড়তি কিছু রোজগার। তাহলে আজই নমিতা ফেরার পথে শিয়ালদার বড় ওষুধের দোকানটা থেকে বাবার কাশির সিরাপটা কিনে নেবে আর কাল তবে কাজে বেরোবে না, বোন দুটোর জন্য একটু ভালো মাছ মিষ্টি এনে খাওয়াবে, সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে শরীরটা ওর ম্যাজম্যাজ করছে।


টিপেটিপে বৃষ্টিটা আছে, ধর্মতলায় মেট্রোর সামনে থেকে একটা পার্টি পেয়ে গেলো নমিতা, অবাঙালী ছোকরা, নেশায় আছে, ঘন্টা দুয়েকের কন্ট্রাক্ট, নমিতা নির্দ্বিধায় উঠে পড়লো গাড়ীতে। বাবুঘাটে তেমন যুতসই ব্যবস্থা না পেয়ে পার্টি গাড়ী ঘোরালো খিদিরপুরের দিকে, নমিতা এদিকটা তেমন চেনে না, একটু ভয় ভয় পাচ্ছে ও। এদিকে কন্ট্রাক্টের সময়ের বেশীর ভাগই পার হয়ে গেছে, নমিতা দোনোমনো করে বললো ওকে শিয়ালদায় ফিরতে হবে, পয়সা মিটিয়ে ওকে ধর্মতলায় ছেড়ে দিলেই হবে।


অকথ্য গালাগালি সহযোগে নমিতার সেই নেশাগ্রস্ত অবাঙালী পার্টি বাঁ হাতে নমিতার চুলের মুঠি ধরে মাথাটা গাড়ীর সিটের ওপর একবার আর ড্যাশবোর্ডের ওপর একবার এরকম পালা করে সজোরে ঠুকে দিতে লাগলো, গাড়ীর দরজার ফ্রেমে ধাক্কা লেগে কপালের বাঁদিকটা ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে। নমিতা ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, কি করবে এখন ও? এতক্ষণ লোকটা একহাতে গাড়ী চালাচ্ছিলো, এবার একটা ঝুপসি অন্ধকার জায়গায় গাড়ী দাঁড় করিয়েছে, কোন জায়গা এটা? নমিতা চেনে না। আতঙ্কে নমিতা আধমরা হয়ে গেছে, গাড়ীর সব কাঁচ তোলা, গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও এই শুনশান অচেনা জায়গায় কেউ কি শুনতে পাবে?


কোলকাতার বুকেও এরকম নির্জন ফাঁকা অন্ধকার জায়গা আছে? লোকটা ওর কাজ মিটিয়ে নিয়েছে গাড়ীতেই। নমিতা এখনো কাঁপছে থরথর করে, কয়েক মুহূর্ত..... লোকটা কী একটা ধারালো জিনিস দিয়ে নমিতার গলার বাঁদিকে ঠিক কাঁধের ওপরটায় টান মারলো, একটু চিড়িক করে জ্বালা করে উঠলো।


"অনেকটা রাত হয়ে গেলো, নমি এখনো ফেরেনি?" নমিতার বাবা কাশির দমকে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো। নমিতার মায়ের মুখে কোনো সাড়া নেই, আর চোখ মটকে কবিতা বললো, "মালদার পার্টি পেয়েছে হয়তো, রাতে আর ফিরবে না!" সবিতা খ্যাঁকখেঁকিয়ে হেসে উঠলো।



পরদিন শহরের সব দৈনিকে উত্তেজক ছোট্ট একটি খবর ভেতরের পাতায়, "খিদিরপুর ব্রীজের তলায় গলা কাটা তরুণীর মৃতদেহ,বয়স আনুমানিক চব্বিশ, কোলকাতার কোনো থানায় কোনো মিসিং ডায়েরী হয় নি, সম্ভাবনা যুবতী শহরের বাইরের বাসিন্দা। মৃতার সঙ্গে কোনো জিনিসপত্র পাওয়া যায় নি মৃতদেহের কয়েক হাত দূরে পড়ে থাকা রঙবেরঙী ছোট একটি লেডিস পার্স ছাড়া। পার্সের ভেতরে শুধু দুটি নম্বর লেখা একটি চিরকুট, সামান্য কিছু টাকা, সস্তা দু-একটি প্রসাধনী এবং এক প্যাকেট কন্ডোম পাওয়া গেছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান মেয়েটি হয়তো দেহপসারিনী। বাঁহাতের কনুইয়ের ঠিক নীচে ভেতরের দিকে উল্কি করে লেখা..... "নমিতা নিশিগন্ধা"। উদ্ধার হওয়া নাম্বার দুটির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।


(বিষয়: অত্যাচার)


Rate this content
Log in

More bengali story from Sanghamitra Roychowdhury

Similar bengali story from Classics