Shilpi Dutta

Classics Inspirational

3  

Shilpi Dutta

Classics Inspirational

কুমারী মা

কুমারী মা

3 mins
917


‘মিঠি ভুলে যাসনা যে তুই বড় হচ্ছিস, এখন থেকে ছেলেদের সাথে একটু বুঝে মিশবি, যদি কোনদিন কিছু অঘটন ঘটে যায় তবে যে কাউকে আর মুখ দেখাতে পারবনা।’ মায়ের এই কথাগুলি শেষ হতেই মিঠি প্রশ্ন করল ‘কি অঘটন মা? বড়জোর কাউকে ভালোবেসে ফেলব এই তো? কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়?’ মিঠির মা মিনতি মেয়ের সাথে সবসময় একজন ভালো বন্ধুর মতই মিশেছেন। তাই তিনি মেয়েকে বললেন ‘ভালোবাসা অন্যায় নয় রে সোনা, কিন্তু সেই ভালোবাসা যখন তার গণ্ডী পার করে মানসিক সর্ম্পক থেকে শারীরিক সর্ম্পকে উপনীত হয় তখন তার পরিণতি যে সবসময় সুখদায়ক হয় তা নয়। বয়সের সঙ্গে অনেক কিছু বুঝবি।এখন যা প্যাকিংটা করে নে। কালকে ভোরেই তো তোর কলেজের এক্সকারশনের জন্য দার্জিলিং যেতে হবে।’ মিঠিও মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে সেখান থেকে উঠে গেল ও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।

    পরের দিন যথারীতি মিঠি রওনা দিল দার্জিলিং এর পথে। রাস্তায় সদ্য যৌবনে উপনীত মিঠি নানা আচরণে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হতে শুরু করল তারই কলেজের তার থেকে এক বছরের সিনিয়র রাজার দিকে।

     রাজাও যে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিল তার সেই ধারণা সঠিক প্রমাণিত হল যখন রাজা তাকে নিজের প্রেম নিবেদন করল। মিঠিও তার সম্মতি জানিয়ে সর্ম্পকটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

    কলেজের এই চারদিনের ট্যুরে তার ও রাজার মধ্যে এমন অনেক কিছুই হল যার জন্য হয়ত তাদের মত তাদের সময় ও ভাগ্যও তৈরী ছিল না।

     কলকাতায় ফেরার পথে তারা সম্মুখীন হয় একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার। এই দুর্ঘটনায় রাজার আকস্মিক মৃত্যু হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যায় মিঠির জীবন।

      কলকাতায় ফিরে মিঠি তার মাকে সব কথা জানায়। মিনতি সব শুনে মেয়েকে বলেন ‘ওকে ভুলে যা মা। যদি বেঁচে থাকত তখন না হয় ভেবে দেখতাম, কিন্তু এখন এসবের কোন মানে হয় না।’ কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা হয়ত অন্য কিছুই ছিল।

    কিছুদিনের মধ্যেই মিঠি বুঝতে পারে যে সে অন্তঃস্বত্তা। এই কথা শুনে তো মিনতির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি মেয়েকে বললেন ‘তোকে এত করে বোঝালাম তবুও তুই কি করে এমন একটা ভুল করলি?’ মিঠি বলল ‘মা এটা ভুল নয়, ভালোবাসা।’ মিনতি মেয়েকে থামিয়ে বললেন ‘চুপ কর তুই কি জানিস না এরকম সন্তানকে আমাদের সমাজ স্বীকৃতি দেয় না? নানা প্রশ্ন করে বাচ্চাটার পিতৃ পরিচয় নিয়ে এবং অনিচ্ছা স্বত্তেও মাকে সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।’

   মিঠির কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই মিনতি আবার বললেন ’মিঠি কালকে আমার সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাবে, এই বচ্চাটাকে কিছুতেই রাখা যাবেনা।’ সারারাত বিনিদ্র অবস্থায়, নানা অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তির মধ্যে কাটালো মিঠি।

     পরের দিন সকালে প্রতিদিনের মতই টেনে নিল খবরেরকাগজ টা আর তার চোখ পড়ল একটি হেডিং এ ‘কুমারী মাকে স্বীকৃতি আদালতের এবং চাইলে তিনি গোপন রাখতে পারেন সন্তানের পিতৃ পরিচয়।’ মিঠি কাগজটা নিয়ে তার মাকে দেখাল। মিনতি খবরেরকাগজটা পড়ে মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন বললেন ‘সমাজ যখন পাল্টেছে তখন এই যুদ্ধে আমি তোর পাশে আছি মিঠি।’ আর মনে মনে বললেন ‘সমাজব্যবস্থাটা যদি আরো আগে পাল্টাত, তবে আমাকে শুধু মিঠির পিতৃপরিচয়ের জন্য সারাজীবন যাকে ভালোবাসিনা এমন একটা লোকের সঙ্গে কাটাতে হত না। মিঠি ঠিকই বলেছিল যে কুমারী মা হওয়াটা জীবনে সবসময় একটা ভুল নয়, অনেক সময় সারাজীবন একা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য ভালোবাসাও বটে।’


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics