Shilpi Dutta

Romance Others

2.6  

Shilpi Dutta

Romance Others

অবুঝ প্রেমশিল্পী দত্ত

অবুঝ প্রেমশিল্পী দত্ত

3 mins
267


হঠাৎ করে এত সকালে ডোরবেলটা বেজে ওঠায় খুব রাগ হল টুটুলের। এমনিতেই তিনদিন হল রাতে কেন জানেনা ঠিক মত তার ঘুম হচ্ছে না। অতিকষ্টে দু‘হাত দিয়ে চোখ মুছে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সে আরো বিরক্ত হল। সবে সকাল ৬ টা বাজে। এই সময় মা রোজের মত ঠাকুর ঘরে আর বাবা খবরের কাগজ ও এক কাপ চা নিয়ে ঝুলবারান্দায়। তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও দরজাটা তাকেই খুলতে হবে। 


    দরজা খুলেই সে দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বুবাই। বুবাই তাদের পাশের অ্যাপর্টমেন্টে থাকে। ওরা দুজনে ছোটোবেলার বন্ধু। এক স্কুল, এক কোচিং আর এখন এক কলেজ। ওদের পারিবারিক সর্ম্পকও খুব ভালো।

বুবাইকে টুটুলের মা সুমিতা খুব স্নেহ ও বিশ্বাস করেন। কলেজে ভর্তির সময় বুবাই কে বলেছিলেন ‘ভালোই হল বুবাই তুই ও টুটুল একই কলেজে চান্স পেলি, তোকে ছাড়া টুটুলের বিষয়ে আমি কাউকে ভরসা করতে পারি না।’ বুবাই ও আনন্দিত হয়ে মুচকি হেসে টুটুলের মায়ের কথায় সম্মতি জানায়।


  টুটুল কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছে যে তার বিষয়ে বুবাই যেন একটু বেশি পোজেসিভ হয়ে উঠছে। এই নিয়ে সে বুবাই কে দু একটা কথা শোনায় এবং এর জন্য দিন তিনেক ধরে তাদের মধ্যে কথা বন্ধ। 

   দুজনের মধ্যে এইরকম ঝগড়াঝাটি ও কথা বন্ধ থাকা কোন নতুন ঘটনা নয় তাই এই নিয়ে দুপক্ষের অভিভাবকদের কখনওই খুব একটা মাথা ব্যথা হয়নি। কিন্তু এইবার এই ঘটনার একদিন পরেই মেয়ের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন এবং গতকাল বিকালে যখন টুটুল হঠাৎ এসে বলল ‘মা, প্লিজ তুমি বাবাকে বল আমি আর এখানে থাকতে চাইনা, আমাকে মামার কাছে দিল্লি পাঠিয়ে দিক, আমি বাকি পড়াশুনাটা ওখানেই করতে চাই।’ সুমিতা বলল ‘বুবাইয়ের সাথে কি আবার ঝগড়া হল?’ কোন উত্তর দিলনা টুটুল, শুধু বলল, ‘মা আমি খাবোনা, ক্ষিদে নেই।’


    মেয়ের কথা শুনে ও আচরণের পরিবর্তন দেখে সুমিতার মনে পড়ে গেল তার পড়া কবিতার একটা লাইন ‘রাধার কি হইল অন্তরে ব্যথা’। তিনি অবিলম্বে কথাটি বুবাইয়ের মা রেখা কে বললেন এবং দু‘জনেই বিষয়টিতে একমত হলেন ও সর্ম্পকটিকে সম্মতি দিলেন। তাদের দু‘জনের পরিকল্পনা মত রেখা টুটুলের দিল্লি তে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের কথাটা ছেলের কানে তুলে দিয়েছিলেন গতকাল রাতে। তাই অত সকালে বুবাই এসেছে বুঝতে পেরে ঠাকুরঘরে থাকা সুমিতা একটুও অবাক হলেন না।


     বুবাইয়ের চুল উস্কোখুস্কো, দেখেই টুটুলের মনে হল সে সারারাত ঘুমায়নি। কেমন যেন একটু মায়া হল টুটুলের। জিজ্ঞাসা করল ‘কি রে এত সকালে তুই এখানে?’ কিন্তু তার কোন উত্তর পেলনা। হঠাৎ বুঝতে পারল বুবাই শক্ত করে ওর হাত দুটো ধরেছে। ছোটো থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে ওরা দুজন, অনেকবারই বুবাই ওর হাত ধরেছে কিন্তু এ যেন এক অন্যরকম স্পর্শ, অন্য অনুভূতি। বুবাই হঠাৎ করে বলে উঠল ‘শুনলাম তুই নাকি বাবলু মামার কাছে দিল্লি চলে যাবি? তুই কি ভেবেছিস আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলেই তোকে আমি যেতে দেব?’ টুটুল ভাবলো এর আগেও তো ছুটিতে সে অনেকবার বাবা-মায়ের সাথে দিল্লি গিয়েছে , তখন তো বুবাই এরকম করেনি আর ওকেই বা মায়ের এই কথাটা বলার কি দরকার ছিল! একটু থেমে বুবাই আবার বলল ‘তুই যতই ঝগড়া কর আমি তোকে কোথাও যেতে দেবনা, মরে গেলেও না’ টুটুল যেন এক অন্য বুবাই কে দেখতে পাচ্ছে। সে বুঝতে পারছেনা আজ কেন তার আর বুবাইয়ের সাথে ঝগড়া করতে বা তার কথার প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হলনা। টুটুলের দু‘গাল দিয়ে বেয়ে চোখের জল নেমে আসতে থাকল। সে শুধু জিজ্ঞাসা করল ‘কেন যেতে দিবিনা?’ বুবাই ওর চোখ মুছে দিতে দিতে বলল ‘আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি পাগলী, তুই যে আগে বুঝতে পারিসনি তাতে তোর কোন দোষ নেই, আমিও কি ছাই বুঝতে পেরেছিলাম যে তোকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে যাবে।’ কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে রইল।


   স্তম্ভিত ফিরল রেখা ও সুমিতার কথায়। দু‘ জনে বললেন ‘তোরা আজও বড় হলি না, আগে পড়াশুনা বুঝতে আমাদের হেল্প লাগত আর আজও আমাদের হেল্প ছাড়া বুঝতে পারলি না যে তোরা দু‘জনে দু‘জনকে ভালোবাসিস। আয় তিন দিন ধরে তো ঠিকমত খাওয়াও হয়নি দু‘জনেরই, ব্রেকফাস্ট করবি আয়।’


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance