Shilpi Dutta

Romance

4.0  

Shilpi Dutta

Romance

অপেক্ষার অবসানশিল্পী দত্ত

অপেক্ষার অবসানশিল্পী দত্ত

4 mins
586


মৌমিতা—ছন্দা আর দীপকের একমাত্র সন্তান। মৌমিতার ডাকনাম মৌ। মৌ এখন এম.বি.এ করছে। এর মধ্যেই ওর বিয়ের জন্য একটি ভালো সম্বন্ধ আসে। পাত্রের নাম শুভময়। ডাকনাম শুভ। শুভও বাবা মায়ের একটিমাত্র সন্তান। পড়াশুনা শেষ করে পৈতৃক ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। নিজস্ব বাড়ী, ভালো রোজগার এবং দেখতে শুনতেও ভালো। তাই ছন্দা ও দীপকের এক দেখাতেই ছেলে পছন্দ হয়ে গেল। মৌ এর কাছে প্রস্তাব রাখতেই মেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বলল ‘মা আমার কোর্সটা তো শেষ হোক আগে’। ছন্দা উত্তরে বলল ‘বিয়ের পরও তুমি সেটা করতে পারবে, আমি কথা বলেছি ওদের কোন আপত্তি নেই। ওরা তো এতে বরং খুশিই, বলেছে তুমি চাইলে ভবিষ্যতে ওদের বিজনেস জয়েন্ করতে পারো। মৌ আপত্তি করোনা, শুভ খুব ভালো ছেলে।’ মৌ এর ভীষণ রাগ হল, নিজের মনে মনে বলল—‘কি নাম শুভ, শুভ তো নয় অশুভ। আমার এখনও সুমনা, অতসীদের মত একটা প্রেম করাই হলনা। এখনই কিনা ওনাকে বিয়ে করতে হবে।’ মৌ একটু ভেবে বলল ‘মা কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসিনা তবে ওর সঙ্গে সারাজীবন কি করে কাটাবো?’ ছন্দা বলল ‘কে বলেছে যে শুধু বিয়ের আগেই প্রেমে পড়া যায়? বিয়ের পরও ভালোবাসা হতে পারে, বিয়ের পর একসাথে থাকতে থাকতে তুই নিজের অজান্তেই দেখবি একসময় ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস, সেদিন আমার কথা মিলিয়ে নিস।’

   যাহোক অনেক না-হ্যাঁ এর পর মৌ কে বাবা মার কথায় রাজী হতেই হল এবং একটি ভালো দিনে শুভর সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেল।

   বৌভাতের রাতেই মৌ শুভকে বলল ‘আমার পক্ষে এই সর্ম্পকটাকে এখনই এর থেকে বেশী এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আপনি হয়ত একদিন বুঝবেন আমাকে বিয়ে করে আপনি ভুল করেছেন।’ মৌ একটু থেমে বলল ‘জানিনা আপনি কি ভাবেন তবে আমার কাছে বিয়ে করার জন্য মানুষটাকে ভালোবাসা খুব প্রয়োজন।’ শুভ একটু হেসে খুব শান্ত কন্ঠে বলল ‘একদম ঠিক বলেছেন। তবে আমি প্রথম যেদিন আপনাকে খোলাচুলে আপনার বাড়ীর ছাদে দেখেছিলাম, সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু যতদিন না আপনি আমাকে ভালোবাসতে পারছেন আমি অপেক্ষা ক‍রবো।'

   তারা দুজন ছাড়া এই কথাগুলো অন্য সকলের কাছে অজানা রইল।

    বিয়ের পর নিয়ম অনুযায়ী দ্বিরাগমনে বাপের বাড়ী গেলে মা জিজ্ঞাসা করল ‘মৌ সব ঠিক আছে তো? তুই সুখী তো মা?’ মৌ বলল ‘তোমরা তো আমার বিয়েটা হোক এটাই চেয়েছিলে আমি সুখী হলাম কিনা তাতে কি?’

   বাপের বাড়ী থেকে ফেরার পর শুভর বাবা- মা চলে গেলেন দেশের বাড়ী। কলকাতার বাড়ীতে শুধু ওরা দুজন রয়ে গেল নদীর দু প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি মানুষের মত।

    এরমধ্যে ব্যবসার কাজে শুভকে দিন সাতেকের জন্য কলকাতার বাইরে যেতে হল। যাওয়ার আগে মৌ কে বাপের বাড়ীতে রেখে গেল আর বলে গেল ‘ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবেন। ভালো থাকবেন।’

   শুভ গেছে দিন দুয়েক হল। হঠাৎ মৌ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হল। ডাক্তার বলল ‘জ্বরটা কিছুতেই কমছে না ৪৮ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলতে পারছিনা।’ সব শুনে ছন্দা শুভকে ফোন করে জানাল। শুভও এমারজেন্সী ফ্লাইটে করে সব কাজ ছেড়ে পরের দিন এসে হাজির। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা নার্সিংহোমে। সারারাত মৌ এর বিছানার পাশে জেগে বসে রইল সে। পরের দিন ভোরে জ্ঞান ফিরল মৌ এর। ডাক্তার দেখে বলল ‘ভয়ের কিছু নেই, আউট অফ ডেঞ্জার। ওকে চাইলে বাড়ী নিয়ে যেতে পারেন’ সবাই একটু নিশ্চিন্ত হয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেল। রয়ে গেল শুধু ওরা দুজন। মৌ বলল ‘আমি তো তোমাকে ভালোবাসিনি তাহলে আমার জন্য সব কাজ ফেলে ছুটে এলে কেন?’ শুভ বলল ‘আমার কাছে তোমার থেকে বেশী প্রয়োজনীয় কিছুই নয় এমনকি আমি নিজেও নই। তুমি এখনই এত কথা বল না মৌ।’ ওরা কখন যেন নিজেদের অজান্তেই ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ তে উপনীত হল। এরমধ্যেই ছন্দা আর দীপক রুমে এসে বলল ‘ছুটি হয়ে গেছে বাড়ী যাবি চল।’ মৌ হেসে বলল ‘হ্যাঁ মা যাবো তবে তোমার সঙ্গে তোমাদের বাড়ীতে  নয়। শুভর সাথে আমার বাড়ী যাব। ছন্দা বলল ‘কিন্তু মৌ তোকে ওখানে কে দেখবে?’ মৌ বলল ‘তুমি চিন্তা করনা। শুভ আছে ওই আমাকে দেখবে। আমাকে যেতে দাও মা, আমাকে যে আজ ওর ছয় মাসের অপেক্ষার উত্তর দিতে হবে, বলতে হবে যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।’

  ছন্দা বলল "শুধু শুভর নয় আমাদেরও তোকে সুখী দেখার অপেক্ষা শেষ হল।"

   শুভর বুকে মাথা রেখে মৌ মনে মনে বলল

‘তোমাকে ভালোবেসে আমার জীবনের প্রতিক্ষণ আজ থেকে শুভক্ষণে পরিণত হল।’ সেদিন মৌ আর শুভর ঘর ফুলে ফুলে সাজান ছিল না। কিন্তু আকাশে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ ওদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance