আত্মসম্মান
আত্মসম্মান
ছমাস পর আজকে আবার আগের মতো উজানকে অফিসের গেটের সামনে ছুটির সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ময়ূরী বেশ অবাকই হলো। মনে পড়ে গেল ছমাস আগের উজানের সাথে তার শেষ দেখা হওয়ার সেইদিনের কথাগুলি।
উজানের সাথে তার সর্ম্পকটা ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় থেকে। উজান তখন কলেজে পড়ে। একটা ফাংশনে ময়ূরীর নাচ দেখে উজান ময়ূরীকে ভালোবেসে ফেলে, একদম লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।
তারপর দুয়েকবার দেখা হওয়ার পর উজান ময়ূরীকে প্রেম নিবেদন করে। আর ময়ূরীও রাজি হয়। চলতে থাকে দুজনের প্রেমপর্ব। উজানও কলেজ শেষ করে সরকারী ব্যাঙ্কে চাকরী পেল। আর ময়ূরীও নিজের স্কুল, কলেজ শেষ করে একটি মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে চাকরী করছে। পাশে নাচটাকেও বজিয়ে রেখেছে সে।
এতদিনে দুজনের বাড়িতেই তাদের ভালোবাসার কথা জানাজানি হয়ে গেছে এবং দুপক্ষের ব্যবহারে তাদের সম্মতিই প্রকাশ পেয়েছে। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ছমাস আগে যখন তারা ঠিক করল এবার বিয়ের বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করবে তখন একদিন উজান ময়ূরীকে বলল ‘আজকে একবার বিকালে দেখা হতে পারে? তোমার কোনো অসুবিধা নেই তো? বিয়ের ব্যাপারে কিছু কথা আছে।’ ময়ূরী বলল ‘না না কোনো অসুবিধা নেই, আমি আসবো।’
অতঃপর যে যার অফিস শেষ করে পরিচিত কফিশপে গিয়ে বসল। গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে উজান বলল ‘তোমাকে একটা কথা বলবো, রাগ করবে নাতো?’ ময়ূরী বলল ‘না করবো না, বলো।’ ‘আমি চাই বিয়ের পর তুমি চাকরি আর নাচ দুটোই ছেড়ে দাও। আমার বাড়ির লোকেদেরও তাই মত।’ হঠাৎ করে উজানের মুখ থেকে এরকম একটা কথা শুনে ময়ূরী বুঝে উঠতে পারল না কি বলবে। কিছুক্ষণ
চুপ করে থেকে বলল, ‘কিন্তু আমার নাচের অনুষ্ঠানেই তুমি আমাকে প্রথম দেখে পছন্দ করেছিলে আর এই চাকরিটা করার জন্য আমাকে তুমিই উৎসাহ দিয়েছিলে। তাহলে এখন’। ময়ূরীকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে উজান বলল ‘তখনকার ব্যাপারটা আলাদা ছিল।’ ময়ূরী অবাক হয়ে উজানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল ‘আমার মনে হয় আমাদের সর্ম্পকটা নিয়ে আমার আর একটু ভেবে দেখার দরকার। আমি আসছি’। এই বলে সে সেখান থেকে চলে গেলো।
এরপর ছটা মাস কেটে গেছে। এরমধ্যে কেউ কাউকে যোগাযোগ করেনি। হয়ত কে আগে যোগাযোগ করবে এই দ্বন্দ্বেই ভুগেছে দুজন।
আজকে হঠাৎ করে নিজের অফিসের সামনে উজানকে দেখে ময়ূরী ভাবলো হয়ত উজানের মনোভাব পাল্টেছে। সে জিজ্ঞাসা করল ‘কেমন আছো?’ উজান বলল ‘ভালো আছি। তুমি?’ ময়ূরী উত্তরে ঘাড় নাড়িয়ে জানালো ভালো আছে। দুজনেই ইতঃস্তত করতে লাগলো সেদিনের কথাটা নিয়ে। উজানই আগে জিজ্ঞাসা করল ‘তাহলে নাচ আর চাকরিটা ছাড়ছো তো?’ এবার ময়ূরী অত্যন্ত বিরক্ত হলো কিন্তু শান্ত গলায় বলল ‘হ্যাঁ ছাড়বো, তবে আমারও একটা শর্ত আছে।’ উজান কৌতুহলের সঙ্গে বলল ‘বল কি?’ ময়ূরী বলল ‘বিয়ের পর তোমাকে আমার বাড়িতে থাকতে হবে আর আমার সারনেমটা গ্রহণ করতে হবে।’
উজান এইরকম শর্তে অবাক হয়ে গেলো বলল ‘এটা কি সম্ভব!’ ময়ূরী বলল ‘কেন সম্ভব নয়, আমি মেয়ে বলে আমাকেই নিজের ভালবাসা পেতে গেলে সব শর্ত মানতে হবে, সবকিছু ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করতে হবে। আর তোমার জন্য কিছুই নয়।’
শেষ পর্যন্ত উজান নিজের পুরুষত্ব
বজায় রাখতে গিয়ে সর্ম্পকটা আর টিকিয়ে রাখতে পারলোনা। কিন্তু ময়ূরী নিজের আত্মসম্মানটা বজিয়ে রাখতে সক্ষম হলো