আদুরি
আদুরি
'আদুরি', হ্যাঁ এটাই ওর ডাকনাম। ভালোনাম একটা থাকলেও মাসিমণির মুখে নিজের জন্য এই নামটাই তার বেশি পছন্দ। আজ আদুির পা দিল আঠারো বছরে। সকালে ঘুম ভাঙতেই মাসিমণি অনেক উপহার, শুভেচ্ছা ও ভালবাসার সাথে আজ আদুরির হাতে তুলে দিল রঙিন খামে ভরা একটা চিঠি।
‘এটা আবার কি মাসিমণি?’ রঙিন খামটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আদুরি। ‘এটা তোমার জীবনের একটা সত্যি। আমি মনে করি এখন ঠিক সময় এসেছে তোমাকে এই সত্যিটা বলার। আমি সব কথাগুলি ঐ খামের ভিতর রাখা চিঠিতে লিখে দিয়েছি। তুমি হয়ত বলবে আমি তো নিজের মুখেই তোমাকে সব বলতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই তুমি একা বসে চিঠিটা পড়ো আর নিজেকে একটু সময় দাও এই সত্যিটাকে মন দিয়ে গ্রহণ করার জন্য। আসলে কি জানোতো, মানুষের যুদ্ধ যখন বাইরের সাথে হয় তখন সেখানে লড়াই করাটা অনেক সহজ। কিন্তু ঐ যুদ্ধটা যখন নিজের সাথে হয় তখন সেখানে লড়াই করাটা খুবই কঠিন।’ এই বলে শিখা 'আদুরির মাথায় নিজের মমতা ভরা হাতটা রাখলো। সে বলল ‘তুমি চিঠিটা পড়ো তারপর স্নান করে নিচে নেমে এসো, মন্দিরে পূজো দিতে যেতে হবে। আর তারপর তোমার জন্মদিনের সেলিব্রেশন।’ শিখা নিজের কথা শেষ করে নিচে নেমে গেল।
আদুির তার সদ্য ঘুম ভাঙা চোখদুটিকে দুহাতে কচলে নিয়ে খাম থেকে চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলো। চিঠিটা পড়া শেষ করে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো সে। বুঝতে পারলো মাসিমণি ঠিকই বলেছে— নিজের সাথে যুদ্ধটা সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু সে এই যুদ্ধে কিছুতেই হারবেনা আর হারতে দেবে না তার মাসিমণিকেও।
আদুির চিঠিটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এল আর রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত থাকা শিখাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলল ‘মাসিমণি এতদিন তুমি শুধুই আমাকে দিয়ে এসেছ আজ আমি তোমাকে কিছু দিতে চাই। আজ থেকে আমি তোমাকে আর মাসিমণি বলে ডাকবোনা, মা বলে ডাকবো। আর আজকে আমি একবার সেই গলিতে যেতে চাই যেখান থেকে তুমি আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলে। আজকে থেকে আমি নিজের জীবনকে আমার মতো শহরের গলিতে পড়ে থাকা অনাথ শিশুদের জন্য উৎসর্গ করলাম।’
কথাগুলি শুনে শিখা আদুরিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মনে মনে বলল ‘আমি জানতাম সেদিন তোমাকে তুলে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তটা আমি ঠিকই নিয়েছিলাম। তোমার আদরের স্পর্শ আগামী দিনে শহরের আনাচে কানাচে পড়ে থাকা অনেক শিশুদের ছুঁয়ে যাবে আর আলোকিত করবে তাদের জীবন।'