Sanghamitra Roychowdhury

Classics

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

দাম্পত্য ধর্ষণ

দাম্পত্য ধর্ষণ

6 mins
2.4K


নিতাই মোটামুটি রোজই নেশায় টঙ হয়ে ঘরে ঢোকে। হাওড়ার ওদিকে কোন একটা লেদের কারখানায় কাজ করে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর ঐ নেশাটুকু নিতাইয়ের বিনোদন। দিনভর লোহা লক্কর আর নাটবল্টুর ঝনঝনানি শুনে শুনে ওর কানে তালা লেগে কালা হবার জোগাড় হয়ে যায়। ডিউটি শেষে একটু নেশা না করলে কান-মাথাটা ছাড়ে না। পাঁচ ফুট সাতইঞ্চির দড়ি পাকানো চিমসে পাঁকতেড়ে শরীরটায় ঠিক দম এসে খোলতাই হয় না, পেটে দু'পাত্তর ধেনো না পড়া অবধি। সুতরাং এই কারণেই নিতাই আর ওর আরো দুই বোতলতুতো স্যাঙাত... অজয় আর বিমল মিলে, রোজই গুপীর দেশী মদের ঠেকে হাজির হয়ে যায়।


ওদের তিনজনের বেশ মিল। তিনজনেরই বৌ বড়ো খাণ্ডারনী, ওদের মতে, ওদের জবানিতে। সারাদিন খেটেখুটে এসে পোষায় না মোটেই বৌয়েদের নিত্য ক্যাচক্যাচানি। ভালো লাগে না বলেই না এই নগদ গ্যাঁটের পয়সা খসিয়ে তবে এই রোজকার নেশা। নেশাটা একটু জমে উঠলেই গুপী রোজ ওদের ঠেকের বাইরে বার করে দেয়। একটু জমিয়ে মৌতাত করে চাড্ডি কাঁচা খিস্তি দেবে যে, বৌ আর বৌয়ের চোদ্দোপুরুষকে, তারও উপায় নেই। গুপী কোনো বাওয়াল পছন্দ করে না। ধার-বাকীও পছন্দ করে না। মদের ঠেক খুলে বসেছে পেটের দায়ে, তাই বলে তো ন্যায় নীতি বিসর্জন দিতে পারে না! এই ব্যাপারে গুপীকে খুব দোষ দেওয়াও চলে না। হাজার হোক সংসারী মানুষ, ছেলেপুলের বাপ। কারবারে কোনো হুজ্জুতি পছন্দ করে না, সেটা সাফ জানিয়ে দেয় খদ্দেরদের। তাই অন্যান্য ঠেকের মতো গুপীর ঠেকে চিল্লামিল্লি খিস্তিখাস্তা চলে না।  



তবে সেইদিনকার কথা একটু আলাদা ছিলো। বিশ্বকর্মা পুজোর বাজারে একটু বেশীই টেনে ফেলেছে নিতাই। কোনোরকমে উঠে দাঁড়াতেই টাল খেয়ে পড়ে গেলো। এদিকে বিমল আর অজয়ের হাত-পাও ছেড়ে আসছে, নিতাইকে টেনে তুলবে কী? তাই ওরা অগত্যা নিতাইকে ঠেকের সামনে ফেলে রেখেই হাঁটা ধরলো টালমাটাল পায়ে নিজের নিজের বাড়ীর পথে। নিতাই পড়েই রইলো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শেষে ঝমঝমিয়ে মুষলধারে নামলো। মাথায় জল পড়ে নেশা খানিকটা কেটেছে বোধহয়। কনুই ভর দিয়ে চারধারে তাকিয়ে ঠাহর করতে পারলো না রাত কতো, তবে শুনশান নিশুত চারধার দেখে বুঝলো নিতাই, অনেক রাত, বাড়ী যেতে হবে এবার।



সর্বাঙ্গে কাদা, ভিজে জামাকাপড়, বাড়ীতে এসে ঢুকলো নিতাই। বৌটা একবার তাকিয়ে দেখে বিড়বিড় করতে করতে রান্নাঘরের দিকে গেলো। নিতাই কুয়োপাড়ে জামা প্যান্ট ছেড়ে রেখে চান করে নিলো। তারপর এসে খেতে বসলো, খিচুড়ি রেঁধেছে নিতাইয়ের বৌ। খাবার বেড়ে দিয়ে কোন চুলোয় গেলো কে জানে। বৌকে দু-চারটে খিস্তি না মারতে পারলে নিতাইয়ের জিভ সুড়সুড় করে। পকেটে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট ছিলো, মনে পড়ে গেলো নিতাইয়ের। তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা খিচুড়ি পেটে চালান করে আঁচাতে গেলো নিতাই ছুটে কুয়োপাড়ে। কোনোরকমে হাত ধুয়েই চেয়ে দেখে বৌ জামাপ্যান্ট সাবান জলে ভেজাচ্ছে। ছোঁ মেরে নিয়ে জামার পকেট, প্যান্টের পকেট সব খোঁজা হয়ে গেলো। কিন্তু টাকাটা পেলো না নিতাই। মনে মনে খিস্তি মারতে শুরু করলো নিতাই, বৌইই নির্ঘাত সরিয়েছে নোটটা। মনের খিস্তিগুলো মুখে বেরিয়ে আসতে চাইছে এবার। কিন্তু না এক্ষুণি কিছু বলবে না নিতাই, একটু রসিয়ে রসিয়ে বলবে, আসুক ঘরে।



দিপালীর অপেক্ষায় বসে আছে নিতাই। নিতাইয়ের বৌ দিপালী, গাঁট্টাগোঁট্টা পেটানো চেহারা, দু-দুটো ছেলেমেয়ে হবার পরেও একটুও টসকায় নি। তবে তাতে নিতাইয়েরই লাভ, দিপালীর পেছনে ঘুরঘুর করার ছেলেছোকরার অভাব নেই। তাছাড়া দিপালীও লুটে নিতে জানে। কিন্তু নিতাইকে মোটে আজকাল কাছে ঘেঁষতে দেয় না। আবার নিতাইয়ের জিভটা সুড়সুড় করে ক'টা বাছাই খিস্তি বেরিয়ে আসতে চাইছে। ঠিক তেমনি সময় এসে দিপালী ঘরে ঢুকলো। নিতাই হাতলভাঙা কাঠের চেয়ারটায় এক পা তুলে লুঙ্গি গুটিয়ে বসে আছে। জুলজুল করে তাকিয়ে আছে বৌ দিপালীর দিকে।



দিপালী ঘরে ঢুকে নারকেল কাঠির ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝাড়ছে। নিতাই চুপ। কিছু বললে যদি ঐ ঝাড়ুটা সপাং করে পিঠে বসিয়ে দেয় দিপালী, তবে বাঁচাকোঁচা নেশাটা পুরোই যাবে ছুটে। থাক দরকার নেই ঝামেলায় গিয়ে। একটুক্ষণ পরেই মশারি টাঙিয়ে নিজের মাথার বালিশটাকে বিছানার একেবারে ধারে সরিয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়তে যাচ্ছিলো দিপালী। নিতাইও বিছানায় উঠে এসেছে। এসেই দিপালীর নাইটির হাতাটা ধরে টান মারলো পেছন দিক থেকে।



হাতাটা ছাড়িয়ে নিয়ে দিপালী বললো, "ছাড়ো তো, ভাল্লাগছে না রাতদুপুরে এসব।"

নিতাই এবার মনে মনে বললো, "তাতো বটেই, তা আমাকে আর ভালো লাগবে কেন রে____ ?" কিন্তু মুখে উচ্চারণ না করেই এবার সোজা দিপালীর হাতটা জড়িয়ে ধরে কাছে টানতে চাইলো নিতাই।

এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিলো দিপালী। এবার সোজা হয়ে বসলো নিতাইও। 

"কী ছেলেমানুষী করছো দিপালী? নিজের মতে তো সারাদিন যা খুশী করে বেড়াও, কিচ্ছু বলি না আমি, তার মানে কী আমি কিছু জানি না, না বুঝি না? তা স্বত্তেও সহ্য করি সব। কেন না তুমি আমার বিয়ে করা বৌ। তবু রাতেও তোমার এই ঢলানি আমার সহ্য হয় না একদম। মটকাটা পুরো গরম হয়ে যায়," বলেই দিপালীকে জাপটে ধরে দিপালীর ঠোঁট কামড়ে ধরে নিতাই। বোধহয় একটু বেশীই জোরে ধরেছিলো। সস্তার নেলপালিশ পরা ধারালো নখ দিয়ে নিতাইয়ের ঘাড়ের কাছটা খিমচে ধরলো দিপালী। ছেড়ে দিলো নিতাই দিপালীকে। হিসহিস করে উঠলো দিপালী, "জানোয়ার, শয়তানের বংশ একটা...!"



নিতাইয়ের মাথাটা এবার ঘেঁটে যাচ্ছে, দিপালী আজকাল মাঝেমধ্যেই এই কথাটা বলছে বটে, কিন্তু ঠিক জানা হয় নি, দিপালী কথাটা কেন বলে? অ্যাদ্দিন ধরে নিতাই একতরফাই দিপালীর বাপান্ত করে, সুযোগ পেলেই। কিন্তু দিপালী কখনো মুখ খারাপ করে না, হাজার হোক ছেলেপুলের ঘরকন্না। তা যাইবা হোক, কথাটা জানতেই হচ্ছে। স্বামী স্ত্রীর লড়াই ভালো কথা নয়। পাল্টা গালাগালি খেয়ে নিতাইয়ের টনক নড়ে। মাঝেসাঝে বেশী নেশা চড়ে গেলে ইদানিং দিপালী রাগ করে দু-চারটে চড়চাপাটি লাগিয়ে দেয় বটে, তবে মুখখিস্তি, কক্ষণো নয়। বিষয় একটা কিছু গুরুতর আছে ঠিক। দিপালী যা যা বললো আর নিতাই যা যা শুনলো তা হজম হওয়া যে কারো পক্ষেই কঠিন। 



নিতাইয়ের মা মারা গেছে অনেককাল আগেই। আজকাল নিতাইয়ের বাবা নাকি একটা অল্পবয়সী বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে দুপুরের দিকে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করছে। পাড়ায় ঢিঢি, ছেলেপুলেরাও জানতে বাকী নেই। তবু নিতাই ক্ষীণস্বরে বলতে চেষ্টা করলো, "নিজের আকাঙ্ক্ষা থেকে বাবা যা করছে, করুক গে, মরুক গে। তাতে আমাদের মধ্যে..." এই কথায় যেন আগুনে ঘি পড়লো। নিতাইয়ের কথা শেষ হবার আগেই ফোঁস করে উঠল দিপালী। ঘুরে বসলো ওর মুখোমুখি। বিকৃত কণ্ঠস্বরে, মুখে ভেঙচি কেটে, ব্যাঙ্গাত্মক ঢঙে বললো, "বাবা? কে গা তোমার বাবা? বেজন্মা কোথাকার একটা!" এই বাবাটি আসলে নিতাইয়ের মায়ের দ্বিতীয় স্বামী, তিন চার বছর বয়স থেকে একে বাবা বলেই ডাকে।



এতোক্ষণে যেন সন্ধ্যের তরল তার সম্পূর্ণ আসল প্রভাব বিস্তার করলো নিতাইয়ের ওপর। "কী বললি? কী বললি তুই? কিছু বলি না বলে? খুব বাড় বেড়েছিস না______?" অশ্রাব্য গালাগালি দিয়ে শক্ত করে দিপালীর দু'কাঁধ ধরে ঝাঁকানি দিতে দিতে চিৎকার করে উঠলো মাতাল নিতাই। দিপালীর চুলের মুঠি নিতাইয়ের হাতের টানে। দিপালীর মাথাটা পেছনে হেলে পড়েছে। হয়তো এভাবে বলতে চায় নি দিপালী। নিজের দ্বিধা আর সংস্কার ঠেলে ফেলতে না পেরেই হয়তো এতোটা আক্রমণাত্মক হয়েছিলো দিপালী। কিন্তু এখন আর ফেরা যায় না। হাত তুলে দিপালীও সজোরে ধাক্কা দিল নিতাইকে বুকে। হিসহিসে গলায় বললো, "ঠিক বলেছি, ঠিকই তো বলেছি, বেহেড মাতাল, বেজন্মা একটা, লম্পট শয়তান কোথাকার!"




দিপালীর হাতের ধাক্কায় নিতাইয়ের পাঁজরের কাছটা জ্বালা করে উঠলো। দিপালীর বাঁ-হাতের নোয়ার জোড় মুখটা জোর ঘষে গেছে ওখানে। জায়গাটায় হাত দিলো নিতাই। রক্ত বেরিয়ে এসেছে, চটচটে লাল রক্ত। দিপালীও একটু থতমত খেয়ে গিয়েছিলো, ভাবছিলো আর কিছু বলবে কি, বলবে না। কিন্তু তার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো নিতাই। ছিঁড়ে গেলো দিপালীর নাইটির গলার কাছের লেসের ফাঁস, বুক বরাবর নাইটির আবরণ। নারীর প্রতিরোধ হার মানলো পুরুষের শক্তি আর কামুক রিরংসার কাছে। মদমত্ত এক পুরুষ তার সমাজ স্বীকৃত স্ত্রী, তার একান্ত নিজস্ব নারীটিকে ধর্ষণে প্রবৃত্ত হোলো। ক্রমশঃ নারীর প্রতিরোধ শিথিল হোলো। এবার শিথিলতর হতে হতে ভেঙে পড়লো প্রতিরোধ।



একসময় নিতাইয়ের ভেতরকার উন্মত্ত পুরুষটি টের পেলো, আর কোনো বাধা নয়, কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ নয়। বরং অপমানিত, লাঞ্ছিত হবার পরেও, তার নিজস্ব নারীটি কামাবেগে সক্রিয় সহযোগিতাই করছে। আর নিতাই যেন চূড়ান্ত আনন্দে চেটেপুটে নিচ্ছে দিপালীর সহযোগিতা। দিপালী, মহা ঝগরুটে খাণ্ডারনী দিপালী নিতাইকে যৌনতৃপ্তির সেই শিখরে পৌঁছোতে সাহায্য করছে। নিতাই আর নিতাইয়ের বৌ দিপালী, দু'জনেই অর্গ্যাজম শেষে এখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, শিথিল, পরিতৃপ্ত ঘুমন্ত দম্পতি!! ঝগড়া, গালাগালি, মারামারির অন্তেও, আত্মসম্মান মর্যাদাবোধ বিসর্জন দিয়েও, দাম্পত্য বিনিময়ের যৌনতার সুখে সুখী দম্পতি!!!


(বিষয়: বিসর্জন)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics