Riya Roy

Abstract Fantasy

3  

Riya Roy

Abstract Fantasy

ভাঙনের পরে

ভাঙনের পরে

20 mins
313


দুপুরে র খাওয়ার পর বিছানায় এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো পৃথা। পৃথা এখন প্রেগন্যান্ট। ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে সবে পাতাটা ওল্টাতে যাবে ওমনি মোবাইল বেজে উঠল। পৃথা হাতে নিয়ে দেখলো ওর বান্ধবী লিপিকা। পৃথা ফোন ধরল, ওপাস থেকে লিপিকা বলে উঠলো,

--" কি রে কেমন আছিস? শরীর ঠিক আছে তোর?"

পৃথা--"হ্যাঁ রে ঠিক আছে? তোরা কেমন আছিস তোর মেয়ে কোথায়?

লিপিকা--" আরে ওই জন্য ই তো ফোন করলাম, মেয়ের জন্মদিন সাতে এ পড়ছে এই মাসের শেষের দিকে? ২৯শে তুই আসবি? শুভময় দাকে ও নিয়ে আসিস? সবাই আসছে? কিন্তু তোকে জোর করবো না, তাও বলছি তোর কোনো অসুবিধা হবে না সব বন্ধুরাই তো থাকবো আমরা , খুব মজা হতো।

পৃথা--"ইচ্ছে তো করছে আবার শুভময় কি বলবে? আমার শাশুড়ি আবার মত দেবে কিনা! "

লিপিকা--"সেদিন আমরা সিনেমা গেলাম পাপড়ি, আর এষা ছিলো খুব মিস করছিলাম তোকে।"

পৃথা-- "হুমম...

লিপিকা--" এই জানিস সৌরিন কেও নেমন্তন্ন করলাম, তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো!!"

পৃথা--" তুই কি সব কলেজের ছেলেদের ও নেমন্তন্ন করেছিস।"

লিপিকা -- "হ্যাঁ যাদের সাথে এখন ও যোগাযোগ আছে, কথা হয় তাদের সবাইকেই করছি। তাছাড়া আমার বিয়েতেও তো ওদের ডেকেছিলাম..., "

পৃথা--" সৌরিন কোথায় একটা বাইরে চাকরি করতো না !!, শুনেছিলাম পাপড়ি র কাছে। "

লিপিকা--" এখনও করে উইকেন্ডে বাড়িতে আসে । ও কিন্তু এখনও বিয়েটা করেনি।"

পৃথা--" তোকে কে বললো?"

লিপিকা--"অরিত্র র থেকে জেনেছিলাম। এই জানিস অরিত্র র তো এবার ছেলে হয়েছে ।"

পৃথা--" অরিত্র র সঙ্গে আমারোও মাঝেমধ্যে কথা হয় ওর ছেলের ছবি হোটাসঅ্যাপে আমায় দেখিয়ে ছিলো। বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে। "

লিপিকা--"সৌরিনকে নেমন্তন্ন করেছি বলে তুই রাগ করলি না তো?"

পৃথা-- "আমি কেন রাগ করবো!! , আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা ভেঙেছিল , তা বলে তোদের সঙ্গে তো ওর বন্ধুত্ব আছে। সেটা কেন তোরা নষ্ট করবি।"

লিপিকা--"কি থেকে কি হয়ে গেলো, আমরা সবাই জানতাম তোদের প্রেমটা ভীষণ স্ট্রং অথচ...

কথা শেষ হয়নি, হঠাৎ পৃথা লিপিকা কে বললো তার শাশুড়ি ডাকছে, সে পরে কথা বলবে।

লিপিকা: "ফোন রাখার আগে আবার বললো চেষ্টা করিস পৃথা আসার, শরীরের খেয়াল রাখিস,

তারপর ফোন রেখে দিয়ে পৃথা ওর শাশুড়ির কাছে গেলো।

পরেরদিন সকাল.....

রান্না ঘর থেকে ব্রেকফাস্ট এর থালাটা নিয়ে এসে পৃথা ওর শ্বশুর কে ডাকলো --"বাবা খেয়ে নিন।"

ইদানিং পৃথার শ্বশুর দিনেশবাবু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ছে , সব কিছু কেমন ভুলে যায়। ওদিকে শাশুড়ি কে ওষুধ দেবে বলে ঘরে যাবে ওমনি ওপর থেকে পৃথার স্বামী শুভময় এর ডাক শোনা গেলো।

পৃথা শাশুড়ি কে ওষুধ দিচ্ছে...

পৃথার শাশুড়ি উমা বললো, " শুভ আবার ডাকছে তোমায় দেখ কি হয়েছে!!, সাবধানে সিড়ি দিয়ে উঠো। আমারও সামর্থ নেই তোমায় এই সময় একটু সাহায্য করবো। আচ্ছা ময়না এখনো আসেনি কাজে??।"

পৃথা বললো,-- " ও এসে যাবে আপনি চিন্তা করবেন না।"

পৃথা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে গেলো ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বলল , "এভাবো এখন ডাকলে কেন? বলতো !!, নীচে টেবিলে এসে বলতে পারতে তো!!। সেইতো আবার আমায় নীচে যেতে হবে।

শুভময় পৃথাকে ঘরের ভিতরে এনে একটা চেয়ারে বসালো, তারপর ফ্যানটা জোরে দিয়ে বললো, জল খাবে।"

পৃথা --" আমার অসহ্য লাগছে কিন্তু। ডেকেছো কেন বলো?"

শুভময় -- "আমার সার্ট কই? পাচ্ছিনা!!। কি পরে অফিসে যাবো?।"

পৃথা কৌতুক ছলে বলে উঠলো, "আমি তো ওটা রান্না ঘরে রেখেছি তাই তুমি ডাকলে!! , উহঃ , আলমারি খুলে দেখো, অসহ্য !! তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।"

শুভময়-- " আমি দেখেছি মেরুন টা কোথাও নেই।"

পৃথা-- - " উহঃ কালো সাদা কিছু একটা পরে নিতে ওটা কাচাতে দেওয়া আছে।"

পৃথা চেয়ার থেকে উঠতে যাবে ওমনি শুভময় বলে উঠলো, আরে উঠো না, আমি নীচে গিয়ে সব নিয়ে নেবো। তুমি এখন একটু রেস্ট নিয়ে নাও। পরে নেমো।পৃথাকে কিছু তেই উঠে নীচে নামতে দিলো না।

শুভময় বরাবর খুব কেয়ারিং। আর তার এই কেয়ারিং মনোভাব টাই পৃথার একদিন পছন্দ হয়েছিল তাই এই বিয়েতে সে মত দিয়েছিল। শুভময় এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে চার বছর হতে চললো। তবে পৃথা শুভময়কে সে ভাবে ভালোবাসতে পারেনি। যদিও শুভময় এসবের কিছুই বোঝে নি । পৃথার মনে কোথাও যেন সেই পুরোনো একটা স্মৃতি, সেই সৌরিন কোথাও একটা রয়ে গেছে।

সৌরিন এর সঙ্গে পৃথার একটা প্রেম ছিলো কলেজে। কিন্তু ওদের সম্পর্ক টা ভেঙে যায়। ওদের মাঝে হঠাৎ অন্য একজনের প্রবেশ , এনাক্ষী। এনাক্ষী অন্য কলেজের মেয়ে ছিলো কিন্তু ওরা সবাই একিই টিউটোরিয়াল এ পড়তো । এই এনাক্ষীকে নিয়েই পৃথার সাথে সৌরিনের তুমুল ঝগড়া তারপর দুজনে আলাদা।

এরপর কলেজ শেষ হলো।

একদিন পৃথার বাড়ি থেকে শুভময়ের সঙ্গে সমন্ধ হয়। তারপর বিয়ে । আর এখন পৃথা প্র্যগনেন্ট।পৃথার এরকম সময় শুভময় সন্ধ্যে বেলা অফিস থেকে ফিরে রান্না টাতে সাহায্য করে । শুভময় এর বাবা মা দুজনেই বেশ অসুস্থ। তারা সেরকম কোন কিছু সাহায্য করতে পারেন না।। যদিও পৃথা সেভাবে সুখী হতে পারেনি , মনের মধ্যে তার দ্বন্দ ছিল ঠিকিই। কিন্তু দিব্যি সব কিছু চলছিল, আসতে আসতে পৃথা নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করেছিলো।

আগের দিন লিপিকা র ফোন আর সৌরিন পৃথার খোঁজ নিয়েছে একথা শুনে পৃথা সারাদিন ভীষণ ছটফট করছে, ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে।

তখন বিকেল বারান্দায় জুঁই ফুলের গাছে হাত দিয়ে কটা ফুল ছিঁড়ে ঘরে নিয়ে এলো পৃথা, আর সঙ্গে সঙ্গে এলো একরাস স্মৃতি। সৌরিন একবার পৃথার মাথায় জুঁই এর মালা দিয়ে বলেছিলো। তোমায় এভাবেই দেখতে চাই আমাদের বিয়ের দিন।

পৃথা পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো লিপিকা র মেয়ের জন্মদিন এ সে যাবে।

শুভময় অফিস থেকে ফিরলে তাকে বলে জন্মদিনে যাবার ব্যপারটা কিন্তু শুভময় কিছু তেই রাজি হলো না। পৃথার জেদ যাবেই , পৃথার শাশুড়ি উমা ও এ ব্যাপারে আপত্তি জানলে, পৃথার অভিমান হলো ,

শেষে শুভময় সবটা সামলে পৃথাকে যেতে দিতে চাইলো।

দেখতে দেখতে লিপিকা র মেয়ের জন্মদিন চলে এলো।

পৃথা পৌঁছে গেলো। লিপিকা খুব খুশি। লিপিকার মেয়ে বাবলি ছুটে এসে বললো, "পৃথা মিমি মা বলেছে তোমার বেবি হবে।"

কথাটা শুনেই পৃথা লিপিকা হেসে উঠলো।

পৃথা বাবলি কে আদর করে গিফটটা দিতেই বাবলি পৃথাকে জড়িয়ে আদর করলো।

লিপিকা বললো, "বাবলি তুমি বন্ধু দের সঙ্গে খেলো যাও। "

কিছুসময় পর পৃথাদের বাকি বন্ধুরা এসে পৌঁছায় তাদের সাথে পৃথা কথা বললো কিন্তু পৃথার মন খুজে চললো, সৌরিনকে।

জন্মদিনে র কেক কাটার অনুষ্ঠান শুরু হলো।

লিপিকা, লিপিকা র বর আর মাঝখানে বাবলি বাকি সমস্ত লোকজন তাদের ঘিরে। এরকম সময় সৌরিন এসে উপস্থিত হলো ভীড়ের ফাঁকে পৃথা সৌরিনকে দেখলো। আর সৌরিনের চোখ পৌঁছে গেলো পৃথার দিকে।

জন্মদিনে র হৈচৈ হ্যাপিবার্থদের সুর, চেনা অচেনা মুখ এর হাসি কথা সমস্তটা পেরিয়ে পৃথার দিকে সৌরিন তাকিয়ে রইল আর মুহূর্তের মধ্যে পৃথার কাছেও সব কিছু পেরিয়ে সে সৌরিনকেই দেখলো।

কেক কাটার অনুষ্ঠান শেষ।

সৌরিন সবার সাথেই কথা বলছে। 

পৃথা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। কিছু ক্ষন পরে দু'জনের আবার মুখোমুখি দেখা। খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

তারপর সৌরিন জিগ্গেস করলো, "কেমন আছিস? তোর শরীর কেমন এখন?"

পৃথা উওর দিলো সে ঠিক আছে। তারপর পৃথা প্রশ্ন করলো সৌরন এর কাজ কেমন চলছে।

সৌরিন উওর দিলো।

এরপর সৌরিন আর পৃথা কথপোকথন বেশ গভীরে পৌছালো। পুরানো ভেঙে যাওয়া আলাপটা নতুন করে আবার জেগে উঠলো।

দিনটা পেরিয়ে গেলো.....

পৃথা আর সৌরিনের মধ্যে যে যোগাযোগ বন্ধ ছিল তা এই আলাপের মাধ্যমে আবার নতুন করে শুরু হলো।

প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা রোজ শুভময় অফিস থেকে ফিরে রান্না করছে। পৃথার প্র্যাগনেন্সির জন্য সে রান্নাটা সন্ধ্যা বেলা করে না। তবে পৃথা তাকে হেল্প করে সব কিছু বলে দেয় এমনকি শুভময়ের সঙ্গে যে এতটা সময় পৃথার দেখা হয় না তা তারা এই সময়টাতে কথা বলে , খুব ভালো সময় তারা কাটায়। । যদিও শুভময় একটা রান্নার লোক রাখতে চেয়েছিল কিন্তু পৃথা তখন আপত্তি করেছিলো।

ইদানিং শুভময় হঠাৎ খেয়াল করছে পৃথা আর সেই ভাবে তার সঙ্গে কথা বলছে না। এমনি কি শুভময় যখন রান্না করছে তখন পৃথা দিব্যি ফোনে ব্যস্ত । যেটা এতদিনে কখনও হয়নি। শুভময় এর ভীষণ অবাক লাগছে। শুভময়ের সন্দেহ শুরু হলো সে জানতে পারলো সৌরিন নামে কেউ একজন পৃথাকে ফোন করে।

শুভময় পৃথাকে প্রশ্ন করলো --"সৌরন কে? পৃথা উওরে জানালো এমনি আমার এক বন্ধু কলেজে পড়তো।"

শুভময় এর আগে পৃথাকে তার কলেজের বন্ধু দের সাথে কথা বলতে দেখছে এমনকি কলেজের অনেক পুরুষ বন্ধু ও কথা বলে সেটা শুভময় জানে। তবে সৌরনের সঙ্গে একটু বেশি ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে লক্ষ্য করলো শুভময়। কিন্তু শুভময় কিছু তেই চাইলোনা পৃথার সঙ্গে কোনো রকম অশান্তি বা ঝগড়া তে যেতে তাই শুভময় চুপচাপ থাকলো।

শুভময় মনে মনে ভাবলো তাদের সন্তান আসতে চলেছে এখন যদি পৃথাকে কিছু বলি তবে পৃথার শরীর খারাপ হতে পারে সেটা ঠিক হবে না। তাই শুভময় পৃথার শরীরের কথা ভেবে চুপ করে থাকলো।

সেদিন তখন রাতের বেলা,

পৃথা শুভময়কে বললো, "আমি বাপের বাড়ি যেতে চাই, ওখানে থেকে আমার ডেলিভারি করাবো ভাবছি।

শুভময় বললো, "মানে!! এখানে কি অসুবিধে?, তাছাড়া মা তো বলছিলো তোমার সাধ এর একটা ছোট অনুষ্ঠান করতে । তোমার বাবা মা কে আর আমাদের এখানে আশে পাশে কিছু জনকে নিয়ে। মা তো তোমার মায়ের সাথে কথাও বলেছে। এখন তুমি..."

পৃথা আবার বলে উঠলো, "হ্যাঁ আমিও শুনেছি মা আমাকে ও বলেছে। কিন্তু এসবের কোনো দরকার নেই , আমার ওসব পুরোনো ব্যপার ভালো লাগে না তুমি মাকে বুঝিয়ে বলো আমি বাপের বাড়ি তে যাবো।"

শুভময় বললো, "সে না হয় আমি বললাম কিন্তু ডেলিভারিটা এখানে হলে কি সমস্যা সেটা তো বুঝলাম না।"

পৃথা--" দ্যাখো এখানে সারাদিন এ আমি একটুও বিশ্রাম নিতে পারি না ঠিক ভাবে।"

শুভময়--" কি বলছো এসব তুমি? আমি তো চেয়েছিলাম এইসময়টাতে একজন রান্না করার লোক রাখতে শুধু এখন কেন? আমি আগেও চেয়েছি কিন্তু তুমি তো বলেছিলে তোমার ভালো লাগে রান্না করতে।

হ্যাঁ আমি জানি মা বা বাবা তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারে না কিন্তু আমিতো অফিস থেকে ফিরে তোমায় সাহায্য করি সব কাজে।"

পৃথা অদ্ভুত ভাবে বলে উঠলো,--" আমি কথা বাড়াতে চাই না । তুমি যদি রাজি নাও থাকো আমি তাও ওখানে গিয়ে ই থাকবো এই কটা দিন। আমার এখানে ভালো লাগছেনা।"

পৃথা অজানা স্রোতে এখন ভাসছে। পুরানো প্রেম নতুন ভাবে ফিরে পেয়ে। সব কিছু ভুলে সেই দিকেই ছুটে চলেছে।

সৌরিন সেদিন পৃথা র সঙ্গে সম্পর্ক টা সহজেই নষ্ট করেছিলো এনাক্ষীর জন্য। আজ আবার নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করে বসলো পৃথার সাথে। কয়েকটা দিন এর জন্য ভুলে গেলো। তার বান্ধবী এনাক্ষীর কথা । এনাক্ষীর সঙ্গে বিয়ের কথা সৌরিনের পুরো ফাইনাল তবে এনাক্ষী অফিসে র একটা প্রোজেক্ট এ গেছে মুম্বাই। কাজে ভীষন ব্যস্ত সৌরিনের সাথে যোগাযোগ এখন বন্ধ রেখেছে।

তারমধ্যে সৌরিনের সাথে দেখা পৃথার। পৃথার প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ আর সৌরিন ও ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়লো ।

সকালবেলা ট্যাক্সি করে শুভময় পৃথাকে পৌঁছে দিতে এলো পৃথার বাপের বাড়িতে।

শুভময় ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বললো, "আপনি একটু ওই ব্যাগটা বাড়িতে পৌছে দেবেন।"

ড্রাইভার গেলো।

শুভময় পৃথাকে গাড়ি থেকে নামতে বললো। পৃথা নামলো তারপর শুভময় গাড়িতে উঠে পড়লো।

পৃথা বললো," তুমি ভেতরে আসবে না, বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করবে না।"

শুভময় বললো, "না, তুমি ভিতরে যাও।"

পৃথা বললো, "বাড়িতে যদি জিজ্ঞেস করে কি বলবো?"।

শুভময় -- "সেটা তোমার ব্যাগটা গুছিয়ে আসার সময় ভাবা উচিত ছিলো।"

ড্রাইভার আসলো।শুভময় তাকে গাড়ি চালতে বললো।

পৃথা দাড়িয়ে রইলো।

এই প্রথম বার এতদিনে পৃথার হঠাৎ শুভময় কে আবার নতুন করে অনুভব করলো।

এতদিন বিয়ের মধ্যে শুভময়ের সঙ্গে পৃথার কখনো মনোমালিন্য হয়নি। আর পৃথা রাগ করলেও শুভময় তা বরাবর ঠিক করার চেষ্টা করে এসেছে। কিন্তু আজ এভাবে শুভময় রাগ করে চলে গেলো। সেটা পৃথা মানতে পারলো না। পৃথা ভাবত শুভময় খুব ই সাদামাটা কিন্তু আজকে যেভাবে কথাটা বললো তাতে পৃথা অবাক হলো।

তবু সৌরিনের জন্য শুভময়কে সেদিন গুরুত্ব দিলো না।

কয়েকটা মাস পরে,

পৃথার মা , পৃথার বাবাকে বললো," দ্যাখো আমার বিষয়টা একেবারে ভালো লাগছে না। পৃথা এভাবে এখানে এলো, শুভময় এলো না। ওদের ফোনে কথা হয় বলেও তো মনে হয় না। পৃথা কি কোন ভাবে কিছু ভুল করছে। পৃথার ফোনে ইদানিং সৌরিনের কল আসে আমি দেখেছি।"

পৃথার বাবা, --"সেকি সেই কলেজের ছেলেটা, তার সঙ্গে তো অনেক দিন আগেই সম্পর্ক ভেঙে গেছিলো। এখন কেন তবে। "

পৃথার মা,--" তুমি একবার শুভময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করো। "

পৃথার বাবা,--" আচ্ছা আমি শুভময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।"

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো অনেক গুলো দিন।


তখন সন্ধ্যাবেলা পৃথা বিছানায় বসেছিলো হঠাৎ পৃথার হোয়াটসঅ্যাপ এ একটা ম্যসেজ ঢুকলো লিপিকা পাঠিয়েছে।

পৃথা খুলে দেখলো। এনাক্ষীর সঙ্গে সৌরিন এর ফোটো ।

পৃথা সঙ্গে সঙ্গে লিপিকা জিগ্গেস করলো --এনাক্ষী , এটা কবেকার?

লিপিকা-- বছর খানেক আগের। ওদের বিয়ে তো একেবারে ঠিক হয়ে গেছে।"

মূহুর্তে র মধ্যে পৃথার বিরক্তি শুরু হলো। এত দিন সৌরিন কথা বলছে অথচ এনাক্ষীর সাথে বিয়ের কথাটা একবার ও বলেনি।

সৌরিন তাকে শুধুই পুরনো ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে এই কয়েকটা দিন তাকে পুরোনো কলেজ এর দিন গুলো মনে করিয়ে দিয়েছে। পৃথা প্রভাবিত হয়ে সৌরিনের দিকে ছুটেছিল। 

পৃথা তড়িঘড়ি করে লিপিকাকে ফোন করলো ।

লিপিকা ফোন তুলে--" হ্যাঁরে বল কি হলো?"

পৃথা --"তুই এইকথাটা কি করে জানলি?"

লিপিকা--" আরে বাবা আমি কেন বাকিরা ও সবাই জানে ।সোস্যাল মিডিয়া য় পোস্ট করেছিলো আর তাছাড়া আমার সাথে তো ওর কথা হয় আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। আসলে তোদের মধ্যে প্রব্লেম হয়েছিল। তাই তুই তো ফ্রেন্ড লিস্ট এ নেই তাই তুই জানিস না।"

পৃথা :-- "হুমমম, ....কবে বিয়ে হবে?"

লিপিকা :-- "শুনেছিলাম এনাক্ষী কি সব কাজে বাইরে গেছে ফিরে আসলেই হবে। লিপিকা আবার বললো, কি হয়েছে রে তোর গলা টা কেমন লাগছে। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবি তুই কি এখন ও সৌরিনকে ভালোবাসিস? ওর বিয়ে হচ্ছে বলে তোর কি খারাপ লাগছে?

পৃথার ভীষণ শরীর অসুস্থ লাগতে শুরু করলো ওর যন্ত্রনা শুরু হলো। ও তাড়াতাড়ি কোনো কথা না বলে লিপিকাকে বলবো "আমি এখন রাখছি।"

লিপিকা --"এই পৃথা শোন...

ততক্ষণে পৃথা ফোন ছেড়ে দিয়ে ছে।

পৃথার চিৎকার শুনে ওর মা বাবা ওকে নিয়ে হসপিটালে গেলো।

লিপিকা অনেক বার পৃথাকে ফোনে চেষ্টা করলো কিন্তু না পেয়ে ওর দুঃচিন্তায় শুরু হলো।

ওদিকে পৃথার বাবা শুভময়কে ফোনে না পেয়ে শুভময়ের মাকে ফোন করে সব জানালো। শুভময়ের মা বললো, "বউমার জন্য চিন্তা য় থাকবো আপনি তাড়াতাড়ি খবর জানাবেন। আমি শুভময় র সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ওকে পাঠাচ্ছি ওখানে।"

এদিকে লিপিকাকে বিচলিত দেখে

লিপিকা র হাজবেন্ড বললো --"তুমি বরং শুভময়দার ফোনে করো , পৃথার তো এডভান্স সময় তাই হয়তো..

লিপিকা তাই করলো।

শুভময় বাইক চালিয়ে অফিস থেকে ফিরছে। পৃথার খবর ইদানিং সে পৃথার বাবার কাছ থেকে পেলেও পৃথার সাথে মান অভিমান চলছে। দুজনের কথা একরকম বন্ধ ই এক দুবার ওই হোটাসঅ্যাপে চ্যাটেএ। তা ও সে রকম নয়।

লিপিকার ফোন বাজল, বাইকটা থামিয়ে শুভময় রাস্তায় নেমে ফোনটা ধরলো। লিপিকা শুভময়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝাতে পারলো, পৃথার সঙ্গে শুভময়ের সম্পর্কে সমস্যা চলছে আর তার কারন সৌরিন।

শুভময় লিপিকা র কাছে খবর পেয়ে বাইক নিয়ে সোজা পৃথার বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে হাসপাতালে। হাসপাতালে ততক্ষণে পৃথার ডেলিভারি হয়েছে। শুভময় নিজের ছেলে কে দেখে পৃথার প্রতি সমস্ত অভিমান সরে গেলো। কিন্তু পৃথা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।

শুভময় লিপিকাকে ফোনে জানালো ওদের ছেলে হওয়ার খবরটা।

লিপিকা মন থেকে চাইলো পৃথার সঙ্গে শুভময়ের সম্পর্কটা সব ঠিকঠাক হোক।

আর তাই সৌরিনকে লিপিকা ফোনে বললো," দ্যাখ সৌরিন তুই এমনটা কেন করছিস ?পৃথার সংসার টা প্লিস ভাঙিস না?"।

সৌরিন--" পৃথা আমাকে ভালোবাসে আর আমি ওর পাশে আছি। "

লিপিকার বোঝাতে চেষ্টা করলো, এনাক্ষীর কথা তুলল, কিন্তু সৌরিন কোনো কথাই শুনলো না ।

উল্টে পৃথার ছেলে হওয়ার খবরটা পেয়ে হাসপাতালে চলে এলো। ভীষন রকম একটা অশান্তি সৃষ্টি হলো। পৃথার বাবা মা কেউ সৌরিনকে পছন্দ করলো না। কিন্তু পৃথার আশকারাতে সৌরিন ঢুকে পড়লো। সৌরিনকে দেখে পৃথা খানিকটা অভিমান দেখালেও। সৌরিন তাকে বোঝালো এনাক্ষী নয় সে গোটা জীবন পৃথাকেই ভালোবেসে এসছে। পৃথার জন্য সে এতদিন ভেবেছে। পৃথাও সৌরিনের কথায় আবেগ এ ভাসতে লাগল।

এদিকে ধীরে ধীরে  শুভময় বুঝতে পারলো পৃথার সঙ্গে তার সম্পর্ক টা ভেঙেছে। শুভময় পৃথাকে ভীষণ ভালোবাসতো। সে কখনো ই কোনো অশান্তি চাইলো না ।

পৃথার বাবা মা পৃথার এই অসভ্যতা মেনে নিতে রাজি নয়।

শুভময় ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে এলো ।

কিছু দিনের মধ্যেই পৃথার সঙ্গে শুভময়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হলো। শুভময় চাইলেই তার সন্তান কে দাবি করে পৃথার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করতে পারতো। পৃথার বাবা মা এবং পৃথার বান্ধবী লিপিকা সবাই শুভময়ের পাশে ছিলো।

কিন্তু শুভময় বললো, "আমি চাইনা আমার ছেলে তার মা র থেকে আলাদা থাকুক। পৃথার যা খুশি তাই করুক। আমি চাই ও ভালো থাকুক।"

কেটে গেল তিনটে বছর..

পৃথার সাথে এখন সৌরিনের সংসার।

পৃথার সাথে তার বাবা মা কারোর কোনো যোগাযোগ নেই।

ওদিকে লিপিকাও আর সম্পর্ক রাখতে চায়নি পৃথা এবং সৌরিনের সাথে।

শুভময় এখন একাই বাড়ি অফিস সামলাচ্ছে।

শুভময়ের মা এই ঘটনার পর আরো বেশী অসুস্থ, শয্যাশায়ী। শুভময় এর বাবা তো আগেই অসুস্থ ছিলেন।

ওদিকে পৃথার বাবা মা এখন শুভময়ের উপর নির্ভর। পৃথার এই অদ্ভুত আচরণে, পৃথার মাও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

শুভময় দুই বাড়িতে এই সব অসুস্থ মানুষ দের দায়িত্ব পালন করে চলেছ।

এভাবে দিন গুলো চলছিলো।

পৃথা খুব ভালো সৌরিনের সাথে সংসার করছিল। শুভময়ের সন্তান সৌরিনের কাছে বড়ো হচ্ছে। পৃথার ছেলের ডাকনাম রেখেছে টুবলু । টুবলু সৌরিনের সম্পর্ক খুবই ভালো, টুবলু সৌরিনকে আঙ্কেল বলে ডাকে।

ঠিকই সব চলছিল।

হঠাৎ কিছু দিনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন এলো।

। এনাক্ষী মুম্বাই থেকে তার কাজ সেরে ফিরে এলো।

সৌরিন তাকে বিয়ে করবে না জানিয়েছিলো, সেটা ফোনে আগেই জানিয়ে ছিলো। আর পৃথাকে বিয়ে করেছে সেটাও এনাক্ষী জেনেছে, সৌরিনের পরিবারের কাছ থেকে।

সৌরিনের পরিবার পৃথাকে মেনে নেয়নি,

সৌরিন পৃথার বিয়েটা তারা মানতে রাজি নয়। সৌরিন পৃথাকে নিয়ে আলাদা   ফ্ল্যাটে  থাকে।

এনাক্ষী সৌরিনের সাথে দেখা করতে চায় ।

এনাক্ষী সৌরিনের সাথে দেখা করে বলে, "সৌরিন তুমি আমাকে বিয়ে না করে পৃথাকে কেন বিয়ে করলে?"

সৌরিন-" পৃথা কে কলেজ থেকেই ভালোবাসতাম মাঝে ভুলবোঝাবুঝি র জন্য ওর সাথে অন্য একজনের বিয়ে হয়েছিল কিন্তু এখন আমরা খুব ভালো আছি।"

এনাক্ষী, পৃথার সাথে সৌরিনের এই সংসারটা কিছু তেই মানতে পারলো না। এনাক্ষী মনের দিক থেকে বিরক্ত ছিলো, সৌরিন তাকে ঠকিয়েছে , আর সেটা ওই পৃথার জন্য ,এটা এনাক্ষী যতবার ভাবলো ততবারই তার মনে মনে রাগ হতে শুরু করলো।

এনাক্ষী সৌরিন কে বললো," দ্যাখো পৃথার ছেলে তো তোমার ছেলে নয় তাই না!! ওটা ওর আগের স্বামীর। নিজের সন্তান কিন্তু নিজেরই হয় , রক্তের সম্পর্ক এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে।"

এনাক্ষী চেষ্টা করলো সৌরিনকে কিছু ভুল ধারণা দেওয়ার।

এনাক্ষীর কথাগুলো নিয়ে সৌরিন ভাবতে শুরু করলো। শুধু এনাক্ষী নয় সৌরিনের বাড়ির লোকজন ও এরপর এই কথাই বলতে শুরু করল। এনাক্ষীর সঙ্গে সৌরিন এর পরিবারের খুব ভালো যোগাযোগ তারা এনাক্ষীকেই পছন্দ করে তাই পৃথা এবং তার সন্তান এর জন্য সৌরিনের পরিবারের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

এরপর শুরু হল পৃথার সাথে সৌরিনের সমস্যা।সৌরিন চাইলো ওদের একটা সন্তান হোক। কিন্তু পৃথা এ ব্যাপারে সায় দিলো না।

একটা চাপা অশান্তি শুরু হয়ে গেলো ওদের মধ্যে।

সৌরিন টুবলুর বিষয়ে আর সেভাবে দেখছে না। এখন যেনো সৌরিন টুবলুকে সহ্যই করতে পারে না। টুবলু সৌরিনের কাছাকাছি থাকলে বিরক্ত বোধ করে।

পৃথা সৌরিনের এই পরিবর্তন মানতেই পারছিলো না।

একদিন বিকেলে সৌরিন এনাক্ষীর সঙ্গে আবার দেখা করতে এলো।

সৌরিনকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে।

এনাক্ষী প্রশ্ন করলো , "কি হয়েছে তোমার, ?কোনো সমস্যায় পড়েছো।"

সৌরিন বললো, "আমি পৃথার কাছে আমাদের সন্তান আসুক একথা বলেছিলাম। কিন্তু ও রাজিই হলো না।

এনাক্ষী এই কথার সুযোগ নিলো সে সৌরিনকে আরো উসকে দিয়ে বললো," আমিতো জানতাম পৃথা তোমাকে সেভাবে ভালোবাসে না ভালোবাসলে কি এরকম করে কেউ!! তাছাড়া টুবলুতো ওর আগের হাজবেন্ড এর সন্তান , দ্যাখো সৌরিন, আমার মনে হচ্ছে যতই তোমার সঙ্গে কলেজে প্রেম হোক ওতো অন্য একজনের সঙ্গে অনেক গুলো দিন সংসার করেছে তাই হয়তো তার প্রতি ওর একটা ...

সৌরিন বললো," কিন্তু পৃথা তো ...

এনাক্ষী কথাটা থামিয়ে বলে উঠলো, "আচ্ছা পৃথা যখন ছিল না তোমার কি আমার প্রতি কোনো ফিলিং তৈরি হয়নি !! বলো?? , তুমি আর আমিতো ডিসাইড করেছিলাম বিয়ে করবো বলো করিনি??।

সৌরিন বলে উঠলো, "হ্যাঁ সেটা তো ঠিকিই ।

সৌরিন এনাক্ষির চোখে চোখ রাখলো এনাক্ষী হাসলো, নিজের হাতটা সৌরিনের হাতে দিতেই সৌরিন চঞ্চল হয়ে পড়লো। সেদিন বিকেলটা এভাবেই পেরিয়ে গেলো।

কয়েকটা দিন পরে...

পৃথা খেয়াল করছে ইদানিং সৌরিন এনাক্ষির সঙ্গে ফোনে কথা বলে, খুব বেশি।

টুবলুকে তেমন একটা আদর করে না।

তখন সকালবেলা টুবলু খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছে। সৌরিন খবরের কাগজ পড়ছিলো। টুবলু সৌরিনের কাছে যেতেই বললো, ওদিকে যাও.. বিরক্ত করো না,

টুবলু কাগজ টা ধরে টানলো।

সৌরিন রেগে গিয়ে টুবলুর খেলনা গাড়ি টা ছুড়ে দিলো।

দিতেই টুবলু কাঁদতে কাঁদতে অন্যঘরে চলে গেলো। গাড়িতে গিয়ে লাগলো পৃথার গায়ে পৃথা তখন ঘরে চা নিয়ে আসছিলো।

পৃথা বলে উঠলো, "তুমি এভাবে ওর সঙ্গে কেন করলে?

সৌরিন বললো, "আমি তো বারন করলাম ওতো শুনছে না !!তাই."

পৃথা বললো, "ওতো ছোটো ওকি বোঝে যে এই রকম করলে তুমি?"

সৌরিন বললো, "সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে তুমি ওকে গিয়ে থামাও তাহলেই তো মিটে গেলো।"

পৃথা বললো, "তুমি ও থামাতে পারতে?"

সৌরিনের ফোনটা বেজে উঠলো, এনাক্ষীর ফোন এসছে। সৌরিন ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

পৃথা যেনো পুরোনো দিনের ঘটনা গুলো দেখতে পাচ্ছে, ঠিক যে ভাবে শুভময়ের সঙ্গে সংসার করার সময় পৃথার কাছে সৌরিনের ফোন আসতো আজ ঠিক তেমনি এনাক্ষীর ফোনটা রোজ আসে।

পৃথার মনে র মধ্যে অসম্ভব একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে । শুভময়কে ভালোবাসতে পারেনি সে তাই সেদিন পুরোনো প্রেমের দিকে দূর্বল হয়েছিল কিন্তু শুভময় তাকে যেভাবে ভালোবাসেছিলো তা সৌরিন কোনো দিনই পারেনি। কলেজে পড়ার সময় ও  সৌরিন পারেনি আর আজ সংসার করতে এসেও না, পৃথা বুঝতে পারছে সৌরিন নিজের খেয়াল খুশি তে চলে।

সৌরিন ইদানিং সন্তান চাইলে ও পৃথা কিছু তেই চায় না। তাছাড়া টুবলু কেও সৌরিন সেভাবে এখন পছন্দ করে না।

পৃথা এসব নিয়ে দিন রাত ভাবছে। ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়ছে পৃথা। পৃথা ভাবলো একটা চাকরি র চেষ্টা করবে । আর টুবলুকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। পৃথা রোজ চাকরির খবর খুঁজতে শুরু করলো। আর একটা দুটো এপ্লিকেশন ও করলো।

দিন যত এগোচ্ছে পৃথা র চিন্তা বাড়ছে , সৌরিনের সাথে অশান্তি লেগেই যাচ্ছে। টুবলুকে নিয়ে কিভাবে গোটা জীবন কাটাবে, পৃথা কিছু ভেবেই পায় না। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লো। একদিন বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। মাথায় আঘাত, টুবলুর কান্নার শব্দ পেয়ে সৌরিন এসে দেখলো পৃথা অজ্ঞান । মাথাও ফেটেছে পড়ে যাওয়ার জন্য।

তারপর পৃথাকে নিয়ে হাসপাতালে।

কিছু দিন পর পৃথা সুস্থ হয়ে উঠলো। কিন্তু সে সৌরিনের সাথে ফিরতে রাজি হলো না । পৃথা গেলো লিপিকার কাছে। পৃথার অসুস্থতা, সঙ্গে ছোট্ট টুবলু সব মিলিয়ে লিপিকা পৃথাকে থাকতে দিলো। পৃথার কাছে সবটা শুনলো।

সৌরিন এসে পৃথাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে পৃথা রাজি হলো না।

লিপিকা বললো, "আমি জানি না তোদের কি হয়েছে তবে  সৌরিন তুই যে দায়ী সেটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবি।"

সৌরিন বললো," সব সংসারে অশান্তি হয় তাই বলে পৃথা যদি এখন জেদ করে আমার কিছু করার নেই।"

লিপিকা -- "পৃথা সব কিছু কে ফেলে তোর কাছে গেছিলো আর আজ তোর অদ্ভুত ব্যবহার আমার অবাক লাগছে , তুই এনাক্ষীকে পেয়ে আবার পৃথার সঙ্গে , দ্যাখ তখন তো কলেজ ছিলো তোর বয়স ও কম ছিলো কিন্তু এখন এই দায়িত্ব জ্ঞানহীন এর মতো কাজ টা করছিস কেন?"

সৌরিন -- "এনাক্ষী ফিরে এসেছে আমার সঙ্গে কথা বলছে , দেখা করছে কিন্তু সেটা নিয়ে পৃথা যদি অহেতুক সন্দেহ করে তাহলে সত্যি কিছু বলার নেই।"

পৃথা অসুস্থ অবস্থায় উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, "আর টুবলুর সাথে দিনের পর দিন তুমি খারাপ ব্যবহার করো নি।?"

লিপিকা -- "সৌরিন তুই টুবলুর সাথে কেন করেছিস এরকম ও তো ছোট থেকে তোকেই  দেখছে।"

সৌরিন -- "কিন্তু আমিতো ওর বাবা নই তাই না!!"

লিপিকা -- "সেই কথাটা পৃথাকে বিয়ে র সময় তোর মনে ছিলো না। কি রে বল?

সৌরিন--" আমি পৃথার কাছে শুধু আমাদের একটা সন্তান চেয়েছিলাম সেটাতে ও আপত্তি করলো কেন, ওকে জিজ্ঞেস কর ? তারমানে ও শুভময় কেই আজ ও কোথাও একটা ভালোবাসে আমাকে পারেনি ভালোবাসতে।"

লিপিকা-- "তোকে আর আমার কিছু বলার নেই, সন্তান চাওয়াটা ভুল নয় কিন্তু তোর মানসিকতা অনেক টাই ভুল আর যেটা পৃথাকে ভয় পাইয়েচ্ছে?"

পৃথা বলে উঠলো, "ঠিক বলেছিস, ওর আচরনে আমার বার বারই মনে হয়েছে ওর আমার সন্তান এলে , সৌরিন টুবলুকে আরোও বেশি অবহেলা করবে আর সেই ভয়ে আমি চাই নি।"

কথার পিঠে কথা বাড়লো। শেষে পৃথা সৌরিনকে বললো, "দ্যাখো তুমি আসলে এনাক্ষী না থাকার সময় টুকু আমার সঙ্গে একটা সংসার সংসার খেলা করতে চেয়েছিলে, আসলে তো সেই এনাক্ষী ...!!,

সেদিনও ছিলো আর আজ ও।

আমিই বোকার মতো তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে ভাঙনের পথে এগিয়ে গেলাম।

সৌরিন বললো, " আর একবার প্লিজ তুমি.."

পৃথা সৌরিনকে থামিয়ে আমি তো আরোও একবারই এলাম সব কিছু ছেড়ে , এমনকি এক রকম শুভময়কে ঠকিয়ে বলা যায়, ওর কোনো দোষ ছিলো না, আমিতো আমার সাজানো বাগানটা নষ্ট করে শুধু তোমাকে পাবো বলে ছুটে এলাম।

কিন্তু আমি ভুল করে ছিলাম।"

সৌরিন ফিরে গেলো, পৃথার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হলো।

কেটেছে আরো অনেক টা সময় । লিপিকার বাড়িতে পৃথা আছে, পৃথা সবটাই শুনেছে, তার বাবা মা অসুস্থ, শুভময় তাদের কাছে এসে দেখাশোনা করে। সবটাই শুনেছে।

ওদিকে পৃথার একটা চাকরি হয়ে গেলো। শহর থেকে অনেকটা দূরে।

পৃথা লিপিকাকে বললো," আমি চলেই যাবো ভাবছি, শুধু একটা কাজ করে যেতে চাই তুই প্লিজ হেল্প কর।"

লিপিকা- "কি কাজ আর কেন তুই ওত দূরে চাকরি নিয়ে যাবি , এখানে থাকলে কি হবে?"

পৃথা - --"না না তোদের সংসারে আমি উটকো ঝামেলা র মতো, তোর শ্বশুরবাড়ি র লোক জন যখন দেখবে, আত্মীয়রা যখন তোকে প্রশ্ন করবে তখনই তোরোও দেখবি বিরক্ত লাগবে।"

লিপিকা- -"দূর পাগল কিছু হবে না। টুবলুকে এখানের স্কুলেই ভর্তি করে দে, বাবলীর সাথে কি সুন্দর থাকে ওরা। "

পৃথা -- "না রে যেটা বলছিলাম শোন তুই টুবলুকে শুভময়ের কাছে পৌঁছে দিবি আর আমি তারপর নিশ্চিন্তে যেতে পারবো। "

লিপিকা-- "কি বলছিস? তুই কেন শুভময় দার কাছে নিজে গিয়ে বলতে পারবি না।" 

পৃথা -- "আমি যা করেছি ও হয়তো কোনো দিন ক্ষমা করবে না, টুবলু ঠিক জায়গায় থাক। তাহলেই আমি নিশ্চিন্ত , যে ভুলটা করে ছিলাম সেটা ঠিক করতে চাই , তুই কথা দে টুবলুকে ওর বাবার কাছে ওর নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিবি।"

লিপিকা-- "আর শুভময় দা যদি জিজ্ঞেস করে তোর কথা তখন কি বলবো?"

পৃথা -- যেটা সত্যি সবটাই আর আমি তো চাকরিতে জয়েন করছি কিছু দিনের মধ্যেই।

সেদিন সন্ধ্যায়,

পৃথা টুবলুকে বললো, "শোনো তুমি তোমার পাপার বাড়ি যাবে লিপিকা অ্যান্টির সাথে, খুব ভালো হয়ে থাকবে।"

টুবলু স্বভাবত খুব শান্ত ছেলে, মায়ের কথা শোনে , এতদিন আঙ্কেলকে চিনত এখন পাপা র কথা শুনে

টুবলু বলে উঠলো, -- মা.. পাপা কেমন? আঙ্কেল মতো কি আমাকে বকবে?"

পৃথা --" না ..তোমায় খুব ভালোবাসবে?"

টুবলু ভাবলো সে হয়তো বেড়াতে যাচ্ছে কিছু ক্ষন পরে আবার ফিরে আসবে তার মায়ের কাছে কিন্তু পৃথা যে তাকে একেবারে তার বাবার কাছ এ পাঠিয়ে দিচ্ছে আর নিজে দূরে চলে যাচ্ছে সেটা তখনও বোঝেনি। তাই পাপার কাছে যাবে বলে খুব খুশি হয়ে গেলো।

কয়েকদিন পরে সকালে লিপিকা টুবলুকে নিয়ে শুভময়ের কাছে গেলো এদিকে পৃথা তারপরই চলে এলো স্টেশানে। চাকরি যেখানে পেয়েছে সেখানে যাবে বলে।

পৃথার সব কথা লিপিকা শুভময়কে জানালো। শুভময় ওর ছেলে কে পেয়ে খুশিতে ভরে উঠল।

লিপিকা চলে এসে দেখলো। পৃথা নেই। পৃথাকে ফোন করলে বন্ধ বলছে। লিপিকা চিন্তা য় পড়লো।

পৃথা একটা চিঠি লিখে গেছিলো ।

পৃথার চিঠিতে লিখেছিলো , "আমি আজি চললাম পরে ফোনে যোগাযোগ করবো। আমার ট্রেন সন্ধ্যেবেলা ।"

লিপিকা ভীষণ ভাবে চিন্তিত

এদিকে শুভময়ের সঙ্গে টুবলুর দারুন সময় কাটছে। কিন্তু বিকেল হয়ে গেছে যখনই তখন ই টুবলু ওর মা র জন্য কাঁদতে শুরু করে।

শুভময়ের মা অসুস্থ অবস্থায় টুবলুর আসার খবর পেলেও তেমন খুশি ছিলেন না। এখন টুবলুর কান্নার শব্দ পেয়ে শুভময় কে ডেকে বলে, "এতটুকু একটা ছেলে মা ছাড়া কি থাকবে? তারচেয়ে তুই বউমাকে ফিরিয়ে আন। অনন্ত ওই ছেলেটা র কথা ভেবে

শুভময় --"মা তুমি এ কথা বলছো? পৃথা তো আমাকে পছন্দ ই করে না তাহলে .. তাছাড়া

শুভময়ের উমা--" বউমার ভুলটা তুই ক্ষমা করে দে, সংসারটা কে জোড়া লাগা অন্তত মরার আগে এটুকু দেখে যেতে চাই।"

শুভময় টুবলুকে নিয়ে লিপিকা র কাছে গেলো, সেখানে গিয়ে জানতে পারলো পৃথা সেখান থেকে চলে গেছে। পৃথা কে ফিরিয়ে আনতে ওরা স্টেশনেএ গেলো স্টেশনে পৃথা একা বসে ছিলো । ট্রেন তখন ও আসেনি। লিপিকা টুবলুকে কোলে নিয়ে দূরে দাড়িয়ে রইল। আর শুভময় পৃথার কাছে।

পৃথা শুভময়কে দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো। পৃথাকে শুভময় বললো," তুমি সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলে। কিন্তু কেন?"

পৃথা --" টুবুলুকে তার যোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পেরে আমি নিশ্চিন্ত তাই .".

শুভময় --" টুবলু তার মাকে ছাড়া কেমন করে থাকবে ? জানি তুমি আমাকে পছন্দ করোনা কিন্তু টুবলুর জন্য.."

পৃথা বললো, --" আমি যে ভুল করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই , আমার একটা ভুল সিদ্ধান্ত দুটো পরিবারের উপর যা যা হলো, আমার জন্য ই এই ভাঙন, এই জটিলতা,  তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার অবস্থা ও আমার নেই। তাইতো লিপিকা কে দিয়ে পাঠিয়ে ছিলাম টুবলুকে তোমার কাছে । পারলে আমায় ক্ষমা করো। আমি তোমার জীবনে শুধু ই অশান্তি র কারন। "

শুভময় পৃথার হাতে হাত রেখে

  টুবলুর জন্য এই ভাঙনটা আজ জোড়া লাগিয়ে তুমি যদি ফিরে আসো এটা বলার জন্য ই আমি এসেছি।


শেষ পর্যন্ত আবার শুভময়ের সাথে পৃথা নতুন করে সবটা শুরু করার জন্য ফিরে এলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract