Himansu Chaudhuri

Others

2  

Himansu Chaudhuri

Others

উজানভাসি

উজানভাসি

3 mins
1.4K


যদিও আজ রাত পরমার জীবনে পরম সুখের একটি রাত বলে ধার্য্য হতে পারতো, যদিও এর পরের প্রতি প্রতিটি রাত সে এই প্রথম রাত, যা সে ও সুজন একসাথে কাটাবে, বিবাহের চিরাচরিত সামাজিক রীতিনীতি মেনে বা উদযাপন করে। তার স্মৃতি মনে বা শরীরে অক্ষয় করে নিয়ে জাবর কাটতে কাটতে অথবা কখনো বা সেই স্মৃতি উগরে দেবার প্রবল বাসনা নিয়েও সেই বমনেচ্ছা সংবরণ করে গোটা একটা জীবন সমঝোতা করে চলার পাথেয় হিসেবে তার মনের মানিপার্সে ভরে দিতে পারতো। তবুও, সেই অনুপম বা সাপোজেডলি স্বর্গীয় সুখের রভস থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে। সে কি আসলেই নিজেকে বঞ্চিত করছে, নাকি এই আপাত বঞ্চনার ছদ্মবেশে সে আসলে সুজনকে জানাতে চাইছে যে রঞ্জনাকে অমার্জনীয় ভাবে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াটা সে, অর্থাৎ পরমা ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কর্ম বলে মনে করে, এবং ভবিষতেও মনে করবে। কেননা, রঞ্জনা ভালোবেসে ছিলো অথচ সুজন সেই ভালোবাসা দুপায়ে দলে চলে আসে, যেমন লোকে পিপীলিকা ছেঁকে ধরা মিষ্টি বাঁচাতে গিয়ে দুচারটে পিঁপড়া চড়থাপ্পড় দিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেয়। ভালোবাসা অবশ্যই কোন বাধ্যবাধকতা নয় যে, রঞ্জনা ভালোবাসলেই সুজনকে পালটা রঞ্জনাকে ভালোবাসতেই হবে, বা, নীলামের ডাকের মতো এই ভালোবাসার মাত্রা একে অপরের জন্য বাড়তেই থাকবে। অথবা ভালোবাসা এমন কিছু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও নয় যে, একবার ভালোবাসলেই একে অপরকে চিরদিনই ভালোবেসে যেতে হবে, না বাসলেই পাপ হবে! তবে পরমা অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, মিথ্যে মিথ্যে 'ভালোবাসি' বলে কারো ভালোবাসা অর্জন করে তাকে ব্যবহার করে তারপরে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াটা ভয়ঙ্কর অন্যায্য। 


প্রশ্ন উঠতেই পারে, বা ওঠা আশ্চর্যকথা নয় যে, তাহলে, পরমা এই বিবাহে রাজী হলো কেন। আসলেই পরমা বিবাহের কথা চলার সময় এই রঞ্জনা সুজন সম্পর্কিত ব্যাপারটা সম্বন্ধে অনবহিত ছিলো। রঞ্জনা ওর কলেজবেলার বন্ধু হলেও, মাঝে কিছুদিন যোগাযোগ না থাকার সময়েই এই গোলমালটা বাধিয়ে বসেছে রঞ্জনা। পরমা এদিকে মা বাবার বাধ্য মেয়ের মতো পিসীর এনে দেওয়া সম্পর্কে হ্যাঁ বলে বিয়েতে বসছে। বস্তুত, হ্যাঁ বলবেই বা না কেন, আপাতদৃষ্টিতে, সুজনের মধ্যে প্রত্যাখ্যানযোগ্য বিশেষ কিছুই না থাকার ফলে পরমা রাজী হতে দ্বিধাবোধ করে নি। 


বিয়ের কার্ড নিয়ে অনাগত ভবিষ্যৎ এর খুশি খুশি কল্পনায় মজে থাকা পরমা যখন রঞ্জনাকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে দেখলো যে রঞ্জনা মন খারাপের আঁধারে ডুবে আছে। তখন, ছোটবেলা থেকেই মনের কথা আদানপ্রদান হেতু গড়ে ওঠা নিবিড় সখ্যতার কারণে রঞ্জনার না বলা কথাও বুঝে নেওয়ার অভ্যস্ততায় ও উপলব্ধি করে রঞ্জনার মানসিক টানাপোড়েন। তারপর যখন প্রিয়সখী তার মন উজাড় করে সব বলে পরমাকে, তখন পরমা বুঝতে পারে এবং পরে রঞ্জনার ফোনে ছবি দেখে নিশ্চিত হয় যে, তার সম্ভাব্য সুখ ও রঞ্জনার অসুখের কারণ এক। কিন্তু দুটোই পরস্পরজড়িত হওয়ার কারণে পরস্পরবিরোধী বা মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ হতে বাধ্য এবং রঞ্জনার যেমন অসুখ থেকে সুখে ফিরে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই। তেমনই, পরমার নিজেরও আর সুখী হওয়ার কোন উপায় রইলো না। সে যেন এক ঢালু পিচ্ছিল পথে ব্রেকফেল হওয়া এক গাড়ির সওয়ারী। গাড়ি থামিয়ে বা ঘুরিয়ে ফের ঐ সুখ-পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার তার কোন সম্ভাবনাই নেই। কোনরকমভাবে গাড়ি যদি রাস্তায় রাখা যায়, তাও মঙ্গল! না হলে দুপাশের অতল আঁধার খাদে পড়ে মুছে যেতে হবে।


কিন্তু তাও পরমার বোধহয় ঘটনার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি প্রতিরোধ করার কোন উপায় ছিলো না। প্রায় সমাপ্ত একটি প্রক্রিয়া যা বন্ধ হলে পরমার বাবা মার মানসিক ও সামাজিক যে অবমাননা হবে, তা কি তারা ডিজার্ভ করে? পরমা নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর পায় না। আর তাছাড়া, সে নিশ্চিত জানে যে এই শঠ কপট লোকটি, যদিও তার নাম সুজন, আসলে তাকে কুজন বলাই যায়। সে তাকে গ্রহণ করুক বা না করুক তাতে রঞ্জনার আর কিছুই যায় আসে না। জ্যা মুক্ত তীরকে যেমন আর ফেরানো যায় না, সেরকমই বিশ্বাসহন্তা প্রেমিককেও আর কদাচ ফেরানো উচিৎ নয়। 


তবে তার কৃতকর্মের শাস্তি কি সে পাবে না? পরমা স্থির করেই রেখেছে যে সে বিবাহ এবং তৎপরবর্তী প্রক্রিয়াটির মধ্যেই সেই শাস্তি তাকে সে নিজেই দেবে।এক অনিচ্ছুক স্ত্রীকে সারা জীবন বহন করার শাস্তিই যথেষ্ট সুজনের জন্য।

আজ রাতে আসলে পরমার না লেখা ডাইরির ছেঁড়া পাতায় লেখা হবে তার অমোঘ জীবন দর্শন।


মধ্যরাত্রি।

ইতস্তত ছড়ানো চন্দ্ররেণু,

ধারালো ছোরার মতো নিস্তব্ধে কাটছে

অন্ধকারের বর্ণ; বিশাল শূণ্যতা রহস্যময়

গুহার ভিতরে অচেনার মতো অপেক্ষা করে আছে,

বা খাপ পেতে আছে, যে কোন মূল্যেই উদযাপিত

হবে নতুন জন্মের অশুভক্ষণ ;যেখানে ঘুম নেই,

বিষাদের জিহ্বা চেটে নেয় অনন্তব্যাপী আঁধার শুধু।।


-সমাপ্ত-


Rate this content
Log in