শিক্ষাদীক্ষা
শিক্ষাদীক্ষা


মানসী মহা মুশকিলে পড়িয়াছে। অবশ্য সে মুশকিলে না পড়িলেই ভাবনার কারণ হইতো। কারণ, মানসী নবোঢ়া, মানসী সুন্দরী, মানসী উদ্ভিন্নযৌবনা।
আপাতত মানসীর বিড়ম্বনার কারণ দুই নবযুবক, শ্যামল ও সরোজ। পুষ্পমধুআহরণোন্মুখ মধুমক্ষিকার ন্যায় উহারা দুইজনে বহুদিন ধরিয়াই মানসীর হৃদয় হরণ করিবার প্রয়াস করিতেছে। মানসী অবশ্য হাসিমুখে উভয়কেই যথেষ্ট ল্যাজে খেলাইতেছে।
শ্যামলের বাবা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শ্যামল নিজে যুদ্ধ পরবর্তী টালমাটাল সমাজব্যবস্থায় শেয়ার মার্কেটে আনাগোনা করিয়া বিলক্ষণ টু পাইস কামাইয়াছে। ওদিকে সরোজ মোটরগাড়ির শোরুম খুলিয়াছে। আজ শ্যামল মানসীকে লহিয়া গ্রেট ইস্টার্নে ডিনার করিতে যায়, তো কাল সরোজ তাহাকে লহিয়া ফিরপোতে লাঞ্চ করে। দুইজনেরই ধারণা, মানসী কেবলমাত্র তাহাকেই ভালোবাসে।
কিন্তু মানসীর মনোজগতের খবর কেহই রাখেনা। শরবিন্দু, মানসীর প্রাইভেট টিউটর, যাহার সুদক্ষ পড়ানোর কারণে মানসী যে আই এ পাশ করিলো, তাহার খবর কেহই রাখেনা। বস্তুত, শ্যামল বা সরোজ, এই দুই ধনীর দুলাল থাকিতে মানসী যে অন্য কাউকে পছন্দ করিতে পারে, তাহাও আবার চালচুলাহীন সামান্য গৃহশিক্ষককে, তাহা কেহই স্বপ্নেও ভাবে নাই। মানসীর মনে যে টাকাপয়সার চাহিয়া শিক্ষার স্থান উঁচুতে, তাহা কেহ স্বপ্নেও ভাবে নাই।
যখন জানিলো, তখন না সরোজ শ্যামলের, না মানসীর পিতামাতা, কাহারো কিছু করার রহিলো না। কারণ মানসী আর শরবিন্দু ততক্ষণে কোর্ট ম্যারেজ করিয়া ফেলিয়াছে। শিক্ষা ধনসম্পত্তিকে পরাভূত করিয়াছে।
উহারা সুখে থাকুক।