সাচ্চা মুসলমান
সাচ্চা মুসলমান


লোকটি ধৈর্যশীল। প্রায় চার ঘন্টা হয়ে গেলো, বৃষ্টির মধ্যে মাথা বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরণে ছাই ছাই রঙ্গের আলখাল্লা, অনেকটা জোব্বার মতো। পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো। ভিতর থেকে উলের ইনারওয়্যার উঁকি মারছে, মাথায় ফেজ টুপি। সরু রাস্তার ধার থেকে খানিকটা উপরে একটা পাথরের আড়ালে যেন একটু লুকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধ থেকে ঝুলে রয়েছে একটা থলি। তার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। মাঝে মাঝে ডান হাতে ধরা একটা ছোট কালো বাক্স কানে লাগিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে।
ফয়জলেরও ধৈর্যের কোন অভাব নেই। ছোটবেলা থেকেই এই অনন্তনাগের পাহাড়িয়া ঢালে ছাগল চরায় ও। এই অঞ্চলকে ও নিজের হাতের পাঞ্জার মতো চেনে। লোকটা চারঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে,আর ফয়জলও চারঘণ্টা হলো একটা পাথরের ফাটলের মাঝে ঢুকে পড়েছে। কারণ ওর হঠাৎ মনে হয়েছিলো, লোকটা বিপজ্জনক। বিশেষ করে যখন লোকটা হঠাৎ তার জোব্বার পকেট থেকে ছুরি বের করে ছোট্ট সাদা ছাগলের বাচ্চা খুশবুকে জবাই করে দিলো। কারণ কি? কারণ আর কিছুই না, শুধুমাত্র এই যে খুশবু হঠাৎ এক নতুন লোক দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে একটু ডাকাডাকি শুরু করেছিলো। চিৎকার করে লোকটাকে আটকতে গিয়েও আর আটকায়নি ফয়জল। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে সাবধান করে দিয়েছিলো। বদলে এই চারঘন্টা ধরে ফয়জল লোকটার উপর নজর রেখেছে।
অনন্তনাগের এই রাস্তার উপর দিয়েই অমরনাথ দর্শনের আশায় যাত্রা করে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা। কনভয় যাবার নির্দিষ্ট সময় আছে, জানে ফয়জল। এখন সেই কনভয় এসে পড়লো বলে। প্রথমে আর শেষে থাকবে আর্মির গাড়ি, আর মাঝে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা। তাদের ভগবানের কাছে দর্শন করতে যাবে তারা। মানত পূর্ণ করবে, পুজো দেবে। অনেকটা হজযাত্রার মতো।
হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো ফয়জল বুঝতে পারে, লোকটা কি করতে চলেছে! তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা! নিশ্চয় লোকটা রাস্তায় কোথাও ল্যান্ড মাইন বসিয়ে রেখেছে, আর ঝোলাটার মধ্যে সেটা ফাটানোর রিমোট। কাশ্মীরের বাচ্চা বাচ্চারাও জানে ল্যান্ড মাইন আর ডিটোনেটরের গল্প। হায় আল্লাহ! কতগুলো তীর্থযাত্রীর প্রাণ যাবে আজ কে জানে? লোকটার ঝোলার মধ্যে নিশ্চিত মেশিনগানও আছে, আর আছে ল্যান্ড মাইনের ডিটোনেটর। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই ফয়জল হাতে তুলে নেয় একটা পাথর, আর অভ্রান্ত লক্ষ্যে ছুঁড়ে দেয় লোকটার দিকে।
হঠাৎ মাথায় একটা তীর বেগে ছুটে আসা পাথরের আঘাত খেয়ে লোকটা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। দুই হাতে করে আর একটা বড় এবড়োখেবড়ো পাথর তুলে নিয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটে যায় ফয়জল। লোকটাও ততক্ষণে ঝোলা থেকে বের করে বাগিয়ে ধরেছে তার মেশিনগান। ফয়জলের দিকে তাক করে গুলি চালাতে থাকে সে। ফয়জল না থেমে ছুটে গিয়ে পাথরটা তুলে ধড়াম করে বসিয়ে দেয় লোকটার মাথায়।
পাশাপাশি লুটিয়ে পড়ে দুই মুসলমান। তাদের মধ্যে একজন সাচ্চা মুসলমান।
(সমাপ্ত)