STORYMIRROR

Md Habibul Bashar

Horror Thriller

5  

Md Habibul Bashar

Horror Thriller

রাত তখন 3:35

রাত তখন 3:35

9 mins
3.2K

গল্পের শিরোনাম : রাত তখন 3:35

লেখক : হাবিবুল বাশার


ভৌতিক বলে আসলেই কি কিছু হয়, নাকি এটি শুধুই মানুষের মনের ভুল? যদি ভৌতিক বলে কিছু না-ই থাকে, তাহলে আমরা কেন এটাকে এত ভয় পাই? ভয় পেতে গেলে তো এর কোনো ভিত্তি থাকা উচিত, তাই না? মানুষের মন কি তাহলে কেবল কল্পনাই তৈরি করে ভয় পায়? নাকি এর পেছনে কোনো অজানা সত্য লুকিয়ে আছে?

এ প্রশ্নের উত্তর কি আমাদের কাছে আদৌ আছে? নাকি এই ভয় কেবল প্রাচীন বিশ্বাস আর গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ? ভৌতিকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ যতটা, তার চেয়েও বেশি হয়তো অজানা বিষয়কে ঘিরে থাকা রহস্য আর ভয়।


তাহমিদ একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক। যুক্তির ওপর ভরসা করে চলা এই মানুষটির টিভি অনুষ্ঠানের নাম ছিলো "ভৌতিক ও অভৌতিক"। প্রতি রাত ১২টায় সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিলো ভৌতিক ঘটনার পেছনের সত্যতা উদঘাটন করা। তবে মজার ব্যাপার হলো, তাহমিদ নিজেই কখনো ভূত বা অশরীরী কিছুতে বিশ্বাস করত না।


একদিন অফিসে সহকর্মী রাসেলের সঙ্গে এই নিয়ে তর্ক শুরু হয়।

রাসেল বলল,

— "তাহমিদ ভাই, এসব অলৌকিক জিনিস কিন্তু সত্যিই হয়। আমি নিজ চোখে দেখেছি।"

তাহমিদ হেসে তাচ্ছিল্যের সুরে উত্তর দিলো,

— "আপনি কি বলতে চান? ভূত বলে কিছু পৃথিবীতে আছে?"

— "ভূত কি না বলতে পারব না, তবে তারা অশরীরী।"

তাহমিদ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,

— "এটা কেমন কথা? ভূত না, কিন্তু অশরীরী? এটা কি ধরণের যুক্তি?"

রাসেল বলল,

— "না, আমি সেটা বোঝাতে চাইনি।"

— "তাহলে এবার একটু চুপ করবেন? অকারণে কানের কাছে ভ্যান ভ্যান করবেন না।"


রাসেলের মুখে রাগের ছাপ ফুটে উঠল।

— "আপনি বিশ্বাস না করতে পারেন, কিন্তু এগুলো যে সত্যি হয়, তা আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি।"

তাহমিদ তাচ্ছিল্য ভরে বলল,

— "আপনি কি বলতে কি দেখেছেন। তা আল্লাহই ভাল জানে।"

রাসেল কিছুটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,

— "কিন্তু যদি এগুলো মিথ্যে হতো, তাহলে আমার প্রিয় বন্ধুকে এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হতো না।"

তাহমিদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— "আপনার সেই বন্ধু? যে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিলো?"

— "না, ও লাফ দেয়নি। ওকে ইচ্ছা করে…"


তাহমিদ মাঝপথে তাকে থামিয়ে বলল,

— "ভূত ওকে ফেলে দিয়েছে, তাই তো?"

রাসেল কণ্ঠ উঁচু করে বলল,

— "হ্যাঁ, সেরকমই ব্যাপারটা।"

তাহমিদ মৃদু হেসে বলল,

— "আপনার সেই বন্ধু তার চাকরি হারিয়ে হতাশায় লাফ দিয়েছিলো। আর মানুষ এটাকে ভূতের কাজ বলে চালিয়ে দিয়েছে।"


রাসেল এবার সত্যিই রেগে গেল। বলল,

— "আপনার সামনে যেদিন কিছু ঘটবে, সেদিন বুঝবেন এগুলো কোনো গল্প-কাহিনী নয়।"


রাসেল চলে যাওয়ার পরও তাহমিদের মাথায় কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগল। সে নিজের মনে বলল,

"এসব বোকা লোকদের নিয়ে আর পারা গেল না। আমিও তাহমিদ। প্রমাণ করব, ভূত বলে কিছু হয় না। এসব শুধুই মানুষের মনের ভুল।"


তাহমিদ বিষয়টি নিয়ে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। কিন্তু সে ভাবল, "কীভাবে প্রমাণ করব? হ্যা আইডিয়া পেয়েছি। যদি একটা ভৌতিক বাড়িতে এক রাত কাটানো যায়, তাহলে পুরোটা ক্যামেরায় ধারণ করে দেখাতে পারব।"


কয়েকজন পরিচিতকে ফোন করে খোঁজ নিল। জানা গেল, একটি গ্রামে এমন একটি পুরনো বাড়ি আছে, যেটি নিয়ে বহু গুজব রয়েছে। গ্রামের মানুষ বলে, রাতে ওই বাড়িতে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। বাড়িটি অভিশপ্ত।


এই কথাগুলো শুনে তাহমিদের কৌতূহল আরো বেড়ে গেল। সে ঠিক করল, এই বাড়িতেই এক রাত কাটাবে। যা কিছু ঘটবে, তা সে ক্যামেরায় ধারণ করবে।


তাহমিদ যখন সেই গ্রামে পৌঁছাল, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের চোখে আতঙ্কের ছাপ। তারা তাহমিদকে অনেক অনুরোধ করল,

— "বাবা, ওই বাড়িতে যেও না। তুমি ফিরে আসতে পারবে না।"

তাহমিদ সবার কথা উড়িয়ে দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো। 

- "তা কাল সকালেই দেখা যাবে"

এরপর তাহমিদ ওখান থেকে চলে যায় তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে।


বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল তাহমিদ। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এসেছে। চাঁদের আলোয় বাড়িটা আরও রহস্যময় লাগছে। পুরনো কাঠের দরজা, ভাঙা জানালা, আর মাকড়সার জাল। চারদিকে যেন শূন্যতা। তাহমিদ ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ভিডিও করা শুরু করল।

“এই বাড়ি নাকি ভৌতিক। রাত ৩:৩৫-এ এখানে নাকি অদ্ভুত কিছু ঘটে। আমি এই গুজবের সত্যতা যাচাই করব।”


তাহমিদ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার, শুধু তার টর্চের আলোয় সামনের জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। ঘরের মেঝেতে ধুলো জমে আছে, যেন বহু বছর কেউ পা রাখেনি। দেয়ালে পোকায় খাওয়া কাঠের তাাক, ভাঙা চেয়ার, আর এক কোণে ধুলো জমা আয়না।


আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল তাহমিদ। টর্চের আলোয় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হাসল। কিন্তু পরক্ষণেই তার হাসি মিলিয়ে গেল। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের পাশে আরও একজোড়া চোখ দেখা গেল। পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে!


তাহমিদ মুহূর্তে পেছনে তাকাল। কেউ নেই। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। “এটা কল্পনা,” নিজেকে বলল সে।


সময় তখন রাত ২টা। তাহমিদ ডায়েরি লিখছিল। হঠাৎ ঘরের জানালা থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, জানালাটা বন্ধ ছিল।

পায়ের আওয়াজ শোনা গেল করিডোর থেকে। যেন কেউ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তাহমিদ টর্চ হাতে নিয়ে করিডোরে বের হল। করিডোর ফাঁকা। শুধু বাতাসে শুকনো পাতার গন্ধ।


আবার পায়ের আওয়াজ। এবার ঠিক পেছনে। পেছনে ঘুরতেই তার বুকটা কেঁপে উঠল। করিডোরের অন্য প্রান্তে একজন দাঁড়িয়ে। এক মহিলা। লম্বা সাদা শাড়ি, এলোমেলো চুল। কিন্তু তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। যেন কোনো কালো অন্ধকার তার মুখ ঢেকে রেখেছে।


তাহমিদ জিজ্ঞেস করল, “কে আপনি?”

মহিলা কোনো উত্তর দিল না। শুধু হাত বাড়িয়ে কিছু দেখাল। তার আঙুলে শুকনো রক্ত। তারপর ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।


তাহমিদ দ্রুত ঘরে ফিরে এল। তার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠেছে। সে ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে শুরু করল। ক্যামেরায় দেখা গেল সেই মহিলার চেহারা। কিন্তু ভিডিওতে তার চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। তাহমিদ এতটাই ভয় পেয়ে গেল যে তার হাত কাঁপতে লাগল।


হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ গেল তাহমিদের। সময় তখন ৩:৩৫। ঘরের বাতি নিভে গেল। চারপাশে গাঢ় অন্ধকার। শুধু টর্চের মৃদু আলো।


পেছনে থেকে গলা শোনা গেল।

“তুই এখানে কেন এসেছিস?”

তাহমিদ পেছনে তাকাল। সেই মহিলা, এবার একদম তার সামনে। তার চুলগুলো ভেজা, আর মুখে গভীর কাটা দাগ।

“তুই এখানে এসেছিস কেন?”


তাহমিদ পালানোর চেষ্টা করল। আতঙ্কিত হয়ে দরজার কাছে ছুটে গেল। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে বুঝল, সেটি বন্ধ। বাইরে থেকে বন্ধ করা হয়েছে যেন। পেছনে তাকিয়ে দেখল, সেই মহিলাটি তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে।


"একি! সে তো আমার কাছেই আসছে। এখন উপায়?" তাহমিদ মনে মনে বলল।


মন পড়ার ক্ষমতাটা হয়তো সত্যিই অশরীরীদের মাঝে বিদ্যমান। তার প্রমাণ পেল তাহমিদ, যখন মহিলাটি হঠাৎ থেমে বলল,

"আর কোনো উপায় নেই। এবার তোর সব পথ বন্ধ।"


তার ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর কাঁপিয়ে দিল চারপাশ। এগিয়ে আসতে আসতে মহিলাটি যেন আরও ভয়ানক হয়ে উঠছিল। তাহমিদ আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলল। সময় যেন থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর সাহস করে চোখ খুলল।


কিন্তু... কিছুই নেই! সেই অশরীরী কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। তবে তাহমিদ টের পেল, তার শরীর অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা। যেন তার শরীরের সব শক্তি শুষে নেওয়া হয়েছে।


সে বুঝতে পারল, তার ইন্দ্রিয়গুলো একে একে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। যেন এক অদৃশ্য শক্তি তার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারপর....


আর কিছু মনে নেই।


তাহমিদ হাসপাতালের সাদা বেডে শুয়ে আছে। সারা শরীরে ক্লান্তি, মাথার ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা। চারপাশের নিস্তব্ধতা যেন আরও বেশি অস্বস্তি এনে দিচ্ছে। চোখ মেললেই মনে পড়ে যায় সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা। তার হাতের কাছে পড়ে থাকা ডায়েরিটা এখনো রক্তের দাগে ভরা। সেই রক্ত যেন তার মনের অন্ধকার কোণগুলোকে আরও বেশি জাগিয়ে তুলছে।


তার পাশে গ্রামের কেয়ারটেকার লোকটা দাঁড়িয়ে। চোখে গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ। তার দীর্ঘশ্বাস যেন সারা ঘরের নিস্তব্ধতাকে আরও ভারী করে তুলছে।


— "তোমারে তো আমি আগেই সাবধান করছিলাম," লোকটা গভীর কণ্ঠে বলল। "তুমি শুনলা না। ওই বাড়ি জ্বিন-ভূতের না, ওখানে রূপার অভিশাপ লেগে আছে।"


তাহমিদ একবার চোখ বন্ধ করল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— "রূপা কে? ওর সাথে এই বাড়ির সম্পর্ক কী?"


লোকটা প্রথমে কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। তার চোখে একধরনের দ্বিধা ফুটে উঠল। কয়েক মুহূর্ত পর সে বলল,

— "রূপা এই বাড়ির মালিকের মেয়ে ছিল। বছর বিশেক আগে, তার বিয়ের রাতে ওকে মেরে ফেলা হয়।"


তাহমিদ শিউরে উঠল।

— "কিন্তু কেন? আর আমি তো ওকে দেখেছি! ও আমার সাথে কথা বলেছে! সে কি...?"


লোকটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।

— "ও মরেছে, কিন্তু শান্তি পায়নি। যে রাতে ওকে মারা হয়েছিল, সেই রাত থেকে ওর আত্মা ওই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। ঠিক ৩:৩৫-এ ওর কণ্ঠ শোনা যায়। যারা ওর আত্মাকে বিরক্ত করে, তারা আর বাঁচে না।"


তাহমিদের গলা শুকিয়ে গেল।

— "কিন্তু আমি তো কিছু করিনি! আমি শুধু সত্যটা খুঁজতে গিয়েছিলাম।"


লোকটা গভীর গলায় বলল,

— "সত্য খুঁজতে চাইলে, রূপার কষ্টও বুঝতে হবে। তুমি ওর জীবনের গল্প জানো?"


তাহমিদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার মনের ভেতর অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর বলল,

— "ওর গল্পটা জানালে হয়তো বুঝতে পারব।"


লোকটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তার গলায় ভারী কণ্ঠ, যেন কোনো দুঃখের ইতিহাস বলতে চলেছে।

— "রূপা ছিল খুব মিষ্টি মেয়ে। গ্রামে সবাই তাকে ভালোবাসত। তার বাবা ছিলেন জমিদার। বিয়ের দিন রূপা অনেক খুশি ছিল। কিন্তু সেই খুশি টেকেনি। তার স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে মেরে ফেলেছিল, কারণ তারা তার বাবার সম্পত্তি চাইত।"


তাহমিদের শরীর শিউরে উঠল।

— "তারপর?"


লোকটা চোখ নামিয়ে বলল,

— "তার লাশ বাড়ির পেছনের কুয়োয় ফেলে রাখা হয়। সেই রাত থেকেই বাড়িটা অভিশপ্ত হয়ে যায়। রূপার আত্মা সুবিচারের অপেক্ষায় আছে।"


তাহমিদের মনে হলো, গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এর গভীরে আরও কিছু আছে।


রাত ৩:৩০। তাহমিদ আর কেয়ারটেকার বসে আছে বাড়ির প্রধান ঘরে। কেয়ারটেকার তার হাতে একটা তাবিজ তুলে দিল।

— "এটা রাখ। বিপদ এলে কাজে লাগবে।"


ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। জানালার পর্দা অদ্ভুতভাবে বাতাসে উড়তে লাগল, যদিও বাতাস আসার কোনো পথ ছিল না।


হঠাৎ করেই এক নারীকণ্ঠ শোনা গেল।

— "তুমি আমার ঘরে কেন?"


তাহমিদ পেছনে তাকাল। রূপা দাঁড়িয়ে আছে। এবার তার চেহারা স্পষ্ট। তার চোখে অশ্রু, ঠোঁটে রক্তের দাগ। তার উপস্থিতি যেন পুরো ঘরকে শীতল করে দিল।


তাহমিদ সাহস করে বলল,

— "তুমি কী চাও? তোমার আত্মা কেন শান্তি পাচ্ছে না?"


রূপা ফিসফিস করে বলল,

— "আমার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবা, আমার মা... তারা সুবিচার পায়নি।"


কেয়ারটেকার চিৎকার করে উঠল,

— "তাহমিদ, পালাও! ও তোর জীবন নেবে!"


রূপার চোখ হঠাৎ আগুনের মতো জ্বলে উঠল। কেয়ারটেকার অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।


তাহমিদ কাঁপতে কাঁপতে বলল,

— "আমি তোমার গল্প সবাইকে জানাব। তোমার সুবিচার হবে।"


রূপার ঠোঁটের কোণে ম্লান হাসি ফুটে উঠল।

— "সত্যি বলছ?"


তাহমিদ মাথা নেড়ে বলল,

— "হ্যাঁ। আমি প্রতিজ্ঞা করছি।"


রূপা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।


রূপার কথা শুনে তাহমিদ গভীরভাবে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে সে তার সুবিচার নিশ্চিত করবে। তবে তার মনের গভীরে এক ধরনের অস্বস্তি বাসা বেঁধেছিল। রূপার অভিশাপ শুধু সত্য উদঘাটনের অপেক্ষায় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অতীতের ভয়ানক ঘটনা এবং গ্রামের মানুষদের বিশ্বাস।


পরদিন সকালে তাহমিদ গ্রামের মানুষদের সামনে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা জানাল। সবাই শোনার পর ভয়ে হতবাক হয়ে গেল। তবে কেয়ারটেকারের কথা ভেবে সবাই একজোট হতে সাহস করল না। একজন বয়স্ক গ্রামবাসী এগিয়ে এসে বলল,

— "ছেলে, তুই সত্যি সাহসী। কিন্তু সাবধান, রূপার আত্মা খুবই ক্ষমতাশালী। তুই যদি ওর প্রতিজ্ঞা রাখতে না পারিস, তোর জীবনও বিপদে পড়বে।"


তাহমিদ দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

— "আমি প্রতিজ্ঞা করছি, রূপার মৃত্যুর ন্যায়বিচার করব। তবে আমাকে সাহায্য করতে হবে। একা আমি পারব না।"


এবার গ্রামের কয়েকজন তরুণ তার পাশে দাঁড়াল। একজন বলল,

— "আমরা তোমার সাথে আছি। কিন্তু কীভাবে করব এটা?"


তাহমিদ চিন্তিত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,

— "প্রথমে পুলিশকে জানাতে হবে। তবে শুধু পুলিশ দিয়ে হবে না। রূপার আত্মা এখনো শান্ত হয়নি। তাই আমাদের অতীতের ঘটনার সত্যতা খুঁজে বের করতে হবে।"


তাহমিদ, কেয়ারটেকার, এবং কয়েকজন গ্রামবাসী মিলে রূপার বাবার পুরোনো বাড়ি এবং জমিদারি খুঁজতে বের হলো। সেখানে তারা কিছু পুরোনো নথি পেল। নথিগুলোর মধ্যে রূপার বাবার শেষ চিঠি পাওয়া গেল, যেখানে তিনি তার মেয়ের হত্যার জন্য রূপার শ্বশুরবাড়ির লোকদের দায়ী করেছিলেন। চিঠিতে লেখা ছিল,

"আমার মেয়ে রূপাকে বাঁচাতে পারিনি। ওরা শুধু সম্পত্তির জন্য আমার সবকিছু ধ্বংস করল। আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে না, যতদিন না সুবিচার হয়।"


চিঠিটা নিয়ে সবাই থানায় গেল। পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করল।


তদন্তের সময়, রূপার শ্বশুরবাড়ির একজন বয়স্ক লোক পুলিশের সামনে স্বীকার করল যে সেই রাতে তারা রূপাকে কুয়োয় ফেলে হত্যা করেছিল। তবে হত্যার পেছনে শুধু সম্পত্তি নয়, আরও কিছু লুকানো কারণ ছিল।


রাতের অন্ধকারে আবারও তাহমিদ সেই বাড়িতে ফিরে গেল। এবার তার সঙ্গে ছিল পুলিশ আর গ্রামের কয়েকজন সাহসী মানুষ। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৩:৩৫-এ পৌঁছালে ঘরের ভেতর শীতল বাতাস বইতে শুরু করল।


হঠাৎ করেই জানালার কাঁচ কাঁপতে লাগল। নারীকণ্ঠ ভেসে এল,

— "তুই আবার কেন এলি?"


তাহমিদ এগিয়ে এসে বলল,

— "তোমার প্রতিজ্ঞা রাখতে এসেছি, রূপা। তোমার হত্যার সত্যি উদঘাটন হয়েছে। তোমার হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে।"


রূপার আত্মা ধীরে ধীরে তাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তার চোখে এবার রাগের চেয়ে শান্তির আভা ছিল।

— "তাহলে কি সত্যি? আমার বাবা-মায়ের কষ্টের প্রতিশোধ নেওয়া হবে?"


তাহমিদ মাথা নত করে বলল,

— "হ্যাঁ। আমি কথা দিয়েছি। তোমার আত্মা এবার শান্তি পাবে।"


রূপার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। সে বলল,

— "তুই কথা রেখেছিস। আমি এখন শান্তি পেতে পারি। তবে একটা কথা মনে রাখিস, সত্য কখনো লুকানো যায় না।"


এ কথা বলে রূপার আত্মা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ঘরটাও যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠল।


কয়েক মাস পর, রূপার হত্যাকারীদের আদালতে শাস্তি হলো। গ্রামের মানুষদের কাছে সেই বাড়ির অভিশাপ মুছে গেল। তারা আবারও সেই বাড়ি ব্যবহার করতে শুরু করল।


তাহমিদ নিজের ডায়েরির শেষ পাতায় লিখল,

"রূপার আত্মার শান্তি ফিরে এসেছে। আমি সত্য উদঘাটন করতে পেরেছি। তবে এই ঘটনা আমাকে শিখিয়েছে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহস আর ধৈর্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"


এখন তাহমিদ তার সহকর্মীর কথার মানে টা বুঝতে পেরেছে।

" ভূত নয়, তবে তারা অশরীরী "


 ___________


ଏହି ବିଷୟବସ୍ତୁକୁ ମୂଲ୍ୟାଙ୍କନ କରନ୍ତୁ
ଲଗ୍ ଇନ୍

More bengali story from Md Habibul Bashar

Similar bengali story from Horror