প্রবাহ
প্রবাহ
দাদুর সাথে দেশের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে ছোট্ট সুনীল।গরমের ছুটিতে স্কুল বন্ধ,দাদুর সাথে দাদুর দেশের বাড়ি ঢ্যাঙারতলায় ঘুরতে যাওয়ার মানে সুনীল পাবে যান্ত্রিকতা কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত কয়েক দিন,মাথার ওপর মুক্ত নীলাকাশ এবং সহজ সরল গ্রামবাসীদের বুকভরা ভালোবাসা।
ভাগীরথী হুগলী নদী,হাওড়া ব্রিজ,বাগনানের ফুলের চাষ,রেললাইনের পাশে দিগন্তবিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত ,শালবনী ও গড়বেতার মাইলের পর মাইল শালবন ও লালমাটির দেশের রুক্ষ প্রকৃতি,আর দাদুর কাছে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা,মল্ল রাজাদের গল্প এবং দলমাদল কামানের কাহিনী শুনতে শুনতে সুনীল এসে পৌঁছল ঢ্যাঙারতলা গ্রামে।
গ্রামের দক্ষিণপাশেই বয়ে যাচ্ছে দ্বারকেশ্বর নদ। নদীর দুপাশে ধু ধু বালুচর, ফুরফুরে মুক্ত হাওয়া
য় শরীর মন জুড়িয়ে যায়। সুনীলের মনে হয় নদী যেমন প্রবাহিণী,সে যেমন উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে সাগর বা অন্য কোনো নদীতে পতিত হয়,তার যেমন আছে উচ্চগতি,মধ্যগতি,নিম্নগতি ,তেমন আমাদের জীবনেও আছে শৈশব,কৈশোর,যৌবন ,বার্ধক্য।
যৌবনাবস্থায় প্রবাহিণী যেমন দুরন্ত,পাহাড়ের বুক চিরে চপলা যুবতীর ন্যায় তীব্র গতিতে প্রবাহিত হয়,তার পথের যেকোনো বাধাকে নিমেষে চূর্ণ করে,তেমন বার্ধক্যে সে বিস্তৃতা,বিপুলশরীরা। কিন্তু ধীরগতিসম্পন্না,প্রাণশক্তির অভাব বিদ্যমান।তখন মৃদুমন্দ বায়ুপ্রবাহেও তার জললহরীতে কম্পন ঘটে। সফল মানুষদের জীবনও কি এই রকম নয়! যৌবনে কীর্তির অভাব আছে,কিন্তু সে উদ্যম আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর,বার্ধক্যে এসে প্রতীত হয় সাফল্য প্রচুর,কিন্তু সেই উদ্যম আর প্রাণশক্তি আর নেই!