মহাকালের মন্দির
মহাকালের মন্দির


সিকিম কথাটির অর্থ হল সু-কিম (su kim) ,যার অর্থ সুদৃশ্য প্রাসাদ। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ,পাইন ফারের সবুজ বনানীতে ঘেরা,পাহাড়ের কোলে ছাঙ্গু আর খেচেওপালরি লেকের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য,মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা বাগিচার শ্যামলিমা,যুবতী নারীর মতো পাহাড়ি জলপ্রপাতের লাস্যময়তা,বৌদ্ধ গুম্ফায় বিরাজমান অপার্থিব শান্তি ও আধ্যাত্মিকতা,তুষারকিরীটী পরা হিমালয়ের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য,সর্বোপরি বজ্রযানী তন্ত্রের রহস্যময়তা - একে প্রকৃতির কোলে সত্যিই এক সুন্দর প্রাসাদ রূপে গড়ে তুলেছে।সিকিম মানেই কাঞ্চনজঙ্ঘার বুক চিরে রক্তিম সূর্যোদয়,প্যাংবোচে মনাস্ট্রির আধ্যাত্মিক পরিবেশ ,লেপচাদের জগৎ,সর্বোপরি রডোডেনড্রনের স্বর্গীয় রক্তিম সৌন্দর্য যাই হোক,এই সিকিমে অ্যাডভেঞ্চার করতে এসেছে পৃথ্বীশ আর তার বন্ধু শুভময়। তাও আবার সুদূর কোলকাতা থেকে বাইক নিয়ে।
এখানে আসার আগে বজ্রযানী তন্ত্র সম্পর্কে বেশ ভালোই পড়াশোনা করে এসেছে পৃথ্বীশ ,ন্যাশনাল লাইব্রেরীতেও গেছে। এভাবেই জানতে পেরেছে,বজ্রযানীদের দেবদেবী সম্পর্কে- এক দেবতা ওকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে যাকে দেবতা না বলে অপদেবতা বলাই ভালো,তার নাম মহাকাল। পৃথ্বীশ জানতে পেরেছে,বজ্রযানীরা দেবতার মতোই অপদেবতাদেরও পূজা করে। এজন্য সিকিমের বহু প্রত্যন্ত স্থানে মহাকালের মন্দির আছে। যাই হোক,বহু কষ্টে পৃথ্বীশ খোঁজ পেয়েছে উত্তর সিকিমের এক প্রত্যন্ত স্থানে এক পাহাড়ি গাঁয়ে পাইন বনের মধ্যে এই মহাকালের মন্দিরের কথা। সেখানে নাকি প্রতি শনিবার বিশেষ পূজা হয়,বাহন ড্রাগনের পিঠে চড়ে নেমে আসেন স্বয়ং মহাকাল। গ্রামবাসীরা বারণ করে,ওখানে নাকি প্রেতেরা থাকে। শুভময়ের অনেক নিষেধ সত্ত্বেও পৃথ্বীশ শনিবার যায় ঐ মন্দিরে। দিনের আলো পড়ে আসছে,কোথায় কি এক পুরনো ভগ্নপ্রায় মন্দির! কাউকেই দেখতে পেল না পৃথ্বীশ,ফিরে আসছে-এমন সময়ে দেখা এক লেপচার সাথে,সেই নাকি এখানকার পূজারী। তার হাতে এক নীল রঙের তরল,পৃথ্বীশকে বলে সন্ধ্যা হলে পূজা শুরু হবে,তার আগে এই তরল পান করতে হবে,এটাই ওনার প্রাসাদ। না,অনেক খোঁজাখুঁজি করেও খুঁজে পাওয়া যায় নি পৃথ্বীশকে। কিন্তু কেউ জানে না প্রতি শনিবার রাতে পৃথ্বীশের আত্মা নেমে আসে সেই মহাকালের মন্দিরে,তার আরাধ্যের পূজা করতে!