Debdutta Banerjee

Tragedy Action Classics

2.8  

Debdutta Banerjee

Tragedy Action Classics

রক্তে রাঙা মৃত্তিকা

রক্তে রাঙা মৃত্তিকা

12 mins
1.0K



 

(১)

ঢং ঢং দুটি ঘণ্টার শব্দ ঘোষণা করল রাত্রির দ্বিতীয় যামের অবসান। ঘুমন্ত নগরী, দারু কাষ্ঠর পাশাপাশি কিছু ইষ্টক নির্মিত দালান কোঠা নগরীর সমৃদ্ধি জ্ঞাপন করছে। এ পরিকল্পিত বিত্তশালী নগরীর চারদিকে মন্দিরের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অসংখ্য বৌদ্ধ মঠ। তরুণ সম্রাট শশাঙ্ক শৈব উপাসক, কিন্তু বৌদ্ধধর্মের প্রতি তেমন কোন দ্বেষ নেই। রক্ত মৃত্তিকা মহাবিহার তার সাক্ষী। প্রায় দু হাজার শ্রমণ এই মহাবিহারে অবৈতনিক শিক্ষালাভে ব্রতী। এছাড়াও এই সুবিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে রয়েছে বৌদ্ধ সংঘ ও মঠ, এদের যাবতীয় ব্যয়নির্বাহ হয় সম্রাটের আনুকূল্যে। নগরীর চতুর্দিকে ভাগীরথী ময়ূরাক্ষী ও তাদের শাখা সমূহ প্রাকৃতিক পরিখায় বেষ্টন করে নিরাপত্তা বলয় নির্মাণ করেছে। নদীর অপর তীরে সুগভীর বনানীর শ্যামলিমা প্রাকারের মত ঘিরে রেখেছে কর্ণসুর্বণকে।

ঠুক ঠুক ঠুক অশ্বখুরধ্বনি ভেসে আসে নগরের শেষ সীমানায়, ধীরে ধীরে ভাগীরথীর তীরে নিবির অরণ্য প্রান্তরে মিলিয়ে যায় সে আওয়াজ ।  কথিত আছে সম্রাট মাঝেমধ্যে ছদ্মবেশে মধ্যরাতে এভাবেই রাজ্য পরিদর্শনে বের হন। সঙ্গী একমাত্র প্রিয় বন্ধু । মগধ জয়ের পর রাজধানী স্থানান্তরিত না করেও সম্রাট এভাবেই মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শনে বেরিয়ে পরেন।

আর্যাবতের এই মালভূমি অঞ্চল ঘন অরণ্যে আচ্ছাদিত, বিভিন্ন বন্য পশুর অবাধ বিচরণ ভূমি।

হঠাৎ অরণ্য মধ্যে অশ্বারোহীদের কর্ণে হঠাৎ ভেসে আসে এক শ্বাপদের গর্জন। অশ্ব সামনের পা দুটি তুলে হ্রেষাধ্বনি তোলে, বদলাতে চায় গতি মুখ।

-''বন্ধুবর, অরণ্যের সম্মুখভাগে বিপদসংকুল মনে হয়। তাই তুফান এগোতে চাইছে না।'' প্রথম ব্যক্তি বলে।

সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে একটা মিহি ক্রন্দন ধ্বনি।

-''এতো কোনও মানব শিশুর ক্রন্দন।" ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে ওঠে দ্বিতীয় ব্যক্তির। মুহূর্তের ভগ্নাংশে কোমরবন্ধে আবদ্ধ অসি কোষচ‍্যুত হয়। সামনের ঝোপঝাড় ভেদ করে তুফানকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় সে। এক বিশাল মহীরুহের নিচে এক বৌদ্ধ শ্রমণকে আক্রমণ করেছে চিতাবাঘ, আচমকা দুই অশ্বারোহীর আগমনে বিপর্যস্ত চিতা অবশ্য পলায়ন শ্রেয় মনে করে।

কিন্তু মৃত শ্রমণ বক্ষে ধারণ করে রেখেছে তার শেষ সম্বল, একটি পুটুলি। প্রথম ব‍্যাক্তি অশ্বপিষ্ঠ হতে অবতরণ করতেই পুটুলি মধ্যে থেকে ভেসে এলো ক্রন্দন ধ্বনি। নড়ে উঠল যেন পুটুলি, ভেসে এলো মানবশিশুর ক্রন্দন।

সে সেই পুটুলি খুলে দেখে চিবরে জড়ানো মাসাধিক কালের এক শিশু।

 

(২)

রাজপ্রাসাদের উদ্যানে একটি হরিণ শাবককে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাজকন্যা শ্রীময়ী। ভারি চঞ্চল তার কিঞ্চন, বার বার কোল থেকে লাফিয়ে পড়ে ছুটছে। কচি শস্যের লোভ দেখিয়ে দুবার পাকরাও করলেও ছোট্ট শাবক কিঞ্চন বারবার পালিয়ে যাচ্ছে। ছোটাই যেন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

হঠাৎ ভাগীরথীর জলে ছপ ছপ দাড় টানার আওয়াজে শ্রীময়ীর দৃষ্টি চঞ্চল হয়ে ওঠে। এই গোধূলির শেষ লগ্নে কে এলো প্রাসাদ পুরিতে? সাদা পাল তোলা সুন্দর ছোট্ট বজরা প্রাসাদ ঘাটের কাছে পৌঁছতেই তোরণ প্রতিহার চিৎকার করে বলে -'' গৌড় নরেশের প্রাসাদ ঘাটে নোঙ্গর করার পূর্বে অতিথির পরিচয় জানতে ইচ্ছুক!''

নামাঙ্কিত অভিজ্ঞানপত্র নিয়ে এক ব‍্যাক্তি নেমে আসে।

-''মালবরাজ দেবগুপ্ত ... ''মুহূর্তে রাজ অন্দরমহলে খবর যায়।

ওদিকে শ্রীময়ী গঙ্গাবক্ষে গোধূলির শেষ রাঙা আলোয় দেখে বজরার উপর দাঁড়িয়ে এক রাজপুরুষ মুগ্ধ নয়নে তার দিকে চেয়ে রয়েছে। কিশোরী শ্রীর ফর্সা কপোল মুহূর্তে রক্তিমবর্ণ ধারণ করে। লাজুক শ্রী এক ছুটে প্রাসাদ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। গোধূলির কনে দেখা আলোয় অপূর্ব সুন্দরী শ্রীকে প্রাসাদ কাননে দর্শন করে বিহ্বল দেবগুপ্ত ভুলেই গেছিল তার সমতটের রাজধানীতে আগমনের কারণ!

ইতিমধ্যে সসম্মানে তার অবতরণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রাসাদের সিংহদ্বার উন্মোচিত হয়েছে, শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় মালবরাজ দেবগুপ্তকে। রাজপ্রাসাদের অলিন্দ থেকে দুটি চঞ্চল চক্ষু নিমেষে চেয়ে থাকে দেবকান্তি পুরুষের দিকে। প্রতিহারের পরিচয় জ্ঞাপনে অতিথির পরিচয় জানতে পেরে মুহূর্তে নিজেকে শাসন করে শ্রীময়ী। পিতা জানতে পারলে লজ্জার কারণ হবে।এক ছুটে নিজ মহলে চলে যেতে চায়। কিন্তু কী এক অদৃশ্য শক্তি যেন পা দুটো গেঁথে দিয়েছে ওখানেই। মালবরাজ মহলের অতিথি শালায় প্রবেশের পর সখির ডাকে সম্বিত ফেরে রাজকুমারীর। আরক্ত নয়নে সে ছুটে পালায়।

 

(৩)

ভাগীরথীর মিঠে হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসছে মৃদু সঙ্গীতের তান, মালব রাজ দেবগুপ্ত অবশ্য তেমন সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষক নন, যুদ্ধক্ষেত্রে অসি ও শস্ত্রের আওয়াজ শুনেই বেশিরভাগ সময় তাঁর কেটেছে। তবুও এই মিষ্টি সুরের মায়াজালের টানে অলিন্দে বেরিয়ে আসেন। দ্বিতীয় তলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ থেকে নজরে আসে রাজ উদ্যানের একাংশ, সঙ্গীতের মৃদুমধুর ধ্বনী ভেসে আসছে ঐ উদ্যানবাটিকা থেকেই। পায়ে পায়ে মর্মর খচিত প্রাঙ্গণ ও অলিন্দ, সোপান পার করে দেবগুপ্ত নেমে আসে উদ্যানে। এক ছোট্ট হরিণ শাবক ক্রোরে সঙ্গীত সাধনা রত কে ঐ কিশোরী!

 মুহূর্তের জন্য আরেকবার চার চক্ষুর মিলন হয়। ক্ষণিকের বিহ্বলতায় আবার কোল থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্টু হরিণ শাবক কিঞ্চন। চমকে ওঠে শ্রী। ছিঃ ছিঃ মালবরাজের সম্মুখে এভাবে... ভীরু পায়ে কিঞ্চনের খোঁজে ছুটে যায় কিশোরী।

দৌবারিক এসে মালবরাজকে জানান গৌড় সম্রাট সাক্ষাত প্রার্থী। দেবগুপ্ত তৎপর হয়ে ওঠে। দৌবারিকের সঙ্গে এগিয়ে যেতে যেতে দুবার পিছন ফিরে তাকান, দুটি কাজল কালো চক্ষু দৃষ্টিগোচর হয়। মনের কোনে এক মিষ্টি মধুর স্মৃতি উঁকি দেয়।

-''এসো বন্ধুবর, বলো এমন অকস্মাৎ আগমনের হেতু?'' সাদর সম্ভাষণ জানান সম্রাট শশাঙ্ক। মালব তাঁর মিত্র রাজ্য।


-'' গুপ্তচরের কাছে খবর রয়েছে প্রতিটা বৌদ্ধবিহারে স্থানেশ্বর ও কনৌজের চরেরা শ্রমণের ছদ্মবেশে আনাগোনা করছে। বৌদ্ধমঠগুলি বৌদ্ধ রাজ্যগুলোর পৃষ্ঠপোষক। আমার রাজ্যে এমন দুজন গুপ্তচর ধরা পড়েছে। তাদের কাছে এমন কিছু দলিল ছিল যা বলছে যুদ্ধ আসন্ন। স্থানেশ্বর রাজের সঙ্গে যোগদানে ইচ্ছুক সুদূর উত্তরের কামরূপ রাজ, আর এই মুহূর্তে যোগ দিয়েছে ওদের জামাতা মৌখরী রাজ গ্ৰহবর্মা। ''

ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে ওঠে গৌড়াধিপের। রক্ত মৃত্তিকা সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সংঘকে নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করার এই কি ফল! এর আগেও স্থানেশ্বর থেকে উৎপাটিত কিছু ব্রাক্ষ্মণ তাঁর কাছে আশ্রয় ভিক্ষা করেছিল।তারাও এ অভিযোগ এনেছিল। স্থানেশ্বর এবং কনৌজে নাকি ব্রাক্ষ্মণদের উপর তুমুল অত্যাচার চলছে। হিন্দু ধর্মের উপর এক প্রলয় নেমে আসছে যেন। কিন্তু তিনি তাদের নিঃশুল্ক জমি দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছিলেন।

 গত চন্দ্র পক্ষে অমাত্য মহেন্দ্র জানিয়েছিল এক গুপ্তচর ধরা পড়েছে, বৌদ্ধ শ্রমণের বেশে রাজ্যে প্রবেশ করেছিল সে। দেবগুপ্তর কথায় বিষয়টি প্রমাণিত। অতঃপর বৌদ্ধ সংঘগুলির উপর কঠোর হস্তে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত অন্যান্য রাজনৈতিক আলোচনায় মেতে উঠলেন দুই মিত্র। একটু পরেই অমাত্য মহেন্দ্র ও সেনাপতির ডাক পড়ল মন্ত্রণা কক্ষে। গোপন সূত্রে খবর এসেছে কনৌজের কাছে গ্ৰহবর্মার সেনাদল সেজে উঠেছে।

-''যুদ্ধ মানেই অনর্থক কিছু রক্তপাত, স্বজন বিয়োগ । আর ভালো লাগে না। '' গৌড়াধিপের গলায় বেদনার সুর ফুটে ওঠে।

-''বঙ্গ সম্রাটের মুখে এ কি কথা? বাংলার গৌরব আমাদের সূর্য সম্রাট শশাঙ্ক নিজের সাম্রাজ্য বাঁচাতে তৎপর হবেন না?'' মহেন্দ্র বলে।

-'' আমায় কয়েকঘন্টা সময় দিলেই দশ হাজার সৈন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে ।''সেনাপতি বলে।

-" আমি এখানে আসার পূর্বে দন্ডভুক্তি নরেশ মাধবরাজ ও আশেপাশের কিছু সামন্তরাজদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই যুদ্ধে সাহায্য করতে আগ্ৰহী। বাংলার সামন্তরাজদের একত্রিত করে স্বাধীনতার স্বাদ চিনিয়েছ তুমি।এখন সবাই স্বাধীনভাবে তোমার মিত্র হয়েই থাকতে ইচ্ছুক, কামরূপ নরেশকে উত্তরবঙ্গেই রুখে দেবে সামন্তরাজ বাসুদেব। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে স্থানেশ্বরের দিকে।"

 

(৪)

দৌবারিক ঘোষণা করে রাজকুমারী অতিথি সৎকারের জন্য উন্মুখ এবং সাক্ষাত প্রার্থী। অন্দরমহলে সবার জলযোগের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।

গৌড় নরেশ সবাইকে নিয়ে অন্দর মহলে প্রবেশ করলেন।

মর্মর সোপান পার করে অন্দর মহলে প্রবেশ করতেই দাসীরা সুগন্ধি ও পুস্প পাপড়ি মিশ্রিত জলে হাত পা ধুইয়ে দেয়।

আলপোনা আঁকা মর্মর ভূমিতে পাটের উপর সুতোর কাজ করা চারটে আসন বিছানো। রৌপ্য নির্মিত পাত্রে শ্বেত শুভ্র বর্তুলাকার ফুলকো শষ্কুলী ও নানা ব্যঞ্জন শোভিত খাদ‍্যদ্রব‍্য। নারিকেলের মিষ্টান্ন, খেজুরগুড়ের পরমান্ন। পাশে রৌপ‍্যপাত্রে জল। একটু দূরেই রাজকুমারী নিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তদারকিতে, বঙ্গ তনয়ারা যে ভাবে একটি বড় বস্ত্র খণ্ডকে জড়িয়ে পরে সেভাবে পরলেও অবগুণ্ঠন রয়েছে অল্প। গলায় সাতনরি হার, কানে কুন্তল। অলক্তক রঞ্জিত চরণে রৌপ্য নূপুর ।

দেবগুপ্ত রাজকন্যাকে দেখে চমকে ওঠেন।এই তবে গৌড়ের রাজকন্যা। জলযোগের পর মিঠে পান সাজিয়ে আনে শ্রী। আরেকবার চার চোখের মিলন হয়, কিন্তু দৃষ্টি এড়িয়ে যায় সম্রাটের। তিনি তখন আসন্ন যুদ্ধের চিন্তায় বিভোর। কিছুক্ষণ আলোচনার পর অতিথিরা বিদায় নেয়।

 

(৫)

আনমনা শ্রী বসেছিল উদ্যানের শেষ প্রান্তে। দুপুরের আগেই সাদা বজরাটি ফিরে গেছে। পিতার আলোচনায় আসন্ন যুদ্ধের বার্তা জেনেছে সে। কিঞ্চনের দিকেও আজ মন নেই তার। দুষ্টুটা তাই নিজেই এসে গা ঘষছে বারবার।হঠাৎ শ্রীয়ের চোখে পড়ে কিঞ্চনের গলায় এক ছড়া মুক্তার মালা। এই মালা তো তার চেনা! মালাটা খুলতেই ছোট ভূর্জপত্রটি চোখে পড়ে। কম্পিত হস্তে ভূর্জপত্রটি খুলে নেয় শ্রী। হৃদয়ের বেগ দ্রুততর থেকে দ্রুততম... আরও দ্রুত পত্র পাঠে রক্তিম হয়ে ওঠে কপোল। দ্রুত মহলে ফিরে যায় কিশোরী।

ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ ভাঙ্গছে প্রাসাদ ঘাটে। প্রাসাদের ছাদে সূর্য প্রণাম রত সম্রাট শশাঙ্কের ধ্যান ভঙ্গ হয় মৃদু নিক্বণ ধ্বনিতে। যুদ্ধ যাত্রার প্রাক্কালে রাজমহিষী এসেছেন প্রণাম জানাতে।

কপালে জয় তিলক পরিয়ে মহারাণী জানায় -'' শ্রী যেতে চাইছে আপনার সঙ্গে যুদ্ধ বিহারে। অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু মেয়ে আপনার শস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী। সে যাবেই আপনার সঙ্গে।''

-''আর মাধব... পুত্র মাধব কি বলছে?'' ভবিষ্যতের চিন্তা বঙ্গ সম্রাটের কপালে।

-''মাধব কে তো আপনি জানেন, সে গ্ৰন্থাগারেই কাটায় অধিক সময়। অস্ত্র চালনার থেকে মসি চালনায় সে সিদ্ধ হস্ত। তবে আপনি আদেশ দিলে সে হয়তো... ''

মহারাণীর অসম্পূর্ণ বাক্য শেষ হয় সম্রাটের দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে।

অলিন্দ প্রাকারে ধীরে প্রবেশ করে এক অবয়ব, রণসাজে সজ্জিত শ্রী! পিতাকে প্রণাম জানিয়ে মাতাকে বলে -'' আমার কপালেও বিজয় তিলক পরিয়ে দাও।আমি সম্রাটের সঙ্গে যাবো। ''

-'' যুদ্ধে নারী বর্জিত।" বঙ্গ নরেশ কঠিন স্বরে বলেন।

-'' কিন্তু খুব ছোটবেলায় দেখেছি মা আপনার সঙ্গে যুদ্ধে যেতেন। বহু যুদ্ধে মা আপনার পাশে ছিলেন।'' দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠে শ্রী।

-'' এ যুদ্ধ কার সঙ্গে তোমার কোনও ধারণা আছে? শত্রুর সঙ্গে যোগ দিয়েছে অন্যান্য শত্রুরা। স্থানেশ্বর ও কনৌজের সঙ্গে আরও শত্রুরা যোগদান করেছে খবর আছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, মথুরার নিকট মৌখরী রাজ গ্ৰহবর্মার সঙ্গে এই মুহূর্তে যুদ্ধরত মালবরাজ দেবগুপ্ত। আমার সেনাপতি আজ সেখানে পৌঁছে যাবে আরও পাঁচ হাজার সৈন্য সহ। বাকি পাঁচ হাজার সৈন্য সহ আমি আর মহেন্দ্র যাবো গোপন পথে। নারী এ পথে বিবর্জিত। ''

মালবরাজ দেবগুপ্তর উল্লেখে আরেকবার রাঙা হয়ে উঠল শ্রীয়ের কপোল। যুদ্ধরত দেবগুপ্তকে কল্পনা করে শ্রী নিজের গলার মুক্তা হারকে একবার স্পর্শ করে। তারপর নিজের অসি স্পর্শ করে বলে -'' আমিও একা কিছু সৈন্যসহ স্থল পথে যেতে চাই। সম্রাটের আদেশের অপেক্ষায়।''

সম্রাট শশাঙ্কর গর্বে বুক ভরে ওঠে। এই কন্যাকে নিয়ে যে দ্বিধাটুকু ছিল মনের কোণে তাও কেটে গেল আজ।মহারাণীকে বলেন -'' তিলক করো, আমরা এখনি যুদ্ধ যাত্রা করবো।''

 

(৬)

মথুরার নিকট পৌঁছতেই দূত মারফত খবর এসেছিল, মৌখরী রাজ গ্ৰহবর্মাকে পরাজিত ও হত্যা করে মালবরাজ দেবগুপ্তর সেনা এগিয়ে গেছে স্থানেশ্বরের দিকে। মৌখরী রাজপ্রাসাদ এখন সম্রাট শশাঙ্কের অপেক্ষায়।

মালবরাজের কৃতিত্বে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে শ্রী। তথাগতর কাছে মনে মনে আবেদন জানায় দ্রুত এ যুদ্ধের নিষ্পত্তি হোক।

কিন্তু হায়, উদিত সূর্যও অস্ত যায়। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কখন বদলে যায় কে জানে। পরদিন স্কন্ধাবার তুলে আর কিছুদূর অগ্ৰসর হতেই দূত এসে খবর দিয়েছিল এক বিশাল সৈন‍্যবাহিনি নিয়ে স্থানেশ্বর নরেশ পুষ‍্যাভূতি বংশীয় রাজ‍্যবর্ধন এগিয়ে আসছেন। মৌখরী রাজ গ্ৰহবর্মাকে হত্যা করে তার নবপরিণীতা স্ত্রী রাজশ্রীকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল দেবগুপ্ত। রাজশ্রী রাজ‍্যবর্ধনের ভগিনী। অপমানের প্রতিশোধ নিতে স্থানেশ্বর অধিপতি সম্মুখ যুদ্ধে দেবগুপ্তকে হত্যা করেছেন সকালেই। গৌড় সেনাপতিকেও হত্যা করা হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। ছত্রভঙ্গ গৌড় সেনাকে মৃত‍্যুদণ্ড দিতে দিতে রাজ‍্যবর্ধন এগিয়ে আসছেন এদিকেই।

দূতের বয়ে আনা সন্দেশে মৃত্যুর শীতলতা, হারের গ্লানি, স্তব্ধ সম্রাট। সম্বিত ফেরে মৃদু শব্দে। রণসাজে সজ্জিত শ্রীময়ীর কণ্ঠের একটি মুক্তাহার ছিঁড়ে মুক্তা দানা ছড়িয়ে পড়েছে মর্মর ভূমিতে।

 গৌড় সম্রাটের কপালে কুঞ্চন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মুখমণ্ডলে। বন্ধুবর দেবগুপ্ত ও সেনাপতি আর নেই। যুদ্ধ মানেই স্বজন হারানোর ব্যথা! আর পুষ‍্যাভূতি নরেশ রাজ‍্যবর্ধন তো সমতটের চির শত্রু। পুত্র মানব রণনীতির এসব কিছুই বোঝে না এখনো। মহেন্দ্রর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা প্রয়োজন।

ওখানেই স্কন্ধাবার ফেলতে বলে গৌড়াধিপ এগিয়ে যান মহেন্দ্রর সঙ্গে।

 মালবরাজ দেবগুপ্তর পরিণতি শুনে প্রস্তরবৎ মর্মরমূর্তির মত হয়ে গেছিল শ্রী। মনে মনে সে কর্তব্য স্থির করে ফেলেছে ।

(৭)

-"আর কত রক্তপাত মহেন্দ্র? আর কত নিরপরাধ গন হত্যা? পরম মিত্র মালবরাজের এই পরিণতি, গৌর সেনাপতির এই পরিণাম আমি তো চাইনি।'' একটি বড় পিপ্পল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাহাকার করে ওঠে গৌড়াধিপ।

-''কিন্তু সম্রাট, আমরা চাইলেই তো যুদ্ধ বন্ধ হবে না। ওরা এগিয়ে আসবে কর্ণসুবর্ণর বুকে। বাংলার বুকে আগুন জ্বলবে। হিন্দুদের বৌদ্ধধর্ম গ্ৰহনে বাধ্য করবে ওরা।প্রতিটা বৌদ্ধ মঠ ওদের দলে। ওদের আটকাতে হলে...''

-'' ওদের আটকাতে হলে যুদ্ধ নয় সন্ধির পথে হাঁটতে হবে। আর রক্ত নয় বন্ধু। একটি সেনাকেও আর হারাতে চাই না। '' বাংলার সূর্য শশাঙ্কের গলায় দৃঢ় স্বর।

-''সন্ধি!! গৌড়াধিপ মাথা নত করে তবে সরে দাঁড়াবে রাজধর্মর থেকে?''

-'' না, আমি শ্রীময়ীর সঙ্গে রাজ‍্যবর্ধনের বিবাহ দিয়ে আত্মীয়তার মধ্যে দিয়ে শেষ করবো এ শত্রুতা। কারণ মানব পারবে না বাংলাকে এভাবে রক্ষা করতে। আত্মীয়তাই একমাত্র পথ। এখনি রাজশ্রীকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হোক, এ আমার আদেশ। আর স্থানেশ্বর নরেশ রাজ‍্যবর্ধনকে কাল আমাদের শিবিরে আমন্ত্রণ জানানো হোক, আমার কন্যার বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে স্বয়ং তুমি রওনা দেবে এখনি। আর একটিও বলিদান আমি চাই না।যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।''

-''কিন্তু বন্ধু, শ্রীময়ী কি রাজি হবে? ওর সঙ্গে একবার আলোচনা...''

-'' সম্রাটকে নয়, এ প্রশ্ন করেছে আমার পরম মিত্র এক পিতাকে। আর বঙ্গদেশে এখনো জামাতা নির্বাচন করেন পিতা বা বয়ঃজ‍্যষ্ঠ। শ্রী আমার গর্ব। জন্মভূমির সম্মানে যে নারী অসি ধারণ করে সে নারী পিতার মান রাখবেই। তুমি এখনি বেরিয়ে যাও। ''

-''কিন্তু শ্রী এর জন্মবৃত্তান্ত না জানিয়ে এভাবে...''

-'' মহেন্দ্র, শ্রী আমার কন্যা। এই পরিচয় কি যথেষ্ট নয়!''

বিস্মিত হয়ে ওঠে মহেন্দ্র। সম্রাটের গলার এ স্বরের অর্থ সে জানে। কাল বিলম্ব না করে সে রওনা দেয় শত্রু শিবিরের দিকে।

(৮)

স্থানেশ্বর নরেশ রাজ‍্যবর্ধনের সঙ্গে এসেছেন মাত্র দুজন অমাত্য। যুদ্ধ সন্ধি বলে নয়, আত্মীয়তার আহ্বানে সারা দিয়েই রাজ‍্যবর্ধন এসেছেন গৌড় শিবিরে। গৌড় সম্রাটের কন্যার প্রশস্তি আগেও শুনেছেন তিনি, কিশোরী কন্যা শুধুই সুন্দরী নয়, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্না, এবং বৌদ্ধ ভক্ত। বৌদ্ধ সংঘাশ্রমগুলিতে রাজকন্যার দানধ্যানের কথা এর আগেও গুপ্তচর মারফত পেয়েছেন তিনি। রণাঙ্গনেও কন্যা নাকি পিতার সঙ্গেই আছে সে। স্থানেশ্বর নরেশ রাজ‍্যবর্ধন তাই গ্ৰহন করেছেন এ সন্ধি প্রস্তাব।মহেন্দ্রর সঙ্গেই পরদিন এসেছেন গৌড় নরেশের সঙ্গে সাক্ষাতে।রাজশ্রীকেও সসম্মানে ফেরত নিয়ে যাবেন তিনি।

 

প্রথমেই মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন, শ্রী নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এ ভার। সম্রাট শিবিরে মেঝেতে গালিচার উপর পাঁচটি আসন। রৌপ্য নির্মিত পাত্রে চুড়া করে অন্ন, শাক ভাজা, পঞ্চ ব্যঞ্জন, বঙ্গ তনয়ার হস্তে রন্ধিত মৎসর পাঁচ পদ, আমের চাটনি, মিষ্টান্ন ও শেষ পাতে মিষ্টি দৈ।

শ্রীময়ীর পরনে আজ বঙ্গ দেশীয় রেশমের একখণ্ড কাপড়। অপরূপা কিশোরীর রূপ যেন আরও খুলেছে।

স্থানেশ্বর নরেশ রাজ‍্যবর্ধন আজ অভিভূত।এক পক্ষকালের মধ্যে এ নারী তার অঙ্কশায়িনী হতে চলেছে। তবুও প্রতিটা খাবার প্রতিহারকে খাইয়ে পরীক্ষা করেই খাওয়ার রীতি। ভোজন পর্ব মিটতেই মহেন্দ্রর সঙ্গে মহারাজের দুই সঙ্গী পাশের শিবিরে গেলেন বিশ্রাম নিতে। সম্রাট শশাঙ্ক ও স্থানেশ্বর নরেশ রাজ‍্যবর্ধন রাজকীয় বিশ্রাম শিবিরে প্রবেশ করলেন। শ্রী পান সেজে নিয়ে এসেছিল। শ্রীয়ের হাত থেকে পান নিয়ে মুখে ফেলে স্থানেশ্বর নরেশ সুখ স্বপ্নে বিভোর হলেন।

কিন্তু কয়েকটা মুহূর্ত… তারপরই লাফিয়ে উঠতে গেলেন রাজ‍্যবর্ধন, পারলেন না। চিৎকার করতে চাইলেও স্বর বার হচ্ছে না আর গলা দিয়ে, হাত পা নাড়তে পারছেন না আর, সব স্নায়ু অবশ হয়ে আসছে । অতিকষ্টে একবার গৌড়াধিপের দিকে আঙ্গুল তুলেই হেলে পড়লেন শয্যায়।

শ্রীয়ের মুখে ছড়িয়ে পড়ল স্মিত হাসি।

-''এটা কী করলি তুই? কী মিশিয়েছিলি ওঁর পানে? মহেন্দ্র.. রাজবৈদ‍্য.. কে কোথায় আছে খবর দে। উনি যে আমাদের অতিথি!''

-'' শত্রুর শেষ রাখতে নেই পিতা, ও আমাদের চির শত্রু। তাই...''

-''চুপ কর নীচ। এ ছলনা! নিরস্ত্র অবস্থায় এ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিষপ্রয়োগে হত্যা তো কাপুরুষের কাজ। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে গেল গৌড়াধিপের নাম। ইতিহাস আমায় ক্ষমা করবে না। '' দু হাতে নিজের চুল টেনে ধরেন সম্রাট।

-" শান্ত হন পিতা। এই ব্যক্তি মালবরাজ দেবগুপ্তের হত্যাকারী। আপনার কন্যা মালবরাজের পাণিপ্রার্থী ছিল। প্রকারান্তরে...''

-''ধিক, ধিক তোর মত নীচকে। ধিক এই হাত দুটোকে যে তোকে একদিন শ্বাপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে জীবন দিয়েছিল।ধিক মহারাণীকে, যে মানবের সঙ্গে তোকে কখনো আলাদা করেনি। নিজের স্তন পান করিয়ে তোকে এত বড় করেছে।ধিক আমায়, যে তোকে নিজের পরিচয় দিয়েছে...''

সম্রাটের চিৎকারে মহেন্দ্র সহ দুজন অতিথি ছুটে এসেছে ততক্ষণে।

রাজ‍্যবর্ধনের মৃতদেহ দেখে হতবাক দুজন চিৎকার করে ওঠে, -'' এ ছলনা। এভাবে বিবাহ প্রস্তাব দিয়ে ডেকে এনে হত্যা...!!'' মহেন্দ্রর অসি ঝলসে ওঠে তৎক্ষণাৎ। বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দুজন শেষ।

-''এ কী করলে মহেন্দ্র? ''

-'' এ ছাড়া উপায় ছিল না সম্রাট। কোনও সাক্ষী রইল না এ ঘটনার। যুদ্ধ শেষ। নিশ্চিন্তে আপনি এখন ফিরে যান কানসোনায়।”

-“কী বলছ মিত্র? আমি পালিয়ে যাব? স্থানেশ্বর নরেশের ভগিনী…।”

-“ রাজশ্রী বনাঞ্চলের দিকে পালিয়ে গেছে এখনি খবর পেলাম। ''

-'' না মহেন্দ্র। ইতিহাস আমায় কাপুরুষ বলবে। এ লজ্জা... ধিক আমায়।ঐ ডাইনীকে আমিই বড় করেছিলাম। কালসাপ হয়ে সে আজ ছোবল মারল আমার চরিত্রে।"

-''কী আমার জন্ম পরিচয়? কে আমার পিতা মাতা? আমি কার সন্তান?'' স্কন্ধাবারের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রস্তরবৎ এক নারীমূর্তি প্রশ্ন করল ।

-'' তুই এক ভিনদেশী বৌদ্ধ শ্রমণের পাপের বোঝা। বৌদ্ধদের বিশ্বাস করাই উচিত নয়। তোকে জঙ্গলে এক চিতার মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলাম আমি এই মহেন্দ্র একমাত্র সাক্ষী। মানব তখন কয়েক মাসের শিশু।মহারাণী তোকে বুকে তুলে নিয়েছিল প্রথম দর্শনেই। কখনো মানবের থেকে তোকে আলাদা ভাবিনি আমরা। তার প্রতিদান আজ এভাবে শোধ করলি তুই।বৌদ্ধ সংঘগুলোর মত তুই ও বিশ্বাসঘাতক!'' ধপ করে বসে পড়েন গৌড়াধিপ।

স্কন্ধাবার ছেড়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় শ্রীময়ী। এ সব কী শুনল সে!! গৌড় তার মাতৃভূমি নয়। এরা তার পালক পিতা মাতা।

গোধূলির শেষ আলো গায়ে মেখে নিবির অরণ্যে প্রবেশ করে নিরস্ত্র শ্রী। আজ আর কোনও শ্বাপদকে ভয় নেই তার।

(৯)


রাতেই স্কন্ধাবার তুলে কানসোনার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সম্রাট। রাজশ্রীকে খুঁজে পায়নি সেনারা। শ্রীয়ের খোঁজ করেননি আর তিনি। কন্যার সঙ্গে সেদিন মৃত্যু ঘটেছিল এক ধর্ম সহিষ্ণু সম্রাটের। রাজ আদেশে পথে যত বৌদ্ধ বিহার ছিল ধ্বংস করতে করতে এগিয়ে চলে তার সৈন্য বাহিনী।এমনকি পাটলিপুত্রের বৌদ্ধবিহার থেকে বুদ্ধের পদচিহ্ন আঁকা প্রস্তর খণ্ড গঙ্গা বক্ষে নিক্ষেপ করলেন তিনি। বোধিবৃক্ষ কেটে ফেলার আদেশ দিলেন। এমনকি বৃক্ষ মুলগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজাদেশে। ধর্মের পথে হেঁটেও যখন এত বড় কলঙ্কের বোঝা ঘাড়ে চাপল সব শেষ করে দেবেন তিনি এবার। দু দিনের ভেতর রক্ত মৃত্তিকাকে খালি করতে আদেশ দিলেন। ব্রাক্ষ্মণরা এ সুযোগের সৎ ব্যবহারে যুক্ত হল। ইতিহাসে শ্রীয়ের কথা নেই, নেই কোনও কার্য কারণ। রয়েছে রাজ‍্যবর্ধণকে গুপ্তহত্যার দায়ে কলঙ্কিত এক ধর্ম বিদ্বেষী গৌড় সম্রাটের কথা।

 

 

 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy