The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sangita Duary

Abstract Tragedy Classics

4.5  

Sangita Duary

Abstract Tragedy Classics

মাছের ঝোল

মাছের ঝোল

5 mins
674



দুইথাকের টিফিন ক্যারিয়ার খুলে ভাত আর মাছের ঝোলটা নামিয়ে রাখলো বাণী। চুপড়ি দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখে। বারোটা বাজে, খালের জল এখন জোয়ার ভরে টইটুম্বুর। একটা ডুব দিয়ে আসতে হবে।


প্লাস্টার না হওয়া ইঁট বের করা এক কামরার ঘরের পাশে গাছের গুঁড়ি ফেলে ঘাট মত করা। খালের জলেই বাণীর স্নান ধোওয়া নিত্যকর্ম।


জয়ীর বাপটা যখন মরে গেল, কতই বা বয়স বাণীর? পঁচিশ, জয়ী তখন সবে হাঁটতে শিখেছে।


দিব্যি সকালবেলা চারটি পান্তা খেয়ে রঙের কাজে গেলো, বিকেল বেলা খবর এলো মাচা থেকে পড়ে গিয়ে পাঁজর ভেঙেছে নিখিলের। সেই সঙ্গে মাটিতে স্টোনচিপ, পেরেক পড়েছিল, পাঁজর ফুঁড়ে বাঁশের চাঁচা কঞ্চি ঢুকে গেছে ফুসফুস ভেদ করে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। বাবুরা এক লাখ টাকা দিয়েছিল। কি হবে ওই টাকায়? মানুষটাই যখন চলে গেল!


জয়ীকে কোলে নিয়ে তখন বাবুদের বাড়ি বাড়ি রাতদিনের কাজ করেছে।


সবাই সমান নয়, কতজনই বলেছে মাইনে বাড়িয়ে দেবে সেই সঙ্গে উপরিও। যদি উপরি কোনো সাধ মিটিয়ে দেয় বাণী।


বাণী রাজি হয়নি, ছেড়ে দিয়েছে সেই কাজ, আবার নতুন কাজ খুঁজেছে, দোকানে দোকানে ঝাড়পোঁছ করেছে, সিন্ডিকেট ব্যবসায় ইঁট বয়েছে মাথায় করে, তবু ইজ্জত বিকিয়ে দেয়নি। ওই তো একমাত্রই সম্পদ ওর, ওটাও খুঁইয়ে দিলে মেয়ের সামনে দাঁড়াবে কোন মুখে?


জয়ীটার লেখাপড়ার মাথা ভালো। ইস্কুল ঘর করতো শুধু বড় হওয়ার পর, সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকতো, বাণীও স্বপ্ন দেখতো, মেয়েকে অনেক লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো ঘরে মেয়ের বিয়ে দেবে। এই এক বছর হলো জয়ীর বিয়ে দিয়েছে বাণী। জয়ী নিজেই পছন্দ করে নিয়েছে, বালিচক বাসস্ট্যান্ডে ছেলেটার নিজের চারটে বাস চলে। ভাড়া খাটায়, সে নিজেও একটা চালায়। আয় ইনকাম ভালোই, কোন এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে জয়ীর সঙ্গে আলাপ, তারপর ছেলে নিজেই যেচে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।


একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কোনো কমতি করেনি বাণী, শ্বশুরঘর থেকে মেয়েকে যেন কোনোদিন শুনতে না হয়, বাপ নেই বলে মা নমো নমো করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।


তাছাড়া ওই একটিই তো আদরের ধন বাণীর ওরও তো ইচ্ছে হয় বাবুদের ঘরের মত তার মেয়ের বিয়েও ওমনি করে হোক!


অনেক ধার দেনা হয়ে গিয়েছিল বাণীর।


ধীরে ধীরে শোধ করেছে, ছটার বদলে আটটা আরো কাজের বাড়ি নিয়েছে। দিন রাত এক করে খেটেছে, ঘরে ফিরেও জরি করেছে, মরার আগে সব দেনা শোধ করে যেতে হবে যে!


ক্লান্তিহীন কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বাণী। ডাক্তার একদম রেস্ট নিতে বলেছে। কিন্তু তাতে বাণীর চলবে কি করে!


তাই এখন শুধু দুটো বাড়িতে রান্নার কাজ করে, খাওয়া ছাড়াও হাতে সাতশো করে টাকা দেয়। এই ঢের।


বাবুদের বাড়িতে আজ অনেককিছুই রান্না হয়েছে, বাবুর মেয়েজামাই এসেছে বিদেশ থেকে, সকাল থেকে তাই অনেক বাঙালি রান্না হয়েছে। গিন্নিমা বলেছিলেন বাণীকে খেয়ে যেতে, বাণী রাজি হয়নি। নিজের ভাগের খাবারটুকু নিয়ে বাড়ি চলে এসেছে। চান সেরে কুলঙ্গিতে রাখা শিবের মাথায় অল্প জল দিয়ে পুজো সাড়ে বাণী। কদিন ধরেই মেয়েটার জন্য মনটা কেমন করছে, অতদুরে থাকে, জামাইও সারাদিন গাড়ি নিয়ে বাড়ির বাইরে, ফেরে সেই মাঝরাতে। সারাদিন কি করে জয়ী একা একা?


ভাতের সামনে বসতেই ফোনটা বাজে। গার্ডার দিয়ে আটকানো ফোনটা কানে চেপে ধরে বাণী, "জয়ী, কি করছিস, হ্যারে আমি খেতে বসেছি সবে। তুই খেয়েছিস? কি খেলি? ডিম? আজও ডিম, কেন রজত মাছ এনে রাখেনা কেন?... তা বললে কি হয় মা, স্বামী সারাদিন কি খেলো না খেলো ভেবে তুইও খাবিনা? এমন করিস না মা, আচ্ছা আমি রজতকে বলবো কাল বেরোনোর আগে তোর জন্য যেন বাজার থেকে মাছ এনে রাখে।"


ফোন রেখেও মনটা ভার হয়ে গেল বাণীর। জয়ীটা মাছ খেতে এত ভালোবাসতো, আজ দূরে বাজার বলে মেয়েটা মাসের পর মাস মাছ না খেয়ে আছে?


ভাতকটা মাছের ঝোলে মেখে রাস্তার কুকুরটাকে খাইয়ে দিলো বাণী, মায়ের মুখে কি করে রুচবে ওই মাছ?


****************************


 ফোন রেখে হাপুস নয়নে কেঁদে ফেলে জয়ী। সামনে হোটেল থেকে দেওয়া ভাতের আমিষ থালি।


মিথ্যে বলতে হয় মাকে। মা জানুক, রজতকে নিয়ে কত সুখে আছে জয়ী।


প্রথম যেদিন জানলো জয়ী রজত একটা লম্পট, টাকার জন্য নিজের বিয়ে করা বউকেও বাজারী বানাতে পারে, সেদিনই ভেবেছিল মার কাছে ফিরে যাবে।


কিন্তু আজীবন কষ্ট করা বিধবা মা তার সর্বস্ব নিংড়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল, এটা জানবে বলে যে তার মেয়ে এখন একটা বেশ্যা!


মা টা তো তার মরেই যাবে তাহলে!


রজত এসে তাগাদা দেয়, "তাড়াতাড়ি কর, বিকেলের অ্যাডভান্স নেওয়া আছে। শোন, হিন্দুস্তানী বাবু, এরা বাঙালি মেয়ে চেটেপুটে খায় ,একটু বেশি নরম হবি বুঝেছিস?"


রজত চলে যাচ্ছিল, কি ভেবে ফিরে এলো, "তোর মা ফোন করেছিল, কি মাছ কিনে নিয়ে আসার কথা বলছিল। আমি ব্যস্ত আছি বলে কাটিয়ে দিয়েছি। তুই যখন তখন আমাকে ফোন করতে বারণ করবি, কখন কি বলে ফেলবো..!"


রজত চলে গেছে। ধড়াম শব্দে বন্ধ হয়ে গেল ঘরের দরজা। সময় হয়ে আসছে, রং মাখতে হবে মুখে, উদ্দাম করতে হবে যৌবন, কষ্ট মুছে চোখে ফোটাতে হবে কামনা। তবেই না স্বামীকে খুশি করতে পারবে জয়ী, মায়ের আশীর্বাদ ফলপ্রসূ করতে পারবে, "স্বামী সোহাগী হ মা, সংসার তোর সুখ সোহাগে উছলে উঠুক!" মাঝবয়সী কাস্টমার। জয়ীর মনোরঞ্জন পদ্ধিতিতে মুগ্ধ হয়েছে ভীষণ, কথাও দিয়েছে, আর কেউ না, জয়ীকেই সে গুলবাহারের ফুল বানিয়ে রাখবে।


এলোমেলো বিছানায় ড্রিংক খুলে বসে জয়ীর হিন্দুস্তানী পুরুষ, "মেরে জান, ঔর একটু সরাবী হয়ে যাও, তোমাকে যে আমার বড্ড মনে ধরেছে ডার্লিং!"


জয়ী মদের গ্লাসে এক চুমুক দেয়, ভিজে ঠোঁট থেকে লাল রং আঙুলে মুছে সেটা কাস্টমারের গালে লাগিয়ে দেয়, "আমাকে তোমার কতটা ভালো লেগেছে জানু? অনেক অনেক?"


হিন্দুস্তানী পুরুষ দুই বাহু দুইদিকে বিস্তার করে বোঝায়, "অনেক..."


জয়ী মাদকতা মেখে গলা জড়িয়ে ধরে, "যা চাইবো তাই দেবে?"


পুরুষ জয়ীর কোমরে আলতো চাপ দেয়, "বোলো, ক্যায়া চাহিয়ে তুমহে, রুপিয়া, গেহেনা, শাড়ি..., সব কুছ তুমপে কুরবান মেরে রসগুল্লা!"


জয়ী ব্যথিত চোখে তাকায় পুরুষের দিকে, "আমায় এক থালা মাছ ভাত খাওয়াতে পারো!" যন্ত্রনায় শরীর ভেঙে যাচ্ছে জয়ীর। অবাঙালি কাস্টমার খুশি হয়ে রেট ডবল করে দিয়েছে।


এই আনন্দে রজতেরও জয়ীর প্ৰতি প্রেম আজ জেগে উঠেছে দ্বিগুণ। পরপর তিনটে পুরুষকে খুশি করার পর রজতের বিছানাটা আর আলাদা করে কোনো আনন্দ দেয়না জয়ীকে, দেয় যন্ত্রণা।


সকাল হয়ে গেছে। এখনো পাশের বালিশে তৃপ্তি মেখে ঘুমোচ্ছে রজত। জয়ী মাকে ফোনে ধরে, গলায় সুখ ফুটিয়ে বলে, "কাল তোমার জামাই ফেরার সময় দুই কেজি ইয়া বড় কাতলা এনেছে মা, কাল রাতে গোটা মুড়োটা আমি খেয়েছি। আজও খাবো, কালও খাবো। নুন হলুদ জলে কাঁচা মাছ চুবিয়ে রাখলে পচে যাবে না তো মা?"

 বাণী হয়তো বুঝতেই পারলোনা ঠিক কতটা সুখী হয়েছে তার বুকের পাঁজর, তার জয়ী!!





Rate this content
Log in

More bengali story from Sangita Duary

Similar bengali story from Abstract