গল্পের নায়িকা
গল্পের নায়িকা


কালও ভোর রাত পর্যন্ত দেবী অর্কের শিয়রের সামনে বসেছিল।
ভোরের আলো ফুটলেই তার আর দেখা দেওয়ার অনুমতি থাকে না, তাই ঘুমন্ত অর্কের চুলে হালকা আঙ্গুল ডুবিয়ে সে চলে যায়।
আবার আসে পরের রাতে, আসলে অর্ক একা একা রাত জগতে পারে না। আবার রাত না জাগলে মনের গহীন থেকে অনুভূতি কুরোনো গল্প লিখবে কেমন করে? আঁধারেই তো নিঃসঙ্গতা আসে আর নিঃসঙ্গতা এলেই সৃষ্টি আসে।
তবে রোজ অর্কটা বড্ড বিপদে ফেলে দেবীকে। ফেরার সময় এমন জড়িয়ে থাকে, দেবীর অশরীরী শরীরেও সেই আগের শিহরণ খেলে যায় বারবার। কষ্ট হয় দেবীর, ভীষণ কষ্ট হয়।
একদিন কিন্তু জীবন'টা এরকম ছিলনা।
তখন বেশি রাতে বাড়ি ফিরে বেড়ে রাখা ভাতের জন্য মুখ ঝামটা খেতে হত রোজ অর্ককে, কিংবা সংসারে 'অতিরিক্ত মানুষের' তকমাটা বেশ ভালো মতোই সেঁটে গিয়েছিল পিঠে, ঠিক তখনই এক বৃষ্টির রাতে আলাপ হয়েছিল দেবীর সাথে। একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে।
কলকলিয়ে কথা বলতো দেবী, দারুণ গান গায়তো, অর্কর ঘুমহীন ব্যর্থ রাতগুলো ভরিয়ে রাখতো গানে, বলতো, "তুমি ঘুমোও, আমি আছি, ফোন কেটো না, তোমার ঘুমের শব্দটা শুনবো!"
যেদিন দেখা হলো ভিক্টরিয়ায়, একপ
লকেই অর্ক বুঝেছিল, দেবীকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবেনা।
কিন্ত পরদিন সকালের বাস দুর্ঘটনার খবরটা বদলে দিলো সবকিছু।
সেদিন রাতেও দেবী এলো। স্বপ্নে। বললো, "পারো না, আমাদের গল্পের একটা নাম দিতে?"
রাতের পর রাত অপ্রাপ্তিগুলো কলমের স্পর্শ পেয়ে প্রাণ পেলো ধীরে ধীরে।
অর্কর "অপ্রাপ্তির আঙিনায়" এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বহুপরিচিত সাহিত্য পেজ।
পাবলিশার্সও জুটে গেছে খুব কম সময়ে।
বইয়ের প্রি-বুকিং প্রত্যেকবারই হাউসফুল হয়ে যায়।
তার সদ্য-সমাপ্ত উপন্যাস "হৃদয়ের বাঁকে" অসামান্য সাফল্য পেয়েছে।
এবার ক'টা দিন ছুটি নেওয়ার পালা। খানিক বিশ্রাম।
গতকাল খাওয়ার সময় লিলি বলছিল কালিম্পঙের কথা। লিলির সঙ্গে সংসারের বয়স সবে একমাস।
পাহাড়ের কোল দেবীরও বড্ড প্রিয় ছিল!
দেবীও নিশ্চয়ই থাকবে তার সাথে, নাহয় আগন্তুক হয়েই, শেষরাতে লিলির ভূমিকা শেষ হলে ভোর ফোঁটার আগে পর্যন্ত, যেমনটা থাকে প্রতিনিয়ত!
জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিতেই টেরচা রোদ চোখে ঝাপটে পড়লো।
ছেঁড়া ছেঁড়া সকালে অর্ক স্পষ্ট দেখলো দেবী হাসছে মিটিমিটি।