Sangita Duary

Fantasy Inspirational Others

3  

Sangita Duary

Fantasy Inspirational Others

সিদ্ধান্ত

সিদ্ধান্ত

4 mins
285


দোলের সময় মামারবাড়ি চলেছে চিনি। ট্রেনে চেপে। জানালার দুই পাশ দিয়ে সারসার ধানের ক্ষেত, কখনও বা টানা ঝিল। চিনির দারুন লাগে এগুলো দেখতে। তার সঙ্গে সবই কিরকম ছুটছে, কোনো একটা জিনিস চোখ আটকানো যায় না, চোখটাকেও দৌড় করাতে হয় ট্রেনের সঙ্গে!মামারবাড়ি যেতে দারুন মজা।

মামার বাড়ি গিয়েও দারুন মজা। দাদুর বাড়িতে অনেক কালের পুরোনো একটা মন্দির আছে। তার সামনের চাতালে প্রত্যেক বছর দোল উৎসব হয়। দোলনা টাঙানো হয়, আবির গোলা হয়, ঠান্ডা শরবত, অমৃত, গজা নানান খাবার সাজানো হয়। অনেক লোক আসে বাড়িতে সেদিন। সারাদিন রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়, হরিনাম সংকীর্তন হয়, দোলেরও গান হয়, আর সন্ধ্যেবেলা, ইয়া বড় হাঁড়িতে খিচুড়ি বসে, কত লোকে খায়!

চিনির অবশ্য ওইসবে কোনো আকর্ষণ নেই। সে দোলের দিনেই হোক, আর অন্য যে কোনো সময়েই, মামার বাড়ি মানেই, কোনো হোমটাস্ক নেই, স্কুল নেই, কোচিং নেই, সর্বোপরি মায়ের বকুনি নেই। শুধু মজা আর মজা। যা খেতে ইচ্ছে হয়, একবার দাদুভাই কে বললেই হলো, চোখের নিমেষে চিনির সামনে হাজির। সারাদিন ধরে চিনি দাদুভাই-এর সঙ্গে ধানের ক্ষেতে হেঁটে চলে, পুকুর পাড়ে বসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরে আর সন্ধ্যেবেলা অল্প আলোয় দিদুনের কোলে বসে রূপকথার গল্প শোনে! উঃ! চিনি সবসময়ের জন্য মামারবাড়ি থাকে না কেন!

এবারে মামুরাও আসছে মুম্বাই থেকে, সঙ্গে মামীমা আর পুপাই দাদা। চিনির ভাবতেই যে কি মজা লাগছে, না! পুপাই দাদার সঙ্গে হোলি খেলবে চিনি, মাকে লুকিয়ে অমৃত্তিও খাবে দুজন।

উঃ! আর কতক্ষন ? পুপাই দাদারা কি এতক্ষনে পৌঁছে গেছে? দাদুভাই চিনির জন্যে যে লাটাই ঘুড়ি কিনে রাখবে বলেছিল, পুপাই দাদা যদি নিয়ে নেয়?

চিনি অধৈর্য হয়ে মাকে শুধায়, "ও মা আর কতক্ষন?"

একি! মা বাবা দুজনেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কখন!

*******************************************

দোলের দিন ভুবনপুরের মুখার্জি বাড়ির পুজো সাতগ্রাম জানে। একদম সনাতনী রীতিতে দোল খেলা হয়।

তবে এবারের দোলটা অন্য বছরের তুলনায় একটু আলাদা। নিরঞ্জন নিজে যেচে চিঠি দিয়ে ছেলে মেয়েকে ডাকিয়েছেন ,যেন অবশ্যই তারা আসে। আর কতদিনই বা বাঁচবেন বৃদ্ধ!

********************************************

গতকালের ঝক্কিটা কম হলো না! তবু ঝক্কি থাকলেও জীবনে এরকম এক অধটা দোল রাখতেই হয়, নাহলে আর জীবনের মানে কি?

বহুদিন পর দেশের বাড়ি এসে ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে একেবারে মজে গিয়েছিল অয়ন। আজ দুপুরে একপেট মাছের ঝোল ভাত খেয়ে একটু গড়িয়ে নিচ্ছিল। বোধহয় বেশ বিকেল হয়ে গেছে। চায়ের কাপ হাতে সায়নী ঢোকে ঘরে, "কি রে এখনো ল্যাদ খাচ্ছিস?"

বোনের হাত থেকে কাপটা হাতে নিয়ে বিছানায় উঠে বসে অয়ন, "সারাবছর তো গড্ডালিকা প্রবাহ, একদিন শুলাম, তোর সহ্য হচ্ছে না? তুইও তো ঘুমিয়ে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিস!"

কাপে একটা চুমুক দেয় অয়ন, "এইটা খুব দরকার ছিল রে! তোর বৌদি কোথায় রে? পুপাই? বাকিরা, তোর কত্তা, চিনি, কারোর শব্দ নেই কেন?"

সায়নী জানালা বন্ধ করছিল, "সবাই নাটমন্দিরে। তুইও চল, বাবার তলব!"

চা টা শেষ করে টেবিলে নামিয়ে রাখে অয়ন, "কি কেস রে, ব্যাপারটা সাসপিশাস মনে হচ্ছে, নাহলে বাবা তো কোনবছর এমন পত্রপাঠ ডাকেনা আমাদের, এই বুল্টি, তুই জানিস কিছু?"

সায়নী ঠোঁট ওল্টায়, "তুই যেই তিমিরে, আমিও ঠিক সেই তিমিরেই। এখন চল, ওঠ, বাবা অনেক্ষন ডেকেছে।"

********************************************

একটি করে চেক ছেলে এবং মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলেন নিরঞ্জন, "এই বাড়িটা ছাড়া, বর্তমান আমার জমি জমা যা কিছু ছিল, সব কিছু বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ আমি তোমাদের দুজনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিলাম। এটা তোমাদের দুজনেরই প্রাপ্য। ধরো।

বাড়িতে এখন পিন পড়ার নিস্তব্ধতা।

অয়ন বলে ওঠে ,"কিন্তু বাবা, এক্ষুনি এসবের কি কোনো দরকার ছিল?"

-"দরকার ছিল। মানুষের শরীর, কখন কি হয়, তাছাড়া কয়েকটা ঘোষণাও করতে চাই আমি, তাই তোমাদের এই পত্রপাঠ মারফত অত্যাবর্ষক আমন্ত্রণ।

তোমার হয়তো মনে হতে পারে অয়ন, সায়নী তো এখন পরের বাড়ির বউ, ছেলে হিসেবে তোমারই সব প্রাপ্য।

তাহলে বলি, বাবা মায়ের কাছে ছেলে মেয়ে সবাই সমান, সন্তানের আলাদা লিঙ্গ বৈষম্য হয়না। তোমায় জন্ম দিতে তোমার মার যতটা কষ্ট হয়েছে, সায়নীর ক্ষেত্রেও ততটাই হয়েছে। তোমাকে বড় করতে মানুষ করতে আমরা যতটা শ্রম দিয়েছি, সায়নীর ক্ষত্রেও ততটাই দিয়েছি। তোমার সাফল্যে যতটা খুশি হয়েছি, সায়নীর ক্ষেত্রেও ততটাই হয়েছি।

এমনকি তোমার বিয়ে, ভবিষ্যতের জন্য যতটা ব্যয় করেছি, সায়নীর ক্ষেত্রেও ঠিক ততটাই হয়েছে।"

সায়নী বাধা দেয়, "কিন্তু বাবা, আমার তো এসব...!"

নিরঞ্জন মেয়েকে থামিয়ে দেন, "কি চাও না তো? কিন্তু আমি চাই, তোমার মা চান। ছেলে মেয়ে দুজনেই যখন সমান সমান তাহলে বৈষয়িক বিভেদ থাকবে কেন? আর এই খানেই ভুল করো তোমরা, মেয়েরা। কি? নিজেদের মহান প্রমান করতে ভাইদের থেকে দাবি ছেড়ে দাও আর পরক্ষণেই সেটা সমাজে জাহির করে নিজেকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করো। এটা ঠিক না, মহিমান্বিত হও নিজের কাজে, গুনে, শিক্ষায়। আশা করি, তোমাদের আমার সিদ্ধান্তে আর কোনো আপত্তি নেই? আর হ্যা, এই বাড়িটা আমি নিজের জন্য রাখবো।"

উপস্থিত সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

নিরঞ্জন সবার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে শুরু করেন, "এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই বাড়িটা বৃদ্ধাশ্রম হবে, সেখানে আমি, তোমাদের মাও থাকবো। সব উপার্জন তোমাদের দিয়ে দেওয়ার পরেও যেটা থাকবে সেটা আমার পেনশন, তাতে আমাদের স্বচ্ছন্দে চলে যাবে। জানতো, সব সম্পর্কেই বিশ্রাম নাওএকটা দূরত্ব থাকা প্রয়োজন। অতি নৈকট্য অনেক সময় তিক্ততা এনে দেয়। তোমরা এখানে আসবে মাঝে মাঝে দেখে যাবে, যেমন এখন করো, আমরাও যাবো তোমাদের কাছে। সবই একইরকম চলবে ঠিকই শুধু চলে যাওয়ার আগে তোমরা, আমার দুই সন্তান যে অভিন্ন নও, সেটা প্রমান করে দিলাম।

ভালো থেকো তোমরা। এবার যাও,গতকাল অনেক পরিশ্রম হয়েছে তোমাদের, বিশ্রাম নাও।।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy