ডক্টর ডিকোস্টার সন্দেহ
ডক্টর ডিকোস্টার সন্দেহ
মধ্য রাত্রির গভীর সমুদ্র
লাইনার 137 জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। ডেক হাউসে ড্যাশ বোর্ড এর সামনে বসে আছে শ্রীনিবাস সুন্দরাম।
শ্রীনিবাস একজন নাবিক ক্যাপ্টেন বিশ্রাম নিচ্ছেন তাই শ্রীনিবাসের দায়িত্ব পড়েছে সারা রাত্রি জাহাজ চালানোর। রাডার রেডিও সিগনাল পুরো দমে কাজ করছে সব ঠিক থাকলেই ওরা পরশু ভোরে ভাইসাক পৌঁছে যাবে।
চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে জাহাজের ডেক। এটা একটা মাল বাহি জাহাজ তাই কোনো যাত্রী নেই। সবাই মোটা মোটি শুয়ে পড়েছে শুধু শ্রীনিবাস একই আছে ডেক হাউসে।
ডিসপ্লে তে একটা ইন্ডিকেশন আসছে বা দিকের পিছন দিক কার প্রপেলার টা কিসে যেন আটকাচ্ছে।
কিছুক্ষনের জন্য ইঞ্জিন বন্ধ করলো শ্রীনিবাস। হটাৎ ডেকের উপরে খচমচ খচমচ কি একটা আওয়াজ হলো
আওয়াজ টা কেন জানি ভালো লাগলো না ওর বেরিয়ে এলো ডেক হাউস থেকে।
সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এলো ডেকে
চাঁদের আলোয় গভীর সমুদ্র টা যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকছে । প্রায় তিরিশ ফিট দূরে ডেকের রেলিং সেখানে চোখ যেতেই আৎকে উঠলো শ্রীনিবাস সুন্দরাম ডেকের রেলিংয়ে ওটা কি বসে আছে।
একটা পেঁচা তবে স্বাভাবিক পেঁচা নয়। এই তিরিশ ফিট দূরত্বে যে জিনিসটাকে শ্রীনিবাস দেখছে সে টা পেঁচার মতো দেখতে হলেও সাইজ টা একটা পেঁচার পাঁচ গুন। একটা বাইশন বা জলহস্তীর সাইজের পেঁচা। চাঁদের আলোয় আলোকিত সাদা পেঁচা টা। চোখ গুলো হিংস্র যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। এতো বড় পেঁচা হয় নাকি এটা কি!!?
পেঁচা টা হিংশ্র দৃষ্টি তে চেয়ে আছে শ্রীনিবাসের দিকে
শ্রীনিবাস আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে পিছিয়ে আসে ।
পেঁচা টা একই ভাবে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
শ্রীনিবাস উঠে আসে ডেক হাউসে
এখান থেকে দেখা যাচ্ছে ওই দানবীয় পেঁচার অবয়ব টা। ইঞ্জিন স্টার্ট দিতেই ঝট ফট শব্দ করে উড়ে যায় পেঁচা টা। ড্যাশ বোর্ডে এলার্ম দিচ্ছে। রাডারে কোনো সিগনাল পাচ্ছে না। রেডিও সিগনাল আসছে না। শ্রীনিবাসের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
1
শীতের শেষ, বসন্ত এসে গেছে। আমার বাংলোর সামনেই সার বেঁধে অনেক গুলো কৃষ্ণ চূড়া গাছ । তারই একটায় বসে কোকিল টা অনবরত ডেকে চলেছে। কিছুটা দূর থেকেই ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন।
সামনের গাছটায় কয়েকটা চড়াই কিচিরমিচির করে ডাকছে।
আমি শামলেন্দু সান্যাল। আন্দামানে পোর্ট ব্লেয়ার এ থাকি।
পেশায় মেরিন বাইওলজিস্ট। জুলজি তে ডক্টরেট করেছি। দীর্ঘ দিন কলকাতায় শিক্ষা চর্চা করার পর আমার ডাক পরে আন্দামানের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্স এ। আমি এখন এই ইনস্টিটিউট এর একজন বৈজ্ঞানিক।
আমাকে এখানে ডেকে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য টা একটু অদ্ভুত। বিগত কয়েক মাস ধরে লোকের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে কিছু অদ্ভুত ঘটনা।
প্রচুর ছোট বড় মাল বাহি জাহাজ হারিয়ে যাচ্ছে মাঝ সমুদ্রের বুক থেকে। এখান কার ট্রাইবাল জারওয়া দের মধ্যে অনেকেই দেখেছে কিছু অদ্ভুত জীব। জারওয়ারা বলে কোনো সামুদ্রিক অপদেবতার অভিশাপ লেগেছে।
....
যাই হোক আজ রবিবার আমার ছোট বেলার বন্ধু সনামধন্য গবেষক সব্যসাচী বোস কলকাতা থেকে আসছে। সব্যসাচী এপ্লাইএড ফিজিক্স এর প্রফেসসর।
আমি বিয়ে থা করিনি। পোর্ট ব্লেয়ার শহরতলীর থেকে কিছুটা দূরে ইনস্টিটিউট এর এই বাংলো টায় আছি।
ডুপ্লেক্স বাংলো। নীচে বিশাল হল আর ডাইনিং উপরে দুটো বেডরুম একটা স্টাডি। স্টাডি আর বেডরুম গিয়ে পড়ছে একটা ঝুল বারান্দায় যেখানে একটু আগে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ছোট বেলার বন্ধু আসবে তাই নানা রকম রান্না চলছে
ইলিশ ,পমফ্রেট ,মাংস ইত্যাদি
সবটাই করছে আমার এসিস্ট্যান্ট কাম রাঁধুনি চিরন্তন।
অদ্ভুত ছেলে এই চিরন্তন ভীষণ পরিশ্রমী ভীষণ বুদ্ধিমান আর ভীষণ কম কথা বলে।
একটা মানুষের মধ্যে যে এতগুলো গুন একসাথে থাকতে পারে তা চিরন্তন কে না দেখলে বোঝা যাবে না।
আমার সাফল্যের পিছনে ওর ষোলো আনা হাত আছে।
চিরন্তনের শখ হচ্ছে মিউজিক আর ইলেক্ট্রনিক্স। আমাকে একটা মজার ঘড়ি বানিয়ে দিয়েছে । নিজের কাছেও রেখেছে একটা।
ঘড়িটা তে যে খালি সময় দেখা যায় তা নয় ।ঘড়িটায় এক টা সুইচ আছে লাল রঙের। আর আছে দুটো চিপস্। এর একটা জীভের তলায় দিয়ে এই লাল সুইচ টা টিপলেই শোনা যায় অদ্ভুত সব বাজনা।
কেউ যদি কানে শুনতে নাও পায় তবুও এই বাজনা অনুভব করতে পারবে।
দুটো চিপস্ সব সময়ই ঘড়ির খাঁজে আটকে থাকে।
"দুটো কেন" জিজ্ঞেস করতে ও বললো একটা ব্যাক আপ ,যদি আরেকটা হারিয়ে যায়।
কাল জীভের তলায় একটা চিপ্ রেখে লাল সুইচে চাপ দিতেই শুনতে পেলাম সেই অদ্ভুত সংগীত । যেন স্থান কাল পাত্রের গণ্ডি পেরিয়ে মন কে নিয়ে গিয়ে ফেললো এক অন্য জগতে।
অদ্ভুত একটা প্রশান্তির জগৎ।
ঠিক লাল বোতাম টার নীচে দুটো সফ্ট স্ক্রল সুইচ রয়েছে। কিছু একটা বাড়ানো কমানো যায়
ওটা নিয়ে খুট খাট করতেই চিরন্তন চেঁচিয়ে উঠলো
"ওটা ধরো না দাদা।
ওটা বাড়ালে বিপদ হতে পারে"
"ওটা কি"
"ওটা আসলে ফ্রীকুয়েন্সি বাড়ানো কমানোর সুইচ। বেশি বাড়ালে মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে।"
বাংলোর নিচের বৈঠক খানা আসলে এটা একটা বড় হল,
একপাশ টা ডাইনিং আর একপাশ টা লিভিং রুম । এখানে দুটো বিশাল বড় একোরিয়াম আছে।
একটা তে রয়েছে চারটে মলি আর কিছু এঞ্জেল ফিশ,
অন্যটাতে আছে দুটো টাইগার ফিশ।
একবার মাছ গুলো কে খাওয়াতে গিয়ে ঘড়ি তে লাগানো চিপ্ টা হটাৎ পরে যায় টাইগার ফিশের একোরিয়ামে।
একটা টাইগার ফিশ যেই না ওটা মুখে দিয়েছে আমি ভুল বসত স্ক্রল সুইচ গুলো টিপে দি
যেন বিদ্যুৎ র শক খেয়েছে এমন করে মাছটা প্রায় লাফিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল একোরিয়াম টা থেকে।
চিপ্ টা ওটার মুখ থেকে বার করে রেখে ওটাকে আবার একোরিয়াম টায় চালান করে দি
সেই থেকে ওই সইচ গুলো তে আর হাত দিই নি।
চিরন্তন বলে " দাদা তুমি বড্ড বেশি ভয় পাও।"
2
আজ আড্ডা জমবে ভালোই সব্যসাচী বোস মানে সব্য এমনি তেই আড্ডা বাজ ছেলে তার উপর আজ আবার ওর জন্য একটা সারপ্রাইস আছে
ওর সাথে আজ ডিকোস্টা সাহেবের আলাপ করিয়ে দেব।
ডক্টর আলভেরাজ ডিকোস্টা। পেশায় বাইওকেমিস্ট হলেও ইদানিং ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স এর কাজ করছেন ভদ্রলোক। নাম শুনতেই সোফা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো সব্য
"বলিস কি রে আলভেরাজ ডিকোস্টা সেই পাগলা বৈজ্ঞানিক যাকে বছর দশেক আগে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল সাইন্স থেকে বার করে দিয়েছিল---
কি একটা এথিক্যাল কোড ব্রেক করেছিলেন বলে
ইথারিয়াল। ইথারিয়াল না কিছুতেই মনে করতে পারছি না"।
"হ্যা উনিই প্রায় পাঁচ পাঁচ টা রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।"
"কিসের জন্য বার করা হয়েছিল ঠিক মনে করতে পারছি না কিন্তু সেই সময় ওকে নিয়ে কাগজে খুব লেখালিখি হয়েছিল"।
"হ্যাঁ উনি এসে উঠেছেন আন্দামানে।
সামনের সমুদ্র টার পাড় ধরে মাইল তিনেক গেলেই প্ৰায় তিন কিলোমিটার দূরে একটা ঝাউ বনের দ্বীপ দেখা যাবে
ঝাউ বন টা পেরিয়ে
পশ্চিম দিকে যে কাঁচা রাস্তাটা গেছে ওটার বা পাশ ধরে একটা টিলা উঠে গেছে। টিলার একটা প্রান্ত একেবারে সমুদ্রর উপর ,খাড়া নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
সেখানেই একটা ল্যাবরেটরি খুলে নিজেই রিসার্চ করে চলেছে দিন রাত্রি।
মাঝে মাঝে পোর্ট ব্লেয়ার চেস্ ক্লাবে আসেন । সেখানেই আলাপ পাগলা বৈজ্ঞানিক এর সাথে ।
এতক্ষনে সব্য ওর মোবাইলে ইন্টারনেট খুলে ফেলেছে
"আসলে এত স্লো নেট তোর এখানে,ডক্টর আলভেজ ডিকোস্টা
হ্যা ঐতো
মিস্টারিয়াস ডিসপেয়ারেন্স অফ সায়েন্টিস্টস ওয়াইফ।"
আমি ঝুকে পরে দেখতে চেষ্টা করলাম
না নেট আসছে না
"বউ টা হারিয়ে যাওয়ার পরই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন মনে হচ্ছে" বললো সব্য।
"কিন্তু আমার ভদ্লোককে দেখে বা কথা বলে একবারের জন্যও পাগল বলে মনে হয় নি" আমি বললাম
"বটে -কি বলল",
"বললেন একদিন চলে আসুন না আমার গবেষণাগারে।"
"তাই নাকি ,তবে আমি শুনেছিলাম প্রফেসর ডিকোস্টা নাকি খুব একটা সোশ্যাল নন।"
"তা নন অবশ্য, চেস্ ক্লাবে এসে খালি চেস্ খেলেন কথা বার্তা খুব একটা কারোর সঙ্গেই বলেন না ।তবে সেদিন আমার সাথে তো ভালোই কথা বললেন ।আমার কাজ গবেষণা ,গবেষণা পত্র সবকিছুই নিয়ে কথা হলো ।উনার নিজের বিষয় ছাড়াও জীব বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য।তাই কথা বলতে বলতে কি ভাবে সময় কেটে গেল।
সব্য একটু মুচকি হেঁসে বললো-
"তারপর তুই গেছিলি ওনার ল্যাবরেটরি তে"
সব্য ভীষণ ইনকুইসিটিভ।
"অবশ্যই তা যাবো না তবে একা যাইনি।
চিরন্তন কিছুতেই আমাকে একা ছাড়লো না। বললো "না দাদা তোমাকে একা যেতে দেব না
পাগলা প্রফেসর যদি তোমাকে সাপ বাং বানিয়ে দেয়,
আমিও যাবো তোমার সাথে।"
এবার সব্যর চোখ গুলো গোল গোল হয়ে গেছে।
"না না টুকরো টুকরো মিলে নয় আদ্য প্রান্ত পুরো এক্সপেরিয়েন্স টা বল"।
"আচ্ছা তবে শোন"
আমি শুরু করলাম-
গত শুক্রবার সন্ধ্যে বেলায় চিরন্তন কে নিয়ে ড্রাইভ করে বেরিয়ে গেলাম আমার স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড টা চেপে ।
এখানে স্পেশাল লঞ্চ ফেরি আছে যা যাত্রী শুদ্ধু গাড়ি ফেরি করে দ্বীপ টা অবধি পৌঁছে দেয়।
ঝাউ বন পেরিয়ে টিলার রাস্তা ধরে স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড টা চালিয়ে উপরে উঠতে থাকলাম ।
কিছুটা উঠতেই চোখে পড়লো অদ্ভুত বাড়িটা।ঠিক বাড়ি বলা চলে না ।পুরোনো কোনো পরিত্যাক্ত হেলথ সেন্টার গোছের বিল্ডিং। এটাই ডিকোস্টা সাহেবের ল্যাবরেটরি।
সামনের দরজায় কোনো কলিং বেল নেই ভদ্রলোক কোনো মোবাইল বা ল্যান্ড লাইন ব্যাবহার করেন না।
কয়েকবার নক করতেই ভিতরে একটা কোলাপসিবল গেট খোলার আওয়াজ পেলাম।
এবার দরজা খুলল
দেখলাম দাঁড়িয়ে আছেন শ্রীমান স্বয়ং প্রফেসর আলভেরাজ ডিকোস্টা।
এক মুখ সাদা কালো দাড়ি গোঁফের ভিতরে উকি মারছে ভদ্রলোকের টিকলো নাক টা।
সব থেকে অদ্ভুত ওর চোখ দুটো মনে হচ্ছে যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসা দুটো জ্বলজ্বলে ব্ল্যাক পার্ল ।এক অদ্ভুত খিদে ওই চোখ গুলোর ভিতরে
কিসের যেন একটা তারা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে ওই চোখ দুটো কে।
ভদ্রলোকের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি বছর তিরিশের লম্বা তরুণী। গায়ে লম্বা এপ্রোন আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।ডান চোখের পাশে একটা ছোট তিল। মোটা চশমার ফ্রেমের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে।
"ও হচ্ছে সুবর্ণা আমার ল্যাব টেকনিশিয়ান
ও আপনাদের ল্যাব ঘুরিয়ে দেখাবে তারপরে আমার এক্সপেরিমেন্ট রূমে নিয়ে আসবে।"
এই বলে ডক্টর ডিকোস্টা সামনের করিডোর দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
সুবর্ণা দেখলাম খুব ভালো মেয়ে। খুব হাসি খুশি
প্রত্যেকটা ঘর এত নিপুন ভাবে ঘোরালো যে তারিফ না করে পারলাম না।
মেয়েটি খুব স্বতস্ফূর্ত ,লক্ষ্য করলাম চিরন্তনের সাথে ওর একটা সুন্দর স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে,
একজন কম কথা বলে আর আরেকজন কথা বলেই যায়। দুজনেই বুদ্ধিদীপ্ত।
আমরা একটা অদ্ভুত ক্যাপসুলের মতো ঘর ডান দিকে রেখে এগিয়ে গেলাম।ঘরটা কে দেখে কেন জানি ভালো লাগলো না। যদিও ঘরটা বন্ধ , প্লেনের দরজার মতো ওটার দরজাটা একদম সিল্ড এয়ার টাইট।
একটা ছোট এলিভেটর দিয়ে আমরা উপরে উঠলাম। ঠিক কতটা উপরে বুঝতে পারলাম না
এলিভেটর এর দরজা খুলতেই দেখলাম শুরু রেল লাইনের মতো ট্র্যাক করা আছে
সেটা চলে গেছে গোলাকার একটা কাঁচের ঘরের দিকে
সুবর্ণা বললো এটা হলো কন্ট্রোল কাম মেডিটেশন রুম।
এই গোলাকার কন্ট্রোল বা মেডিটেশন ঘর টা অদ্ভুত শান্ত ধরণের। উপর থেকে প্রচুর পাইপ ঝুলছে আর সামনের দেয়ালে একটা বড় গোল চাকতি অনবরত ঘুরে যাচ্ছে।দুটো রাউটার লাগানো আছে এই ঘরে ।ওয়াইফাই আছে।দেয়াল টা ছাড়া পুরো ঘরটাই ট্রান্সপারেন্ট কাঁচ দিয়ে তৈরি
কাঁচের ভিতর দিয়ে নীচের হল টা দেখা যায়।এই হল টাই ডক্টর ডিকোস্টার এক্সপেরিমেন্ট ঘর। নিচের হল টা এক কথায় বিশাল।
আমরা যেই উচ্চতা থেকে হল টা কে দেখছি তা কম করে তিরিশ ফুট হবে আমাদের অনেক উপরে সিলিং। একটা ঘোরানো সিঁড়ি এই ঘরটা থেকে সোজা ডিকোস্টা সাহেবের এক্সপেরিমেন্ট ঘরটায় চলে গেছে।
আমরা আবার এলিভেটর দিয়ে নীচে নামলাম।
এবার সুবর্ণা আমাদের নিয়ে গেল এনিম্যাল রুমে ,কত যে জন্তু জানোয়ার কীট পতঙ্গ আছে এই ঘরে তার ইয়ত্তা নেই।
চিরন্তনের সাথে সুবর্ণার ভালোই ভাব জমে গেছে দেখলাম । ও হটাৎ করে ওর নিজের সেই মজার ঘড়ি আর চিপ্ টা হাত থেকে খুলে সুবর্ণা কে দিয়ে বসলো।
মজার ঘড়ি পেয়ে আর সুন্দর মিউজিক শুনে খুব খুশি সুবর্ণা।
সুবর্ণার ডান চোখের পাশে ছোট্ট তিল টা যেন মুখ টা কে আরো সুন্দর বানিয়ে তুলেছে।
আমরা এবার তিনটে প্যসেজের সংযোগস্থলে এসে দাঁড়িয়েছি।
বাঁদিকের সরু পাসেজটার একটু দূরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন ডক্টর ডিকোস্টা।
"আসুন আসুন মিস্টার সান্যাল
আপনারা একদম সঠিক সময় এসেছেন,
আমার অভিনব রিসার্চ এর আজ ফাইনাল এক্সপেরিমেন্ট।
আপনাকে উইটনেস হিসেবে রাখা যাবে"
আমরা শুরু প্যাসেজ টা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি,
"আপনার এক্সপেরিমেন্ট টা এক্সাক্টলি কি নিয়ে",,
আমি জিজ্ঞেস না করে পারলাম না
"টেলিট্রান্সপোর্ট"
"টেলিট্রান্সপোর্ট " আমি অবাক হলাম।
এবার আমরা একটা হল ঘরের মধ্যে এসে পড়েছি
হলের সিলিং এর হাইট টা বিশাল প্রায় পঞ্চাশ ফুট হবে ।
এই হল টাই আমরা উপরের ওই মেডিটেশন ঘর টা থেকে দেখছিলাম।
ঢুকেই যেটা চোখে পড়ে সেটা হলো এই বিশাল হল টার বা দিকের দেয়াল জুড়ে দানবীয় একোরিয়াম। মনে হচ্ছে চারিদিকটা সমুদ্রর নীচে আর এই বিশাল হল টা হচ্ছে একটা সাবমেরিন।
কত বিচিত্র রঙিন মাছ সাপ কাঁকড়া সাঁতরে বেড়াচ্ছে। ওমা একটা হাঙ্গর চলে গেল মনে হলো। ও বাবা একটা বিশাল বড় অক্টোপাস আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।
বিশাল হল টার আলোআধারী আর সামুদ্রিক জলের আলো একটা অদ্ভুত শান্ত অথচ রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
"এই এত বিশাল হল টা কি সমুদ্রের নীচে।"
প্রশ্নটা হটাৎ ই করে বসলাম
একটা অট্টহাসি তে হেসে পড়লেন ডিকোস্টা সাহেব
"না না ওগুলো আমার আবিষ্কৃত থ্রী ডি এল ই ডি ডিসপ্লে
সব ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ডকুমেন্টারি ভিডিও।"
কেন জানি না আমার মন কিন্তু এটা মেনে নিল না। অক্টোপাস টা দেখলাম কাঁচের আরো কাছে চলে এসেছে। একই ভাবে ড্যাব ড্যাব করে আমাদের দেখছে।
হলের ডান প্রান্তে প্রায় তিরিশ ফুট উপরে আমাদের সদ্য ঘুরে আসা মেডিটেশন ঘর টা দেখা যাচ্ছে।
হল টা মোটামুটি পরিষ্কার ,তবে
নানারকম যন্ত্রপাতি ,রাসায়নিক,মেশিন
সব সুন্দর ভাবে সাজানো।
সামনের দিকে কয়েক টা কাঁচের কোনফাইনমেন্ট তাতে প্রচুর পাখি আর গাছ গাছড়া।
এবার আমার চোখ পড়ল হলটার ঠিক সামনের দেয়ালে একটা প্রকান্ড দরজা। আগেই বলেছিলাম হলটার উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ ফুট। মাটি থেকে পঞ্চাশ ফুট অবধি বন্ধ এই দরজা টা কিসের??
সুবর্ণা বলল ওটা ইমার্জেন্সি এক্সিট।
যেখান থেকে আমরা হল টায়
ঢুকলাম তার ঠিক মুখটায় একটা টেবিল তার উপরে কাচের একটা ক্যাবিনেট। ক্যাবিনেট টার পাশেই রাখা একটা লেজার গান।
হল ঘরটার ঠিক ওপর প্রান্তে ঠিক একই রকম আরেকটা ক্যাবিনেট।
হল টার মাঝ বরাবর সিলিং থেকে ঝুলছে একটা টেলিস্কোপ এর মত যন্ত্র
যন্ত্রটার একটা নল সামনের ক্যাবিনেট এর দিকে তাক করা অন্য টা অপর প্রান্তে থাকা ক্যাবিনেট এর দিকে
টেলিট্রান্সপোর্ট সমন্ধে আমি একটু আধটু পড়েছি
যে কোনো জিনিস কে মুহূর্তের মধ্যে স্থানান্তরিত করা কে বলে টেলিট্রান্সপোর্ট করা।
প্রফেসর একটা রুবিক কিউব প্রথম ক্যাবিনেট টায় রেখে তার কাঁচ খুলে দিলেন তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন "আপনাদের মধ্যে কেউ এবার গিয়ে অপর প্রান্তে রাখা ওই ক্যাবিনেটটার মধ্যে গিয়ে বসুন।"
আমায় বাধা দিয়ে চিরন্তন গিয়ে বসে পড়লো ওই ক্যাবিনেট টার ভিতরে।
প্রফেসর বলে চললেন
"টেলিট্রান্সপোর্ট এর কৌশলে যেকোনো জিনিসকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এক মিনিটের থেকেও কম সময়ে পাঠানো বা আনা যায়।
মাঝখানে যেই যন্ত্র টা দেখছেন সেইটাই হচ্ছে টেলিট্রান্সপোর্টার।
দেখুন এবার আমি কেমন করে নিমেষের মধ্যে রুবিক কিউব টা কে এখান থেকে ওখানে পাঠিয়ে দেব।"
উল্টো দিকের দেয়ালে কত গুলো সুইচ আর হ্যান্ড রেল নিয়ে একটা প্যানেল বোর্ড তৈরি করা আছে
সেটার সামনে চলে গেলেন প্রফেসর ডিকোস্টা
কয়েকটা সুইচ টেপার পরেই নিচের দিকে টেনে দিলেন একটা হ্যান্ড রেল।
টেলিট্রান্সপোর্টারের আলো জ্বলে উঠলো।সামনের কেবিনেটের দিকে তাক করা নল থেকে বেরিয়ে এলো একটা সরু ক্ষীন রশ্মি ,যেটা পড়লো রুবিক কিউব টার উপর
রশ্মি টা যেন কিছু একটা টানছে। আলোটা যেন প্রচন্ড জোরালো হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে নিমেষের মধ্যে রুবিক কিউব টা ভ্যানিশ হয়ে গেল।
এ যেন পিসি সরকারের ম্যাজিক।
এবার আরেক দিকের নল থেকে আবার রশ্মি টা জলে উঠলো।ওটা গিয়ে পড়লো চিরণতনের উপর
হটাৎ রশ্নি টা ধপ করে নিভে যেতেই চিরণতনের হাতে রুবিক কিউব টা দেখতে পেলাম
"এ যে অবিশ্বাস্য , কি করেছেন কি প্রফেসর সাহেব "আমি না বলে পারলাম না
প্রফেসরের দৃষ্টি চিরণতনের চোখের দিকে
"ব্রাভো মাই বয়।"
3
ঘটনাটা শুনে সব্য খুবই উত্তজিত
প্রফেসর ডিকোস্টা আমাদের সাথে খাবেন না বলেছিলেন উনি এলেন ঠিক সাড়ে তিনটের সময়,
আমরা খেয়ে দেয় সিগারেট খেতে খেতে ভীম পলাশী শুনছিলাম।
চিরন্তন ওকে ভিতরে নিয়ে এলো
কেমন অদ্ভুত ভাবে উনি চিরণতনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
সব্য তো ওনাকে পেয়ে নানা রকম গল্প জুড়ে দিলো
আলোচনা আর ফিজিক্স বা বাইওকেমিস্ট্রি তে থেমে থাকলো না ইতিহাস পলিটিক্স এমন কি তন্ত্র সাধনা পর্যন্ত আলোচনা হয়ে গেল
যদিও প্রফেসর ডিকোস্টা কে কিন্তু আজ একটু টেন্সড লাগছিলো।
কিছুক্ষণ পরেচ্প্রফেসর ডিকোস্টা বললেন "যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো"।
বলুন সাহেব কি ব্যাপার,
বাইরের ঝলমলে রোদ চলে গিয়ে আকাশ মেঘলা হয়ে এসেছে। এই আন্দামানে এটা একটা সমস্যা কখন যে ঝড় হবে কখন যে বৃষ্টি নামবে কেউ বলতে পারেনা।
"আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে,উমম না না আমি নিশ্চিত মনে হয় একটা গন্ডগোল করে ফেলেছি "
বললেন ডিকোস্টা সাহেব।
"কি গন্ডগোল "আমি জিজ্ঞেস করলাম
"সেদিন যখন আপনাদের টেলিপোর্টেশন দেখাচ্ছিলাম তখন ভুল বসত আমি মনে হয় একটা কান্ড করে বসেছিলাম"
বুকটা ধড়াস করে উঠলো তবে আমি যেটা সন্দেহ করছি কদিন ধরে,,,,চিরন্তন না অন্য কিছু।
"কি কান্ড কি ভুল "আমি মনে মনে ভাবলাম।
ভদ্রলোক এর ভাবলেশ হীন চোখ দুটো যেন জ্বলছে ধক ধক করে,গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
"আসলে আপনারা আসার আগে আমি একটা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম।জেতার পোষাকী নাম
অর্গানিক মেটামরফসিস।
"সেটা আবার কি"
আমি প্রশ্ন করলাম।এবার সব্য বলে উঠলো"আসলে সব কিছুই তো ইলেক্ট্রন প্রোটন শুধু মলিকুলস গুলো আলাদা আলাদা,,প্রফেসর ওর মুখ থেকে কথাটা প্রায় ছিনিয়ে নেয় বলতে লাগলেন
আমি একটা চেষ্টা করছি ইন্টার স্পিসিস ট্রান্সফরমেশন , মানে ভাল্লুক কে বাদর বানানো যায় কিনা অথবা হাস কে সজারু বানানো যায় কি না"। কিইইই আপনার মাথা খারাপ নাকি এই রকমই তো একটা গবেষণা পত্র আপনি বার করেছিলেন না ,সব্য চিৎকার করে উঠলো।
সব্য চুপ কর:: পুরোটা বলতে দে ।ইতিমধ্যে বাইরে ভালোই ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়তে লেগেছে।প্রফেসর তার ঠান্ডা কঠিন স্বর এ বলতে লাগলো,
"আপনারা সেদিন যেই ট্রান্সপোর্টেটর টা দেখলেন নল ওয়ালা টেলিস্কোপে র মতো যন্ত্র ওটা আবার ট্রান্সফর্মারও বটে।
সেদিন আসলে দুটো প্রোগ্রাম মিশে যায়"
"মানে কি বলছেন কি আপনি"।
"ঘরঘরে গলায় বলে চললেন ডিকোস্টা, টেলিপোর্টেসন এর সাথে সাথে ট্রান্সফর্মেশন ও হয়ে গেছে সেদিন"।
"কি করে "এবার আমি একটু রেগেই বললাম।
বৃষ্টি টা জোরে পড়ছে এখন।
"আপনারা আসার আগে আমি একটা তেঁতুলে বিছে কে অজগর সাপে পরিণত করার চেষ্টায় ছিলাম
রুবিক কিউবের পিছনেই ছিল সেই লম্বা বিছে টা
আর অজগর সাপের ডিম টা রাখা ছিল চিরণতনের পিছনে
আপনারা চলে আসার পর দুটোর একটাও আমি পাচ্ছি না"। তাহলে আমার সন্দেহ টাএ সত্যি হতে চলেছে; আমি আর ভাবতে পারছি না ।
"আপনি একটু খোলসা করে বলবেন"।সব্য চিৎকার করে ওঠে।
বাইরে বৃষ্টির সাথে ঝড় হচ্ছে। শাই শাই করে হওয়া দিচ্চে।
"আপনারা কিমেরা জানেন।"
"কিমেরা?"
"হ্যাঁ- কিমেরা C H I M E R A "
ভদ্রলোক বানান টা বললেন।
কিমেরা প্রাচীন মিশরীয় দেবতা বা দানব । "
"কিমেরা"
"হ্যাঁ প্রচুর প্রাণীর সংমিশ্রনে সৃষ্টি এক প্রাণী, কিমেরা।
আমি দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করে কিমেরা বানানো কিছুটা আয়ত্ত করেছি।
"মানে কি বলতে চান আপনি ",
একরিয়ামের মাছ গুলো দেখলাম সামনের কাঁচটার কাছে এসে এক দৃষ্টি তে ডক্টর ডিকোস্টার দিকে তাকিয়ে আছে।
"সেদিন টেলিপোর্টেশন করতে গিয়ে আমি ভুল করে ট্রান্সফর্মেশন টেলিপোর্টেশন দুটোই এক সাথে করে ফেলি"।
"মানে চিরন্তন কি এখন অজগরে পরিণত হবে"
আমি জানতে চাই।
"না শুধু অজগর নয়
বিছে অজগর আর মানুষের সংমিশ্রণ"
লোকটা কি পাগল নাকি কি যাতা বলছে।
চিরন্তন নীচে নেই বোধহয় উপরে স্টাডি তে আছে।
সব্য ঘরঘরে গলায় বলে উঠলো
"সবই তো বুঝলাম ডক্টর ডিকোস্টা এখন উপায় টা কি বলুন"।
বাইরে টা অন্ধকার হয়ে এসেছে
এখন আর ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নয় বেশ মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে বজ্র বিদ্যুৎ সহ।
ডক্টর ডিকোস্টা বললেন
"আপনারা আমার ল্যাবে এসেছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যে সাত টার দিকে
আজ রোববার। ট্রান্সফর্মশন প্রক্রিয়া টা পুরোপুরি শুরু হতে সময় লাগে আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টা। এখন বাজে সোয়া চারটে মানে আমাদের হাতে এখনও দু ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট মতন আছে ,এর মধ্যেই যা করার করতে হবে । একবার ট্রান্সফর্মশন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে আর কিছুই করা যাবেনা"
"তাহলে চিরন্তন কে ফেরানো যাবে বলছেন"
"আলবাত যাবে মিস্টার সান্যাল ওকে একবার আমার ল্যাবরেটরি তে নিয়ে যেতে হবে । ক্যাবিনেটে বসিয়ে প্রোগ্রাম টা উল্টো মানে রেট্রোগ্রেড এ চালাতে হবে
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চিরন্তন আগের ফর্মে ফিরে আসবে"
"আর এক মিনিটও আমাদের দেরি করা উচিত নয় "।
সোফা থেকে উঠে পড়েছি আমি
আপনি চিরন্তন কে নিয়ে রওনা দিন আমি আর সব্য আপনাদের ফলো করছি।
আমি চিরন্তন কে ডাকতেই ও নীচে নেমে এলো
কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে ও। মুখ টা ভীষণ ভাবে ফ্যাকাশে লাগছে
বললাম তোমাকে একবার ডক্টর ডিকোস্টা সাহেবের সাথে ল্যাবরেটরি তে যেতে হবে
নেশাতুর চোখে চিরন্তন মাথা নাড়িয়ে সন্ম্মতি জানালো।
সকাল বেলা একদম ভালো ছিলো এর মধ্যেই কেমন হয়ে গেছে ও
আর আড়াই ঘণ্টা পরে যে কি পৈশাচিক কান্ড হবে সেটা ভেবে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে।
চিরন্তন কে ডিকোস্টা সাহেবের গাড়ি তে উঠিয়ে দিলাম। ডিকোস্টা সাহেব বসলেন ড্রাইভারের সিটে
চিরন্তন কে হাত ধরে তোলার সময় মনে হলো ওর হাত গুলো সাপের চামড়ার মতো ঠান্ডা খসখসে হয়ে গেছে।
তবে কি ট্রান্সফর্মশন এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
ডক্টর ডিকোস্টা চিরন্তন কে নিয়ে বেরোবার প্রায় সাথে সাথে আমি আর সব্য আমার স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড টায় চড়ে রওনা হলাম
কি একটা মনে হওয়াতে চিরন্তনের চিপ্ সুদ্ধু ঘড়ি টা আর আমার ডি ওয়ান থ্রী নাইন মাওসার টা সাথে নিলাম।
প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আমরা লঞ্চ পেরিয়ে দ্বীপ টায় পৌঁছলাম । এগিয়ে চলেছি ঝাউ বন ভেদ করে
টিলা ধরে উঠে আসতেই ঘটল একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। একটা ভয়ঙ্কর বিদ্যুতের ফলক আছড়ে পড়লো বা দিকের একটা গাছ। গাছটার একটা মোটা ডাল ভেঙে পড়ল আমাদের গাড়ি টার সামনে।
"চলে আয় সব্য"
আমি আর সব্য ঠেলে টেনে হিচড়ে ডাল টা কে সরালাম।
মুষল ধারার বৃষ্টি তে দুজনেই ভিজে গেলাম।
4
বৃষ্টি বাদল মাথায় নিয়ে আমরা যখন ল্যাবরেটরির কাছে পৌঁছে গিয়েছি তখন বাজে প্রায় ছটা।
সুবর্ণা আমাদের জন্য সদর দরজায় অপেক্ষা করছিল
কেমন যেন থম মেরে আছে ও।
ও বললো
ডক্টর ডিকোস্টা বলে দিয়েছেন
আপনাদের সারভার রুমে বসতে চিরন্তন কে নিয়ে উনি ওনার এক্সপেরিমেন্ট রুমে আছেন।
ডক্টর ডিকোস্টা এটা করলেন কেন আমরা থাকলে কি বা অসুবিধে হতো ওনার।
আজ সার্ভার রুমের প্লেনের মতো দরজা টা খোলা। ভিতরে কোনো কম্পিউটার নেই।
ঢোকার সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে এবার সুবর্ণা সারভার রুমে এলো
কি রকম যেন ভাবলেশ হীন। এ যেন মেলানোই যায় না সেদিন কার সেই সুবর্ণার সাথে সেই স্বতস্ফূর্ত ভাব টাই নেই।
আমাদের জন্য শরবত এনেছে সুবর্ণা
এই সময় শরবত খেতে ইচ্ছা করল না
কি রকম একটা যান্ত্রিক ভঙ্গি তে সুবর্ণা বললো
"রেট্রোগ্রেড প্রোগ্রাম অনেক খন ধরে চলব
ে
আপনারা খেয়ে বিশ্রাম করুন।" ও চলে যেতেই
দরজা টা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেল।
আমার ভীষণ রকম খটকা লাগতে শুরু করলো।
সার্ভার রুমে কোনো কম্পিউটার নেই কেন।
ডক্টর ডিকোস্টা বললেন পাঁচ মিনিট সময় লাগবে রেট্রোগ্রেড প্রোগ্রাম চালাতে অথচ সুবর্ণা কেন বললো অনেক্ষন লাগবে,
আমাদের চিরন্তনের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো না কেন।
সেদিন ডক্টর ডিকোস্টার এক্সপেরিমেন্ট হলে ওই অক্টোপাস টা ও ভাবে তাকিয়ে ছিল কেন।
ওটাও কোনো কিমেরা,
একটা ঠান্ডা শিহরণ মেরুদন্ড বয়ে নেমে যাচ্ছে ।
খুব অনুশোচনা হলো আজ চিরণতনের এই অবস্থার জন্য আমি ই তো দায়ী , আর সব্য কেও তো এই বিপদে আমিই ফেললাম।
হঠাৎ সব্য বলে উঠলো শামু দেখেছিস এটা সারভার রুম অথচ একটাও কম্পিউটার নেই ।
এটা কি সারভার রুম না অন্য কিছু।
হমম ,আমার ও যে সন্দেহ হয়নি তা না
,আমি বললাম সব্য- আরেকটা খটকা হচ্ছে সুবর্ণা
ওকে দেখে কেমন যেন একটা লাগছে রে কেমন একটা অদ্ভুত ঠান্ডা চাহনী,সেদিনের সুবর্ণা আর আজকের সুবর্ণা র মধ্যে কোনো মিলই নেই।
এই ছোট দম বন্ধ ঘরে আমি আর সব্য আর কেউ নেই একটা মাত্র জানলা কাঁচ দিয়ে শিল্ড করা।
একটা খুব লো পাওয়ার এর আলো জ্বলছে ঘরটার ভিতর।
এসি চলছে বলে দম বন্ধ লাগছে না।
কোনো চিন্তা করিস না আমাকে নিয়ে,
আশ্বাস দিলো সব্য
দেখাই যাক না শেষ পর্যন্ত .....
কিছুক্ষন হয়ে গেলো
আস্তে আস্তে শরবত খাচ্ছি আর ভাবছি।
সব্যর কাল কলকাতায় ফেরার কথা
। সেও খুব চুপ এখন
একটা অদ্ভুত শান্তি হটাৎ মন টা কে আছন্ন করে ফেলতে চাইলো
এসি র বাতাস টা বড় সুন্দর লাগছে
সামনে আমার ছোটো বেলার বন্ধু সব্য কত খেলা কত আনন্দ কত স্মৃতি
একি এরকম একটা দুর্ভোগের মুহুর্তে এ আমি কি ভাবছি
সব্য আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে মিটি মিটি
ওর ও হয়তো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
মন হালকা হয়ে আসছে
শরীর ভারী হয়ে আসছে
আমি মেঝে তে শুয়ে পড়লাম
আমার পাশে সব্য ও শুয়ে পড়লো
অদ্ভুত শান্তির তন্দ্রা আসছে
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম শরবত
সব্য বলল হু
গলা জড়িয়ে যাচ্ছে আমার
হটাৎ দরজা খুলে গেল
ডক্টর ডিকোস্টা আর সুবর্ণা ঢুকেছে
আমাদের দিকে তাকিয়ে কি একটা যেন বলছে বুঝতে পারলাম না কেমন যেন আধা ঘুম অবস্থা আমার।
সুবর্ণা বললো "ওকে সার "
বলে ওরা আবার দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল
আমার ঘুম আমাকে আরো এক ধাপ আছন্ন করে তুলল
সব্য ঘুমোচ্ছে
আমিও ঘুমিয়ে পড়বো কিন্তু খটকা গুলো লেগেই আছে।
খটকা
খটকা
খ ট কা
সু বর্না
সুবর্ণা
সুবর্ণার তিল নেই
তিল
তিল নেই
চোখের পাশের তিল
ডান চোখের পাশের
তিল
তিল নেই
তিল নেই
ঘুম ঘুম ঘুম শান্তি
5
কতক্ষন ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না
প্রচন্ড মাথা ধরছে আর গা ব্যাথা করছে
ঘরের আলো টা জ্বলছে না
উলট দিকের ছোট একটা দরজা খুলে গেল
একটা ছায়া মূর্তি ঘরের মধ্যে ঢুকলো
ছায়া মূর্তি টা আমার মাথার কাছে চলে এসে কিছু একটা করছে
ডেলটোয়েড মাসেলটা হটাৎ ব্যাথা করে উঠলো
"মিস্টার সান্যাল মিস্টার সান্যাল তাড়াতাড়ি উঠুন"
উঠে দেখি পাশে সব্য চোখ কচলাচ্ছে
আর আমাকে ঠেলা দিচ্ছে একটি রুগ্ন মহিলা গায়ে ফুল এপ্রোন
একি এত সুবর্ণা
হটাৎ এরকম
রুগ্ন হয়ে গেছে কেন
"আপনাদের সামনে সাংঘাতিক বিপদ মিস্টার সান্যাল।
ওরা আপনাদের শরবতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল"
"ওরা মানে"
"ওরা মানে ডক্টর ডিকোস্টা আর আমার মতো দেখতে ওই এন্ড্রইড টা"
"এন্ড্রইড"
আমি তো তাজ্জব
"হ্যাঁ আমার মতো দেখতে ওই পাশবিক এন্ড্রইড টা।
বুনো মোশ থেকে তৈরি করেছে ওটা কে। দশ টা হাতির জোর ওর গায়ে।"
"সেকি তবে রেট্রোগ্রেড প্রোগ্রাম"
"ওই সব ভাওতা। রেট্রোগ্রেড প্রোগ্রাম বলে কোনো প্রোগ্রাম নেই। ট্রান্সফর্মশন উল্টো করা যায় না
আটচল্লিশ ঘন্টার ভিতরে হলেও না
না দশ মিনিটএর ভিতরে হলেও না।"
"তবে ডক্টর ডিকোস্টা আমাদের সাথে এরকম করলেন কেন"
সুবর্ণার রুগ্ন মুখটা লাল হয়ে উঠেছে
"আমি আগে বুঝিনি এখন বুঝি উনি খুব সফল বৈজ্ঞানিক হতে পারেন কিন্তু ওনার ভিতর মানসিক বিকৃতি আছে
সবাই কে উনি হয় কিমেরা বা ক্লোন বানিয়ে মগজ ধোলাই করে পোষ্য বানিয়ে রাখেন"
"মগজ ধোলাই"
"হ্যা মগজ ধোলাই
ওই ওনার হলের উপরে কাঁচের মেডিটেশন কাম কন্ট্রোল ঘরটায়।
মেডিটেশন না ছাই ওটা মগজ ধোলাই এর ঘর। আর ওই চাকতি টা মগজ ধোলাই যন্ত্র---
সেদিন অবধি আমি জানতাম উনি ভালো মানুষ কিন্তু চিরন্তন কে উনি এরকম একটা বিপদের মধ্যে যেদিন জ্ঞানত ঠেলে দেন সেদিনই আমি সব বুঝতে পারি।
আপনারা চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি উনি আসলে একটা বিকৃত মনের মানুষ
আমি ওনাকে ভয় দেখাই যে সবাই কে আমি জানিয়ে দেব
সেদিন রাত্রেই উনি আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে হুবুহু আমার মতো দেখতে একটা ক্লোন তৈরি করেন।
আমাকে এই রুমের পিছনে ট্র্যাপ ডোরের পিছনে আটকে রেখেছিল। কিন্তু আমি এত দিনে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।"
"কি সাংঘাতিক"
"আমি আপনাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য স্টিমুল্যান্ট ইনজেক্ট করি"
একটা টুলের উপরে দেখলাম একটা এনামেলের ট্রে তে দুটো সিরিঞ্জ রাখা আছে।
"এখন বেরোবার উপায় কি"
সুবর্ণা ট্র্যাপ ডোর টার দিকে দেখায়
6
আমরা ট্র্যাপ ডোরের ভিতর দিয়ে ঘোরানো চোরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকি গোল কন্ট্রোল রুম টার দিকে। চুপি চুপি উঠতেই বুঝতে পারি কন্ট্রোল রুমে কিছু একটা চলছে
একটা আষ্টে গন্ধ নাকে আস্তে থাকে আর একটা অদ্ভুত শব্দ।মেঝের উপরে কিছু ধারালো জিনিষ যেন ঠিকরে ঠিকরে চলছে। কি সের শব্দ ওটা।
সুবর্ণা একটা আঙ্গুল ঠোঁটের কাছে রেখে আমাদের চুপ করে থাকতে বলে। একটা ট্র্যাপ ডোর এখানেও আছে কন্ট্রোল রুম ঢোকার জন্য ।ট্র্যাপ ডোরের শুরু খাজ টা থেকে একটা আলো আসছে সেখানে চোখ রেখে যা দেখলাম তা দেখে মোটামোটি হার্ট ফেল হওয়ার জোগাড়।
ঘরটায় খুব হালকা আলো। দেয়ালের চাকতি টা ঘুরছে আস্তে আস্তে
একটা অদ্ভুত জীব কে গোল চাকতি টার নীচে বসানো হয়েছে
পেট মাথা টা একটা বড় অজগর সাপের মতন
আর তলা টা একটা বড় তেঁতুলে বিছের মতো। বিছের অসংখ্য দাঁড়া গুলো মেঝে তে ঘষা খাচ্ছে আর ওরকম শব্দ হচ্ছে।
জীব টার প্রায় সাত ফুট হাইট।
কোমর থেকে নিচ অবধি সেল গুলো কেমন জল জল করছে।
অজগর টা বসে জীব লিক লিক
করছে
মানুষের মতো হাত পা গুলো কিন্তু সাইজে প্রায় দেড় গুন
কিমেরা
বিছে অজগর আর মানুষের সংমিশ্রণ
ভাবতেই ভয় আর কষ্ট একই সাথে হচ্ছে যে এটাই চিরন্তন।
ঘরের মধ্যে আরো দুজন আছে
একজন ডক্টর ডিকোস্টা আর আরেকজন সুবর্ণার ক্লোন।
দুজনে মিলে কিমেরা টা কে মগজ ধোলাই করছে
আমরা আবার চুপি চুপি পিছনের দরজা দিয়ে সার্ভার রুমে ফিরে এলাম ।পিছনের ট্র্যাপ ডোর টা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম ।
ঘরটার ঢোকার যে প্লেনের মতো দরজা তার সামনে দু জন শুয়ে আছে
ঘরের টিম টিমে আলো থেকে বুঝতে পারলাম এটা আমি আর ওটা সব্য।
সুবর্ণা আমাদের সব বুঝিয়ে বললো
"ওটা আপনাদের ক্লোন এটা সারভার রুম নয় ক্লোন রুম
আমি বানিয়েছিলাম আপনাদের দুজনের ক্লোন
চিরন্তনের কিমেরা হওয়ার ফলে ওর খিদে প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে
ওরা ভেবেছিল আপনাদেরই চিরন্তনের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে
আপনারা তখন শরবত খেয়ে ঝিমোচ্ছেন
ডক্টর ডিকোস্টা আমার ক্লোন এন্ড্রইড টা কে এই সব বলছিলেন আমি ট্র্যাপ ডোরের ভিতর থেকে শুনেছি"
আমি আর সব্য মোটামোটি থ
সব কেমন যেন তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে
"শেষ মেষ কিমেরার খাবারে পরিণত হতে হবে।"
"তবে পুরোপুরি কিমেরার খাবারে পরিণত হবেন না
কিমেরা টা কে খাওয়ানোর আগে আপনাদের মুন্ডু গুলো কেটে নেওয়া হবে"
কি সাংঘাতিক কেন
আপনাদের মতিষ্ক গুলো উনি আর্কাইভ করে রেখে দেবেন।
"কি"
"হ্যা উনি প্রচুর সাইন্টিস্ট ধরে নিয়ে এসে এটা করেন।আপনাদের মতিষ্ক গুলোই ওনাকে ওনার কাজ টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।"
"তার মানে"
আমার বুকের ধুপুকানি বেড়েই চলেছে। একটা অজানা ভয় আকড়ে ধরছে।
এই বিশাল ল্যাবরেটরি এই বিশাল কর্মকান্ড একার মাথায় চালানো সম্ভব নয় তাই এই ব্যাবস্থা।উনি বেঁচে বেঁচে সাইন্টিস্ট দের ধরে ওনার ডেরায় নিয়ে আসেন আর তারপর ওনাদের ব্রেন গুলো কে লাগিয়ে দেন ওনার সুপার কম্পিউটার টার সাথে।
এ কোন পাগলা গারদে এসে পড়েছি রে বাবা
এখন এই আসল সুবর্নাই পারে আমাদের এই পাগলা গারদ থেকে রেহাই দিতে।
ইনি আবার আসল সুবর্নাই ত না এখানেও কোনো অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে।
7
"তাহলে এবার প্ল্যান টা কি"আমরা জিজ্ঞেস করলাম সুবর্ণা কে
"এখন আপাতত আমরা এই ট্র্যাপ ডোর টার পিছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো
আমার এন্ড্রইড ক্লোন টা আসবে আপনাদের নিয়ে যেতে ।খুব সম্ভভত ও দুটো লম্বা স্ট্রেচার নিয়ে আসবে সেটা তে করে আপনাদের নিয়ে যেতে চাইবে আমরা এখানেই থাকবো এই ট্র্যাপ ডোরের পিছনে,এন্ড্রইড টা যখন আপনাদের ক্লোন গুলো কে নিয়ে যেতে উদ্দত হবে তখনই আমাদের কাউকে গিয়ে ওর ঘাড়ের কাছের নীল সুইচ টা প্রেস করতে হবে। ঐটাই এন্ড্রইড টার পাওয়ার বাটন।ওটা চেপে দিলেই নকল সুবর্ণা নিস্তেজ।"
"তারপর.... "
আমি জানতে চাইলাম
"আমি এন্ড্রইড টার এপ্রোন পরে আপনাদের ক্লোন গুলো কে নিয়ে ওই পিশাচ টার কাছে যাব
আপনারা আবার ওই ট্র্যাপ ডোর দিয়ে গিয়ে কন্ট্রোল বা মেডিটেশন রুম টায় যাবেন।সেখানে দেয়ালে যে চাকতি টা আছে ওটার পিছনে একটা কন্ট্রোল প্যানেল আছে সেখানে auto destruction করে একটা বোতাম আছে ।
আমি আপনাদের ক্লোন গুলো কে নিয়ে নীচে এক্সপেরিমেন্ট রুম টায় থাকবো হাত তুলে ইশারা করলেই auto destruction অন করে দেবেন।"
"এই auto destruction টা কি"
সুবর্ণা auto destruction ব্যাপার টা বোঝালো।
"এটা একটা প্রোগ্রাম যা সব প্রোগ্রাম যা যা রান হচ্ছে সব কটা কে ম্যালাইন করবে
"মাণে"
"মানে সব কটা প্রোগ্রাম নষ্ট করে দেবে। শুধু তাই নয় অটো destruction সুইচ টেপার কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে এই পুরো বিল্ডিং টা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সুইচ টেপার প্রায় সাথে সাথেই সব এন্ট্রি এক্সিট খুলে যাবে। একটা তান্ডব সৃষ্টি হবে। এই তান্ডবে খুব হাই ইন্টেন্সিটি রশ্মির ফলে ল্যাবের ভিতরে যত পশু পোকা মাকড় জীবিত বা মৃত সব হয় গাছ বা পাখি তে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। সেল্ফ ইন্ডাক্টেড অর্গানিক মেটামরফোসিস
এই সময় এই ভীষণ প্রলয়ঙ্করী তান্ডবের মধ্যেই আপনাদের এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। এছাড আর বেরোনোর পথ নেই।"
8
সুবর্ণার মতো দেখতে এন্ড্রইড টা ঘরে ঢুকেছে ওটা একটা চিপ চালিত মেশিন। নিজের কোনো ইমোশন নেই , চিপে যা আছে তাই ও করবে। আর আমার মনে হয় না ডক্টর ডিকোস্টা ওর জন্যে ভালো কিছু চিপে ঢুকিয়ে রেখেছে ,
সুবর্ণা বললো "ওটা দেখতেই শুধু আমার মতন গায়ে দশ টা হাতির আসুরিক জোর। আর ওর চিপে খালি হাতে মানুষ মারার হাজারো রকম টেকনিক ঢোকানো আছে। আমাদের তরফে একটু ভুলের মাশুল সাংঘাতিক পরিণাম ডেকে আনতে পারে।"
সুবর্ণার এন্ড্রইড নীচে উবু হয়ে বসে আমাদের ক্লোন গুলো কে এক্সামিন করছে। উঠে গিয়ে এবার একটা লম্বা স্ট্রেচারের মতো ট্রলি নিয়ে এলো। ট্রলিতে দুটো থাক করা আছে দুজন কে উপর নীচে নিয়ে যাওয়া যাবে ,আমাদের দুটো ক্লোন কে ট্রলি তে তুলে নিল
ক্লোন গুলোর ওজন আমাদের থেকে বেশি বই কম হবে না। ক্লোন গুলো কে এন্ড্রইড টা এমন করে তুলল যেন ওগুলোর কোনো ওজনই নেই।
এন্ডয়েড টা আমাদের দিকে পিছন ঘুরে আছে ঘাড়ের ডান দিকে একটা নীল সুইচ দেখা যাচ্ছে......
সাদা এপ্রোন টার উপরে চুল গুলো খোলা লম্বা।
আমি ওটার দিকে এগোব এগোবো করছি আমাকে বাধা দিয়ে শেষ মেষ সব্যই এগিয়ে গেলো।
আমি ওর পিছনে থাকলাম কভার আপ হিসেবে।
সব্য এগিয়ে যাচ্ছে এন্ড্রইড টার দিকে.....
সব্য এগোতে গিয়ে চরম একটা ভুল করে বসলো সামনের যে ছোট টুল টা ছিল যেখানে এনামেলের একটা ট্রে তে খালি সিরিঞ্জ গুলো রাখা ছিল সেটা তে একটা ধাক্কা খেল।
ধাক্কা খেতেই একটা আওয়াজ করে সিরিঞ্জ সুদ্ধু ট্রে টা মেঝেতে পড়লো
সটাং ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুবর্ণার ক্লোন এন্ড্রইড টা।
আমার পিছনে আসল সুবর্ণা
আমার সামনেই এন্ড্রইড টার হাতের কাছেই সব্য।
সব্য কে দেখছে এন্ড্রইড টা চোখ গুলো যেন হাসছে।
ঠোঁটে একটা মৃদু হাসি। হটাৎ হাসি মিলিয়ে গেল আর সাথে সাথেই প্রফেশনাল প্রাইজ ফাইটারের ক্ষিপ্রতায় আছড়ে পড়লো একটা আপার কাট সব্যর গালে। ঘুষির জোরে সব্য গিয়ে পড়লো সিল্ড কাঁচের জানলার উপর।
আমি পকেট থেকে মাওজার টা টেনে বার করলাম কিন্তু মেয়েটার বাঘিনীর মতো ক্ষিপ্রতার রাউন্ড হাউওস কিক আমার মাউজার টা কে ছিটকে মেঝেতে ফেলে দিলো।প্রায় সাথে সাথেই ,বাজ পাখি যেভাবে শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে সেরকম আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো সুবর্ণা রুপি ক্লোন এন্ড্রইড।
রোগা হলে কি হবে বুনো মোষের ওজন দিয়ে আমাকে মেঝেতে পেরে ফেললো আমার পেটে বসে ডান হাটু দিয়ে ঠেসে ধরেছে আমার বুক টা। বা পাটা দিয়ে সাঁড়াশি র মতো আটকে ধরেছে ডান হাত। একটা পৈশাচিক আনন্দ ফুটে উঠেছে ওর মুখে। শক্ত লোহার মতো আঙ্গুল গুলো দিয়ে নৃশংস ভাবে টিপে ধরলো আমার গলা টা।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেও এই নাগ পাশ থেকে বেরোতে পারলাম না।
আসুরিক শক্তি তে বুনো মোষের মেয়েলি আঙ্গুল গুলো আমার প্রাণ প্রায় নিংড়ে নিলো। মেয়েটা র দাঁত কিড়মিড় করা পৈশাচিক আনন্দ দেখতে দেখতে আমার শরীর অসার হয়ে আসছে,হটাৎ ওর পিছনে আসল সুবর্ণা কে দেখতে পেলাম।বাস এন্ড্রইড কেমন নিস্তেজ হয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাটি তে লুটিয়ে পড়লো
আমি কোনো মতে কাশতে কাশতে উঠে দাঁড়ালাম আমার দম বন্ধ হয়ে গেছে ওদিকে সব্য অজ্ঞান।সব্য কে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলো। পুরো ঘটনাটাকে হজম করতে আমাদের মিনিট দশেক সময় লাগলো
সুবর্ণা এন্ড্রইড এর ড্রেস টা পরে নিলো।
"আপনারা ট্র্যাপ ডোর দিয়ে কন্ট্রোল রুমএ চলে যান আমি নিচ থেকে ইশারা করলেই auto destruction মোড অন করে দেবেন।"
ও ট্রলি তে শোয়ানো দুটো ক্লোন নিয়ে বেরিয়ে গেল
আমরা আবার ট্র্যাপ ডোর দ িয়ে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে কন্ট্রোল রুমে উঠতে আরম্ভ করলাম
9
গোলাকার কন্ট্রোল রুমে উঠে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম চিরন্তনের কিমেরা টা মেঝেতে শুয়ে ঝিমোচ্ছে ।আর প্রথম ক্যাবিনেট টার কাছে পায়চারি করছে ডক্টর আলভেরাজ ডিকোস্টা যেন এত দিন ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিল এই পাগলা বৈজ্ঞানিক।প্রথম কেবিনেটের পাশের দরজা খুলে ট্রলি নিয়ে ঢুকলো সুবর্ণা।
বৈজ্ঞানিক মনে হলো খুব খুশি হয়েছেন।
অজগর টা মনে হয় গন্ধ পেয়েছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে ট্রলি টার দিকে।মেঝের উপরে তেঁতুলে বিছের দাঁড়া র শব্দ আমরা উপরের কন্ট্রোল রুম থেকে শুনতে পেলাম
অজগর টা কিরকম এক দৃষ্টিতে আমাদের ক্লোন গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
এবার ডক্টর ডিকোস্টা সুবর্ণা কে কিছু বললেন। সুবর্ণা ট্রলি টা নিয়ে চলে গেল পঞ্চাশ ফুট দরজার কাছে।
একবার ঘুরে তাকালো ডক্টর ডিকোস্টার দিকে। পাগলা ডক্টর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন
পঞ্চাশ ফুটের দরজা টা কে আলতো করে ঠেলে ট্রলি টা দরজার ওই প্রান্তে ঠেলে দিলো সুবর্ণা।
প্রায় সাথে সাথেই নতুন খাবার নেশায় কিমেরা টা ঢুকে গেলো ওই দরজাটার ভিতরে।এবার ডক্টর ডিকোস্টা নিজেই এগিয়ে এসেছে পঞ্চাশ ফুট দরজা টার কাছে।
আমি আর সব্য দেখছি আর ভাবছি কি করতে চাইছেন এই পাগলা বৈজ্ঞানিক।পঞ্চাশ ফুটের দরজা আটকে দিলেন তিনি
এবার কন্ট্রোল রুমের ঠিক নীচে চলে এসেছেন ডক্টর ডিকোস্টা।
সেকেন্ড ক্যাবিনেট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুবর্ণা
দরজার ওই পাশে কিমেরা আর তার খাদ্যরা কি করছে জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
বুঝতে পারছি ডক্টর ডিকোস্টা নিচের কন্ট্রোল প্যানেলের কিছু সুইচ খুট খাট করছেন
একটা হ্যান্ড রেল টানার আওয়াজ হলো
বন্ধ দরজা টার ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে
কি হচ্ছে ?
চাপা উত্তেজনায় আমার আর সব্যর ঘাম ছুটে যাচ্ছে !!!
দরজার নিচের ফাক টা দিয়ে নানা রকম আলো আসচে।
"এই দেখ!!!"
সব্য ওর মোবাইল টা আমার সামনে মেলে ধরেছে।
আগেই দেখেছি কন্ট্রোল রুম টায় একটা রাউটার লাগানো আছে। ওয়াই ফাই আছে ।ইন্টারনেট আসছে....
10
এথিক্যাল কোড ব্রেক করেছিলেন ডক্টর ডিকোস্টা। পারমিশন না নিয়েই করে ফেলেছিলেন কত গুলো ভয়াবহ এক্সপেরিমেন্ট।
আর তার মধ্যে ছিল দুটি অন্যতমএকটা হলো ট্রান্সফর্মশন বা অর্গানিক মেটামোরফসিস বা রূপান্তরিত করা। মানুষ থেকে বিছে। ছাগল থেকে সাপ এই সব
অন্যটা হলো এথেরিয়াল এক্সপানশন যার ফলে একটি পিঁপড়ের মতো ছোট পোকা কে তিমি মাছের মতো বড় করে দেওয়া যায়।
দুটো এক্সপেরিমেন্ট টার জন্যই এথিক্যাল কমিটির অনুমতি পাওয়া ছিল প্রয়োজন। কিন্তু বারং বার এপ্লাই করেও পারমিশন পান নি ডক্টর ডিকোস্টা। সেই সময় ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল সাইন্সের এথিক্যাল কমিটি র চিয়ারমান ছিলেন ওনার স্ত্রী জুলি ডিকোস্টা।
ওনাকে ইনস্টিটিউট থেকে বহিষ্কৃত করার এক মাস পর রহস্য জনক ভাবে নিখোঁজ হন উনি আর ওনার স্ত্রী। এর পর কিছু বৈজ্ঞানিক সম্মেলন এ ডক্টর ডিকসটা কে দেখা গেলেও ওনার স্ত্রী কে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
.........একুরিয়ামের ভিতরের অক্টোপাসটা যেন রাগে ফুঁসছে........
11
পঞ্চাশ ফুট দরজা খুলে যেটা বেরিয়ে এলো সেটা আমাদের কিছুক্ষন আগে দেখা কিমেরায় পরিণত হওয়া চিরন্তন।
ফারাক একটাই ওটা ছিল সাত ফুট আর এটা চল্লিশ ফুটের একটু বেশি
বিশাল অজগরের মাথাটার ডাইয়ামেটেরি হবে কুড়ি ফুট ,
দানব টা চোখ বিষফারিত করে সব কিছু দেখছে আর জীব লিক লিক করছে
এক্সপেরিমেন্ট হল টায় আলো খুব কম । উপরের কন্ট্রোল রুমেও টিম টিম করে আলো জ্বলছে।দানব টার চোখ যেন জল জল করছে, দানবীয় অজগরের মাথা টা নামিয়ে সব জিনিসের গন্ধ সুখছে
মুখ টা ডক্টর ডিকোস্টার কাছে নিয়ে গেল।
ডিকোস্টা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন
এবার মুখ টা নামিয়ে নিয়ে এসেছে সুবর্ণার কাছে সুবর্ণা কে দেখে জীব লিক লিক থেমে গেছে।
মন্ত্র মুগ্ধর মতো দানব টা চেয়ে আছে সুবর্ণার দিকে।
সুবর্ণা আর থাকতে পারলো না হু হু করে কেঁদে উঠলো
"একি তুমি তুমি এখানে কি করছো" কান্না দেখে ধরে ফেলেছে ধুরন্ধর প্রফেসর
সুবর্ণা কে দেখিয়ে দানবীয় কিমেরা কে অর্ডার দেয় পাগলা বৈজ্ঞানিক
"খাও ওকে খাও আস্ত খেয়ে ফেলো "
মগজ ধোলাই করে পোষ্য করেছে বলে কথা ওই দানব কে
কিন্তু পোষ্য হুকুম তামিল করছে না
অবাক হয়ে চেয়ে আছে সুবর্ণার দিকে
আমি আর সব্য উপরের কন্ট্রোল রুম থেকে এসব দেখছি আর ভাবছি কখন সুবর্ণা হাত তুলবে আর আমরা auto destruction মোড অন করবো।
হঠাৎ সুবর্ণা যেটা করলো সেটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না
দানব টার মুখের দিকে ছুড়ে দিলো অদ্ভুত ঘড়ির চিপ টা
সুবর্ণা চিরন্তনের দেওয়া ঘড়ি টা পরে আছে। এপ্রোন এর ফুল স্লীভস এর তলায় ছিল বলে খেয়াল করিনি এতক্ষন
চিপ টা ছুড়ে দেয়া মাত্রই দানব টা খপ করে চিপটা মুখ দিয়ে ধরলো
চিপ টা গিললো না
জীবের তলায় রাখলো
লক্ষ করলাম সুবর্ণার একটা হাত ঘড়ির উপর
দানব টা একটা শান্ত দৃষ্টি তে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো সুবর্ণার দিকে
এবার ডিকোস্টা কে দেখলাম কেবিনেটের পাশে রাখা লেজার গান টা তুলে নিয়ে তাক করেছেন দানব রুপি চিরন্তনের দিকে।
হটাৎ কেমন ক্ষেপে উঠে হিস হিস করে উঠলো দানব টা । ঘুরে দাঁড়ালো ডক্টর ডিকোস্টার দিকে এবার আর শান্ত দৃষ্টি নয় রক্ত চক্ষু নিয়ে যেন গিলে ফেলচে ডক্টর ডিকোস্টা আর তার লেজার গান টা কে।
লেজার এর ইন্ডিকেটর এর লাল আলো এসে পড়েছে দানব টার দুটো চোখের মাঝ খানে একটা সুইচের চাপে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে পারে ওটার দেহ।
দানব টা হিস হিস করে এগিয়ে গেলো ডক্টর ডিকোস্টার দিকে
নিমেষের মধ্যে পেচিয়ে ধরলো ডক্টর ডিকোস্টার দুটো পা।
পা দুটো পেঁচিয়ে থাকা অবস্থা তেই ডক্টর ডিকোস্টা লেজার গান টা ওর শরীরে চেপে ধরে চালিয়ে দিতে যাবে এমন সময় কারো একটা গুলির শব্দ হলো আর তার সাথে সাথেই ছিটকে গেল লেজার গান টা ডক্টর ডিকোস্টার হাত থেকে....
আমার মাউজার টা নিয়ে গুলি চালিয়েছে সুবর্ণা এতক্ষনে মনে পড়লো সুবর্ণার ক্লোনের সাথে লড়াইয়ের সময় মাওসার টা মেঝে তে পরে গিয়েছিল
ওটা যে কাছে নেই এতোক্ষন মনে ছিল না
এবার সুবর্ণা ডক্টর ডিকোস্টার মাথা লক্ষ করে আরো একবার মাউজার টা চালিয়ে দিলো।
বড় আকারিয়াম এ থাকা মাছ গুলো মনে হলো ছটফট করে উঠলো। গুলি টা ডক্টর ডিকোস্টার কান ঘেষে বেরিয়ে গেছে। কিমেরা টা এবার আরো পেঁচিয়ে ধরতে চাইছে ওকে। হটাৎ সামনের আকারিয়াম টা ভেঙে বেরিয়ে এল বিশাল বড় অক্টোপাস টা। সব কাচ ভেঙে বেরোতে লাগলো সমুদ্রর নোনা জল।
ডক্টর ডিকোস্টা কে মাটিতে আঁচড়ে ফেললো কিমেরা টা। অক্টোপাস টাও চেপে বসলো পাগলা সাইন্টিস্ট এর বুকে।কালো তরল বিষ বেরিয়ে আসছে বিশাল অক্টোপাসটার থেকে
জন্ম জন্মতরের রাগ যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে ওই বিকৃত পাশবিক মানুষ টার উপরে। কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে ডক্টর ডিকোস্টা। অক্টোপাসের কালি মেখে হাচর পাঁচর করতে করতে তুলে নিলো লেজার গান টা। প্রায় সাথে সাথেই তাক করে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো প্রাণী টা কে।
অক্টোপাস টাকে মেরে পাগলা প্রফেসর কিমেরা টা কে তাক করতে যাবে কিন্তু ওর আর কিমেরাটার মাঝ খানে ঝাঁপিয়ে পড়লো সুবর্ণা।
আমি আর এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলাম না গোল চাকতি টার কাছে গিয়ে ওটা কে তুলে টিপে দিলাম auto destruction সুইচ টা।
12
সুইচ দিতেই সব যেন কি রকম লন্ডভন্ড হতে শুরু করলো।
সব প্রোগ্রাম এক সাথে রান হতে আরম্ভ করলো
টেলপোর্টাসন হচ্ছে ট্রান্সফর্মশন হচ্ছে
রুম সুদ্ধু সব পোকা মাকড় মাছ কাঁকড়া সাপ জন্তু জানোয়ার ছাড়া পেয়ে এদিক ওদিক দৌড়তে আরম্ভ করলো
টেলিট্রান্সপোর্ট মেশিন টা
নিজের মতো চলতে লাগলো
সিলিং গুলো আরো নেমে এলো
ততক্ষনে লেজার গান চালিয়ে দিয়েছেন ডক্টর ডিকোস্টা। চিরন্তনের কিমেরা আর সুবর্ণা দুজনেই গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটি তে লুটিয়ে পড়লো।
গুলি বিদ্ধ সুবর্ণা চেঁচিয়ে বললো আপনারা পালান নাহলে 20 সেকান্ডস এর মধ্যে সব ধ্বংস হয়ে যাবে -----
ঘূর্ণি ঝড়ের মতো তান্ডব শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে
অকুরিয়ামের সব কাঁচ ভেঙে জল বেরিয়ে পড়েছে
বেরিয়ে আসছে নানা ধরণের মাছ সাপ হাঙ্গর আর কাঁকড়ার দল
নানা রকম আলোর বিকিরণ ছড়িয়ে পড়লো ঘরটার মধ্যে।
বিধ্বংসী তান্ডবে সব উথাল পাথাল হতে লাগলো।
আমরা তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে ট্র্যাপ ডোর দিয়ে তাড়াতাড়ি সারভার রুমে চলে এলাম।
অ্যালার্ম বাজছে চারিদিকে
"আর্মাগেডডন " শুনেছিলাম এ যেন সেই জিনিস
এখান থেকে করিডোরে বেরিয়ে ছুট লাগলাম সদর দরজার দিকে ।
বাইরে বেরিয়ে আসার প্রায় সাথে সাথে সাথেই দরজার কোলাপ্সিবলে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল
Auto destruction শুরু হয়ে গেছে
প্রচন্ড একটা বিধ্বংসী আওয়াজ করে পুরো বিল্ডিং টা ধসে পড়লো
চারিদিকে শুধু বালী সিমেন্ট আর ধুলো...........
13
আজ সব্য বেরিয়ে গেল
কাল ওর যা গেছে তা বলার নয়
চিরন্তন নেই বড় একা একা লাগছে
বারান্দায় গিয়ে দেখলাম চারিদিক রোদে ঝলমল করছে।
হটাৎ দেখি এক জোড়া খুব সুন্দর সোনালী রঙের চড়াই পাখি বারান্দার রেলিং এ এসে বসেছে
কি খেয়াল হতে দেখলাম দুটোর মধ্যে একটার ডান চোখের পাশে একটা ছোট্ট তিল।
আর দেখলাম বারান্দার বাইরেই সামনের লাম্প পোস্ট টার উপরে একটা বাজ পাখি বসে আমার বারান্দা টার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। কাঁচা পাকা পালক গুলো। আর চোখ গুলো যেন ক্ষুধার্থ ব্ল্যাক পার্ল...