কিশলয়
কিশলয়
আমরা দশম উত্তীর্ণ। আমরা কিশলয়। আমরা সবুজ। আমরা নূতন প্রাণ। আমরা যুদ্ধ চাই। না, শান্তি আমাদের প্রিয় নয়। শান্তি মানেই যেন মৃত্যু।
শান্তি মানেই যেন শীতল। শান্তি বড়ই ন্যাতপেতে।
আমরা সারাজীবন যুদ্ধের মহড়া খেলতে চাই। আসল যুদ্ধ হলে লড়তে চাই। লড়তে লড়তে চাই মরতে ।
পরমবীর উপাধি পেতে চাই। কে চায় অবসর ! চাকরি মাত্র চারবছর?
জীবন থেকে দিয়ে দেবো মাত্র চারটে বছর ! তারপর মানুষ হয়ে ফিরে এসে, ইচ্ছে হলেই ট্রেনিং নিতে পারবো ! চাইলে আবার পড়বো। হায়ার সেকেন্ডারির সার্টিফিকেট পাবো। সেসব খরচ বহন করবে সরকার! সাথে গোল্ডেন হ্যান্ডসেক, আবার চাকরির পরীক্ষায় বসার সুযোগ, অথবা অন্য যেকোনো কাজ। চার বছর পর আমার মতোই আমার দেশের আরো অনেক দশম পাশ ভাই, পাবে এই একই রকম সুযোগ।
এভাবেই দেশ এগিয়ে যাবে। সারা দেশের গ্ৰামের স্বল্প শিক্ষিত ছেলেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি কমবে। অনেক বেশি পরিবারের এতে উপকার হবে। আর হঠাৎ কেউ দেশসেবার কারণে মৃত্যুবরণ করলে কোটি টাকার বিমা নাকি পেয়ে যাবে!
আমরা তো আসলে কিশোর। কদিন আগেও ছিলাম শিশু। আমরা তো এতো কিছু বুঝিনি তখন। আমাদের যা বোঝানো হয় আমরা তাই বুঝতে চাই।
তাই হয়তো কিছু দাদাদের কথায় গলা মেলাই।
যুদ্ধ কোথায় নেই। মানুষের খাবার বানাতে গেলেও যেমন রান্না ঘরে হাতা, খুন্তি, কড়াই, তেল, নুন, মশলা পাতি ও রান্নার উপকরণদের যুদ্ধের ফলেই উৎকৃষ্ট ব্যঞ্জন প্রস্তুত হয় তেমন ই গাছের রান্নাঘর পাতাতেও সূর্যের আলোর সহযোগিতায় নানান যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল তৈরি হয়। সুতরাং যুদ্ধ ছাড়া দুনিয়া চলেনা। বেঁচে থাকার কারণেই যুদ্ধ করতে হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে গাছের হলুদ পাতাদের মতন ঝরে যেতে হয়। একেবারে মরে যেতে হয়। তাই যতক্ষণ এই দেহে আছে প্রাণ, লড়াই করতে চাই। তাই শান্তি নয় যুদ্ধ চাই। শুধু সেই যুদ্ধের পরিণাম যেন মঙ্গলময় হয়। ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো তার ধ্বংসাত্মক রূপ না নেয়।
ঘোষণাটা এবার ভালো করে শুনেছি আমরাও। ওসব ট্রেন জ্বালানোর দলে আমরা ছিলাম না। কারণ অতটা দুঃসাহস কিংবা দুর্বুদ্ধি আমাদের এখনো হয়নি। আমরা তো সবে নবীন কিশোর। আমরা পরীক্ষায় বসার জন্য তৈরী। এই যুদ্ধে যেন জয়ী হতে পারি। তাই সকলের আশীর্বাদ চাই।