পুনর্ভবা পর্ব :- ১৮
পুনর্ভবা পর্ব :- ১৮
সন্ধ্যের আগেই বাড়িতে এলো খুকুরা । বাবা - মেয়ে দুজনেই অবাক। কেমন ট্যাঁও ট্যাঁও করে একটা আওয়াজ হচ্ছে। খুকু বাবার মুখের দিকে তাকায়, কিন্তু কিছুই বোঝেনি কেউ । ঈঁদারার জলে হাতমুখ ধুয়ে তাকায় সোনার দিকে। ওতো বেশ দিব্যি দাঁত বের করে হাসছে। এবারে নিখিলেশ আন্দাজ করে কিছুটা। খুকুও বোঝে আর যাই হোক না কেন কোনো বিপদ হয়নি।
সোনার সাথে দুজনেই ঐ ছোটো সাইড রুমটার দিকে এগোয় এবার। ঘরে চুপি দিতেই সুলতান বলে ওঠে খুকুকে,
______ এবার তুমি দিদি হইছ। এই আবুটা তুমার
বইন। বুজছো?
ঘাড়টা কাত করে বোঝায় যে ও শুনতে পেয়েছে।
ভালো করে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,
________ উ-------মা! কতটুটুকু টুকু হাত পা! আবার নাড়াচ্ছে কেমন দেখো !
নিখিলেশ এবার বলেন,
_________ দারুণ বলেছিস তো ! তোর মুখ দিয়েই বেরোলো ওর নামটা । হ্যাঁ ভাবছি ওর নামটা উমাই রাখবো।
উমা কার নাম জানিস তো তোরা।
_______ শিব ঠাকুরের বৌ।
_______হ্যাঁ, মা দুগ্গা। চারদিন ধরে পূজো হয়। শরৎকালে।
______ আচ্ছা বাবা ! দুগ্গাঠাকুর যে তোমার মা, আমার কি তাহলে কম্মা ?
_______হা হা হা হা, শোনো গিন্নি শোনো ! মেয়ে তোমার কি বলছে শোনো!
_______এইবার কেমুন জব্দ! সাধে আমি কই, মাইয়াডা তুমার লাখান! কথাডা শুইন্যা আবার তুমি হাসতাছো? মাগো! এ্যারা বাপ বেডি একদম ব্যাক্কল!
তুমি তো সব জানো মা! এ্যারারে মাপ কইরা দিও।
রাতে ঘুমানোর আগেই মাকে চিঠি লিখতে বসেন নিখিলেশ নন্দি। কালকে পোস্ট করে দিলে তিন চার দিনেই খবরটা ওরা সবাই পেয়ে যাবে।
শ্রীচরনেষু মা,
তোমার আশীর্বাদে আমরা মঙ্গলমতোই আজ সন্ধ্যার পূর্বেই বাসায় পৌঁছাইয়াছি। গতকল্য সন্ধ্যার পরে তোমার বধূমাতার প্রসব বেদনা হইয়াছিল। বাড়ি ওয়ালা তহিবুল ভাইজানের তৎপরতায় হাসপাতালে তোমার আর একটি সুস্থ, স্বাভাবিক নাতনি জন্মগ্রহণ করিয়াছে। ঈশ্বর পরম করুণাময়! মাতাও কন্যা দুইজনেই ভালো আছে। চিন্তা করিওনা। যত্নের অভাব হইবে না। ব্যস্ত হইয়ো না। আমরা সকলে মিলিয়া কয়েকটি মাস অতিবাহিত হইলে তোমাদের কাছে পৌঁছাইয়া যাইবো। উমা মায়ের অন্নপ্রাশনাদি ঐখানেই সংঘটিত করিবার বাসনা হইয়াছে। তুমি তো জানো আমার
শ্বশুর মহাশয় সেতাবগন্জের সুগার মিলে করমপোলক্ষে রহিয়াছেন। উনিও তখনই ঐগ্রামের আধা পাকা আধা কাঁচা বাড়িতে আসিয়া নাতনির মুখ দেখিতে আসিতে পারিবেন। বাড়ি টি আমাদের বাবার সৎ পথে উপার্জন করা রোজগারের টাকায় বানানো। যেমনই হউক তাহা আমাদের নিজদিগের গৃহ। ইহা কমদামী মনে হ ইতে পারে কিন্তু অমূল্য।
ইতি তোমার স্নেহধন্য____
জ্যেষ্ঠ পুত্র নিখিলেশ নন্দি।