STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Fantasy Inspirational Others

3  

Paula Bhowmik

Fantasy Inspirational Others

বারান্দায়

বারান্দায়

3 mins
11

যদি বারান্দাটা আরেকটু বড় হতো তাহলে আরও অনেক বেশি ভাল লাগত। কিন্তু কি আর করা যাবে ! আজকাল লোকে নাকি বারান্দা রাখেই না____, সেখানে আমাদের একটা ছোট্ট বারান্দা যে হচ্ছে সেটাই যথেষ্ট ! আচ্ছা বেশ, তাতেই আমি খুব খুশি ।


আসলে বিয়ের পরে যে দুটো বাড়িতে ভাড়াটে হয়ে কাটিয়েছি প্রায় বছর বারো, সেগুলোর বারান্দা দুটোই ছিল বেশ বড় সড় । বিকেলে বা সন্ধ্যার পর বারান্দায় বসে সময় কাটাতে বেশ লাগত। রাস্তার অচেনা লোকজনের যাতায়াত দেখে কত ভাবনাই না মনে আসত। কোথায় কার বাড়ি, কেন যাচ্ছে কোথাও, তাদের বাড়িতেই বা কে কে আছে.... এই সব আর কি !


তাই এবারে নিজের বাড়িতে একটা বারান্দার গুরুত্ব আমার কাছে অনেক। নিজে ডিজাইন এঁকে, কারিগরদের বুঝিয়ে দিয়ে কারখানা থেকে গ্ৰীল তৈরি করালাম। এমনকি ভ্যান রিক্সোতে গ্ৰীল গুলো চাপিয়ে ভ্যান ওয়ালার পিছু পিছু পথ দেখিয়ে নতুন বাড়িতে আসছি । মেইন রাস্তা দিয়ে না এসে গলি দিয়ে পথ চেনাচ্ছি। ততদিনে আমি এখানকার গলির রাস্তা গুলো মোটামুটি চিনে নিয়েছি ।


কিন্তু সেদিন ভ্যান ওয়ালার সুবিধের কথা ভেবে অথবা ভুল করে, একটু পেছনের একটা গলিতে ঢুকে পড়েছি । চলতে চলতে এক জায়গায় একটা বাড়ির সীমানার মুলি বাঁশের বা দরমার বেড়াতে আমার বারান্দার গ্ৰীল গেল আটকে !

মচমচ শব্দ শুনে হৈ রৈ করে সে বাড়ির কর্ত্রী বেরিয়ে এলেন। ওনার উপস্থিতিতেই কায়দা করে বেরোতে গিয়ে কিন্তু একটু হলেও ক্ষতি হয়েছিল বেড়াটার। 


আমি মুখ কাঁচুমাচু করে দুঃখ জানাই । আসলে এসব কাজের তো আর অভিজ্ঞতা নেই ! শুধু শখ, আমার মনের মত করে আমি বারান্দায় গ্ৰীল লাগাব । সে রকম শর্ত করেই একটা বরাদ্দ টাকা কর্তামশাইয়ের কাছ থেকে নিজের হেফাজতে নিয়ে রেখেছি। কিন্তু গ্ৰীল বাড়িতে পৌঁছনর পর আর এক বিপত্তি ! মিস্ত্রী, লেবার, যারা তখনও কাজ করছিল তাদের সবাইকে হাত লাগাতে হলো ওটাকে বাড়ির ভেতরে ঢোকাতে। সবাই মিলে হাত লাগিয়েও হিমশিম অবস্থা ! কানুদা, মানে হেড মিস্ত্রী তো বলেই ফেললেন, "ব্রিটিশ আমল নাকি ! এত ভারী গ্ৰীল কেউ বানায় !" সিমেন্ট দিয়ে সেট করার সময় অবশ্য আমি ছিলাম না !


এবারে সেই গ্ৰীল রঙ করার পালা । রঙ করবে পরেশ আর তার এক সাগরেদ। কিন্তু রঙ তো আমাকেই পছন্দ করতে হবে । মনে মনে ঠিক করে রেখেছি ক্যানারি ইয়েলো । কিন্তু দোকানে দোকানে ঘুরেও সে রঙ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও সেটা কাঠের জন্যে ঠিক, লোহার জন্যে নয় । কি আর করি, ভাবলাম এই রঙটাই নেব। হোক না কাঠৈর, লোহাতে এই রঙ করলে ক্ষতি কি !


কিন্তু রঙের মিস্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে গেলাম। রঙ নাকি এই কারনেই বসছে না। থাক গে, যেটুকু বসেছে তাতেই আমি আহ্লাদে গদ গদ । ক্যানারি ইয়েলো তো বটে ! কিন্তু সে রঙ থেকেছে মোটে বছর দুয়েক ‌। তারপর আবার হলুদ রঙ করাতে হয়েছে। এবারে অবশ্য সেটা লোহার রঙ ! হলুদ বটে, তবে 

তা ক্যানারি ইয়েলো নয় মোটেই। 


এরপর এক জুঁই লতা লাগালাম বাইরে বারান্দার কোনার দিকে। লকলক করে বেড়ে উঠল সেটা। বারান্দা ছাড়িয়ে ছাদের ওপরে উঠে তবে থোকা থোকা ফুল ফোঁটাতে শুরু করত গাছটা। সেই দুঃখ ঢাকতে পাশের মল্লিকা ফুলের গাছটা গ্ৰীলে লতিয়ে, থোকা থোকা ফুল ফুটিয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছিল। তারপর কি যে শখ হলো, মল্লিকা ফুলের পাশে একটা পুঁই গাছের চারা পুঁতে দিলাম। 


মল্লিকা নিজেকে গুটিয়ে নিল। আর পুঁই ! ওরে বাবা ! এক একটা পাতা প্রায় পদ্ম পাতার আকারের। এত বড় পুঁই এর পাতা আমি তো আগে কখনও দেখেনি। নিজেরা খেয়ে অন্যদের দিয়ে মন ভরেছে সবার । কেউ কেউ তো বলত, " এগুলো রান্না করে খাব, নাকি এগুলোতে ভাত বেড়ে খাব তাই ভাবি ।

 

এরপর একটা চাঁপা ফুলের চারা এনে লাগালাম বারান্দার পাশেই । ইনি তো জুঁই গাছকেও হার মানালেন। শোঁ শোঁ করে লম্বা হয়ে ছাদ পেরিয়ে অনেকটা বড় হয়ে, তবে ফুল ফোঁটাতে শুরু করলেন।

জুঁই গাছটাকে বছর বছর ছাঁটতে গিয়ে বিদায় জানাতে হয়েছে। 


আর চাঁপা গাছের কাঁচা হলুদ রঙের স্বর্ণচম্পা ফুল গুলো এত ওপরে ফুটলেও বারান্দায় রাস্তায়, পাশের বাড়িতে এখনও গন্ধ ছড়িয়ে চলেছে ।


আমার দিম্মার নাম চম্পকপ্রভা । 

বয়েস হয়েছে, আমার কাছে আসার ক্ষমতা নেই । কিন্তু বারান্দায় গেলেই মনে হয়_____

 দিম্মা যেন আছেন আমার কাছেই ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy