Suvayan Dey

Fantasy Inspirational

5  

Suvayan Dey

Fantasy Inspirational

অতি চালাকির পরিনতি

অতি চালাকির পরিনতি

5 mins
933


বহুকাল আগের কথা। নাইজেরিয়ার অরণ্যঘেরা জঙ্গলে পশুদের রাজত্ব। নানাজাতের পশুপাখিরা সে রাজ্যে সুখেশান্তিতে বসবাস করছিল। সে সময় পশুপাখিরাও মানুষের মতো চাষাবাস করত, ক্ষেত খামার করত। তবে তারা একা কোনো কাজ করত না। সবাই মিলেমিশে করত। চাষবাস করে যে ফসল পেত তা তারা সবাই ভাগ করে মিলেমিশে খেত। অতিরিক্ত খাদ্য তারা দুঃসময়ের জন্যে জমা করে রাখত। মানুষ যেমন কেউ বেশি খায়, আবার কেউ না খেয়ে মরে, তাদের মধ্যে তেমনটি হতো না। কেউ কাউকে ঠকাত না।

এ জন্যে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো না। আপন জনের মতো তারা একত্রে বাস করত। কিন্তু একবার তার ব্যতিক্রম হয়েছিল। এক শুদের চরিত্রে কলংক খরগোশের দুষ্ট বুদ্ধি পশুদের কলংক লেপন করে। সে চালাকী করে অন্যান্য পশুদের সর্বশান্ত করার ফন্দি করল। সেবার খুব ভালো ফসল হয়েছিল। সবাই খুব ধুমধাম করে ফসল কেটে ঘরে আনল। তারা বিশাল এক গুদামঘরে ফসল এনে জড়ো করল। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেকে ফসল নেবে। এক কণা শস্যও কেউ নষ্ট করবে না।

জমির মালিক আল্লাহ। সুতরাং জমির মালিকানা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। পশুদের মধ্যে খরগোশ সবচেয়ে চালাক। তার মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সব ফসল সে একা ভোগ করবার ফন্দি করল। একদিন খরগোশ সবাইকে ডেকে বলল, আমাদের যে ফসল আছে তাতে মাস কয়েক খাদ্যের কোনো অসুবিধা হবে না। বর্ষাকাল আসতে এখনো অনেক দেরি। শুকনো মওসুমে কোথাও চাষবাস করতে না পারলে সবাইকে উপোস করে মরতে হবে।

খরগোশের কথা পশুদের পছন্দ হলো। তারা বলল, শীতকালটা আমরা কোথায় কাটাব? খরগোশ বলল, দূরদেশে যার যেখানে আত্মীয়স্বজন আছে, সেখানে চলে যাও। আমি যাচ্ছি আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি। জায়গাটার নাম শস্যগোলা। পশুরা বলল, শস্যগোলা কোথায়? খরগোশ বলল, সে অনেক দূরের পথ। তোমরা চিনবে না। আমার এক নানী থাকে সেখানে। আমি দুই লাফে চলে যাব। পশুরা বলল, আমরা যাব কোথায়? খরগোশ বলল, তোমরা তোমাদের আত্মীয়ের বাড়ি যাও। সবাই গোল হয়ে বসল।

কার আত্মীয় বাড়ি কোথায় আছে তা নিয়ে সবাই ভাবতে লাগল। অনেক ভাবনা চিন্তার পর প্রত্যেকে দূরদেশে তাদের এক একজন আত্মীয়ের কথা মনে করল। তারা বলল, বেশ আমরা না হয় সবাই বিদেশে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের এই শস্যের গুদাম পাহারা দেবে কে? ফিরে এসে আমরা এগুলো ঠিকমতো পাব তো? খরগোশ বলল, আমরা যখন সবাই বিদেশে যাচ্ছি তখন এগুলো ঠিকই থাকবে। পাহারা দেবার দরকার নেই। দরজা বন্ধ করে গেলেই হবে। সবাই পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিদেশে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। খরগোশও যাওয়ার ভান করল এবং সে সবার আগেই যাত্রা করল।

সবাই চলে যাবার পর খরগোশ এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে ফিরে এলো। যে ঘরে সবাই শস্য জমা করে রেখেছিল খরগোশ সোজা গিয়ে সেই ঘরে ঢুকল। তারপর মনের আনন্দে মাসকয়েক ধরে শস্যগুলো খেতে লাগল। সারাদিন খায় আর ঘুমায়। খেতে খেতে সে অনেক মোটা হলো। শীতকাল শেষ হবার পর পশুরা সবাই দেশে ফিরতে শুরু করল। টের পেয়ে খরগোশ এক ঝোপের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে রইল। পশুরা সবাই খরগোশকে ডাকতে লাগল। ঝোপের ভেতর থেকে প্রথমে খরগোশ না শোনার ভান করল। তারপর সে যেন অনেক দূর আছে এমনি ভাব দেখিয়ে ক্ষীণস্বরে বলল, এই যে আমি আসছি।

পশুরা ভাবল, খরগোশ এখনও এসে পৌঁছায়নি। অনেক দূরে রয়েছে সে। তাকে দেখা যাচ্ছে না। তার কন্ঠস্বর কেবল শোনা যাচ্ছে। পশুরা বলল, আমরা সবাই চলে এসেছি। তুমিও তাড়াতাড়ি চলে এসো। খরগোশ ঝুপ করে এসে হাজির হলো। পথ চলতে চলতে সে যেন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এমনি একটা ভাব দেখিয়ে বলতে লাগল, হাঁটতে হাঁটতে পা একেবারে ব্যথা হয়ে গেছে। নানীর বাড়ি খেয়ে খেয়ে শরীরটাও একেবারে ভারি হয়ে গেছে। একটুও হাঁটতে পারি না। তোমরা একটু সরো। আমি বিশ্রাম নেব। এই বলে সে সটান শুয়ে পড়ল। পশুরা বলল, আমরা সবাই এসে গেছি। চলো, এবার সবাই আমাদের গুদামঘরে যাই।

আমাদের শস্যগুলো সব ঠিক আছে কিনা দেখে আসি। খরগোশ বলল, তোমরা যাও। আমি খুব ক্লান্ত। আমি এখন একটুও নড়তে পারব না। আমি অনেক পথ হেঁটে এসেছি। শস্যের গুদামে গিয়ে সবাই দেখে, সমস্ত ঘর ফাঁকা। একটা শস্যও ঘরে নেই। সমস্ত ঘর শস্যের খোসায় ভরে আছে। সবাই হায় হায় করে চিৎকার করে বলতে লাগল, কে চুরি করেছে আমাদের শস্য? নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যেই কেউ হবে। এখানে তো অন্য কেউ আসতে পারে না। সামান্য বীজও নেই। এবার আমরা চাষ করব কী দিয়ে? সবাই হা হুতাশ করতে লাগল। এককথা দু’কথায় নিজেদের মধ্যে ঝাগড়া শুরু হয়ে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যে কামড়াকামড়িও শুরু হয়ে গেল তাদের মধ্যে। পশুদের মধ্যে শিয়াল খুব বুদ্ধিমান। সে সবাইকে ডেকে বলল, নিজেরা মারামারি করে কী লাভ। চলো সবাই গিয়ে শুয়ে পড়ি। যার গায়ে চাঁদের আলো এসে পড়বে, তাকেই চোর বলে মনে করতে হবে। শিয়ালের পরামর্শ তাদের মনে ধরল। তাদের ধারণা, চাঁদ পৃথিবীর সব কিছুই দেখতে পায়। সুতরাং চাঁদই বুঝতে পারবে কে চুরি করেছে। সবাই শুতে গেল। খরগোশ কাঠবেড়ালিকে ডেকে বলল, তুমি আমার পাশে এসে শোও। আমি এত ক্লান্ত যে, একটু নড়াচড়া করতে পারছি না।

তুমি মাঝেমধ্যে আমাকে একটু এপাশ ওপাশ করে দিও। সরল বিশ্বাসে কাঠবেড়ালি খরগোশের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। অনেক রাতে আকাশে চাঁদ উঠেছে। পশুরা সবাই ঘুমে বিভোর। কিন্তুখরগোশের চোখে ঘুম নেই। চাঁদের আলো এসে খরগোশের গায়ে পড়েছে। খরগোশ এক লাফে সরে গেল।কাঠবেড়ালিকে ঠেলে সে চাঁদের আলোয় নিয়ে এলো। কিন্তু কাঠবেড়ালি তার চালাকী বুঝতে পেরে দ্রুত চাঁদের আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল। এ অবস্থা দেখে খরগোসও আলো থেকে সরে গেল। চালাক শিয়াল দূর থেকে সব দেখছিল। শিয়াল বুঝতে পারল শস্যগুলো কে এতদিন খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে।

কিন্তু তার হাতে কোনো প্রমাণ নেই। কি করা যায় এ নিয়ে ভাবতে লাগল। ঐ দিন চাঁদের আলো কারও গায়ে পড়ল না ঠিকই কিন্তু আসল কাজটা শিয়াল মশাই করে ফেলেছে। সব পশুরা আবার শিয়ালের কাছে এলো, তারা বলল, চাঁদের আলো তো কারও গায় পড়ল না। এবার কি করা যায়? শিয়াল তাদের ধৈর্য ধরতে বলল। এদিকে কাঠবেড়ালি শিয়ালের কাছে তার ঘটনাটা জানাল। দুজনে বুদ্ধি বের করতে লাগল। অবশেষে শিয়াল বলল, যেহেতু খরগোসের আচরণ সন্দেহজনক, চল আমরা গোপনে তার আস্তানার চারদিক তল্লাশি করি। শিয়াল আর কাঠবেড়ালি খরগোসের আস্তানায় গিয়ে দেখল চারদিকে শস্যের খোসায় ভরপুর।

কাঠবেড়ালি সব পশুদের কাছে ব্যাপারটা খুলে বলল। শিয়াল পশুদের কাছে বলল, তোমাদের আরও বড়ো প্রমাণ চাই। যেহেতু এখানে কেউ ছিল না। তাই খাওয়া ও মলত্যাগের কোনও প্রশ্নেই আসে না। কিন্তু খরগোসের আস্তানার চারদিকে খেয়াল করে দেখ সবখানেই তার পায়খানা আর শুকনো পায়খানায় শস্যের বীজ লেগে আছে। শিয়াল বলল, তোমরা এবার বুঝতে পেরেছ, তার মানে খরগোস এখান থেকে কোথাও যায়নি। সে বসে বসে তোমাদের শস্যগুলো খেয়েছে আর পায়খানা করেছে। একারণেই সে এত মোটা হয়েছে।

এজন্যই আমি তোমাদের ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। পশুরা এবার খরগোসের চালাকী ধরতে পারল। তারা জেনে গেল খরগোসই আসলে চোর। সে এতদিন সাধু সেজে তাদের সর্বনাস করেছে। এদিকে কাঠবেড়ালি ও শিয়াল তাদের বাকী ঘটনা খুলে বলল। সব পশুই বলতে লাগল, খরগোসই চোর। সেই আমাদের সব শস্য খেয়ে ফেলেছে। কাঠবেড়ালি ও শিয়ালের কথা শেষ না হতেই পশুরা সবাই খরগোসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে কামড়ে কামড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলল। অতি চালাকের পরিণতি এমনই হওয়া উচিত বলে সব পশুরা তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy