Sayandipa সায়নদীপা

Fantasy

4  

Sayandipa সায়নদীপা

Fantasy

সবুজ সংকেত

সবুজ সংকেত

15 mins
1.2K


বিছানায় শুয়ে উশখুশ করছিলো টিটো, এই বিভৎস গরমে ঘুম আসে নাকি! অথচ দেখো পাশেই জোজো কেমন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে, মনেই হচ্ছে না কোনোরকম কোনো গরম ওকে একটুও বিব্রত করছে। আজ সন্ধ্যে নামার সাথে সাথেই কোনো অজানা কারণ বশত পিসিমনিদের এই গোটা পাড়া অন্ধকারে ডুবে যায়, সবাই ভেবেছিল এমনি পাওয়ার কাট তাই ইনভার্টার ব্যবহারে কোনো লাগাম লাগায়নি কেউই, ফলস্বরূপ রাত সাড়ে বারোটা বাজতে না বাজতেই ইনভার্টারেরও চার্জ শেষ। 


  উফফ বিছানায় আর শুয়ে থাকা যাচ্ছেনা, গোটা গা টা ভিজে জবজব করছে। টিটো উঠে বসে বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেল খানিকটা, তাও যেন তেষ্টা মিটতে চাইছেনা। আবার বোতলের ঢাকনা খুলে জল খেতে লাগলো টিটো, আর তখনই ব্যাপারটা ওর নজরে পড়লো। জানালার বাইরে তাকাতেই দেখতে পেল একটা বড়সড় সবুজ আলো কেমন যেন দুলতে দুলতে ক্রমশ নীচে নেমে আসছে। এ আবার কি জিনিস! বিস্ময় কাটাতে চোখ দুটো একবার ঘষে নিয়ে আবার তাকালো টিটো, ওই তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে আলোটা। এ তো মনে হচ্ছে পিসিমণিদের উঠোনের নামছে। “জোজো, এই জোজো ওঠ না, দেখ দেখ একটা কেমন সবুজ আলো নামছে উঠোনে… এই জোজো…”

“উমম… কি হয়েছে!” ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করলো জোজো।

টিটো বললো, “দেখনা একটা কেমন সবুজ আলো…”

“ঘুমিয়ে যা, স্বপ্ন দেখেছিস হয়তো।”

“কিন্তু আমি তো ঘুমোইনি, তুই উঠে দেখ না একবার।” জোজো উঠলো না কিন্তু টিটো নিজেই এবার জানালার দিকে তাকিয়ে আর কোনো সবুজ আলোর অস্তিত্ব খুঁজে পেলোনা। ও ছুটে জানলার ধারে চলে এলো কিন্তু নাহ কিছুই তো দেখা যাচ্ছেনা আর। কোথায় গেল সেটা! টিটোর এখন ইচ্ছে করছে একবার বাইরে গিয়ে দেখে আসে উঠোনে কোথাও দেখা যায় নাকি সবুজ আলোটা কিন্তু উপায় নেই। পিসো ঘুমোতে যাওয়ার আগে বাইরের দরজায় তালা দিয়ে শুয়েছেন আর টিটো জানেনা চাবি কোথায় থাকে। কাজেই এখন বাইরে গিয়ে দেখা সম্ভব নয়।


  টিটো পড়ে ক্লাস এইটে। এখন ওর স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। প্রতি বছর গরমের ছুটিতে ও মা বাবার সাথে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়, এই যেমন গতবছর গিয়েছিল কুলুমানালি। কিন্তু এ বছর বাবা ছুটি না পাওয়ার কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই টিটোর ছিল মন খারাপ, তখনই ওর পিসতুতো ভাই জোজো ফোন করে বলে ওদের এখানে চলে আসতে। জোজোদের বাড়ি বাঁকুড়াতে, তাই পিসিমশাই ছুটি নিলে একদিন বিষ্ণুপুরসহ বাঁকুড়ার অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখে আসা এমন কোনো ব্যাপারই না। এমন নয় যে টিটো কখনো বাঁকুড়ার দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখেনি কিন্তু তাও ও যতবার দেখে ততবারই ভালো লাগে ওর। আর কোথাও ঘুরতে না গেলেও জোজো তো আছেই, টিটো আর জোজো সমবয়স্ক হওয়ায় দুজনের ভারী মিল। টিটো আসার পর থেকে জোজো তো আনন্দে আর পড়তেই বসেনি। তবে পিসতুতো বোন জিনা অন্যরকমের, এখন সবে ক্লাস সিক্সে পড়ে কিন্তু তার গাম্ভীর্য দেখার মত। সারাদিন পড়াশুনো করে, টিটোর মনে হয় বাইরের কোনো বিষয়ই জিনাকে আকর্ষণ করেনা। টিটোদের স্কুলের ম্যাডাম বলেন সবসময় পড়ার বই মুখে বসে থাকলেই ভালো ছাত্র হওয়া যায়না, একজন ভালো ছাত্র হতে গেলে প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে হয়, মানুষজনের সাথে মিশতে হয়। টিটো আগেরবার এখানে এসে জিনাকে বলেছিল ম্যাডামের কথা, জিনা শুনেছে কিনা কে জানে!


  ভোরবেলার দিকে টিটোর ঘুম ধরে গিয়েছিল। ঘুম ভাঙল জোজোর ডাকে, “ওঠ, ওঠ আর কত ঘুমোবি! দেখ ন’টা বেজে গেছে।” টিটো বিছানায় উঠে না বসা অবধি জোজো ওর হাত পা ধরে টানাটানি করেই গেল। ওঠার পর প্রথমে টিটোর সবুজ আলোর কথা কিছুই মনে ছিলো না, তারপর চোখ ঘষতে ঘষতে সে কথা মনে পড়া মাত্রই ও একছুটে বাইরে চলে গেল। জোজো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ঘরের ভেতর। বাইরে এসে চারিদিকে ভালো করে দেখেও কোথাও সবুজ আলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না টিটো। পিসিমনিদের বিশাল উঠোনটার পুরোটাই সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো, তার দু’পাশে বসার জন্য দুটো সিমেন্টের লম্বা বেঞ্চ তৈরি করা আছে। আর উঠোনের একপাশে কিছু টব রাখা আছে, শীতকালে পিসিমণি মরসুমি ফুলের গাছ লাগান। টিটো ওই টবগুলো খুঁজে দেখতেও বাকি রাখলোনা, কিন্তু নাহ কোথাও কিছু নেই। ব্যাজার মুখে ঘরে ঢুকে দেখলো পিসো খেতে বসেছেন অফিস যাবেন বলে, টিটোকে ঢুকতে দেখে তিনি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কিরে ওভাবে ছুটেছিলি কেন?”

সবুজ আলোর ব্যাপারটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো টিটো, কে জানে পিসো কি ভাববেন। তাই একটা ঢোঁক গিলে সে বললো, “আসলে একটা বেড়াল ছানা দেখতে পেলাম তাই…”

পিসো হেসে উঠলেন, “তোর আর জোজোর চেহারাটাই শুধু বেড়েছে, কান্ডকারখানা এখনো সেই বাচ্চাদের মতোই রয়ে গেছে।”


  আজও সন্ধ্যে হতে না হতেই কারেন্ট চলে গেল, ইনভার্টারটারও কি হয়েছে কে জানে চলছে না। পিসিমণি অনেক খুঁজে পেতে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রান্না করছেন আর টিটোরা তিনভাই বোন মিলে ছাদে এসে আনতাক্ষরি খেলছে। নীচটায় এতটাই গুমোট যে দমবন্ধ হয়ে আসছিল যেন, ছাদে এসে একটু শান্তি মিলেছে। বেশ ঝিরিঝিরি হওয়া দিচ্ছে এখানে। পিসিমনির কথা ভাবলেই টিটোর কষ্ট হচ্ছে, এই গরমেও রান্না করতে হচ্ছে। টিটো অবশ্য পিসিমণিকে বলে এসেছিল হালকা কিছু রান্না করেই ওদের কাছে ছাদে চলে আসতে কিন্তু পিসিমণি আসেননি। পিসোর জন্য অপেক্ষা করছেন নিশ্চয়, পিসোর অফিস থেকে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়। আজ জিনাও বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে তাই তিন ভাই বোন মিলে আনন্দে গান করতে করতে খেয়ালই করেনি কখন যেন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। ওদের হুঁশ ফিরলো পিসিমনির ডাকে। নিচে এসে দেখলো পিসো তখনও ফেরেননি। পিসিমণি যা বললেন তার সারমর্ম এই যে সাড়ে আটটা বেজে গেছে দেখে তিনি পিসোকে ফোন করেন কিন্তু পিসোর মোবাইল নট রিচেবল বলছে বারবার, এদিকে পিসোর অফিসের ফোনও কেউ ধরছে না তারমানে অফিসেও কেউ নেই। শেষমেশ পিসিমণি পিসোর এক কলিগকে ফোন করে জানতে পারেন পিসো নাকি ছ’টা নাগাদ বাড়ি আসার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। পিসো এখনো পৌঁছাননি শুনে সেই ভদ্রলোক তো হতবাক। পিসিমণি জোজো আর টিটোকে পাঠালেন ওদের পাড়ার ঘোষ কাকুকে গিয়ে ব্যাপারটা বলতে। এই ঘোষ পরিবারের সঙ্গে জোজোদের সম্পর্ক বরাবর ভালো, যে কোনো বিপদে আপদেই দুই পরিবার পরস্পরের পাশে দাঁড়ায় তাই এক্ষেত্রেও অন্যথা হলোনা। পুরো ব্যাপারটা শোনা মাত্রই ঘোষ কাকু ছুটে এলেন জোজোদের বাড়ি। পিসিমণির সাথে কথা বলে পিসিমণিকে আশ্বস্ত করে কাকু পাড়ারই অন্য আরেক ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পিসোর খোঁজে।


  রাত এখন প্রায় সোয়া এগারোটা বাজে, পিসিমণির জোরাজুরিতে টিটোরা তিন ভাই বোন খেতে বসলো কিন্তু কারুরই গলা দিয়ে যেন খাবার নামতে চাইছিল না। পিসিমণিকে অনেক বলা সত্ত্বেও তিনি কুটোটি কাটালেন না দাঁতে। সাড়ে এগারোটারও পর ঘোষ কাকুরা ফিরে এসে জানালেন কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি পিসোকে, ওনারা সব কটা হসপিটাল নার্সিংহোমেও খোঁজ নিয়েছেন কিন্তু কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জিনা হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, বোধহয় হসপিটালের নাম শুনে আরও ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা। পিসোর ফোন সমানে নট রিচেবল আসছে। ঘোষ কাকুর সঙ্গে পিসিমণি গেলেন থানায় ডায়েরি করতে। জোজো সোফায় বসে থাকতে থাকতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে, জিনা নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে চুপচাপ। টিটোর চরম অস্বস্তি করছে, কোথা দিয়ে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। একজায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকা ওর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে জানালার ধারে আসা মাত্রই টিটোর মনে পড়ে গেল কাল রাতে দেখা সেই সবুজ আলোর কথা। এতক্ষণ বেমালুম ভুলেছিল সে কথা, এখন আবার মনে পড়তেই জানালা দিয়ে একটু উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু সেরকম কিছুর চিহ্ন মাত্র নেই। তবে কি কাল পুরোটাই মনের ভুল ছিল! সাধারণ বুদ্ধি তো তাই বলে কিন্তু টিটোর মস্তিষ্কের একটা অংশ তাও যেন কোনো অশুভ সংকেত দিতে থাকলো।


  গেটে একটা ঠুক করে আওয়াজ হতেই পিসিমণি ছুটলেন উন্মাদের মত। আজ সকাল থেকেই এই জিনিসটা লক্ষ্য করছে টিটো, বাইরে একটু আওয়াজ হলেই পিসিমণি ছুটে দেখতে যাচ্ছেন, ভাবছেন এই বুঝি পিসো এলো কিন্তু পিসো তো আসেননি। প্রায় চব্বিশ ঘন্টা হয়ে গেল পিসো নিখোঁজ। বাইরে গিয়ে কাউকে দেখা গেলনা, পিসিমণি হতাশ হয়ে ফিরে এলেন ঘরে। সারাদিন কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলে ঢোল। আজও সন্ধ্যে থেকে কারেন্ট নেই, ঘোষ কাকিমা বলেছেন রান্না করে দিয়ে যাবেন তাই পিসিমণি বসে আছেন স্থবিরের মত। টিটোর মা বাবা হয়তো কাল সকালেই এসে পড়বেন, খবর দেওয়া হয়েছে ওদের। 


  রাত এগারোটা বেজে গেছে, ঘোষ কাকিমা তো খাবার আনেননি। তিনি কি তবে ভুলে গেলেন! কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়, কাকিমা অত্যন্ত দায়িত্ববান একজন মানুষ। মন যতই না চাক, শরীর তার স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষুধা জানান দিতে শুরু করেছে। খিদের চোটে টিটোদের মুখ শুকিয়ে ছোটো হয়ে গেছে। পিসিমণি এই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও ওদের অবস্থা টের পেয়ে বললেন, “মুড়ি খাবি? সর্বানি বোধহয় ভুলে গেছে রান্না করার কথা।”

জোজো বললো, “তুমি ব্যস্ত হয়ো না মা, আমরা মুড়ি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। তুমিও দুটি কিছু মুখে দাও মা, না খেয়ে খেয়ে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা কি করবো তখন!” 

সবসময় ইয়ার্কি ফাজলামি করতে থাকা জোজোর মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন পিসিমণি। তাঁর চোখ দুটো আবার ছলছল করে উঠলো। ওরা সবে খেতে বসেছে এমন সময় গেটে আওয়াজ হলো, এবার জিনা উঠে ছুটে গেল। বাইরে ঘোষ কাকু দাঁড়িয়ে, জিনাকে দেখে তিনি বললেন, “কিরে তোর কাকিমাকে আসতে বল এবার, রিন্টু তো ক্ষিদেয় অস্থির হয়ে গেছে। আর মা তোরা চিন্তা করিসনা তোর বাবাকে ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবে, পুলিশ খুঁজছে আর আমিও নিজের মত করে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” কথাগুলো বলে জোর করে হাসার চেষ্টা করলেন কাকু কিন্তু জিনার তো বিস্ময়ের সীমা রইলনা, “কাকিমা কোথায় কাকু? উনি তো আসেননি আমাদের বাড়ি।”

“কি বলছিস কি তুই! তোর কাকিমা তো রান্না হতেই তোদের জন্য খাবার নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, প্রায় ন’টার দিকে।”

“কিন্তু কাকু এখন তো প্রায় এগারোটা বেজে গেছে, কাকিমা আসেনি।”

“ফোনও তো বাড়িতে রেখে বেরিয়েছিল… হে ভগবান এখন আমি কি করি!” 

জিনা কিছু বলার আগেই ঘোষ কাকু ছুটে বেরিয়ে গেলেন গেট থেকে। 


  গোটা বাড়িতে এতগুলো মানুষ কিন্তু তাও চারিদিক নিঃঝুম। ঘোষ কাকিমাকেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি কাল। একই পাড়ায় পরপর দুজন দুদিনে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে এবার। ওদের সন্দেহ কোনো একটা চক্র কাজ করছে এর পেছনে, কোনো বিশেষ মতলবে তারা অপহরণ করছে পাড়ার মানুষগুলোকে। পুলিশের ধারণা আজও হয়তো কিছু একটা ঘটতে পারে, তাই বিকেল থেকে সিভিল ড্রেসে দু’জন পুলিশের এই পাড়াতেই ঘোরার কথা। টিটো একবার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো কোনো পুলিশকে দেখা যায় কিনা কিন্তু এতজন পথ চলতি মানুষের মধ্যে কাউকেই আলাদা ভাবে নজর পড়লো না ওর। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। সকালে মা বাবা এসে পৌঁছেছেন, বাবা আসার পরই ঘোষ কাকুকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে ঘুরে এসেছেন। আর এদিকে ঘোষ কাকু মানুষটাকে দেখেও বড় মায়া লাগছে টিটোর। কাল অবধি যে মানুষটা পিসোকে খোঁজার প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন আজ তাঁকেই ভীষন অসহায় লাগছে। জোজোকে মা জোর করে টিউশন পাঠিয়েছেন, মায়ের বক্তব্য বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা হলে ছেলেটা খানিকটা হালকা হবে। পিসিমণি খুব একটা চাইছিলেন না যে জোজো বাইরে যাক, পিসিমণির মনে নিশ্চয় একটা অজানা ভয় কাজ করছে যে জোজোও যদি আর বাড়ি না ফেরে… কিন্তু জোজো নিজেও টিউশন যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। হয়তো ও নিজেই এই বাড়িটার দমবন্ধ করা পরিবেশের থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি চাইছিল। হাসিখুশি ছেলেটা দুদিনেই কেমন যেন হয়ে গেছে।


 একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে, টিটো জানে সন্ধ্যে নামলেই কারেন্ট চলে যাবে আজও। জোজো নেই, তাই ও এসে বসেছে বাইরে বাঁধানো বেঞ্চগুলোর একটাতে। ভীষন কষ্ট হচ্ছে বুকের মধ্যে, এখন ওর ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে কাঁদে কিছুক্ষণ কিন্তু ক্লাস এইটে পড়া একটা ছেলে মায়ের কোলে শুয়ে কাঁদলে লোকে কি বলবে! ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, কিন্তু কেন? ছেলেদের কি কষ্ট হয়না? পরশু অফিস যাওয়ার আগে পিসো বলেছিলেন পরের সপ্তাহে সোমবারটা ছুটি নেবেন, দিয়ে রবি সোম দুদিনের ছুটিতে একটা নতুন জায়গা ঘুরতে যাবেন ওদের নিয়ে, সেখানে গেলে নাকি টিটো নিজের আনন্দ ধরে রাখার জায়গাই পাবে না। চোখ বন্ধ করে ফেললো টিটো, মনে মনে বললো প্লিজ পিসো ফিরে এসো, আমার কোথাও ঘুরতে যাওয়ার দরকার নেই। তুমি ফিরে এলেই সব থেকে বেশি আনন্দ হবে আমার, প্লিজ ফিরে এসো পিসো… কতক্ষণ এভাবে চোখ বন্ধ করে ছিল জানেনা ও, যখন চোখ খুললো তখন একটু একটু করে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। সব পাখিও বোধহয় বাসায় ফিরে গেছে, আকাশটা তাই কোলাহলহীন। সন্ধ্যতারা ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ছেনা এখন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিটো ভাবলো ভেতরে চলে যায়। এমনিতেও এখানে বাতাসটা যেন বদ্ধ হয়ে আছে, তাই ঘাম দিচ্ছে প্রচন্ড। একবার স্নান করলে শরীরটা অন্তত স্বস্তি পাবে। এই ভেবে উঠে দাঁড়াতেই জিনিসটা নজরে পড়লো টিটোর। পিসিমণিদের গ্যারেজের দরজা থেকে কিছুটা দূরে একটা কিছু চকচক করছে। স্বাভাবিক কৌতূহল বশেই এগিয়ে গেল টিটো, দেখল একটা ছোট্ট গোল চাকতির মত জিনিস, যার ভেতরে একটা হালকা সবুজ আলো জ্বলছে যেন। কেউ ভালো করে খুঁটিয়ে নিচের দিকে না তাকালে জিনিসটার অস্তিত্ব বোঝাই যায়না। চমকে উঠলো টিটো, ওর মুহূর্তে মনে পড়ে গেল সেদিন রাতে দেখা সবুজ আলোর কথা। তবে কি সেটা মনের ভুল ছিলো না!


  ওটার পাশে বসে ধার থেকে চাকতিটা তোলার চেষ্টা করলো টিটো, কোনো লাভ হলোনা, উঠোনের সাথে একেবারে মিশে আছে যেন জিনিসটা। চাকতিটা কোন জিনিসের তৈরি সেটাও বোঝা যাচ্ছেনা। ওটার দিকে যখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল টিটো তখনই গেট খুলে ঢুকলো জোজো; টিটোকে ওভাবে উঠোনের ওপর উবু হয়ে বসে থাকতে দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে এই অন্ধকারে কি করছিস উঠোনে বসে?”

টিটো চমকে উঠল, তারপর কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে জোজোকে বললো, “এখানটা দেখ জোজো।” টিটো ডাকা মাত্রই জোজো তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে, “কোথায়? কি?” বলতে বলতে সাইকেল নিয়ে ছুটে এলো টিটোর দিকে। জোজোর তাড়াহুড়োয় ওর সাইকেলের সামনের চাকাটা এসে উঠে গেল সেই সবুজ চাকতিটায়; আর তৎক্ষণাৎ ওদেরকে অবাক করে দিয়ে কেঁপে উঠলো পুরো উঠোনটা, মুহূর্তের মধ্যে কংক্রিটের মেঝেটা বিশাল এক হাঁ করে গিলে ফেললো দুই ভাইকে। পুরো ঘটনাটাই এতো দ্রুত ঘটলো যে মুখে টুঁ শব্দ করার অবধি সময় পেলোনা ওরা।


  প্রচন্ড অন্ধকারের মধ্যে নীচে পড়তে লাগলো দু’জন, অন্ধকার এতই গাঢ় যে কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। টিটোর মনে হলো আর কোনোদিনও বোধহয় আলোর দেখা পাবেনা সে। পড়তে পড়তে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো ও কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই মনে হলো আর যেন পড়ছেনা, কোনো জায়গায় এসে ওর গতিবেগ রুদ্ধ হয়েছে সহসা। ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো টিটো, এবং আশ্চর্য হয়ে দেখলো একটা নরম প্লাটফর্মের ওপর পড়ে আছে ও। চারিদিকে একটা হালকা সবুজ আলো ছড়িয়ে আছে, সেই আলোতেই দেখতে পেলো কিছুটা দূরেই শুয়ে আছে জোজো। তার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও টিটোর মতোই অবাক হয়ে গেছে। নিজেদের কিছুটা সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো ওরা তারপর জায়গাটা দেখতে লাগলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। দেখার মত অবশ্য কিছুই ছিলো না বিশেষ, একটা সাধারণ ছোটো ঘরের মত যার মেঝেটা এমন নরম যে ওপর থেকে পড়লেও গায়ে আঁচড় অবধি লাগেনা। ঘরটার মধ্যে কোনো আসবাব নেই, শুধু একটা সবুজ আলো ঘিরে আছে চারিদিক যে আলোর উৎস দেখা যাচ্ছেনা। ওরা বারবার আশ্চর্য হচ্ছিল এটা ভেবে যে মাটির নিচে এমন ঘর এলো কোথা থেকে! জোজো কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, “আমরা কি এখান থেকে কোনোদিনও বেরোতে পারবো না?” ভয় যে টিটোর একেবারে লাগছিলো না এমনটা নয় কিন্তু তাও সে ভয়টাকে প্রাণপণে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলো। 


  ওই ঘরে ওরা কতক্ষণ ধরে আছে কিছুই বুঝতে পারছেনা, সবুজ আলোটা ওদেরকে কেমন যেন আচ্ছন্ন করে তুলছে ক্রমশ। এমন সময় হঠাৎ একদিকের দেয়ালটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেল, তারপর সেখান থেকে যারা বেরিয়ে এলো তাদের দেখে টিটো আর জোজো দুজনেই তো প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায় আরকি। আগন্তুক দুজন উচ্চতায় তিনফুটের বেশি নয়, মানুষের মতোই মুখ তবে চোখের পাতা নেই বা বলা ভালো লোমের চিহ্ন মাত্র নেই তাদের গোটা শরীরে। ঠোঁট দুটো সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকটাই বেশি মোটা কিন্তু নাকটা এমন বোঁচা যে মনে হয় যেন নাকের জায়গায় একখানা করে টোপা কুল বসিয়ে দেওয়া আছে। কিন্তু ওই প্রাণিদুটোর মধ্যে সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ওদের গায়ের রং, চামড়াটা ফ্যাকাশে সবুজ। ওদের পোশাকও দেখার মত, মনে হয় যেন এলুমিনিয়াম ফয়েল মুড়ে তৈরি করা হয়েছে।


   ওদের দেখে জোজো ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “টিটো এগুলো কি রে?” টিটো কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই ওই প্রাণী দুটোর মধ্যে একটা মুখ থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ বের করলো, টিটোর মনে হলো সে যেন ওদের কিছু বলতে চাইছে। অন্য প্রাণীটা তখন শব্দ করা প্রাণীটার বাহুতে ঘুঁষি মারার মত করে তার গলাতে লাগানো যন্ত্রটার মধ্যে একটা সুইচ টিপলো। এবার প্রাণী দুটোর একটা এবার স্পষ্ট বাংলায় বলে উঠলো, “নমস্কার বন্ধুরা। আমার নাম হিস-ফস আর ও হলো আমার সহকারী ফিস-ফস।”

“কি ফিসফাস!” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো জোজো।

“না, ফিস-ফস।”

“আপনারা বাংলা বলতে পারেন!” বিস্মিত টিটো।

হিস-হস বললো, “বলতে পারিনা বন্ধু কিন্তু পৃথিবীতে আসার আগে আমাদের গ্রহের বিজ্ঞানীরা অনেক পরিশ্রম করে এই ভাষান্তরিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার সাহায্যে আমরা আমাদের কথা যে কোনো ভাষাতে রূপান্তরিত করতে পারি এবং তোমাদের ভাষাও আমাদের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছায়। বুঝলে বন্ধু?” 

“একমিনিট আপনাদের গ্রহ? মানে আপনারা পৃথিবীর বাসিন্দা নন? আপনারা এলিয়েন!”

“হাঃ হাঃ হাঃ, আমাদের কাছে কিন্তু তোমরা এলিয়েন।”

“আমাদের গ্রহে কি কারণে এসেছেন আপনারা? আর আপনারাই কি তবে আমার পিসো আর ঘোষ কাকিমাকে ধরে রেখেছেন?”

“এরা কাদের কথা বলছে হিস-হস?”

“বোধহয় আমরা যাদের ভেতরের ঘরে শুইয়ে রেখেছি তাদের কথা বলছে।”

“টিটো টিটো শুনলি এরাই আমার বাবাকে ধরে রেখেছে।” উত্তেজিত হয়ে বলল জোজো।

“উত্তেজিত হয়ো না বন্ধু, আমাদের কথা শোন।”

“না, আমি তোমাদের কোনো কথা শুনবো না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও তোমরা।” রেগে গেলো জোজো।

টিটো জোজোর হাতটা ধরে নিয়ে বললো, “একবার শুনিই না কি বলতে চায় ওরা।”

“এই তো এই ছেলেটা দেখছি বেশ বুদ্ধিমান। শোনো তবে একটা ছোট্ট গল্প বলি। জন্মসূত্রে আমাদের শরীরে এমন এক উপাদান ছিল যার থেকে আমাদের শরীরের শক্তি উৎপন্ন হতো কিন্তু তোমাদের এখানের মতো আমাদের ওখানেও পরিবেশ দূষণ এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করলো যে এখন আমাদের শরীরে এক মারণ রোগ বাসা বাঁধতে লেগেছে। সেই রোগে আমাদের শক্তি উৎপাদনকারী কোষগুলো সব নষ্ট হয়ে যায় তারপর ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটছে আমাদের।”

“কিন্তু তাতে আমাদের কি করণীয়?”


“বলছি বন্ধু ধৈর্য্য ধরো। এরপর আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা চালালেন, এমনকি অন্যান্য ছায়াপথের বিভিন্ন গ্রহেও অনুসন্ধান করা হলো। তার মধ্যে দেখা গেল পৃথিবী নামক গ্রহের প্রাণীদের কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক একটা জিনিস থাকে যা শক্তি উৎপন্ন করে তাদের শরীরে। এরপর আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক পরিশ্রম করে আবিষ্কার করে ফেললেন সেই কৌশল যার সাহায্যে তোমাদের মাইটোকন্ড্রিয়া সহজেই আমাদের রোগীদের মৃত কোষে প্রবেশ করিয়ে তাদের নতুন জীবন দেওয়া যায়। বুঝলে কিছু এবার?”

জোজো আর টিটো ক্লাস এইটে ওঠার পর কোষ সমন্ধে পড়েছে জীবন বিজ্ঞানে, তাই ওরা হিস-ফসের কথা শুনে এতটাই হতভম্ব হয়ে গেল যে ওদের মুখে কোনো কথা ফুটলো না; বলে কি ওরা, মাইটোকন্ড্রিয়া নিয়ে নেবে শরীর থেকে! তাহলে একজন মানুষ বাঁচবে কি করে! ফিস-ফস মনে হলো ওদের মুখ দেখে ভারী মজা পেয়েছে, তাই সে বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো, “জানো তো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এরকম মাটির নীচে আমাদের গোপন কক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, যেমন এটা একটা। তোমাদের হিসেবে এই দুদিন হলো এই কক্ষটা সক্রিয় হয়েছে। মাটির ওপরে থাকছে একটা বোতাম যেটাতে কোনোভাবে চাপ দিলেই মানুষ এসে পড়ে যাচ্ছে আমাদের সংগ্রহ কক্ষে, তারপর আমাদের মত প্রতিনিধিরা তাদের কোষ সংগ্রহ করে রাখছে যাতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আমাদের গ্রহ থেকে লোক এসে সেই কোষ নিয়ে যেতে পারে। হাঃ হাঃ কোনো রোগই আর আমাদের কাবু করতে পারবে না।”


“আহ ফিস-ফস এতো কথা না বলে ওদের ভেতরের কক্ষে নিয়ে যাই চল, সেখানে ওদের পরিচিত লোকেরা সব আছে তো। এসো বন্ধু।” অদ্ভুত ভাবে হেসে কথাগুলো বললো হিস-হস। জোজো আর টিটো ভয়ে এক পা দু’পা করে পেছাতে লাগলো পেছন দিকে কিন্তু পিছিয়ে যাবে কোথায়! হিস-হস আর ফিস-ফস যেন কোনো অদৃশ্য দড়ি দিয়ে বেঁধে কাছে টানতে লাগলো ওদের। টিটো আর জোজো নিজেদের ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকলো। ঠিক তখনই মাথার ওপর বিভৎস একটা আওয়াজ হল আর ওদের মাঝখানে ধুপ করে এসে পড়লো জিনা। ঘরটার মধ্যে সবাই চমকে উঠলো। টিটো মাথার ওপর তাকিয়ে দেখল আবছা করে আকাশ দেখা যাচ্ছে, তার মানে কোনো কারণে ওপরের দরজাটা আর বন্ধ হয়নি। জোজো চেঁচিয়ে উঠলো, “জিনা তুই কেন এলি?” জিনা কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই হিস-হস লাফিয়ে ওর কাছে আসতে গেল আর জিনা ভয়ে প্রচন্ড চিৎকার করে কি যেন একটা ছুঁড়ে মারলো হিস-হসের গায়ে। সবাই অবাক হয়ে দেখলো হিস-হসের গায়ের চকচকে পোশাকটায় হঠাৎ আগুন লেগে গেল, তাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে এলো ফিস-ফিস কিন্তু হিস-হসের গায়ে হাত দেওয়া মাত্রই ফিস-ফসেরও হাতটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। এক জান্তব চিৎকারে ভরে উঠলো গোটা ঘরটা। বিস্ময়ে হতবাক টিটো অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করলো, “ওদের দিকে কি ছুঁড়লি জিনা?” 

ঘটনার আকস্মিকতা ও আতঙ্কে জিনা কোনো জবাব দিতে পারলো না, শুধু ওর ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠলো তিরতির করে। জিনার পরিবর্তে জোজোই জবাবটা দিয়ে দিল, “আমি জানি ও কি ছুঁড়েছিল, জিনা অন্ধকারকে ভয় পায় তাই বাবা ওকে একটা লাইটার কিনে দিয়েছিল যাতে সবসময় ওটা সঙ্গে রাখতে পারে…” 

জোজোর কথাটা শেষ হওয়ার আগেই জিনা ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো, “জানিস তো দাদাভাই তোরা আমায় খেয়াল করিসনি কিন্তু আমি পুরোটা দেখেছিলাম, টিটো দাদা ওই বোতামটা যখন দেখছিল তখন থেকে তোরা কিভাবে গর্তটার মধ্যে ঢুকে গেলি। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হলো তারপর ওখানটায় এসে ভালো করে তাকাতে বোতামতা দেখতে পেলাম। প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলামনা কি করবো, তারপর ঘর থেকে হাতুড়ি এনে ঘা মারি ওটার ওপর, যেমন ভেবেছিলাম তেমনই ফাঁকা হয়ে যায় উঠোনটা আর আমি টাল সামলাতে না পেরে…” 

জোজো হাত রাখলো জিনার মাথায়। ভিনগ্রহী দুটোর জায়গায় এখন শুধু পড়ে আছে অনেকটা সিন্থেটিক ছাইয়ের মত জিনিস। 


  আজ সন্ধ্যের পর থেকে কি ঘটে গেল এখনো যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা ওরা তিনজন। ওদের পা গুলোও যেন এক জায়গায় আটকে গিয়েছে, শরীরগুলো কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেনা। ঘরটার মধ্যে শুধু একটা ক্ষীণ যান্ত্রিক শব্দ হয়ে চলেছে একনাগাড়ে। হঠাৎই সেই যান্ত্রিক শব্দ ভেদ করে পাশের ঘরটা থেকে একটা অন্য শব্দ ভেসে উঠলো, বলে দিতে হয়না যে সেটা কোনো মানুষের শব্দ। এতক্ষণে হাসি ফুটলো ওদের মুখে, সামনের হাঁ করে থাকা দেওয়ালটাকে লক্ষ্য করে ছুটলো ওরা তিনজন। দু’দিন ধরে আটকে থাকা মানুষগুলোকে এবার উদ্ধার করতে হবে যে!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy