Jolly Basu Ghosh

Classics Fantasy

4  

Jolly Basu Ghosh

Classics Fantasy

নীল-পৃথিবীর প্রেম

নীল-পৃথিবীর প্রেম

16 mins
595


নীল-পৃথিবীর প্রেম

লেখিকা : জলি বসু ঘোষ

ফোন নম্বর : 9836108268

ভূমিকা

পর্ব ১

রায়ান আর তাঁর নীল গ্রহ

রায়ান বেরোলো ওর বাড়ী থেকে। আজ প্রচুর কাজ। একবার পৃথিবীতে ঘুরে আসতে হবে। ওঁর গবেষণার কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এমনি পৃথিবীতে ঘুরতে যাওয়া আর গবেষণার জন্য যাওয়া এক ব্যাপার নয়। ঘুরতে গেলে তো শুধুমাত্র মহাকাশ মন্ত্রকের অনুমতি দরকার, আর নিজের space robo car এর enrolment করাতে হবে। 2500 সালে এটা কোনো বড় ব্যাপার নয় ।

কিন্তু গবেষণার কারণে গেলে অনেক জায়গায় অনুমতির দরকার হয়। কারণ এই ব্যাপারে মহাজাগতিক সংস্থা UOA (Universe operating authority ) খুব কড়া। পুরোনো জিনিস সযত্নে রাখা ওদেরই দায়িত্ব। বিশেষত কাগজের ব্যবহার অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, তাই বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষিত কাগজের বই দুর্মূল্য।

রায়ান কিছু পুরোনো দিনের লেখা নিয়ে কাজ করছে। নাহ, এইটুকুর জন্য ওর পৃথিবীতে যাওয়ার দরকার পড়ে না। কারণ মোবিটপে শুধুমাত্র একটা বোতাম টেপার অপেক্ষা, সমস্ত তথ্য ভেসে উঠবে।

কিন্তু ওর গবেষণায় বইগুলিকে কাছ থেকে দেখতে হবে।

বইগুলো সব পৃথিবীর বাংলা সাহিত্যে একাডেমি তে রাখা আছে।

এগুলো এত দুর্মূল্য যে অনেক কসরত করে অনুমতি মেলে ধরার। প্রায় মাস পাঁচেক ধরে অপেক্ষার পর, অনুমতি মিলেছে। তাও বিংশ শতাব্দীর বইয়ের

উপর কাজ করছে বলে। তার থেকে পুরোনো বইয়ের হলে তো আরও বিস্তর ঝামেলা।

 ওর গবেষণার সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েছিলো। এবার আর কিছু দিনের অপেক্ষা। UOA খুঁটিয়ে দেখে এই গ্রহের সাহিত্য সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র Neel literature academy তে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওঁদের থেকে ছাড়পত্র পেলেই ওঁর space robo car enroll করবে।

দেখা যাক কি হয়। তবে মনে হয় অনুমতি পেয়ে যাবে। কারণ রায়ান খুবই বিখ্যাত গবেষক। ওঁর প্রুচর research paper সমাদৃত হয়েছে। বিশেষতঃ পৃথিবীর একটি অত্যন্ত চর্চিত ভাষা বাংলার উপর ওর গবেষণা পত্র থেকে সেযুগের বহু তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা গেছে।

পর্ব ২

রায়ানের গবেষণা

রায়ান নীল গ্রহের বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। ওঁর কাজ মূলতঃ সাহিত্য নিয়ে। দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংরক্ষণ ও তাঁর থেকে Fibre book তৈরী করা। 

এই জাতীয় বইয়ের বিশেষতঃ হলো পুরো পুরোনো বইয়ের মত দেখতে হবে, এমনকি পৃষ্ঠার রংটিও পুরোনো কাগজের পাতার মত হবে, এমনকি হাতে ধরলেও মনে হবে কাগজের তৈরী। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, বইয়ের গন্ধ। পুরোনো দিনের পাতার যে গন্ধ সেটাও অপরিবর্তিত থাকবে।

এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব অবশ্য একা রায়ানের নয়। গত ৫০ বছর আগে আবিষ্কারটি হয়েছে।

আসলে কাগজ প্রস্তুত হত যে কাগজ দিয়ে সেই প্যাপিরাস তবে কবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্যাপিরাসের যে তন্তু ছিলো তা কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত করেছেন। তারপর তার সঙ্গে পলিথিন জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে তৈরী হয়েছে Fibre Paper. 

কিন্তু গন্ধের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়।

আসলে একটা নতুন বইয়ের গন্ধ আর পুরোনো বইয়ের গন্ধের প্রচুর পার্থক্য।

তাই এব্যাপারে একটা মতভেদ তৈরী হয়।

অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় যেসব বইয়ের নমুনা রাখা রয়েছে তাঁদের এখনকার যে গন্ধ সেটাই রাখা হবে। 

আরো একটা সমস্যা আছে, যে পুরোনো বইগুলি অপরিবর্তিত রাখার জন্য নানারকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেইগুলোর গন্ধ থেকে বইয়ের নিজস্ব গন্ধ বের করা মুশকিল। 

এই সমস্যার সমাধান করতে লেগে গেলো বেশ কিছু সময়। অবশেষে গবেষকরা একটা ফিল্টার তৈরী করলেন। যাতে প্রত্যেকটি গন্ধ আলাদা করা যায়। এতে করে সমস্ত chemical গুলির গন্ধ আলাদা হয়ে গেলো।

এখন রায়ানের উপর দায়িত্ব পড়েছে, বিংশ আর একবিংশ শতাব্দীর প্রতিটি পুরনো বইয়ের Fibre book তৈরী করা।

ব্যাপারটা সময় সাপেক্ষ তাই পৃথিবীতে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে।

যদিও বর্তমান গবেষণার ব্যাপারে মহাকাশ মন্ত্রক এবং Neel literature academy র সম্মতি আছে, তবুই কিছু সতর্কীকরণ থাকেই পৃথিবীতে যাওয়া আর থাকার ব্যাপারে।

গবেষণার ব্যাপারে পরে আসছি আগে রায়ানের সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া ভালো। 

পর্ব ৩

রায়ানের কথা

রায়ান নীল নামক গ্রহের বাসিন্দা।

এই গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে মাত্র দুইশ বছর আগে। এর আবহাওয়া প্রায় পৃথিবীর সমতুল্য।

আসলে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, চরম খাদ্যসংকট উপস্থিত হয়েছিল। নাসা নামক সংস্থা ও পৃথিবীর বহু বিখ্যাত সংস্থাই বহুদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছে। মঙ্গল গ্রহে যদি থাকার উপায় করা যায়। কিন্ত মঙ্গলে বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় বিজ্ঞানীরা মহাকাশে অন্য গ্রহের অনুসন্ধান চালান।

এই সময়ই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ( Indian Space Research Organisation বা ISRO) পাঠানো স্যাটেলাইটে এই নীল নামক ক্ষুদ্র গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়। আয়তনে পৃথিবীর দশ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ ও তাপমাত্রা পৃথিবীর মতই, 

সূর্য্যর থেকে দূরত্ব প্রায় একই। সেইজন্য গাছপালা, পশুপাখি সব কিছুরই উপযুক্ত পরিবেশ এই গ্রহে রয়েছে।

তাই পৃথিবীতে খাদ্যসংকট যখন চরমে পৌঁছলো, তখন প্রতিটি দেশের বিজ্ঞানীরা এবং রাজনীতিবিদরা সর্বসম্মতিক্রমে এই নীল গ্রহে কিছু মানুষ স্থানান্তরিত করার কথা ভাবেন। সঙ্গে গাছপালা লাগানো ও কিছু পশুপাখির বসবাসের ও ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়।

সারা পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা গিয়ে গবেষণা করে বের করেন এই নীল গ্রহ মানুষ বসবাস করতে পারেন। গ্রহটিতে বেশ কিছু জায়গায় জলের সন্ধান পান। কিছু গাছপালা ও দেখতে পান। কিন্তু গাছগুলি একটু অদ্ভূত প্রকৃতির। পাতাগুলো নীল রঙের। গ্রহটার আর একটি বিশেষত্ব হলো এখানে সারাক্ষণ একটা নীল রঙের মায়াবী আলোয় ভরে আছে।

পৃথিবীর থেকে সময়ের পার্থক্য মাত্র ৬ ঘন্টার। এখানে ৩০ ঘন্টায় ১ দিন । পৃথিবীতে পৌঁছতে লাগবে পৃথিবীর হিসেবে ২দিন। তাও রায়ানের space robo car নীল গ্রহের high speed robo car দের মধ্যে অন্যতম। সাধারণগুলোতে ৫দিন লাগে।

প্রাথমিকভাবে ১০০০ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়। এটা দেখা প্রয়োজন ছিল কতজন এই নতুন গ্রহের সাথে মানিয়ে চলতে পারে।

সমস্ত মহাদেশ থেকেই আবেদন পত্র সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে ১০০জন বিজ্ঞানী আর বাকিরা বিভিন্ন পেশা থেকে। অবশ্য বিশাল ধনী ছাড়া নীল গ্রহে বসবাস করা সম্ভব ছিলো না।

নীলের পূর্বপুরুষ ওই একশ জন বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন ছিলেন ।

আজ নীল গ্রহের অধিবাসী প্রায় এক লক্ষ। তবে প্রথম ১৫০ বছর অবধি কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়ি ছিলো না। 

কিন্তু গত পঞ্চাশ বছর ধরে কিছু আইন করা হয়েছে ।

যেমন একটির বেশী সন্তান না হওয়া। সর্বোচ্চ আয়ু ৭৫ বছর। এরপরে কোনো মানুষ বাঁচলে তাকে স্বেছা মৃত্যু বরণ করতে হবে। নীল গ্রহের অবস্থা পৃথিবীর মত হতে দেওয়া যাবে না। 

পর্ব ৪

রায়ানের জীবনসঙ্গী

রায়ানের এখন ৩০ বছর। নীল গ্রহে জীবনসঙ্গী অথবা সঙ্গিনী নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দুইরকম পদ্ধতি আছে।

যাঁরা সন্তানের পিতা মাতা হতে আগ্রহী তাঁরা ১৮ বছরের পর নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে রাখে Couple making Agency তে। যেই মুহূর্তে কেউ কোনো কাজে যোগদান করবে agency থেকে matching list পাঠানো হয়। তাঁর থেকে নিজস্ব জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে নিতে হয়।

আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো নিজের শারীরিক খিদে মেটানোর জন্য robo partner নির্বাচন। এটা তো প্রত্যেকে neel. net এ search করলেই পেয়ে যায়।

রায়ানের একজন robo partner আছে রিয়া নামে। বেশ ভালো। দেখতে একজন বাঙালী মেয়ের মত। তার sexual life এর সাথে তার সমস্ত কাজের সহকারী হিসেবে কাজ করে। একটাই সমস্যা সমস্ত কিছু রিয়ার memory card এ store হয়ে যায়।

রায়ানের বেশ কিছু কাজে গোপনীয়তা রাখতে হয়, তাই সেইসময় রিয়াকে switch off করে রাখতে হয়।

এই যেমন পৃথিবীতে যাওয়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপনীয়। তাই আজ বাড়ী গিয়ে প্রথমেই রিয়াকে বন্ধ করে রাখতে হবে।

পর্ব ৫

রায়ানের পৃথিবী ভ্রমণ

পাঁচ দিন পর রায়ান space robo car এ রওনা দিয়েছে সকাল বেলায়। car টা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। সকালে space robo car এর জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো। যতক্ষণ নীল গ্রহের আবর্ত দিয়ে বেরিয়ে যায় নি, ততক্ষণ প্রকৃতি দেখতে দেহখতে সময় কেটে গেলো।

নীল গ্রহ এমনিতেই খুব সুন্দরভাবে সাজানো। তাই ওপর থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। রাতের বেলায় একটু bore লাগে, মাঝে মাঝে দুএকটা তারার কাছে চলে আসা বা উল্কা পাত এই দেখা।

মহাশূন্য দিয়ে যাওয়ার সময় সবচেয়ে অসুবিধা দাঁড়িয়ে থাকা। ও তাই Anti gravity jacket টা পরে নিল। 

Food vending machine এর থেকে স্যান্ডউইচ, কফি নিয়ে নিলো। তারপর মোবিটপ থেকে বইয়ের লিস্ট গুলো দেখতে শুরু করলো। বাংলার কিছু বিখ্যাত লেখকের বই।

আপাততঃ দশটা বই নিয়ে কাজ করবে। সেটা করতেই অনেক সময় যাবে। অবশ্য বই নির্বাচনের ভার সম্পূর্ণ ভাবে রায়ানের।

১) কালবেলা - সমরেশ মজুমদার

২) মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ

৩) প্রথম আলো - সুনীল গাঙ্গুলী

৪)কেয়া পাতার নৌকো - প্রফুল্ল রায়

৫)মানব জমিন - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

৬)বিবর - সমরেশ বসু

৭) তুঙ্গ ভদ্রার তীরে- শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

৮)কাছের মানুষ - সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য

৯)যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল - জয় গোস্বামী

১০)প্রফেসর শঙ্কু : সত্যজিৎ রায়

আপাততঃ এই দশটি বইয়ের উপর কাজ শুরু করবে। ছ মাস পৃথিবীতে থাকার অনুমতি মিলেছে। এর মধ্যে যেভাবে হোক কাজ শেষ করতে হবে।

প্রথমে ISRO র গবেষণা কেন্দ্রেই ওর space robo car নামবে। সেভাবে সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া NLA আর UOA থেকেও ব্যাপারটা confirm করা হয়েছে। ISRO আর বিজ্ঞানীরাও খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

পর্ব ৬

১৭ই ডিসেম্বর, ২৫০০ সাল

" অতিথি দেব ভবঃ "

আজ দুদিন হলো ISRO তে রায়ান land করেছে। ওঁদের আন্তরিকতা দেখে রায়ান মুগ্ধ। আসলে নীল গ্রহে সব থাকা সত্বেও কৃত্রিমতা বেশী। পৃথিবীর মানুষের মধ্যে এখনো সূক্ষ্য অনুভূতিগুলি বর্তমান। ISRO র একজন অফিসারকে ওর সহায়তার জন্য দেওয়া হয়েছে, ছেলেটির নাম অভীক, এখন আর কেউ পদবী ব্যবহার করে না, তবে ছেলেটি বাঙালী, তাই রায়ানের সুবিধা হবে। রায়ানের পূর্বপুরুষ ও বাঙালী ছিলো।

আগামী কাল ওরা কলকাতার বাংলা সাহিত্য একাডেমি তে যাবে। বইগুলো ওখানেই সংরক্ষিত আছে। প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র এসে গেছে, এবার শুধু কাজ শুরু করার পালা।

পর্ব ৭

নগর পাড়ের ইতিকথা

কলকাতার প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। এখন চারিদিকে শুধুমাত্র সবুজের সমারহ। এমনকি বিশালাকার আবাসনগুলো সবুজ গাছে মোড়া। যানবাহন পুরোই ব্যাটারিচালিত, তাই দূষণ নেই।

১৯শে ডিসেম্বর, ২৫০০ সাল

রায়ান গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে।

প্রথমেই সমস্ত বইগুলোর scan করলো সে। এটা একটি বিশেষ ধরণের স্ক্যানার। যেটা দিয়ে লেখা scan হয় না। কি ধরণের পাতা, কতদিনের পুরনো সমস্ত বোঝা যায়। পুরো স্ক্যান কপি মোবিটপে ভরে হোটেলে চলে এলো।

ISRO থেকেই সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। ওকে ওর মোবিটপে বেশ কিছু হোটেলের option দিয়েছে। তারমধ্যে ও বাঙালী হোটেল " বাংলার কুটীর "নির্বাচন করেছে।

এখন হোটেলের কনসেপ্ট অন্যরকম। হোটেলের ঘরের ভিতরের সাজসজ্জা আবাসিকদের পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তন হয়।

" বাংলার কুটিরে" ঢুকে মনটা ভালো হয়ে গেলো। চারিদিকে সবুজ গাছের সমারহ। মাটির রাস্তার দুইধারে ধান ক্ষেত। ধান ক্ষেতের মাঝে কিছুদূর অন্তর কুঁড়েঘর। মাটির দোতলা বা একতলা। প্রতিটা কুঁড়ে ঘরের সামনে ছোট্ট পুকুর, চারিদিকে বেড়া দেওয়া, সুন্দর করে কলাগাছ আর নারকেল গাছের সারি দিয়ে ঘেরা। ঘরের সামনে ছোট্ট উঠোন, তাতে খাটিয়া পাতা।

বা দিকে একটা রান্নাঘর এবং তার সংলগ্ন খাবার ঘর।

রায়ানকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী মাটির দোতলা দেওয়া হয়েছে। ভিতরে ঢুকেই বা দিকে আলো জ্বালাবার সুইচ আর একটা মনিটর আছে। ওতে নানা ধরণের option.

ঘরের রং, ভিতরের আলো, দেওয়ালের কারুকার্য, আসবাবপত্র আরো অনেক কিছু।

রায়ান তাঁর পছন্দের মাটির রং select করলো, সঙ্গে লণ্ঠনের আলো, ঘরতো এমনিতেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। সে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী তাপমাত্রা সেট করলো। আসবাবের মধ্যে ছোট্ট একটা চৌকি, একটা টেবিল, চেয়ার। ঘরের এক কোণে একটা ফ্রিজ আছে, সেটাকেও দেখতে ছোট্ট কাঠের আলমারীর মত। তার পাশে একটা ছোট্ট জলের কুঁজো, তার উপরে গ্লাস ঢেকে দেওয়া।

পর্ব ৮

" আয়রে যত হাঁড়ি হাঁড়ি,

মন্ডা মিঠাই সারি সারি........."

ফ্রিজের মধ্যেই হরেক খাবারের সারি।

ওপরে মেনু কার্ড দেওয়া। পছন্দের খাবারের বোতাম টিপলেই ওপরের কভারটা খুলে যাবে এবং গরম খাবার প্লেটে পরিবেশন হবে। প্লেটের ও নানারকম option, মাটির, কলাপাতা,পদ্ম পাতা, fibre, কাঁচ আরো কত কি। 

রায়ান কলাপাতায় গরম ভাত, ঘি, বেগুন ভাজা, শুক্তো, ইলিশ মাছ ভাপে নিলো, সঙ্গে আমের চাটনী, মিষ্টি দই।

তাঁদের নীল গ্রহে এসব মেলে না। বেশী সংখ্যক লোকই food tablet খায়, রান্না করার সময় নেই কারোর।

অদ্ভূত তৃপ্তি হলো খেয়ে। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়েই বসলো কাজ নিয়ে।

রাত ভালোই হয়েছে। রায়ান মোবিটপ থেকে তথ্যগুলো দেখছিলো।

হঠাৎ তাঁর ভুরুটা কুঁচকে উঠলো। " প্রথম আলো " বলে বইটার স্ক্যান কপি দেখছিলো। কিন্তু একি, এটা তো জাল, এটা তো কাগজের বই নয়, অত পুরোনোও নয়।

ওর মোবিটপে একটা বই দেখেছে সবে, "বিবর" বলে বইটা। সেটার তো সব রিপোর্ট ঠিকই আছে। page material "paper" দেখাচ্ছে। এটা তো বিশাল scam , রায়ান ভাবলো। দণ্ডনীয় অপরাধ। এই সব দুর্মূল্য বইয়ের কপি পাওয়া মুশকিল। কিন্তু এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হয় কি করে।

রায়ান মোবিটপ ঘেঁটে বইটা সম্মন্ধে সব তথ্য বের করলো। বইটা উপন্যাস, কিন্তু অনেক মহাপুরুষদের জীবনের উপর গবেষণা করে লেখা। যার জন্য এই বইটার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।

ভাবলো অভীককে ডেকে বলে, অভীক এই বাড়ীর একতলায় আছে। তারপর ভাবলো অনেক রাত তাই বিরক্ত না করাই ভালো। তাদের গ্রহে, দিন রাতের বিশেষ পার্থক্য নেই বলে যে যার নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সময়ে কাজ করে।

কিন্তু পৃথিবীতে এখনও রাতের সময় বেশীরভাগ মানুষ বিশ্রাম নেয়, রায়ান তাই এই নিয়মটা ভাঙতে চাইলো না।

যা হবে কাল দেখা যাবে।

পর্ব ৯

২১শে ডিসেম্বর, ২৫০০সাল

" অচেনা গন্ধ "

রাত ১১টা বাজে, কলকাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। রায়ানের বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই। গতকাল থেকে বিস্তর চাপ গেছে।

সকালেই জলখাবার খেয়ে অভীককে ডেকে সব বললো। তারপর ১০টা নাগাদ দুজনেই বেরোলো। ওঁদের জন্য একটা ব্যাটারি চালিত উড়ন্ত গাড়ী দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রয়োজন মত যেখানে সেখানে যেতে পারে।

প্রথমেই গিয়ে ফিল্টার দিয়ে গন্ধটা পরীক্ষা করলো। গন্ধটা খুব সন্দেহজনক লাগলো, রাসায়নিকের গন্ধ বাদ দিলে একটা অজানা গন্ধ, যেটা পুরোনো পাতার গন্ধের খুবই কাছাকাছি। তাই সবাই ধরতে পারেনি।

রায়ান গত দুদিন ধরে ১০টা বই ভালো ভাবে পরীক্ষা করেছে। তাঁর page detector যন্ত্র, smell detector filter দিয়ে সব বইয়ের রাসায়নিক গন্ধগুলো আলাদা করে ফেললো। এটা করতে গিয়ে আরও একটা বই নকল বেরোলো, তুঙ্গ ভদ্রার তীরে।

আসলে পৃথিবীতে এই জাতীয় গন্ধ বা কাগজ পরীক্ষা করার যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি এখনো। তাই হয়তো কারোর চোখে ধরাও পড়েনি। পুরো ব্যাপারটা অভীক সাহিত্য একাডেমির কতৃপক্ষকে জানিয়েছে, ওঁরা তৎক্ষণাৎ গোয়েন্দা দপ্তরে জানিয়ে দিয়েছে। রায়ান অন্য গ্রহের বাসিন্দা হয়ে এর বেশী কিছুই করতে পারবে না।

পর্ব ১০

২৪শে ডিসেম্বর, ২৫০০ সাল

রায়ানের অন্য বইগুলোর কাজ ভালোই এগোচ্ছে। " বিবরের " প্রায় প্রত্যেকটি পাতার fibre page তৈরী হয়ে গেছে। কিন্তু রায়ানের খুবই মনটা খারাপ। সব চেয়ে দুর্মূল্য বইয়ের চুরি হয়েছে। এতদূর থেকে এসে কাজ সম্পূর্ণ না হলে খারাপ তো লাগবেই।

আজ রাতে খাবারের পরিমাণটা একটু বেশী হয়ে গেছে। আসলে এখানে এসে অবধি এত সুন্দর সুন্দর খাবার রায়ান ও লোভ সামলাতে পারছে না।

রাতের বেলায় সামনের উঠোনে একটু পায়চারি করছিলো। অভীক শুয়ে পড়েছে। আজ চাঁদের আলো কম, তাই জায়গাটা নিস্তব্ধ আর রহস্যময় লাগছে।

পুকুর পাড়ের গাছের ছায়াগুলো জলে পড়ে এক অদ্ভূত মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পুকুরের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো, সত্যি পৃথিবীর রূপ একেবারেই অন্য রকম। নীল গ্রহ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু প্রকৃতির রূপের বিকল্প তৈরী করতে পারেনি। 

রায়ান ঘরে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, মনে হলো কেউ যেন সিঁড়ি দিয়ে নেমে দ্রুত ঘরের পিছনের ধানি জমির দিকে নেমে গেলো। সে কে, কে বলে জোরে চিৎকার করে উঠলো, আর সেই সময় অভীক হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এলো। বললো, কি হয়েছে?

দুজনে বিস্তর খোঁজা খুঁজি করলো, কিন্তু কেউ নেই আশে পাশে। কে এই অশরীরী। 

ওঁরা দুজনই দোতলায় এলো, ঘরে কোনো পরিবর্তন নেই, শুধু ওর মোবিটপটা খোলা, আর তাঁর পর্দায় ভেসে উঠেছে লেখা.....

নিজের গ্রহে ফিরে যাও।

পর্ব ১১

যীশুর জন্মদিনে

২৫শে ডিসেম্বর, ২৫০০ সাল

যীশুর জন্মদিন এখনো পালিত হয় কলকাতায়। তবে পার্কস্ট্রিট নামে জায়গাটার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

এক ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে কলকাতার পার্কস্ট্রিট ও গঙ্গা সংলগ্ন এলাকার প্রভূত ক্ষতি হয়। বেঁচে যায় ভিক্টরিয়া আর সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ। তাই পার্কস্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা নতুন করে গড়ে তোলা হয়।

প্রতিটি রেস্তোরাঁয় এক চিলতে বাগান আর ছোট্ট জলাশয় আছে। এতে স্বচ্ছ বাতাসের আস্বাদন গ্রহণ করতে পারে সবাই। বর্তমানে সবাই পরিবেশ সচেতন হয়ে ওঠায় কলকাতার রূপই বদলে গেছে।

সকালে জলখাবারটা অতীব সুস্বাদু ছিলো। আজ বাইরের এক বিখ্যাত রেস্তোরাঁ থেকে খাবার এসেছে।

ফিস সিজলার, চিকেন স্টেক, চার রকমের কেক, পুডিং আরো কত কি।

এদের আতিথেয়তার তুলনা হয় না।

এই এক জায়গায় পৃথিবীর মানুষ নীল গ্রহের মানুষের থেকে এগিয়ে। পৃথিবীর মানুষ এখনও যন্ত্র মানুষে পরিণত হয় নি।

জলখাবার খেয়েই একাডেমি তে গেলো ওরা দুজন। গোয়েন্দা দপ্তরের দুজন অফিসার আসবেন, তাঁরা একটু রায়ানের সাথে কথা বলবেন।

পৌঁছে দেখলো, অফিসার দুজন অপেক্ষা করছেন।

একজন অফিসারের নাম সুমন্ত আর আরেকজন মহিলা নাম ঋতমা।

পরিচয় পর্বের পর সুমন্ত ছেলেটি বললো, স্যার, আমরা অনেক চেষ্টা করছি, কোনো সূত্র পাচ্ছি না। আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি। চারিদিকে ক্যামেরা বসানো, কি ভাবে চুরি হলো বোঝাই যাচ্ছে না। আপনাদের কাছে অনেক উন্নত মানের যন্ত্র রয়েছে। যদি তাঁর কোনোটার দ্বারা এই চুরির কিনারা করতে পারেন।

রায়ান হেসে বললো, নিশ্চই এ ব্যাপারে আমারও স্বার্থ আছে। যে কাজে এসেছি সফল না হলে...

কিছু পরে রায়ান বললো, আরো একটা ব্যাপার, কাল আমার ঘরেও চোর এসেছিলো, তবে শুধুমাত্র হুমকি দিয়েই চলে গেছে।

যাই হোক দেখা যাক সবাই মিলে চেষ্টা করে।

রায়ান  : আমার একটা কথা মনে হচ্ছে, যিনি এই বইটি চুরি করেছেন একাধারে বড় বৈজ্ঞানিক এবং সাহিত্যের কদর করেন। ঐতিহাসিক ও হতে পারেন।

সুমন্ত : কেন মনে হল এইকথা আপনার?

রায়ান : কারণ বেছে বেছে সেই বইগুলো চুরি করেছেন, যেইগুলো ইতিহাস নির্ভর লেখা। লক্ষ্য করে দেখুন দুইটি উপন্যাসের চরিত্ররা ইতিহাসের পাতা থেকে নেমে এসেছেন।

ঋতমা এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল, এবার বললো, কিন্তু এখানে প্রতিদিন এত visitors দের মধ্যে খুঁজে পাবো কি করে?

আরও একটা ব্যাপার, আমরা কেউই জানিনা কবে থেকে কবের মধ্যে চুরি হয়েছে, সত্যি বলতে কি আপনি এসেছেন বলে নইলে তো আমরা বুঝতেও পারতাম না।

রায়ান মনে মনে প্রশংসা করলো মেয়েটির বুদ্ধির, তারপর বললো, আপনি ঠিকই ভেবেছেন, তবে একটা উপায় আছে।

একটু থেমে বললো, আমার স্ক্যানার টায় যেমন বোঝা যায় কাগজটা জাল কিনা, তেমন বোঝা যায় এটা কতদিনের পুরোনো। আর আমি পরীক্ষা করে দেখেছি এটা গত একমাস আগের। তারিখটা ও বলতে পারি। ১৫ই নভেম্বর এই পাতাগুলো তৈরী হয়েছে।

আশাকরি এবার আপনাদের কাজটা সহজ হবে।

সুমন্ত : ধন্যবাদ স্যার, আচ্ছা আমরা গত একমাসের visitors register পরীক্ষা করছি। এই একাডেমিতে দর্শক কম। কারণ সারাদিনা মাত্র তিন ঘন্টা খোলা থাকে। এত সব দুর্মূল্য বই রয়েছে তাই একাডেমি থেকে allow করে না। তাছাড়া সমস্ত visitor দের নাম, ঠিকানা, contact no সবই দেওয়া আছে।

আশা করি দুদিনের মধ্যেই সবার details পেয়ে যাব। তারপর আপনাকে জানাচ্ছি স্যার।

ওরা চলে গেলো, রায়ান আর অভীক ও বেরিয়ে এলো, আজ একটু চার্চে যাবে, তারপর ওঁরা পার্কস্ট্রিট যাবে। একটু মনের বিশ্রাম ও প্রয়োজন।

পর্ব ১২

২৮শে ডিসেম্বর ২৫০০ সাল

রায়ানরা আজ আবার একাডেমি তে এসেছে। গোয়েন্দা দপ্তর তিনজনকে নির্বাচন করেছে। Dr অর্কপ্রভ, প্রফেসর নিলয়, প্রফেসর সুতনু।

রায়ানরা দুজন আর সুমন্ত, ঋতমা।

Dr অর্কপ্রভ : কি ব্যাপার বলুন তো, জরুরি তলব, আমার কি কোনো কাজ নেই?

সুমন্ত : নিশ্চই আছে স্যার, কিন্তু আমাদের কাজটাও জরুরী। আমরা কয়েকটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দেব।

অর্ক : তাড়াতাড়ি বলুন। আমার তাড়া আছে। 

রায়ান ওর মোবিটপটা এগিয়ে দিল, ওতে বইটার ছবি আছে। দেখুন তো এই বইটা চেনেন। 

অর্ক মোবিটপ টা ধরে একবার দেখে নিয়ে বললেন, হয়তো দেখেছি, মনে নেই । আসলে কত জায়গায় যাই, কতরকম বই দেখি, এত মনে রাখা সম্ভব নয়।

রায়ান : আচ্ছা একটা অন্য কথা, আপনার গবেষণার বিষয় কি?

অর্ক : আমি human tissue নিয়ে গবেষণা করি, তাছাড়া পেশায় একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ।

রায়ান : আপনি কি প্লাস্টিক সার্জারি করেন।

অর্ক : হ্যাঁ।

ঋতমা হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলো , আচ্ছা আপনি কি ধরণের বই পড়তে পছন্দ করেন?

অর্ক : থতমত খেয়ে, মানে মেডিকেল জার্নাল বেশী পড়ি, এছাড়া সাধারণ গল্পের বই।

ঋতমা : প্রিয় লেখক?

অর্ক : সেরকম বাধা ধরা কেউ নেই।

রায়ান আচ্ছা আপনি আসুন, ধন্যবাদ ।

পর্ব ১৩

প্রফেসর সুতনু ঢুকলেন, মাথায় স্বল্প কেশ, ফর্সা, বেঁটে খাটো চেহারা, গোল ফ্রেমের চশমা চোখে, অস্থিরতা রয়েছে চোখে। 

সুতনু : কি ব্যাপার বলুন তো? 

সুমন্ত : আরে আপনি বসুন তো আগে, তারপর তো বলবো ।

সুতনু : আরে কি বলবো, আমার বিড়ালটা দুদিন ধরে ঠিক করে খাচ্ছে না। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন গিয়ে স্যালাইন দিতে হবে, নইলে মরে যাবে তো।

রায়ান : আচ্ছা, আপনার গবেষণার বিষয় কি?

সুতনু : ধুর মশাই, নিকুচি করেছে গবেষণার, নিউটন বাঁচলে তবে তো?

সুমন্ত : নিউটন ? তিনি তো কবেই....

ঋতমা : নিউটন কি আপনার বিড়ালের নাম?

সুতনু : বিরক্তিকর, কতবার বলবো এক কথা। আচ্ছা আমি আসি।

রায়ান : এক মিনিট, দেখুন তো, এই বই দুটো চেনেন নাকি?

সুতনু : মোবিটপটা ধরে, কি বই, অ !

কি সব বিদঘুটে নাম মশাই? এত প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের বই। পাবো কোথায়?

রায়ান : তাহলে একাডেমি তে এসেছিলেন কেন?

সুতনু : সে তো বিড়ালের উপর কোনো বই আছে কিনা দেখতে?

সুমন্ত : আচ্ছা আসুন আপনি।

পর্ব ১৪

প্রফেসর নিলয় ঘরে ঢুকলেন, ফর্সা, লম্বা, রোগা, খুবই নম্র আচরণ।

নিলয়: আসতে পারি?

ঋতমা : আসুন, সোফাটা দেখিয়ে দিয়ে বললো বসুন।

নিলয় : জানতে পারি কি, কি জন্য ডেকেছেন আমাকে?

রায়ান : হ্যাঁ নিশ্চই বলবো, তাঁর আগে একটু যদি বলেন, আপনার গবেষণার বিষয়টি কি?

নিলয় : আমি একজন ঐতিহাসিক, পুরনো দিনের বইয়ের উপর গবেষণা করি।

রায়ান : আচ্ছা, দেখুন তো এই বই দুটোর ঐতিহাসিক মূল্য কত হবে?

নিলয় : ওরে বাবা, এত দুর্লভ, একাডেমি তে আছে, তবে বাইরে পাওয়া মুশকিল। সারা পৃথিবীতে কটি আছে বলা মুশকিল।

ঋতমা : তাই আপনি বইটি সরিয়ে ফেললেন?

নিলয় : কি বলছেন ম্যাডাম এসব? আমি কি করে সরাবো? একাডেমি তে কি ক্যামেরা নেই?

রায়ান মিষ্টি হেসে বললো আচ্ছা আপনি আসুন ।

ঋতমাকে দেখে রায়ান মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেমন সুন্দর চেহারা, দৃপ্ত ভঙ্গী, তেমন উপস্থিত বুদ্ধি। জীবন সঙ্গী বোধ হয় মানুষ এরকমই খোঁজে, কিন্তু সে ভেবে কি করবে, সে তো এই গ্রহের অতিথি। আজ বাদে কাল তার চলে যেতে হবে...দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো সে?

পর্ব ১৫

৩১শে ডিসেম্বর, ২৫০০ সাল

সকাল ১০টা

গত দুদিন ঝড়ের মত কেটে গেলো রায়ানের। অবশেষে অপরাধী ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য দুজন অপরাধী। 

Dr. অর্কপ্রভ এবং প্রফেসর নিলয়। এতে অবশ্য রায়ানের যন্ত্রের কৃতিত্বই বেশী।


রায়ানের মোবিটপে তিনজনের আঙুলের ছাপই উঠেছিলো এবং তাঁর সাথে জাল বই দুটোর মধ্যে পাওয়া finger print মিলেছে এদের দুজনের।

এছাড়া তিনজনের বাড়িতেই তদন্ত করে গোয়েন্দা দপ্তর। তল্লাশির ফলে প্রচুর বই পাওয়া যায় দুজনের বাড়ীর গোপন ভল্টে।

Dr অর্কর বাড়ীতে প্রচুর জাল বইয়ের পাতা পাওয়া যায়। যেগুলো মানুষের ত্বকের তন্তুর সাথে fibre মিশিয়ে তৈরী।

উনি যেহেতু প্লাস্টিক সার্জারি করতেন খুব সহজেই মানুষের ত্বকের sample পেতেন।

আর প্রফেসর নিলয় বিশ্বের সমস্ত দুর্মূল্য বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করতেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন বলে পৃথিবীর বিভিন্ন একাডেমি তে ওনার অবারিত দ্বার ছিলো। সেই সমস্ত যোগাযোগ কে কাজে লাগিয়েই চড়া দামে এই বইগুলো বেচতেন।

যাই হোক অবশেষে সমস্ত অপরাধী ধরা পড়েছে। রায়ান ও এবার নতুন ভাবে কাজ শুরু করতে পারবে।

৩১শে ডিসেম্বর , ২৫০০ সাল,

রাত্রি ১১:৩০ টা

" বাংলার কুটীর

বিরাট পার্টির আয়োজন হয়েছে। সবাই খুব খুশী এই সাফল্যে। রায়ান, সুমন্ত আর ঋতমাকে প্রচুর উপহার দেওয়া হয়েছে।

এখন ISRO র CEO ভাষণ দিচ্ছেন, এরপর সাহিত্যে একাডেমি থেকে সভাপতি ভাষণ দেবেন।

রায়ানের আর প্রশস্তি শুনতে ভালো লাগছে না। বাইরে ধানক্ষেতের মৃদু হাওয়া, সেই দিকটায় সরে এলো সে, মনটায় যেন কেমন বসন্তের মেঘ জমেছে।

কি করছেন এখানে? সবাই তো ওই দিকে। হাতে দুটো কফির গ্লাস। কফি চলবে?

ঋতমার গলা।

অতল গভীর চোখের আহ্বান যেন, রায়ান এক ঝলক দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো।

ঋতমা: কি হলো, কফি?

পর্ব ১৬

হাত বাড়িয়ে কফিটা নিয়ে চুপ করে রইলো, যন্ত্র মানুষের দেশে থেকে ভেবেছিল সেও যন্ত্র মানব হয়ে গেছে, কিন্তু আজ যেন তাঁর মধ্যের হৃদযন্ত্রটা বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে।

ঋতমা: একটা কথা বলি আপনাকে?

রায়ান : হ্যাঁ বলুন না।

ঋতমা: আপনাদের গ্রহে কি "প্রেম নেই "?

রায়ান : মানে?

ঋতমা : মানে আপনার মনের বাগান থেকে কবে ফুলচুরি হয়ে গেলো, আর আপনি ফুলচোরকে ধরতে পারলেন না?

রায়ান : এগিয়ে এসে আলিঙ্গন করে ঋতমাকে। আমি তো কবেই তোমার মনের গভীরে ডুবে গেছি, আর " সাঁতারুর মত আমার জলকন্যা "কে খুঁজে চলেছি।

কিন্তু আমার তো সময়সীমা বাঁধা।

"অচিন পাখীর " মতই একদিন উড়ে যেতে হবে...

ঋতমা রায়ানের উষ্ণ পরশে সিক্ত হতে হতে.....যেতে কি হবেই ? থেকে যাওনা এই কম আধুনিক পৃথিবীতে, অনেক কিছু না পাওয়ার সাথে সামান্য কিছু পাওয়া নিয়ে।

আমরা জানিনা রায়ানের সাথে ঋতমার সম্পর্কের পরিণতি কি....তবে যেই পরিণতি হোক একটি নীল গ্রহের প্রাণীর মনে একজন পৃথিবীর মানুষের ছাপ থেকে যাবে আজীবন এটাই আশা থাকুক।

     -----------------সমাপ্ত------------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics