Sampa Maji

Fantasy Others

3.9  

Sampa Maji

Fantasy Others

আধুনিক বৌমা

আধুনিক বৌমা

7 mins
2K



বিক্রম বাবা মা এর এক মাত্র সন্তান। বাবা কেরানীর চাকরি করতেন, বাবার চাকরী থাকাকালীন বাবা মারা যান কিন্তু মা পড়াশোনা জানতেন না তাই কাজটা পাননি অন্য দিকে বিক্রম সবে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে তখন তার 18 বছর হয় নি তার মানে সে নাবালক তাই ওকেও কাজটা দিল না । বাবার পেনসনে টাকায় কোনো মতে সংসার চলে। বিক্রম টিউশনি পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নেয়। এই ভাবে বিএ কমপ্লিট করে বিক্রম ।এর পর একটা কোম্পানিতে চাকরী জোগাড় করে নেয় । বিক্রমরা গ্রামে থাকে, তবে আগেকার মতো প্রত্যন্ত গ্রাম না, ওদের গ্রাম এখন আগের থেকে অনেক আধুনিক। বিক্রম এর মা অঞ্জলি দেবী পড়াশোনা তো জানেই না তার সাথে একটু চালাক চতুর ও নয়, একেবারে সেকেলে মানুষ। তাই বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাইরের সব কিছু বিক্রমকেই সামলাতে হয়েছে। অঞ্জলি দেবী সেকেলে হলেও গোড়া নয়, বিক্রম নতুন কিছু করতে চাইলে তাকে বাধা দেয় না কোনো দিন। বিক্রম নিজের পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে চায়, তাতে অঞ্জলি দেবী কোনো আপত্তি নেই , ছেলে সুখেই তার সুখ, তার জীবনে ছেলেই একমাত্র সম্বল তাই ছেলে যেন ভালো থাকে সেই কামনা করে সব সময়। অঞ্জলি দেবীর মনটা খুব সরল কিন্তু সমস্যা এক জায়গায় তিনি এখনো সেকেলে ধরনের মানুষ রয়ে গেছেন , এর জন্য প্রতিবেশী, আত্মীয় রা অনেকেই অনেক কথা বলে কিন্তু তিনি কারো কথায় কিছু মনে করেন না, গায়ে মেখে নেয়।


অঞ্জলি দেবী মাত্র ছেলে বিয়েতে আত্মীয় স্বজন পাড়াপড়শি সবাইকেই বলেছেন , খুব ধুমধাম না হোক মোটামুটি আয়োজন করেছেন। এতেই বিপত্তি, বৌমা দেখে আত্মীয় স্বজন বলে- এমন শিক্ষিত আধুনিক বৌ ঘরে এনেছো, তোমার সাথে মানিয়ে চলতে পারলেই হয় , তুমি কোথায় পুরানো চিন্তা ধারার আর বৌমা কতো আধুনিক, দুজনে একেবারে বিপরীত, তোমার সাথে কতদিন টিকে দেখো, ইত্যাদি ইত্যাদি। আনন্দের দিনে আত্মীয়দের থেকে এমন কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় অঞ্জলি দেবীর। এখানেই শেষ না পাড়া প্রতিবেশী মহিলার সাথে দেখা হলে তারাও একই কথা বলতে শুরু করে - তোমার বৌমা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে, তবে তোমার বৌমা শহরে থেকে লেখা পড়া করে এসেছে , সে কি তোমার সাথে মানিয়ে চলতে পারবে। সে হল গিয়ে শিক্ষিত আধুনিক এখনকার দিনের মেয়ে আর তুমি সেই পুরানো চিন্তাভাবনা, এক কথায় সেকেলে মানুষ। তাই দেখলেনা কয়েক দিন যেতে না যেতেই কাপড় ছেড়ে চুড়িদার, কুর্তি কি সব পোশাক পরা শুরু করেছে আর শাড়ি পরলে ঘোমটাও দেয় না, বিয়ের সব আচার বিচার ও মানলো না। দেখবে এ বৌ বেশী দিন তোমার সাথে ঘর করতে পারবে না, আবার যদি চাকরী পায় তাহলে তো আর কোথাই নেই। কিছু দিন পরেই তোমার ছেলেকে নিয়ে শহরে চলে যাবে আর তুমি এখানে একা পরে থাকবে, তখন বুঝবে আধুনিক বৌমা ঘরে আনার কি ফল ইত্যাদি। 


এই সব কথা শুনে অঞ্জলি দেবীর মন একে বারে ভেঙে যায় তাই সব সময় মনমরা হয়ে থাকেন। ছেলে- বৌমাকে এরিয়ে চলে, বৌমার সাথে ভালো কথা বলেন না।

বিষয়টা বিক্রম এর চোখে পরেছে, তিয়াসা ও বলছে, মা আমার সাথে ভালো কথা বলতে চায় না। বিক্রম দেখল ব্যপারটা তো একে বারেই ভালো নয় বিয়ের 15 দিন হতে না হতেই মায়ের এমন পরিবর্তন। নিশ্চই কিছু হয়েছে, তাই মায়ের কাছে গিয়ে বিক্রম মাকে চেপে ধরে।

বিক্রম - মা আমি কয়েক দিন দেখছি তুমি আমাদের সাথে অন্য ব্যবহার করছো, আগে তো এমন করতে না। তোমার কি কিছু হয়েছে, না আমরা কোনো ভুল করেছি।

মা - না তেমন কিছু হয় নি তো, এই তো তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলছি।

বিক্রম - তোমাকে আমি ভালো করে জানি মা, আগে কখনো তোমার এমন ব্যবহার দেখিনি, সত্যি করে বলো না মা তোমার কি হয়েছে।

মা- আমার খব ভয় করছে, প্রতিবেশীদের কথা শুনে মনটা একেবারে ভেঙে গেছে, কিছু ভালো লাগছে না।

বিক্রম - প্রতিবেশী কথা তুমিতো কোনো দিন কিছু মনে করতে না মা, আজ  এমন কি হল যে তাদের কথা শুনে তোমার মন খারাপ হয়ে গেল, সেই জন্য আমার সাথে ও কথা বলতে চাইছো না।

মা- সবাই বলছে তোর বউ শিক্ষিত আধুনিক মেয়ে সে কি আমার মতো সেকেলে শাশুড়ির সাথে ঘর করতে পারবে। আমি হলাম পুরানো দিনের মানুষ আর বৌমা হল এখনকার দিনের, আমি কি পারবো তার সাথে মানিয়ে চলতে।


বিক্রম - ও এই ব্যাপার। আচ্ছা বলতো মা, বাবা কি আমার মতো এই রকম পোশাক পরতো বা এইসব জিনিস ব্যবহার করতো, সেও কি আমার মতো বাইক চালাতে।


মা- তোর বাবা কি করে এই সব পোশাক পরবে। তখনকি আর এখনকার দিনের মতো এতো সব কিছু ছিল না আমাদের অতো টাকা ছিল যে দামী দামী জিনিস কিনবে। 

বিক্রম - আমি তো এখনকার দিনের মতো তাই না। আর পড়া শোনা করেছি, চাকরী ও করছি, ঠিক তো।

মা- হ্যাঁ তুই এখনকার দিনের ছেলে আর তুই কতো দূর পড়াশোনা করেছিস।


বিক্রম - তুমি তো সেকেলে মানুষ, তাহলে আমার কি তোমার সাথে থাকতে অসুবিধা হয়েছে, না আমি তোমাকে ছেড়ে চলেগেছি। হ্যাঁ মানছি তুমি একটু কম বুজো তাই তোমাকে বুঝাতে গিয়ে অনেক সময় জোরে কথা বলি তাই বলে কি আমি তোমার সাথে ঝগড়া করি, তাই কি?


মা- না , একে বারে না।আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয় তবে ঝগড়া হয় না। তুই যা জানিস না আমি সেগুলো তোকে বলে দেই আর আমি যা জানি না তোর কাছ থেকে শিখি নেই ।


বিক্রম - ঠিক সেই রকম তোমার বৌমাও আমার মতো এখনকার দিনের আধুনিক মেয়ে, আর তার পোশাক, তার আচরন সবই এই সময়ে মতো।

মা তুমি পারবে না তোমার আধুনিক বৌমাকে আধুনিক ছেলের মতো ভালবাসাতে, পারবে না মেয়ে মতো আপন করে নিতে।


মা - হ্যাঁ পারবো, নিজের মেয়ে করে রাখবো।


বিক্রম - এতেই হবে। আর একটা কথা সবাই তোমাকে পুরানো চিন্তা ভাবনার মানুষ বলে সবাই তোমাকে হেও করে, মা তুমি পারবে না পুরানো ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক শাশুড়ি হতে।

মা- আমি পড়া শোনা জানিনা আমি কি পারবো এখনকার মতো হতে।

বিক্রম - কেনো পারবে না, তোমার পুরানো চিন্তা ধারা একটু পরিবর্তন করলেই সব হয়ে যাবে।


মা - তাই না হলে তোদের জন্য একটু কষ্ট করবো, তবে আমি কিন্তু TV সিরিয়ালের শাশুড়ির মতো হতে পারবো না।


বিক্রম - তোমাকে অতো আধুনিক হতে হবে না, শুধু সাধারণ হলেই হবে। আর প্রতিবেশীর কথায় কান দিয়ও না, তারা তো সব বিষয়ে সমালোচনা করে, ওটাই তো ওদের কাজ, ওদের কথা শুনে নিজের মন কেনো খারাপ করবে। তুমি আমাদের সাথে থাকবে আমরা তোমার সাথে আছি। 


ছেলের সাথে কথা বলে অঞ্জলি দেবীর নিজেকে আজ অনেক হালকা মনে হচ্ছে, ছেলে যখন সাথে আছে, এখনো আগের মতোই মায়ের খেয়াল রাখে তখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই । বৌমার সাথে না মিশে তার সমন্ধে খারাপ ধারনা করা ঠিক হবে না। তার থেকে ভালো হয় নিজেকে এই সমাজের মতো আধুনিক করে  আত্মীয়, প্রতিবেশী মুখে ঝামা খসে দিতে হবে।তার জন্য না হয় নিজেকে একটু পরিবর্তন করবো।


বিক্রম মাকে তো বুঝিয়ে এবার বৌকে বুঝাতে হবে। তাই বৌকে বলে, 

 আচ্ছা তিয়াসা এই বাড়িতে তোমার কেমন লাগছে, আর আমার মাকে কেমন মনে হচ্ছে।


তিয়াসা - বাড়িতে ভালোই লাগছে, তবে তোমার মা মনে হয় পুরানো দিনের মানুষ।


বিক্রম - তোমাকে তো বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমার মা একটু সেকেলে।


তিয়াসা - হ্যাঁ ওই ধরনের।


বিক্রম - তিয়াসা তুমি পারবে না আমার মায়ের সাথে মানিয়ে চলতে, আমার মাকে তোমার মা ভাবতে।


তিয়াসা - হ্যাঁ পারবো, তোমার মা মানে আমার মা।।


বিক্রম - শুধু মায়ের সাথে মানিয়ে চললে হবে না, তোমার মায়ের মতো আমার মাকেও একটু আধুনিক করে দিয়ো, তার জন্য না হয় একটু কষ্ট করবে।


তিয়াসা - তোমার মা কি চাইবে বৌমার কথা শুনতে।


বিক্রম - তুমি কেন বৌমা হতে যাবে, তার মেয়ে হয়ে তাকে বলবে তাহলে অবশ্যই শুনবে।


তিয়াসা - ঠিক আছে তোমার জন্য না হয় এটুকু করবো।


বিক্রম - তাহলে আজ থেকে আমি, তুমি, আর মা তিন জনে মিলে অঞ্জলি দেবীকে আধুনিক করার চেষ্টা করবো।


কয়েক দিন যেতেই তিয়াসা একটু একটু করে বাড়ি ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে পরিপাটি করে তোলে , এবং শাশুড়ি মাকেও আধুনিক করার জন্য আদব কায়দা শেখাতে থাকে।অঞ্জলি দেবী এতদিন যেসব পুরানো নিয়ম, মেনে এসেছিল সে সব যে ভুল তা তিয়াসা যুক্তি দিয়ে উদাহরন দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিভাবে এখনের সমাজে মিসতে হয় তাও শেখায়। শাশুড়ির সাথে মায়ের মতো ব্যবহার করে। অঞ্জলি দেবী ও তিয়াসার ব্যবহারের মুগ্ধ, এখন ছেলে থেকে বৌমা যেন বেশী আপন। কয়েক মাসে অঞ্জলি দেবীর বাড়ির সাথে সাথে অঞ্জলি দেবীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের অঞ্জলি দেবী আর এখনের অঞ্জলি দেরীর অনেক পরিবর্তন। এখন প্রতিবেশীরা বলে, দিদি সত্যি তোমার বৌমা একটা মেয়ে, কয়েক দিনে তোমার বাড়ির সাথে সাথে তোমাকে ও কত আধুনিক করে দিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম আধুনিক শিক্ষিত মেয়ে মানেই অহংকারী হবে। এই শাশুড়ি সাথে ঘর করতে পারবে না, কিন্তু এই মেয়ের সমন্ধে আমাদের ধারণা একেবারেই ভুল । তখন অঞ্জলি দেবী গর্ব করে বলেন, আমার বৌমা শুধু নিজের আধুনিক না সাথে শাশুড়ি কেও আধুনিক করে দিয়েছে।


অঞ্জলি দেবী বৌমা তিয়াসা কে বলে, বৌমা তুমি আসায় এই বাড়ি আগের থেকে কত সুন্দর হয়েছে, আসলে আমাকে আধুনিক আদব কায়দা শেখানোর কেউ ছিল না। যদি আমরা কোনো মেয়ে থাকতো তাহলে সে সুন্দর করে দেখিয়ে দিত, কিন্তু ছেলে তো সে এসবের জন্য সময় পায় না তবুও যতোটা হয় করেছে । এখন বুঝেছি শুধু জিনিস পত্র কিনলে হয় না তার ব্যবহার ও জানতে হয়।


তিয়াসা - আপনার ছেলে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে , তার সেকেলে মাকে আধুনিক শাশুড়ি করে দিতে হবে। আমি যতটা সাহায্য করা যায় করেছি, আপনিও অনেক চেষ্টা করেছেন, আপনার জন্যই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। 


বিক্রম - মা এবার কেউ কিছু বললে, বলে দেবে আধুনিক বৌমা শুধু সেকেলে শাশুড়ি সাথে মিলে মিশে থাকেই না সাথে শাশুড়ি কেও আধুনিক বানিয়ে দেয় ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy