STORYMIRROR

Sampa Maji

Abstract Children

3  

Sampa Maji

Abstract Children

শহর পেরিয়ে

শহর পেরিয়ে

4 mins
233

বদলেছে সময় বদলেছে পরিস্থিতি, এর প্রভাব সব থেকে বেশি পরেছে বাচ্চাদের ওপর । যারা স্কুলে পড়ে তাদের কাছে এখন প্রতিদিনই রবিবার এবং ছুটির দিন। এই এক বছরে বেশি বাড়িতে বন্দী থেকে ভুলেই গিয়েছে স্কুল ছুটির দিনের আনন্দ বিশেষ করে গরমের ছুটি এবং পুজোর ছুটি। এখন শুধু বাড়িতে থাকো সারাদিন একটি রকম , মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত মনে হয় কিন্তু উপায় নেই থাকতেই হবে।


শুধু ছোটরা নয় বড়রাও মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ওঠে। শিবু এখন ওয়াক ফ্রম হোম করছে তাই কাজের ফাঁকে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটায় । ছেলে রিভু আর মেয়ে রিক্তা ঘুরতে যেতে খুব ভালো বাসে , আগে দু – চার দিনের ছুটি পেলেই কাছে পিঠে ঘুরে আসতো। এখন সব দিনই ছুটি কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার উপায় নেই । এই গরমে ভেবেছিল আলিপুরদুয়ারে মেজ পিসির বাড়ি যাবে, রিভু ও রিক্তা এর ওখানে যায় নি। ওদের এই সফরে , চৈতিদি , শিবুদা, খোকন , নটু ও তাদের পরিবার যোগ দেবে । ওরা সবাই মিলে কাছাকাছি জায়গা গুলোও ঘুরে আসবে, ওদের ও ঘোরা হবে সাথে বাচ্চাদের ও একটু আনন্দ হবে । কিন্তু এখন আর সম্ভব নয় ভাবনা গুলো স্বপ্ন হয়ে রয়ে যেতে বসেছে । সব প্রোগ্রাম বাতিল করে দিয়েছে কেউ আসবে না বলেছে এবং ওদের ও যেতে না করে দিয়েছে।


ওরা ঘুরতে যেতে পারবে না শুনে বাচ্চাদের খুব মন খারাপ , বাচ্চাদের শুকনো শুকনো মুখ দেখে শিবুর ও মন খারাপ হয়ে যায়। কি ভাবে বাচ্চাদের খুশি করবে এই গরমে শহরের হাঁসফাঁস গরম থেকে একটু রেহাই পাবে। সব কিছু চিন্তা ভাবনা করে শেষ পর্যন্ত ঠিক করছে সমস্ত কিছু নিয়ম মেনেই বাচ্ছা গুলোকে একটু  বাইরের জগতে নিয়ে যাবে , নিজেদের গাড়ি আছে তাই তেমন অসুবিধা হবে না আর যেখানে যাওয়ার কথা ভাবছে যেখানে শহরের মতো এতো  খারাপ অবস্থা ও  নয় । খুব বেশি দূরেও নয় এখান থেকে তিন চার ঘন্টার রাস্তা শহর পেরিয়ে একেবারে  অন্য রকম পরিবেশ।


শিবুরা খুব সকাল সকাল বেড়িয়ে পরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সকাল ১০টার মধ্যে পৌঁছে যায় ঢাঙ্গিকুসুম গ্রামে।শিবুর কলেজের বন্ধু অরুণ মাহাতোর বাড়ি  , অনেক দিন বাদে বন্ধুকে পেয়ে গ্রাম্য বন্ধু ও খুব খুশি। শিবু আসার আগে খোঁজ নিয়েছিল এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি কারও বাড়িতে আসলে কৈউ আপত্তি করবে কিনা । এখানে তো ঘর বাড়ি খুব কম তাছাড়া এখানকার মানুষ খুব সরল মনের এবং খুব বিশ্বাসী , অরুণ এখানকার স্কুল মাস্টার এরা অরণকে ভগবানের মতো মানে তাই ওদের এই বিশ্বাস আছে যে মাস্টার এমন কোনো কাজ করবে না যাতে ওদের কোনো ক্ষতি হয়। তাই কোনো অসুবিধা নেই বরং ওদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সবাই এসেছিল , তবে অরুনই নিষেধ করে দিয়েছে ওরা ৫ দিন বাড়িতে থাকবে তার পর বাইরে বেরবে , যানে কিছু হবে না তবুও সচেতন ব্যক্তি হয়ে এটা করা উচিত। শিবু ও অরুণের এই সচেতন মন ভাব দেখে খুশি হয়েছে। ওদের কে  একটা ঘর ছেড়ে দিয়েছে থাকার জন্য রান্না বান্না কিছুই করতে হবে না সব অরুণ ব্যবস্থা করে দেবে । এখানেও ঘর বন্দী থাকতে হবে ভেবে বাচ্চারা একটু মন খারাপ করে ছিল কিন্তু তার পর পাহাড়, নদী , ঝর্ণা, অরণ্য এসব ঘুরতে পারবে ভেবে খুব খুশি।


গাছপালায় ঘেরা গ্রামের পরিবেশে রিভু আর রিক্তার খুব ভালো লাগে। এখন গ্রাম আর আগের মতো গ্রাম নেই এখন এখানেও ফোন হয়েছে টিভি এসেছে ঘরে ঘরে, রাস্তা ঘাট পাকার হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তা ঘাট খুব সুন্দর । পাঁচ দিন পার হতৈ  ওরা বেড়িয়ে পরে প্রকৃতি সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। এই প্রথম জংলী নদী আর ঝর্না দেখে ভাই বোন কি আনন্দ, ওদের মন খারাপ টা আজ আনন্দে পরিনত হয়েছে।জল ঘন্টার পর ঘণ্টা থাকতে ইচ্ছে করে, শিবু এখানে এসে যেন ছোট বেলার দিন ফিরে পেয়েছে  ছোট বেলায় গ্রীষ্মের ছুটিতে ওরা এই ভাবে সবাই খুব হাসি মজা করে সময় কাটাতো ।

সমবয়সের মাসতুতো, পিসতুতো ভাই বোনদের পেয়ে আনন্দ চার গুণ বেড়ে যেত ,  এখন তারা কেউ নেই কিন্তু সেই গ্রাম্য প্রকৃতির কোলে ছেলে মেয়ের মধ্যে যেন সেই অনুভূতি খুঁজে পায়। শুধু শিবু না নন্দিতাও খুব খুশি হয়েছে , বিয়ে পর শিবুর সাথে অনেক জায়গায় গিয়েছে তবে এখানকার প্রকৃতি এবং মানুষ জন এর আগে দেখেনি। এখানে না আসলে জানতেই পারত না বন্য পশুর সাথে মানুষের এতো মধুর সম্পর্ক । জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে মানুষদের আর্থিক অবস্থা হয়তো তেমন বড় নয় কিন্তু মন অনেক বড়। অচেনা মানুষকে যে এতো সুন্দর ভাবে গ্রহণ করা যায় এদের না দেখলে বোঝা যায় না। কোথা দিয়ে যে ১৫ দিন কেটে যায় নন্দিতা বুঝতেই পারে না । আসার সময় সব থেকে সমস্যা নন্দিতার হয়েছিল বার বার শিবুকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল যেখানে যাচ্ছি সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো তো, কারেন্ট সব সময় থাকে তো ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে আসার পর এতো সুন্দর প্রকৃতি দেখে ফোন ঘাঁটার কথা ভুলেই গিয়েছে , বাচ্চারাও একই । তবে একটা জিনিষ দেখতে পেল না , যেটা পরের বার অবশ্যই দেখাবে বলেছে ওদের লোক সংস্কৃতি। যেটা এই করোনা পরিস্থিতির কারনে এই সব অনুষ্ঠান বন্ধ তবে দু একটা গান এবং নাচ দেখেছে । এই ভাবে ওদের ফেরার সময় হয়ে আসে , ওরা চলে যাচ্ছে বলে সবাইয়ের খুব মন খারাপ , এদিকে রিভু  রিক্তারও খুব মন খারাপ কয়েকদিনেই বাবুলাল আর মনিরা ওদের ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল ।যাওয়ার সময় রিভু মনিরা কে ওর রং পেন্সিলের বাক্স দিয়ে এবং বলেছে পরের বারে এসে দেখবে কি ছবি এঁকেছে ,আর বাবুলাল কে গান শোনার স্পিকার দিয়েছে যাতে গান শুনে বাবুলাল গান প্রাকটিস করতে পারে । বাবুলাল ও ওদের দুজনকে দুটো মাটির মূর্তি দিয়েছে । এই পরিস্থিতিতেও যে গরমের ছুটি , যদিও এখন সব দিন ছুটি , তবুও কাজ থেকে বিরতি নেয় এতো সুন্দর ভাবে কাটবে ভেবে নি এর জন্য অরুণকে ধন্যবাদ সেই সময় ও না ডাকলে এখানে আসার কথা হয়তে মনেও আসতো না । তবে পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছি বলেই না এখানে আসতে পেরেছি , এই জন্যই বলে ভগবান যা করে পৃথিবীর জন্য।

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract