Sampa Maji

Comedy Romance Others

3  

Sampa Maji

Comedy Romance Others

জুড়ি

জুড়ি

5 mins
230



বিকাশ প্রায় ৫ বছর ধরে বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে , কিন্ত এখনও পর্যন্ত মেয়ে পছন্দ করতে পারলো না। যে দিনই বাড়ি আসে তার পরের দিন থেকেই মেয়ে দেখা শুরু হয়ে যায়, যতদিন থাকে ততদিন মেয়ে দেখতে যায় , ঘটক মেয়ের খোঁজ দিলেই, বিকাশ যদি কোনো বন্ধুকে না পায় তবে ঘটক কে নিয়েই মেয়ে দেখতে চলে যায়। বাড়ির লোক প্রথম প্রথম যেতো কিন্ত বিকাশের কোনো মেয়ে কে পছন্দ হয়নি দেখে, বাড়ির লোক বলে দিয়েছে প্রথমে বিকাশ দেখে আসবে যদি পছন্দ হয় তার পর বাড়ির লোক যাবে। একটাও মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না দেখে, বিকাশের মা বলে, 

বাবু তোর এই রকম বেশ দেখে মনে হয় মেয়ের বাড়ির লোক তোকে পছন্দ করছে না। আসলে বিকাশের চুল গুলো বড় বড় ঘাড় পর্যন্ত ছাটা, ডান হাতে একটা বালা, আট টি আঙুলে আংটি এবং গলায় একটা মোটা চেন, দেখতে ঠিক লোফারের মতো লাগে , Attitude ও লোফারের মতন। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০ টা মেয়েকে দেখতে গিয়েছে, কয়েকটা বাদে সব মেয়ে কে রিজেক্ট করেছে, যে কটা ওর ভালো লেগেছিল তাদের পরিবারের আবার ওকে পছন্দ হয়নি। 

শেষে মায়ের কথা শুনে বিকাশ নিজেকে একে বারে ভদ্র সাজিয়ে নিয়েছে। সাধারন পোষাক পরে সাধারন হয়ে গেছে। এতে ও সমস্যা মেয়েরা আবার এই রকম হা‌দু রাম কাকুকে পছন্দ করছে না।তাই ঠিক করেছে এবার থেকে বন্ধুকে না বাড়ির লোককে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে ,যদি তাদের ভালো লাগে তাহলে হ্যাঁ করে দেবে। 


মৌসুমী উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকে বিয়ের জন্য দেখাশোনা চালু করে দিয়েছে। মৌসুমী দেখতে খুব সুন্দর নয়, গায়ের রং মাঝারি দেখতেও ওই রকম, তার সাথে সাজগোজ পোষাক সবই Old মডেলের। ছেলে বাড়ি থেকে দেখতে আসে আর খেয়ে দেয়ে পরে খবর দেবো বলে চলে যায়, আর খবর পাঠায় না। হয়তো ওর এই Old Modal কারো পছন্দ হয় না । এত দিনে কলেজে পাস করে ফলেছে তবুও নিজেকে আধুনিক করতে পারলো না। যেসব ছেলে ওকে দেখতে আসে তার ওকে পছন্দ না করে ওর বোনকে পছন্দ করে চলে যায়। কিন্ত দিদির বিয়ে না দিয়ে বোনের বিয়ে দেবে না। তার জন্য মা বা আত্মীয় রা ওকে অনেক কটু কথা শোনায়। 

মা বলে ,এখন কার মেয়ে হয়ে পার্লারে যাবে না , সাজ গোজের জিনিস কিনবে না, ,সব সময় ঠাকুমা হয়ে থাকবে, তোর বোনকে দেখে শেখ, দেখতে খুব সুন্দর না হয়েও নিজেকে কেমন সুন্দর করে রেখেছে। 

আসলে মৌসুমী এই সব মেকি সাজ ভালো লাগে না, ও যেমন তেমনই ওর ভালো লাগে। কিন্তু বাড়ির এই পরিস্থিতি তে নিজেকে খুব অসহায় লাগে, তাই বাধ্য হয়ে নিজে‌কে সুন্দর করার জন্য পার্লারে যায়, নানান কস্মেটিক জিনিস কেনে, এতে ওর বোন সম্পূর্ণ সাহায্য করেছে। যে কোনো দিন ব্যবহার করে নি, সে কি করে জানবে কখন কি লাগে। এই ভাবে শরীরের পরিচর্যা করে তিন মাসে আগের থেকে অনেক দেখতে সুন্দর লাগছে, আগের থেকে অনেক আধুনিক হয়েছে।

অনেক দিন পর ওর মামা ওর জন্য একটা সমন্ধ এনেছে, ছেলেটার সোনার কাজ করে , মুম্বাইয়ে থাকে। আজকের দেখা শোনা ব্যাপার সবটাই মামার বাড়ি থেকেই হবে ।যথা সময়ে ছেলে এবং ছেলে বাড়ির লোক দেখতে আসে, মৌসুমী কে দেখে বিকাশের এবং বিকাশের পরিবারে পছন্দ হয়ে যায়। বিয়ের পাকা কথা বলার জন্য মেয়ের বাড়ির লোক কে আমন্ত্রণ জানায়। ছেলে মেয়ে অনুমতি নিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়। দেখা শোনা যেহেতু মামাবাড়ি থেকে হয়ে ছিল, তাই বিয়ের আগে মেয়ের বাড়ি দেখার জন্য ছেলের বাড়িতে বলে। ওদের ঠিকানা মতো বিকাশ আর ওর মা আসে, মৌসুমীদের বাড়ি আসতে গিয়ে বড় রাস্তা থেকে যখন সরু রাস্তায় ঢোকে তখন বিকাশ ওর মাকে বলে, জানো মা আমার মনে হয় এই দিকে আমি মেয়ে দেখতে গিয়ে ছিলাম। 

মা- তুই তো আর কম মেয়ে দেখেছিস নি , তাই যেখানেই যাবি সেখানের একটা একটা মেয়ের বাড়ি পাবি। 

বিকাশ- সত্যি বলছি, রাস্তাটা খুব চেনা চেনা লাগছে। 

মা- ঠিক আছে চল, যেখানে এসেছি সেখানে যাই।

মৌসুমীর বাবা বাড়ি যাওয়ার আগের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল তাই তিনিই ওদের কে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। 

বাড়িতে ঢোকা মাত্রই বিকাশের মনে হলো, খুব চেনা লাগছে, মনে হয় এর আগে এই বাড়িতে মেয়ে দেখতে এসেছিল, কিন্তু সেই কথা সবাই কে বলতে পারছে না। মৌসুমীর সাথে কথা বলার জন্য বিকাশ কে পাশের রুমে নিয়ে গেলে, বিকাশ ঠিক করে এই ব্যাপারে মৌসুমীর কাছ থেকে জানতে হবে।

বিকাশ - একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। 

মৌসুমী - আমার ব্যাপারে আগেই সব বলে দিয়েছি, আবার কি জানার আছে। 

বিকাশ - আচ্ছা তোমার কোনো দিদি আছে, নিজের কিংবা মাসির মেয়ে। 

মৌসুমী - না আমার দিদি নেই, একটাই বোন আছে।আর মায়ের ও কোনো বোন নেই। কেন বলতো এই প্রশ্ন করছো। 

বিকাশ - আমার যেন মনে হচ্ছে আমি এই বাড়িতে আগেও এসেছিলাম ।

মৌসুমী - কি জন্য এসেছিলে মনে আছে। 

বিকাশ - আড়াই-তিন বছর আগে মেয়ে দেখতে এসেছিলাম। 

মৌসুমী - মেয়েটাকে দেখতে কেমন ছিল। 

বিকাশ - ঠিক মনে পরছে না, তবে আমার একবারে পছন্দ হয় নি। 

মৌসুমী - একে বারে old মডেলের মেয়ে। 

বিকাশ- হ্যাঁ ধরো সেই রকমই

হবে। মেয়েটার মুখটা মনে পরছে না।  

মৌসুমী -আমি একটা দুঃখের কথা বলবো। 

বিকাশ- কি কথা। 

মৌসুমী - তুমি যে মেয়েটার কথা বলছো ,দুর্ভাগ্য বসত সেই মেয়ে আমিই ছিলাম, আর আমাকেই তুমি দেখতে এসেছিলে। 

বিকাশ- একে বারে নিজের চোখেই বিশ্বাস হচ্ছে না, সেই মেয়ে এই মেয়ে। 

মৌসুমী - অবিশ্বাসের কিছুই নেই, সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তন ,আমিও পরিবর্তন হয়েছি। 

বিকাশ- যে মেয়েকে আমিই রিজেক্ট করে ছিলাম তাকেই আবার বিয়ে করছি, ভাবা যায় ।একেই বলে ভগবানের লিখন। 

মৌসুমী - আগে জানতে না তাই হ্যাঁ করেছিলে, এখন জেনে গেছো , না করে দিতে পারো। আর আমি কিন্তু সেই আগের old মডেলই আছি, এখন যেটা দেখছো ওটা আমার বাইরের রূপ। 

বিকাশ- প্রথম বার রিজেক্ট করেছিলাম তাই দ্বিতীয় বার আসতে হয়েছে, আবার যদি রিজেক্ট করি, তাহলে হয়তো তৃতীয় বার আবার দেখা হবে। 

ভগবান যার জন্য যাকে ঠিক করেছে তাকে তুমি যত বারই না করো না কেন শেষে ঠিক তার সাথেই মিল করে দেবে।তাই তো এতো মেয়ে দেখেছি অথচ কাউকে তেমন পছন্দ হয় নি , তোমার সাথে দেখা করানোর জন্য আমাকে এখানে আবার পাঠিয়েছে আর তোমার বিয়ে হয়নি। 

মৌসুমী - হয়তো এটাই ভগবানের খেলা। এই ব্যাপারটা কি বাড়ির সবাই কে বলবো। 

বিকাশ- বললে সবাই হাসা হাসি করবে, তার থেকে এই বিষয় টা চাপা থাক। ভগবান যখন আমাদের জুড়ি ওপর থেকে তৈরি করে পাঠিয়েছে, তখন সবার সামনে ঢাক পিটিয়ে লাভ নেই ,এটা আমাদের মধ্যে থাক। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy