Sampa Maji

Abstract Romance Classics

4  

Sampa Maji

Abstract Romance Classics

বন্ধু

বন্ধু

7 mins
381



সোনা ছোট থেকেই মামা বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছে। সোনা নামের মতো মেয়েটাও খুব সোনা মেয়ে, তাই দাদু দিদা, মামা সবার খুব প্রিয়। সোনা যখন দেয় বছরের তখন ওর ছোট বোন হয় দুটো বাচ্চা কে কিভাবে দেখবে তাই সোনাকে ওর মা মামার বাড়িতে রেখে যায়, সেই থেকেই। দাদু নার্সারী স্কুল পরে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেয়। এখানে সবাই মাসি আর সবাই মামা। সোনার মামা বাড়ির পাশের পাড়ায় মৌপিয়াদের বাড়ি। নার্সারী স্কুল থেকে ওরা একসাথে স্কুলে পড়ে, সেই থেকে ওদের বন্ধুত্ব। একসাথে স্কুলে যাওয়া, টিউশনি পড়তে যাওয়া, ছুটির দিনে সারাদিন খেলা, আর দুপুর বেলায় দিদা ঘুমিয়ে পড়লে চুপি চুপি আচার চুরি করে আম বাগানে বসে গল্প করা কত ইত্যাদি ইত্যাদি ছোট ছোট আনন্দ খুশির সাথি ওরা দুজনে। তারপর প্রাইমারি স্কুল পেরিয়ে সোনাখালি গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হয়, স্কুলে ও দুজনে একসাথে। স্কুল বাড়ি থেকে একটু দূরে সাইকেল যেতে হয়, দুজনে একসাথে স্কুল যাওয়া আসা । যদি একজন না যায় আর একজন ও যাবে না। দুজনের যেমন খুব মিল আবার সামান্য কিছুতেই কথা বন্ধ , একদিন পরে আবার মিল। দুজনের বন্ধুত্ব দেখে সবাই বলত মানিক জোর, গলায় গলায় এতো ভাব যেন এক গলায় জল ঢাললে অন্য গলায় যায়। এই ভাবে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। স্কুলে নতুন বন্ধু হলেও সোনা আর মৌপিয়ার বন্ধুত্ব সেই আগের মতো। কিন্তু ক্লাস X উঠার পর থেকে মৌপিয়ার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। একদিন স্কুল ছুটির পর বলে, সোনা তুই এগিয়ে যা আমি পরে আসছি। সোনার খুব খারাপ লাগল, এতদিন স্কুলে আসছে সবদিন একসাথে বাড়ি যায় আজ এমনকি হল যে ওকে বাড়ি চলে যেতে বলে নিজে পরে যাবে। বাড়িতে মা আসবে তাই কথা না বারিয়ে বাড়ি চলে যায়। এই ভাবে প্রায়ই দিন সোনাকে বাড়ি যেতে বলে মৌপিয়া পরে যায়, তবুও সোনা কিছু জিজ্ঞাসা করে নি। একদিন স্কুলের এক বান্ধবী জানায় মৌপিয়া স্কুল ছুটির পরে একটা ছেলের সাথে কথা বলে। কিন্তু সোনা এতো ভালো বন্ধু অথচ ওকে কিছু বলে নি । সেই ছোট্ট থেকে বন্ধুত্ব সোনার সব কথা মৌপিয়াকে বলা চাই অথচ মৌপিয়া এতো বড় একটা কথা সোনার কাছে চেপে গেল। এই ভেবে সোনার মনটা খুব খারাপ। সারাদিন বাড়িতে মন মরা হয়ে বসে আছে দেখে ওর দিদা বলল, কয়েক দিন দেখছি মৌ তোর কাছে আসছে না আর তুইও ওদের বাড়ি যাচ্ছিস না, তোদের কি ঝগড়া হয়েছে। দুজনের প্রায়ই ঝগড়া হয় সেই জন্য সে বলেছে, কিন্তু এখন ব্যপারটা সেটা নয় ওদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি, কিছু দিন মৌপিয়াই ওকে এড়িয়ে চলছে, বলতেও পারছে না আর মানতেও পারছে না।

এইভাবে প্রায় দু মাস যায়, স্কুলে ও খুব কম কথা বলে। তার পর একদিন হঠাৎ মৌপিয়া ওর কাছে এসে খুব জরুরী কথা আছে বলে গল্প করার জন্য মাঠের ধারে নিয়ে যায়।প্রথমে সোনা কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়, কিন্তু সোনা ওর অভিমান হয়েছে মৌপিয়ার কথা শুনবে না ঠিক করেছে, এতদিন যখন বলেনি তাহলে আর বলতে হবে না, কিন্তু মৌপিয়া যখন ক্ষমা চেয়েছে তখন কিছু করার নেই বন্ধুকে মাপ করে সব কথা শুনতেই হবে। মৌপিয়া ছেলেটার ব্যপারে সব কথা সোনাকে বলে । মৌপিয়া আর একটা সত্য কথা জানায়, কিছু দিনের মধ্যে ওর পালিয়ে বিয়ে করবে। বাড়ির লোক ওদের এই সম্পর্ক কিছুতেই মানবে না তাই পালিয়ে যেতে হবে। সোনা ওকে অনেক বোঝায়, সামনে মাধ্যমিক এই সময় এই কাজ না করাই ভালো, মাধ্যমিক দিয়ে বিয়ে করবি তাছাড়া মা বাবা কে না জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করাটা ঠিক হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা মৌপিয়া যেটা ভেবেছে সেটাই করবে তাই সোনা আর কিছু বলেনি। মৌপিয়া বলে, পালিয়ে যাওয়ার আগে তোকে জানাবে কোথায় যাব, কিন্তু এই ব্যাপারে বাড়িতে বলবি না।

সোনা এসব কথা শোনার পর থেকে কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছে না। এখন বাড়িতে কি বলবে মৌপিয়ার কথা, তাহলে হয়তো ওকে আটকাবে ওর বাড়ির লোক , কিন্তু তাতে তো বন্ধুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এই দু এর দ্বন্দ্ব মন ভেতর তোল পার হয়ে যায়।

 পুজোর ছুটি তাই স্কুলের পাশাপাশি টিউশনি ও ছুটি, দেখা হয় না আর দেখা করতে বাড়িতে যায় না বা মৌও আসে না । একদিন হঠাৎ এক বোনের হাতে মৌপিয়া একটা বই পাঠিয়ে দেয় এবং ভেতরে একটা ছোট চিঠি। তাতে লেখা " কাল বিকেলে ৪টায় সোনাখালি স্কুল মাঠে আসবি খুব জরুরী কথা আছে"। লেখাটা দেখে বুঝতে পেরেছে, মনে হয় পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছে। সোনা যখন এসব কথা ভাবছে তখন ওর মা বাবা বোন খুব হইহুলোর করতে থাকে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য। ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আনন্দে মৌপিয়া ব্যপারটা ভূলে যায়, তবে ঠিক করেছে পরের দিন দেখা করতে যাবে সোনা খালি মৌপিয়া কি বলতে চায় শুনবে। কিন্তু পরের দিন বাদ সাদল ওর মা, এখন পুজোর ছুটি আছে, কিছু দিন পর পড়ার চাপ বেড়ে যাবে তখন যেতে পারবে না তাই সোনাকে আজকেই বাড়ি নিয়ে যাবে, সোনার যাওয়া ইচ্ছে নেই, তবুও জোর করে নিয়ে যাবে। এদিকে মৌপিয়ার সাথে দেখা করা হল না, সোনা কি ভাববে কে জানে, যাওয়া আগে যে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে আসবে তাও সম্ভব না, তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে গেল।

৮দিন পরে মামার বাড়ি ফিরে এসে জানতে পারে মৌপিয়া কোনো এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে, বাড়ির কেউ জানে না। এই ভাবে মৌপিয়া যে সত্যিই পালিয়ে যাবে সোনা ভাবতে পারেনি। একদিকে প্রিয় বান্ধবী পালিয়ে গেছে বলে মন খারাপ, অন্য দিকে মৌপিয়ার বাড়ি লোক বলে মৌপিয়ার পালিয়ে যাওয়ার পেছনে সোনার হাত আছে, তাই মৌপিয়া যেদিন পালিয়ে গেছে সেই দিন সোনা ও বাড়ি চলে গিয়েছে, পাছে সোনাকে সবাই জিজ্ঞাসা করে তাই। সোনা আর মৌপিয়া ছোট থেকে ওদের বন্ধুত্ব সব বিষয়ে কথা হয় এই ব্যাপারে ও সোনা সব জানতো, ইত্যাদি ইত্যাদি। সোনা যা জানে সব কিছু জানায় কিন্তু তাতেই আরো অপরাধ, সোনা সব কিছু জেনেও আগে কেনো বলেনি তাহলে ওকে আটকানো যেতো, মৌপিয়ার বাড়ির লোক ওকে খুব উল্টো পাল্টা কথা বলে। সোনা খুব ভেঙে পরে খুব কান্না কাটি করে, সোনার এমন অবস্থা দেখে ওর মা ওকে বাড়ি নিয়ে চলে আসে, সোনার ও আর ওখানে থাকতে ইচ্ছে করে না। টেষ্ট পরীক্ষার সময় মামার বাড়িতে ছিল তবে স্কুলের ছাড়া কোথাও যায়নি আর কারো সাথে কথাও বলেনি।


 প্রায় ১২ বছর কেটে গেছে, এই কয়েক বছরে আর মামা বাড়ি যায় নি, শুধু দাদুর মৃত্যুর সময় শেষ বার গিয়ে ছিল, ও যেতে চায় না বলে ওকে কেউ জোর ও করে না। এই বছর SSC তে স্কুলের চাকরি পেয়েছে । সোনার যেখানে স্কুল সেই গ্রামের নামটা ওর খুব চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। এখন কাউকে প্রথম দেখলেও মনে হয় খুব চেনা আগে কোথাও যেন দেখেছি, হয়তো সেই রকমই নামটা শোনা শোনা মনে হচ্ছে। সে যাই হোক স্কুলে জয়েন্ট করতে হবে, সে চেনা হোক আর অচেনা। স্কুলের প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে ক্লাস V এর একটা মেয়ে কে দেখে ওর সোনা খুব চেনা চেনা মনে হল। যেন মেয়েটার সাথে কার ও মুখের মিল মনে হচ্ছে কিন্তু সেটা কে কিছুতেই মেলাতে পারছেনা । সারা টিফিনের সময় ধরে মনে করার চেষ্টা করে, ও যেটা আন্দাজ করছে সেটা ঠিক কিনা তার জন্য ছোট মেয়ে টার কাছে গিয়ে ওর পরিচয় জানতে চাইল। মেয়ে টা বাবা মায়ের নাম বলতেই সোনার খুব আনন্দ হল, সোনা যেটা ভেবে ছিল হ্যাঁ সেটাই। সোনার আজ খুব খুব আনন্দ হচ্ছে, এত আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। মেয়েটা বুঝতে পারছে না এমন কি সে বলেছে, যে তার জন্য নতুন ম্যাডাম এতো খুশি। মেয়েটার নাম তিয়াসা, সোনা মেয়েটাকে বলল, তিয়াসা আমাকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাবে। তিয়াসা আনন্দে আত্মহারা নতুন মিস তার সাথে তাদের বাড়ি যাবে। স্কুল ছুটির পর তিয়াসা আনন্দে নাচতে নাচতে ম্যাডামকে বাড়ি নিয়ে এল। রাস্তা থেকেই মাকে হাঁক ডাক শুরু করল, মা দেখবে এস কে আমাদের বাড়ি এসেছে, আমাদের স্কুলের নতুন মিস।

মৌপিয়া তিয়াসার সাথে সোনাকে দেখে খুব বিষ্মিত হল, স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেনি আবার সোনার সাথে দেখা হবে। ওর জন্য সোনাকে কত কথা শুনতে হয়েছে,সোনার মামা বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই সোনা আবার ওর সামনে এসে দাড়াবে। এই ভাবে দাড়িয়ে আছে দেখে সোনা বলল, কিরে চিনতে পারছিস না। মৌপিয়া সোনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে, আর বলে," আমার জন্য তোকে কতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে, আমি সব শুনেছি, আমার খুব খারাপ লেগেছিল, আমার ভুলের জন্য তুই শাস্তি পেয়েছিস, তাই তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তোর দিদাকে তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিন্তু সে কিছু বলল না"।।

" আমার ও খুব রাগ হয়েছিল, তুই এই ভাবে চলে যাবি ভাবিনি, তোর সাথে যাওয়ার দিন ও কথা বলতে পারলাম না, তার জন্য মায়ের ওপর খুব রাগ হয়েছিল, কিন্তু পরে ভেবেছি দেখা হয়নি ভালোই হয়েছে, তাহলে তোর বাড়ির লোক আমাকে আরও কথা শোনাতো, ভাগ্যিস সেই দিন মামা বাড়িতে ছিলাম না, তাই কিছুটা কম , তবুও ও মামা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। সেই দিনই ঠিক করেছিলাম তোর ব্যাপারে আর কোনো দিন জানতে চাইবো না আর তোর সাথে কোনো দিন দেখাও করবো না। কিন্তু আজ স্কুলে তোর মেয়ে কে দেখে তোর ছোট বেলার মুখের মিল খুঁজে পেলাম, মনে হল তোর সাথে একবার দেখা করি, এখন তুই কেমন আছিস খুব জানতে ইচ্ছে হল। আমি জীবনে তোর পরের ও অনেক বন্ধু পেয়েছি, কিন্তু ছোট বেলার স্কুল জীবনের বন্ধুর বন্ধুত্বটাই আলাদা, তার সাথে কোনো কিছুর তুলনা করা যায় না, আর ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না "

" তুই আমাকে এই ভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিস, আমার খোঁজ নিতে এসেছিস, সত্যই তোর জবাব হয় না"

সোনা ছোট একটা প্যাকেট মৌপিয়ার হাতে নিয়ে বলল,

" এই নে আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা গিফট, আর আজ থেকে আমারা সব কিছু ভুলে পুরনো বন্ধুত্ব কে আবার নতুন করে শুরু করি এই বন্ধু মাসে। "

তিয়াসা কিছুই বুঝতে পারছে না, শুধু মা ওর নতুন মিসের দিকে তাকিয়ে আছে।

সেই সময় ফোনে বেজে ওঠে - - " পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ওসে চোখের দেখা প্রানের কথা সেকি ভোলা যায় ...

আয় আরেকটি বার আয় রে সখা প্রানের মাঝে আয় মোরা সুখের দুঃখের কথা কবো প্রান জুড়াবে তাই"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract