অদৃশ্য হীরা
অদৃশ্য হীরা
কলকাতার প্রখ্যাত গোয়েন্দা দেবাশিষ সেন তার অফিসে বসে ছিলেন। হঠাৎ দরজায় করাঘাত শুনে তিনি চমকে উঠলেন। দরজা খুলে দেখলেন, সামনে দাঁড়িয়ে আছেন শহরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী অনিল চৌধুরী। তাঁর মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট।
অনিল চৌধুরী ঘরে ঢুকে বললেন, "দেবাশিষবাবু, আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে গেছে। আপনাকে এই রহস্য সমাধান করতেই হবে।"
দেবাশিষ জিজ্ঞাসা করলেন, "কী চুরি হয়েছে, চৌধুরী মশাই?"
অনিল উত্তর দিলেন, "আমার পারিবারিক হীরা। এটা আমার পরিবারে প্রায় দুশো বছর ধরে আছে। কাল রাতে আমি এটা আমার বেডরুমের সেফে রেখেছিলাম। আজ সকালে দেখি সেফ খোলা, কিন্তু হীরা নেই।"
দেবাশিষ জানতে চাইলেন, "আপনার বাড়িতে কে কে থাকেন?"
অনিল বললেন, "আমি, আমার স্ত্রী মালা, আমার ছেলে অরুণ, মেয়ে অঞ্জলি, আর আমাদের পুরনো চাকর রমেশ।"
দেবাশিষ তখন অনিলের বাড়ি পরিদর্শন করতে গেলেন। তিনি সবার সাথে কথা বললেন, সেফ পরীক্ষা করলেন, বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখলেন। কিন্তু কোনো সন্দেহজনক প্রমাণ পেলেন না।
পরের দিন সকালে দেবাশিষ আবার অনিলের বাড়িতে গেলেন। তিনি সবাইকে ড্রইংরুমে ডেকে আনলেন।
দেবাশিষ বললেন, "আমি জানি হীরাটা কোথায় আছে।" সবাই অবাক হয়ে তাকাল। তিনি অরুণের দিকে তাকিয়ে বললেন, "অরুণবাবু, আপনি কি হীরাটা ফেরত দিতে চান?"
অরুণ চমকে উঠল। সে কাঁপা গলায় বলল, "হ্যাঁ, আমিই নিয়েছি। আমার একটা বড় ঋণ শোধ করার ছিল। আমি ভেবেছিলাম হীরাটা বিক্রি করে টাকা শোধ করব, তারপর কোনোভাবে ফিরিয়ে আনব।"
সবাই হতবাক। অনিল ক্রোধে ফেটে পড়লেন। কিন্তু মালা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
দেবাশিষ বললেন, "আমি লক্ষ্য করেছিলাম অরুণ খুব অস্বস্তি বোধ করছিল। তার ঘরে খোঁজ করে আমি হীরাটা পেয়ে গেছি।" তিনি পকেট থেকে হীরাটা বের করলেন।
অনিল শান্ত হয়ে বললেন, "অরুণ, তুমি আমাকে বলতে পারতে। আমরা পরিবার, সমস্যা একসাথে সমাধান করতাম।"
সেদিন থেকে অনিলের পরিবারে একটা নতুন সম্পর্কের সূচনা হল। তারা বুঝল, সত্যিকারের সম্পদ হল পারিবারিক বন্ধন, কোনো হীরা নয়।
