Paula Bhowmik

Inspirational Others

4  

Paula Bhowmik

Inspirational Others

পুনর্ভবা পর্ব:- ১৭

পুনর্ভবা পর্ব:- ১৭

3 mins
340


স্টীমার থেকে নেমেই অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের সম্মুখীন হওয়া গেল। রাস্তার ধারের মাঠে কতগুলো তাঁবু খাটানো রয়েছে। দুদিন আগেই যাবার পথে দেখেছে মাঠটা ছিল শুনশান। আশ্চর্য !

এক ই সাথে খুকুও খুব অবাক হয়েছে। খুশিতে বলে ওঠে,

_______ও বাবা! দেখো, মরুভূমি নেই, তবু ক্যামেল! মানে উট তাই না? কত্ত বড়ো!


______ হুঁ, তবে? তুই কি ভেবেছিল উঁট দেখতে ছাগলের মতো? অবশ্য ভাবলেও দোষ নেই। বইয়ের

ছবিতেই তো দেখেছিস!


_____কিন্তু বাবা, ঐ যে একটা ধুতি পরা ছেলে উঁটের পিঠে করে দিকে যাচ্ছে, ও উঁটের পিঠে উঠলো কি করে ?


_______হা হা হা হা ভালোই বলেছিস। না না মই বেয়ে ওঠেনি। এগুলো তো পোষা প্রাণী। মানুষের ইশারা ও ভাষা বোঝে। উঁটের মালিক উঠতে বললে ওঠে আর বসতে বললে বসে। উঁটটা বসেছিল তাই ছেলেটা উঠতে পেরেছে। তারপর ইশারা বুঝে হাঁটতে লেগেছে।


_______উঁট কি চেনে কে ওর মালিক?


________বা রে! লালমোহনকে যেমন গরু গুলোকে খেতে দেয়, যত্ন করে, তাই দেখিস না গরু গুলোও লালমোহনের কথা শোনে। গরু আমাদের হলেও লালমোনই ওদের কাছে আসল মালিক। সেরকমই

উঁট এদেরকে কাছ থেকে দেখেছে, পশু হলেও ওরা ভালোবাসা বোঝে। ওরা অবলা বটে, মানুষের কথ্যভাষা ওরা জানেনা কিন্তু কে ওদের ভালোবাসে তা খুব বোঝে তাই অনুমান করে নিয়ে ইশারা অনুযায়ী চলে।


ঠাকুরগাঁও যাবার বাস রেডি হয়েই দাড়িয়ে ছিলো।

যদিও ছাড়তে দেরি আছে, তবু ওরা বাসে উঠে, সিটে বসেই খেয়ে নিলো লুচি তরকারি গুলো। সাথে দিনাজপুর থেকে কেনা কমলালেবু রয়েছে। পরে ইচ্ছে হলে খাওয়া যাবে।

জিপসি মেয়েরা সবাই ঘাঘরা পড়ে কাজ কর্ম করছে। কেউ মশলা বাটছে, কেউ হয়তো তরকারি কুটছে। কেউ আবার পাঁপড় শুকোতে দিয়ে পাহারা দিচ্ছে।

ছোটো মেয়েদের পায়ে মল পরা। হাঁটলেই বেশ ঝম ঝম করে শব্দ হচ্ছে। বড়রা তো প্রচন্ড ভারী ভারী অনেক রূপোর গয়না শরীরে পরেই আছে। ঐ নিয়েই বেশ স্বচ্ছন্দে কাজ করে চলেছে।


খুকু লক্ষ্য করে ওরই বয়েসী একটা ফুটফুটে মেয়ে কলাইকরা সাদা একটা বাটিতে কিছুটা মুড়ি নিয়ে ঘুরঘুর করছে আর খাচ্ছে। খাওয়া মানে ঐ দু-চারটে মুড়ি মুখে দেওয়া মাঝে মধ্যে। আসলে ও বোধহয় খুকুর মতোই খাওয়ার চেয়ে সবকিছু দেখতে বেশী ভালোবাসে। নতুন নতুন লোকজন, বাস, গাড়ি-ঘোড়া

এসব দেখে দেখেও ওর আশ মেটেনা। হঠাৎ করে যখন খাবার কথা মনে হয় তখন মুখে দু-চারটে মুড়ি ফেলে দেয়। কোনও তাড়া নেই যেন। মনেহয় ওদের স্কুল যাওয়া নেই, তাই ওর মা ওকে বকেও না!


________ ও বাবা, বাবা! ঐ যাযাবরদের ছেলেমেয়েরা কি ইস্কুলে পড়ে ?


_______মা রে! ওদের জন্যেও তোর এতো চিন্তা!

ঠিক কথাই বলেছিস মা, ওদের আর স্কুলে পড়া হয়ে ওঠেনা। তাই বলে যে ওরা অশিক্ষিত তা কিন্তু নয়। বাস্তবের মাটিতে পা ফেলে ফেলে নানা দেশ দেখে ওরা অনেক কিছুই শিখে ফেলে। হিসেবেও খুব পাকা। হ্যাঁ বাধাধরা স্কুলের শিক্ষা না পেলেও অনেক ভাষায় কথা বলতে পারে। আসলে ওরা তো কোনো নির্দিষ্ট দেশের বাসিন্দাও নয়। যখন যেখানে ইচ্ছে বা সুবিধে ঘুরে বেড়ায়। বেশিদিন এক জায়গায় যেমন থাকেওনা আবার থাকতে দেওয়া হয়ও না। 


যাযাবরদের জীবন একরকমের স্বাধীন বটে। কোনও শেকর নেই। কোনও দেশ যেমন ওদের নয় আবার সকল দেশ কিছুটা সময়ের জন্য ওদের। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational