সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র
সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র
পশ্চিম সিকিমের একটি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। চারিদিকে উঁচু পাহাড় কিছুটা উত্তরেই তিব্বত।সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডক্টর বর্মন তার ছাত্রী অনিমা কে তার আবিষ্কারের বিষয় বস্তু দেখাচ্ছিলেন। অনিমা ডক্টর বর্মনের কাছে ইনফরমেশন টেকনোলজি তে পি এইচ ডি করছে। খুব মেধাবী ছাত্রী। কি করে নিত্য নতুন পদ্ধতির সাহায্যে এথিক্যাল হ্যাকিং সম্ভব এই ছিল গবেষণার বিষয় বস্তু।ডক্টর কাল সকালেই বেরোবেন শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে সেখান থেকে যাবেন মুম্বাই একটা সেমিনার এটেন্ড করতে। অনিমা কে দেখিয়েই নিজের কোয়াটারে ফিরবেন তাড়াতাড়ি।সামনে ল্যাপ টপ খোলা সেখানেই কোনো একটা গেমস এপের সাহায্যে কি করে ডেটা চুরি করা হয় তারই একটা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা তিনি অনিমা কে দিচ্ছিলেন।বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে হটাৎ ল্যাবের আলো গুলো নিভে গেল। ব্যাক আপ এ ল্যাপটপ চলছে কিন্তু সাবস্টেশন থেকে এখন জেনারেটর চালায় নি। প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু তাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। কিযে হলো কে জানে। ইনস্টিটিউট এর জেনারেটর টা আবার অটোমেটেড নয় কাউকে চালাতে হয় কি যে করছে কে জানে।অন্ধকারে মেশিন গুলো ব্যাক আপ এ চলছে তাই ঘরের এদিক ওদিক বিপ বিপ করে সবুজ লাল আলো জ্বলছে। বড় বড় জানলা দিয়ে কিছুটা পড়ন্ত আলো ঘরে ঢুকছে। সেই আলো অবছায়ায় ডক্টর বর্মন দেখলেন তার ঘরের দরজায় দুটো ছায়া মূর্তি এসে দাঁড়িয়েছে।"হাউ আর ইউ প্রফেসর। ইজ এভলিথিন ফাইন।"গলা শুনেই শিরদাঁড়া দিয়ে হিম শ্রোত বয়ে গেল ডক্টর বর্মনের। এই গলা উনি আগেও শুনেছেন তবে ফোনে।চৈনিক মাফিয়া গুন্ডা কিং লুং এর গলা।
1
এখন রাত প্রায় দেড়টা।সুন্দরবনের ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট একটা গোপন মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট। কিছুটা দূরেই জঙ্গল শেষ হয়ে বঙ্গপ্রসাগর শুরু হয়ে গেছে।কাছেই সমুদ্র থাকায় ক্যান্টনমেন্টের আকাশে উড়ে বেড়ায় প্রচুর শঙ্খ চিল আর আলবার্ট রস।এটা গোপন মিলিটারি আস্তানা। ক্যান্টনমেন্টের নীচে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড বেস আছে।এই আন্ডার গ্রাউন্ড বেসে পুরো ক্যান্টনমেন্ট জুড়ে চলে গেছে একটা লম্বা লম্বা টানেল আর মাঝে মাঝে একটা দুটো করে কেবিন। প্রথম টানেলের শেষ প্রান্তে একটা কন্ট্রোল রুম।সেখানে বসে আছেন কর্নেল শ্রীবাস্তব আর ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিসামনে খোলা একটা বিশাল স্ক্রীনআর টেবিলের উপর চারটে ডেস্ক টপ কম্পিউটার।কর্নেল শ্রীবাস্তব এর সামনে একটা ল্যাপটপ খোলা। স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ। ম্যাপে কয়েকটা জায়গা ব্লিঙ্ক করছে"আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো কর্নেল শ্রীবাস্তব""আপনি কি সত্যি বুঝতে পারছেন না ব্রিগেডিয়ার।""না আরেকটু খোলসা করে বলুন।"কর্নেল এবার একটু গুছিয়ে বসলেন"এই বছরের তিরিশে জানুয়ারি আমরা xxV1 স্যাটেলাইট টা লঞ্চ করি শুধু ডিফেন্স এর টপ সিক্রেট এজেন্সির কাছেই আছে এই স্যাটেলাইট টিকে কন্ট্রোল করার চাবি কাঠি মানে পাসওয়ার্ড।""বুঝলাম তারপর""যেরকম হাই এন্ড সব পাসওয়ার্ড এর নিয়ম এই পাসওয়ার্ডের পুরোটা কোনো একটা নির্দিষ্ট কম্পিউটার এ নেই। আলাদা আলাদা কম্পিউটারে আলাদা আলাদা অফিসিয়াল খুলতে পারবেন।সবাই কেই লগ ইন করে তাদের কোড টাইপ করতে হবেতবেই খুলবে পাসওয়ার্ড।"ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি এবার যেন একটা ইন্টারেস্ট পেলেন।কর্নেল একটা দম নিয়ে বললেন"কিন্তু কয়েক ঘন্টা আগে থেকে আমরা দেখেছি কোনো একটা অজানা সোর্স থেকে অনেক গুলো লোকেশন থেকে পাসওয়ার্ড টা খোলার চেষ্টা হচ্ছে।"
2
"একটু লিফট পেতে পারি"প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। এখন বাজে রাত আট টা। হাওড়া ব্রিজে উঠতে যাবে ট্যাক্সি টা এমন সময় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এই তন্হি সিক্ত বসনা যুবতী টিl বৃষ্টি তে শাড়ি টা একদম ভিজে গেছে। একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে যুবতী টির মধ্য"কোথায় যাবেন"জিজ্ঞেস করলেন পিছনের সিটে বসা প্রৌঢ় ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের ফ্রেঞ্চ কাট বিয়ার্ড দেখা যাচ্ছে। একটা কালো ঠুলি চশমা পরে আছেন।"শিয়ালদা, আমি দার্জিলিং মেল ধরবো"যুবতীর গলার আওয়াজেও একটা আকর্ষণ অনুভব করলেন প্রৌঢ় ভদ্রলোক।"আমিও তো দার্জিলিং মেল ধরবো উঠে আসুন"প্রৌঢ় হলেও প্রানের উন্মেষ দেখা গেল ষোলো আনা। গাড়িতে উঠে এলেন যুবতীটি। প্রৌঢ় ভদ্রলোক খেয়াল করলেন যুবতীটি ছুঁচল হিল পড়া ফুট ওয়ার পড়েছেন। এই সুন্দর তীক্ষ্ণ হিল গুলো কে বলা হয় স্টিলেটো। এ ছাড়া কাঁচের চুড়ি পড়েছেন যুবতী টি। গাড়িতে ঢোকার প্রায় সাথে সাথেই সুন্দর একটা আইভি লতার গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো গাড়ির ভিতর। মিষ্টি মিষ্টি কিন্তু কোথায় যেন একটা রহস্য লেগে আছে।"আসলে আমার ফোন টা গন্ডগোল করছে তাই ক্যাব বুক করতে পারছিলাম না।" ট্যাক্সি চলতে থাকলো শিয়ালদার দিকে।"আপনার বাড়ি কি নর্থ বেঙ্গল""না আমি নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে আছিআমার নাম সুরঞ্জনা।""আমি ডক্টর বর্মন সিকিমে থাকি আপনার কোন কোচ" "আমার সি ফোর ফার্স্ট ক্লাস কোচ"খুবই অবাক হলেন প্রৌঢ়।কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই একটা চুরুট ধরালেন গাড়ির ভিতর।"অদ্ভুত ব্যাপার আমারও তো সেই একই কোচবেশ ভালো দুজনে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।"মাঝে মাঝেই কাঁচের চুরির আওয়াজ আসছে পাশের সিট থেকে। একটা অদ্ভুত সম্মোহনী ছন্দ অনুভব করলেন ডক্টর বর্মন।
3
"আমাকে একটু বিশদে বলুন এই স্যাটেলাইট XXV1 নিয়ন্ত্রণ করলে কি কি করা যায়।"কন্ট্রোল রুমে বসে কর্নেল শ্রীবাস্তব কে প্রশ্ন করলেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি।এতক্ষন স্ক্রীনে র উপর গভীর ভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব।আচমকা ব্রিগেডিয়ার এর প্রশ্নে একবার মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন তারপর বলতে থাকলেন"এই স্যাটেলাইট আসলে তেরো টা ক্ষেপণাস্ত্র বা ব্যালিস্টিক মিসাইল কন্ট্রোল করছে। এই তেরো টাই ক্ষেপনাস্ত্র খুবই সাংঘাতিক যেই টার্গেট সেট করবেন এক্টিভেশনের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেটা শেষ করে দেবে অবশ্য যদি টার্গেট হাজার কিলোমিটারের মধ্যে থাকে।""এই মিসাইল গুলো কোথায় লোকেটেড।""আসলে এই তেরো টা মিসাইল ভারতের তেরো টা জায়গায় রাখা আছে । টার্গেটের লোকেশন অনুযায়ী ক্ষেপনাস্ত্র নিজের স্টেশন থেকে টার্গেটের উদ্দেশ্যে যায়"
4"দেখে ঢুকবেন "সুরঞ্জনার উদ্দেশ্যে বললেন ডক্টর বর্মনসি ফোর কূপে ঢোকার হাতল টা ভাঙা। আলগা হয়ে ঝুলছে দরজা থেকে।দুজনেই ঢুকে পরে খুব অবাক হয়ে গেলসি ফোর ফার্স্ট ক্লাস কূপে ওরা ছাড়া আর কেউ নেই।
দার্জিলিং মেল শিয়ালদা থেকে ছেড়েছিল ঠিক সাড়ে দশটায়।ওরা অনেকটা চলে এসেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ধমান পৌঁছে যাবে। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে ভালোই ভাব জমে উঠেছে।যুবতী টি ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বার করে সেখানে সূচ শুতো দিয়ে ফুল আঁকছেন। কাঁচের চুড়ি র আওয়াজ আবার সেই সম্মোহনী আকর্ষণ সৃষ্টি করছে।ডক্টর বর্মন জানলার কোনে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছেন। চুড়ি র আওয়াজে তাকালেন সুরঞ্জনার দিকে।
"বাহ আপনার হাতের কাজ খুব সুন্দর তো এত সুন্দর এমব্রয়ডারি এ দেশে তো কোথায় শেখায় বলে জানি না। একটা জাপানি ছোয়া আছে""ডক্টর বর্মন, এখন কার এই ফাস্ট লাইফে এমব্রয়ডারি খুব একটা চলে না এটা আমার শখ বলতে পারেন। ডক্টর বর্মন একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?""হ্যা সুরঞ্জনা দেবী জিজ্ঞেস করুন""আপনার কি মোবাইলে গেম খেলার খুব শখ""কি করে বুঝলেন গেম খেলছি""সেই হাওড়া ব্রিজ থেকেই তো দেখছি আপনি মোবাইলে চেস খেলছেন।"এবার আইভি লতার গন্ধ সারা কামরায় ছড়িয়ে পড়েছে।
5
"কিন্তু কর্নেল কিন্তু এই পাসওয়ার্ড টা একসেস হচ্ছে কিভাবে ?"
"সর্ষের মধ্যেই ভূত ছিল ব্রিগেডিয়ার সাহেব আমাদের ভিতরেও কেউ থাকতে পারে যারা এই কাজে সাহায্য করেছে অথবাযারা এই সফটওয়ার বানায় তাদের মধ্যেই কেউ কোড ডেকোড মেট্রিক্স কোনো দুষ্কৃতী দের বেচে দিয়েছে এক অভিনব অদ্ভুত ভাবে।""কি রকম""একটা অদ্ভুত চেস এপের মাধ্যমে।""চেস এপ""হ্যা চেস এপ।"চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন কর্নেল"আমরা সবাই জানি দাবা বা চেস খেলায় একটা ক্যাসেল বলে জিনিস থাকে"ভুরু কুঁচকে ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি জিজ্ঞেস করে উঠলেন"আসলে কর্নেল চেস জিনিসটায় আমার বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই""ঠিক আছে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি...দাবার একটা দান আছে যেটা কে বলে ক্যাসেলরুকস এর সাথে কিং এর পজিশনের অদল বদল। এটা তখনই সম্ভব যখন দুটো রুকস এর মধ্যে যেকোনো একটা রুকস কিং এর পাশা পাশি চলে আসবে। সে সময় খেলোয়াড় ইচ্ছা করলে রুকস আর কিং এর পজিশন অদল বদল করতে পারে।"অধীর আগ্রহে শুনে চলেছেন ব্রিগেডিয়ার"চেস এপ টায় চেস খেলতে খেলতে এই ক্যাসেল করা যায়। প্রববিলিটির নিরিখে পারমুটেশন কম্বিনেশন করে প্রথম দান থেকে প্রথম বার ক্যাসেল করার দান পর্যন্ত প্রায় সত্তর হাজার টা মুভ হতে পারে।""সত্তর হাজার!""হুম তা পারে বইকি ফ্যাক্টরিয়াল হিসেব করলে।এই সত্তর হাজার মুভ এর ভিতর ঠিক তেরো টা পর পর ডেফিনিট মুভ আছে যেটা করার পর ক্যাসেল করলে X X V1 এর পাসওয়ার্ড অটোমেটিক খুলে যাবে।""সাংঘাতিক তো""আর সেটাই এই দুস্কৃতির দল গুলো করতে চাইছে।"
6রাত প্রায় বারোটার কাছা কাছি। দার্জিলিং মেল বর্ধমান ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। জানলার ধারে বসে চুরুট খেতে খেতে মোবাইল এ চেস খেলছেন ডক্টর বর্মন।"আমার মোবাইলে অনেক ধরণের গেম আছে তার মধ্যে এটা একটা।""তাই নাকি দেখি দেখি"সুরঞ্জনা প্রায় ডক্টর বর্মনের ঘাড়ের উপর দিয়ে ঝুকে পরে দেখতে চেষ্টা করলো। কাঁচের চুরির আওয়াজে কিছুটা ডিস্ট্রাকশন হলো ডক্টর বর্মনের। ভদ্রতার খাতিরে কিছু বললেন না।তার আবার নিজের জায়গায় এসে বসে পড়লোবিরক্তির সাথে নিজের মোবাইল টা কে পাশে নামিয়ে রেখে বললো"দূর কি যে হয়েছে ছাই আমার মোবাইল টায় হ্যাং হয়ে রয়েছে কিছুই করা যাচ্ছে না""দেখি আমি একটু"ডক্টর বর্মন হেল্প করতে চাইলেন।ডক্টর বর্মন নিজের মোবাইল টা কে ডান পাশে নামিয়ে রেখে সুরঞ্জনার মোবাইল টা কে দেখছেন। ওনার অজান্তেই সুরঞ্জনা ওর মোবাইল টা তুলে নিয়েছে।নিয়ে কি সব খোঁচা খুঁচি করছে।"এই এ কি করছেন আপনি"হটাৎ সুরঞ্জনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ডক্টর বর্মন।"না আপনার মোবাইলে লোড করা গেম গুলো দেখছিলাম"ভদ্রলোক নিজের মোবাইল টা প্রায় ছো মেরে সুরঞ্জনার হাত থেকে নিয়ে নিলেন।
"কিছু মনে করবেন না আসলে এটা আমার প্রাইভেট মোবাইল হাই এন্ড ইমার্জেন্সি কল আসে তো কিন্তু সুরঞ্জনা দেবী আপনার মোবাইল তো ঠিকই আছে""ঠিক আছে কই দেখি....এই যেওমা কখন যে কি হয় কে জানে।"সুরঞ্জনা মুখ তুলে ডক্টর বর্মনের দিকে তাকালোওর চোখে অদ্ভুত কত গুলো প্রশ্ন খেলা করে যাচ্ছে"আপনার গেম গুলো ভালো ডক্টর বর্মন আপনি তো দেখলাম চেস খেলে যাচ্ছেন তবে বার বার ক্যাসেল করার পর গেম আবার স্টার্ট হয়ে যাচ্ছে" (শেষের কথা গুলো যেন একটু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো সুরঞ্জনা।)"অদ্ভুত দৃষ্টি আপনার সুরঞ্জনা দেবী এত খন ধরে আপনি আমার গেম অবসার্ভ করছেন।""মাইক্রোবাইওলজিস্ট তো তাই ছোট খাটো জিনিসে চোখ যায় বেশি।""তবে আমার দৃষ্টিও খুব পাতলা নয় সুরঞ্জনা দেবী আপনার মোবাইলেও তো এই চেস এপ টা লোড করা আছে।"একটা সন্দেহের রেশ খেলে গেল ডক্টর বর্মনের অভিব্যাক্তি তে"কেন চেস খেলা কি অপরাধ?""না একদম নয়"একটু বেশি রকম স্বাভাবিক হতে চাইলেন ডক্টর বর্মন।সুরঞ্জনা কিন্তু খুব সপ্রতিভ" ডক্টর বর্মন যদিও আমি এক্সপার্ট নই তবে আপনার সাথে এক দান চেস খেলাই যেতে পারে অন লাইন।" ডক্টর বর্মন ধড়াস করে এসে নিজের সিটে বসলেন"এই এক মুশকিল সুরঞ্জনা দেবী এই এপে শুধু কম্পিউটার এর সাথেই খেলা যায়।"
7
"আজ প্রায় সাত থেকে আট বার বিভিন্ন লোকেশন থেকে এই এপের সাহায্য নিয়ে X X V1 এর পাসওয়ার্ড খোলার চেষ্টা হয়েছে।"বললেন কর্নেল শ্রীবাস্তব মুখ নিচু করে বসে আছেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিকর্নেল উঠে গেছেন রুমের এক কোনায়। সেখানে একটা মিনি বার রাখা আছে। সেখান থেকে একটা স্কচ এর বোতল বার করতে করতে বললেন।"কি বুঝলেন ব্রিগেডিয়ার সাহেব।"একই ভাবে বসে আছেন ব্রিগেডিয়ার।"জায়গা গুলো কিকি একবার দেখা যাবে।""নিশ্চই যাবে ব্রিগেডিয়ার। শুধু জায়গা কেন ঠিক কোন সময় কোন জায়গা থেকে এই কাজ করা হয়েছে সেটাও দেখা যাবে। একটু সবুর করুন।"
শেলফ থেকে দুটো গ্লাসে স্কচ ঢেলে । জল ঢাললেন কর্নেল। আরেকবার মিনি বার খুলে একটা আইস জার বার করে আনলেন।"আইস"প্রশ্ন টা ছুড়ে গেল বসে থাকা ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নির দিকেপ্রায় সাথে সাথেই উত্তর এলো "শিওর"আইস ঢেলে কর্নেল একটা গ্লাস এগিয়ে দিলেন ব্রিগেডিয়ার এর দিকে।নিজে স্কচ এর গ্লাস নিয়ে এগিয়ে গেলেন স্ক্রিনের কাছে। স্ক্রিনের সামনেই টেবিলের উপর রাখানিজের ল্যাপটপের উপর কয়েকটা কিস টিপে দিলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব ।স্ক্রিনে এক এক করে ফুটে উঠলো লোকেশন গুলো।
"প্রত্যেকটা জায়গার আর সময়ের মধ্যে কিছু একটা যেন সামঞ্জস্য রয়েছে"কিন্তু সেটা কিআর জায়গা গুলোও চেনা। চেনা"বসে বসে একটা পাইপ ধরিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিমুখ তুলে কিরকম একটা তাচ্ছিল্য নিয়ে বললেন"সারা পশ্চিম বাংলা ঘুরে বেড়িয়েছেন আপনি কর্নেল জায়গা গুলো চেনা চেনা তো লাগবেই"হটাৎ কেমন যেন স্থির হয়ে গেছেন কর্নেল শ্রীবাস্তব।ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নির কথার কোনো উত্তর দিলেন না। একটা সিপ নিয়ে স্কচ এর গ্লাস টা টেবিলের উপর রেখে দিলেন । চোখ স্থির হয়ে আছে স্ক্রিনের উপর।বির বির করে যাচ্ছেন লোকেশনের নাম গুলো।সাড়ে দশটায় বালি হল্ট এগারোটায় বেলমুড়ি সাড়ে এগারোটায় শক্তিগড় বারোটায় গুসকরা সাড়ে বারোটায় কোপাই ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কর্নেল শ্রীবাস্তব হাত তুলে ওনাকে থামিয়ে দিলেনকিরকম যেন একটা ইনসাল্টেড ফিল করলেন ব্রিগেডিয়ার । খুব ঠান্ডা গলায় কর্ণেল শ্রীবাস্তব বললেন" বালি হল্ট বেলমুড়ি শক্তিগড় গুসকরা কোপাই জায়গা গুলো দার্জিলিং মেলের স্টেশন গুলোর সাথে মিলে যাচ্ছে"চেয়ারে একটু নড়ে চড়ে বসলেন ব্রিগেডিয়ার।কর্নেল বলে চললেন
"সময় গুলোও মিলে যাচ্ছে একদম খাপে খাপঠিক যেই যেই সময় দার্জিলিং মেল যেই যেই স্টেশনের কাছা কাছি থাকে সেই সেই সময় সেই স্টেশন গুলোর কাছ থেকেই এপ টা একসেস করা হচ্ছে""মানে""মানে এই মুহূর্তে এপ টা ব্যাবহার করা হচ্ছে চলন্ত দার্জিলিং মেলের ভিতর থেকে।
8
"যদি কিছু মনে না করেন আপনার নাম্বার টা বলবেন একবার কল করে দেখবো"খুব করুন মুখ করে নিচ থেকে বললো সুরঞ্জনা।ডক্টর বর্মন ডিনার শেষ করে ট্রে টা পাশে এক কোনায় রেখে হাত মুখ ধুয়ে এসে উপরের বার্থে উঠে পড়েছিলেন। কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে চেস খেলছিলেন।সুরঞ্জনার আবদার শুনে নিচের দিকে তাকালেন"কেন হটাৎ আমাকে কল করার কি দরকার পড়লো।""না মানে আমার ফোন টা ডিস্টার্ব করছে তাই ভাবছি একবার কল করে দেখে নেব কল যাচ্ছে কিনা""আসলে আমার এই নম্বর টা একটু প্রাইভেট প্লিস কিছু মনে করবেন না।""না না ঠিক আছে"
9"আমাদের ইন্টারভেনশন এই অবধি কত দূর হয়েছে।"জিজ্ঞেস করলেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিনিজের সিটে ফিরে এসেছেন কর্নেল। একটা পাইপ ধরিয়েছেন।পাইপে একটা দম নিয়ে মুখ খুললেন কর্নেল"আমাদের এজেন্ট R 9 সম্ভাব্য টার্গেট লোকেট করে ফেলেছে এবং সেটাকে ফলো করে চলেছে কিন্তু সাঙ্গুইন হতে পারছে না বলে ক্লোজ করা যাচ্ছে না।""এরপর দুষ্কৃতী কি কি করতে পারে এই এপ দিয়ে।""ক্যাসেল করে XX V1 খুলে ফেললে ওরা প্রথমেই যেটা করবে সেটা হচ্ছে কোনো একটা মিসাইল কে এক্টিভেট করাবে।এই এক্টিভেট হতে সময় লাগে দু ঘন্টা এক্টিভেশনের সময় মিসাইল কোন জায়গা কে টার্গেট করছে সেটা বোঝা যায়।এই দুঘন্টার মধ্যে প্রোগ্রাম যদি এবোর্ট করা যায় তাহলেই বাঁচোয়া। একবার এবোর্ট করলেমিসাইল গুলো বে অফ বেঙ্গলের গভীরে নিজেদের নিক্ষেপ করবে। আর এবোর্ট না করতে পারলে টার্গেট খতম।"
10
"বাহ ফাইনালি হারাতে পারলাম কম্পিউটার কে"খুব এক্সাইটেড হয়ে উপরের বার্থ থেকে নেমে পড়েছেন ডক্টর বর্মন।"দারুন ব্যাপার দেখি দেখি "আবার যেন হুমড়ি খেয়ে একবারে ডক্টর বর্মনের ঘাড়ের উপর এসে পড়ল সুরঞ্জনা"ওমা এ যে শুধু ক্যাসেল করেছেন""ওই টাই তো খেলা""সে আবার কি খেলাকিন্তু এই খেলাই তো আপনি সন্ধ্যা থেকে খেলে আসছেন"সুরঞ্জনা যেন নাছোড়বান্দা।"আপনি এ সব বুঝবেন না রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন বা এমব্রয়ডারি করুন।"একটু বিরক্ত ই হয়েছেন ডক্টর বর্মনমোবাইল টা নিয়ে কূপের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন তিনি। গট গট করে চলে গেলেন রেস্ট রুমের দিকে।কূপের দরজাটা ট্রেনের ঝাঁকুনির জন্য আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। একটা ঝনাত শব্দ করে কূপের বাইরে পাসেজের মেঝে তে পরে গেল আলগা লোহার হাতল টা।ঘুমিয়ে পড়েনি সুরঞ্জনা। নিচের বার্থের পাশের ছোট আলো টা জ্বালিয়ে সুচ শুতো বার করে এমব্রয়ডারি করছে। রাত প্রায় দুটো। কাঁচের চুরির শব্দে আর আইভি লতার গন্ধে মাতোয়ারা সি ফোর কূপ।
11
"মিসাইল এক্টিভেশান প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ব্রিগেডিয়ার R 9 সাসপেক্ট লোকেট করেও কিছু করতে পারলো না।"খুব হতাশ হয়ে পড়েছেন কর্নেল শ্রীবাস্তব" মিসাইলের টার্গেট টা কি এখুনি দেখুন আমরা রিসোর্স সরিয়ে ফেলবো।"খুব উত্তেজিত ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিস্ক্রিনের দিকে তাকালেন কর্নেল"টার্গেট স্ট্যাটাস বলছে মুভিং টার্গেটএই এক স্পেশালিটি এই ব্যালিস্টিক গুলোর। মুভিং টার্গেট ভালো নেয়""কিন্তু মুভিং টার্গেট টা কি কর্নেল""দাঁড়ান লোড হচ্ছে....এই তো"স্ক্রিনের উপর ফুটে উঠেছেডিভাইস ইন ইউস"মানে""আরো কিছু লোড হচ্ছে সিস্টেমেদেখুন কর্নেল""গ্রেট গড""দেখুন স্ক্রিনে কি লেখা ফুটে উঠেছে"দার্জিলিং মেল।কন্ট্রোল রুমে এসি চলছে কিন্তু তাও যেন দর দর করে ঘামছে কর্নেল"মিসাইল ছুটবে ডিভাইস লক্ষ করেএখানে ডিভাইস হচ্ছে সেই মোবাইল ফোন যেখানে চেস এপ ব্যাবহার করে x x v 1 কে এক্টিভেট করা হয়েছে।...."তার মানে এটা একটা সুসাইড স্কোয়াড।সেই মোবাইল তো আছে দার্জিলিং মেলের ভিতর।" বললেন ব্রিগেডিয়ার
"এক্সাক্টলি তাই টার্গেট হচ্ছে দার্জিলিং মেলআর টার্গেট হচ্ছে কয়েকশো নিরীহ ইনোসেন্ট মানুষ।"কর্নেল কথা গুলো বলেই স্কচ এর গ্লাস টা উঠিয়ে চো করে বাকি টা স্কচ টেনে ফেললেন। উঠে দাঁড়িয়ে টুপিটা টান মেরে খুলে ফেললেন কর্নেল" আজ সাতাশ তারিক ,ব্রিগেডিয়ার কাল আঠাশ মহালয়া । পুজোর ছুটি জাস্ট পড়েছে বলা বাহুল্য দার্জিলিং মেলে প্রচুর বাচ্চা ছেলে মেয়ে রয়েছে।"প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হট লাইন টেলিফোন টা বেজে উঠলো।রুমের আরেক প্রান্তে হট লাইনহাই কমান্ড থেকে সরাসরি কথা হয়।কর্নেল উঠে গিয়ে ফোন ধরলেন।কিছুক্ষন কথা বলে রিসিভার রেখে তাকালেন ব্রিগেডিয়ার কুল কার্নির দিকে।।"হোম মিনিষ্ট্রি থেকে ফোন কোনো দুষ্কৃতী দের ফোন এসেছিল ওদের নেতাদের জেল থেকে মুক্ত করতে হবে নইলে সামনে ঘোর বিপদ।"
"হুমকিটা এক্সাক্টলি কোথা থেকে এসেছিলদাড়াও আমি মিনিস্ট্রি তে খোজ নিচ্ছি।"ফোন করে আবার ঘুরে এলেন কর্নেল।"মিনিস্ট্রি বললো আননোন নম্বর কিন্তু ওরা লোকেশন ধরতে পেরেছে নলহাটি বা পাকুরের মাঝা মাঝি।""হুম এখন উপায়?"জানতে চাইলেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি"এখন এক মাত্র উপায় হচ্ছে একটিভেষণ কে এবোর্ট করা""কিন্তু সেটা কি ভাবে সম্ভব"সেটা এখন R 9 কেই খুঁজে বের করতে হবে
12"ওফ অসময় কে জ্বালাচ্ছে টা কে" রেস্ট রুম থেকে ফিরে উপরে ব্যাংকে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ডক্টর বর্মন পাশে রাখা ছিল ওনার মোবাইল ফোন টা সেটা অনবরত বেজে চলেছে। ছোট বেডসাইড তাক থেকে চশমা টা নিয়ে চোখে লাগলেন।কল আসছে একটা আননোন নম্বর থেকে।কেটে দিলেন ফোনটা।সি ফোর কূপ টায় নীল একটা নাইট ল্যাম্প জ্বলছে।নিচে চেয়ে দেখলেন চাদর মুড়ি দিয়ে পাস ফিরে শুয়ে ঘুমোচ্ছে সুরঞ্জনা। কোনো আইভি লতার গন্ধ পাচ্ছেন না।একটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়লো ডক্টর বর্মনের। চশমা টা খুলে ভালো করে মুছে আবার পরে ফেলেন।নাইট ল্যাম্প এর আলোয় নিচ টা মোটা মোটি দেখা যাচ্ছে।জানলার দিকে দুটো ব্যাংকের মাঝখানে খাবার রাখার স্ট্যান্ড টা খোলা আর ওর উপরেই রাখা এমব্রয়ডারি করা রুমাল টা। তবে তার সুচ টা একদম খাড়া দাঁড়িয়ে আছে রুমাল টির উপর। আর সুচের মাথায় লাল রঙের একটা আলো জ্বলছে নিবছে। এটা কি সুচ না অন্য কিছু। মাথার দিকে একটা হাঙ্গারে ঝুলছিল ওনার কোট টা সেটা তে হাত ঢুকিয়ে ডক্টর বর্মন বের করে আনলেন একটা মাউজার পিস্তল।
13
"মিনিষ্ট্রি অফ ইনফরমেশন এন্ড ব্রডকাস্টিং আর হোম মিনিষ্ট্রি থেকে জানানো হয়েছে এই এপ একটা ম্যাল ওয়ারের মতো তাই ডাইরেক্ট ইন্টারভেনশন সম্ভব নয়"কর্নেল শ্রীবাস্তব আর ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে পাসেজের উপর হাটতে শুরু করেছেন। ওরা যাচ্ছেন লিফটের কাছে।"ঠিক কি করা যেতে পারে এখন?"প্রশ্ন করলেন ব্রিগেডিয়ার।ওরা লিফটের কাছে পৌঁছে গেছেন। লিফটটা ওয়াচ টাওয়ার কে কানেক্ট করছে। সোজা একদম উপরে উঠে গেলে ওরা ওয়াচ টাওয়ার এর মাথায় পৌঁছে যাবে।ওরা লিফটে ঢুকে পড়ল।" খুব উঁচু মাপের হ্যাকের শুধু পারবে এই এপ এর মধ্যে ঢুকে এটাকে এবোর্ট করতে।তাই আমরা R9 কে এই মিশনে নিয়েছি। আইটি তে ওর ভালো টেকনিক্যাল নো হাও আছে। এক সময় আই আই টি তে ক্লাস ও নিয়েছে এথিকাল হ্যাকিং এর উপরে"কর্নেল ওনার মোবাইল টা বার করলেন"R9 র থেকে মেসেজ ও এপ এ ঢুকে পড়েছে""গ্রেট কর্নেল কিন্তু এবোর্ট করবে কি করে""দেখো R 9 একটা মেসেজ করেছে" কথা গুলো বলে কর্নেল শ্রীবাস্তব মোবাইল টা মেলে ধরলেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি র সামনে।"আমি চেস এপ এ ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়েছি।একটিভেষণ প্রক্রিয়ার স্টেজ গুলো একটা একটা করে এগোচ্ছে। আমার হাতে মোট দুই ঘন্টা সময় আছে ।ব্ল্যাক কিং এর প্রত্যেক টা মুভের সাথে একটিভেষণ প্রক্রিয়া র স্টেজ গুল এগিয়ে যাচ্ছে তার মানে আমি যদি সাদা গুটি গুলো ব্যাবহার করে ব্ল্যাক কিং কে থামাতে পারি তাহলেই এবোর্ট সম্ভব।মানে ব্ল্যাক কিং কে কিস্তি মাত করতে হবে। সেটা একমাত্র সম্ভব আমার বানানো চান্স ডিটেক্টর সিস্টেম ব্যাবহার করে""এই চান্স ডিটেক্টর সিস্টেম টা কি বস্তু"প্রশ্ন করলেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নিলিফট খুলে গেছে ওরা বেরিয়ে এলো ওয়াচ টাওয়ারের ছাদে। রাতের আকাশে অগণিত তারা জ্বলছে। হু হু করে হওয়া দিচ্ছে ক্যান্টনমেনটের এই ওয়াচ টাওয়ার থেকেই দেখা সামনে জঙ্গল শেষ হয়ে গিয়ে শুরু হয়ে গেছে সীমা হীন বঙ্গপ্রসাগর।"সি ডি এস হচ্ছে এমন একটা ডিভাইস যেটা খুবই কম সময় মানে কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতির যত রকমের পরিণতি হতে পারে সেগুলো বার করে দেবে""ঠিক পরিষ্কার হলো না""ধরুন আমি আর আপনি এই ওয়াচ টাওয়ারে উঠেছি এইটা একটা পরিস্থিতি কিন্তু ঠিক এক ঘন্টা পর পরিণতি কি কি হতে পারে।আমাদের মধ্যে কেউ একজন এখানে থাকলো আর আরেকজন নীচে চলে গেলো। বা আমরা দুজনেই নীচে চলে গেলাম বা আমরা কেউই নীচে গেলাম নাএই চান্স ডিটেক্টর সিস্টেম মুহূতের মধ্যে সেই বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারবেমানে চেস এপে ঢুকে পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কিস্তি মাৎ করার ছক টা বাতলে দিতে পারবে এই ডিভাইস আর সেটা করে ফেললেই মিসাইল এক্টিভেশন এবোর্ট করা সম্ভব।""কিরকম দেখতে এই চান্স ডিটেক্টর সিস্টেম""এটা দেখতে অনেকটাই একটা রুমাল আর সুচের মতো । সুচ টা আসলে একটা স্টাইলাস।আর রুমালের উপর যে সরু সুতোর জাল বানানো আছে সেগুলো হচ্ছে চান্স। স্টাইলাস যতবার যত জালের উপর দিয়ে যাবে চেস এপে কিস্তি মাৎ করার ছক গুলো হ্যাকারের মোবাইলে ধরা পড়বে । "কিরকম যেন অপ্রতিভ লাগলো ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি কে।হু হু করে হওয়া বয়ে যাচ্ছে ওয়াচ টাওয়ারের ছাদে।
14ডক্টর বর্মন ব্যাংক থেকে নিচে নেমে এসে মাউসার টা সুরঞ্জনার দিকে তাক করে এগিয়ে এলেন ।একটা সাদা চাদর দিয়ে আদ্যপ্রান্ত মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে সুরঞ্জনা।ক্ষিপ্র বাঘের মতো ডক্টর বর্মন টান মেরে সরিয়ে নিলেন চাদর টা। অনেক টা যা আঁচ করেছিলেন তাই। সুরঞ্জনা নেই কত গুলো বালিশ আর কম্বল পরে আছে।গেল কোথায় মেয়েটা।ওমা ব্যাংকের উপর রাখা ওনার মোবাইলে কিছু মেসেজ আসছে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে খুব ঘাবড়ে গেলেন ডক্টর বর্মন । ভালোই বুঝতে পারলেন যে আর্মি ইন্টেলিজেন্স এর কাছে ধরা পড়ে গেছেন এইবার। মোবাইলে দেখাচ্ছে ক্যাসেল হয়েই শেষ হয়ে যায় নি খেলা কেউ হ্যাক করে ফেলেছে চেস এপ টা আর এক এক করে সব ব্ল্যাক সৈন্য সামন্ত লোপাট হয়ে যাচ্ছে,,,,,এই যা এবার ব্ল্যাক কুইন টা গেল।টেবিলের উপর রাখা সুরঞ্জনার এমব্রয়ডারি করা রুমাল আর সুচ টা একই ভাবে পরে আছে। সুচ টা একবারে খাড়া হয়ে গেথে আছে। সুচের মাথায় লাল আলো টা এখনো জ্বলে নিভে চলেছে। মোবাইলে একটা লম্বা বিপ শব্দ। ডক্টর বর্মন দেখলেন ব্ল্যাক কিং এর আর উপায় নেই..... চেক মেট সাথে সাথেই মোবাইল স্ক্রিনে আরেক টা মেসেজ ফুটে উঠলো "মিশন এবরটেড।"একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোট টা চড়িয়ে নিলেন। মোবাইল টা চালান করে দিলেন কোটের পকেটে।এতক্ষন কূপের মধ্যে হালকা নীল নাইট ল্যাম্প টা জ্বলছিল। ডক্টর বর্মন আলোর সুইচ টা জ্বালাতে চাইলেন। কিন্তু কোনো আলোই জ্বললো না। উনি কূপের দরজা ঠেলে বাইরে পেসেজে বেরিয়ে এলেন একি পেসেজেও সেই একই অবস্থা কোনো আলো নেই নাইট ল্যাম্প গুলোও জ্বলছে না একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। ট্রেন ছুটছে প্রায় আশি কিলোমিটার বেগে বাইরে বেশ জোরে জোরে বৃষ্টিও পড়ছে। মাউসার পিস্তল টা একই ভাবে তাক করে ডক্টর বর্মন এগিয়ে গেলেন ওয়াশ রুমের দিকে।এদিকটা যেন আরো অন্ধকার। ওয়াস রুমের কাছে আসতেই নাকে এলো আবার সেই সম্মোহনী আইভি লতার গন্ধ।
ডক্টর বর্মন কাঁচের চুড়ির শব্দ শুনতে পেলেন
কাঁচের চুড়ির আওয়াজ আর ছন্দময় লাগলো নাএবার অনুভব করলেন একটা হাই হিল স্টিলেটো ওনার শিরদাঁড়ার উপর চেপে বসেছে।এবার মাথার পিছনে বিশাল কিছু একটা এসে লাগলোডক্টর বর্মন এবার মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়লেন। আরো জোরে একই জায়গায় আবার একটা আঘাত। যে জিনিস টা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটা ডক্টর বর্মনের চোখের পাশেই এসে পড়ল এবার। সি ফোর কূপের দরজার হাতল টা।আস্তে আস্তে জ্ঞান হারাচ্ছেন ডক্টর বর্মন। অন্ধকারে ভালোই বুঝতে পারলেন কয়েকটা চটুল স্বতঃস্ফূর্ত আঙ্গুল ওনার কোটের পকেটে ঢুকে পড়ে বের করে আনছে ওনার মোবাইল টা। আবার কাঁচের চুরির শব্দ পাচ্ছেন।
কোনো রকমে উঠে দাঁড়ালেন ডক্টর বর্মনপিছনে ফিরে তাকালেন
একটা আবছা নীল আলো ভেস্টিবুলের কাছ থেকে এই দিকটায় এসে পড়েছে । সেটারই আলোতে দেখতে পেলেন নারী মূর্তি। সুরঞ্জনা কিন্তু আগের মতো নিষ্পাপ নয় একটি হিংস্র ও দৃঢ় অভিব্যাক্তি চাহনির মধ্যে। চোয়াল গুলো অস্বাভাবিক রকম শক্ত।নিমেষে সুরঞ্জনা দুদিকের দুটো বার্থ ধরে শূন্যে ঝুলে পড়লো। তারপরেই দুটো জোড়া পায়ের লাথি এসে পড়ল ডক্টর বর্মনের বুকের উপর। হাতে পিস্তল নিয়েই ট্রেনের প্যাসেজে চিৎ হয়ে পড়লেন ডক্টর বর্মন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওনাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বাঘিনীর মতো ওনার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো সুরঞ্জনা। হাটু দিয়ে চেপে ধরলো বর্মনের পিস্তল ধরা হাত টা। হাঁটুর ভয়ঙ্কর চাপে পিস্তল টা আলগা হয়ে এলো। যন্ত্রনায় চেঁচিয়ে উঠলেন ডক্টর বর্মন। কিন্তু ততক্ষণে সুরঞ্জনা ওনার দুটো চোখ খামচে ধরলো।উনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বুঝতে পারলেন কোনো লাভ নেই । কোনো পাশবিক শক্তি যেন ভর করেছে এই মানবীর মধ্যে। নিমেষের মধ্যেই ডক্টর বর্মনের দেহ টা কে শূন্যে তুলে একটা বার্থের উপর আছড়ে ফেললো সুরঞ্জনা।
প্রায় সাথে সাথেই ডক্টর বর্মন অনুভব করলেন কেউ ওনার বাম হাত টা পিছন থেকে মুচড়ে ধরলো। কাঁচের চুরির শব্দ শুনতে পেলেন ।অসম্ভব ব্যাথায় প্রায় চিৎকার করে উঠতে গেলেন ডক্টর বর্মন।বুঝতে পারলেন হাত মুচড়িয়ে ওনার পিঠে চড়ে বসেছে সুরঞ্জনা।
এবার ওনার ই পিস্তল ওনার ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। মাঝে মাঝেই ওনার হাত অসম্ভব জোরে মুচড়ে ধরছে সুরঞ্জনা
গোঙাতে থাকলেন ডক্টর বর্মন। এবার ফিশ ফিশ করে দাঁতে দাঁত চেপে সুরঞ্জনা বলে উঠলো "চেক মেট ।"
না পিস্তলের গুলি চললো না পিস্তল টা সুরঞ্জনা চলন্ত ট্রেনের জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।
ডক্টর বর্মনের পিঠে চড়ে বসে এবার সুরঞ্জনা আরেকটা হাত মেলে ধরলো ওনার মুখটার উপর।ডক্টর বর্মন কিছু বোঝার আগেই হাত টা ওনার মুখে চেপে বসে প্রায় উপড়ে ফেলতে চাইলো ওনার মুখটা।
আশুরিক শক্তি হাত দুটো তে একটা ওনার বা হাত টা প্রায় মুচড়িয়ে ভেঙে ফেলছে আরেকটা ওনার মুখের মাংস যেন উপড়ে ফেলছে।
মুখের চামড়া খুলে এলোচামড়া নয় মুখোশআবছা আলোয় সুরঞ্জনাদেখতে পেলো কিং লুং এর রক্তাক্ত বীভৎস মুখটা।
আইভি লতার গন্ধে ঢলে পড়লেন আন্ডার ওয়ার্ল্ড সংস্থা ডার্ক ক্রমের চৈনিক গুন্ডা কিং লুং।
15
"গুড নিউজ ব্রিগেডিয়ার সি ডি এস ব্যাবহার করে R 9 মিশন এবোর্ট করতে পেরেছে।"ওয়াচ টাওয়ারের ছাদে হু হু করে হওয়া দিচ্ছে "এটা তো দারূন খবর" বললেন ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি"কিন্তু এখনও খেলা থামেনিR 9 কিং পিং মানে পালের গোদা কে ধরার চেষ্টা করছে ওই সি ডি এস ব্যাবহার করে।"হাট তে হাঁট তে কর্নেল ছাদের অন্য প্রান্তে চলে গেলেন। ব্রিগেডিয়ার সেই এক জায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছেন।"ও ফ্যান্টাস্টিক কি করে ?"প্রশ্ন টা একটু চেঁচিয়ে করতে হলো ব্রিগেডিয়ার কে।ওয়াচ টাওয়ারের এই ছাদ টা অনেক উপরে শন শন করে হওয়া দিচ্ছে। ছাদের এ মাথা থেকে ও মাথা প্রায় চল্লিশ ফুট।শেষ প্রান্তে চলে গিয়েছেন কর্নেল।ব্রিগেডিয়ার এর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ জোরে জোরে বলতে হলো কর্নেল শ্রীবাস্তব কে।"যেই মোবাইল থেকে চেস এপ খেলা হচ্চিল সেটার ডেটা বেসের সাথে সি এস ডি কানেক্ট করে R 9 সোর্স ডেটার লোকেশন, সার্ভিস প্রোভাইডার আর ইউজার আইডি ধরতে চাইছে।"" তাহলে আজ একটা তো দারুন দিন কর্নেল আমাদের সেলিব্রেট করা উচিৎ""দাঁড়ান ব্রিগেডিয়ার আমি রাম নিয়ে আসছি স্কচ এ ঠিক জমবে না।"কর্নেল আবার এদিক টায় ফিরে এসে লিফটে ঢুকে পড়লেন।লিফটে করে আবার আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে এলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব। কন্ট্রোল রুমে গিয়ে দুটো ছোট গ্লাস কোটের পকেটে চালান করে দিলেন তারপর মিনি বার থেকে রামের বোতল আর জলের বোতল একটা প্লাস্টিকের মধ্যে ঢোকালেন।মোবাইলে একটা মেসেজ আসছে বোধয় R 9 এর মেসেজ।সি এস ডি সোর্স ডেটা লোকেট করতে পেরেছে।টপ সিক্রেট লোকেশনযাক এবার পালের গোদা গুলো ধরা পড়বেকর্নেল লিফটে উঠে লিফট বন্ধ করলেন।মোবাইলে আরেকবার বিপR 9 নিশ্চই লোকেশন পেয়ে গেছেমোবাইল টা চোখের সামনে ধরলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব।সিক্রেট সার্ভিসের আই এস পিলোকেশন সুন্দর বন।আই এস পি দেখে আঁতকে উঠলেন কর্নেল এটা তো এই ক্যান্টনমেন্টের আই এস পি।ঠিক সেই সময় টাওয়ারের উপর থেকে পর পর দুবার গুলির আওয়াজ গর্জে উঠলো।কর্নেল উপরে পৌঁছে টাওরের ছাদে বেরিয়ে এলেন। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখলেন যেই দিকে ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নি দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে কুয়াশার মতো গুলির ধোয়া উড়ে যাচ্ছে আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বারুদের গন্ধ।দেখলেন মাটিতে পড়ে আছেন ব্রিগেডিয়ার তার ডান হাতে পিস্তল ধরা। নিজেকে নিজেই গুলি করেছেন ব্রিগেডিয়ার। গুলি লেগেছে ব্রহ্ম তালুতে। চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে কালো চাপা রক্ত বেরিয়ে চলেছে খত থেকে।নির্বাক কর্নেল। আবার মোবাইলে মেসেজ আসছেকর্নেল এর ফোনে এক্সট্রিম সোর্স ডেটার ইউজার আইডি ফুটে উঠেছেএকটা গোপন নম্বরকর্নেল জানেন কার গোপন ইউসার আই ডি এটাযেই লোক টা তার সামনে লুটিয়ে পরে আছে তার.......ব্রিগেডিয়ার কুলকার্নির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব তার পর মুখ তুললেন আকাশের দিকে।আকাশে একটা সাই সাই আওয়াজ আসছে কিছুক্ষনের মধ্যেই কর্নেল শ্রীবাস্তব দেখতে পেলেন ওনার মাথার অনেক উপর দিয়ে একটা সাদা মিসাইল হুশ করে চলে গেল বঙ্গ প্রসাগরের দিকে। একটা সাদা ধুয়োর রেশের রেখা পরে রইলো অন্ধকার আকাশে। দূরে মাঝ সমুদ্রে মিসাইল টা গিয়ে আঁচড়ে পড়লো।সারা শরীর থেকে একটা চাপ নেমে গেছে কর্নেল শ্রীবাস্তবের।একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটছে দূরে ওই সমুদ্রের দিগন্তে। আজ মহালয়া, দেবী পক্ষের শুরু। আগমনীর আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।