Somtirtha Ganguly

Horror

4.0  

Somtirtha Ganguly

Horror

আংটি

আংটি

14 mins
268



মাঝে মাঝে মনে হয় সব জটিলতার মধ্যে অনেক সরলতা লুকিয়ে আছে আর আবার আপাত দৃষ্টিতে আমার যা সহজ বলে মনে হচ্ছে তা খুব একটা সহজ নয় সেখানে জটিলতর জটিলতা জট পাকিয়ে বসে আছে।

গ্যাংটোক থেকে ঠিক পাঁচ মাইল দূরত্বে অবস্থিত এই অঞ্চল। জায়গাটির নাম তাদং। এক সময় নাকি টাট্টু ঘোড়া দের আস্তানা ছিল তাই এই নাম।কিছুদিন আগে অবধি বহু প্রাচীন ওই আস্তাবল গুলো ছিল । বছর তিনেক হলো একটি ল্যান্ড স্লাইডের ফলে জায়গা টা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এখন এখানে আধা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠেছে। আমি কলেজে পোস্ট গ্রাড করছি। আমার নাম ডাক্তার সোমেশ্বর লাহিড়ী তাদং এ ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত বিরল অভিজ্ঞতার কাহিনী আপনাদের শোনাবো।



ঘটনাটা যখন প্রথম বার ঘটলো আমি তেমন আমল দিইনি। দ্বিতীয় বার ঘটার পর মনে একটা সন্দেহের উদ্রেগ হয় আর তৃতীয় বারের পর এক ফোটা সময় নষ্ট না করে আমি সোজা চলে যাই অমিত দা র কাছে। অমিত দা একজন ডাক্তার সিকিমে চুটিয়ে মেডিসিন প্র্যাক্টিস করেন। 

কলেজে ওর ডিপার্টমেন্ট ই ওকে দেখালাম। সব শুনে প্রেসক্রিপশন এ ঘস ঘস করে একটা ঘুমের ওষুধ লিখে দিলেন।

"আপাতত রাতে এটা খেয়ে ঘুমা আর অতিরিক্ত সিগেরেট আর কফি খাওয়া টা বন্ধ কর।"



মাস তিনেক হলো আমি ডক্টরস হোস্টেল ছেড়ে বাইরে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে আছি।হোস্টেলের হাজার রকম নিয়ম কানুন এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না আমার একেবারেই পোষাচ্ছিলো না।

আমার কফি আর সিগেরেটে একটু বেশি মাত্রায় আশক্তি আছে। কফিতে চুমুক দিয়ে সিগেরেট টা ধরালেই যেন মুক্তির স্বাদ আরো ভীষণ ভাবে প্রখর হয়ে উঠবে। মাঝে মাঝে আমি বিড়িও খাই। তবে বিড়ি খাওয়ার ব্যাপারটা সবাই কে বলিনা। ডাক্তারের ডাক্তাতারি ইমেজ কিছু টা ফিকে হয়ে যায় বলে তাই লোক সমাজে পকেট থেকে ক্লাসিক বা মালবরো ই বেরোয় আর একলা অবগুণ্ঠনে মনের অজানা ঠিকানা গুলো সাথে নিয়ে জ্বলে ওঠে পাঁচশো দুই পতাকা বিড়ি।




খুব দামি সিগারেটের গন্ধে একরকম আভিজাত্য আছে। কম দামি গুলোতে আছে মধ্যবিত্ত আপোষ আর বিড়ির গন্ধে আছে খেটে খাওয়া মানুষের বেঁচে থাকার কৌশলের গন্ধ। টান মেরে কাজে লেগে পড়লেই বাধা বিপত্তি যেন সব শেষ।


হোস্টেল ছাড়ার আগেই বাড়িটার ওই চিলেকোঠার ঘর টা পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো। মালকিন এক তিব্বতি মহিলা মিসেস ডেনজংপা। 

বললেন কোনো অসুবিধে নেই চিলেকোঠা হলেও ওই ঘরে ঢোকার আলাদা সিঁড়ি আছে একদম সেপারেট এন্ট্রি। বাইরে থেকে একটা আলাদা ঘোরানো সিঁড়ি চলে গেছে ছোট্ট ছাদ টায়। একটা গ্রিল গেট দিয়ে ছাদের বাকি অংশ টা থেকে বিভক্ত।

এই ভাবেই ঘর টি বাড়িটির অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। মিসেস ডেনজংপা চিলেকোঠার ঘরটি ভাড়া দেবেন বলেই এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন।উনি আমাকে নিয়ে ঘরটি দেখাতে উপরে উঠলেন।

ঘরে ঢুকেই মন টা আনন্দে আটখানা হয়ে গিয়েছিলছোট্ট ঘরের ওপর প্রান্তে বিশাল একটা জানালাআর জানলার বাইরে দূরে দূরে তিন টে সবুজ অরণ্যে ঢাকা পাহাড়। পাইন দেবদারু শাল গাছে ঢাকা।জানলা দিয়ে উকি মারলেই দেখা যায় বিশাল একটা ভ্যালি । ছোট ছোট তিন চারটে ঘর বাড়ি।

মিসেস  ডেনজংপার   বাড়িটা একদম খাঁদের ধারে।বড় জানলাটা দিয়ে দেখা যায় অনেক অনেক নীচে সুন্দর রুপোলি ফিতের মতো রঙ্গীত নদী একে বেঁকে চলে যাচ্ছে। হু হু করে হাওয়া আসছে। 

জানলার ও পাশটা যেন এক ফালি রুপ কথা, বুদ্ধির গোড়ায় ধুয়ো দেওয়ার যেন আদর্শ জায়গা। এ না হলে জীবন অর্থ হীন। 

খুব খুশী হয়ে হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে ঘরটি তে থাকতে শুরু করলাম।



ঘটনা গুলো প্রত্যেক বারই ঘটেছিলো গভীর রাতে

আমি পড়াশুনো করে শুয়ে পড়তাম টেবিল ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে ,শুয়ে পরেও কিসের যেন একটা অস্বস্তি হতো কিছুতেই ঘুম আসতো না

মিনিট পাঁচেক এপাশ ওপাশ করার পরই অনুভব করতাম হালকা একটা আওয়াজ ভেসে আসছে

প্রথম টা মনে হতো খুব হালকা ভাবে টপ টপ করে জল পড়ার শব্দ পরে বুঝতে পারলাম ঘুঙরের আওয়াজ।

খুব আস্তে আস্তে ঘুঙুর পরে কেউ যেন নিচ থেকে ছাদে উঠে আসছে

তবে শুধু যে এই আওয়াজ ই শুনতাম তা নয় আরেকটা জিনিসও আমার অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে তুলেছিল 

একটা গন্ধ

খুব হালকা অথচ সুন্দর একটা গন্ধ

তবে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালাতেই সব চুপ কোনো ঘুঙুরের আওয়াজ নেই গন্ধ নেই 

সব আগের মতন যেমন ছিল তেমন l

প্রথম দিন আওয়াজ আর গন্ধ ছিল একেবারেই  মৃদু। খুব সতর্ক হয়ে কান পাতলে তবেই শোনা যাবে।দ্বিতীয় দিন একটু স্পষ্ট আর তৃতীয় দিন অনেকটাই স্পষ্ট।

অমিত দা সন্দেহ করেছিল আমার অডিটোরি হ্যালুসিনেশন হচ্ছে তাই আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল। স্নায়ু শান্ত করার জন্য।

দিন দুয়েক আমি সত্যিই কোনো ঘুঙুরের আওয়াজ বা গন্ধ পাইনি কিন্তু দুদিন পর যে ঘটনাটা ঘটলো সেটা আরো সাংঘাতিক।

আমি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেবিলের উপর মাথা রেখে। ঘুম ভাঙতেই টেবিলের উপর রাখা ডিজিটাল ক্লক টা দেখলাম। রাত দুটো । 

টেবিল ল্যাম্প টা নিভিয়ে বিছানায় এসে শুলাম।

 কিচুক্ষন পরই মনে হলো এই ঘরে যেন আমি ছাড়াও আরো একজন আছে ।ধড়মড় করে উঠে বসতেই দেখি বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে আর হওয়ার দাপটে জানলার পাল্লা গুলো খুলে গেছে। হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাঁট আসছে।

আমি উঠে জানলার ছিটকিনি টা আটকে দিলাম।







প্রচুর জল তেষ্টা পেয়েছে জল খেতে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম।দরজার উপরের অংশ টা ঘষা কাঁচের বাইরে টা আবছা আবছা দেখা যায়। যা দেখলাম পিলে চমকে গেল।ঘষা কাঁচের ভিতর দিয়ে একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে। ঝাপসা, কেউ যেন কাঁচের বাইরে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। একটি কিশোরীর মেয়ের ছায়া বলে মনে হলো।

ঘষা কাঁচের ভিতর দিয়েও মনে হলো যেন মেয়েটা তার নিস্পলক দৃষ্টি দিয়ে আমাকে দেখছে।  ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছি মেয়েটা যেন তাল দিচ্ছে।

ছায়া টা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে লাগলো।ভয়ে আমার শরীরের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে গেলছায়া টা মিলিয়ে যেতেই সারা ঘরে সুগন্ধি আতরের নেশাতুর সেই গন্ধটা ছড়িয়ে গেল। স্পষ্ট শুনলাম আবার ঘুঙুরের আওয়াজ। ছাদের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে যাচ্ছেআমি ভয়ে কাঠ হটাৎ কানের কাছে একটা কিশোরী কণ্ঠ ফিস ফিস করে বলে উঠলো "আমি এসে গেছি চলো এবার আমরা পালিয়ে যাই।"

মুহূর্তের মধ্যে আমি জ্ঞান হারালাম।

পরদিন মিসেস ডেনজংপাকে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা জানালাম। উনি বললেন চিলেকোঠা ঘরটা করার পর নাকি কোনো পুজো আচ্চা হয়নি । উনি খুব বিচক্ষণ এক বৌদ্ধ লামা কে ডেকে পাঠালেন । পর পর তিন দিন বৌদ্ধ লামা তার  শিষ্যদের নিয়ে  মন্ত্র পাঠ করে হাড়ের বাঁশি বাজিয়ে নানা রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান করলেন। ছাদের চার কোনায় তিব্বতি ভাষায় মন্ত্র লেখা ফেস্টুন টাঙিয়ে দিলেন। সে গুলো হওয়ায় উড়তে থাকলোএই তিন দিন কিন্তু কিছুই ঘটলো না। আমাকে সেই বিচক্ষণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কিন্তু আমার ঘরের জানলা টা কে পাকাপাকি ভাবে সিল করতে অনুরোধ করলেন। আমি রাজি হলাম না বললাম বন্ধ করে রাখবো। 

সাত দিন নির্বিঘ্নে কাটলো।অমিত দা ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেছিল।ঘুম টা বেশিই হচ্ছিল তবে বিড়ি সিগেরেট কফি কোনোটাই কম হয়নি।


এ কদিন জানলাটা বন্ধই রেখেছিলামএকদিন একটু বৃষ্টি বাদলা হচ্ছে আমি কলেজ থেকে ফিরে লক্ষ করলাম জানলার ছিটকিনি টা আলগা হয়ে গেছে। রাত বাড়তেই ঝড় জল বাড়তে লাগলো আর হটাৎ দেখলাম একটা খুট করে আওয়াজ করে ছিটকিনি টা খুলে মেঝের উপর পড়লো আর তখনই দড়াম করে জানলা টা গেল খুলে।মাটি থেকে ছিটকিনি টা তুলে দেখি একদম ভেঙে গেছে। এত ঝড় জলের রাতে পাহাড়ি রাস্তায় বেরোনো বিপজ্জনক তাই কোনো রকমে জানলার করা গুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলাম।

গভীর রাতে অন্ধকারে ঘুমের ঘোরে মনে হলো আমি যা দেখছি বা অনুভব করছি সেটা সপ্ন না বাস্তব কিছুতেই বুঝতে পারছি না

আস্তে আস্তে ঘুম আসছে তন্দ্রায় ঢলে পড়বো এমন সময় নাকে এসে ঢুকলো সেই সুগন্ধি নেশাতুর গন্ধ কি যেন একটা আদিম উন্মুক্ত আনন্দ আছে গন্ধটার মধ্যে। আমি চোখ মেললাম।


মনে হলো ঘরে কিছুক্ষন আগে থেকে একটা ছোট্ট জিনিস ঘটে যাচ্ছে আর আমি খেয়ালই করিনি।

সারা ঘর ময় একটা খুব খুব ছোট আলো এদিক ওদিক নেচে বেড়াচ্ছে। একবার এই দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল আবার আমার টেবিলের উপর কখন দরজার ঘষা কাঁচটার উপর কখনো বড় জানলার উপর। ভালো করে ঠাওর করতেই দেখি একটা ছোট প্রজাপতির অবয়ব ।একটা নির্দিষ্ট ছন্দে ঘর ময় ঘুরছে।

মনে হলো ঘুঙুর গন্ধ নিয়ে আসা অতৃপ্ত কিশোরীর আত্মা যে আমাকে নিয়ে পালাতে চায় সেই কিছু বলতে চাইছে এই প্রজাপতির ছন্দ দিয়ে কিন্তু সেটা কি?

প্রজাপতির অবয়ব টা বাথরুমের সামনে লাগানো আয়নার কাছে এসে বেশ জোরে জোরে আয়না টা ঘিরে পাক খেতে লাগলো। তারপর আয়নার উপর গিয়ে বসল। দেখলাম আয়নার ভিতর আমার মতই একজন দাঁড়িয়ে আছেঅন্ধকার ঘরে আয়নার ভিতর যে মানুষ টা কে দেখা যাচ্ছে সে আমি নই আমার প্রতিবিম্ব ও নয়অন্য কোনো মানুষ একটা কিশোর ছেলের ছায়া

কানের কাছে ফিস ফিস "চলো পালাই"বড় জানলার এক দিকে ছোট্ট রান্না করার জায়গা।ঘর যদিও অন্ধকার বাইরে থেকে কিছু টা আলো এসে পড়েছে। কিচেন নাইফ টা হাতে তুলে নিলাম।দেখলাম প্রজাপতি আলো টা আমার বা কব্জি তে এসে বসেছে। কানে আবার সেই ফিস ফিস শুনলামদেরি করছো কেন চলো পালাইআমি কিচেন নাইফ টা বাম হাতের কব্জির উপর নিয়ে এলাম। সুন্দর আতরের গন্ধ টা যেন আমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। শরীর অনেক হালকা হয়ে আসছে মাথা টা ভার আমি কিচেন নাইফ টা দিয়ে বাঁ কব্জির শিরা কাটতে যাবো হটাৎ এক মুহূর্তের জন্য সম্ভীত ফিরে এলামএ আমি কি করতে চলেছি। কিচেন নাইফ টা ছুড়ে মেঝেতে ফেলে দিলাম। মনে হলো আয়নার ভিতর থেকে কেউ যেন আমাকে দেখছে।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে কোনোমতে হিচড়ে বিছানার কাছে এনে ফেললাম। টেবিল ল্যাম্পের আলো টা জালিযে দিলাম। আলো জললো।এখন আর কোনো গন্ধ নেই কোনো আওয়াজ নেই প্রজাপতি আলো নেই। ঘর টা গুমোট হয়ে গেছে আমি বড় জানলাটা খুলে দিলাম তবে কোনো অস্বস্তি হলো না।বাইরে একটু একটু বৃষ্টি পড়ছে মনে হলোসারা রাত আমি ঠায় বসে রইলাম। সিগেরেট সব শেষ হয়ে গেল। বিড়ির এক বান্ডিল শেষ হতে হতে ভোরের হালকা আলো ফুটলো।

 আমি ঠিক করলাম ডক্টরস হোস্টেল পুনরায় ফিরে যাব

এই অভিশপ্ত জায়গায় থাকলে আমি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবো।প্রচন্ড রাগ হলো তিব্বতি মালকিন মিসেস ডেনজংপার উপর।

আমি নিচে নেমে গেলাম ওনার সাথে দেখা করতে।

উনি আমায় বৈঠক খানায় বসালেনআমি গতকাল কের ঘটনা ওনাকে বেশ ক্ষোভের সাথেই বললাম। বললাম ওনার চিলেকোঠার ঘর অভিশপ্ত উনি আমাকে থাকার আগে সে কথা না বলে খুব অন্যায় করেছেন।

উনি আমাকে বসিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।একটু পর ফিরে এলেন।খুব সম্ভব উনি কাউকে ফোন করে এলেন।

ভদ্রমহিলার চোখ কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। খুব অপ্রতিভ হয়ে সামনের ড্রয়ার টেনে খুললেন। একটা ছোট   স্ক্রু ড্রাইভার আর একটা আধ ইঞ্চি মাপের ছোট চাবি বার করলেন। তার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "উপরে চলুন ডাক্তার বাবু"

মিসেস ডেনজংপা আর আমি আবার চিলেকোঠার ঘরটায় ঢুকলাম। উনি সোজা বাথরুমের সামনে আয়নাটার কাছে চলে গেলেন।ছোট স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে আয়নার চার দিকের চারটে স্ক্রু খুলে ফেললেন


একটু চার দিতেই আয়না টা দেয়াল থেকে খুলে এলো। আয়নার নিচে একটা ছোট্ট চৌকো ফ্রেম। তলার দিকে ছোট একটা কি হোল।

মিসেস  ডেনজংপা ছোট আধ ইঞ্চি চাবিটা দিয়ে ফ্রেমের কি হোলে ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে দিলেন।

ফ্রেম টায় আলতো চাপ দিতেই ঠিক একটা দরজার মতো খুলে গেল। ছোট্ট গোপন সিন্দুক।ভিতরে কিচ্ছু নেই শুধু একটা কালো ফিল্মের কৌটো ছাড়া। ফিল্মের কৌটো টা খুললেন মিসেস ডেনজংপা।দেখতে পেলাম সেই অদ্ভুত সুন্দর জিনিষটা।মিসেস ডেনজংপা ওটা এবার তালুর উপর নিয়েছেন।বড় জানলা দিয়ে রৌদ্র এসে পড়েছে। রোদ্রের কনায় উজ্জীবিত ছোট্ট একটি প্রজাপতির কারুকার্য করা আংটি। সোনার জল আর রঙিন কাঁচ দিয়ে তৈরি ছোট্ট প্রজাপতির ডানা গুলো। একটু ছোট আংটি টা বোঝাই যাচ্ছে কোনো কিশোরীর আঙুলের জন্য তৈরি।

দু চোখ আবার ছল ছল করে উঠলো মিসেস ডেনজংপাবললেন " নীচে চলুন ডক্টর সাব আপনাকে সব বলছি।"


নীচে এসে দেখি মিসেস ডেনজংপার সেই তিব্বতি ধর্ম গুরু বিচক্ষণ বৌদ্ধ লামা সন্ন্যাসী ও এসে হাজির হয়েছেন। বুঝলাম আমাকে বসিয়ে রেখে মিসেস ডেনজংপা এনাকেই ফোন করতে গিয়েছিলেন।

বসার ঘরে আমরা তিন জন বসলাম।


মিসেস   ডেনজংপা  একজন ডিভোর্সি। একমাত্র ছেলে শিরিং কে নিয়েই বেশ আনন্দে ছিলেন কিন্তু বছর দুয়েক হলো তিনি ছেলে কে হারান। শিরিং এর মৃত্যু কোনো রোগ বা দুর্ঘটনায় হয়নি। শিরিং আত্মহত্যা করে। এবং সেটি করে উপরের চিলেকোঠার ঘরটা থেকে গভীর খাঁদে লাফ দিয়ে। প্রচন্ড অবসাদে ভুগছিল শিরিং এক বছর ধরে।জীবনে একদম প্রথম প্রেমের প্রখরতা জীবন যৌবনের থেকেও প্রখর উদ্যম আর উন্মত্ত।ঠিক ষোল বছর বয়সে একটি জিপসি বা বানজারা কিশোরীর প্রেমে পড়ে শিরিং। কিশোরী টির নাম ছিল রানী।

বছর তিনেক আগে বানজারা দের একটি দল সিকিমে আসে । ওরা তাদং এর পুরোনো আস্তাবল গুলো তে আশ্রয় নেয়।

একদিন সন্ধ্যেবেলা শিরিং বন্ধু বান্ধব নিয়ে ওদের ওখানে বানজারা দের খেলা দেখতে যায়। সেখানেই রানীর সাথে শেরিং এর প্রথম দেখা হয়।

সব কিছু কে উপেক্ষা করে পাগলের মত ভালোবাসতে থাকে দুজন দুজন কে উন্মাদনার ও উত্তেজনার চরম শিখরে পৌঁছে যায় দুজনের প্রতি দুজনের আকর্ষণ।

কিন্তু বিধাতার কি করুন পরিহাস। তাদং এর উপর আছড়ে পড়ে একটি বিধ্বংসী ঝড় এবং শুধু মাত্র একটি ধস পরে তাদং এর ওই পুরোনো আস্তাবল ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পুরো বানজারা দের দল টাই এক নিমেষে শেষ।

বি এস এফ যখন ডেড বডি গুলো মাটি খুঁড়ে বের করছিল তখন রানী কে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল শিরিং।তারপর থেকেই আস্তে আস্তে অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পড়েছিল শিরিং। গত বছরই চিলেকোঠার ঘরটা থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যা করে সে ।

এতক্ষন রোদ ছিল বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

রানীর মৃত্যুর ঠিক আগের দিনই তাদং বাজার থেকে রানীর জন্যে ওই সস্তা আংটি টা কিনেছিল শিরিং । কিছুটা হুজুগের বশেই।

অবসাদে ভেঙে পড়া শিরিং তার মা কে সব কথা জানিয়েছিল।

অবসাদে শিরিং মাদক আসক্ত হয়ে পড়ে।

শিরিং কে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।এক রোখা শিরিং ওই চিলেকোঠার ঘর টা ছাড়া আর কোথাও থাকতে রাজি হয় না কারণ ও বিশ্বাস ছিল খাঁদের ধারের বড় জানলা দিয়ে প্রতি রাতেই ওর সাথে দেখা করতে আসে রানী। ওকে ভালোবাসতে আসে রানী।

শিরিং সব সময় ওই প্রজাপতি আংটি টা নিজের কাছেই রাখতো। রানী নাকি নিজে আসবে শিরিং এর থেকে ওই আংটি টা নিতে।

শিরিং আত্মহত্যার করার পর ওই আংটিটা নীচে একবার নিয়ে এসেছিলেন মিসেস ডেনজংপা।আংটিটা নীচে আসার দু দিনের মইধ্যে প্রচন্ড জ্বরে পড়েন মিসেস ডেনজংপাশরীর একদম ভেঙে যায়ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকেন।

উনি ঠিক করেন আংটিটা ফেলে দেবেন কিন্তু ওনার ধর্ম গুরু এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী টি ওনাকে বারণ করেন।

এতক্ষন চুপ করে বসেছিলেন বৌদ্ধ বিদগ্ধ লামা সন্ন্যাসী।ওনার প্রসঙ্গ আসতেই উনি মুচকি হাসলেন।আমার উদ্দেশ্যে বলেন"ডাক্তার বাবু আপনি একজন খুব ভালো মনের মানুষ আপনার মধ্যে মায়া মমতা বোধ অনেকের থেকে অনেক বেশি তাই আপনাকে বলছি। ভয় না পেয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় শুনুন। শিরিং এর মা যখন আমায়আংটি টা ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলেন আমি সেদিনই ওনাকে বারণ করি।

আমিই বলি ওটাকে আয়নার পিছনে একটি গোপন সিন্দুক বানিয়ে ওটাকে রেখে দিতে।"

ঘটনাটা শুনে আমার এখন ঠিক ভয় করছে না কিন্তু একটা অস্বস্তি হচ্ছেআমি সন্ন্যাসী কে জিজ্ঞেস করলামকেন উনি এরকম করে ওই আংটি টা কে রাখতে বললেন।উনি বললেন

"আমি বুঝতে পারছি মৃত্যুর পর শিরিং আর রানী দুজন দুজনের দেখা পায়নি।আত্মা যখন শরীর ছেড়ে দেয় সে মহা বিশ্বে মহা কালের কাছে বিলীন হয়ে যায়। সেই মহাকালে অথৈ সমুদ্র লক্ষ লক্ষ আকাশ গঙ্গা তার মধ্যে সময়ের বেড়াজালে আটকে থাকা সহস্র ব্রহ্মান্ড।কিন্তু বিরোহি অতৃপ্ত আত্মা নিজের দোসর কে পাওয়ার জন্য এই মহা বিশ্বে মহা কালের অসীম সমুদ্রে দিক বিদিক ঘুরতে থাকে। হাজার হাজার ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে সময়ের ভুলভুলাইয়া তে দুজন দুজন কে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় কিন্তু সব সময় দেখা হয়ে ওঠে না।

শিরিং এর ওই সস্তা আংটি রানীর আত্মা খুঁজে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর পর থেকে।ওটা হয়তো আমাদের কাছে সস্তা একটা আংটি কিন্তু রানীর কাছে ওটাই অমূল্য।যার উপরে দোসরের পরশ লেগে আছে তা তো বিশ্বের সব থেকে দামি জিনিষের চেও দামি।তবে এই প্রজাপতি আংটি টা সবাই রানীর আত্মা কে দিতে পারবে না। খুব ভালো উদার মানুষই পারবে রানীর আমানত রানী কে ফিরিয়ে দিতে।নিচে রাখলে সবার অমঙ্গল হতো তাই একটা গোপন সিন্দুক বানিয়ে ওটা চিলেকোঠার ঘরেই রাখতে বললাম।"


লামা সন্ন্যাসী পরিষ্কার বাঙলাতেই বলছিলেন। শুনতে শুনতে কেমন ঘোর এসে যাচ্ছিল।বললাম "ঠিক আছে আপনারা যা করার করুন আমি ঘর টা ছেড়ে দিচ্ছি।" বলেই উঠে পড়লামউঠতেই আমার হাত টা খপ করে ধরে ফেললেন সন্ন্যাসী।বললেন"আপনার মত খুব এতো দয়ালু আর পবিত্র মনের মানুষই খুব কম আছে, এই কাজ শুধু আপনিই করতে পারবেন, আপনি আমাদের নিরাশ করবেন না।

আমি বললাম " আপনারা আমাকে নিয়ে পড়লেন কেন"খেয়াল করলাম মিসেস ডেনজংপা ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন।

লামা আমাকে হাত ধরে আবার বসিয়ে দিয়েছেন।

"ডাক্তার বাবু আপনি একদম অন্য ধরনের মানুষ আপনার আত্মা ক্ষমাশীল মঙ্গলময় সেই জন্যই আপনি চিকিৎসক হতে পেরেছেন। কত লোকের কত উপকার করেছেন । আপনার উপর অসীমের আশীর্বাদ আছে আপনি রানী কে একটু সাহায্য করুন।ও আপনার কাছেই আসছে আর কারো কাছে আসছে না ও আপনাকে শিরিং ভাবছে।আপনি ওকে কোনোভাবে আংটি টা দিয়ে দিন ব্যাস।"

"এটা করতে গিয়ে আমার জন্যে আমার যদি কোনো বিপদ হয়।"এবার সন্ন্যাসী লামা অভয় দিলেন

"আমি দরজার বাইরেই থাকবো। কোনো অঘটন হলেই আপনাকে সাহায্য করবো।"

লামার কথায় নয় মিসেস ডেনজংপার কান্না দেখে রাজি হয়ে গেলাম।

তবে এটা ঠিক করলাম যে রানীর অতৃপ্ত আত্মা কে ওই আংটি দেয়ার পরের দিনই আমি হোস্টেলে ফিরে যাব।

সেদিন রাত্রে বৌদ্ধ লামা তার দল বল নিয়ে নিচে বসে রইল আর আমি সব আলো নিভিয়ে খাঁদের ধারের বড় জানলা টা খুলে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন তার দেখা পাবো।

রাত তখন প্রায় দুটো। মুষল ধারায় বৃষ্টি হতে লাগলো। আমি বড় জানলার সামনেই বসে বসে ঢুলছিলাম। উঠে গিয়ে খাটে শুলাম। একটা বিড়ি ধরাব বলে জামার পকেট হাতরাচ্ছি

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সামনের বড় জানলা টা দিয়ে একটা দমকা হওয়া ঘরে ঢুকে গেল।হওয়ার সাথে আরো একরাশ সেই পাগল করা গন্ধ ঢুকে পড়ল ঘরের ভিতর। আমার সারা শরীরে উপর দিয়ে বয়ে গেল ঠান্ডা অথচ স্নিগ্ধ একটা হওয়ার প্রলেপ। সুগন্ধি আতর ছড়িয়ে পড়লো আমার শরীরের কানায় কানায়। শব্দ পাচ্ছি ঘুঙুরের শব্দ তবে এবার সিঁড়ির দিক টায় নয়সামনের জানলার ওপার থেকে। প্রজাপতির ছোট্ট অবয়ব টা আবার এসেছে সেটা এবার জানলা দিয়ে বেরিয়ে চাঁদের আলোয় মিশে গেল। গন্ধ টা যেন আমাকে পেয়ে বসলো, আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো আবার জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে সামনের তিনটে পাহাড় নিচের ভ্যালি।মনে হলো আয়নার ভিতরের কিশোরটি যেন আমায় দেখছে। আয়নার দিকে চোখ ঘোরাতে দেখলাম আয়নার ভিতর আমার প্রতিবিম্ব। চাঁদের আলোয় আবছা আমি।


এবার জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে নীচে তাকালামআমার হাতের উপর দেখলাম প্রজাপতির মত দেখতে ছোট্ট আলো টা এসে পড়েছে।


সুগন্ধি আতর ঠান্ডা হওয়া হয়ে আমার ঘাড়ের কাছে মিষ্টি নিশ্বাস ফেলছে আমি যেন আস্তে আস্তে বশীভূত হয়ে পড়ছি।চাঁদের আলোর এই পাহাড় নদী গন্ধ ঘুঙুর সব যেন আমারই অপেক্ষায় বসে আছে। প্রেমিকার মতো আমাকে আলিঙ্গন করতে চাইছে।আমি জানলার উপর ঝুকে পড়লাম

অনেক অনেক অনেক নীচে চাঁদের আলোয় রুপোলি রঙ্গীত নদী বয়ে চলেছে ঘুঙুর গন্ধ চাঁদের আলো আর নিচের রুপোলি নদী যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সাথে আছে অনন্ত প্রজাপতি।

প্রকৃতি যখন কোনো মানুষ কে নিজের দিকে টানে সে তার সর্বস্ব দিয়ে মানুষটিকে আকৃষ্ট করতে চায়। প্রকৃতি যেন আমার সমস্ত কোষ গুলো কে আর তার ভিতর সমস্ত অনু কণা কে বশীভূত করে তার দিকে ধাবিত করছে। যেখানে নিজের শরীরে প্রতিটা রক্ত বিন্দু বশীভূত সেখানে জোয়ারের বিপরীতে সাতরাবো কি করে।


কিশোরীর ফিস ফিস খুব স্পষ্ট এবারচলো পালাই চলো পালাই


ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছা হলো।কিন্তু আমি ঝাঁপ দিলাম না । হাত টা জানলার সামনে মেলে দিলাম আমার হাতের তালু তে রাখা ছোট প্রজাপতি আংটি টা।

ঘরের মধ্যে যেন বিদ্যুৎ খেলে জেলা।একটা পাগলা হওয়া আমার হাত থেকে আংটি টা নিমেষের মধ্যে নিয়ে নিল।বাইরে শুনলাম একটি কিশোরীর উল্লাসের পৈশাচিক আনন্দের হাসি।বানজারা দের প্রেমের কোনো লাগাম থাকেনা। রানীর আত্মা যেন তার হারানো প্রেম শিরিং কে নতুন করে আবিষ্কার করলো আজ।

জানলা থেকে হু হু করে হাওয়া আসতে লাগলোমনে হলো আমাকে কেউ বিছানায় আছড়ে ফেললো। আমার হাত দুটো দু পাশে কেউ চেপে ধরেছে। কোমড় থেকে নিচ অবধি অবশ হয়ে গেছে আমি নড়তে পারছি না সারা শরীর বেয়ে একটা ঠান্ডা স্নিগ্ধ হওয়া নেমে গেল কেউ যেন আমাকে ভালোবাসার অকুন্ঠ বৈভব দিয়ে চান করিয়ে দিচ্ছে।

আমি কোনো রকমে একটা হাত ছাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প টার সুইচ টিপে দিলাম কিন্তু আলো জললো না।ফিউস কেটে গেছে

মনে হলো কেউ আমার গলা টিপে ধরেছে মনে হলো এ যেন কোনো অভিসন্ধি নয়গভীর গোপন প্রেমে একরকম লুকোনো তীব্রতা আছে যা কতকটা যুদ্ধের মত দুজন দুজন কেই ভালোবাসা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দিতে চায়। দুজন দুজনের কাছ থেকেই ভালোবাসার সব কটা অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়।কেউ যেন আমায় কষ্ট দিয়ে ভালোবাসতে চাইছে।


বাইরে বিদ্যুৎ চমকালোওর আলোয় দেখলাম ছোট দুটো কঙ্কাল সার হাত আমার গলা টিপে ধরেছে আর বা হাতের অনামিকায় জ্বল জল করছে শিরিং এর সেই প্রজাপতি আংটি টা।

আমার দম বন্ধ হয়ে এলো।

সব অন্ধকার

মনে হলো কেউ বা কারা আমার সারা শরীর জলে ভিজিয়ে দিচ্ছে।চোখ মেলে চেয়ে দেখি সকাল হয়েছেবৌদ্ধ লামা আর মিসেস ডেনজংপা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। লামার শিষ্যরা একটা মগে করে আমার মুখে চোখে জল ছেটাচ্ছেন।বুঝলাম আমি এ যাত্রায় বেঁচে গেছি ।আজই হোস্টেলে ফিরবো।


রানীও তার ভালোবাসা হাসিল করে ফেলেছে।আমাদের কাছে যা একটা সামান্য সস্তা আংটি কিন্তু ওর কাছে ওটা চিরন্তন সত্য যা মহাবিশ্বের মহাকালের বিপুলতায় সময়ের কোন ভুলভুলাইয়া তে হারিয়ে গেছিলো। তার উল্লাসের উন্মাদনা ছিল একটু বিচিত্র রকম ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror