Somtirtha Ganguly

Classics Thriller

4.0  

Somtirtha Ganguly

Classics Thriller

ব্রাবন দ্বীপের রহস্য।

ব্রাবন দ্বীপের রহস্য।

17 mins
265



1আজ সকালেই এসে পৌঁছেছি ব্রাবন আইল্যান্ডে।

আসতে খুব ঝামেলা হয়নি। গ্রীন আইল্যান্ডের সাউথ কোস্ট অবধি ট্রেনেই এলাম তারপর লঞ্চ করে ব্রাবন দ্বীপ। আজ রাত টা দ্বীপের জঙ্গলে কাঠিয়ে কাল ভোরে আবার রওনা হবো। আমরা যাবো ব্রাবন দ্বীপের দক্ষিণ দিকে। আপাতত মিকা নদী ধরেই এগিয়ে যাবো এটাই ঠিক আছে।আমরা বলতে আমি আর তিঙ্গা। তিঙ্গা আমার এসিস্ট্যান্ট। ও একজন অকারা তাই আমার খুব সুবিধে হয়েছে। অকারারা হলো ব্রাবন আইল্যান্ডের আদিবাসী। এই দ্বীপে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অকারা দের গ্রাম।আমরা একটা অদ্ভুত উদ্দেশ্যে ব্রাবন দ্বীপে এসেছি। অদ্ভুত হলেও আমার কাছে রোমাঞ্চকর কিছু লাগেনি।বিভূতি সান্যাল নামে এক বাঙালি ভদ্রলোক এই ব্রাবন দ্বীপে আসেন বছর দুই আগে কিন্তু এখন একেবারেই বেপাত্তা। ভদ্রলোক এসেছিলেন হাঙ্গর নিয়ে রিসার্চ করতে । ব্রাবন দ্বীপের দক্ষিণে যে প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ তা পৃথিবীর সব থেকে ভয়াল ভয়ঙ্কর হাঙ্গর দের আস্তানা। মোট আটত্রিশ টি প্রজাতির হাঙ্গর আছে এই অঞ্চলে। হাঙ্গর দের এই বিপুল জলরাশির ভিতরে ছোট্ট একটা দ্বীপ আছে। এই দ্বীপে একটা টিলা সোজা উঠে গেছে। অকারারা এই টিলা টি কে বলে ভয়ের টিলা। টিলাটির পাশেই দেখা যায় অতি প্রাচীন জীর্ণ একটি ক্যাসেল। অনেকেরই বিশ্বাস বিভূতি বাবু ওই ক্যাসেলেই লুকিয়ে আছেন আর হাঙ্গর দের নিয়ে রিসার্চ চালাচ্ছেন।আমরা এসেছি বিভূতি বাবু কে খুঁজে বের করতে।তবে আমরাই প্রথম নয় গত বছর টম সিমান্স নামে এক মার্কিনি ভূপর্যটক আসেন বিভূতি বাবুর খোঁজে কিন্তু সেই সীমান্স ও এখন বেপাত্তা।


পরের দিন ভোরে যখন মিকা নদীর তীর ধরে আমি আর তিঙ্গা যাচ্ছি তখন অকারা দের একটি গ্রাম দেখতে পেলাম। আখতারুল সাহেবের কাছে শুনেছিলাম মিকা নদীর পাড়ের গ্রাম গুলো তে অকারা দের সাথে বেশ খাতির হয়ে গিয়েছিল বিভূতি বাবুর। ওনাকে লেখা চিঠি তে বিভূতি বাবু জানিয়ে ছিলেন।( আখতারুল সাহেব হলেন গ্রীন আইল্যান্ডের পুলিশ চিফ বিভূতি বাবুকে খোঁজার ব্যাপারে উনিই আমাকে নিযুক্ত করেন।)

হটাৎ মনে হলো একবার এই গ্রামে ঢুকে বিভূতি বাবুর ব্যাপারে যদি কিছু খোঁজ খবর পাওয়া যায় তো মন্দ কিতিঙ্গা কে নিয়ে চললাম ওই গ্রাম টার দিকে।

বেশ ভালো ভাব জমে গেল গ্রামের সরদার কাবুলির সাথে বললেন বিভূতি বাবু ওনাদের গ্রামে বেশ কদিন ছিলেন । প্রায় উনি অকারা ছেলেদের নিয়ে সমুদ্রে যেতেন হাঙ্গর দেখতেতবে বিভূতি বাবুর একটি বিশেষ জাতির হাঙ্গরের প্রতি আগ্রহ ছিল বেশিপ্রশান্ত সাগরের এই জায়গায় এক অতি বিরল প্রজাতির হাঙ্গর পাওয়া যায় । পৃথিবীর আর কোথাও এরকম হাঙ্গর পাওয়া যায় বলে কেউ শোনে নি।সবুজ রঙের বড় হাঙ্গর অকারা দের ভাষায় এই হাঙ্গর গুলো কে ডাকা হয় তাগোরা বলে। অন্য হাঙ্গর দের তুলনায় এই তাগোরা গুলো সাংঘাতিক ধূর্ত আর হিংস্র। এদের প্রিয় খাদ্য জ্যান্ত মানুষ। মানুষ পেলে এরা আর কিছুই চায় না। 

এক সময় সমুদ্র থেকে অকারা দের প্রচুর জেলে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসতো না সবাই জানত ওদের তাগোরা তে নিয়ে গেছে।অসম্ভব ধূর্ত এরা এদের শিকার করা যায় না 


শুধু পঞ্চাশ কি ষাট টাই আছে মাত্র এই সমুদ্রে।

বিভূতি বাবু এই তাগোরা নিয়েই খোঁজ খবর করছিলেন। তাগোরা নিয়ে অকারাদের পুঁথি পত্র ঘাটা ঘাঁটি করছিলেন।

কিন্তু বিভূতি বাবু এই তাগোরা দের নিয়ে পড়লেন কেন। ভাবলাম উনি হাঙ্গর নিয়ে গবেষণা করছেন স্বভাবতই বিরল প্রজাতির হাঙ্গরের ইন্টারেস্ট তো থাকবেই।

তবে অকারা দের এই গ্রামে এসে বিভূতি বাবু আরো একটা জিনিস নিয়ে চর্চায় মেতে উঠেছিলেন এবং সেটা একেবারেই ভিন্ন বিষয়।অকারাদের মধ্যে কালা জাদু তন্ত্র সাধনার খুব চল আছে। অনেকটা ভুডুইজমের মতো। এই গ্রামে থাকা কালীন মাঝে মধ্যেই দুই তন্ত্র স্বাধিকার কাছে যেতেন বিভূতি বাবু। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বিভূতি বাবু এই গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার দিন দশ পর ওই দুই তন্ত্র স্বাধিকাও হওয়া হয়ে যায়।

টম সিমান্স এই গ্রামে এসেছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করাতে কাবুলি মাথা নেড়ে না জানালেন।


কাবুলি আমাদের দুপুরে খেয়ে যেতে বললেন।দারুন আয়োজন করা হয়েছে আমরা সবে খেতে বসেছি অমনি এক বৃদ্ধ অকারা এসে সরদার কাবুলি কে কানে ফিস ফিস করে কি একটা বললেন।কাবুলি যেন কিরকম ভেঙে পড়লআমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে। অকারা সরদার কাবুলি যা বললো তাতে আমার হাড় হিম হয়ে গেল।

কয়েক মাস থেকেই গ্রাম থেকে দুজন করে তরুণ অকারা নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে প্রথম অমাবস্যার দিনটি তে। গত মাসে হয়েছে তার আগের মাসে হয়েছে আর এই মাসে আজ হলো সেই প্রথম অমাবস্যা। কেউ কিছুই দেখেনি শুধু সকালে উঠে পাওয়া যাচ্ছে না তরুণ দুটিকে। বুড়ো অকারা বললেন কোনো কারণে এরা এই রাতগুলোতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল কিন্তু আর ফিরে আসে নি।

কাবুলি আমাদের ভীষণ করে অনুরোধ করলেন এই রাত টা থেকে ব্যাপার টা একটু দেখতে।আমি জাত শিকারি আমার ব্যাগ থেকে শট গান টা বের করে রেডি করে নিলামগ্রাম টার একেবারে মধ্য বর্তি এলাকায় রয়েছে একটা বিশাল ওয়াচ টাওয়ার। সবাই বলে ব্রাবন টাওয়ার্স। এই ব্রাবন টাইয়ার্সের উপরে আমি তিঙ্গা আর অকারা সরদার কাবুলি উঠে পড়লাম। ওয়াচ টাওয়ার এর ছাদ থেকে নাইট ভিশন দূরবীন দিয়ে দেখতে থাকলাম।রাত যখন প্রায় দুটো তখন দক্ষিণ দিকের আকাশে দেখলাম কি যেন উড়ে উড়ে আসছে। নাইট ভিশন দূরবীন তাক করতেই দেখলাম বিশাল সাইজের দুটো ঈগল পাখি উড়ে আসছে গ্রাম টার দিকে। গ্রাম টাকে একটা পাক দিয়েই দুটো ঈগল নেমে গেল বসতির দিকে। মুহূর্তের মধ্যে কিছু একটা ছো মেরে উপরে উড়ে এলো আবার। দূরবীন দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম দুটি অকারা তরুণ কে তুলে উড়ে যাচ্ছে ঈগল গুলো। তরুণ দুটি প্রাণ পন নিজেদের ছাড়াবার চেষ্টা করছে কিন্তু বিশাল ঈগল গুলোর ট্যালন চেপে বসেছে ওদের ঘাড়ে। আমি দেরি না করে শট গান বার করে গুলি চালাতে যাবো। কাবুলি আমাকে পিছন থেকে জাপটে ধরলো "না না ঈগল দের মারবেন না।"আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেনতাতে কাবুলি বললো ঈগল রুপি ওদের এক ইষ্ট দেবতা আছে তাই ঈগল মারা অমঙ্গল।কিন্তু এভাবে তো ঈগল গুলো কে ছেড়ে দেয়া যায়না ওরা কোথায় অকারা তরুণ দের নিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেখা দরকার। আমরা তিনজনেই নীচে নেমে এসে ঘোড়া ছুটিয়ে বিশাল ঈগল গুলো কে অনুসরণ করতে লাগলাম।সমুদ্র পাড়ের কাছে চলে এসেছি দেখলাম ঈগল গুলো অকারা তরুণদের নিয়ে ভয়ের টিলার দিকে চলে যাচ্ছে।

ভয়ের টিলার পাশেই সেই জীর্ণ ক্যাসেলআমি সময় নষ্ট না করে একটা ভেলায় তিঙ্গা কে নিয়ে ভেসে পড়লাম। এই রহস্যের উদঘাটন করতেই হবেকাবুলি বললো কালই ও দল বল নিয়ে ক্যাসেলে হাজির হচ্ছে। ও পাড় থেকে আমাদের টাটা করতে লাগলো।

এখন জোয়ার আছে আমদের বইতে হচ্ছে না এমনি এমনিই ভয়ের টিলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে যাচ্ছি আর ভাবছি এই জলেই কত বিভৎস প্রজাতির হাঙ্গর ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্ধকার সমুদ্রে মাঝে সাদা ফস ফরাস আরো যেন রহস্য বাড়িয়ে তুলছে

ভাসতে ভাসতে কেমন তন্দ্রা এসে গেছিলো। হটাৎ তিঙ্গা আমাকে ডেকে তুললো"সাহেব দেখো ওটা কি"দেখি আমাদের ভেলার সাথে সাথে চলছে একটা সবুজ আলো।আমি দেখতেই আলো টা যেন সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে গেলো।"জুমবা"বলে উঠলো তিঙ্গা।


2

কোন ঘটনা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা।ভয়ের টিলায় পৌঁছে এই পুরোনো জীর্ণ ক্যাসেলে যে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে সব কটাই সাংঘাতিক রোমাঞ্চকর। বিভূতি ভূষণ সান্যাল যে কি ভয়ঙ্কর লোক তা কেউ কোনো দিন লিখে বোঝাতে পারবে না। এমন হিংস্র আর নিষ্ঠুর লোক খুব কম মানুষই দেখেছেন। হাঙ্গরের ইন্টারেস্ট যে আসলে অসৎ উপায়ে রোজগারের লোভ সেটা অনেকেই জানতে পারেনি। খুব প্লান মাফিক এগিয়েছেন বিভূতি বাবু হাতিয়ার করেছেন অকারা তরুণ দের অকারা দুই তন্ত্র সাধিকা দের আর হাতিয়ার করেছেন অকারাদের এক মাত্র আশ্চর্য বশিকরণ তন্ত্র "তামশিরা।"

আমি মোটামুটি ঘটনা গুলো যেমন ঘটেছে পর পর বলে যাচ্ছি।

প্রায় ভোর চারটে নাগাদ আমরা ভয়ের টিলার নীচে পৌঁছলাম। জোয়ার তখন অনেকটাই খিন কিচ্ছুক্ষন পর ভাটা শুরু হবে।আমাদের অনেকটাই উপরে উঠতে হবে হয়তো সারাদিন লেগে যাবে। আমাদের সাথে খাবার ছিল আমি আর তিঙ্গা খাওয়া দাওয়া করে টিলার উপর উঠতে শুরু করলাম। 

প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ ভয়ের টিলার উপরে উঠে সেই জীর্ণ ক্যাসেল টা কে দেখতে পেলামসিবাস্তিন ক্যাসেল।জর্জ সিবাস্তিন বলে একজন ধন কুবের ব্যবসায়ী তৈরি করেছিলেন ক্যাসেল টি।এখন একদম পরিত্যক্ত কেউ থাকেন না।


সিবাস্তিন ক্যাসেলের পাশে একটা বিশাল বড় ডোম দেখলাম মনে হলো কোনো অডিটোরিয়াম গোছের কিছু হবে। একটা ঢালু চাতাল ক্যাসেল আর ডোম টা কে কানেক্ট করছে।বিকেল পরে এখন সন্ধ্যে দেখলাম চাতাল টার উপর কি যেন নড়ছে চড়ছে।চোখে দূরবীন দিতেই দেখলাম দু জন অকারা মহিলা একটি ত্রিকোণ কাছের বাক্স চাতাল টার উপর টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন।তিঙ্গা কে দেখাতেই ও বললো সাহেব মনে হচ্ছে এরাই সেই দুই তন্ত্র সাধিকা বিভূতি বাবু যাদের থেকে তন্ত্র শিখেছেন। ওরা ডোম এর দিকে ত্রিকোণ যেই যন্ত্র টা নিয়ে যাচ্ছে ওটা হচ্ছে তামশিরা যন্ত্র।


তিঙ্গার কাছেই তামশিরা জিনিসটা কি সেটা জানলাম। ওর বাবা কাকারাও এক সময় তামশিরা করতো।অকারা দের মধ্যে অনেক রকম বশিকরণ পদ্ধতি আছে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তামশিরা এখানে শুধু মানুষ কেন পৃথিবীর যে কোনো জন্তু জানোয়ার দেরও তামশিরা বা বশিকরণ করা যায়।

"হাঙ্গর কে করা যায় বশীভূত""যায়""ঈগল কে""যায়"তিঙ্গা হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝে গেছে আমি কি ভাবছি।"আর ওই যন্ত্র টাত্রিকোণ কাঁচের যেটা"

"ওটাই তো তামিশিরা করার যন্ত্র"তিঙ্গা আমাকে বিস্তারিত বলতে লাগলো।

কাউকে বশে আনতে গেলে একটি হলুদ কাপড়ে সারা শরীর আগা গোড়া ঢেকে ওই কাঁচের ত্রিকোণ ঘরে ঢুকে বশ করার মন্ত্র জপ করতে হয় এবং যেই মানুষ বা প্রাণীটি কে বশ করতে চাইছি তার কথা ভাবতে হয়। অভিজ্ঞতা থাকলে মিনিট দশের মধ্যেই বশী করণ সম্ভব

অকারা দের বশিকরণ পদ্ধতি তামশিরার ব্যাপার স্যাপার শুনে আমি চমকে উঠছিলাম হটাৎ ছলাৎ করে আমার আর তিঙ্গার উপর কি যেন একটা এসে পড়ল।একটু ঠাওর করতেই দেখি আমরা দুজনেই একটি জালে আটকে পড়েছি। একটি জাল আমাদের দুজন কেই আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে আর যিনি জাল টি একটি নেট গান দিয়ে ছুড়েছেন আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে।অন্ধকার আবছা আলোয় দেখলাম সাদা দাড়ি মুখো এক বৃদ্ধ কোমড়ে হাত দিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নেট গান টা ঝোলায় পুড়ে বুড়ো এবার একটা হারপুন বের করলো। হারপুন হলো হাঙ্গর মারার অস্ত্র। ট্রিগার টিপলেই দড়ি বাধা একটা বিশাল তীর গিয়ে লাগে শিকারের গায়েসেকি কে এই বুড়োআমাদের হারপুন দিয়ে মারবে নাকিহারপুন বার করে বুড়ো আমার দিকে তাক করলোআমি পাশেই কিছু কাটার আওয়াজ পেলামদেখলাম তিঙ্গা ওর ধারালো ছুরি দিয়ে ওর জাল কেটে ফেলেছে।বুড়ো কিছু বুঝে উঠবার আগেই তিঙ্গা ওর হাত লক্ষ করে ছুরি টা ছুড়লো।ছুরি টা বিদ্যুৎ গতিতে বুড়োর হাত ছুঁয়ে পিছনের গাছে গিয়ে লাগলো আর তাতেই বুড়োর হাত থেকে হারপুনটা পরে গেল। ঘটনা গুলো এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে বুড়ো কিছু ঠাওর ই করতে পারলো নাততক্ষনে তিঙ্গা ওর জালটা দিয়ে বুড়ো কে বেঁধে ফেললো নিমেষের মধ্যে। বুড়ো হাঁফাতে লাগলো।তিঙ্গা আমার জালটাও খুলে দিল।আমি বুড়োর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম"কে তুমি?"বুড়ো দেখলাম বাঁধা পড়ে ও দমেনি বললো"আগে বলো তোমরা কারা"

আমি বললাম আমরা গ্রীন আইল্যান্ডের থেকে আসছি বিভূত সান্যাল এর খোঁজে।

বুড়ো খিন হাসি এসে বললো"আমিও এসেছিলাম ওর খোঁজে...."

এখন অনেকটা অন্ধকার হয়ে এসেছে আমি টর্চের আলো জানলামবুড়ো চেহারা টা পরিষ্কারবড় চুল আর মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়েযে লোকটা আমার সামনে বসে আছেতিনি আর কেউ ননভূপর্যটক টম সীমান্স 

টম সীমান্স এর কাছ থেকে বিভূতি বাবু সমন্ধে অনেক কিছুই জানলামআমাদের অনুমান নির্ভুল যে উনি অকারা তন্ত্র সাধিকাদের নিয়ে এই সিবাস্তিন ক্যাসেলেই উঠেছেন কিন্তু কেন।সিবাস্তিন ক্যাসেলের লাগোয়া যে অডিটোরিয়াম বিভূতি বাবু সেই অডিটোরিয়াম টির সৎ ব্যবহার করতে চান। এই অডিটোরিয়াম টি আর পাঁচ টা অডিটোরিয়ামের থেকে একদম আলাদা।জর্জ সিবাস্তিন শুধু মাত্র একজন ধন কুবের ব্যবসায়ী ছিলেন না উনি আসলে ছিলেন একজন জল দস্যু।অডিটোরিয়াম টি বিশাল একটি ছোট খাটো স্টেডিয়ামের মতোআর অডিটোরিয়াম টির মেঝের ভিতরে রয়েছে ফুট বল মাঠের মত বড় বিশাল একটা কুয়ো।সেই কুয়োর অনেক গভীরে অনেক নীচে যেখানে কুয়ো টা গিয়ে শেষ হয়েছে রয়েছে সাত টা বড় বড় লম্বা লম্বা টানেল যা সমদ্রের গভীর অবধি চলে গিয়েছে। জল দস্যু বৃত্তি করে লুটের মাল সব এই পথে নিয়ে আসা হতো। 

এই কুয়োর মধ্যে তাগোরা দের ধরে ট্র্যাপ করছেন বিভূতি বাবু।তামশিরা করে ঈগল পাখিদের বশ করে অকারা দের ধরে নিয়ে আসছেন আর নিক্ষেপ করছেন ওই কুয়োর মধ্যে।মানুষের গন্ধ পেয়ে চলে আসছে তাগোরা রা টানেল গুলোর মধ্য দিয়ে। আর একবার এসে পড়লেই তাগোরা গুলো কে মেরে ওদের সবুজ চামড়া গুলো চরা দামে চোরা বাজারে বিক্রি করছেন বিভূতি বাবু টম সীমানসের কাছ থেকে আরো একটা জানিস জানতে পারিতাগোরা দের সংখ্যা এমনি তেই অনেক কম। ওদের মধ্যে কয়েকটা গোনা গুনতি রানী তাগোরা আছে যে গুলো নাকি সাইজে অনেক বড় আর ওদের মধ্যে একটার মাথায় একটা ছোট তরমুজের সাইজের মনি আছে। সল্ট ডিপোজিশন আর বাইলুমিনেন্স থেকে তৈরী এই মনি। সবুজ রঙের জ্বল জ্বলে মনি। অকারা দের ভাষায় যার নাম জুমবা। জুমবা হচ্ছে রহস্যময় সবুজ সামুদ্রিক মনি।

যে কোনো মনির দাম ঠিক হয় তার উজ্জ্বল রং, তার স্বচ্ছতা তার কাটার ধরণ আর তার এভেলবিলিটির উপর ।এ ক্ষেত্রে রানী তাগোরা র মনি অতি বিরল উজ্জ্বল আর স্বচ্ছ সব থেকে বড় কথা সমুদ্রের তলার চাপে মনে হয় যেন পল কাটা হিরে তাও আবার একটা তরমুজের সাইজের।

তাগোরা দের এই রানী তাগোরা আর তার মনির ব্যাপারে বিভূতি বাবু প্রথম জানতে পারেন অকারা দের গ্রামে গিয়ে। 

প্রতি বার উনি তামশিরা করে অকারা তরুণ দের কুয়োর মধ্যে ফেলার সময় ভাবেন এই বার নিশ্চই সেই রানী তাগোরা এসে হাজির হবে কিন্তু আজ পর্যন্ত এসে পৌছয় নি।

টম সীমান্স সমুদ্র বিশারদ দের কাছ থেকে জেনেছে যে তাগোরা রা খুব বিরল প্রজাতি আর সারা বিশ্বে এক মাত্র এখানেই পাওয়া যায়। আর এদের মধ্যে বিরল তর হচ্ছে রানী তাগোরা আর তাদের মধ্যে বিরল তর হচ্ছে মনি ওয়ালা রানী তাগোরা।

পৃথিবীতে শুধু একটাই আছেতাও আবার এই সমুদ্রেই।

জানতে পারলাম টম কে অনেকদিন বিভূতি বাবু বন্দি করে রেখেছিলেন কালকেই টম বন্দিশালা থেকে পালায়। বিভূতি বাবুর নেট গান হারপুন দুটোই চুরি করে টম।টম সীমান্স বললো তোমরা যদি তামশিরা একটু কাছ থেকে আজ দেখতে চাও তাহলে ওই চাতাল টায় চলে যেতে পারো। ওখান থেকে অডিটোরিয়ামের ডোমের উপরে ওঠার একটা সিড়ি আছে। অডিটোরিয়ামের ডোমের উপর বিশাল একটা স্কাই হোল আছে সেখান থেকে দূরবীন লাগিয়ে তোমরা অডিটোরিয়ামের ভিতর কি হচ্ছে দেখতে পাবে ।

আমার কৌতূহল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অবশ্যই ওই অডিটোরিয়ামের ভিতর কি হচ্ছে বা হবে দেখা দরকার। তিঙ্গা গাছ থেকে ওর ছুরি টা নিয়ে নিলো।আমি আর তিঙ্গা টম সীমান্স কে সঙ্গে নিয়েই চাতাল টায় চললাম।

চাতাল টা ক্রস করে সিঁড়ি দিয়ে অডিটোরিয়ামের ডোমের উপর উঠছি একটা বোটকা গন্ধ নাকে লাগলো। বোটকা কিন্তু চেনা চেনা। ডোম এ উঠে পড়লাম মাথার উপরে বিশাল আকাশ অগণিত তারা আমাদের পিছনে ভয়ের টিলা আর সামনেই প্রশান্ত মহাসাগর।

স্কাই হোলের ভিতর দূরবীন তাক করেই দেখলাম নিচেই বিশাল একটা কুয়ো । তার পাশে ত্রিকোণ কাঁচের ঘর টা রাখে। ওর ভিতরে আগা গোড়া একটা হলুদ চাদর মুড়ি দিয়ে একজন ধ্যান করতে বসেছে খুব সম্ভব দুই তন্ত্র স্বাধিকার একজন, সামনেই একটা সিংহাসনের মতো উঁচু জায়গায় ক্লোক গায়ে এক বছর পঞ্চাশের লোক। জুম করে দেখলাম লোকটার ছুঁচল ছাগোল দাড়ি আর নিষ্ঠুর চোখ দুটো বিভূতি ভূষণ সান্যাল

কাঁচের ঘরে বসে তন্ত্র সাধিকা কেমন যেন ঢুলছে মনে হয় তামশিরা শুরু হয়ে গেছে।দুজন অকারা তরুণ দেহ রক্ষীর মতো বিভূতি বাবুর সিংহাসনে দাঁড়িয়ে আছেন। বোঝাই যাচ্ছে এরা বশীভূত।

কুয়োর সামনে আরো দুজন অকারা তরুণ শুয়ে আছে এদের বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। হুকুম হলেই কুয়োর ভিতর ফেলে দেয়া হবে।

এবার দেখলাম বিশাল বড় একটা ঈগল কোথা থেকে যেন উড়ে এসে ওই ত্রিকোণ ঘরটার সামনে বসলোচোখ গুলো অস্বাভাবিক রকমের লাল।বুঝলাম এই ঈগলটির উপরই এখন তামশিরা চলছে।ঈগল টি খপ খপ করে ওই শুয়ে থাকা অকারা তরুণ দের তুলে বিশাল কুয়ো টার মধ্যে ফেলে দিলো।

অনেক অনেক নীচে জলে পড়ার শব্দ পেলামটোপ পড়েছে তাগোরা রা এসে পড়বে এইবার।আমাদের চারদিকে বোটকা গন্ধ টা যেন বাড়ছেহটাৎ তিঙ্গা লাফিয়ে উঠলোসাহেবটম সীমান্স ও দেখলাম কেমন থম মেরে গেছে।আমরা রয়েছি অডিটোরিয়াম এর ডোমের মাঝামাঝিসিঁড়ির দিকটা দিয়ে কি একটা কালো জন্তু উঠে আসছে।

বোটকা গন্ধ টা এখন বেশ পাওয়া যাচ্ছে। চেনা গন্ধ চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে পাওয়া যায়।

চাতালের পিছন থেকে হালকা একটা আলো এসে পড়েছে সেটা তেই দেখা যাচ্ছে জন্তু টাকে।

একটা প্রমান সাইজের ব্ল্যাক প্যান্থার চোখ গুলো লাল জ্বল জ্বল করছে। হিংস্র ক্যানাইন গুলো মাংসের লালসায় লক লক করছে। এটা কেও কি তামশিরা করা।প্যান্থার টা গন্ধ শুকতে শুকতে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। পিছন দিকটা তুলে সামনের দিকে থাবা গুলো এগিয়ে দিয়েছে। লক্ষণ ভালো নয় এখনই লাফ দেবে আমি বেগতিক দেখে শট গান তাক করলাম কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে অমানবিক ক্ষিপ্রতায় প্যান্থার টা আমাদের উপর লাফিয়ে পড়লো।আমি টম কে টেনে নিয়ে এক পাশে ছিটকে পড়লাম।আর তিঙ্গা উল্টো দিকে লাফাতে গিয়ে স্লিপ কেটে ডোম থেকে গড়িয়ে পড়ল। অন্ধকারে তিঙ্গা কোন দিকে পড়লো বুঝতেই পারলাম না।ঝনাত ঝন ঝন করে আওয়াজ হলো প্যান্থার টা এসে পড়েছে স্কাই হোল টার কাঁচের উপর।কিছু কাঁচ ভেঙে অডিটোরিয়ামের ভিতর পরে গেল নিচ থেকে মৃদু উত্তেজনা শুনলাম ওরা জানতে পেরে গেছে ছাদে কিছু একটা হচ্ছে।আমি সময় নষ্ট না করে শট গান চালিয়ে দিলাম।গুলি টা শুধু প্যান্থারের মাথা তেই লাগলো না যেন ওটাকে উড়িয়ে নিয়ে একদম নীচে গভীর খাঁদে ফেলে দিলো। খাদ টায় সরা সরি সমুদ্রের জল এসে ঠেকেছে একটা খারীর মতো। অনেক নীচে ছলাৎ শব্দ পেলাম। আমার নিশানা নির্ভুল ওটার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিঙ্গা কে দেখা যাচ্ছে না আমি বার কয়েক নাম ধরে ডাকলাম। না কোনো সাড়া শব্দ নেই তিঙ্গা ও কি জলে পরে গেল।হটাৎ সিঁড়ি বেয়ে নুপুরের আওয়াজ শুনলাম আরেকটা হালকা শীষ। খুব সম্মোহনী শীষ দিচ্ছেন যিনি নুপুর পরে এসে দাঁড়িয়েছেন আধো আলো অন্ধকারে বুঝতে পারলাম ইনি আরেকজন অকারা তন্ত্র সাধিকা।

শীষ টা এমন যে আমরা নিথর হয়ে গেলাম আমি আর টম সীমান্স যেন একেবারে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে আঙ্গুল গুলোও নাড়াতে পারছি না।

আবছা আলোয় দেখলাম মহিলা টি একটি ছোট্ট বাঁশির মতো কি একটা বার করলেন উনি টমের দিকে ফিরে বাঁশি তে ফু দিতেই আধ ইঞ্চির একটা ছোট সূচ টমের ঘাড়ে এসে বিধল। টম ধরাশায়ী।আমি নড়তে পারছি না শট গান টা হাতেই ধরা আছে কিন্তু কোনো লাভ নেই।খচ করে কি একটা কানের তলায় এসে ফুটলো।গভীর ঘুমে ঢলে পড়লাম।

3

জ্ঞান ফিরলে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম দেখি আমি ঝুলছি। হ্যা ঝুলছি। বিশাল অডিটোরিয়াম নীচে বড় কুয়ো টা আমাকে সিলিং থেকে একটা লোহার চেনের সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।অডিটোরিয়ামের ভিতর হালকা আলো। গোল অডিটোরিয়াম একটা স্টেডিয়ামের মত। গোল করে অনেক গুলো লাল মশাল জ্বলছে।আমার মাথার অনেক উপরে ভাঙা স্কাইহোল। আলগা কাঁচ যেকোনো মুহূর্তে আমার উপর এসে পড়তে পারে।নীচে কুয়োর এক পাশে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে টম সীমান্স কে। আমার আর ওর দুজনের ব্যাগ প্যাক রাখা রয়েছে কুয়োর কানার উপর।ত্রিকোণ কাঁচের ঘর টা খালি দুই তন্ত্র সাধিকা কে দেখতে পেলাম না।

কি হে আক্তারুলের টিকটিকি আছো কেমন

আমাকে দেখে চিৎকার করে নিচ থেকে জিজ্ঞেস করলো বিভূতি ভূষণ সান্যাল। বসে আছে সিংহাসন টায় পায়ের কাছে বড় ঈগল টা জিমচ্ছেবিভূতি বাবু কে দেখে যেন মনে হচ্ছে কাউন্ট ড্রাকুলা। ক্লোক আর ছাগল দাড়ি থেকে স্বয়ং শয়তান যেন ফুঁড়ে বেরোচ্ছেন।

আমি কিছু উত্তর দিলাম না"একটু পরেই যে আপনি তাগোরা দের পেটে চলে যাবেন।"বিদ্রুপের হাসি হাসলেন বিভূতি বাবু

আমি বললাম" আমি তাগোরা র পেটে গেলেও আপনার নিস্তার নেই বিভূতি বাবু অকারা সরদার কাবুলি দল বল নিয়ে আসছে ওরা এসে সবই বুঝতে পারবে ।"

"ওদের কি করে বশ করতে হয় সেটাও আমার জানা আছে।"গর্জিয়ে উঠলো বিভূতি বাবু।

আমি মনে মনে ভাবলাম তা নিশ্চই আছে নাহলে ইচ্ছা করে ঈগল বশ করে অকারা তরুণ দের ধরে আনছেন। ঈগল সম্পর্কে অকারাদের একটা দুর্বলতা এমনিতেই আছে আর সেটাই এই পাষণ্ড টা কাজে লাগিয়েছে।


"সারা ব্রাবন আইল্যান্ড আমি হাতের মুঠোয় করবো। হয়ে উঠবো এই দ্বীপের অধিস্বর।"

"আপনি ভুল করছেন কত গুলো বিরল প্রজাতির হাঙ্গর মেরে আপনি চোরা বাজারে বিক্রি করছেন। এটা তো সাংঘাতিক অন্যায়।"

"আমাকে ন্যায় অন্যায় শিখিও না ছোকরা।আজ অনেক কটা টোপ আছেমনি ওয়ালা রানী চলে আসতে পারে"

কথা গুলো বলে ভীষণ রকম বাজে হাসি হাসতে লাগলেন বিভূতি বাবু

"বেশি দেরি করে লাভ নেই খেলা শুরু হয়ে যাক।"

আমি ভাবছি তিঙ্গার কথা কোথায় যে গিয়ে পড়লো। আদৌ কি বেঁচে আছে।বিভূতি বাবুর হুকুমে একজন অকারা রক্ষী অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে গেলেন।মনে হয় ওই তন্ত্র সাধিকাদের ডেকে আনতে গেলেন

"আমার দুজন সহকারী আছেন ওদের থেকেই আমি হাঙ্গর ধরার তালিম পেয়েছি ওরা হলো ওয়ারী আর জু।"গদ গদ হয়ে বললেন বিভূতি বাবুবুঝলাম উনি ওই দুই তন্ত্র স্বাধিকাদের কথা বলছেন।

অডিটোরিয়াম এর বাইরে কারা এসে দাঁড়িয়েছেঢোকার অনুমতি চাওয়া হলো।

বিভূতি বাবুর তালির সাথে সাথেই অডিটোরিয়াম এ প্রবেশ করলো ঝুমুর পায়ে দেওয়া সেই মহিলা টি যিনি আমাকে আর টম সীমান্স কে ছুঁচ মেরে অজ্ঞান করেন। ওর সাথে আরেকজন মহিলাও ঢুকলেন ইনি হলুদ কাপড়ে আগা গোড়া ঢাকা। বুঝলাম দেরি না করে ইনিই তামশিরা করার জন্য ত্রিকোণ ঘরে ঢুকে বসবেন।কি হতে চলেছে ভেবে আমার ভীষণ ভয় লাগছে। হলুদ কাপড়ে ঢাকা ওই তন্ত্র সাধিকা এবার কাঁচের ত্রিকোণ ঘরে ঢুকে তামশিরা শুরু করবে আর ওই বিটকেল বড় ঈগল টা তার খেলা দেখাবেকি সাংঘাতিক

এবার দেখলাম একজন অকারা তরুণ টম সীমান্স এর দড়ি খুলে দিল

কোনো রকমে উঠে বসেছে টম ছুচের বিষের এফেক্ট এখনো যায় নি। আমার যা অবস্থা ওর ও তাই কেমন যেন ঘুম ঘুম ভাব



মুচকি হাসি দিয়ে শয়তান বিভূতি ভূষণ বললো নাও শুরু কর এবার।

কাঁচের ঘরে ঢুকে পড়ল হলুদ কাপড় ঢাকা তন্ত্র সাধিকাআর অন্য সাধিকা টি গিয়ে বসল বিভূতি বাবুর পাশে।

কুয়োর অনেক অনেক নীচে জল হালকা হালকা নড়ছে মনে হচ্ছে। উপরে দড়ি ছিড়লেই সটান পরে যাবো কুয়োর ভিতরে আর তার পর সব শেষ।

তামশিরা শুরু হয়েছে ত্রিকোণ কাঁচের ঘরের ভিতরে তন্ত্র সাধিকা ঢুলছেন আর অদ্ভুত সুরে মন্ত্র পড়ছেন।বিভূতি বাবুর পায়ের কাছের ঈগল টা দেখলাম চাঙ্গা হয়ে উঠলো। লাফিয়ে লাফিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছেউপর থেকে বেশ দেখতে পাচ্ছি ওটার চোখ গুলো কেমন অস্বাভাবিক হয়ে আসছে।

হলদে কাপড়ে ঢাকা তন্ত্র সাধিকা এবার আরো জোরে জোরে ঢুলছে। বেশ জোরে জোরে তামশিরা তন্ত্র এর মন্ত্র উচ্চরিত হচ্ছে।

ঈগল টা ঝট ফট শব্দ করে কুয়োর কানায় এসে বসলো এবার উড়ে হয় আমাকে নয় তো টম সীমান্স কে কুয়োর মধ্যে ফেলবে। আমাকে ফেলতে বেশি সময় লাগবে না । লোহার চেন দিয়ে একটা দড়ি দিয়ে আমার কাঁধ দুটো বাঁধা। ঈগল টার শক্ত ঠোঁটের খোঁচায় এই দড়ি টা অনায়াসেই ছিঁড়ে যাবে।

ঈগল টা এবার মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখছে প্রথম টার্গেট মনে হয় আমিই।

হটাৎ একটা চিল চিৎকার দিয়ে ঈগল টা উড়তে লাগলো। আমাকে প্রদক্ষিণ করছে।নিচ থেকে বিভূতি ভূষণ সান্যাল এর পৈশাচিক হাসি কানে আসছে।এর পর ই ঘটে গেল কত গুলো অপ্রত্যাশিত ঘটনা।ঈগল টা সোজা নীচে নেমে গিয়ে বিভূতি বাবুর ঘাড়ে চেপে বসলো।বিভূতি বাবু যেন একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। কি যে ঠিক হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝতে ই পারলেন না। ওদিকে ওনার পাশে বসে থাকা তন্ত্র সাধিকা ঈগল টা কে ওনার ঘাড় থেকে নামতে চেষ্টা করতে লাগলো।দুই অকারা দেহরক্ষী তরুণ বল্লম দিয়ে ঈগল টা কে মারতে যাবে কিন্তু তার আগেই দুটো তীর তাদের কে বিদ্ধ করলো। যে সে তীর নয় হাঙ্গর মারা তীর হারপুন থেকে বেরিয়েছে।হারপুন হাতে কাঁপা কাঁপা হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন টম সীমান্স।ঈগল টা ততক্ষনে বিভূতি বাবু কে শূন্যে তুলে নিয়েছে। আর্তনাদ করে উঠেছে ওনার পাশে বসে থাকা তন্ত্র সাধিকা। আরেকজন কিন্তু আগা গোড়া হলদে কাপড়ে ঢাকা মন্ত্র পাঠ করে যাচ্ছেন ত্রিকোণ কাঁচের ঘরে বসে।

ঈগল টা বিভূতি বাবু কে নিয়ে অডিটোরিয়াম টা একটা পাক দিয়েই কুয়োর একদম নীচে ছুড়ে ফেলে দিলো।

আমি নীচে তাকিয়ে দেখলাম অনেক অনেক নীচে জলে বিভূতি বাবু পড়লেন। একটা বিশাল জোরে ছলাৎ করে আওয়াজ হলো তারপর সব চুপ।

এদিকে দেখি কাঁচের ঘরের তন্ত্র সাধিকা আস্তে আস্তে ওর চাদর খুলে ফেলছে  তবে চাদরের তোলা থেকে যিনি বেরিয়ে এলেন উনি তন্ত্র সাধিকা নন উনি আমার প্রিয় পাত্র শ্রীমান তিঙ্গা। দেখে তো আমার চক্ষু চরক গাছ। বাবা কাকার বিদ্যে ভালোই কাজে লাগিয়ে ফেলেছে ছোকরা।

বাঘিনীর মতো রাগে কান্নায় তিঙ্গার উপর ঝাপিয়ে পড়লো অন্য তন্ত্র সাধিকাটি কিন্তু প্রায় তখনই একটা জাল এসে পড়ে বেঁধে ফেললো মহিলাটিকে।নেট গান চালিয়ে দিয়েছে টম সীমান্স।বাইরে হই হই আওয়াজ শুনলাম হয়তো কাবুলি সরদার ওনার দল বল নিয়ে এসে পড়েছেন।

হটাৎ কুয়োর নিচ থেকে একটা বিকট আর্তনাদ ভেসে এলো। গলা শুনেই বুঝলাম তাগোরা এসে পড়েছে আর তার খাদ্য হয়ে পড়েছেন বিভূতি বাবু।

কুয়োর গভীরে তাকাতেই দেখলাম কেউ বাঁচবার জন্যে ছটফট করছে কিন্তু আস্তে আস্তে সব শান্ত হয়ে গেল। আর ঠিক তখনই খেয়াল করলাম সবুজ রঙের একটা আলো খেলে বেড়াচ্ছে জলের তলায়।মনি ওয়ালা রানী তাগোরা র প্রসাদ হয়ে গেলেন বিভূতি বাবু স্বয়ং। শিকারের হাতে শিকারি কাবু।

আমাকে উপর থেকে কারা টানছে। উপরে তাকাতেই দেখলাম স্কাই হলের পাশ থেকে কাবুলি আর ওর কয়েক জন সাথী লোহার চেন টা উপরে টেনে তুলছে আমাকে ওরা স্কাই হোল টা দিয়েই বার করবে।

কাবুলি কে সব জানানো হলো। দুই তন্ত্র সাধিকা কেই কাবুলির হাতে তুলে দেয়া হলো। তিঙ্গা এসে পড়েছিল অডিটোরিয়াম এর পিছনে দিকের বারান্দায়। ওখানেই বিশ্রাম করছিল তন্ত্র সাধিকা ওয়ারী। ওকে মাথায় আঘাত করে অচেতন করে ওর থেকে হলুদ চাদর নিয়ে নেয় তিঙ্গা।তারপরের ঘটনা তো আমরা দেখেছি।

আমরা যখন ব্রাবন দ্বীপে ফিরে আসছি সমুদ্রের জলে আমাদের ফলো করে আসছিল একটা সবুজ আলো। পাড়ে আসার কাছাকাছি জল থেকে মাথা ওঠালো প্রাণীটি। একটা বিপুল সবুজ রঙের হাঙ্গর। মাথায় জ্বল জ্বল করছে তরমুজ সাইজের সবুজ মনি জুমবা।যেন আমাদের ধন্যবাদ জানালো।














Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics