Debdutta Banerjee

Crime Fantasy

3.8  

Debdutta Banerjee

Crime Fantasy

আমি সে এবং...

আমি সে এবং...

5 mins
1.1K



-''আমি সজ্ঞানে আমার দশ বছরের বিবাহিতা স্ত্রী ও তার প্রেমিককে এক বিছানায় দেখতে পেয়ে নিজে হাতে গুলি করে খুন করেছি। এই দুটো খুনের অপরাধে আমায় গ্ৰেফতার করুন। আমার এই রিভলভার দিয়ে খুন করেছি। এখনো আমার বেডরুমে আমার বিছানায় পড়ে রয়েছে মৃতদেহ দুটো। '' টেবিলে রিভলভারটা রেখে হাত দুটো বাড়িয়ে দিলেন প্রফেসার ভৌমিক। ইকনমিক্সের এই ভারত বিখ্যাত প্রফেসার কে এলাকার সবাই চেনে।

গোড়াবাজার থানার অফিসার ইন চার্জ দত্তরায় নড়েচড়ে বসলেন। থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ডঃ ভৌমিকের বিশাল বাড়ি। ভদ্রলোক কলকাতা ইউনিভার্সিটির নাম করা প্রফেসার। ওঁর স্ত্রী রম‍্যানী একটা এনজিও চালান। এলাকার ভীষণ পরিচিত জন দরদী মুখ। কিন্তু এসব কি বলছেন উনি। খবর সঠিক হলে মিডিয়ার লাইন পড়ে যাবে এখনি। অফিসার দত্তরায়কে আজ সব চ্যানেলে দেখাবে‌ । ওর বৌ বিদিশার অনেক দিনের শখ স্বামীকে টিভিতে দেখার আজ মনে হয় তা পূর্ণ হবে। নিজের টুপি আর মোবাইলটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দত্তরায় ডঃ ভৌমিককে বললেন -''আপনি যা বললেন তা সত্যি হলে তো আপনার বাড়ি একবার যেতে হয়। কিন্তু আপনি কি ঠিক বলছেন ?"


আসলে প্রফেসার মানুষটা একটু পাগলাটে।বাচ্চা টাচ্চা হয়নি। রম‍্যানী দেবী আগে একটা স্কুলে পড়াতেন। ইদানীং চাকরি ছেড়ে এনজিও আর পথের কুকুর নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। পথের কুকুরের মৃত্যু নিয়ে গত সপ্তাহেও থানায় এসেছিলেন। ভদ্রমহিলার অসম্ভব ব্যক্তিত্ব। ওঁদের এনজিওর একটা শাখা পথের কুকুর দের যত্ন নেয় নিয়মিত। ছোট খাটো সভা সমিতিতেও ম‍্যাডামকে দেখা যায় এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে।

আপাতত ডঃ ভৌমিককে দিয়ে এফআইআর করিয়ে ওঁকে সঙ্গে নিয়ে ফরেনসিক টিম সহ ওঁর বাড়িতে হানা দিলেন দত্তরায়। সদর দরজার তালা খুলে ডঃ ভৌমিক নিজেই পুরো টিমকে দোতলায় নিয়ে গিয়ে বললেন -''ঐ কোনের ঘরে চলে যান। বডি দুটো রয়েছে ওখানেই। ওটাই ছিল এতদিন আমাদের বেডরুম। কাল রাত দুটোয় বাড়ি পৌঁছে আমি জানলাম রমা ঐ খাটে আরেকজনের সঙ্গে.... আপনারা আর প্রশ্ন করবেন না। আমি এবার একটু ঘুমাবো।'' নিচের হলের আরামকেদারায় বসে চোখ বুঝলেন উনি। মচমচ করে বুট জুতোর শব্দ তুলে ঐ ঘরে পৌঁছে যায় পুরো টিম। কিন্তু ঘরে ঢুকেই সবাই অবাক।


 কিছুক্ষণ পর দত্তরায় বেরিয়ে আসেন, ডঃ ভৌমিকের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে বলেন -''ঠিক কি হয়েছিল বলবেন খুলে ?''

-''সবটাই তো বললাম, রাতে পুনে থেকে বাড়ি ফিরে আমার চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকি। বেডরুমে গিয়ে দেখি রমা আর ওর পার্টনার... ওরা এতটাই মগ্ন ছিল আমায় খেয়াল করেনি। আমি স্টাডি থেকে রিভলভার নিয়ে ওদের দু জন কে গুলি করেছি। আর এ জন্য আমার কোনও অনুশোচনা নেই। ''

-''আপনার স্ত্রী একাই রয়েছেন ঘরে, আর কেউ নেই। '' চিবিয়ে চিবিয়ে কথা গুলো বললেন দত্তরায়। ''ঠাণ্ডা মাথায় স্ত্রীকে খুন করার জন্য আপনাকে গ্ৰেফতার করা হল। ''

রাগে উঠে দাঁড়ান ডঃ ভৌমিক, বলেন -'' ওর পার্টনার সানিকে দেখতে পেলেন না ওঘরে ? আমি তো দু জনকেই গুলি করেছিলাম। সানি তো ছিটকে পড়ল নিচে।''

-''খুন টা কেন করলেন ডঃ ভৌমিক?''

-''বললাম তো, ওকে আর সানিকে এক বিছানায় ওভাবে দেখব কখনো ভাবিনি। ''

দত্তরায় মনে মনে ভাবেন হয় ডঃ ভৌমিক অনেক উঁচুদরের অভিনেতা নয়তো মাথাটা গেছে। আবার অকুস্থলে ফিরে যান অফিসার। ফরেনসিক টিম কাজ করছে, বিছানায় রম‍্যানী দেবীর অর্ধ নগ্ন দেহ, ঠিক বুকের বা দিকে গুলির দাগ, রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। সে সময় বোধহয় উঠে বসেছিলেন উনি। আর খাটের পাশে পড়ে রয়েছে একটা সাদা রঙের লোমশ কুকুর। স্পিচ গোত্রীয় কুকুরটার লোম রক্তে ভিজে খয়েরি হয়ে উঠেছে। ফরেনসিকের ডঃ হাজরা সব দেখে বললেন -''ঘরে মনে হয় না আর কেউ ছিল। ওটা ডঃ ভৌমিকের কল্পনা। অথবা মিথ্যা বলছেন। ''

সব কিছুর ছবি তুলে স্যাম্পল নিয়ে বডি মর্গে পাঠিয়ে ডঃ ভৌমিককে নিয়ে থানায় ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে। ওঁদের ঠিকা কাজের বৌকে জিজ্ঞেস করেও তেমন কিছু জানা গেল না। রম‍্যানী দেবী আধুনিকা ছিলেন কিন্তু অন্য কোনও পুরুষে আসক্তি ছিল এমন কিছু কেউ বলল না। ঠিকা ঝি বললেন ঐ কুকুরটাকে চার বছর ধরে পুষছিলেন রম‍্যানী ম‍্যাডাম। ওটা নিয়েই থাকতেন। সন্তান ছিল না তো, ওকেই সেই আদরে মানুষ করছিলেন। আর সাহেবের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। দু জন ছিলেন দুই মেরুর বাসিন্দা।

ডঃ ভৌমিক লক আপে বসেও একই কথা বলে চলেছেন। অবশ্য ওঁর স্ত্রীর অর্ধ উলঙ্গ শরীর একটা প্রশ্ন তো তুলছিলই। ওভাবে তো কেউ ঘুমায় না।

মিডিয়া খবর পেয়ে পৌঁছে গেছে, আর এমন একটা মশালাদার খবরকে রঙ চরিয়ে বেশ সুন্দর করে চ্যানেলগুলো পরিবেশন করছে। কোথাও ওর বয় ফ্রেন্ডের সম্ভাব্য চিত্র এঁকেছে কোনও গ্ৰ‍্যাফিক ডিজাইনার। কোথাও আবার কেউ বলছে লোকটা গুলি লাগার পর পালিয়ে গেছে। একটা চ্যানেল বলছে বডিটি ডঃ ভৌমিক নিজেই গুম করেছেন। বিরক্তির চরম।

পরদিন ফরেনসিকের ডঃ হাজরা এক তাড়া রিপোর্ট এনে ধপ করে বসলেন দত্তরায়ের সামনে। ওঁর চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। দত্তরায় রিপোর্ট হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে পড়তে শুরু করলেন। কয়েক সেকেন্ড বিস্ময়ে কথা খুঁজে পাচ্ছিল না কেউ।

অবশেষে দত্তরায় বললেন।-''আপনি শিওর তো ? ''

-''১০০% , সব প্রমাণ রয়েছে। ''

দত্তরায় উঠে লক আপের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ডঃ ভৌমিক বসে রয়েছেন।

-''আপনার স্ত্রীর প্রেমিকের নাম কি? কোথায় থাকত সে ?''

-''সানি, ঐ বাড়িতেই থাকত। ''

চমকের আর কি বাকি ছিল !! দত্তরায় প্রশ্ন করেন -''আগে সন্দেহ হয় নি কখনো ?''

-''না, আগে এভাবে ওদের সেক্স করতে দেখিনি। রম‍্যানী আমায় এভয়েড করত বেশ কয়েক বছর। আমিও কনফারেন্স ট্যুর এসব নিয়েই থাকতাম। চার বছর আগে ও সানিকে নিয়ে আসে। ভালোই ছিল দু জনে। তখন বুঝিনি যে ওরা আমার পেছনে এসব .... ছিঃ ছিঃ। ভাবতেও গা গুলচ্ছে। ''

নিজের চেয়ারে এসে ধপ করে বসে পড়েন দত্তরায়। ডঃ হাজরা রিপোর্টে পরিষ্কার লিখেছেন মহিলা জুফিলিয়ায় আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে পোষা কুকুরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল ওঁর। কুকুরটির এবং মিসেস ভৌমিকের দেহরস একথা প্রমাণ করছে মৃত্যুর আগে ওরা মিলিত হয়েছিল। ফোনে ডঃ ভৌমিকের ঠিকা কাজের বৌটিকে ধরেন দত্তরায়। একটাই প্রশ্ন করেন -'' রম‍্যানী দেবীর কুকুরটার কি নাম ছিল ?''

-''সানি, সারাদিন তো ঐ সানিকে নিয়েই থাকত। ''

ফোন রেখে উনি ডঃ হাজরার দিকে তাকিয়ে বলেন -''চার্জশিটে তাহলে জুফিলিয়াই মেনশন করছি। ''

সন্ধ্যায় আজ টিভিতে ব্রেকিং নিউজ। সব চ্যানেলে দেখাচ্ছে একটাই খবর। "সমাজসেবী রম‍্যানী ভৌমিক আক্রান্ত ছিলেন জুফিলিয়ায়। পোষা কুকুরের সঙ্গে নিয়মিত চলত সহবাস। তার জন্যই খুন। গ্ৰেফতার ডঃ ভৌমিক।"




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime