অথ দেবকী কথা
অথ দেবকী কথা
#অথ_দেবকী_কথা#শম্পা_সাহা
-ভারী দুষ্টু হয়েছিস তো!
পরম মমতায় স্ফীত গর্ভে অনাগত সন্তানের মাথাচাড়া দেওয়া অংশে হাত বোলায় সীমা। যখন কচি কচি পা দিয়ে পেটের ভেতরে লাথি মারে দুষ্টুটা ও শিউর ওঠে।
-উফঃ! দুষ্টু !
মনে মনে প্রতিদিনই ওর এই একটা কাজ। নিজের গর্ভের সন্তানের সঙ্গে বার্তালাপ।কত কথা ওর সঙ্গে, কত ভাবনা, ঘুমপাড়ানি গান শোনানো।সব মাতৃত্ব উজাড় করে দেয় সীমা ওর গর্ভের সন্তানে।
অর্ক ওকে ভীষণ যত্নে রাখে। একদম কাজকর্ম, নড়াচড়া বন্ধ। ডায়েট মেনে খাওয়াদাওয়া ,ওষুধপথ্য,এক্সারসাইজ,সব একদম নিয়মমাফিক ।
এ নিয়ে সীমার দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ ।প্রথমবারও অর্ক ওর যত্নে কোনো ত্রুটি রাখেনি।তাই ও আর বাচ্চাও ছিল একেবারে সুস্থ।
সেবার মেয়ে হয়েছিল। হৃষ্টপুষ্ট কচি কচি পুতুলের মত হাত পা,সুন্দর সোনালী চুল, সবুজ চোখ,ধবধবে গায়ের রং,খালি মুখখানা যেন সীমার কেটে বসানো। খেলনার দোকানে দামি পুতুলগুলো যেমন শোকেসে সাজানো থাকে ,ঠিক সেই রকমই একটা পুতুল । মেয়ের মুখ খানা মনে করে গর্বে বুক ফুলে ওঠে সীমার।
ঘরের চারি দিকে তাকায় ও। ওদের এখন আর অভাব নেই ।তবে সে একদিন ছিলো যখন একবেলা পেট ভরে খাবার জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হত।কখন অর্ক এককেজি চাল বা আটা নিয়ে আসবে।
-উফঃ!
হঠাৎ টের পায় পরণের পোশাক ভিজতে শুরু করেছে। পা বেয়ে নামছে উষ্ণ তরল। তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা ।সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে অর্ককে।
ও একতলাতেই ল্যাপটপে ব্যস্ত ছিল ।সঙ্গে সঙ্গেই নামকরা নার্সিংহোমে নিজেদের গাড়িতে নিয়ে যায় সীমাকে, খুব যত্নে।
হালকা মৃদু ওষুধের গন্ধ, নীলচে আলো। নার্সিংহোমের কেবিনে আস্তে আস্তে ঝাপসা দৃষ্টি স্পষ্ট হয় ।ক্লান্ত, বিধ্বস্ত,ঘোর লাগা চোখে সীমা তাকায় পাশের ফাঁকা বেবিকটে।
অর্ক হাসিমুখে ওর মাথায় হাত বুলায় ।-মিস্টার রবসান খুব খুশি হয়েছেন। এত বছর পর তাদের সন্তান হয়েছে বলে কথা! তাই পঞ্চাশ হাজার টাকা বেশি দিয়েছেন।
গতবার মেয়েটা নিয়ে যাবার পরে খুব কান্নাকাটি করেছিল সীমা। তাই এবার আর সন্তানকে দেখতেও পেল না ।
অর্ক হাসছে গর্বের হাসি।সীমার মনে হয় একটা লোভী হায়না যেন দাঁত বের করে হাসছে,লালা ঝরে পড়ছে ওর লোভী, মাংশাসী কষ বেয়ে। সীমা ভয়ে,ঘেণ্ণায় চোখ বুজে ফেলে। দুফোঁটা জল চোখের কোণ বেয়ে নামতে থাকে ধীরে ধীরে ।যা শুষে নেয় ওর মাথার ধবধবে সাদা বালিশ।
©®