dazzle with me

Romance Others

3  

dazzle with me

Romance Others

দায়িত্ব

দায়িত্ব

6 mins
261


নিশীথের নিশ্চিন্ত জীবনে এমন ঝড় উঠবে কেই বা ভাবতে পেরেছিল?একলা জীবন বেশ চলছিল নিজের তালে।


বছর বাইশের বেকার যুবক নিশীথ তার জীবনের প্রথম ও শেষ প্রেম অবন্তিকা কে আটকাতে পারেনি ওর নিজের জীবনে।


বাড়িতে জানাজানি হতেই অবন্তিকা কলেজের দ্বিতীয় বছরেই লাল চেলী পড়ে পারি দিল আসাম না মহারাষ্ট্রের কোন এক অজানা শহরে!তার আগে অবশ‍্য একবার দেখা করেছিল নিশীথের সাথে।


বিয়ের আগের দিন বৌদিদের সঙ্গে শাখা পড়তে এসে অবন্তিকা ওদের হরিহর পুকুর লেনের দুকামরার টালির বাড়িতে এসে উঠেছিল।

"চলো,আমরা পালিয়ে যাই!"


অবন্তিকার এহেন দুঃসাহসে সাথী হতে পারেনি ভেতো বাঙালি, নিতান্তই ছাপোষা নিশীথ।আসলে সে সময় অক্ষয় কুমার বা উঠতি সলমন খানেরা যেভাবে পালিয়ে বিয়ে করে জঙ্গলে বাসা বাঁধে সেটা বাস্তবে যে একেবারেই অসম্ভব তা অবন্তিকা বুঝতে পারেনি কিন্তু নিশীথ পেরেছিল।


তাই নিশ্চল নিশীথের গায়ে একদলা থুতু ছিটিয়ে, "কাপুরুষ, হিজড়া" আরো নানা বিশেষণে বিশেষিত করে চলে যায় অবন্তিকা।তারপর অনেকক্ষণ স্থির নিশীথ।মাথা ভারী,ঘোরের মধ‍্যে কাটছিল যেন।তারপর টানা দশদিন জ্বর!কি জানি, মন খারাপে কি জ্বর আসে?


এর মধ‍্যেই যতন খবর দেয় ,অবন্তিকা শ্বশুর বাড়ি গিয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিল কিন্তু মরেনি।তার আগেই বাড়ির লোক দেখে ফেলে।তাইতে ওকে বাপের বাড়ি পাঠাবার ও ব‍্যবস্থা হয়।কিন্তু ওর বাবা একমাত্র মেয়ের সংসার বাঁচাতে ওদের কলকাতার বাড়িটা বেঁচে সব টাকাটাই মেয়ের শ্বশুরের হাতে তুলে দেয় মেয়ের বিবাহ পূর্ববর্তী প্রেমের খেসারত হিসেবে।তার বিনিময়ে মেয়ে পায় অখন্ড শ্বশুরবাড়ি থাকবার সৌভাগ্য!তবে কি মর্যাদা? তা কেউ না জানলেও বুঝতে কারো বাকি নেই।


অবন্তিকা যাতে আগের প্রেমিকের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখতে না পারে তাই ওর বর ট্রান্সফার নিয়ে কলকাতা ছাড়লে নিশীথ কিছুদিন সব ছেড়ে চুপচাপ বসে।


তারপর ওর রোখ চাপে পড়াশোনার।দাদারা আলাদা হয়ে যায়,আর অবিবাহিত হিসাবে মায়ের দায়িত্ব ওর।তবে নিশীথ মাকে পেয়ে বেঁচে যায়।না হলে কিভাবে কাটতো ওর একাকী জীবন!


এখন নিশীথ বিদ‍্যাসাগর কলেজের জুলজি ডিপার্টমেন্ট এর এইচ ও ডি।নানা ডিগ্ৰীও লেগেছে ওর নামের পেছনে তার কিছু বিদেশীও।অবন্তিকা পড়াশোনা ভালোবাসতো।তাই পড়াশোনা আর অবন্তিকা ওর জীবনে সমার্থক।না,আর কোনো মেয়ের কথা গত বাইশ বছরে ভাবেনি।ভাবার প্রয়োজনও পড়েনি।


পেটানো স্বাস্থ‍্য,ব‍্যাচেলর, তুখোড় বাগ্মী এন সি,মানে ডঃ নিশীথ চৌধুরী ছেলেমেয়েদের হার্টথ্রব।যেমন স্মার্ট তেমনি ব‍্যক্তিত্ব!ছেলেরা ভয় পায়, সমীহ করে আর মেয়েরা প্রেমে পড়ে!জুলজি ডিপার্টমেন্ট এ এমন কোনো ছাত্রী নেই যার এন সি কে ভালো লাগে না।কিন্তু এন সি?বাবা পাথর গলে কিন্তু এন সি না!


লম্বা চুলের, সরু ঠোঁট, আর চওড়া কপাল শ‍্যামলা মেয়েটিকে দেখে জীবনে প্রথমবার লেকচার দিতে গিয়ে এন সি থামেন।ক্লাস শুরুর মিনিট দুই পরে বিনুনি দুলিয়ে ক্লাসে ঢোকে মেয়েটি।এন সি গম্ভীর গলায় বকা দিতে মেয়েটি মাথা নীচু করেই থাকে!


"কি হল?কথা বলছো না যে,দেরী হল কেন?"ধমক খেয়ে, চমকে মাথা তুলতেই হঠাৎ যেন বিদ‍্যুৎ খেলে গেল।এ কার আদল?এত চেনা চেনা কেন?সেই রকম মুখের গড়ণ,এই মেয়েটি অবন্তিকার মত দেখতে!তবে অবন্তিকাকে হাসলে ভারী সুন্দর দেখাতো আর অবন্তিকার চোখ ছিল আরো বড় ,আরো দীঘল।এর ততটা নয়।ছাত্রীর দিকে তো আর তাকিয়ে থাকা যায় না।


কিন্তু নতুন করে যেন অবন্তিকা আবার এসে বাসা বাঁধলো মনে? তাহলে পড়াশোনা নয় ,চাকরি নয়, অবন্তিকাই ওকে একা করে রেখেছে আজও!নিজের ওপরই বিরক্ত হয় নিশীথ!হিসেবী পরিণত মন যেন প্রথমবার ধাক্বা খায়!


যে মেয়েটি বিয়ে করে চলে গেল,সংসারে ব‍্যস্ত তার জন‍্যেই এখনো ডঃ নিশীথ চৌধুরী একা হয়ে বসে রয়েছেন।নিজেকে বড্ড হাস‍্যকর লাগে।এবং এই সহজ সত‍্যিটা এতদিন কেন বুঝতে পারেনি ভেবে নিজের প্রতি যেন বিরক্তও।


কিন্তু ক্লাসে গেলেই ওর দিকে চোখ চলে যায়! কাকতালীয় ভাবে কি করে দুটো অসমবয়সী মানুষের এত মিল হয়?নাঃ।এই বয়সে এসব ভাবা বোকামি!নিজেকে নিজে শাসন করেন প্রফেসর।


"স‍্যার,আমরা আপনার কাছে পড়বো!"

ক্লাস শেষে বেরোতে গিয়ে গোটা চারেক ছেলেমেয়ে ঘিরে ধরে।দলে সেই মেয়েটিও আছে,"অন্তরা"নাম।নামের ও অদ্ভূত মিল!"

"কিন্তু আমি প্রাইভেট পড়াই না!"

"প্লিজ স‍্যার, প্লিজ!না হলে আমরা ফেল করে যাবো"!

"অনেকেই তো পড়ান,সেখানে পড়তে পারো"!

 "না স‍্যার, আপনাকে আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগে, প্লিজ! প্লিজ!"


এটা নিশীথের জানা কিন্তু কোনো ছাত্রছাত্রী এর আগে তার কাছে এই আবদার নিয়ে কখনো আসেনি।সবাই তাকে ভয় পেয়েছে।এদের সাহসে মনে মনে বেশ অবাক হয়।একটু স্বাদ বদলের জন্য রাজীও হয়ে যায় দুম করে!


ধুর সেই তো রোজ বাড়ি গিয়ে বই নিয়ে বসা।দুদিন পড়ালে বেশ অন‍্যরকম লাগবে!মা মারা যাবার পর তো ফ্ল্যাটে নিশীথ একাই।রান্নার মাসী আর কাজের দিদি বাদ দিয়ে কেউ আসেও না। নিশীথ খুব একটা সামাজিক ও নয়।নিজেকে সমাজ থেকে দূরে রাখতেই ও পছন্দ করে।


একটু অন‍্যরকম হবে ভেবে রাজী হয় ও ।নাকি অন্তরা আছে তাই?ধুর কি যে ভাবে আবোলতাবোল!নিজেকেই নিজে ঠাট্টা করে নিশীথ!


ওরা পড়তে আসে সপ্তাহে দুদিন।সোম ,আর বৃহস্পতি।এই দুদিন সন্ধ‍্যেটা যেন নিশীথের ফ্ল‍্যাট আলোয় ভরে থাকে।ওদের সঙ্গ নিশীথ কে যেন খোলস ছেড়ে বার করে এনে দাঁড় করায় সেই বিশ বাইশ বছর আগেকার নিশীথের সামনে!নিশীথের ভালো লাগে খুব।আয়নায় আজকাল নিজেকে যেন আরো ছোট আর ইয়ং দেখায়।কেন? তা ও নিজেও জানে না।


গত তিনদিন নিশীথের জ্বর।সেদিন গাড়ি নিয়ে যায়নি, কলেজ ফেরতা অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি জ্বর।ওদের সবাই কে ফোন করে পড়তে আসতে বারণ করে।যদিও অন্তরা নিজেই ফোন করেছিল ও কলেজ যায়নি দেখে।


বিকেল পাঁচটা,ফ্লাস্ক থেকে এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে সবে বসেছে,সামনে এনিড ব্লাইটন খোলা, হঠাৎ বেল!এখন তো কারো আসার কথা নয়।সবাই জানে ও এসময় ব‍্যস্ত থাকে।ম‍্যাজিক আইতে চোখ চালিয়ে দেখে সেই দুই বেনুনী!


"আজতো পড়াবো না বলেছি"!,"জানি স‍্যার, আপনি অসুস্থ তাই দেখতে এলাম!ভেতরে আসতে বলবেন না?",

আসলে একা ওকে ভেতরে আসতে বলতে একটু কিন্তু কিন্তু লাগছিল।কিন্তু অন্তরা নিজেই প্রশ্ন করে আর উত্তরের অপেক্ষা করে না।ও ভেতরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে এসে সোফায় বসে নিশীথ।


মেয়েটা পাকা গিন্নীর মত কপালে হাত দিয়ে বলে,

"এখনো বেশ জ্বর আছে দেখছি!",

"ও কিছু না!তুমি কফি খাবে?"

" ডাক্তার দেখিয়েছেন?ওষুধ খেয়েছেন?",

রীতিমতো জেরা শুরু করে মেয়েটা।নিশীথ কফি আনার জন‍্য উঠতে যেতেই ধমক,

"আপনি বসুন আমি আনছি!"


কফি যেন আর শেষই হয় না।এদিকে বাইরে বেশ মেঘলা করেছে,এই বৃষ্টি নামলো বলে।নিশীথের ফ্ল্যাট চিড়িয়ামোড়ের কাছে,যতদূর জানে অন্তরা থাকে গড়িয়ার ওইদিকটায়।অন‍্যান‍্য দিন সঙ্গে কৌস্তভ থাকে,ওরা একসাথেই আসা যাওয়া করে।কিন্তু এতোটা রাস্তা একা যাবে কি করে?নিশীথ গলা খাকারি দিয়ে বলেই ফেললো,

"অন্তরা বৃষ্টি নামবে বোধহয়।তুমি বেরিয়ে পড়ো,না হলে ভিজে যাবে।"


কিন্তু সে সেদিকে কান না করেই আবার কিচেনের দিকে পা বাড়ালো।এবার কফির ফ্লাস্কটাই সঙ্গে করে নিয়ে এসে ধীরে সুস্থে আর এক কাপ কফি ঢেলে কফি খেতে লাগলো মনযোগ দিয়ে।নিশীথের মনে হচ্ছিল এখনই ধমক দিয়ে ওকে তাড়িয়ে দেয় কিন্তু সেই জোর পাচ্ছে কই?


দ্বিতীয় কাপ শেষ হবার পর নিশীথের পড়া বই টা কি সেটা দেখতে মেয়েটা এসে দাঁড়ালো ওর পেছন ,ঝুঁকে দেখতে লাগলো কি বই।নিশীথ এখন স্পষ্ট ওর গায়ের গন্ধ পাচ্ছে।পারফিউম নয় এ গন্ধ যেন ওর একেবারে নিজস্ব গন্ধ।মেয়েটি এবার হাত বাড়ালো ওর কপালে,

"দেখি এখন জ্বর আছে কিনা?"

বলে নিশীথের কপালে হাত দিয়ে সে হাত আস্তে আস্তে নামাতে লাগলো ওর গালের দিকে।


বাইরে ততক্ষণে ভীষণ বৃষ্টি নেমেছে ।ছাঁট এসে পড়ছে গালে গলায় চিবুকে।ভারী পাথরের মত নিশীথের হাত পা,ও যেন স্থবির, নড়ার শক্তি নেই।মায়ের পর আর কোনো নারীর এত কাছে যায়নি ও!এমনকি অবন্তিকারও না।


মেয়েটি আস্তে আস্তে ওর চশমা খুলে রাখলো পাশের টেবিলে, অসাড় হয়ে আসছে নিশীথের অস্তিত্ব, এক অদ্ভূত মাদকতা গ্ৰাস করছে যেন।ও নিশ্চল,শুধু বুঝতে পারছে চরম এক ভালোলাগায় ও সাড়া দিচ্ছে।এক চরম সুখে ও নিজেও ডুবে গেল অন্তরায় না অবন্তিকায়?


বাইরের বৃষ্টির ছাট্ এসে হাল্কা জলের স্পর্শে এক জ্বরতপ্ত শরীরের সব তাপ শুষে নিচ্ছে আরেক প্রায় যুবতী শরীর।


ক্লান্ত নিশীথ জ্বরের ঘোরে কতক্ষণ পড়েছিল জানে না।ঘোর কাটতে টের পায় মাথা প্রচণ্ড ভার।একি ঘর ফাঁকা কেন? অন্তরা কোথায় গেল?ও কি সত্যিই এসেছিল?


নিজের বিধ্বস্ত পোশাক আর বুকের আঁচড়ের দাগে হাত পড়তেই চিড়বিড় করে ওঠায় বুঝলো,'না এ নিছক কল্পনা নয়!'


দরজা ভেজানো।কোনোরকমে টলতে টলতে উঠে দরজা লক করে এসে সোফায় ধপ করে বসতে গিয়ে চোখে পড়লো একটা কাগজ।যাতো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।"মা মরার আগে আপনার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন।তাই আমি আবার আসবো"!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance