তিন বাঁদর
তিন বাঁদর
আবার একটা স্বাধীনতা দিবস।ভারতবর্ষের পঁচাত্তরতম স্বাধীনতা দিবস মহা ধুমধামে পালিত হব।সব সরকারি বেসরকারি ভবনে পতপত করে স্বগর্বে উড়বে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা।আরো একবার জাতীয় সঙ্গীত দেশাত্ববোধক গান গেয়ে,বীর শহিদদের স্মরণে অমুক বাবু,তমুক দেবী বক্তৃতা রাখবেন।শুনতে শুনতে দেশপ্রেমে, জাতীয়তাবোধে আমাদের বুক ফুলে উঠবে।আমরা আরো একবার গর্ব বোধ করবো ভারতীয় বলে,এক মহান ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলে।বেশ ফুল মালায় ,ধূপে শহিদেরা মর্যাদা পাবেন। একটু বেলায় বাড়ি ফিরে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে একটু ভাত ঘুম।আর যাদের সে উপায় নেই সে রেস্ত বা স্বাস্থ্য কারণ যাই হোক তাকে মুরগিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।আর ক্লাবে ক্লাবে মাইকের সকালবেলার জাতিয়তাবাদী গানের সুর বদলে যাবে চটুল ,"প্রিয়া তু ,অব তো আজা",বা ,বচপন কা প্যায়ার",ভাইরাল গানের সুরে।সঙ্গে কোথাও কোথাও কোমর দুলুনিও থাকবে ।"আরে শরীরটাকে তো রাখতে হবে!" সঙ্গে ডায়েট রঙিন জল।
আরে মশাই আপনাদের ওই ছেঁদো আদর্শ বাদ রাখুন তো।লেটস্ এনজয়! তারপর।তারপর?তারপর আর কি? ভোটের সময় যারা আপনার পা ধরেছিল, আপনি সামান্য একটা কাজের জন্য জুতোর শুকতলা খুইয়েও তার টিকিটি দেখতে পাবেন না।ভোটের আগে যে আপনাকে জড়িয়ে ধরে গদগদ আদুরে মুখে সেল্ফি তুলেছিল সে আপনার বিরুদ্ধে কুকুর লেলিয়ে দিতে পারে যদি আপনি বেশি সেল্ফ কনফিডেন্স দেখিয়ে তার কাছে রোজ দরবার করতে যান, আপনার সমস্যা সমাধানে। সামান্য বেড়াল প্রস্রাব বৃষ্টিতে আপনার বাড়ির সামনে এক হাঁটু জল,আপনি সাঁতরে পার হোন।বিনি পয়সায় ভেনিস বাড়ির সামনে এনে দেওয়া হলো তাও আপনারা সন্তুষ্ট নন,আপনারা বড় নিন্দুক! আপনার মেয়েকে,ছেলেকে ভালো ইস্কুলে পড়াতে মোটা ডোনেশন রাখতে হবে,চাকরির জন্য ব্যাঙ্কে পেছনে বেশ কয়েকটা শূন্য লাগানো ক্যাশ রাখতে হবে।
আরে দাদা শোনেননি?যেমন গুড় তেমন মিষ্টি। আপনার মেয়ের বিয়েতে কেউ পণ চাইবে।খবরের কাগজে পড়বেন পণের জন্য ওকে পুড়িয়ে মারা হলো,তাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ।তারপরেও আপনি পণের টাকাটা জোগাড় করবেন!ভালো একটা সম্বন্ধ পাওয়া গেছে যে।জামাই সরকারি চাকুরে,হোক মাথায় টাক।সোনার আংটি আবার বাঁকা! টিভিতে রোজ দেখবেন,থ্যাঁতলানো মুখ,বিকৃত শরীর। অমুক মহিলা বা যুবতী বা কিশোরীর ধর্ষণের পরে খুন,কারণ সে অসময়ে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে ছিল।তারপর কিছুদিন মিডিয়ার দাপাদাপি, বেশ অ্যাঙ্গেল।করে ছবি তোলা ,রগরগে খবর পরিবেশন।তারপর?তারপর আবার কি?ধামা চাপা! কাজটা যাই হোক করাতে যত বার আপনার হাত টেবিলের ওপরে পদস্থ কর্তার সঙ্গে হ্যান্ডসেক করবে,তারচেয়ে অনেক বেশি বার টেবিলের নিচে,এটাই রীতি।অভিযোগ জানাতে গেলে শুনবেন,"চাইছে,দিয়ে দিন না মশাই।কাজটা তো হয়ে যাবে!" আর তাতে যদি আপনি বেঁকে বসেন,রইলো আরো একটা কেস বাড়তি।ও খড়ের বোঝার উপর শাকের আঁটি বই তো নয়?থাক না হয়।কি গেলো এলো? বেকার যুবক যুবতী চাকরি পাবে না।কয়েক হাজার ডিপ্রেশনে ঝুলে পড়বে,কেউ কেউ শিরা কাটবে অথবা রেল লাইনে।বিষের বড় দাম ,কমদামি মানেই ভেজাল,ওতে মরবার গ্যারান্টি নেই। আমি আপনি গান্ধীজির তিন বাঁদর হয়ে বসে থাকবো,দেখবো না ,শুনবো না,বলবো না।স্বাধীনতা এগিয়ে যাবে আরেক বর্ষপূর্তির দিকে।
