পঙ্গু
পঙ্গু
পঙ্গু#শম্পা_সাহা
-বৌমা আবার তুমি নাইটি পরেছো?
-আসলে মা,খুব গরম লাগে।হাঁটাচলা করতে খুব অসুবিধা হয়।
-দেখো বাছা আমাদেরও ছেলেপুলে হয়েছে ।তখন আমরা শাড়িই পড়তাম।আমরা কি সব মরে গেছি?শ্রীতমা মাথা নিচু করে গিয়ে নাইটি ছেড়ে শাড়ি পরে আসে।
সে সাত মাসের পোয়াতি।পচা ভাদ্দুরে গরম।দোতলায় ঘর।গরমে খুব কষ্ট হয় কিন্তু শাশুড়িমা কিছুতেই শাড়ি ছাড়া অন্যকিছু পরতে দেবেন না।সুদীপ দুচারবার বৌয়ের হয়ে বলতে গিয়ে অপমানিত হয়েছে।অযথা ঝগড়ার ভয়ে আর কথা বাড়ায়নি।
শাড়ি পরা শ্রীতমার অভ্যেসে নেই।শহরে পরিবেশে মানুষ, বাবামায়ের একমাত্র মেয়ে,ভারি আদরে মানুষ।এত নিয়মকানুনে ওর দম আটকে আসে।বিয়ের দুমাস পরেই প্রেগন্যান্ট।একটু সামলে উঠতেও পারেনি।
-মা
-কি খোকা?
-মা,একটু ডাক্তার দেখাতে যাবো ওকে নিয়ে
-তা যাও
-বলছি,ফিরতে ফিরতে তো বেলা হবে,ওকে দুটো ভাত দাও না
-কেন রুটি আছে তো ।খাক্ না
-না মানে,ওর তো আজকাল রুটি খেলে অম্বল হচ্ছে
-দেখ্ খোকা,আগবল ভাত মেয়েমানুষকে কি দিতে আছে? তাহলে তুই ও দুটো খা
-আমি তো এই রুটি খেলাম
না।এসব শুনে শ্রীতমার আর ভাত খাবার ইচ্ছে থাকে না। না খেয়েই বেরিয়ে পরে। সুদীপ অনেক বলেও ওকে খাওয়াতে রাজী করতে পারেনি।
শ্রীতমার মেয়ে হয়েছে।সুদীপ খুশি হয়ে নার্সিং হোম থেকে মাকে ফোন করতেই মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন
-কি আর করবি বল?সবই কপাল
-মা আমি তো খুব খুশি। মিষ্টি নিয়ে বাড়ি যাবো
-আর লোক হাসিও না বাছা।আমাদের বাড়িতে প্রথম বাচ্চা, ছেলে হবারই রীতি।তোমার বৌয়ের সবই দেখি উল্টো রকম।
ফোনটা কেটে দেন সুদীপের মা।সদ্য বাবা হবার আনন্দে কে যেন এক বালতি জল ঢেলে দেয়।মাথা নিচু করে ফিরে এসে সুদীপ হাত রাখে ঘুমন্ত শ্রীতমার মাথায়।
শ্রীতমার শাশুড়ি, সুদীপের মা ,হয়তো সবার চোখে একেবারেই সুস্থ।কিন্তু বাস্তবে এরা আসলে মানসিক ভাবে পঙ্গু।যে সুস্থ,স্বাভাবিক নয় তাকেই তো বলে পঙ্গু । নয়কি? এর চেয়ে শারীরিক পঙ্গুত্ব অনেক বেশি সম্মানের যা হয়তো সেই মানষটাকে কষ্ট দেয় কিন্তু এদের মত সমাজকে পেছনে টানে না।
©®