Shampa Saha

Children Stories Classics

5.0  

Shampa Saha

Children Stories Classics

অনাথ

অনাথ

3 mins
735


অনাথ

শম্পা সাহা

 পান্তির আজ মন ভালো নেই।থাকবেই বা কি করে?ও যে আজ সকাল থেকেই কিছু খায়নি।তাতে অবশ‍্য ও কাউকে দোষ দেয় না।যদিও ওর বয়স মাত্র আট নয়,কিন্তু বোঝে সবকিছুই।কি করে যে বোঝে?আসলে বয়স নয়,পরিণতি আনে পরিস্থিতি।ছোট থেকেই ওর যে পরিবেশে বড় হওয়া,তাতে বুঝেছে,এই যে হঠাৎ অনেকক্ষণ না খেলে পেটে ব‍্যথা করে,এটা মোটেও কোনো রোগ নয়,একে বলে খিদে।যে ব‍্যথাটা ওর সকাল থেকেই হচ্ছে। ওর মা কি করে?আর বাবাই বা কি করে যে ও খেতে পায় না?সে বলবে কি করে?ওর বাবা মা যে কে,তাই তো ও জানে না।ও তো জন্ম থেকেই অনাথ।ওকে নাকি জন্মের পরপর ওর মা রাস্তার পাশে ন‍্যাকড়া মুড়িয়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল।বুলু পাগলীই ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে।সেই ছিল ওর মা।কিন্তু ওই করোনা না কি,তাতেই ওর সেই "পালা মা" ও মরে গেল।ব‍্যস!তারপর থেকেই ওর আর কেউ নেই। বটতলা বাজারেই ওর থাকা খাওয়া।রাতে বাজারের চালাগুলোর নিচে শুয়ে থাকে,আর দোকান টোকান থেকে যা দেয়,তাতেই ওর ছোট্ট পেটটা ভরে যায়।ভিক্ষে?না ভিক্ষে ও করে না।যদিও ওর সঙ্গে আর যে কয়েকজন থাকে,নান্টু, লেপু,বিষ্টি,ছিটেল কাকা,সবাই ভিক্ষে করে।কিন্তু পান্তি পারে না।ওর হাত পাততে লজ্জা করে।একে ঠিক লজ্জা বলে কিনা ও জানে না,কিন্তু কেমন যেন বাধো বাধো ঠেকে, যেমন খোলা আকাশের নিচে প্রাতঃকৃত‍্য সারতে।আগে অবশ‍্য তেমনটি ছিল না।যত বড় হচ্ছে ততই এসব বোধ বাড়ছে ওর। কিন্তু আজকের খিদে যেন বাড়ছে পাল্লা ছাড়া।আজ যে বামুন বুড়ির মেলা।আশেপাশের পাঁচ গাঁয়ের সবাই ঝেঁটিয়ে গেছে ওই মেলায়।তাই দোকানপাট সব বন্ধ।ওর খাবারও জোটেনি তাই।কি করে?ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়াতে ,ওর সঙ্গীসাথীরা সব ওকে ছেড়েই বোধহয় গেছে কোথাও।নিশ্চয়ই মেলায়।কিন্তু ও যে বেশ দূর ।আগের বার গিয়েছিল।কিন্তু রাস্তা যে ওর মনে নেই।দলে ভিড়ে পা মিলিয়ে ছিল।কিন্তু এবার?ধুর!পান্তির একটুও ভালো লাগে না।কি যে করে?ফাঁকা দোকানপাট,খাঁ খাঁ চারপাশ।ওর এবার কান্না পাচ্ছে যে!-এই মেয়ে,মেলায় যাবিনি?-কে?দুই হাঁটুর মধ‍্যে মুখ গুঁজে কান্নার উপক্রম করতেই হঠাৎ এই ডাকে অবাক হয় ও।-আমি রে,মেয়েএক থুরথুরে বুড়ি,শণের নুড়ি চুল,ফোঁকলা দাঁত,তোবড়া গাল,রুগ্ন। দারিদ্র্য সারা গায়ে স্পষ্ট।হঠাৎই যেন মাটি ফুঁড়ে ওর সামনে।পান্তি অবাক ।-কি রে,যাবি?পুজো দেখবি,পেসাদ পাবি,খেতে পাবি-খেতে পাবো?বিড়বিড় করে পান্তি।হঠাৎই ওর মুখে হাসি ঝলমল করে ওঠে।মনে পড়ে গতবারের কথা।সেই গরম গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি আর ল‍্যাবড়া।কি স্বাদ !শেষে একটু চাটনিও দিয়েছিল।আবার আগে ফলপ্রসাদও দিয়েছিল।শাঁকালু,আপেল,কলার কুচি,আবার এক কোয়া কমলা লেবুও ছিল।-চলো-যাবি?-হ‍্যাঁ, চলো-চলবুড়ি ঠাকুমার পেছন পেছন হেঁটে ও পৌঁছায় মেলার মাঠে।কত লোক, কত ভিড়।ওপাশে জিলিপি ভাজছে,এক পাশে বিরাট বড় চক্কর ,ওতে লোকে দোলনা দুলছে।আরে ওই তো,খিচুড়ি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে।ও দৌড়ায় উর্ধশ্বাসে।খিচুড়ির গন্ধে ওর খিদে যেন আরো বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।একি বুড়ি ঠাকুমা কই?এই তো সঙ্গে সঙ্গে আসছিল।ভিড়ে হারিয়ে গেলো নাকি?দুচারবার ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।যাঃ!কেউ নেই তো!-এই পান্তি আয়,খাবি না?দেখে, ছিটেল কাকা বসে গেছে লাইনে।পাতাও পরে গেছে।এইবার খিচুড়ি দেবে।ওর আর বুড়ি ঠাকুমাকে খোঁজা হয় না।দৌড়ায় খিচুড়ির লাইনে বসতে। ওদিকে কা‍ঁসর,ঘন্টার আওয়াজে জোর গলায় সব পূণ‍্যার্থীরা জয়ধ্বনি তোলে,-জয় মা বামনবুড়ি-জয় বামনবুড়ির জয়-জয় বামনবুড়ির জয়।অনাথ পান্তি তখন গরম গরম খিচুড়ি এক খাবলা তুলে মুখে পুরেছে।আঃ!কি ভালো খেতে!মা বামনবুড়ির মুখে তখন মিটিমিটি হাসি।মা বামনবুড়ি থাকতে কি কেউ অনাথ থাকতে পারে?নাকি থাকতে পারে অভুক্ত?মেলার পুজো প্রাঙ্গণ তখন মা বামনবুড়ির জয়ধ্বনিতে মুখরিত।

©®


Rate this content
Log in