অসভ্য
অসভ্য
অসভ্য
শম্পা সাহা
-এই মালটা বহুত বদ্।দেবো কানের গোড়ায়
-এ সব কি ভাষা?
-এ ভাষা শেখাচ্ছিস কাকে রে? শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে তেড়ে যায় সাথী।সঙ্গে সঙ্গেই নীহার বসু পিছু হটেন।
-কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা।এসব মেয়ে সমাজের জন্য পয়জন,পয়জন!
-যা বলেছেন!নীহার বসুর সঙ্গে গলা মেলায় উপস্থিত দর্শক।যারা ভিড় করে মজা দেখছিল এতক্ষণ।বাইকে স্টার্ট দেয় সাথী।সবাই দূর থেকে দেখে বয়েজ কাট চুল,জিনস্ শার্ট পরা একটা মেয়ে জোরে বাইক চালিয়ে মিলিয়ে যায় সামনের রাস্তা দিয়ে।
আসলে মিনতি মাসী এ বাজারে বসে সেই কোন কাল থেকে।এক কোণে কটা শাকের আঁটি নিয়ে।গাঁয়ের মাঠঘাট খুঁজেপেতে নিয়ে আসে কখনো কলমী,কখনো পুঁই,বেতো,হিংচে এসব অকুলীন শাকের বোঝা।স্বামী ছেড়ে চলে গেছে কবে!ছেলে, বৌ ভাত দেয় না।এভাবেই কোনোরকমে চলে।
আজ সকালে এসে বিক্রিবাটা শুরু রোজকার মত।নীহার বাবু এসে বেতোর শাক চান।দশ টাকা আঁটি।কিন্তু মিনতি মাসী মোটেই কম দেবে না।একেবারেই তাজা লকলকে শাকগুলো।এখনই যদি কমে দেয় তো বেলায় আরো দাম পরে যাবে।এই নিয়ে দরকষাকষিতে হঠাৎই নীহার বাবু বলে ফেলেন-এই জন্যেই তোদের ছোটলোক বলে!পাশের দোকানে আলু নিচ্ছিল সাথী।কথাটা কানে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে ও ঘুরে দাঁড়ায়,-ওনাকে ছোটলোক বললেন কেন?-তাতে তোমার কি হচ্ছে?-উনি আমার মায়ের মত-তাহলে বাড়ি নিয়ে যাওঅপ্রস্তুত মিনতি মাসী।এক বিরাট ঝগড়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে মরমে মরে যায়।ছেলের বৌ তো রোজ কত কথাই বলে ,কই ছেলে তো প্রতিবাদ করে না!গুটিয়ে যায়,নিজেকেই অপরাধী ভাবে মাসী।
ঝামেলাটা সবার হস্তক্ষেপে থামলেও ,সাথীর নামে আলোচনাটা চলতেই থাকে।ওর চরিত্র নিয়েও। কেউ জানে না ওই রুক্ষ মেয়েটা একসময় এক নরম সরম গৃহবধূ ছিল।শ্বশুরবাড়ির পণের অত্যাচারে সে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।আর তারপর থেকেই সাথী এ রকম বেপরোয়া।সমাজের চোখে অসভ্য,লোককে সম্মান দিতে জানে না।কিন্তু মিনতিদের হয়ে লড়াই এই সাথীরাই করে যে।
©®